◆ ◆ বিশ্বের সেরা শিক্ষক যেন লোউয়ি, ছাত্রছাত্রীর মন ছুঁয়ে পথ দেখিয়েছেন অভিভাবকদেরও ◆ ◆
___________________________________________
মাত্র কয়েকমাস আগের কথা। ওকলাহোমার কলিন্সভিল মিডল স্কুল সেদিন অন্যান্য দিনের মতোই ছাত্রছাত্রীদের হইচইয়ে প্রাণবন্ত ছিল। ক্লাস সেভেন আর এইটকে একটি বড় ঘরে ডেকে নিয়েছিলেন ৪৬ বছরের শিক্ষিকা কারেন লোউয়ি। নীচের শ্রেণিগুলি থেকে ক্রমাগত অভিযোগ আসছে এই দুটি ক্লাসকে নিয়ে। এই দুটি ক্লাসের ছেলে মেয়েরা নিচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের সবসময় বিরক্ত করে। মারধর করে। পিছনে লাগে। নিজেদের মধ্যেও ঝামেলা লাগে নিয়মিত। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের অভিযোগ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। ক্লাস সেভেন আর এইটের ছাত্রছাত্রীরা হলঘরে বসেছিল চুপ করে। ম্যাডাম কাকে ডাকবেন, কাকে শাস্তি দেবেন, তা নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল ফিসফিস করে। শিক্ষিকা কারেন লোউয়ি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন,”আজ আমরা একটা খেলা খেলব।” ছাত্রছাত্রীরা একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিল। শাস্তির বদলে খেলা!
ম্যাডাম লোউয়ি বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ বলতে পারো ‘বোঝা’ মানে কী? বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী বলেছিল বোঝা মানে খুব ভারী কিছু যা পিঠে বা মাথায় করে বইতে হয়। শিক্ষিকা তখন ছাত্রছাত্রীদের বলেছিলেন, “আজ আমি তোমাদের বোঝা কে চেনো নামের একটা মজার খেলা খেলাব।” ক্লাসে পড়াশুনা না হওয়ার আনন্দে হাততালি দিয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা। ম্যাডাম লোউয়ি ক্লাসের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলেছিলেন “তোমরা প্রত্যেকে একটুকরো কাগজে তোমাদের জীবনের এমন একটা দুঃখের কথা লিখবে, যেটা তোমরা চেষ্টা করেও ভুলতে পারছো না। যেটা তোমাদের হৃদয়ে সবচেয়ে আঘাত দিয়েছে। যা দিনে রাতে স্কুলে বাড়িতে তোমাদের মাথার ভেতর বার বার ঘুরে ফিরে আসে।”
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা। ম্যাডাম বলেছিলেন, “লেখার পর কাগজটা ভাঁজ করে রাখবে। তারপর আমি যখন বলব সবাই চোখ বন্ধ করে যেদিকে খুশি ছুঁড়ে দেবে। চিরকুটে কিন্তু কেউ নিজের নাম লিখবে না ” ছাত্রছাত্রীরা ম্যাডামের কথা অনুযায়ী চিরকুট লেখা শুরু করেছিল। একসময় লেখা শেষ হয়েছিল।শিক্ষিকা বলেছিলেন, “এবার একেক জন একেকটা কাগজ কুড়োবে। তারপর জোরে জোরে সেই কাগজটা পড়বে।” ছাত্রছাত্রীরা তুলেছিল এক একটা চিরকুট এবং একে একে জোরে জোরে পড়তে শুরু করেছিল। প্রথমটা শুরু হয়েছিল হাসি দিয়ে, কারণ প্রথম চিঠিতে ক্লাসের কেউ লিখেছিল, তার পোষা বিড়ালটি মোটা হয়ে গেছে। এটা তার সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয়। গোটা ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়েছিল।
এরপর একটার পর একটা চিঠি পড়া হচ্ছিল। ছাত্রছাত্রীদের মুখের হাসি বিষন্নতার রূপ নিচ্ছিল। বাইরে ছিল ঝলমলে রোদ, ঘরের নেমে এসেছিল মিশকালো রাত। ছাত্রছাত্রীদের বুকের ভেতরে জমে থাকা কান্নাগুলো একে একে উঠে আসছিল অক্ষরের রূপ নিয়ে। কারও বাবার জেল হয়েছে। কারও ফ্যামিলিতে খোলাখুলি ড্রাগ নেওয়া চলে। কারও বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে গেছেন। কারও সৎ বাবা রোজ রাতে তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালান। কারও ওপর যৌন নিপীড়ন চালায় নিকট আত্মীয় বা স্কুল বাসের ড্রাইভার। কারও ভাইয়ের ক্যানসার, কারও পোষ্যকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে প্রতিবেশী। কারও বাবা ঘুষ নেন। কারও বাবা বা মা অবৈধ সম্পর্কে জড়িত থাকায় বাড়িতে নিত্য অশান্তি। কারও বাবা মা সন্তানকে সময় দেন না। কারও বাবা মা নিজেদের মধ্যে অশান্তির জেরে সন্তানকে কথায় কথায় প্রচণ্ড মারেন। কারও বাবা মা কথা বলতে গেলেই রেজাল্ট নিয়ে খোঁটা দেন।
কারও বাবা মা সবসময় অন্যের সঙ্গে তুলনা করেন। কেউ নিজের চোখে কাউকে খুন হতে দেখেছে। কেউ নিজের চোখে কাউকে দুর্ঘটনায় মারা যেতে দেখেছে। কেউ নিজে ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে ফিরে এসেছে। কারও বাবা বা মা আত্মহত্যা করেছেন।
প্রতিটি চিরকুটে ঘটনাগুলি নিখুঁতভাবে বর্ননা করেছিল ছাত্রছাত্রীরা। অন্যের চিরকুট পড়তে পড়তে নিজেরাই কেঁদে ফেলেছিল। কারণ তারা যা পড়ছিল সেটা পড়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। বাকি ছাত্রছাত্রীদের মুখগুলি ভরে গিয়েছিল বিষন্নতায়। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে শুরু করেছিল সবাই। এমনকি ক্লাসের সবচেয়ে দুরন্ত ও অবাধ্য ছেলেটিও।
ম্যাডাম লোউই সেদিন ওদের কাঁদতে বাধা দেননি। পড়া শেষ হলে কাগজগুলি নিয়ে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখছিলেন। সব চিরকুট একটি পলি ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগটি ক্লাসের সামনে তুলে ধরেছিলেন শিক্ষিকা। ম্লান মুখে বলেছিলেন, “আমার প্রিয় বন্ধুরা এটির ভেতর আছে তোমাদের জীবনের সবচেয়ে ভারী বোঝাগুলি। এখানে যতজন বসে আছো, ততগুলি যন্ত্রণার বোঝা বহন করছে এই পলিব্যাগটি। এই যন্ত্রণার বোঝা প্রতিনিয়ত বহন করে তোমরা স্কুলে আসো। তোমাদের মতো প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রী এই বোঝা নিয়ে স্কুলে আসে।”
তখনও কেঁদেই চলেছিল সবাই। ম্যাডাম বলেছিলেন, তোমরা নিজেরাই দেখছ তোমরা কেউ একা নও। আমি এই বোঝাটা ক্লাসরুমের দরজার বাইরে ঝুলিয়ে দেবো। আজ থেকে এটা ক্লাসের দরজার বাইরে ঝুলবে। আমি চাইবো তোমরা ঠিক এরকমই তোমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় বোঝাকে জীবন দরজার বাইরে রাখবে। বোঝাকে দূরে সরিয়ে রাখতে একে অপরের পাশে থাকবে।”
ছাত্রছাত্রীরা যখন চোখের জল মুছতে মুছতে ক্লাস ছেড়ে যাচ্ছিল, শিক্ষিকা তাদের বলেছিলেন তারা একা নয়। তাদের এই পৃথিবীতে অনেকে ভালোবাসে। তিনি গর্বিত তাদের মতো ছাত্রছাত্রীর শিক্ষক হতে পেরে। তাঁর ফোন খোলা থাকবে ছাত্রছাত্রীদের মনের কথা শোনার জন্য।
ওকলাহোমার উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা কারেন লোউয়ি ওইদিন সন্ধ্যায় পলিব্যাগটির ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর মন নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের দেখুন আজকের শিক্ষক ও অভিভাবকরা। যাতে অকালে কোনও শিশুকে হারিয়ে যেতে না হয়।
তিনদিনের মধ্যে পোস্টটি চার লক্ষ বার শেয়ার করা হয়েছিল। যাঁরা শেয়ার করেছিলেন তাঁদের অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। সেকথা পোস্টে স্বীকারও করেছেন।
সংবাদমাধ্যমকে শিক্ষিকা বলেছিলেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম, মনের মধ্যে কেবলই ছিল খেলা আর বেড়ানোর চিন্তা। কিন্তু এখনকার ছেলে মেয়েরা যে ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা আমি ভেবেই শিউরে উঠছি। আমরা কি কখনও, একটিবারের জন্যও জানতে চেষ্টা করি বাচ্চাদের ইমোশনাল ওয়ার্ল্ডে কী চলে!”
আজকের বাবা মা শিক্ষক শিক্ষিকাদের সামনে একটা শাণিত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে গেছেন কারেন লোউয়ি। সত্যিই কি আমরা জানতে চেষ্টা করেছি, আজকের কচিকাঁচারা কী অসহায় ভাবে বেঁচে আছে? এত অল্প বয়সেই দুঃখের কত বড় পাহাড় নিয়ে ঘোরা ফেরা করছে তারা, তা কি জেনেছি ? তাদের আবেগ শেয়ার করার মতো কোনও জায়গা দিয়েছি? মানসিক চাপ নিতে না পেরে যারা অকালে হারিয়ে যাচ্ছে তার জন্য আমরা দায়ী নই তো?
আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগাযোগ করতে চাইছেন ওই শিক্ষিকার সঙ্গে। তিনি বলছেন, আমার সঙ্গে কথা না বলে বরং কথা বলুন নিজেদের ছেলেমেয়ের সঙ্গে, ছাত্রছাত্রীদের মনের খোঁজ নিন।
ম্যাডাম লোউয়ির স্কুল স্বেদিন থেকে শান্ত হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা একেবারে পাল্টে গেছে। ঝগড়াঝাঁটি, পিছনে লাগা, অভিযোগ, র্যাগিং এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। সবাই সবাইকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শিখে গেছে। শিখিয়ে দিয়েছেন তাদের প্রিয় ম্যাম কারেন লোউই।
সংগৃহীত
#৪৬ #বছরের #শিক্ষিকা #কারেন #লোউয়ি
#karen #loewe
___________________________________________
মাত্র কয়েকমাস আগের কথা। ওকলাহোমার কলিন্সভিল মিডল স্কুল সেদিন অন্যান্য দিনের মতোই ছাত্রছাত্রীদের হইচইয়ে প্রাণবন্ত ছিল। ক্লাস সেভেন আর এইটকে একটি বড় ঘরে ডেকে নিয়েছিলেন ৪৬ বছরের শিক্ষিকা কারেন লোউয়ি। নীচের শ্রেণিগুলি থেকে ক্রমাগত অভিযোগ আসছে এই দুটি ক্লাসকে নিয়ে। এই দুটি ক্লাসের ছেলে মেয়েরা নিচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের সবসময় বিরক্ত করে। মারধর করে। পিছনে লাগে। নিজেদের মধ্যেও ঝামেলা লাগে নিয়মিত। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের অভিযোগ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। ক্লাস সেভেন আর এইটের ছাত্রছাত্রীরা হলঘরে বসেছিল চুপ করে। ম্যাডাম কাকে ডাকবেন, কাকে শাস্তি দেবেন, তা নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল ফিসফিস করে। শিক্ষিকা কারেন লোউয়ি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন,”আজ আমরা একটা খেলা খেলব।” ছাত্রছাত্রীরা একে ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছিল। শাস্তির বদলে খেলা!
ম্যাডাম লোউয়ি বলেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ বলতে পারো ‘বোঝা’ মানে কী? বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী বলেছিল বোঝা মানে খুব ভারী কিছু যা পিঠে বা মাথায় করে বইতে হয়। শিক্ষিকা তখন ছাত্রছাত্রীদের বলেছিলেন, “আজ আমি তোমাদের বোঝা কে চেনো নামের একটা মজার খেলা খেলাব।” ক্লাসে পড়াশুনা না হওয়ার আনন্দে হাততালি দিয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা। ম্যাডাম লোউয়ি ক্লাসের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলেছিলেন “তোমরা প্রত্যেকে একটুকরো কাগজে তোমাদের জীবনের এমন একটা দুঃখের কথা লিখবে, যেটা তোমরা চেষ্টা করেও ভুলতে পারছো না। যেটা তোমাদের হৃদয়ে সবচেয়ে আঘাত দিয়েছে। যা দিনে রাতে স্কুলে বাড়িতে তোমাদের মাথার ভেতর বার বার ঘুরে ফিরে আসে।”
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল ছাত্রছাত্রীরা। ম্যাডাম বলেছিলেন, “লেখার পর কাগজটা ভাঁজ করে রাখবে। তারপর আমি যখন বলব সবাই চোখ বন্ধ করে যেদিকে খুশি ছুঁড়ে দেবে। চিরকুটে কিন্তু কেউ নিজের নাম লিখবে না ” ছাত্রছাত্রীরা ম্যাডামের কথা অনুযায়ী চিরকুট লেখা শুরু করেছিল। একসময় লেখা শেষ হয়েছিল।শিক্ষিকা বলেছিলেন, “এবার একেক জন একেকটা কাগজ কুড়োবে। তারপর জোরে জোরে সেই কাগজটা পড়বে।” ছাত্রছাত্রীরা তুলেছিল এক একটা চিরকুট এবং একে একে জোরে জোরে পড়তে শুরু করেছিল। প্রথমটা শুরু হয়েছিল হাসি দিয়ে, কারণ প্রথম চিঠিতে ক্লাসের কেউ লিখেছিল, তার পোষা বিড়ালটি মোটা হয়ে গেছে। এটা তার সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয়। গোটা ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়েছিল।
এরপর একটার পর একটা চিঠি পড়া হচ্ছিল। ছাত্রছাত্রীদের মুখের হাসি বিষন্নতার রূপ নিচ্ছিল। বাইরে ছিল ঝলমলে রোদ, ঘরের নেমে এসেছিল মিশকালো রাত। ছাত্রছাত্রীদের বুকের ভেতরে জমে থাকা কান্নাগুলো একে একে উঠে আসছিল অক্ষরের রূপ নিয়ে। কারও বাবার জেল হয়েছে। কারও ফ্যামিলিতে খোলাখুলি ড্রাগ নেওয়া চলে। কারও বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে গেছেন। কারও সৎ বাবা রোজ রাতে তার ওপর যৌন নিপীড়ন চালান। কারও ওপর যৌন নিপীড়ন চালায় নিকট আত্মীয় বা স্কুল বাসের ড্রাইভার। কারও ভাইয়ের ক্যানসার, কারও পোষ্যকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে প্রতিবেশী। কারও বাবা ঘুষ নেন। কারও বাবা বা মা অবৈধ সম্পর্কে জড়িত থাকায় বাড়িতে নিত্য অশান্তি। কারও বাবা মা সন্তানকে সময় দেন না। কারও বাবা মা নিজেদের মধ্যে অশান্তির জেরে সন্তানকে কথায় কথায় প্রচণ্ড মারেন। কারও বাবা মা কথা বলতে গেলেই রেজাল্ট নিয়ে খোঁটা দেন।
কারও বাবা মা সবসময় অন্যের সঙ্গে তুলনা করেন। কেউ নিজের চোখে কাউকে খুন হতে দেখেছে। কেউ নিজের চোখে কাউকে দুর্ঘটনায় মারা যেতে দেখেছে। কেউ নিজে ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে ফিরে এসেছে। কারও বাবা বা মা আত্মহত্যা করেছেন।
প্রতিটি চিরকুটে ঘটনাগুলি নিখুঁতভাবে বর্ননা করেছিল ছাত্রছাত্রীরা। অন্যের চিরকুট পড়তে পড়তে নিজেরাই কেঁদে ফেলেছিল। কারণ তারা যা পড়ছিল সেটা পড়া অত্যন্ত কঠিন ছিল। বাকি ছাত্রছাত্রীদের মুখগুলি ভরে গিয়েছিল বিষন্নতায়। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে শুরু করেছিল সবাই। এমনকি ক্লাসের সবচেয়ে দুরন্ত ও অবাধ্য ছেলেটিও।
ম্যাডাম লোউই সেদিন ওদের কাঁদতে বাধা দেননি। পড়া শেষ হলে কাগজগুলি নিয়ে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখছিলেন। সব চিরকুট একটি পলি ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগটি ক্লাসের সামনে তুলে ধরেছিলেন শিক্ষিকা। ম্লান মুখে বলেছিলেন, “আমার প্রিয় বন্ধুরা এটির ভেতর আছে তোমাদের জীবনের সবচেয়ে ভারী বোঝাগুলি। এখানে যতজন বসে আছো, ততগুলি যন্ত্রণার বোঝা বহন করছে এই পলিব্যাগটি। এই যন্ত্রণার বোঝা প্রতিনিয়ত বহন করে তোমরা স্কুলে আসো। তোমাদের মতো প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রী এই বোঝা নিয়ে স্কুলে আসে।”
তখনও কেঁদেই চলেছিল সবাই। ম্যাডাম বলেছিলেন, তোমরা নিজেরাই দেখছ তোমরা কেউ একা নও। আমি এই বোঝাটা ক্লাসরুমের দরজার বাইরে ঝুলিয়ে দেবো। আজ থেকে এটা ক্লাসের দরজার বাইরে ঝুলবে। আমি চাইবো তোমরা ঠিক এরকমই তোমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় বোঝাকে জীবন দরজার বাইরে রাখবে। বোঝাকে দূরে সরিয়ে রাখতে একে অপরের পাশে থাকবে।”
ছাত্রছাত্রীরা যখন চোখের জল মুছতে মুছতে ক্লাস ছেড়ে যাচ্ছিল, শিক্ষিকা তাদের বলেছিলেন তারা একা নয়। তাদের এই পৃথিবীতে অনেকে ভালোবাসে। তিনি গর্বিত তাদের মতো ছাত্রছাত্রীর শিক্ষক হতে পেরে। তাঁর ফোন খোলা থাকবে ছাত্রছাত্রীদের মনের কথা শোনার জন্য।
ওকলাহোমার উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা কারেন লোউয়ি ওইদিন সন্ধ্যায় পলিব্যাগটির ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর মন নিয়েই ছাত্রছাত্রীদের দেখুন আজকের শিক্ষক ও অভিভাবকরা। যাতে অকালে কোনও শিশুকে হারিয়ে যেতে না হয়।
তিনদিনের মধ্যে পোস্টটি চার লক্ষ বার শেয়ার করা হয়েছিল। যাঁরা শেয়ার করেছিলেন তাঁদের অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। সেকথা পোস্টে স্বীকারও করেছেন।
সংবাদমাধ্যমকে শিক্ষিকা বলেছিলেন, “যখন আমি ছোট ছিলাম, মনের মধ্যে কেবলই ছিল খেলা আর বেড়ানোর চিন্তা। কিন্তু এখনকার ছেলে মেয়েরা যে ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা আমি ভেবেই শিউরে উঠছি। আমরা কি কখনও, একটিবারের জন্যও জানতে চেষ্টা করি বাচ্চাদের ইমোশনাল ওয়ার্ল্ডে কী চলে!”
আজকের বাবা মা শিক্ষক শিক্ষিকাদের সামনে একটা শাণিত প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে গেছেন কারেন লোউয়ি। সত্যিই কি আমরা জানতে চেষ্টা করেছি, আজকের কচিকাঁচারা কী অসহায় ভাবে বেঁচে আছে? এত অল্প বয়সেই দুঃখের কত বড় পাহাড় নিয়ে ঘোরা ফেরা করছে তারা, তা কি জেনেছি ? তাদের আবেগ শেয়ার করার মতো কোনও জায়গা দিয়েছি? মানসিক চাপ নিতে না পেরে যারা অকালে হারিয়ে যাচ্ছে তার জন্য আমরা দায়ী নই তো?
আজ লক্ষ লক্ষ মানুষ যোগাযোগ করতে চাইছেন ওই শিক্ষিকার সঙ্গে। তিনি বলছেন, আমার সঙ্গে কথা না বলে বরং কথা বলুন নিজেদের ছেলেমেয়ের সঙ্গে, ছাত্রছাত্রীদের মনের খোঁজ নিন।
ম্যাডাম লোউয়ির স্কুল স্বেদিন থেকে শান্ত হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীরা একেবারে পাল্টে গেছে। ঝগড়াঝাঁটি, পিছনে লাগা, অভিযোগ, র্যাগিং এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। সবাই সবাইকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে শিখে গেছে। শিখিয়ে দিয়েছেন তাদের প্রিয় ম্যাম কারেন লোউই।
সংগৃহীত
#৪৬ #বছরের #শিক্ষিকা #কারেন #লোউয়ি
#karen #loewe