অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল আমাদের বন্ধু দেশ ভুটান টা একটু ঘুরে আসা। মার্চ মাসে দিন ক্ষন দেখে বেড়িয়ে পরলাম আমরা দুজনে ( আমি ও আমার গিন্নি)। তবে ভুটান যাওয়ার আগে আমরা কুচবিহার টা ঘুরে তারপর ভুটানের পথ ধরে ছিলাম। কুচবিহার ও তার আসেপাশের জায়গা যেমন কুচবিহার রাজবাড়ি, মদনমোহন মন্দির, বক্সা, জয়ন্তী, ইত্যাদি দেখতে আমাদের দুদিন কেটে গেল। এরপর সোজা জয়গাও, সেখানে একদিন আমাদের কেটে গেল পারমিট এর চক্করে। ফুংশিলিং( বানান টা ভুল হতে পারে) থেকে তৈরি হলো আমাদের ভুটানের পারমিট। ঠিক হল দুইরাত পারো তে আর দুই রাত থাকবো থিম্পু তে। পুনাখা তে থাকার প্ল্যান করতে পারিনি সময় এর অভাব এর জন্য। এই সব কিছুর জন্য আমাদের সাহায্য করে ছিল জয়গাও এর এক ট্রাভেল কম্পানি Raghav Travels। সাথে আমরা ড্রাইভার নিয়ে নিলাম পাঁচদিনের জন্য। ড্রাইভার দাদার নাম ছিল জিৎ। দারুন সুন্দর ব্যবহার। আমাদের সব আবদার হাসি মুখে মেনে নিচ্ছিল। কোন কিছুতে তার না নেই। আমাদের বাচ্চাপনা দেখে হয়তো তার মজা লাগছিল। যাই হোক, আমরা প্রথমে পারো আর তারপর গেছিলাম থিম্পু তে। থিম্পু থেকে আমরা পুনাখার পারমিট যোগার করে পুনাখা গিয়ে দিনের দিন আবার থিম্পু ব্যাক করেছিলাম। মোটের উপর বুড়ি ছোঁয়া করে ভুটানের বেশ কিছু জায়গা ঘুরে নিয়েছি, কিন্তু বাকি থেকে গেছিলো হা ভ্যালি। আমার মতে বাকি থেকে যাওয়া ভাল যার জন্য আরও একবার যাওয়ার প্ল্যান হতে পারে। হা যেতে না পারলেও চেলেলা পাস পর্যন্ত কিন্তু ঘুরে আসতে পেরেছি। তবে এর জন্য আমাকে আলাদা ভাবে পে করতে হয়েছিল ড্রাইভার দাদা কে। তবে ভুটান যারা যাবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি (১) পারো তে গেলে টাইগার নেস্ট অবশ্যই দেখবেন না হলে ভুটান যাওয়া বৃথা। (২) চেলেলা পাস অবশ্যই যাবেন ( কেন জানিনা চেলেলা পাশ এ একটা অদ্ভুত ব্যাপার ফিল হয়, সেটা যে ঠিক কি তা বোঝাতে পারবো না) (৩) পুনাখা জং মিস করবেন না ভুলেও। পারলে ওইখানকার ফচুমচু নদীর জলের টেস্ট নিয়ে দেখবেন। জল কিন্তু সরাসরি খাওয়া যেতে পারে। (৪) থিম্পুর হ্যান্ডক্রাফট মার্কেট যেতে পারেন কিন্তু কেনা কাটা আপনার নিজের ব্যাপার। বেশির ভাগ জিনিস আমাদের দেশে পাওয়া যায় অনেক কম দামে। তবে ভুটানি পোশাক কিরা আর ঘো এর মিনিয়েচার কিনতে পারেন, কিন্তু দরদাম করে নেবেন। (৫) জেব্রা ক্রসিং ছাড়া রাস্তা পার হবেন না। ফাইন হবে তবে। একটা দারুন ব্যাপার ওখানে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পার হওয়ার সময় গাড়ি দাঁড়িয়ে যাবে আপনি চোখ বন্ধ করে রাস্তা পার হয়ে যাবেন কোন অসুবিধা নেই। (৬) যারা সিগারেট খান তারা সাবধান। সিগারেট ওই দেশে পুরোপুরি ব্যান। (৭) ভুটান যাওয়ার আগে আপনাকে অনলাইন হোটেল বুক করতে হবে (আমাদের করা ছিল না তাই ট্রাভেল এজেন্সির সাহায্য নিতে হয়েছিল) না হলে পারমিট মিলবে না। ইমিগ্রেশন অফিসে পারমিট বানানোর সময় হোটেলের বুকিং দেখাতে হয় (হোটেল বুক করতে পারেন www.booking.com থেকে)। (৮) একা একা আপনি কখনোই ভুটান যাওয়ার চেস্টা করবেন না কারন একজন কে একা পারমিট দেয় না ভুটান সরকার। মিনিমাম দুই জন একসাথে যেতে হবে। তবে সব শেষে একটা কথা বলে রাখি ভুটানের মানুষ জন অসাধারণ তারা প্রচন্ড বিনয়ী ও আন্তরিক। খাওয়া দাওয়া একটু দামী হলেও যত্ন আত্তির কোন খামতি থাকে না ওনাদের। নিচে ড্রাইভার জিৎ ভাইয়ার ফোন নাম্বার দিয়ে দেওয়া হল। আপনারা সরাসরি যোগাযোগ করে নিতে পারেন। তবে হোটেল কিন্তু আগে থেকে বুক করে নিতে হবে ।