বহু বছর ধরে ইতিহাস গর্ভে ধারণ করে আছে বাংলার গ্রাম মোগলমারি।
এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত একটি গ্রাম ও পুরাতাত্ত্বিক খনন কেন্দ্র।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশোক দত্তের নেতৃত্বে ২০০২-০৩ সালে এখানে খননকার্য শুরু হয় এবং ষষ্ঠ-দ্বাদশ শতাব্দীর একটি বৌদ্ধ মঠ আবিষ্কৃত হয়।
সপ্তদশ শতাব্দীতে মির্জা নাথান লিখিত ‘বাহারিস্তান-ই-ঘাইবি’ বইটিতে দুই মোঘল সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গিরের আমলে বাংলার হাল হকিকত জানা যায়। ১৫৭৫ সালে মেদিনীপুর আর জলেশ্বরের(ওড়িশা) মাঝামাঝি তুকারুই নামে এক স্থানে মোঘল ও পাঠানের যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে মোঘলদের বহু ক্ষয়-ক্ষতি হয়। সেই মোঘল থেকেই হয়তো মোগলমারি নামের উৎপত্তি।
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে মাড় শব্দের অর্থ সড়ক বা পথ। মোঘলরা এই পথ মাড়িয়ে গিয়েছিল বলে এই স্থানে মাড়>মাড়ই>মাড়ি- ব্যবহৃত হয়েছিল। তাই কালের বিবর্তনে মোগলমাড়ি>মোগলমারি নামাঙ্কিত হয়ে প্রচলিত হয়ে আসছে। দাঁতন-১ ব্লকের অন্তর্গত মোগলমারি গ্রাম। এই দাঁতনের পুরোনো নাম দণ্ডভুক্তি ছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালে এই দণ্ডভুক্তিতেই তাঁর ভূমিদানের দলিল পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক ও গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, গ্রামটির প্রাচীন নাম ‘অমরাবতী’। এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র সামন্ত রাজা ছিলেন বিক্রমকেশরী। তাঁর বিদূষী কন্যা সখীসেনার এক সময়ের অধ্যয়নের কেন্দ্র ছিল এখানে- অনেকেই তা মনে করেন।
নিরীক্ষণ-
মোগলমারি বৌদ্ধ মহাবিহারে নবম পর্যায়ের উৎখনন পরিসমাপ্তির পর প্রাপ্ত পুরাবস্তু ও প্রত্নক্ষেত্রটি পর্যালোচনা করে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ নিম্নরূপ মন্তব্য পোষণ করেন –
১) মোগলমারি গ্রামের অভ্যন্তরে উৎখননে প্রাপ্ত কৃষ্ণ-লোহিত মৃৎপাত্র, এই অঞ্চলে তাম্রাশ্মীয় বা প্রাক-ঐতিহাসিক যুগের জনবসতির মুখ্য নিদর্শন।
২) মহাবিহারটি গঠন শৈলী ছিল ত্রিরথ কাঠামো। আয়তনে মহাবিহারটি ৬০ মিটার × ৬০ মিটার (৩৬০০ বর্গমিটার)। এযাবৎ পশ্চিমবঙ্গে আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহার গুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ।
৩) এযাবৎ খননে প্রায় ৫২ ধরনের নকশাযুক্ত ইটের ব্যবহারের নিদর্শন এবং স্টাকো ব্যবহারের নিদর্শন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
৪) মহাবিহারটির নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের তিনটি পৃথক পৃথক পর্যায় চিহ্নিতকরণ করা হয়েছে।
৫) রাজা সমাচারদেবের মিশ্রধাতুর মুদ্রা, স্বর্ণ লোকেট, স্বর্ণ মুকুট এবং মহাবিহারের নামফলক বা নামমুদ্রা উদ্ধার হল উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার।
৬) সময়গত ও গঠনগত দিক দিয়ে এই মহাবিহারটি নালন্দা, বিক্রমশীলা, পাহাড়পুর, ময়নামতী প্রভৃতি বিহারের সঙ্গে সাদৃশপূর্ণ।
৭) সর্বোপরি উৎখননে বিষ্ময়কর আবিষ্কার হল, মহাবিহারটির একটি স্থানে, একদিনে, একসঙ্গে ৯৫টি ব্রোঞ্জ মূর্তি উদ্ধার সমগ্র পৃথিবীর প্রত্নখননের ইতিহাসে এক বিরলতম দৃষ্ঠান্ত।
তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া, {ইতিহাসের আলোকে মোগলমারি-অতনু প্রধান(zee২৪ঘন্টা)}।
#মোগলমারি #Mogolmari
এটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত একটি গ্রাম ও পুরাতাত্ত্বিক খনন কেন্দ্র।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অশোক দত্তের নেতৃত্বে ২০০২-০৩ সালে এখানে খননকার্য শুরু হয় এবং ষষ্ঠ-দ্বাদশ শতাব্দীর একটি বৌদ্ধ মঠ আবিষ্কৃত হয়।
সপ্তদশ শতাব্দীতে মির্জা নাথান লিখিত ‘বাহারিস্তান-ই-ঘাইবি’ বইটিতে দুই মোঘল সম্রাট আকবর ও জাহাঙ্গিরের আমলে বাংলার হাল হকিকত জানা যায়। ১৫৭৫ সালে মেদিনীপুর আর জলেশ্বরের(ওড়িশা) মাঝামাঝি তুকারুই নামে এক স্থানে মোঘল ও পাঠানের যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে মোঘলদের বহু ক্ষয়-ক্ষতি হয়। সেই মোঘল থেকেই হয়তো মোগলমারি নামের উৎপত্তি।
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে মাড় শব্দের অর্থ সড়ক বা পথ। মোঘলরা এই পথ মাড়িয়ে গিয়েছিল বলে এই স্থানে মাড়>মাড়ই>মাড়ি- ব্যবহৃত হয়েছিল। তাই কালের বিবর্তনে মোগলমাড়ি>মোগলমারি নামাঙ্কিত হয়ে প্রচলিত হয়ে আসছে। দাঁতন-১ ব্লকের অন্তর্গত মোগলমারি গ্রাম। এই দাঁতনের পুরোনো নাম দণ্ডভুক্তি ছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্কের রাজত্বকালে এই দণ্ডভুক্তিতেই তাঁর ভূমিদানের দলিল পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিক ও গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, গ্রামটির প্রাচীন নাম ‘অমরাবতী’। এই অঞ্চলের ক্ষুদ্র সামন্ত রাজা ছিলেন বিক্রমকেশরী। তাঁর বিদূষী কন্যা সখীসেনার এক সময়ের অধ্যয়নের কেন্দ্র ছিল এখানে- অনেকেই তা মনে করেন।
নিরীক্ষণ-
মোগলমারি বৌদ্ধ মহাবিহারে নবম পর্যায়ের উৎখনন পরিসমাপ্তির পর প্রাপ্ত পুরাবস্তু ও প্রত্নক্ষেত্রটি পর্যালোচনা করে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ নিম্নরূপ মন্তব্য পোষণ করেন –
১) মোগলমারি গ্রামের অভ্যন্তরে উৎখননে প্রাপ্ত কৃষ্ণ-লোহিত মৃৎপাত্র, এই অঞ্চলে তাম্রাশ্মীয় বা প্রাক-ঐতিহাসিক যুগের জনবসতির মুখ্য নিদর্শন।
২) মহাবিহারটি গঠন শৈলী ছিল ত্রিরথ কাঠামো। আয়তনে মহাবিহারটি ৬০ মিটার × ৬০ মিটার (৩৬০০ বর্গমিটার)। এযাবৎ পশ্চিমবঙ্গে আবিষ্কৃত বৌদ্ধবিহার গুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ।
৩) এযাবৎ খননে প্রায় ৫২ ধরনের নকশাযুক্ত ইটের ব্যবহারের নিদর্শন এবং স্টাকো ব্যবহারের নিদর্শন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
৪) মহাবিহারটির নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণের তিনটি পৃথক পৃথক পর্যায় চিহ্নিতকরণ করা হয়েছে।
৫) রাজা সমাচারদেবের মিশ্রধাতুর মুদ্রা, স্বর্ণ লোকেট, স্বর্ণ মুকুট এবং মহাবিহারের নামফলক বা নামমুদ্রা উদ্ধার হল উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার।
৬) সময়গত ও গঠনগত দিক দিয়ে এই মহাবিহারটি নালন্দা, বিক্রমশীলা, পাহাড়পুর, ময়নামতী প্রভৃতি বিহারের সঙ্গে সাদৃশপূর্ণ।
৭) সর্বোপরি উৎখননে বিষ্ময়কর আবিষ্কার হল, মহাবিহারটির একটি স্থানে, একদিনে, একসঙ্গে ৯৫টি ব্রোঞ্জ মূর্তি উদ্ধার সমগ্র পৃথিবীর প্রত্নখননের ইতিহাসে এক বিরলতম দৃষ্ঠান্ত।
তথ্যসূত্র- ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া, {ইতিহাসের আলোকে মোগলমারি-অতনু প্রধান(zee২৪ঘন্টা)}।
#মোগলমারি #Mogolmari