Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionচলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Emptyচলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে

more_horiz
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে। আবার ভাবছেন না তো কি আবার বয়স হল এখনি বৃন্দাবনে। দেখুন আমি তো আর কারও বয়স জানি না আর তীর্থ করার কোন বয়সের দরকার হয়না। তবে বৃন্দাবন যাবার অনেক সমস্যা থাকতে পারে অনেকের। কি কি সমস্যা হতে পারে
১.   বয়স ফ্যাক্টর।
২.   সময় ফ্যাক্টর, কারণ অনেক দূর।
৩.   অর্থ, যেটা ছাড়া এক পা এগনোই যায় না।

চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img39
[চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img40


সবার ক্ষেত্রে এক-ই ফ্যাক্টর নয় কিন্তু আমরা সবাই কোনও না কোনও বিশেষ কারণে আটকে যাই। কিন্তু আমি যদি সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দিই তাহলে কোনও অসুবিধা হবে না তো? এখন আপনি হয়তো বলতে পারেন আমি আবার কোন ঋষি মনিশি যে সব  সমস্যা দূর করে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবো। আমি কিন্তু জায়গাটার নাম একটু চেপে রাখছি কারণ প্রথমেই যদি জায়গার নাম বলে দিই তাহলে আসল মজাই চলে যাবে। প্রথমে বলি আমি কেমন দর্শন করলাম।
২৬.৫.২০১৯ সকাল সাড়ে ছটার সময় বাড়ি থেকে বাইক স্টার্ট দিলাম। আমার শুধু প শ্চিমবঙ্গের বৃন্দাবনে যাবার পরিকল্পনা ছিল কিন্তু লোভ সামলাতে না পেরে আরও দুখানা স্পট যোগ করে দিলাম তার জন্য বৃন্দাবনে আসতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। এখানে আমি এতই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে যত এগচ্ছি ততই যেন মন্দিরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কি অদ্ভুত ব্যাপার। আর একটা ব্যাপার, কোনও ক্লান্তি নেই কারণ প্রায় সমস্ত মন্দির গুলি নদীর কিনারে। যখন নিজেকে একটু ক্লান্ত মনে হচ্ছে নদীর ধারে একটা গাছের নিচে কোনও চায়ের দোকান দেখে দাড়িয়ে যাচ্ছি।
আমি একটা কথা গ্যারেন্টি সহকারে বলতে পারি আপনি যদি সব মন্দির ভাল করে দেখতে চান তাহলে কিন্তু একদিনে হবেনা। অথচ একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দুরত্ব সর্বসাকুল্যে খুব বেশি হলে ৫ থেকে ৬ কিমি। আমি ঘণ্টা চারেক সময় দিয়েছিলাম, তখন বাজে দুপুর সাড়ে বারোটা সবাই জানেন তখন সমস্ত মন্দির বন্ধ হয়ে যায় আবার বিকেলে খোলে। এই প্রচন্ড গরমের মধ্যে দুপুরে চার ঘণ্টা বসে থাকা মানে পানিশমেন্ট তাই আমি বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। তখনও যে কত মন্দির, আশ্রম আর কত কি বাকি ছিল কে জানে। অনেক স্পট তো আমি খুঁজেই পাইনি।
যাক এবার জায়গার নামটা বলেই ফেলি। আর কতক্ষন চেপে রাখব। এটা হল কোলকাতার বুকেই শিয়ালদহ রুটে খড়দহে। আর এরিয়াটা হল— খরদহ থেকে আগরপাড়া পর্যন্ত। এইটুকু এরিয়া কভার করলেই বৃন্দাবন। তাহলে বলুন, সব সমস্যার সমাধান হল তো।
এবার আমি কি কি দেখলাম এক এক করে বর্ণনা দিলাম।
প্রথমে অঞ্চলটি কেন বৃন্দাবন তার একটু বর্ণনা দিই।

পানিহাটি-খড়দহ

“পানিহাটি সম গ্রাম নাহি গঙ্গাতীরে। বড় বড় সমাজ সব পতাকা মন্দিরে” – পানিহাটির নাম যে শুধু জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’-এই রয়েছে তা-ই নয়, বৃন্দাবন দাসের ‘চৈতন্যভাগবত’, কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘চৈতন্য চরিতামৃত’ গ্রন্থেও পানিহাটির নাম পাওয়া যায়। শ্রীচৈতন্য আর নিত্যানন্দের পদধূলিধন্য পানিহাটি।

১৫১৪ সাল। নীলাচল যাওয়ার পথে শ্রীচৈতন্য পানিহাটির ঘাটে নৌকা ভেড়ালেন। গঙ্গাতীরে বটের ছায়ায় বিশ্রাম নিলেন সপার্ষদ। এখানে দেখা করতে এলান সপ্তগ্রামের জমিদার রঘুনাথ নারায়ণদেব। দীর্ঘকাল প্রভুর দর্শনে আসতে না পারায় দণ্ড চাইলেন। দণ্ড দিলেন শ্রীচৈতন্য --- “দধি চিড়া ভক্ষণ করাহ মোর গণে।” মচ্ছব চলল সারা দিনরাত। সেই বটবৃক্ষতলার নাম হল দণ্ডমহোৎসবতলা। আজও কার্তিক মাসের কৃষ্ণ একাদশী তিথির পরের রবিবারে এখানে মেলা বসে। দই-চিড়ে খাওয়া হয়।

এখানে গঙ্গার ঘাটের পাশেই রয়েছে শ্রীচৈতন্যের দারুবিগ্রহ। ঘাটের সামনে জটিলেশ্বর শিবমন্দির। দণ্ডমহোৎসবতলার কাছেই পাটবাড়ি – রাঘব পণ্ডিতের শ্রীপাট। শ্রীচৈতন্যের অন্তরঙ্গ পার্ষদ রাঘব পণ্ডিত এখানে শায়িত আছেন ৫০০ বছরের বেশি পুরনো মাধবী লতাকুঞ্জের ছায়ায়।

পানিহাটির দোসর খড়দহ, যেন যমজ শহর। খড়দহের প্রসিদ্ধি নিত্যানন্দের শ্রীপাট হিসাবে। সেই শ্রীপাট কুঞ্জবাটি নামে খ্যাত। পুবমুখো ঘরে নিত্যানন্দের মৃন্ময়মূর্তি। আছে দুই পত্নী বসুধা আর জাহ্নবীর সমাধি। এই কুঞ্জবাটি থেকেই ৬৮ বছর বয়সে বৈকুণ্ঠে যাত্রা করেন নিত্যানন্দ।

মন্দিরের শহর খড়দহ – শ্যামসুন্দর মন্দির, গোপীনাথ জিউ মন্দির, মদনমোহন জিউ মন্দির, রাধাবৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির, রাধাকান্ত মন্দির, বলরাম মন্দির – আরও কত শত মন্দির। এ ছাড়াও রয়েছে রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ।

সব মিলিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে পানিহাটি, খড়দহ অঞ্চলের আকর্ষণই আলাদা। শুধু তারাই নয়, যারা ইতিহাসের কাছে পৌঁছতে ভালবাসেন, তাদেরও ভালবাসার জায়গা এই অঞ্চল। শহরাঞ্চল ঘেঁষা হওয়ায় এই অঞ্চলে চট করে বেড়িয়ে আসাও সুবিধা জনক। বৈষ্ণবতীর্থ পানিহাটি-খড়দহ শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে যাওয়া যায়। নামতে হয় খড়দহ স্টেশনে। কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসেও যাওয়া যায়। বি টি রোডের ধারেই পানিহাটি-খড়দহ।

সবচেয়ে প্রথমে যেটা দেখেছি সেটা হল  টিটাগড়ের  অন্নপূর্ণা মন্দির

বাংলায় বিরল অন্নপূর্ণার মন্দির

অন্নপূর্ণা মন্দির
অন্নদামঙ্গল কাব্যের প্রভাবে বাংলায় প্রসার ঘটেছিল অন্নপূর্ণা পুজোর। জনশ্রুতি, নদিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ভবানন্দ মজুমদার বাংলায় অন্নপূর্ণা পুজোর প্রচলন করেন। পরবর্তী কালে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় অন্নপূর্ণা পুজো। তবে, বাংলায় অন্নপূর্ণার মন্দির বিরল।

কলকাতার কাছেই ব্যারাকপুরের তালপুকুর অঞ্চলে রয়েছে একটি অন্নপূর্ণা মন্দির, যা দেখতে অবিকল দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের মতো। মন্দির প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে রয়েছে এক কাহিনি।

১৮৪৭-এ রানি রাসমণি তাঁর জামাই মথুরমোহন বিশ্বাস, আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য দাস-দাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাশীযাত্রা করেছিলেন। রাতে নৌকায় তিনি দেবীর স্বপ্নাদেশ পান, কাশী না গিয়ে গঙ্গার পূর্ব পাড়ে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা করতে। এর পরে রানি কাশী যাত্রা স্থগিত করে দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৮৫৫ সালে।

শোনা যায়, কাশীর অন্নপূর্ণা দর্শনে বিঘ্ন ঘটায় সেই থেকেই রানি রাসমণির জামাই মথুরমোহন বিশ্বাসের মনে ইচ্ছে ছিল দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। তাঁর জীবদ্দশায় না হলেও সেই স্বপ্নপূরণ করেছিলেন তাঁর স্ত্রী, রানি রাসমণির ছোট মেয়ে জগদম্বাদেবী। দক্ষিণেশ্বরে মন্দির প্রতিষ্ঠার ঠিক ২০ বছর পরে ১৮৭৫-এর ১২ এপ্রিল চাণক-এ অন্নপূর্ণা মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। এই চাণকই হল আজকের ব্যারাকপুর। মন্দির প্রতিষ্ঠার যাবতীয় ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁদের পুত্র দ্বারিকানাথ বিশ্বাস। তৈরি হয়েছিল পঙ্খের কাজ যুক্ত ন’টি চূড়া বিশিষ্ট নবরত্ন মন্দির, বৃহৎ নাট মন্দির, ছ’টি আটচালার শিবমন্দির, দু’টি নহবৎখানা, গঙ্গার ঘাট, ভোগের ঘর ইত্যাদি। এতে সে যুগে খরচ হয়েছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। ছ’টি শিব মন্দির যথাক্রমে কল্যাণেশ্বর, কাম্বেশ্বর, কিন্নরেশ্বর, কেদারেশ্বর, কৈলাসেশ্বর, ও কপিলেশ্বর।

দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের চেয়ে এই মন্দির উচ্চতায় কিছুটা বেশি হলেও দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে কিন্তু কম। মন্দিরে অধিষ্ঠিত শিব ও অন্নপূর্ণার বিগ্রহ অষ্টধাতুর তৈরি। দেবীকে পরানো হয় বেনারসি শাড়ি ও স্বর্ণালঙ্কার। দেবীর চালচিত্র ও সিংহাসন রুপোর তৈরি। প্রতি মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে বিশেষ পুজো হয়। মন্দিরে প্রতি দিন অন্ন ভোগ হয়। বিশেষ উল্লেখযোগ্য, দেবী অন্নপূর্ণার ভোগে প্রতি দিন মাছ থাকা আবশ্যিক। মন্দিরে মূল অন্নকূট উৎসব হয় কালীপুজোর পরের দিন। এ ছাড়াও অন্নকূট হয় অন্নপূর্ণাপুজোর দিন। আগে পাঁঠাবলি হলেও এখন তা বন্ধ। তবে অন্নপূর্ণাপুজো ছাড়াও মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস (চৈত্র সংক্রান্তি), মঙ্গলচণ্ডী পুজো, বিপত্তারিণী পুজো, অম্বুবাচী, জন্মাষ্টমী, দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজোয় বিশেষ পুজো হয়ে থাকে।

নাটমন্দিরের থামে গথিক স্থাপত্যের প্রভাব লক্ষ করা যায়। তা ছাড়া, মন্দিরের আর্চে দেখা যায় সূক্ষ্ম অলঙ্করণ ও নকশা। কথিত আছে, মন্দিরের প্রবেশপথের তোরণের উপর যে সিংহটি রয়েছে, সেটি সরিয়ে ফেলার জন্য এক সময় ব্রিটিশ প্রশাসন মন্দিরের উপর নানা রকম চাপ সৃষ্টি করেছিল। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পরে আদালতের রায়ে সেটি যথাস্থানেই রয়ে গিয়েছিল। মন্দিরের কাছেই চাঁদনি রীতির গঙ্গার ঘাট যা রানি রাসমণি ঘাট নামেই পরিচিত। শোনা যায় এখানেই শ্রীরামকৃষ্ণ স্নান করেছিলেন শিখ সৈন্যদের সঙ্গে।

মন্দিরের নিত্যসেবা ও পুজো-পার্বনের ব্যয় বহনের জন্য জগদম্বাদেবী সেই সময়ে উপযুক্ত সম্পত্তি দিয়ে ‘অর্পণনামা’ করেছিলেন। সেই ‘অর্পণনামা’-র নির্দেশ অনুসারে ‘জ্যেষ্টানুক্রমে’ বংশের বয়োজ্যেষ্ঠকে মন্দিরের সেবায়েত হতে হয়। শিবশক্তি অন্নপূর্ণা মন্দির ও দেবোত্তর এস্টেটের ম্যানেজিং সেবায়েত অলোককুমার বিশ্বাস বলছিলেন, “এই মন্দিরে মোট চার বার এসেছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ। মন্দির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষেও তিনি উপস্থিত ছিলেন।” মন্দির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, “আমি চাণকে অন্নপূর্ণা প্রতিষ্ঠার সময় দ্বারিকবাবুকে বলেছিলাম বড় দীঘিতে মাছ আছে গভীর জলে। চার ফেল, সেই চারের গন্ধে ওই বড় মাছ আসবে। এক একবার ঘাই দেবে। প্রেমে ভক্তিরূপ চার।” (কথামৃত, ৫ম ভাগ, দ্বাদশ খণ্ড, ৫ম পরিচ্ছেদ।)

শিব ও অন্নপূর্ণার বিগ্রহ

এই মন্দিরের সেবায়েত রাজশ্রী বিশ্বাস জানালেন, জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পরে মন্দিরের আয় কমতে থাকে। দেবোত্তর এস্টেটের উদ্যোগে মন্দিরে নিত্যপুজো ও সেবা হলেও আর্থিক সমস্যা তৈরি হয় রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার নিয়ে। ঐতিহাসিক এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণে আজও মেলেনি কোনও সরকারি সহায়তা। পুজো-পার্বনে ভক্ত সমাগম হলেও অন্যান্য দিনে খুব কম সংখ্যক মানুষের আনাগোনা এই মন্দিরে।

প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ ব্যারাকপুরের গাঁধীঘাট কিংবা মঙ্গল পাণ্ডের স্মৃতিসৌধ দেখতে এলেও, এগুলির অদূরে থাকা বাংলা মন্দির স্থাপত্যের এই উল্লেখযোগ্য কীর্তিটি রয়ে যায় চোখের আড়ালেই। আজও ব্যারাকপুরে ঐতিহাসিক অঞ্চলকে নিয়ে গড়ে ওঠেনি কোনও পরিকল্পনা বা ভ্রমণ প্যাকেজ।

বিটি রোড ধরে ব্যারাকপুর কিংবা টিটাগড়ের মাঝামাঝি তালপুকুর বাসস্টপে নেমে রিকশায় বা হাঁটা পথে মিনিট সাতেকে পৌঁছনো যায় এই মন্দির।

১.   শ্যামসুন্দরজীউর মন্দির

খড়দহের শ্যাম সারা বাংলায় ভক্তজনের হৃদয় জুড়ে।
“দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী, কালীঘাটের কালী, আর খড়দার শ্যামসুন্দর
এরা জীবন্ত, হেঁটে চলে বেড়ান, কথা কন, ভক্তের কাছে খেতে চান।”-
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ।
বর্তমানে একটি পূর্বমুখী সুবৃহৎ আটচালা মন্দিরের ভিতরে বেদীর উপর রূপা দিয়ে তৈরী মঞ্চে শ্যামসুন্দর নামে খ্যাত রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত আছে। কৃষ্ণ কষ্টিপাথর এবং রাধা অষ্টধাতু দিয়ে তৈরী। মন্দির ঘরের মেঝে সিমেন্ট দিয়ে এবং বাইরের সামনের দরদালানের মেঝে পাথর দিয়ে তৈরী। মন্দিরের সামনে একটি বড় পাকা নাট মন্দির আছে। প্রতিদিন নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যা মন্দিরে কীর্তনগানাদি অনুষ্ঠিত হয়। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমদিকে নিত্যানন্দ প্রভু খড়দহে বসবাস স্থাপন করার পর খড়দহের সমৃদ্ধির ইতিহাস শুরু হয়। নিত্যানন্দ প্রভুর বাস হেতু খড়দহ শ্রীপাঠ রূপে পরিচিত এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের অন্যতম তীর্থস্থান। নিত্যানন্দের বংশধররাই খড়দহের গোস্বামী বংশ নামে পরিচিত। শোনা যায়, নিত্যনন্দের তীরধানের পর তাঁর পুত্র বীরভদ্র খড়দহের শ্যামসুন্দর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। নিত্যানন্দ মহাপ্রভু একচক্র গ্রাম থেকে আনা তাঁদের কুলবিগ্রহ বঙ্কিমদেব, ত্রিপুরাসুন্দরী ও অনন্তদেব শিলা নিত্য সেবা পুজা করতেন। কথিত আছে একই শিলা থেকে তিনটি বিগ্রহ নির্মান হয় -খড়দহের শ্যামসুন্দরের বিগ্রহ, শ্রীরামপুরের রাধাবল্লভজীঊর এবং সাইবোনার নন্দদুলাল বিগ্রহ। মাঘী পূর্ণিমারদিন একই দিনে এই তিন বিগ্রহ দর্শন ত্রিনাথ দর্শন হিসাবে ভক্তজনের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপুর্ণ। খড়দহ শ্যামসুন্দর মন্দিরের কয়েকটি উৎসব বিশেষ উল্লেখ্য ১) জন্মাষ্ঠমী, ২) রাসউৎসব (মাস ব্যাপি রাসের মেলা), খিচুড়ি লুট এবং ৩) ঝুলন পূর্ণিমা, ৪) ফুলদোল ইত্যাদি।খড়দহের শ্যামসুন্দর মন্দিরে শ্রী রামকৃষ্ণদেব, শ্রী মা সারদাদেবী ও ভগিনী নিবেদিতা শ্যামসুন্দর দর্শনের ঘটনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

২.   মদনমোহনজীউর মন্দির

মদনমোহনজীউর মন্দির খড়দহ গোস্বামীপাড়ার স্যামসুন্দরের মন্দিরের নিকটেই অবস্থিত । পশ্চিমমুখী আটচালা একটি মন্দিরে মদনমোহনজীউ নামে খ্যাত রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত আছে। পদ্মাসনের উপর দণ্ডায়মান শ্রীকৃষ্ণ মূর্তিটি কষ্টি পাথরের এবং রাধিকা মূর্তিটি অষ্ঠধাতু নির্মিত। নিত্য পূজা ব্যতীত বৈশাখী পূর্ণিমায় ফুল-দোল, গঙ্গার তীরে চাঁচর, শ্রাবণে ঝুলন, ভাদ্র মাসে জন্মাষ্টমী ও রাধাষ্টমী, শরৎকালীন রাসযাত্রা, কার্তিক অমাবস্যায় কৃষ্ণের কালীরূপ ধারণ পূর্বক পূজা ও অন্নকূট মহোৎসব ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় রাধিকা চরণ গোস্বামী মহাশয়ের স্ত্রী প্রসন্নময়ী দেবী মদনমোহনজীউর মন্দির প্রতিষ্ঠা করের।

৩.   দোলমঞ্চ

খড়দহের একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থান হল ‘দোলমঞ্চ’। যেটি শ্যামসুন্দর ঘাটের সন্নিকটেই অবস্থিত।এই স্থানে কেবলমাত্র একটি শিলাখন্ড থেকে শ্যামসুন্দরজী, রাধাবল্লভজী (শ্রীরামপুর)ও নন্দদুলালজীর (খড়দহের বনসাই অঞ্চল) মূর্তি তিনটি নির্মিত হয়। বছরের অন্যান্য দিন ছাড়াও বিশেষ করে দোলপূর্ণিমার দিনটিতে এই স্থান ভক্তসমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে । যে প্রস্তরখন্ডটি থেকে ঐ ত্রিমূর্তি নির্মান করা হয়েছিল, তার অবশিষ্টাংশ দোলের দিন জনসাধারনের নিমিত্তে উপবেষ্ঠিত হয়। বহু মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন শুধুমাত্র এই পবিত্র প্রস্তরখন্ড ও শ্যামসুন্দরজীর দর্শন পাওয়ার আশায়। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার ঐ প্রস্তরখন্ডে আবির মাখিয়ে ভগবানের কাছে নিজের মনের আশা আকাঙ্খা নিবেদনও করেন। ঐ দিন শ্যামসুন্দরজীর মূর্তি সকালে ঐ স্থানে আনা হয় ও বিকেলে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সব মিলিয়ে দোলপূর্ণিমার পূণ্য তীথিতে এই দোলমঞ্চ এক আধ্যাত্মিক ও ভক্তিলীলার মিলনভূমি তে পরিণত হয়। দোলমঞ্চ শুধুমাত্র খড়দহের নয়, সারা বাংলার গর্ব ও ঐতিহ্য ।

৪.   শ্যামসুন্দর ঘাট : কথিত আছে এই ঘাটেই স্নান করে শ্যামসুন্দর জিউ প্রথমে এখানে পা রাখেন।

৫.   নবরত্ন মন্দির / মহাপ্রভুর মন্দির

শ্যামসুন্দরজীউর মন্দিরের কিছু দূরে খড়দহ শহরের মধ্যে একটি বড় ইট দিয়ে তৈরী নবরত্ন মন্দিরে শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীনিত্যানন্দ ও জগন্নাথদেবের দারু মূর্তি এবং কৃষ্ণ-রাধার মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। যা মহাপ্রভুর মন্দির নামে খ্যাত। মহাপ্রভুর মন্দিরে নিত্য পূজা ব্যতীত আষাঢ় মাসে রথযাত্রা, মাঘী শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে শ্রীনিত্যানন্দের আবির্ভাব এবং ফাল্গুণী পূর্ণিমায় শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

৬.   ছাব্বিশ শিবমন্দির

গঙ্গার তীরে খড়দহের উত্তর সীমান্তে বাবু ঘাটে যে ছাব্বিশটি শিবমন্দির দেখতে পাওয়া যায়, তা রামহরি বিশ্বাস ও প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। উল্লিখিত ছাব্বিশটি মন্দিরই আটচালা গঠন রীতিতে তৈরী। ঘাটের দক্ষিণ দিকে গঙ্গার পাড়ে সমচতুস্কোণ উঠোনের চারিদিক ঘিরে মোট কুড়িটি মন্দির আছে। এর পূর্ব-পশ্চিমে উত্তর দিকের চারটি মন্দিরের মাঝখানে একটি লোহার ফটক দিয়ে মন্দিরে ঢুকতে হয়। এই উঠোনের উত্তর-দক্ষিণে ছয়টি, দক্ষিণ দিকে পূর্ব-পশ্চিমে চারটি এবং পশ্চিম দিকে উত্তর-দক্ষিণে ছয়টি মন্দির অবস্থিত। এই মন্দিরটি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দ্বারা সংরক্ষিত। প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস খড়দহের উন্নতির জন্য বিশেষ স্মরণীয়। প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস খড়দহের জমিদার ছিলেন এবং একজন পন্ডিত ও দানবীর হিসাবে স্মরণীয়।

৭.   গোপিনাথ জিউর মন্দির
৮.   কুঞ্জবাটী

কুঞ্জবাটী নিত্যানন্দ প্রভুর বাসস্থান বলে কথিত আছে। এই স্থানে পূর্বমূখী একটি ঘরে শ্রীনিত্যানন্দের মাটির মূর্তি এবং বাড়ির উঠোনে তাঁর পত্মী বসুধা ও জাহ্নাবার সমাধি স্থান আছে। এই কুঞ্জবাটীতে বীরভদ্র ও গঙ্গামণি জণ্মগ্রহন করেন। প্রতি বৎসর মাঘ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে কুঞ্জবাটীতে শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর আবির্ভাব উপলক্ষে নামযজ্ঞ মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কুঞ্জবাটীর প্রবেশ দ্বারের দেওয়ালের গায়ে স্থাপিত একটি পাথরের ফলক থেকে জানা যায়, ইংরাজী ১৯৪২ সালে খড়দহ কোম্পানীর এ. রাইট এবং জে. স্কট দ্বারা কুঞ্জবাটী পুনর্গঠিত হয়। আগে এই কুঞ্জবাটীতেই শ্যামসুন্দর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল।

৯.   রাসমঞ্চ

রাস উৎসব উপলক্ষে রঙিন আলোর মালা, শোলার কদম ফুল আর পাখি দিয়ে রাসমঞ্চটিকে সুসজ্জিত করা হয়। পূর্ণিমার দিন সন্ধ্যার পর নানারকম বাজনা বাদ্য ও আলোর রোশনাই চতুর্দোলায় চড়ে রাধিকসহ শ্যামসুন্দরজীউ মন্দির থেকে রাসমঞ্চে যান। আবার – বৃদ্ধ- বণিতা ও স্থানীয় গোস্বামী পরিবারের লোকজন খোল-করতাল নিয়ে রাসের গান গাইতে গাইতে এই শোভাযাত্রার অনুসরণ করেন। দোলযাত্রা উপলক্ষে খুব ধুমধাম হয়। খড়দহের শ্যামসুন্দরজীউকে কেন্দ্র করে প্রতি বৎসর বৈশাখী পূর্ণিমায় ফুলদোল উপলক্ষে একদিন, মাঘী পূর্ণিমার উৎসব উপলক্ষে একদিন এবং কার্ত্তিক মাসে রাসযাত্রা উপলক্ষে প্রায় একমাসব্যাপী মেলা বসে। যার মধ্যে রাসযাত্রার মেলাই উল্লেখযোগ্য।

১০.  রাসখোলা ঘাট

খড়দহের রাসমঞ্চের সম্মুখে অবস্থিত রাসখোলা ঘাটটি বহু প্রাচীন। বর্তমানে এই ঘাটটি সংস্কারের পরে পুনরায় ভগ্নদশা অবস্থায় রয়েছে, যদিও ঘাটটির উপরের চাতালটি এবং মূল ঘাটের উপরের অংশের শোভা মানুষকে এখনও আকৃষ্ট করে।শ্রী রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের পূণ্যপদধূলির প্রভাবে খড়দহ ও পানিহাটির ধূলিকণা পূণ্যতীর্থ হিসাবে ধন্য।স্বামী বিবেকানন্দের ১৫০তম জন্মদিবস উপলক্ষে একটি নৌকা যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই যাত্রায় পানিহাটি ও খড়দহ অর্ন্তভুক্তি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

১১.  রাধাকান্ত মন্দির খড়দহ

শ্যামসুন্দর মন্দিরের দক্ষিণে প্রায় ১কিলোমিটার দূরে খড়দহ-কুলীনপাড়ায় সম্মুখে দালান ও নাটমন্দিরসহ একটি পূর্বমুখী আটচালা মন্দিরে রাধাকান্ত নামে খ্যাত রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত আছে।এই মন্দিরটি স্থানীয় শিরোমণিদিগের এবং শোনা যায় ইহা খড়দহে শ্যামসুন্দর মন্দির প্রতিষ্ঠার পূর্বে নির্মিত । এখানে নিয়মিত পূজাপাঠ হয়। ভক্ত জনসাধারন বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান এই নাট মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয়।

১২.  লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির (সোনার মন্দির), খড়দহ

কুলিনপাড়ায় গঙ্গার তীরবর্তী বলরাম ধর্ম সোপান রোডে চারদিকে ফুল ও ফলের বাগান বেষ্টিত প্রাঙ্গণের মাঝখানে প্রাসাদতুল্য পশ্চিমমুখী লক্ষ্মীনারায়ণমন্দির প্রতিষ্ঠিত। বাংলা ১৩৫৩ সনের ২১শে বৈশাখ স্বামী যতীন্দ্র রামানুজ দাস দ্বারা স্থাপিত। মূল মন্দিরে সুউচ্চ পাঁচটি চূড়ার মধ্যেরটিতে পর পর তিনটি সুবৃহৎ পিতলের কলসী এবং তার উপর একটি বিষ্ণুচক্র স্থাপিত আছে। মন্দিরের ভিতরে শ্বেত পাথরের বেদীর উপর বাঁদিকে লক্ষ্মীদেবী ছাড়াও শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মধারী চতুর্ভুজ বিষ্ণু মূর্তি ও আছে। দুটি মূর্তি এবং মন্দিরের ঘরের মেঝে শ্বেত পাথর দিয়ে তৈরী। এছাড়াও মন্দিরে বলরাম স্বামীর মর্ম্মর মূর্তিও আছে। মন্দিরের বাগান থেকে প্রস্তর নির্মিত একটি ফটক পার হয়ে ইট বাঁধানো চওড়া ঘাটের সিড়ি গঙ্গার গর্ভে নেমে গেছে। মন্দিরে নিত্য পূজা ব্যতীত দোল, জন্মাষ্টমী প্রভৃতি তিথিতে উৎসব এবং চৈত্র মাসের শুক্ল একাদশী তিথিতে বলরাম স্বামীর আবির্ভাব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা পূর্বাশ্রমের প্রখ্যাত চিকিৎসক ডঃ ইন্দুভূষণ বসুর আরও অনেকগুলি জনহিতকর কার্য স্মরণীয়। যথা – বলরাম হাসপাতাল, শ্রী বলরাম শিক্ষায়তন, মুদ্রণ প্রেস, উজ্জীবন পত্রিকা এবং বিবিধ প্রকাশনা, মহিলাদের বয়নশিল্প শিক্ষা ইত্যাদি।

১৩.  অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তি

পঞ্চানন তলায় কয়েকবছর আগে বহুতল নির্মাণ কালে খনন কার্য করার সময় এক অপূর্ব কালো প্রস্তর খন্ডের অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তির সন্ধান পাওয়া যায়। এটি ‘সেন বংশ’ আমলের নিদর্শন হিসাবে অনেকেরই অনুমান। আরো কয়েক বছর আগে অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তিটির কাছাকাছি অঞ্চলেই প্রাপ্ত বৌদ্ধ মূর্তি সহ বিশাল প্রস্তর খিলান এবং প্রাচীন টেরাকোটা শিবমন্দির তিনটি প্রমান করে খড়দহ সুখচর ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে উন্নত জীবন ধারা ও ধর্মীয় সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ছিল। আনুমানিক ৬০০ বৎসর পূর্বে প্রথমে বৌদ্ধ সংস্কৃতি, পরবর্তীকালে সেন বংশ আমলে অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তি ও তারও পরে শৈব সংস্কৃতির পরম্পরার ধারা লক্ষ্য করা যায়।

১৪.  সিদ্ধেশ্বরী মাতা কালী মন্দির, সুখচর

‘সুখচর কালীতলা’ প্রসিদ্ধ স্থান। স্থানটি খুবই প্রাচীন । সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতার ডানদিকে যে-ঘরে শিবলিঙ্গ পূজিত হচ্ছেন ‘তুঁতেশ্বর শিব’ নামে, সেই প্রাচীন দেউলেরই একটি অংশ বিশেষ। নতুন মন্দিরটি তৈরি হয় অনেক পরে। গ্রামে আজও চড়ক পূজার সমারোহ ঘটে যা প্রাচীন সেই যুগের কথাই সমর্থন করে। পূর্বে জায়গাটি তুঁতগাছের জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুর জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেন। ওই সময় শিব লিঙ্গটি পাওয়া যায়। তাই ‘তুঁতেশ্বর শিব’ নামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ও সিদ্ধেশ্বরী দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। পরে স্থানীয় গোবিন্দচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের কোন এক পূর্বপুরুষ শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করান। শিলালিপিতে জানা যায় ১৯০১ সালে হেমাঙ্গনী দেবী এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মূর্তিটি নবরূপে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেন ভক্ত গোপালচন্দ্র দে ও তার পত্মী বিনোদিনী দাসী ১৯১৭ খৃষ্টাব্দে। মন্দিরের ভিতরে কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি ও পদতলে রয়েছেন মহাদেব। সুখচর গ্রামের প্রানকেন্দ্রে এই মন্দিরের অবস্থান।

১৫.  এটা একটু অন্য পথে। আমি রাজবাড়ি দেখেছি, জমিদার বাড়ি দেখেছি কিন্তু ব্যাবসাদারের বাড়ি রাজবাড়ির মতো কোনও দিন দেখিনি। যখন লক্ষ্মী নারায়ান মন্দির দেখে আগে যাচ্ছিলাম তখন রাস্তায় হঠাৎ একটা ভাঙা রাজবাড়ি চোখে পড়ল। আমার স্বভাব একটু দাঁড়িয়ে পড়লাম। জিজ্ঞাসা করায় ওনারা বললেন এটা ত্রাণ নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাবসাদারের বাড়ি। দেখলে পুরো রাজবাড়ি। অনুমোদন নিয়ে কিছু ফটো নিলাম।

১৬.  শ্রীরাঘব ভবন

শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে উল্লেখ আছে শ্রীচৈতন্যের সদা অধিষ্ঠান
“শচীর মন্দিরে, আর নিত্যানন্দ নর্তনে, শ্রীবাস অঙ্গনে আর রাঘব ভবনে, এই চারিঠাঁই প্রভুর সদা আবির্ভাব।"
শ্রীচৈতন্যের অন্তরঙ্গ পার্ষদ রাঘব পন্ডিতের ‘শ্রীপাট’ এবং মাধবীলতা কুঞ্জে আছে রাঘব পন্ডিতের সমাধি। ওনারই প্রতিষ্ঠিত মদনমোহন এবং রাধারমণ মূর্তির নিত্য পূজা হয়। কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্য চরিতামৃতে চার ঠাঁই এর উল্লেখ আছে, যার একটি ঠাঁই শ্রীরাঘব ভবন। রাঘব ভবনে এসেছিলেন শ্রী চৈতন্য ও নিত্যানন্দ মহাপ্রভু। রাঘব ভবন থেকে পুরিতে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্য পাঠানো হত নানা প্রকার আহার সামগ্রী যা রাঘবের ঝালী হিসাবে বিখ্যাত। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব একাধিকবার এই রাঘব ভবনে চিরা উৎসব উপলক্ষে যোগদান করেন। রাঘব ভবন গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সোদপুর স্টেশনের পশ্চিম দিকে স্টেশন রোড ধরে মীনা সিনেমা (পিয়ারলেস) বাসস্টপেজ পার হয়ে পশ্চিমমুখী রাস্তা ধরে রাঘব পন্ডিতের ভবনে আসা যায়।

১৭.  পানিহাটি মহোৎসবতলা

পানিহাটি আর খড়দহ ভাগীরথীর তীরবর্তী পাশাপাশি দুইটি প্রাচীন গ্রাম। শ্রীচৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ পানিহাটিতে এসে এই বৃক্ষ মূলেই উপবেশন করেছিলেন বলে শোনা যায়। এই বটবৃক্ষটির মূল বেস্টন করে ইঁট দিয়ে বাঁধানো বেদীর উপর স্থাপিত একটি স্মৃতিস্তম্ভের পাথরের ফলকে লেখা থেকে জানা যায় শ্রীচৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ পানিহাটি এসে এই বৃক্ষ মূলেই বসে ছিলেন। শ্রী রামকৃষ্ণ দেব পানিহাটিতে শ্রী চৈতন্য প্রবর্তিত চিড়া উৎসবে প্রায় প্রতি বৎসর ভক্ত বৃন্দসহ যোগদান করতেন।পানিহাটিকে শ্রী রামকৃষ্ণ মহাতীর্থ মনে করতেন, যা প্রত্যেক খড়দহ থানার অধিবাসী তথা পানিহাটিবাসীর কাছে একটি গৌরব। এই প্রসঙ্গে শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃতে একাদশ অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে। ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দে ৯ই ডিসেম্বর রবিবার পঞ্চবটীতে শ্রী রামকৃষ্ণ ও মাষ্টার (মহেন্দ্র গুপ্ত-শ্রীম) এর কথপোকথন, শ্রী রামকৃষ্ণর এই ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি দক্ষিণেশ্বর পানিহাটি (পেনেটি)র মত মহাতীর্থ হওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ পেয়েছে।মহাত্মা গান্ধী শ্রী চৈতন্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য মহোৎসবতলায় পরিদর্শনে আসেন ১৯৪৬ সালের ১৮ই জানুয়ারী। এই পরিদর্শনকে তিনি তীর্থ যাত্রা হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। বিশ্ব বন্দিত এই মহাপুরুষগণের মিলনক্ষেত্র হিসাবে পানিহাটি মহোৎসবতলা আজও এক অনন্য ঐতিহ্যের স্বাক্ষী বহন করছে।

১৮.  ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের মন্দির

১৯.  গিরিবালা ঠাকুরবাড়ি

রানী রাসমনির ছোট নাতবৌ গিরিবালা দাসী পানিহাটিতে দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের অনুকরণে একটি রাধামাধব মন্দির বানিয়েছিলেন বাংলা ১৩১৮ সালে। এখানে রয়েছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাঁধানো প্রাঙ্গণ থেকে মন্দিরের মেঝে প্রায় ৭ ফুট উঁচু, মন্দিরের গায়ে রঙ্গীন কাঁচের কারুকার্য। মন্দিরের মেঝে থেকে নামার সিঁড়ির দুপাশে দুটি পাথরের নারীমূর্তি হাতে রঙ্গীন কাঁচের বাতিদান, দক্ষিণে ৫০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া শ্বেতপাথরের বাঁধানো নাট মন্দির। গঙ্গার তীরে ছয়টি শিবমন্দির কামেশ্বর, রামেশ্বর, গোপেশ্বর, তারকেশ্বর, ভুবনেশ্বর ও গিরিশ্বর। সঙ্গেই রয়েছে বিশাল ঘাট। প্রতিটি শিবমন্দিরের গায়ে রাধাকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলার ছবি আঁকা রয়েছে। কামেশ্বর মন্দিরে যুগল মিলন, রামেশ্বর মন্দিরে মথুরানাথ, গোপেশ্বর মন্দিরে গোষ্টলীলা, তারকেশ্বর মন্দিরে অনন্তশয়ান, ভুবনেশ্বর মন্দিরে রাইমিলন ও গিরিশ্বর মন্দিরে কালিয়াদমনের চিত্র অঙ্কন।

যখন এই মন্দিরে ঢুকলাম তখন বারোটা বেজে গেছে তাই মন্দিরের গেট বব্ধ করে দিচ্ছে। আমি লাস্ট ম্যান যে মন্দিরটা দেখলাম। এরপর আবার সব মন্দির খুলবে বিকেল চারটের সময়। দেখলাম আর দাড়িয়ে কোনও লাভ নেই তাই বাড়ি ফিরে এলাম।
আনার লিস্টের মধ্যে যে জিনিস গুলি দেখা বাকি রয়ে গেল তার একটা লিস্ট দিচ্ছি।
১.   গান্ধীজির দ্বিতীয় আবাসস্থল – খাদি প্রতিষ্ঠান সোদপুর
২.   ছাতুবাবু ও লাটুবাবুদের বাগানবাড়ী (গোবিন্দ হোম)
৩.   আনন্দময়ী আশ্রম, আগরপাড়া
৪.   মনি সেনের ঠাকুরবাড়ি, পানিহাটি
৫.   নিত্যানন্দের দারু বিগ্রহ, মহেন্দ্রবাবুর ঠাকুরবাটী, সুখচর
৬.   মনি সেনের ঠাকুরবাড়ি, পানিহাটি
৭.   ত্রাণনাথ মন্দির, পানিহাটি
৮.   সুখচর বাজারপাড়া ঘাট
৯.   রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন
১০.  সুখচরের টেরাকোটা শিবমন্দির
১১.  রবীন্দ্র উদ্যান খড়দহ
আর লিস্টে না থাকা কত যে বাদ গেছে তার কোনও হিসাব নেই। যেহেতু বৃন্দাবন তাই একদিনে শেস করা সম্ভব নয়।

descriptionচলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে EmptyRe: চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে

more_horiz
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img41
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img43
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img42চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img44
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img45
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img46

descriptionচলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে EmptyRe: চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে

more_horiz
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img47
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img49
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img48চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img50
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img52
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img51

descriptionচলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে EmptyRe: চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে

more_horiz
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img53
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img55
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img54চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img56
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img57
চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে Fb_img58

descriptionচলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে EmptyRe: চলুন বেরিয়ে আসি বৃন্দাবনে

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply