Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionসিলারি গাঁও Emptyসিলারি গাঁও

more_horiz
সিলারি গাঁও (২৮-০৫-২০১৬)
সিলারি গাঁও 16-54-10
সিলারি গাঁও 16-54-11

সূচী অনুসারে আজ আমাদের গন্তব্য সিলারি গাঁও | শিলিগুড়ি থেকে ঘণ্টা চারেকের পথ | কিন্তু রাস্তায় চা, প্রাতরাশ ঘটিত বিলম্ব এবং গা গোলানো ও বমির মত খুচরো সমস্যা সামলে আমাদের সময় লাগল ঘণ্টা পাঁচেক |

পাহাড়ের বুক চিঁড়ে সর্পিল পাক দণ্ডি রাস্তা বেয়ে, তিস্তাকে সঙ্গী করে, নিবিড় বনানী ভেদ করে মোহময়ী যাত্রাপথ | দুপাশে শাল , সেগুন গাছের সারি | দূরে পাহাড়ের ধাপে ধাপে অসংখ্য বাক্সবাড়ি | আর পাহাড়ী পথে সুশৃঙ্খল চালকের নিয়মানুবর্তিতা |


সিলারি গাঁও পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটি জনপদ বা গ্রাম | শহুরে আদবকায়দা বর্জিত আন্তরিক হোমস্টের আয়োজন | কোলাহল , প্রযুক্তি নির্ভর জীবনযাত্রার বাইরে এসে প্রকৃতির সাথে নিরালা উপভোগের আদর্শ স্থান এই গ্রাম | কিন্তু "স্পট" কেন্দ্রিক মানসিকতায় "কি কি দেখার আছে" যদি ভাবনা থাকে, তবে এ জায়গা তার জন্যে নয় | যারা সেলস টার্গেটের মত লিস্টি মিলিয়ে "কোলকাতার কোন কোন দূর্গাপূজা দেখলাম" এর ছকে অসংখ্য জিনিষ দেখেবেড়াতে ভালবাসেন , এ জায়গা তাদের হতাশ করবেই |

সিলারি গাঁও 16-56-11



পাহাড়, মেঘের কোলে, গাছগাছালির ছত্রছায়ায় এ এক অদ্ভুত জায়গা | ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো আর প্রকৃতির সাথে একাত্ব হয়ে হারিয়ে যাবার অসংখ্য উপকরণ | ব্যালকনিতে বসে চায়ের কাপ হাতে, পাহাড়ের বুক জোড়া জোনাকির মত প্রচুর আলোক বিন্দু দেখেই কেটে যেতে পারে কত অলস সন্ধ্যে | কত অজানা জংলী ফুল, কত সুন্দর পাহাড়ী মানুষ |

বেড়ানো মানেই কত বিচিত্র অজানা মানুষের সাথে পরিচয় | কত রকমের মানব চরিত্রের সংস্পর্শে আসা | প্রকৃতির ফ্রেমকে মনে না বেঁধে বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরায় বেঁধে রাখার আমাদের কি আকুল প্রচেষ্টা | প্রকৃতির সুরকে না ছুঁয়ে, মোবাইলে গান/ ভিডিও তে ব্যস্ত রাখার কি ব্যর্থ আকুতি | মোবাইলে ইন্টারনেট না আসায় কি অদ্ভুত মানসিক অবসাদ | প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ব না হয়ে, লাল জল আর অন্যান্য কৃত্রিম উত্তেজনার পর শে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা | জটিলেশ্বর বাবুর কথার বলতে ইচ্ছে করে "এ কোন সকাল , রাতের চেয়েও অন্ধকার?" |


প্যারেন (গতবার ডুয়ার্সের সময় গিয়েছিলাম)এর মত সিলারি গাঁও তেও আবার আসার ইচ্ছে রইল | বিশেষত যদি ৭২ ঘণ্টার একটা আউটবাউন্ড করা যায় উদ্যোগপতিদের জন্য |


এখনও ট্যুরিস্ট এর ভীড়ে ভারাক্রান্ত নয় এখানকার পরিবেশ | প্রকৃতি এখনো অকৃপন অকৃত্রিম এই পাহাড় , মেঘের স্বর্গরাজ্যে:

পাহাড় ডাকে, মেঘের নাও,

হাত বাড়িয়ে সিলারি গাঁও |

শান্ত, নিবিড় গ্রামের স্বাদ,

প্রকৃতির এক আশীর্ব্বাদ |

জংলী ফুল, পাইন গাছ,

প্রাণের সুখ , মনের আঁচ |

জড়িয়ে দাও, ভরিয়ে দাও,

মিষ্টি মধুর সিলারি গাঁও |

descriptionসিলারি গাঁও Emptyআরিতার লামপোখারী লেক

more_horiz
আরিতার (২৯-০৫-২০১৬)
প্রকৃতির জাদুদন্ডে আজকের সকাল হয়ে উঠল অবিস্মরনীয় | জাদুর স্পর্শে যেন স্টেজের পর্দা সরে গেল এক লহমায়, আর ফুটে বেরল কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ অন্যান্য বরফ ঢাকা শৃঙ্গ সমূহ |
সিলারি গাঁও 17-07-10
সিলারি গাঁও 17-08-10



সিলারী গাঁও কে বিদায় জানিয়ে আজকের যাত্রা আরিতার |


বৃষ্টি ভেজা দিনে মেঘ-রোদের জলছবির মাঝে "আহা ঐ আকাবাঁকা পথ" ঘুরে, কালিম্পং ছেড়ে ঢুকে পড়লাম সিকিমে | মাঝে ছিল ঋষি খোলার পাড়ে সামান্য কিছু সময়ের বিরতি | সাঁকোর গা বেয়ে, পাথরের অমসৃণ রাস্তা দিয়ে, জোঁকের আক্রমন এড়িয়ে নদীর পাড়ে যেতে কিঞ্চিৎ ট্রেকিং ও হল | লোকাল দোকানে কালিম্পং এর ক্ষীরের "একমেব অদ্বিতীয়ম" ললিপপ এর স্বাদও বাদ যায় নি |

সিলারি গাঁও 17-07-11

আরিতার লেক এর নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা গেল মানখিম থেকে | পাহাড়ের উপর থেকে জঙ্গল পরিবেষ্টিত পাহাড়ের কোলে ছোট্ট লেক সত্যিই মনোমুগ্ধকর | পরমুহুর্তেই মেঘের ত্রাহ্য স্পর্শে এমনভাবে তা অদৃশ্য হয়ে গেল, যেন কখনও তা ছিলই না | সত্যিই কি অপরূপ লীলা প্রকৃতির |


এরপর সামনাসামনি লামপোখারি লেকের ( আরিতার লেকের আসল নাম) সাথে দেখাও হল | মেঘে-রোদ্দুরে রূপসী নীল নয়না ধরা দিল তার সমস্ত রঙ রূপের ডালি নিয়ে |




দিনের শেষে পাহাড়ের কোলে রিসর্টের বুকে নেবে এল মায়াবী সন্ধ্যে :

"মেঘপিয়ন পাঠায় তার,

আরিতারের লেকের ধার |

সিঁড়ির ধাপে অতঃকিম?

দৃশ্য মুখর মানখিম |

রূপের ডালি পাহাড়ময়,

ব্যালকনিতে সন্ধ্যে হয় |

জোনাক যেন খাদের শেষে,

রাত্রি নিবিড় ঘুমের দেশে |"

descriptionসিলারি গাঁও Emptyইয়াকেতন

more_horiz
ইয়াকতেন (৩০-০৫-২০১৬)
"বখিম ভিলেজ রিসর্ট" - এটাই ছিল আরিতার এ আমাদের আস্তানা গত রাতে | পাহাড়ের বুকে নাগরিক স্বাচ্ছন্দের ভরপুর আয়োজন | চমৎকার লোকেশন | ঘরে বসেই জানালা দিয়ে কিংবা লাগোয়া ব্যালকনি থেকেই দেখা যায় ঢালু সামনের খাদ, বিস্তীর্ণ উপত্যকা, দূরের পাহাড় শ্রেনী | হোমস্টের মালিক মদন রাই চমৎকার মিশুকে মানুষ | প্রতিটি অতিথির সাথে আলাপ করাই তাঁর শখ | বাঙালি রান্নার ঠাকুর এনেছেন অতিথিদের স্বাদু আপ্যায়ন এর দিকে নজর দিতে (কেননা বাঙালীদের যাতায়াতই বেশী) | পাশেই তাঁর অর্কিড গার্ডেন আর পাহাড়ের ঢালে বিস্তৃত চাষবাস | তিনতলা বাড়ীতে তেরটি রুম | প্রতিটিতেই টেলিভিশন, বাথরুমে গিজার, সঙ্গে ক্যাম্প ফায়ার - ডিজে এর মত আধুনিকতম ব্যবস্থা | ঢালু পাহাড়ী জঙ্গল ঘেরা বাড়ীটি ঘিরে চমৎকার গোয়েন্দা বা ভৌতিক উপন্যাস হতে পারে একান্তভাবেই তার অবস্থানগত বৈচিত্রের কারণে | এত দূর্গম স্থানে এত নিখুঁত আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে |






কিন্তু এই সব স্বাচ্ছন্দ্যের অনেকটাই যদি না থাকত তবে মানুষ আর প্রকৃতির মেলবন্ধন হতে পারত আরো সহজে | ধরা যাক বিদ্যুৎ নেই | টিমটিমে লণ্ঠন বা মোমবাতির আলোয় চা ও পাকোড়া মুখর সন্ধ্যে | বাইরে ঝিঁঝি পোকার ডাক | রাতভর বাইরে বিচিত্র প্রাকৃতিক আওয়াজ | টিনের চালে বৃষ্টির টিপ টিপ ধ্বনি | যাই হোক আমার এই অদ্ভুত ভাবনা পেরিয়েই বৃষ্টিস্নাত, মেঘাচ্ছন্ন সকাল | ফলত বরফ ঢাকা পর্বতমালা আজ অদৃশ্য মেঘের আড়ালে |

আজকের গন্তব্য ইয়াকতেন |

আরিতার থেকে ঘন্টা তিনেকের পথ | মাঝে পাকইয়ং এ ঘন্টা খানেকের বিরতি | উদ্দেশ্য নারায়ন প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ | তিনিই আমাদের পূর্ব সিকিম ভ্রমনের আর্কিটেক্ট | তাঁরই গ্রন্থনায় প্রতিটি জায়গার হোমস্টে বুকিং, যাতায়াতের সর্বক্ষণের গাড়ী, খাওয়া-দাওয়া এবং দর্শনীয় স্থান ভ্রমন একই সূত্রে বাঁধা | খুবই মিষ্টভাষী , বিনীত এবং অতিথি বৎসল মানুষ | মুখোমুখি সাক্ষাতে উপরি পাওনা ওঁনার বাড়ীর ঐতিহাসিক মিউজিয়াম দর্শন | ২১০ বছরের কাঠের বাড়ীটিই একটি চলমান ইতিহাস | নারায়ন প্রধান এ বাড়ীর অষ্টম প্রজন্ম | বিভিন্ন অ্যান্টিক জিনিষের সমাহারে শোভিত এ ঘর | এতে গণ্ডারের শিং, পাইথনের চামড়া যেমন আছে, তেমনি রয়েছে পুরোন রেডিও, গ্রামোফোন, লণ্ঠন, মুদ্রা বানানোর মেশিন, বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাম্প ইত্যাদি সহ আরো কত কি |



পাকইয়ং থেকে ইয়াকতেন যাবার পথে পড়ল নির্মিয়মান সিকিমের বিমানবন্দর |





ইয়াকতেন একটি ছোট্ট পাহাড়ী গ্রাম | পাহাড়ের কোলে, মেঘ আর সবুজের মেলবন্ধনে গড়ে উঠেছে ভিলেজ ট্যুরিজম | "কোঠেবাড়ী" আজ আমাদের ডেন | এ কোঠেবাড়ী সেই বাঈজী আখড়া নয়, এ হল হোমস্টের আদুরে নাম |


আজ এখানে সান্ধ্যকালীন মনোরঞ্জনের প্রভূত ব্যবস্থা - ক্যাম্প ফায়ার, বারবিকিউ, আদিবাসী নৃত্য ইত্যাদি | শহুরে মানুষ যে ধরনের বিনোদনে অভ্যস্ত আর কি |

