Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionএশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  Emptyএশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan

more_horiz
ভূটান কে বলা হয় এশিয়ার সুইজারল্যান্ড।হিমালয়ের কোলে শান্ত স্নিগ্ধ এক অসাধারন সৌন্দর্য ভুমি এই থান্ডার ড্রাগনের দেশ।সাগর আমার অনেক ভাল লাগে কিন্তু তারচেয়েও অনেক অনেক বেশি ভাল লাগে পাহাড় । পাহাড়ের এক আলাদা সৌন্দর্য আর আকর্ষণ  আছে ।কেমন যেন মন পাগল করা আকর্ষণ ।তাই পাহাড়ের কাছে বেড়ানোর সুযোগ পেলে আমি পারতপক্ষে তা হাত ছাড়া করিনা ।
এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  Punakh10

সেবার যখন আমরা পাঁচ জন ভূটান গেলাম সময়টা ছিল সেপ্টেম্বর এর মাঝামাঝি । পাঁচজন না বলে সাড়ে চারজন বলাই সমীচীন কারন আমাদের সফরসঙ্গী অনু তখন বেশ ছোট বালিকা । আমাদের পুরো দলটি ছিল নপুরুষ দল ।অর্থাৎ এই দলের সবাই নারী । এই কারনে ঝামেলা হয়েছে অনেক কম  

যাইহোক ভূটান গিয়েছিলাম আমরা বাই রোড । কলকাতা থেকে জলপাইগুড়ি হয়ে জঁয়গা ।  আমরা গাড়ি ভাড়া করে চললাম জঁয়গা । এটা ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কুচবিহার জেলা । এখান থেকে ভূটান যাবার পথটাকে বা হাইওয়ে কে ওঁরা বলে ভূটান পথ । সমরেশ  মজুমদার না কার বইয়ে যেন পড়েছিলাম ভুটান পথে যেতে দিনের বেলায় গা ছম ছম করে । আসলেই অনেক নীরব নিস্তব্ধ রাস্তা । দুপাশে অরগানিক চা এর বাগান ।

আর এই পথেই পড়ে ভারতের তিনটি সংরক্ষিত বন জলদাপাড়া ,হাসিমারা আর তিতিক্ষেত্র । তবে একটা জিনিষ আমার দারুন লাগলো আর সেটা হল আমরা যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম তার দুপাশে যে দেহাতি বাড়িঘর ছিল  সবগুলাই দারুন পরিচ্ছন্ন আর গাছপালায় ঘেরা। সব বাড়ির আঙ্গিনায় ফুলের গাছ আছে ।  

প্রায় দুই কি আড়াই ঘণ্টা ড্রাইভ করে আমরা পৌঁছালাম জয়গাঁ ইমিগ্রেশন অফিস এ ।ইমিগ্রেশন অফিসার আমাদের পরামর্শ দিলেন   যেন আগামীবার দার্জিলিং ঘুরে যাই । দার্জিলিং ভুটানের মতোই পাহাড়ি সুন্দর দেশ আর খরচ ভুটানের চেয়ে অনেক কম । আমরা উনাকে বললাম অবশ্যই দার্জিলিং যাব কোন এক সময় -- ভদ্রলোক বেশ আমুদে ।
 
বাক্স পেটারা নিয়ে হেঁটেই চলে গেলাম ভুটান । গেটের এই পার এ ভারত আর  ওইপার এ ভূটান।


                                                                                              (চলবে)

Last edited by Admin on Fri Aug 03, 2018 4:54 pm; edited 2 times in total

descriptionএশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  EmptyRe: এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan

more_horiz
ভূটান গেট পার হয়ে চলে আসলাম ।সেখান এ আবার ইমিগ্রেশন । গেটের কাছেই অফিস ।ইমিগ্রেশন শেষ করে আমরা ছুটলাম জেরক্স বা ফটোকপির দোকান খুঁজতে ।সেই রাতটা আমরা ফুয়েন্টশলিং থাকতে চাচ্ছিলাম না তাই ভাবলাম সরাসরি রাজধানী থিম্ফু চলে যাই।ভুটানে প্রতিটা শহরে যাওয়ার জন্য আলাদা ভাবে পারমিট/অনুমতি নিতে হয় । আমাদের ভিসাতে ছিল ফুয়েন্টশলিং এর নাম তাই থিম্ফুর জন্য পাসপোর্টের জেরক্স কপি(ফটো কপি) জমা দিয়ে আর একটা ফর্ম পুরন করে থিম্ফু আর পারো এর অনুমতি নিতে হল।

এই অনুমতি নিতে গিয়ে বাধল এক ঝামেলা কারন  ঝুম বৃষ্টি । কি ফ্যাসাদ এই না পরলাম । ভুটান এর সরকারি অফিস এ ছাতা মাথায় যাওয়া যায় না ,তাতে নাকি রাজার অসম্মান হয় । ।ছাউনি আমাদের বৃষ্টির ছাঁট থেকে পুরোপুরি রক্ষা করতে পারছিল না । আমরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখলাম বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢালু পথে জলের ঢল আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে বকবক করলাম গার্ড এর সাথে । বৃষ্টির কি প্রচণ্ডতা ।সবকিছু ছিঁড়েখুঁড়ে জলের স্রোত নেমে আসছিল । এরমধ্যে তারা অনুমতি নিয়ে ফিরে এল কিন্তু তুমুল বৃষ্টির জন্য আমরা কোথাও যেতে পারছিলাম  না। সবাই অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম ছাউনিতে ।
 
যেমন ঝপ করে বৃষ্টি এসেছিল তেমনি হুট করে চলেও গেল ।মুহূর্তেই আকাশটা পরিস্কার হয়ে গেল। আর গাছপালা গুলোকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন এই মাত্র ভাল করে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে স্নান করে উঠল । এরপর আমরা মোড়ের কাছে এগুলাম গাড়ি ঠিক  করার জন্য । বৃষ্টির কারনে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে আর তার মাঝেই এসে পড়েছে জলপাইগুড়ি হয়ে অন্য যাত্রীরা ।

আমরা ফোর হুইলার গাড়ি ঠিক করলাম কারন এ পথে ট্যাক্সি চলে না আর বৃষ্টি হলে তো আরও না কারন জলের ঢলে গাড়ি ভেসে যেতে পারে ।
যাই হোক বিকাল চারটায় কিছু পরে আমরা রওনা দিলাম  থিম্ফুর উদ্দেশ্যে। আধা ঘন্টার ভিতর শহর ছেড়ে আমরা হাইওয়ে তে উঠলাম ।
চারপাশে উচু পাহাড়ের সারি আর তার মাঝে আঁকাবাকা পাহাড় কাটা পথ।  
মাঝেমাঝে মনে হয় ঘন কুয়াশা পরেছে ।ড্রাইভার ভাই কে গিজ্ঞেস করলাম বছরের এই সময়টায় কতক্ষণ কুয়াশা থাকে ? সে অবাক হয়ে বলল কুয়াশা মানে ফগ পেলেন কই এগুলো তো মেঘ । থোকা থোকা মেঘমালা রাস্তায় এসে জমা হচ্ছিল ,অনেক কাছে বলে কুয়াশা বলে ভ্রম হয় আবার বাঁক ঘুরে অন্য পাশে চলে গেলেই বোঝা যায় আসলে ওগুলো সব মেঘমালাই ।

অনেকক্ষন হল আমরা পথ চলছি , দেড় দুই ঘন্টা হবে কিন্তু একটা জনমানবের চিহ্ন দেখতে পেলাম না । এমন বিরান দেশ আমার জানি একটু একটু কেমন কেমন লাগছিল ।যদিও আমি ভিড়ভাট্টা পছন্দ করি না তাই বলে এত সুনসান !!

সবাই একদম চুপচাপ ,মনোযোগ দিয়ে দেখছে পাহাড়ি প্রকৃতি । হঠাৎ মনে হল সেই কখন চিপস খেয়েছি আর এতক্ষণ ধরে না খাওয়া । কি করা যায় ? এমন সময় ব্যাগ খুলে বের মজার হোম মেড কেক আর নাস্তা ।আহ কি সুন্দর বুদ্ধি । পেট ভরেই খেলাম সবাই । এখন শুধু দরকার এক কাপ চা বা কফি ।

হঠাৎ ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে দিল ,সামনে একটা ছোট জটলা ।আমরা ভাবলাম বোধহয় অ্যাকসিডেন্ট । মানুষ দেখে ভীষণ ভাল লাগলেও পরক্ষনেই সব ভাল লাগা হুশ্ করে উড়ে গেল । সামনে ল্যান্ড স্লাইড বা ভূমিধ্বস । রাস্তার উপর বড় বড় পাথরের চাই পরে আছে ।

প্রবল বর্ষণে ভূমিধ্বস হয়েছে। আমি এর আগে কখনও পাহাড়ি ভূমিধ্বস দেখি নাই। আমাদের দেশে  নিউজ পেপার বা টিভি তে দেখি টিলা ধ্বস । এত্ত বড় বড় পাথরের চাই আমি দেখি নাই ।  

সেনা বাহিনীর লোকজন দেখলাম রাস্তা পরিস্কার করছে আর পাশে রাস্তার ধারে একটা দুমড়ানো জীপ । ভাঙ্গা খেলনার মত ঢালে ঝুলে আছে । যা বুঝার বুঝে নিলাম । ওদিকে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে থোকা থোকা মেঘ জমে আছে ।

ড্রাইভার বলল শক্ত করে বসে থাক আমি একটানে এই পথটুকু পার হব।কেয়াকে দেখলাম মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসলেন ,ওরা সামনের সিটে বসেছিল ।সবার মুখ কাল দেখে আমারও ভয় ভয় করতে লাগল ।বাসার সবার কথা খুব মনে পড়ছিল ।কয়েক মুহূর্তেই ভাবলাম যদি পরিনতি হয় ওই জীপ এর আরোহীদের মত কিভাবে বাসার সবাই জানবে ,কেমন হবে ওদের প্রতিক্রিয়া । থেমে থেমে তখনও পাথর গড়াচ্ছিল । ড্রাইভার একটানে হুশ্ করে পার হয়ে  গেল পথটুকু আর আমরাও হাপ ছেড়ে বাঁচলাম।

মিনিট পাঁচেক এর মধ্যেই পৌঁছে গেলাম এক গ্রামে।কেতাবি ভাষায় একেই বলে হ্যামলেট , মাত্র কয়েক ঘর বসতি আর রাস্তার পাশে এক চমৎকার চায়ের ক্যান্টিন ।

অবাক চোখে এক বয়স্ক ভুটানি নারী আমাদের দেখছিল ।
চা পানের জন্য গাড়ি থেকে নামতেই হু হু করে শীতে কাঁপতে লাগলাম । যদিও সময়টা শীতকাল না তারপরও বৃষ্টির কারনে ঠাণ্ডা বেশ ভালই পড়েছে । ক্যান্টিনের সামনের রাস্তায় মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল ,আমি আর অনু পা দিয়ে লাথি মারার চেস্টা করছিলাম আর পা ভিজে যাচ্ছিল  । একটু আগের ভয়ডর সব নিমেষে উধাও। কি যে ভাল লাগছিল বলে বুঝাতে পারব না ।

কেয়ার তাড়া খেয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ,আবার যাত্রা শুরু ।  

descriptionএশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  EmptyRe: এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan

more_horiz
পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে ঝুপ করে । হঠাৎ করেই মনে হয় দিনের আলো নিভে গেল । তারপর আবার সুনসান পাহাড়ি রাস্তায় পথ চলা। এবার চারপাশটা অন্ধকার ।শুধু গাড়ির হেডলাইটের আলো দেখা যাচ্ছিল । গাড়ির কাঁচ একটু নামালেই শোনা যাচ্ছিলো পোকার একটানা ডাক ।
এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  Thimph10



অনেকক্ষণ থেকে আমার কানে একটা ব্যাথা অনুভব করছিলাম ।মনে হচ্ছিল চোখা কিছু দিয়ে কেউ কানে খোঁচা দিচ্ছে কিন্তু ভয়ে বলি নাই । হঠাৎ জেসমিন আপা বললেন উনার কান খুব ব্যাথা করছে তখন আমিও সাহস করে বলেই ফেললাম আমারও । আসলে এটা উচ্চতার কারনে হচ্ছিল ।

চলতে চলতে সহসাই দেখি দূরে আলো ঝলমলে কি যেন । একেবারে রূপকথার পরীর দেশের মত । অমন নির্জন পাহাড়ে হঠাৎ আলোর রেখা । ড্রাইভার বলল ওগুলো ছোট ছোট বসতি কিন্তু সাধারন মানুষের না জল বিদ্যুৎ প্রকল্পের ।তাই এত আলোর খেলা।বেশ লাগছিল দেখতে । থিম্ফু পর্যন্ত এমন তিন চারটা প্রকল্প পড়ল পথে। শহরে পৌঁছার আগে আরও একবার একটা দোকানে থেমে কিছু কিনে নিলাম খাবার জন্য ।

এরপর রাত প্রায় সাড়ে এগারটার দিকে পৌঁছলাম নরজিন লাম এ । এরপর ড্রাইভার ই আমাদের সবাইকে নিয়ে গেল হোটেল জি জাঙ এ । মাঝারি মানের বাজেট হোটেল আর বেশ চমৎকার ব্যবহার । আন্তজাতিক সংস্থায় কাজ করলে দেখা যায় সব জায়গায় একটু কনসেশন মিলে কারন ওই সংস্থাটি যদি সে দেশেও কাজ করে থাকে তবে পরে আরও গেস্ট পাওয়া যায় ।

যাক রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে রাতে খেতে নামলাম । এই হোটেল এ মাছ,মাংস ,ডিম পাওয়া যায় না । বৌদ্ধ ধরমালম্বি অনেকেই মাছ মাংস খায় কিন্তু এরা একদম অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী । কি আর করা ভাবলাম এত রাতে আর কই যাব কাল না হয় অন্য হোটেলে খাওয়া যাবে । কিন্তু খেতে বসে সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম ।অনেক মজার খাবার । ওরা অনেক খাবারেই পনির ব্যবহার করে। ইয়াক মানে চমরী গাই এর দুধের পনির । সেদিন ভাত সব্জি আর পালক পনির দিয়ে রাতের খাবার সারলাম ।পরবর্তীতে সেই কেওয়া দাসি/দাতসি হয়ে উঠেছিলো আমাদের কমন আর প্রিয় আইটেম।

খাওয়া সেরেই আমরা হোটেলের মালিকের সাথে কথা বললাম পরেরদিনের বেড়ানোর প্লান নিয়ে । আমি আগেই নেট থেকে তথ্য নিয়ে ট্যুর প্ল্যান করে নিয়ে এসেছি। উনি আমাদের পরের দিন সারাদিনের জন্য গাড়ি ঠিক করে দিলেন । সব কিছু ঠিকঠাক করে রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম ।সত্যি সবাই খুব ক্লান্ত ছিলাম ,প্রায় দুই দিনের ধকল ।

পরের দিন সকাল সকাল রেডি হয়ে একবারে নাস্তা খাওয়ার জন্য নামলাম । গরম গরম পনির পরোটা আর একটা সবজী ।

যাক সে কথা গাড়ি রেডি ছিল ,আমাদের ড্রাইভার কাম গাইড হল মিঃ লেত্তঠো । থিম্ফু তে আমরা প্রথমেই গেলাম রাজার দাদী যে প্রাসাদে থাকেন সেখানে । কি সুন্দর চারপাশটা ।ভিতরে প্রবেশের সুযোগ না থাকলেও গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম ।চারিদিকে স্কচ পাইন মানে ক্রিসমাস ট্রি , ব্লু পাইন আর ওক গাছের সারি।

সেখান থেকে গেলাম ওয়াং ছু বা রাইদাক নদীর ধারে ।ভুটানি ভাষায় ছু মানে নদী । ওয়াং ছু কে আবার থিম্ফু ছু নামেও ডাকা হয়। এটা একটা ট্রান্সবাউন্ডারি নদী ।

হিমালয়ে এর উৎপত্তি ভুটানে প্রবেশ করা এই ওয়াং ছু ভূটান ছাড়াও ভারত আর বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে। দেশে এসে হয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ।
এটা ভাবতেই আমার কেমন জানি লাগছিল ।একটা নদীর কতই না রূপ । এখানে কেমন খল বলিয়ে চলছে কিন্তু বেশি প্রশস্ত না আবার আমাদের দেশে কত প্রশস্ত কিন্তু এমন উত্তালতা নেই ।আমরা নদীর তীরে পাথরের উপর বসে ছবি তুললাম । জলের স্রোত এত তীব্র আর এমন ভাবে আছড়ে পরছিল যে নদীর মাঝে থাকা পাথরের উপর যে জলের ছাঁট এসে আমদের গায়ে লাগছিল ।

সেখান থেকে আমরা গেলাম চোরতেন এ। বর্তমান রাজার বাবার দাদার সমাধি এখানে আছে। এটা মেমরিয়াল চোরতেন বা থিম্ফু চরতেন নামে পরিচিত। তৃতীয় রাজা জিগ মে দরজি ওয়াংচুক, যিনি ১৯৭২ সালে মারা গেছেন তার স্মরণে ১৯৭৪ সালে এটি নির্মাণ করা হয় ।

অনেককেই দেখলাম প্রার্থনা করছে । সবাই খুব শান্ত। কোন হৈ চৈ নেই । সেখান থেকে বের হয়ে আমারা গেলাম থিম্ফু এর সবচেয়ে বড় জং ত্রাসি ছো জং দেখতে। ক্ষেত্র বিশেষে এটা তাসি ছো জং উচ্চারিত হয় । যাওয়ার পথে পড়ল ত্রাসি ছো জং এর দর্শন । তবে এখান দিয়ে প্রবেশ করা যায় না । এটা ভূটানের সচিবালয় ।এখানেই রাজার সিংহাসন আর অন্যান্য সামগ্রীও আছে।ভূটানে পুরোহিতরা অত্যন্ত প্রভাবশালী ।

বেশ খানিকটা রাস্তা ড্রাইভ করার পর আমরা পৌঁছালাম জং এর প্রবেশ পথে। বিশাল এলাকা জুড়ে এর অবস্থান । একটা ভবনে অনেক গুলো ছোট ছোট সন্ন্যাসী । কেউ বসে গল্প করছে আবার অনেককেই দেখলাম পায়রা কে খাবার দিচ্ছে । এদের প্রায় সবাই দরিদ্র পরিবারের সন্তান ।

একটু এগুতেই কানে আসলো ওদের মন্ত্র । একটানা সুরে সুরে আউরাচ্ছে , মানি পদ্মে ছাড়া আর কিছু বুঝলাম না ।এই মন্ত্রটা আমি নেপালেও শুনেছি । পরে এর সিডি কিনে নিয়ে আসছিলাম ।
জংটা অনেক বড় ।আলাদা আলাদা কয়েকটা ভবন ।এর মাঝে বিশাল এক রুমে বুদ্ধ এর মূর্তি সাথে মনি পদ্মে সন্ন্যাসী সহ আরও কয়েকজন সন্ন্যাসীর মূর্তি । এখানে ছবি তোলা নিষেধ ।
ঘুরেফিরে দেখে এবার আমরা রওয়ানা দিলাম হোটেলের পথে লাঞ্চ খেয়ে আবার বের হব । ফেরার পথে ড্রাইভার আমাদের দেখাল ওই দূর পাহাড়ের গাঁয় যে প্রাসাদ দেখা যায় সেখানেই থাকেন রাজার চার মাতা ।

তারপর ফিরে গেলাম হোটেল এ । খাবারের অর্ডার দিয়ে ফ্রেশ হতে রুমে গেলাম । এখানে আগে থেকে রান্না করা থাকে না ।তাই অর্ডার দেয়ার প্রায় পৌনে একঘন্টা পর খাবার পরিবেশন করা হল । গরম গরম ভাত ডাল আর কয়েক রকম সব্জি ।
খাওয়া সেরে আবার বের হয়ে গেলাম। এবার গেলাম একটু শপিং করার জন্য । চাইনিজ জিনিষ দিয়ে ভর্তি বিশেষত ক্রোকারিজ । আর আছে ওদের হাতে বোনা কাপড় ।

কাপড় এর ডিজাইন বা নকশা যত সুন্দরই হোক না কেন তা আমাদের দেশের আবহাওয়ায় পড়ার উপযোগী না। মনে হয় যেন তোষকের কাপড় । ভূটানের পুরুষরা হাঁটু সমান লম্বা যে পোশাক পরে তার নাম ঘো বা গো আর মেয়েরা গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা যে পোশাকটি পরে তার নাম কিরা ।

এখানে জিনিষ পত্রের দাম বেশ চড়া । ভুটানি মুদ্রা গুল্ট্রাম এর মান ভারতীয় মুদ্রার সমান ছিল যখন আমরা গিয়েছিলাম । আমার একটা ইয়াক এর উলের হাতে বোনা শাল ক্রয় করার ইচ্ছা হইছিল কিন্তু দাম বেশ চড়া তাই ক্ষান্ত দিলাম । অনেক ক্ষণ মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে ফেরার পথ ধরলাম । সন্ধ্যা সন্ধ্যা আমরা হোটেলে ফিরে এলাম ,খাবারের অর্ডার দিয়ে রুমে গিয়ে আড্ডা আর পরের দিন কোথায় কোথায় যাব তার প্ল্যান আবার ঝালিয়ে নিলাম।

descriptionএশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  EmptyRe: এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan

more_horiz
পরের দিন সকাল বেলা একটু দেরি করেই উঠলাম ,নাস্তা সেরে যথারীতি বের হয়ে গেলাম মিঃ লেত্তঠো এর গাড়িতে । এদিন আমরা প্রথমেই গেলাম একটা মিউজিয়াম এ।থিম্ফুর ন্যাশনাল ফোক হেরিটেজ জাদুঘর ।  প্রাচীন কালে এদের মানে ভুটানিদের জীবনযাত্রা কেমন ছিল তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে । এই মিউজিয়ামের ভিতরেও ছবি তোলা নিষেধ ।


তবে পাহারার কড়াকড়ি নাই তাই চুপিসারে দুই একটা তুলে ফেলা যায় । ভিতরে মাটির তৈরি চুলা আর বাইরে মরিচ সহ অন্যান্য মশলাপাতি শুকাতে দেয়া হয়েছে।

ঘুরে ফিরে সব দেখে বের হয়ে আসলাম ।বাইরে ছোট একটা ধান ক্ষেত আর ওপাশে কতগুলা আপেল গাছ । আমি ওখানে দায়িত্বে থাকা মিস থুকপা কে জিজ্ঞেস করলাম যে ,আমি কি একটা আপেল নিতে পারি? সে মিষ্টি হেসে উত্তর দিল যত পার নাও । আমিও দেরি না করে  অনেকগুলা টসটসে সবুজ আপেল পারলাম ।হাত দিয়েই ছোঁয়া যায় । কি মিস্টি আর সুস্বাদু । আমরা যেগুলা খাই সেগুলা তো যৌবন কালে জাহাজে উঠে আর বৃদ্ধ বয়সে আমাদের  খাবার টেবিল এ পৌঁছে।

সেখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা গেলাম মতিথাং এ টাকিন দেখতে, মাত্র গতকাল এর সম্পর্কে শুনেছি ড্রাইভার এর কাছে। হরিণ জাতীয় এই প্রাণীটিকে ঘিরে যে পৌরাণিক কাহিনী আছে তা শুনলাম আর বিস্মিত হলাম ।এর নাম আমি আগে শুনি নাই। এ বিষয়ে একটা টপিক আছে তাই নতুন করে কিছু লিখলাম না ।



শুধু এটুকুই বলি যে এই প্রাণিটি দেখতে অনেকটা গরু আর ছাগলের মিশ্রন। বেশ শান্ত আর তৃণভোজী এই প্রাণি এখন বিপন্নপ্রায় ।


টাকিন দেখে বের হয়ে আসলাম দুপুরের খাবার খেতে। আজ দুপুরে আমরা বাইরে একটা রেস্টুরেন্ট এ খেলাম কিন্তু জি জাং এর মত মজা না।    

এবার গন্তব্য বিবিসি টাওয়ার। এখানে দাড়ালে পুরা থিম্ফু শহরের একটা ভিউ দেখা যায় ।

পুরা শহরটাই কি শান্ত নিরিবিলি আর সব জায়গায় প্রেয়ার ফ্ল্যাগ এর ছড়াছড়ি । এমন সময় হঠাৎ শুরু হল ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি ।


তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গেলাম ,একটু পরেই বৃষ্টি থেমে গেল আর আমরা থামলাম একটা দুর্গ বা  ছোট জং এর  সামনে। ধাপে ধাপে পাহাড় কাটা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম। বিশুদ্ধ বায়ু সেবন আর পাহাড়ি শহরের সৌন্দর্য দেখছি দু চোখ ভরে ।একটা ভুটানি পরিবার দেখলাম । কি কিউট একটা বেবি পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পালা করে সবাই বেবিটার সাথে ফটো তুললাম । নিচে নামার পর আমার মনে হল আমি যেন বাংলা গান শুনছি । আবার একটু খেয়াল করার চেস্টা করলাম একি রকম মনে হল ।সবাইকে বলাতে প্রথমে হেসেই উড়িয়ে দিল । তারপর ওরাও বলল আরে তাইত বাংলা গান ..। আমাদের ভাবভঙ্গি আর বাংলা গান শুনে ড্রাইভার বলল বাংলা । খুব অবাক হলাম এবং পরে জানলাম বাংলাদেশের প্রায় দুই হাজার নির্মাণ শ্রমিক ওখানে কাজ করে।  আবার শুরু হল ঝিরিঝিরি বৃষ্টি তাই দেরি না করে হোটেলে ফিরে এলাম । ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে দেখলাম তীর ধনুকের খেলা। অনেক তীরন্দাজ মাঠে আর রাস্তার পাশে প্র্যাকটিস করছিল। এটা ভূটানের জাতীয় খেলা।


হোটেলে ফিরে গরম গরম কফি খেতে খেতে ঠিক করলাম পরের দিন যাব পুনাখা আর তাই হোটেল কতৃপক্ষের হাতে পাসপোর্ট তুলে দিলাম জেরক্স বা ফটোকপি করার জন্য কারন আবার অনুমতি নিতে হবে তবে এবার ওরাই সব করে দিল ,অনুমতি পেলাম পুনাখা আর পারো যাবার ।
পরের দিন সকাল বেলা ভরপেট নাস্তা খেয়ে রওয়ানা দিলাম পুনাখার উদ্দেশ্শ্যে । থিম্ফু থেকে পুনাখার দূরত্ব ৩৪.৪ কিলো মিটার। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর দুপাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম । রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে । এখানে সবাই প্রচুর হাঁটে ।

হঠাৎ এক জায়গায় কেয়াদি গাড়ি থামাতে বললেন । ড্রাইভার আস্তে করে একপাশে গাড়ি থামাল আর আমরা নেমে দিদির পিছনে পিছনে চললাম ।কি দেখেছে কে জানে? নিশ্চয়ই সুন্দর কিছু। ওমা দেখি সামনে পাহারের ঢাল লাল হয়ে আছে ছোট ছোট  ফল এর গাছে ।মনে হয় মিনি আপেল। টুকটুকে লাল আর ফলের জন্য গাছের পাতাই দেখা যায় না । যথারীতি আমি আর সফেন ছুটলাম কয়েকটা ছিঁড়ে আনার জন্য । এমন সময় আমাদের শান্ত ড্রাইভার হই হই করে ছুটে আসলো । আমরা তো রীতিমত ভয় পেয়ে থমকে গেলাম। আধো আধো হিন্দিতে সে যা বোঝানোর চেস্টা করল তা হল এই ফলগুলা মারাত্মক বিষাক্ত। একটা খেলে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ মারা যেতে পারে।    
আমরা জোরের সাথে বলে উঠলাম তা হলে তোমরা এগুলা কাটো না কেন? এবার ড্রাইভার এর অবাক হবার পালা । সে  বলল কেন কাটব? তুমি না খেলেই হল। আমরা নিজেরা নিজেরা বলাবলি করছিলাম যে আমাদের দেশ হলে এতক্ষণে এগুলা কেটে পরিস্কার করে ফেলত। যাক আমরা একেবারে নিরাশ হলাম না ড্রাইভার একটু হেঁটে সামনে থেকে ছোট একটা গাছ থেকে কমলা রঙের ফল এর থোকা ছিঁড়ে এনে বলল এটা খাও অনেক মজা। এগুলা আবার দেখতে মিনি আঙ্গুর এর মত।

স্বাদটা টক মিস্টি।পরে জেনেছিলাম ওগুলা ছিল ডুয়ারফ রাস্পবেরি ।

আমরা আবার গাড়িতে উঠে বসলাম, বেশ কিছুক্ষণ চলার পর গাড়ি থামল দোচুলা পাস এ। আগেই বলেছি সময়টা যদিও শীতকাল না তবে একটু বৃষ্টি হলেই ঠাণ্ডা লাগছে । এখানে এসে দেখলাম জম্পেশ কুয়াশা পড়েছে।
এই দোচুলা পাসে আছে এক চরতেন ।আমরা গাড়ি থেকে নেমে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে শুরু করলাম।বাতাস আর কুয়াশায় মিলেমিশে একাকার। ভাল করে চাদর মুরি দিয়ে উঠতে লাগলাম । চারপাশটা কি সুন্দর আর সুনসান । আয়তন অনুসারে লোক সংখ্যা বড্ড কম বা আমি এত বেশি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে থাকি যে আমার কাছে বেশি কেমন জানি লাগছিল।


যত উপরে উঠছি তত বেশি শীত করছে । এখানে একশত আটটি স্টুপা আছে। এই পাসটি দ্রুক ওয়ানগয়াল চরতেন নামেও পরিচিত। স্থানীয় লোকজন এবং পর্যটক সবার কাছেই এই স্থানটি অনেক জনপ্রিয় । কুয়াশা না থাকলে এখান থেকে হিমালয়ের চুড়া গুলো দেখা যায় আর এর আশেপাশের দৃশ্যাবলী অপূর্ব । যেহেতু থিম্ফু থেকে খুব একটা দূরে না তাই পিকনিক বা সময় কাটানোর জন্য পরিবার পরিজন নিয়ে ভুটানিরা এখানে বেড়াতে আসে ।
এছাড়া ধর্মীয় ভাবেও এ স্থানটিতে অনেক মানুষ আসে কারন এখানেই আছে চিমি লাহখাং মন্দির। ভুটানিরা ওদের ভাষা মানে জংখা ভাষায় বড় মন্দিরকে বলে জং আর ছোট মন্দিরকে বলে লাহখাং।দোচুলা  পাস থেকে একটু এগুলেই চিমি লাহখাং ভ্যালি ।

 
আমরা মন্দিরে না নেমেই পাশ দিয়ে গাড়ি থামিয়ে দেখে রওয়ানা দিলাম । কারন আমাদের পুনাখায় রাত কাটানোর ইচ্ছা নাই। তবে এখানে এক দারুন জিনিষ দেখলাম । এই মন্দিরটা হল উর্বরতার মন্দির।এর পাশেই দেখলাম সাত/আট জন মহিলা সুর করে গান গাইতে গাইতে ধান কাটছে। আর এসব শস্য জমা করছে মন্দিরের উঠানে। কারও দিকে কোন  ভ্রুক্ষেপ নাই,আপন মনে কাজ করে চলছে । আর একটা অদ্ভুত জিনিষ দেখলাম এই মন্দিরের নকশা মানে দেয়াল চিত্র। যাইহোক ওদের পাশ কাটিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটল পুনাখার পথে।

Last edited by Admin on Sun Jul 29, 2018 10:35 pm; edited 1 time in total

descriptionএশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  EmptyRe: এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan

more_horiz
পুনাখায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর হয়ে গেল ,তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আগে খাবার খেয়ে নিব ।গরম গরম ভাত। বড় মরিচের /মিষ্টি মরিচের  একটা সব্জি ,ডাল আর ভাজি দিয়ে খাবার সারলাম ।এরপর গেলাম পুনাখা জং দেখতে ।নদীর উপর কাঠের ঝুলন্ত ব্রিজ পার হয়ে জং এ যেতে হয় ।

এমনিতেই ভুটানে চারপাশে গাছ আর ফুলের সমারোহ কিন্তু এখানে এসে মনে হল পুরাই ফুলের মেলা।

এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  N0eUZpG

                                    :পুনাখা জং এর সন্ন্যাসীরা :

সন্ন্যাসীরা যে যার মত নিরবে কাজ করে যাচ্ছে ।অনেকে আবার প্রেয়ার হুইল ঘুরিয়ে জপ করছে। এখানে  বড় হুইল  আছে যে গুলা ঘুরাতে ঘুরাতে কোন ইচ্ছা করলে তা পূরণ হয়। এই জিনিষ সব প্যাগোডা আর জং এ আছে ।

এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  EhetPIP

                                   :পুনাখা জং:

জং টা অনেক বড়। আশেপাশে দেখা যায় পুনাখা ভ্যালির মোহনীয় রুপ। ভুটানের অধিকাংশ ধান এই ভ্যালীতেই উৎপন্ন হয়।  নিচে দেখলাম অনেক গুলা ঘোড়া ঘাস খাচ্ছে। চারপাশে বাগান বিলাস ,গোলাপ আরও কত শত ফুল । পুরা জংকে ঘিরে আছে অনেক বড় বড় গাছ।


এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  AyUPUyr

                            :পুনাখা জং এর কারুকার্য:

এক সন্ন্যাসী আমাদের জানালো এগুলা জারকান্ডা গাছ ।বসন্তে এই গাছের পাতাই দেখা যায় না ।পুরা গাছ আচ্ছাদিত থাকে বেগুনি রঙ এর ফুলে ।


এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  PfCtJB5
     

ইশ! একথা শোনার পর মনে হল যদি বসন্তে আসতাম ।    
ভাল করে পুরো জঙটা দেখে কিছুক্ষণ উপরে উঠে বসে থাকলাম দুরের প্রবাহিত নদী গুলো কলকল করে বয়ে যাচ্ছিল । এরপর জং থেকে বের হয়ে আমরা গেলাম মো আর ফো ছু এর সঙ্গম স্থলে।            

দুইদিক থেকে দুই ছু মানে নদী এখানে এসে মিলিত হয়েছে। মো এর জল ফো এর চেয়ে অপেক্ষাকৃত সাদা ।ড্রাইভার আমাদের জানাল ওদের ফোকলোর অনুযায়ী মো হল মেয়ে আর ফো হল ছেলে ,এখানে এসে ওদের বিয়ে হয়েছে আর তাই একসাথে হাসতে হাসতে ওরা যাচ্ছে সাগর পানে।


এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  AKAStV1

                                   : মো আর ফো ছু/নদী :

একথা শুনেই ড্রাইভার কে বললাম ,তাইলে তো আমরা মো ছু এর শ্বশুর বাড়ির লোক কারন পড়বে তো সেই বঙ্গোপ সাগরেই । এই দুই নদী পুনাখাতে একত্র হয়ে ভারত সীমান্ত পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে ।

আগেই বলেছি পুনাখাতে রাত কাটানোর ইচ্ছা নাই তাই বিকাল বিকাল ফেরার পথ ধরলাম।ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল।


এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  Vgnowfw

                           :পুনাখা থেকে থিম্ফু ফেরার পথে :

এটাই থিম্ফু তে আমাদের শেষ রাত ।পরের দিন যাব পারো ।  লেতঠো এর সাথেও আর দেখা হবে না তাই রাতেই ওর কাছ থেকে বিদায় নিলাম। যেহেতু পারো একটু দূরে তাই ট্যাক্সিতে যাওয়া যাবে না।    
রাতের খাবার খেয়ে হোটেল মালিক আর তার মেয়েদের সাথে অনেকক্ষণ আড্ডা মারলাম,ছবি তুললাম আর শেষমেশ ক্লান্ত শরীর নিয়ে গেলাম বিছানায়।

পরের দিন খুব সকালে উঠতে হল ,ব্যাগ গুছিয়ে তৈরি হয়ে নেমে গেলাম নাস্তা খেতে। গাড়ি চলে এসেছে আগেই তাই দেরি না করে ঝটপট রওয়ানা দিলাম। এবারের ড্রাইভারটা একটু গোমরামুখো ,কথা বলে কম। একদল যাত্রী নিয়ে পারো থেকে থিম্ফু এসেছে গতরাতে আর সকালে আমাদের নিয়ে আবার যাচ্ছে পারো।কথায় কথায় জানতে পারলাম থিম্ফু তার পছন্দ না কারন এখানে অনেক ভীর হইচই । শুনেই আমরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম ।বলে কি লোকটা ? একে যদি নিউমার্কেট ওভার ব্রিজ এ দাড় করানো হয় তাইলে তো সে হার্ট ফেল করবে। যাক যেথায় যেমন । পথিমধ্যে দুবার থেমে চা খেয়ে নিলাম।
এর মাঝে ঘটলো এক আজব ঘটনা ।পারোতে প্রবেশ করার একটু আগে রাস্তায় বেশ জ্যাম ছিল কারন একতা বিদ্যুতের খুঁটি দেখলাম উপড়ে গেছে । পিছনের গাড়ির এক ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নেমে হাতজোড় করে বার বার ক্ষমা চাচ্ছে আর বলছে তার জরুরি মিটিং আছে তাই সে লাইন ব্রেক করে আগে যেতে চায়। সবাই রাজি হলে সে হুশ করে ওভারটেক করে আগে চলে গেল। পরে ড্রাইভার বলল তোমরা কিছু মনে কর না উনি একজন মন্ত্রি আর রাজার সাথে তার জরুরি মিটিং আছে তাই আগে গেল !!! একি শুনলাম ! আমাদের দেশে তো ...  

পারো তে গিয়ে উঠলাম হোটেল পেলজরলিং এ ।এই হোটেলের ম্যানেজার চমৎকার বাংলা বলতে পারে। আসলে সে অনেকদিন ফুয়েন্টশোলিং ছিল। সেখানে প্রচুর ভারতীয় কাজ করে ,তাদের কাছ থেকেই শেখা।      
সন্ধ্যা নামতেই দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার ,কিছু দোকানপাট এ মোম বা অন্য আলো জ্বলছে ।ভাবছি তাইলে ভুটানেও লোড শেডিং হয়। নিচে গিয়ে জানলাম একটু আগে ল্যান্ডস্লাইড এ খুঁটি উপড়ে পরাতে এই বিপত্তি । কিছুক্ষণ পরেই বিদ্যুৎ চলে এল।
আমরাও বাইরে বের হয়ে কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করলাম। ওদিকে আমরা যখন বাইরে টুকটাক কেনাকাটা করছিলাম কেয়া তখন কিনে নিয়ে আসলো পিচ ফল।  

এখানে ওদের নিজস্ব নকশায় তৈরি রুপার দুল আর পুতির ব্যাগ দেখলাম তুলনামুলক ভাবে সস্তা ।আর সস্তা জ্যাম ,জেলি মারমালেড। আমরা অনেকগুলা কিনলাম ।

তারপর রাতের খাবার খেয়ে রুমে ফিরে ঘুম । তবে খেতে বসে আমরা জি জাঙ্গ এর খাবার খুব মিস করলাম কারন ওদের রান্নাটা ছিল আসলেই অনেক মজাদার। আর ঘুমানোর আগে আমার আর অনুর উপর চলল চরম মানসিক নির্যাতন । আমাদের  পিচ ফল খেতে হবে ।দেখতে সুন্দর হলেও স্বাদটা আমার কাছে গাব এর মত মনে হচ্ছিল। অনেক কষ্টে দুইজন দুই পিস খেলাম ।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মনটা ভাল হয়ে গেল ।এখানকার আবহাওয়াটা আসলেই চমৎকার । সেপ্টেম্বর মাস কিন্তু রাতে ফ্যান চালাতে হয়নি। এখানে সারা বছর তেমন গরম পড়ে না।

https://i.imgur.com/xMmAg0s.jpg" alt=""/>

                                  :পারো এর আকাশ:

