#কনখল

কনখল, নাম টা এর সাথে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী জড়িয়ে আছে।বলা হয় সতীর জন্ম এখানে হয়েছিল রাজা দক্ষের গৃহে‌।

হরিদ্বার পৌঁছে স্টেশনে থেকে বেড়িয়ে সামনেই পড়ে একটা ফোয়ারা। ফোয়ারা থেকে তিনদিকে রাস্তা গেছে একটা সোজা হর কি পউরির দিকে , দ্বিতীয় টা কনখলের দিকে, তৃতীয় টা দক্ষিণ দিকে।

কনখল নামের এক ইতিহাস আছে। এখানে ছিল দক্ষের আলয় ।সেই স্হানে একদিন কিছু বাম্ভ্রন ধর্মলোচনা করছিলেন। সেই সময় একজন খল নামক নাস্তিক ধর্মালোচনারত বাম্ভ্রনদের জিনিস চুরি করার জন্য উপস্থিত হলো। কিন্তু ধর্মালোচনা শুনে তার মনোভাবের পরিবর্তন হলো এবং তাই সে বাম্ভ্রনদের কাছে নিজের মুক্তির উপায় জানতে চাইলো। তারা তখন খল কে গঙ্গা স্নান করে শিবমন্ত্র জপ করতে বললো। এইভাবে খল এই নির্দশন পালন করে মুক্তি লাভ করলো। 'কো ন খল: তরতি'? অর্থাৎ এমন খল কে আছে যে এই তীর্থ এ পরিত্রাণ লাভ না করিবে। অর্থাৎ স্হান মাহত্ম‍্যে এখানে কেহই খল নয়। তারপর থেকে এই জায়গার নাম হয় কনখল।

এই কনখলে যজুর্বেদীয় মহাজ্ঞানী রাজা দক্ষের আলয়ে সতীর জন্ম হয়। সতী ছিলেন শিবপূজারিণী, তিনি শিবকে স্বামী রূপে কামনা করতেন।। দক্ষপুরীর অদূরেই যে বেলগাছের বনে তিনি শিবার্চনা করতেন সেখানে এখনও বিল্বকেশ্বরের মন্দিরে রয়েছেন লিঙ্গেশ্বর মহাদেব।

সতীর যখন বিয়ের স্বয়ম্বরের আয়োজন হয় ,তখন সতী দেখেন সেইখানে শিব নেই। স্বয়ন্বর সভায় শিবকে অনুপস্থিত দেখে তাঁর উদ্দেশ্যে সতী আকাশে বরমাল্য নিক্ষেপ করলে সে ফুলহার গলায় পরিহিত হয়ে ভস্মাবৃত বাঘছালশোভিত জটাধারী শম্ভু স্বয়ম্বরসভায় আবির্ভূত হলেন এবং ঘোর অনিচ্ছা সত্ত্বেও কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা দক্ষ সতীর জেদের কাছে পরাভূত হয়ে তাঁকে শ্মশানচারীর হাতে সম্প্রদান করলেন।

বিয়ের পরে সতী একদিন জানতে পারেন যে তার পিতা যজ্ঞের আয়োজন করছেন।তিনি এইকথা শুনে যক্ষালয়ে এসে উপস্থিত হয়ে বুঝতে পারেন যে তিনি এবং তার স্বামী ছাড়া সবাই এই অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত।মানবকন্যা দেবী সতীর মন খারাপ হয়ে যায় । সতী এসে পিতা কে তাদের নিমন্ত্রণ না করার কারন জিগ্যেস করলে তিনি উল্টে জামাইয়ের নিন্দা করতে শুরু করেন। পিতারই মুখে সতী পতির নিন্দা শুনে পিতৃদত্ত পার্থিব শরীর অন্তরস্থ শোকাগ্নিতে আহুতি দিলেন।

দুঃসংবাদ পেয়ে ক্রুদ্ধ মহাদেব দৌড়ে এসে শ্বশুরের মুন্ডচ্ছেদন করে যজ্ঞকুণ্ডে নিক্ষেপ করলেন এবং মৃতা স্ত্রীর দেহ কাঁধে তুলে প্রবল তান্ডবনৃত্য শুরু করলেন। প্রলয়ঙ্করী সেই নৃত্য থামাতে বিষ্ণু সুদর্শনচক্র নিক্ষেপ করে সতীদেহ একান্ন টুকরো করলেন।

সতীর দেহের নানা অঙ্গ অবিভক্ত ভারতের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ল। কেবল যে অঙ্গটি শিবের কাঁধ স্পর্শ করে ছিল, সতীর সেই দেহাবশেষ জঠর (মতান্তরে নাভি ) পড়ে রইল কনখলের যজ্ঞস্থলেই। তৈরী হল গঙ্গার ক্ষীণস্রোত এক পবিত্র জলাধার ; সতীকুণ্ড।

আর পত্নীবিয়োগের ক্রোধের সঙ্গে প্রিয়া হারানোর যে হাহাকার মিশে রয়েছিল, তা অশ্রুবিন্দু হয়ে রুদ্রের অক্ষি থেকে ভূমিতে ঝরে পড়ল ; সেই সব স্থানে জন্ম নিল পুরুষের প্রেমের অপূর্ব প্রতীক রুদ্রাক্ষ ফল সমৃদ্ধ পুণ্যবৃক্ষ।

ক্রমশঃ