প্রতিবেশী ভ্রমণার্থীদের সাথেও অালাপ-পরিচয় হল | সুদূর ইয়াকতেন এ এসে যেন জুড়ে গেল বিরাটী-বেহালা-শ্রীরামপুর |


"সিকিমের পূর্ব দিকে পর্যটনের নতুন ডেন,
ছায়ায় মায়ায় বাঁধবে এবার পাহাড়ী গাঁও ইয়াকতেন |
উড়বে বিমান চড়বে মানুষ ছোট্ট গ্রামের ধার ঘেসে,
মেঘ যেখানে খামখেয়ালে লুকোচুরির অভ্যেসে |
পাহাড় সেথা শান্তি জোগায় , ক্লান্তি-শ্রান্তি নিরুদ্দেশ,
ভরসা রেখো ইয়াকতেনে, ভগবানের নিজের দেশ |"

descriptionসিলারি গাঁও EmptyRe: সিলারি গাঁও

more_horiz
ইয়াকতেনে ইয়েতি (৩১-০৫-২০১৬)
না, চমকানোর বিষয় নয় | সত্যি সত্যিই ইয়েতি আসেনি | ইয়েতির উপস্থিতি বিষয়ে সারা পৃথিবীতেই সন্দেহ আছে | কিন্তু গতরাতে হঠাৎ "শব্দ-কল্প-দ্রুম" সহযোগে যে "ঢিক্ ঢিক্" ডিজে পাহাড়ের নিস্তব্ধতাকে অযাচিত ভাবে খান খান করে দিচ্ছিল, তাতে জটায়ু বা তাঁর স্রষ্টা (সত্যজিৎ রায়) বেঁচে থাকলে "ইয়াকতেনে ইয়েতি" নামে এক অবিস্মরনীয় উপন্যাসের জন্ম হত, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই | লোডশেডিং এর কারণে ডিজে শুরু হল রাত এগারোটায়, আর তাতেও প্রতিবেশী ভ্রমনপিপাসুরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লেন তালে তাল মেলাতে, তাতে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্রই প্রতিফলিত | আজকাল পূজো, বিয়ে, বেড়ানো সর্বত্রই ডিজের তালে তাল মেলানোর এক ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, সঙ্গে রঙীন জলের নেশাতুর মজলিস | সকলের কানেই মোবাইল হেডফোন, সবসময়ই বেজে চলেছে গান | এসব ছাড়া সব কিছুই আজকাল "বোরিং" | কিন্তু বহিরঙ্গের এত রকম তাল যে আমাদের উদ্বেলিত করে, আমরা কি খুঁজতে ভুলে যাচ্ছি প্রাণের সুর? প্রকৃতির মাঝেই লুকিয়ে আছে সেই রূপকথার চাবিকাঠি | এই সাতপাচঁ ভাবতে ভাবতেই কখন যে চোখ জুড়িয়ে এল, টেরই পাইনি | ঘুম ভাঙল মোবাইলের অ্যালার্ম ক্লকে | সকাল পাঁচটায় "ঝান্ডি দাঁড়া" যাবার কথা ট্রেক করে | শুনেছি অসাধারণ "ভিউপয়েন্ট" | কিন্তু বিধি বাম | কাল সারারাত্রি বৃষ্টি হয়েছে | আর সকালেও আকাশ মেঘলা | তাই ট্রেকিং এর প্ল্যান বাতিল | তবে সাড়ে সাতটায় চায়ের কাপ হাতে যখন ব্যালকনিতে বসলাম, তখন আবার ঝকঝকে দিন | উজ্জ্বল সূর্যকিরণে ঝলমল করছে পাহাড়ী উপত্যকার চারপাশ |
ইয়েকতেন এ আজ দ্বিতীয় দিন আর সামান্য ঘোরাঘুরির প্ল্যান |
প্রথম যাওয়া "সরমসা গার্ডেন" | ছোট্ট পাহাড়ী নদী রানীপুলের ধারে বিভিন্ন গাছগাছালি, ফুল ও ফলের সমারোহে এক ছিমছাম বিস্তীর্ণ বাগান | কিন্তু প্রাকৃতিক নয়, বানানো কৃত্রিম ভাবে খুব যত্নে | অনেকটা গ্যাংটক বা দার্জিলিং এর "ফাইভ / সেভেন / টেন পয়েন্টস" এর ধাঁচে নতুন একটা "স্পট" গড়ে তোলার চেষ্টা | পাকইয়ং এ বিমানবন্দর চালু হলে ইয়াকতেন কে কেন্দ্র করে পর্যটন এর জোয়ার আসতে চলেছে | তার প্রচেষ্টার ছাপ সর্বত্র - পরিকাঠামো, রাস্তাঘাট , পর্যটন পরিকল্পনা , কর্মসংস্থান ইত্যাদি |


পরের গন্তব্য রুমটেক মনাষ্ট্রী | আগেও এখানে এসেছি, তবে গ্যাংটক থেকে | এবারে ঢুকতে গিয়ে প্রথমেই ধাক্কা | পরিচয় পত্র ছাড়া ঢোকা যাবে না | বোঝো ঠ্যালা ! ভগবান পরিচয় পত্র মিলিয়ে দর্শনার্থীদের ভিতরে ঢুকতে দেবেন | গৌতম বুদ্ধ বোধহয় এরকম বলে যান নি | আর আগের দুবারের অভিজ্ঞতায় এরকম কিছু না থাকায় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে বেরোই নি (আর যাই হোক এতো আর বিদেশ নয়) | যাই হোক আমার স্টাইলে "পটিয়ে-পাটিয়ে" ঢুকে পরলাম (এ কেমন সিকিউরিটি যাকে ম্যানেজও করা যায় !) | ভিতরে ঢুকেও একপ্রকস্থ অস্বস্তি | জোড়কদমে পূজা-পাঠ চলছে দলবেঁধে, সারি দিয়ে | তার মধ্যেও আমাদের মত দর্শনার্থীদের ঢোকায় বাধা নাই | চারপাশে দাড়িয়ে সার্কাসের মত আমরা দেখছি | এমত অবস্থায় বৌদ্ধ লামারা কি করে গভীর মনসংযোগে পূজা-পাঠ চালিয়ে যান, তা আমার বুদ্ধির অগম্য | অবশেষে ভগবান বুদ্ধের মূর্তির কাছে পৌঁছলাম | তাঁর ধ্যানমগ্ন স্মিতহাস্যময় স্থিতধি মূর্তি দেখে সত্যিই মনে হল "বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি" |

ইয়াকতেন এ সন্ধ্যা এবং রাত্রি, দিনের চেয়েও আকর্ষনীয়, মোহময়ী | গ্যাংটক সহ সিকিমের সকল জনপদ যেন আলোর পিদিম জ্বালিয়ে ফুটে উঠছে আলোকবর্তিকা হয়ে,পাহাড়ের বুকজুড়ে | কখনও মেঘে ঢাকা তারার মত বিলীন হয়ে যায়, আবার পরমুহুর্তেই উদ্ভাসিত হয় আলোকমঞ্জরী রূপে |
সিলারী গাঁও এর মত বড়ই ভালো লাগল ইয়াকতেন | এখনও অধিক ব্যবহারে তার আনকোরা আলগা রূপ খসে পড়েনি :
"ব্যালকনিতে সূর্য ওঠে, সঙ্গে ধূম্র চায়ের কাপ,
"কোঠেবাড়ী"র সিড়ির ধাপে সবুজ রঙের শ্যওলা ছাপ |
সহজ মানুষ, সরল হৃদয়, আপ্যায়নে আন্তরিক,
আলগা সতেজ রূপের ডালি পাহাড় জুড়ে চতুর্দিক |
সন্ধ্যাবেলা আলোক মালায়, আকাশ-পাহাড় ঠিক জুড়ে,
ছোট্টগ্রাম ইয়াকতেন, পাকদণ্ডী পথ ঘুরে |
শান্ত শীতল, নিরালা নিবিড়, মন খারাপের দিনশেষে,
ইয়াকতেনে ভরসা রেখো, মেঘ পিয়নের এই দেশে | "

descriptionসিলারি গাঁও EmptyRe: সিলারি গাঁও

more_horiz
রোলেপ (o১-০৬-২০১৬)
আজ প্রাতরাশের পর ইয়াকতেন পর্ব শেষ | পরবর্তী গন্তব্য রোলেপ |
গতকাল আব্দার করাতে আজ প্রাতরাশে মোমো | বাঙালী ট্যুরিস্টদের তুষ্ট করতে ইদানিং দেখলাম লুচি,পরোটা ইত্যাদি তেই নজর বেশীরভাগ হোটেল / হোমস্টের | আর বাঙালীরও বলিহারি, ঘরের বাইরে বেরোলেই ডাল,ভাত,পোস্ত,চচ্চড়ি,মাছ ইত্যাদি খেতে বেশী ইচ্ছে জাগে | যাই হোক অথেনটিক সিকিম স্বাদের মোমো খাবার জন্যই আমার ওই সুপারিশ | আর সে ইচ্ছে স্বাদে-গন্ধে উসুল |
সকালেই কে ভি সুব্বার ("কোঠেবাড়ী"র মালিক) সঙ্গে বিশদে আলাপচারিতা | ইয়াকতেনে পুরোটাই সুব্বা জনগোষ্ঠীর বাস | ওঁনাদের আত্মীয় পরিজন মিলেই আটটি হোমস্টে গড়ে উঠেছে সরকারী সহযোগীতায় প্রায় বছর দেড়েক আগে | ওঁনাদের জমি, সরকারের বানিয়ে দেওয়া পরিকাঠামো এবং পারিবারিক পরিচালনা | চারপাশে চাষবাস চলছে ফুল, ফল ও সবজি | শীতকালই আদর্শ সময় এখানে আসার | আগামী ফেব্রুয়ারীতে (২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭) ইয়াকতেন ফেস্টিভ্যাল | ওই সময় আবার আসার আমন্ত্রণ জানালেন | দেখা যাক |
ইয়াকতেন থেকেই আমাদের সারথি ফুর্বা তামাং আগামী কয়েক দিন তার বোলেরো গাড়ী নিয়ে | ভারী মিষ্টি স্বভাবের ছেলে, সদা হাস্যময় এবং যে কোন সাহায্যের জন্য দুপা বাড়িয়ে | ইয়াকতেন থেকে রওনা দিয়ে সে প্রথমেই নিয়ে গেল তার গ্রাম নয়া বস্তি | ইয়াকতেনে থাকার ব্যবস্থা রেখে এই অঞ্চলে বিভিন্ন ভিউপয়েন্ট, পার্ক, ট্রেকিং রুট, পিকনিক স্পট, গার্ডেন ইত্যাদি বানানোর কর্মযজ্ঞ চলছে জোড় কদমে | আমি আমার মানসচক্ষে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি গিজগিজে ভীড় অদূর ভবিষ্যতে ৷
পথে পড়ল কার্তন মনাস্ট্রী | খুব পুরোন, অসাধারন প্রাকৃতিক পরিবেশ আর সবচেয়ে বড় কথা হামলে পড়া ভীড় নেই |


প্রায় দুঘন্টা পাহাড়ী পথ বেয়ে পৌঁছলাম রোলেপ | গাড়ী চলার রাস্তা শেষ, কিন্তু আমাদের আস্তানার খোঁজ নেই | কারও মোবাইলে সিগনাল নেই যে ফোন করা যায় | অবশেষে চোখে পড়ল কিছু সিড়ির ধাপ | রাস্তা যেখানে শেষ, সেখানেই সিড়ি শুরু | মনে হল নদীর দিকে যাচ্ছে | সেই সিড়ি বেয়ে, সাঁকো পেড়িয়ে নদীর মুখে পৌঁছতেই "চিচিং ফাঁক" এর মত আবিষ্কৃত হল আমাদের আস্তানা | আর হ্যাঁ, নদীর পাড়েই | নদীর নাম "লুম্ফু খোলা", অনেকে একে "রোলেপ খোলা"ও বলে | ছাঙ্গু লেক থেকে শুরু হয়ে তিস্তাতে গিয়ে মিশেছে এ নদী |

নদীর রূপ এখানে ভয়ঙ্কর | তিন-চার দিক থেকে পাথরের বুক চিরে আছড়ে পড়ছে জলরাশি এবং বিভিন্ন পাথরে ধাক্কা খেয়ে এগিয়ে চলেছে রুদ্র মূর্তিতে | ব্যালকনিতে বসেই এহেন নদীর যাত্রা,কারসাজি,গান ইত্যাদিতে মগ্ন হয়ে কাটিয়ে দেওয়া যায় বেশ কয়েকটা বেলা | সবচেয়ে আনন্দের বিষয় এ জায়গা তথাকথিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন | মোবাইল, ইন্টারনেট, খবরের কাগজ, টেলিভিশন ইত্যাদি কিছুই নেই | ফলত মনকে স্থিতধি করার সুযোগ আর জীবনে শান্তি - আনন্দ খুঁজে পাওয়ার পড়ে পাওয়া হাতছানি | "এ নদী কেমন নদী" বা "ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে" গানগুলি যেন রোলেপ এর জন্যেই লেখাঃ
"নদী সেথায় স্রোতোস্বিনী, গাছ-পাহাড়ের কোলে,
তারই পাশে বাংলো বাড়ী, নিবিড় স্থানটি রোলেপ |
নদীর ঢেউয়ে ভাঙ্গাগড়া, গল্প কুলু কুলু,
শান্তিকামী মন -মানুষের জীয়ন কাঠির মুলুক |
দুলছে সাঁকো, জুড়ছে দুধার নদীর বাঁকে বাঁকে ,
পাথর বুকে কল্লোলিনী, গতির ছবি আঁকে |
নদীর পাড়ে আস্তানা ঠিক ক্ষতস্থানে প্রলেপ,
অভিজ্ঞতার নতুন সোপান পূব সিকিমের রোলেপ |"

descriptionসিলারি গাঁও EmptyRe: সিলারি গাঁও

more_horiz
পদম চেন (০২-০৬-২০১৬)
নদীর আওয়াজে অন্যরকম সুপ্রভাত !

"একই অঙ্গে এত রূপ দেখিনি তো আগে " এর মতই এ নদী বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপে প্রতিভাত হয় | কাল দুপুরে একরকম লেগেছিল, সন্ধ্যাবেলা গাঢ় অন্ধকারে সফেদ ফেনিল সশব্দ উপস্থিতিতে অন্যরকম আর আজ রৌদ্রকরোজ্জ্বল প্রভাতে একদম তার অন্যরূপ |




নদীর পাড়ে পাহাড়-জঙ্গল পরিবৃত একটিই বাংলো বাড়ি - আমাদের হোমস্টে | আরো একটি তৈরি হয়েছে, চালু হয় নি এখনো | এখানে চারটি ঘর - তিনটি অতিথি দের, আর একটিতে হোমস্টে মালিক ও তার ফ্যামিলি থাকেন | এই পান্ডব বর্জিত স্বর্গরাজ্যে কাল সন্ধ্যাবেলা বসে মনে হচ্ছিল "মেজাজটাই আসল রাজা, আমি রাজা নই" I চার দিক নিকষ কালো নিবিড় অন্ধকার | দূরে পাহাড়ের গায়ে চারটে টিমটিমে আলো | আর নদীর গগন বিদারী শব্দ রাত্রির নিস্তব্ধতাকে খান খান করে দিচ্ছে | আমাদের সারথী ফুর্বা আর হোমস্টের মালকিন বার কয়েক জানতে চাইলেন এত আওয়াজে কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা | কিভাবে ওঁদের বোঝাব যে এই সেই যায়গা যেখানে আমি ও আমার কিছু বিশেষ বন্ধু মিলে, আমাদের পারিবারিক ও ব্যবসায়িক ব্যস্ততা সামলে, যদি বেশ কিছু অলস দিন বা সন্ধ্যে কাটাতে পারতাম এইরকম প্রকৃতির কোলে সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে, তাহলে বাংলা বা ইংরাজী সাহিত্যের বেশ কিছু মনিমাণিক্যের উৎস সন্ধানে ব্রতী হওয়া যেত | বিকেল বেলাতেই হালকা ট্রেক করে ছুঁয়ে আসা হয়েছিল ছোট্ট দড়ির ব্রিজ যা কিনা নদীর এপাড় ওপাড় জুড়ে দিচ্ছে পথচলতি মানুষের জন্য |

আজ সকালে নদীর পাড়ে তার উষ্ণ সান্নিধ্য কিছু সময় কাটিয়ে প্রাতরাশের পর রওনা দিলাম পদম চেন এর দিকে |
রাস্তায় রঙ্গোলি তে সিল্ক রুটের পাস বানানো হল | পথে পড়ল এক পাহাড়ী ঝরণা "কিউ খোলা" |


ঘণ্টা দুয়েকের যাত্রা শেষে পাহাড়ের কোলে " সিলভার উড রিট্টিট", পদম চেন | সুন্দর জায়গা | কিন্তু সিলারী গাঁও, ইয়াকতেন, রোলেপ এর মত জায়গা পেরিয়ে এসে পদমচেন নতুন কোন মূর্চ্ছনা জাগায় না | দুপুরের খাওয়ার পর ঘুরে এলাম কাছেই পাহাড়ের উপর এক মনাষ্ট্রী | পাহাড়ের পরতে পরতে যেমন রহস্য, তেমনই পাহাড়ের অলিতে গলিতে লুকিয়ে আছে মনাষ্ট্রী | কেন বৌদ্ধ ধর্ম বা গুম্ফা কেবল পাহাড়েই বেশী প্রসারিত কে জানে?

পদম চেন আমার মতে লম্বা সিল্করুট যাত্রাকে ছোট করার জন্য একটা ছোট পাহাড়ী বিশ্রামস্থল ৷
"পদমচেনে সন্ধ্যাবেলা আড্ডা জমে ক্ষীর,
যাত্রাপথে সবখানেতেই বাঙালীদের ভীড় |
সুযোগ পেলেই বাঙালী যায় পশ্চিম থেকে পূব,
ঘুরতে জানে, সমঝদার, ভ্রমন রসে ডুব |
এই ভ্রমনে আলাপ হল মিত্তির-বোস-সেন ,
চা-পাকোড়া-গল্পগুজব, সাক্ষী পদমচেন |"

descriptionসিলারি গাঁও EmptyRe: সিলারি গাঁও

more_horiz
নাথাং ভ্যালি (o৩-০৬-২০১৬)

পদমচেন থেকে আজকের গন্তব্য নাথাং ভ্যালী |
স্বল্প দূরত্বে জুলুকের বিখ্যাত জিগজ্যাগ রাস্তা পেরিয়ে আমাদের যাত্রা আজ উচ্চাকাঙ্খী I প্রথম বিরতি ১১২০০ ফুট উচ্চতায় থাম্বি ভিউ পায়েন্টে |


এরপর কত যে নাম না জানা জায়গায় থেমেছি প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হয়ে আর কত না ছবি তোলা হল তার ইয়ত্তা নেই | পথের রাশি রাশি নাম গোত্রহীন ফুল, যেখানে সেখানে চড়ে বেড়ানো ইয়াক আর অবশ্যই মেঘ-রৌদ্রের লুকোচুরি |


সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়াতে সর্বত্রই মিলিটারীর সদর্প উপস্থিতি, অজস্র ট্রেনিং ক্যাম্প, ইতি-উতি ছড়ানো ব্যাঙ্কার | কৌতূহল বশতঃ দু-তিনটি ব্যাঙ্কার এ সরেজমিনে তদন্তও করা হল অত্যুৎসাহে |


ক্রমশ যাত্রাপথে উপর থেকে দৃশ্যমান "নাথাং ভ্যালী" | চার দিকে পাহাড় ঘেরা একটা উল্টানো বাটি / গামলার (অবতল দিক) মত জায়গাটি | চারিদিকে সবুজ ঘাসে মোড়া উপত্যকা আর ঠিক মাঝখানে কিছু বাড়িঘর, দূর থেকে খেলনার মত লাগে | যারা ডালহৌসি এলাকার (হিমাচল প্রদেশে) খাজিয়ার গিয়েছেন বা ধারনা আছে, তারা সহজে বুঝতে পারবেন অবতল উপত্যকার বিশেষত্ব বিষয়ে | যদিও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যে দুটো এলাকার আর কোন মিল নেই |

যাই হোক উপর থেকে নাথাং ভ্যালি দেখে আমরা পৌঁছলাম পুরোন বাবা মন্দিরে | বাবা হরভজন সিং এর নামে এই ধর্ম নিরপেক্ষ মন্দির (হিন্দু, মুসলিম, শিখ ও খ্রিষ্ট ধর্মের চিহ্ন সমন্বিত) | কথিত আছে উনি নিরুদ্দেশ হবার পরেও সীমান্তের সর্বত্রই ওঁনার উপস্থিতি অনুভূত হয় আর সমস্যার সমাধানও করে দেন | ওঁনার নামে সমস্ত রকম সরকারি প্রথাই পালিত হয় আজো (যেমন বেতন, ছুটি, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি) | ভ্রমনার্থীদের সুবিধার্থে ছাঙ্গু লেকের কাছাকাছি নতুন একটি বাবা মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় পরবর্তীতে |

এরপর সরাসরি নাথাং ভ্যালিতে নেমে আসা | এখানেই আজ রাত্রিবাস | এখানে আমাদের ঠিকানা "সোনম হোমস্টে", লাকপা শেরপা ( দিদি ) এর পরিচালনায় | এখন অবধি সবচেয়ে আন্তরিক এবং অতিথি বৎসল আস্তানা | আমাদের একটি ঘরের বুকিং | কিন্তু আজকে ওনাদের আর কোন ট্যুরিস্ট না থাকায় দ্বিতীয় আর একটি ঘরও ছেড়ে দিলেন কোনও আলাদা খরচা ছাড়াই, যাতে আমরা একটু স্বাচ্ছন্দে দুটি ঘর মিলিয়ে থাকতে পারি | খুব সুস্বাদু খাবার (এখন অবধি সবচেয়ে ভালো), খাবার জন্য গরম জল, এমনকি হাত ধোয়ার জন্যেও গরম জলের ব্যবস্থা | অতি উচ্চতার কারণে (১১৭০০ ফুট) আমার স্ত্রী ও বাচ্চাদের কিছু সমস্যা হওয়ার পর (মাথা ব্যথা, বমি, গা গোলানো, গা ম্যাজম্যাজ), দিদি পুরো ঝাপিয়ে পড়লেন সমস্যা সমাধানে | ছেলের বমি হতে তাকে দিলেন গরম ভুট্টার খই (পপকর্ন) এবং এক কোয়া রসুন (বমির এই ঘরোয়া টোটকা আমার জানা ছিল না)| আমার স্ত্রীকে (তার ছিল মাথাধরা, গা গোলানো, বমি হয় নি) দিলেন গরম হলদি-দুধ এবং তার পরে কিছু একটা জ্বালিয়ে তার ধোঁয়া শুঁকতে দিলেন | সন্ধ্যেবেলা কফি-পাকোড়া দিয়েই বলে গিয়েছিলেন চা/কফি খেতে ইচ্ছে হলেই যেন দ্বিধা না করি |
ইতিউতি ঘোরাঘুরি আর নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের মাঝে কেটে ছিল অলস বিকেল আর সন্ধ্যে | রূপের আস্বাদনে সময় আর কবে বাঁধ মেনেছে !
সন্ধ্যে বেলা থেকে শুরু হল হাড় হিম করা শীত | এবারের ভ্রমণে এই প্রথম উপভোগ্য শীতের (আমার কাছে !) আমেজ পাওয়া গেল |
"পাহাড় ঘেরা উপত্যকা, 'নাথাং ভ্যালী' নাম,
মেঘ-পাহাড়ের খুনসুটিতে স্নিগ্ধ নিবিড় গ্রাম |
শীতকালেতে বরফ সাদা, ভ্যালীর চারিপাশ,
মিলিটারীর দৃষ্টি ঘেরা সীমান্তে বারোমাস |
লেক আছে, মন্দিরও - কাছে এবং দূরে,
রূপের ছটা, ঘনঘটা শান্ত অচিনপুরে |"

descriptionসিলারি গাঁও EmptyRe: সিলারি গাঁও

more_horiz
জুলুক (o৪-০৬-২০১৬)

রাত্রি খুব একটা আরামদায়ক হয়নি | শীতের কামড়ে "ত্রাহি ত্রাহি রব" | একটা কম্বল ও একটা লেপ চাপিয়েও দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছিল (সোয়েটারও গায়ে ছিল !) |
ভোরবেলা যথারীতি অভ্যাস বসত ভ্যালীটা একবার পাক খেয়ে এলাম | যদিও বৃষ্টি থাকায় বেশীদূর যাওয়া যায় নি ।


প্রাতরাশে মশালাদার নুডলস | ব্যাতিক্রমী হওয়ায় আরো স্বাদু লাগলো | মানে প্রতিটি হোমস্টের খাবারের একটা ধরাবাঁধা ছক আছে | সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে দুধ চা | অাটটা থেকে নটার মধ্যে প্রাতরাশে লুচি/পরোটা সঙ্গে আলুর তরকারি | দুপুরে ভাত, ডাল, আলুভাজা/আলুর তরকারি আর ডিম | সন্ধ্যায় চা ও পাকোড়া | রাতে ভাত / রুটি, ডাল, আলুভাজা/আলুর তরকারি আর চিকেন | বিগত কদিন ভোজন রসিক বাঙালীপ্রাণ গতধরা ছকে হাঁপিয়ে উঠেছে আর কি |
যাই হোক প্রাতরাশ শেষে প্রথম দ্রষ্টব্য হাতির শুঁড়ের মত দেখতে "কুপুপ লেক" |


দূরে পাহাড়ে বরফও দৃশ্যমান | মাঝে আরো কিছু ভিউ পয়েন্ট ও নাম না জানা ঝিল পেরিয়ে নতুন বাবা মন্দির ৷ তারপর যাত্রা শুরু ছাঙ্গু লেকের দিকে | কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে মাঝপথে রাস্তার পাশে বরফ | ফলত বিরতি শেরথাং এ ৷ বাচ্চাদের উত্তেজনা, বরফে কিঞ্চিত দাপাদাপি এবং অবশ্যই ফোটো সেশন | জমাটি নয়, কুচো ঝুড়ো বরফ |

বরফ শীতল কাহিনী শেষে ছাঙ্গু লেকে পদার্পন | এ আমার তৃতীয়বার এখানে আসা | ছাঙ্গু তার রূপে-রসে অনেক পরিবর্তিত | একটা সাজানো, গোছানো বানিজ্যিক ছাপ পড়েছে এবং ফলত লেকের আলগা সৌন্দয্য উধাও | লেকের পারে ঘোরাঘুরি, ইয়াকের পিঠে চেপে ফোটোসেশন, কিঞ্চিত কেনাকাটা ও খাওয়া দাওয়া |

এরপর ঘন্টা চারেকের ড্রাইভ | গন্তব্য জুলুক | পুরোন রাস্তা দিয়ে ফিরে নাথাং ভ্যালী পেরিয়ে পদমচেন এর ৯কিঃমিঃ আগে জুলুক |
জুলুকের প্রধান আকর্ষন জিগজ্যাগ রোড | পাহাড়ের গা বেয়ে সর্পিল পাকদন্ডী পথ মনে করিয়ে দেয় রঞ্জন প্রসাদের সেই বিখ্যাত গান "ঘুরন্ত জিপের চাকায় / হাইওয়ে যেন গান গায়" |


পাহাড়ের কোলে আজ আমাদের বিশ্রামস্থল "মুখিয়া হোম স্টে" | অন্য প্রতিটি আস্তানার মত এই হোমস্টে টিও পাহাড়ের কোলে ৷ খুব সুন্দর লোকেশন | কিন্তু বেশ খানিকটা উঁচুতে রাস্তা থেকে | সিড়ি ও পাথরের এ বড়ো খেবড়ো চড়াই রাস্তা দিয়ে ওঠা বয়স্ক ও বাচ্চাদের জন্য সমস্যা জনক | কিন্তু এটুকু কষ্ট মেনে নিলে ওখান থেকে নৈসর্গিক দৃশ্য খুব সুন্দর |

সিলারী গাঁও বা ইয়াকতেন এর মতই পাহাড়ী গ্রাম জুলুক | কিন্তু সৌন্দয্যের বিচারে আমার মতে আগের দুটি স্থান অনেক এগিয়ে |
"ভ্রমণ পথের শেষ স্টেশন সিল্ক রুটের জুলুক,
জিগজ্যাগ রোড, পাহাড় বেয়ে রাস্তাঘাটের সুলুক,
জিপের চাকায়, শরীর ও মন দুলছে যেমন দুলুক,
মন, ক্যামেরা আপন ঘোরে ফ্রেমের ছবি তুলুক,
ঘরের মানুষ ফিরবে ঘরে, নিজের খাস মুলুক,
এবার আসি, ফিরবো আবার, বিদায় তোমায় জুলুক |"

descriptionসিলারি গাঁও EmptyRe: সিলারি গাঁও

more_horiz
শিলিগুড়ি (o৫-০৫-২০১৬)
সকালে প্রাতরাশের পর জুলুক বিদায় | পাহাড় থেকে তরতরিয়ে নামা মাটির পৃথিবীতে অর্থাৎ সমতলে | শিলিগুড়ি ঘণ্টা পাঁচেকের পথ | মাঝরাস্তার পর থেকে প্রায় পুরোটাই তিস্তা আমাদের সঙ্গে | নদীর বহমানতা জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয় |



মাল্লি তে লাঞ্চব্রেক নিয়ে বৃষ্টি মাথায় করে শিলিগুড়িতে প্রবেশ বিকেলবেলা | আজকের দিন আত্মীয় পরিজনদের সাথে কাটিয়ে কাল সকালের শতাব্দীতে কোলকাতা ফেরা |
শিলিগুড়িতে আমার জেঠুর বাড়ী | আমার ঠাকুরদাদা আর জেঠুর মা, ভাই-বোন ছিলেন | ফলত আমার বাবা আর জেঠু মামাতো-পিসতুতো ভাই | বাবা আর জেঠু কেউই আর ইহজগতে নেই বহুদিন | গত বছর এই সময় ডুয়ার্স ভ্রমণ শেষে যখন এখানে এসেছিলাম জেঠি আর আমার শ্বশুড়মশাই দুজনেই ছিলেন | কিন্তু এবার ওঁনারা কেউই আমাদের মাঝে নেই | সেই স্মৃতি রোমন্থনই হল বেশ কিছুক্ষণ দাদার সাথে | এখন এখানে দাদা-বৌদি আর তাঁদের ছোট্ট বাচ্চা থাকে | জেঠু-জেঠীর অনুপস্থিতে তিনতলা প্রাসাদপম বাড়ী এখন খাঁ খাঁ করছে | দুই দিদি বিবাহ সূত্রে শিলিগুড়িতেই আর তৃতীয়জন দেরাদুনে | শিলিগুড়িস্থিত দুই দিদি গরমের ছুটিতে দেরাদুনে বোনের কাছে | তাই দেখা হল না | তবে বড় জামাইবাবু এসেছিলেন | অনেক গল্পগুজব, খাওয়া দাওয়া হল | প্রচুর আয়োজন করেছিলেন বৌদি | ইন্টারনেট মুখী ভার্চুয়াল দুনিয়ার মাঝে, আপনজনের সাথে মুখোমুখি সাক্ষাতের যে উষ্ণতা, সেটাই আমাদের সম্পর্কগুলো বাঁচিয়ে রাখে | বর্তমান প্রজন্ম যদি এই জীবন বোধের কথা মাথায় রাখে, পৃথিবীর অনেক সামাজিক সমস্যারই উদ্রেক হয় না |

রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়া | খুব সকালে স্টেশনে যেতে হবে | ভোর ৫.৩০ এ কলকাতা ফেরার ট্রেন |
"পাহাড় থেকে সমতলে, সফরসঙ্গী তিস্তা,
শেষের পথে ভ্রমন কথা, মনখারাপের দিস্তা |
রইল কদিন স্মৃতির মাঝে জীবনের এই খাতায়,
পাহাড় তোমায় বিদায় জানাই আট দিনের মাথায় |
পাহাড় নেশায় মত্ত যাঁরা, কিছুতেই নেই নিস্তার,
আসব ফিরে সিকিম আবার, রইল সাক্ষী তিস্তা |"

descriptionসিলারি গাঁও EmptyRe: সিলারি গাঁও

more_horiz
উপসংহার (০৬-০৫-২০১৬)
যে কোন ভাল জিনিষই খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যায় | দূর্গাপূজার জন্য সারা বছর অপেক্ষা, আসতেই চায় না | কিন্তু আসতে না আসতেই হুশ করে শেষ | ঠিক তেমনই বেড়ানো | আজকালকার অত্যধিক ব্যস্তবাগীশ সময়ের মাঝে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটানোর অবকাশ খুব সহজে মেলেনা, আর তাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয় | সুযোগ আসার পর তার প্রস্তুতি আর আগমনে প্রতীক্ষার উত্তেজনা অনেক সুখের, কেননা দেখতে দেখতে আট দিনের বেড়ানো শেষ | কাল থেকেই আবার দৈনন্দিন চক্রবুহে প্রবেশ আর দিনগত পাপ ক্ষয় ।
বেড়াতে বেড়াতে ডায়েরি লেখা ছোটবেলাকার অভ্যেস | কিন্তু সে চিরকালই কাগজ-পেনে অনেকটা নিজের অভিজ্ঞতা নিজের স্মৃতি রোমন্থনের জন্য তুলে রাখা | কিন্তু জনগনের সামনে উন্মোচিত কোন বাংলা লেখা বিশেষ লিখিনি কখনও, তা সে প্রবন্ধ, গল্প, ভ্রমন কাহিনী যাই হোক না কেন | কিছু পদ্য লিখেছি বাংলায় | আর অধিকাংশ লেখাই ব্লগ এ ইংরাজী তে | গতবার ডুয়ার্সের ভ্রমন কথা সেভাবেই ইংরাজীতে লিখেছিলাম |
এবারেই প্রথম মনে হল দৈনিক ডায়েরী অনলাইন লেখা যায় কিনা | যারা যান নি, যারা যাবেন ভাবছেন, যারা আগে গিয়েছেন, তাদের সবাইকেই একটা মানস ভ্রমণ করানো যায় কিনা | সেই উদ্দেশ্যেই বিগত দশটা কিস্তি লেখা অল্প কিছু ছবি সহযোগে l ইন্টারনেট সংযোগ মসৃন না থাকায় কিছু কিছু সময় প্রতিদিনের লেখা প্রতিদিন পোস্ট করা যায় নি | তবে অনেকেই পড়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, আরো লেখার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন | সকলকেই অসংখ্য ধন্যবাদ |
সেই লক্ষ্যেই প্রতিদিন ফেসবুকে ডায়েরির মত করে বেরাতে বেরাতেই লিখেছিলাম। সে সমস্ত লেখাই সংকলিত, পরিমার্জিত রূপে একত্রে এই ব্লগ এ প্রকাশিত হল | যারা বাংলা ভাষাভাষী নন তাঁদের জন্য একটা ইংরাজী ভার্সনও লেখা হয়েছে | ইচ্ছে হলে সেটা আমার Wordpress ব্লগ এ পড়তে পারেন।
সকলের উৎসাহে আগামী জুলাই মাসে লন্ডন যাত্রাকালে লন্ডনের ডায়েরী লেখারও ইচ্ছে রইল |
বাংলা ভাষার মৌলিক চর্চা ক্ষেত্র আরো প্রসারিত হোক আমাদের সকলের সন্মিলিত উদ্যোগে | বাংলায় ভাবুন, লিখুন, পড়ুন ও পড়ান |
ধন্যবাদ | সকলে ভাল থাকবেন |
"ফুরায় আমার কথা, মুড়ায় গাছ নটের,
অপেক্ষাতে আবার, সুযোগ কবে জোটে |
সতেজ থাকার সঞ্জীবনী, দিন কয়েকের ব্রেক,
আটকে পড়া চক্রব্যুহে, চাপের ওভারটেক |
কাজের মাঝে আসুক ফিরে ঘোরার অপশন,
বাঁচবো সুখে সবাই মিলে, আনন্দে থাক মন |"

descriptionসিলারি গাঁও EmptyRe: সিলারি গাঁও

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply