প্রতিটি বাঙালির অত্যন্ত প্রিয় জায়গা পুরী। পুরী সম্বন্ধে মানুষের আগ্রহ ও ভালবাসা অপরিসীম। মনে হয় এটা কোনও ভিন রাজ্য নয় - আমাদেরই নিজেদের জায়গা। তাই সুযোগ ও সময় পেলেই বাঙালি মাত্রই পুরীর জন্য মন নেচে ওঠে। পুরী সম্বন্ধে কিছুদিন আগে আমার দুটো পোস্টে যেভাবে অগণিত মানুষ সাড়া দিয়েছিলেন তা আমার কাছে অবিশ্বাস্য। প্রত্যেককে ধন্যবাদ।পুরীর মূল আকর্ষণ হল জগন্নাথদেব - সমুদ্র - খাজা। পুরীতে গেছেন অথচ খাজা কেনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। রকমারি খাজার জন্য পুরী বিখ্যাত। নোনতা - মিষ্টি - ঘিয়ে ভাজা ইত্যাদি। আজ এক ভদ্রলোকের সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দেব। খাজা এর আগে আপনি কাকাতুয়া-গাঙ্গুরাম- নৃসিংহ ইত্যাদি দোকান থেকে নিয়ে গেছেন।সন্তোষ-অসন্তোষের দোলায় দুলেছেন। যে ভদ্রলোকের কথা এবার বলছি - তিনি শীর্ণকায় এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক - নাম দামুদা। তিনি মোটামুটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিগত পঁচিশ বছর ধরে খাজা বিক্রি করছেন অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে। কোনও প্রচার নেই। তিনি চানও না। তবে একবার যে তাঁর তৈরি খাজা খেয়েছে সেই মজেছে। পাঁচবছর আগে তাঁকে আমরা আবিষ্কার করি চা বিক্রেতা হিসেবে। হলফ করে বলতে পারি মাটির ভাঁড়ে এমন চা সারা পুরী খুঁজেও পাবেন না। পরীক্ষামূলক হিসেবে সেই প্রথমবার তার কাছ থেকে নোনতা - মিষ্টি খাজা কিনেছিলাম। ব্যস - তারপর থেকে যতবারই গিয়েছি দামুদার খাজা কিনতে বাধ্য হয়েছি গৃহে শান্তি বজায় রাখার জন্য। ওনার তৈরি নোনতা খাজা অসাধারণ - তবে এত হাল্কা ও মুচমুচে যে খুব সাবধানে আনতে হয়। কোথায় বসেন এবার জানাই। স্বর্গদ্বারের মুখে চৈতন্য মহাপ্রভুর মূর্তি ছাড়িয়ে নিউ মেরিন ড্রাইভের রাস্তা দিয়ে সামান্য কিছুটাকা এগোলে ডানদিকে খাদির দোকানগুলোর পাশ দিয়ে একটু সরু গলি যা ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে গিয়ে পড়েছে - সেই ক্রসিংয়ে একটা চৌকো কাঠের টেবিলে চা এর সরঞ্জাম নিয়ে দামুদা দাঁড়িয়ে আছেন। সন্ধে 5-30 টা থেকে মোটামুটি রাত 8 টা পর্যন্ত একবেলার দোকান। আগে অর্ডার দিতে হয়। সঙ্গেসঙ্গে খাজা পাওয়া যায় না। প্রতিদিন টাটকা খাজা বিক্রি করেন। প্রচারবিমুখ-নির্লোভ-সত্-হাস্যময় এই মানুষটি আমাকে এতটাই নাড়া দিয়েছে যে সেই অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। পরীক্ষা করে একবার দেখবেন। নিশ্চিত বলতে পারি ঠকবেন না। শেষে বলি - আমার সঙ্গে দামুদার ক্রেতা- বিক্রেতা সম্পর্ক ছাড়া আছে শুধুমাত্র মুগ্ধতা ও ভালবাসার জোটবন্ধন। অন্য কিচ্ছু নয়।