পরোটা সবজি দিয়ে ভরপেট নাস্তা খেয়ে বের হলাম পারো দর্শনে ।সারদিনের জন্য গাড়ি নেয়া হল আর ড্রাইভার সেই গতকালের জন। যিনি আমাদের থিম্ফু থেকে পারো নিয়ে এসেছে। আমার কাছে আগে থেকেই লিস্ট করা ছিল কোন কোন জায়গায় যাব । প্রথমেই গেলাম পারো ন্যাশনাল মিউজিয়াম এ। এটা অনেক বড় একটা দুর্গ । আগে ছিল ওয়াচ টাওয়ার । ভিতরে প্রবেশ করে ঢালু রাস্তা বেয়ে নেমে গেলাম।


এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  3swXZbu

                              :তা জং বা ন্যাশনাল মিউজিয়াম:

সতেরশ শতকে নির্মিত তা জং এখন পারো ন্যাশনাল মিউজিয়াম। ভিতরে প্রদর্শনীতে আছে  নানা রকম গয়না , যুদ্ধের সরঞ্জাম ইত্যাদি ।
 

ওখান থেকে বের হয়ে গেলাম দ্রুকগিয়েল জং দেখার জন্য। এই জং এর সাথে জড়িয়ে আছে অগ্নিকান্ডের এক ইতিহাস। কোন এক অজ্ঞাত কারনে এই জং টা বার বার আগুনে পুড়ে যায় । পাহাড়ের উপর এর অবস্থান। গাড়ি থেকে নেমে আমরা উপরে উঠতে থাকলাম ।বেশ চড়াই। কোথা থেকে যেন জলের  কলকল শব্দ আসছিল ।বুঝতে পারছিলাম কাছে কোন নদী বা ঝর্ণা আছে। যত উপরে উঠছিলাম জলের কলকলানি তত বাড়ছিল ।শব্দের উৎস কিছুতেই খুজে পেলাম না।

https://i.imgur.com/lylmN8R.jpg" alt=""/>

                            :  দ্রুকগিয়েল জং :

অবশেষে দুর্গের আঙ্গিনায় প্রবেশ করলাম। চারপাশে ঝোপঝাড় আর অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছপালা । আর ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে আগুনে পোড়া দুর্গের ভাঙ্গাচোরা কাঠামো । আমরা ছাড়াও আরও দুইজন পর্যটক আসল ।  কিছু সময় কাটিয়ে ধরলাম ফিরতি পথ।ফেরার পথে গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম আপেল বাগান ।সবুজ লাল আপেলে গিজগিজ করছে গাছগুলো ।    



এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  YezO5hQ

                          :    আপেল বাগান  :

দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বের হয়ে গেলাম ।প্রথমেই গেলাম কিছু লাখাং এ। ওখানে একটা গাছে অনেক পাকা কমলা দেখে ভাবলাম অনুমতি নিয়ে দুই একটা ছিঁড়ব, কিন্তু সন্ন্যাসী কে বলতেই সে বলল ওরা গাছ থেকে ফল ছিড়ে না। আমাকে বলে কি না গাছের কাছে দাঁড়িয়ে প্রেয়ার কর একটা যদি পড়ে তাইলে নিও । কি আজব কথা।


এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  MA5wBEF

                                      : লাখাং এর কমলা গাছ :

এখানে অনেক খানি সময় পার করে গেলাম টাইগার নেস্ট বা  তাক সাঙ্গ এ। সমতল থেকে অনেক উঁচুতে এর অবস্থান। পাহাড়ের পাদদেশে গাড়ি রেখে হেটে যেতে হয় এখানে। ওদের লাগে ঘন্টা তিনেক আর আমাদের মত মানুষদের লাগবে সাড়ে চার কি পাঁচ ঘন্টা।


এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  PJO3IIn

                                    : তাক সাঙ্গ বা টাইগার নেস্ট :

চিন্তা করছি কি করা যায় এমন সময় দেখি একটা দল তাক সাঙ্গ ঘুরে নেমে এল। আমাদের দেখে এসে নিজেরাই আলাপ করল ।একজন ছাড়া সবাই ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তা ।একজন এসেছেন লেসোথো থেকে । উনারা আমাদের খুব ইন্সিস্ট করল উপরে ওঠার জন্য । তবে দেরি হয়ে যাওয়ায় আমরা গেলাম না।


এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  ALKjVj1

       : তাক সাঙ্গ বা টাইগার নেস্ট (এই ছবিটা বন্ধু তেন দরজির কাছ থেকে নেয়া) :

সন্ধ্যা সন্ধ্যা হোটেলে ফিরে এলাম।  কারন পরের দিন আবার যেতে হবে ফুয়েন্টশলিং ।সকাল বেলা নাস্তা খেয়ে ব্যাগ বোঁচকা নিয়ে চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ড । তারপর দুপুরের এক্তু পর পর পৌঁছলাম ফুয়েন্টশলিং। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে বের হলাম তারপর শপিং। এখানে খুব সুন্দর ডিজাইনের চাইনিজ স্যান্ডেল পাওয়া যায়।

সন্ধ্যার পর কেয়াদি কে পটিয়ে পাটিয়ে ভুটান গেট পার হয়ে গেলাম ইন্ডিয়ায়।  প্রচুর লোক জাওয়া আসা করছে। ওখানে কিছু কেনা কাটা করে রাতের খাবার খেয়ে ফিরলাম।  
পরের দিন দেশে ফেরার পালা।
ফিরতে ফিরতে মনে হল আহা কত কিছুই দেখা হল না । তাই ভাবছি আবার যাব তবে অবশ্যই বসন্তে।

descriptionএশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan  EmptyRe: এশিয়ার সুইজারল্যান্ড ভূটান Bhutan

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply