Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  Emptyমুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz
মুর্শিদাবাদ (প্রথম পর্ব)

মুর্শিদাবাদ ইতিহাসের শহর, আমাদের গর্বের শহর| যেখানে আমাদের শেষ বাংলার স্বাধীন সম্রাট লড়াই করেছিল তার বাংলার স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য| এই শহরের প্রতি কোনায় ছড়িয়ে আছে ইতিহাস, এখানের প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রাসাদের আলাদা আলাদা ইতিহাস আছে যা তারা প্রতিনিয়ত রাতের নিস্তব্দতায় বলে চলেছে| কেন জানিনা এই শহরটা আমাকে বরাবর টানে তার কাছে| তাই ঠিক করে ফেললাম যে মুর্শিদাবাদ যাব| যেমন ভাবা তেমন কাজ, আবর আমি স্মরনাপন্ন হলাম আমাদের সকলের প্রিয় গুগুল জ্যাঠার, সব সন্ধান পেলাম মোট ২৯ টা জায়গা| এখানে একটা কথা বলে রাখি যে কেউ যদি মনে করে থাকে যে নাইট টু নাইট টুরে গত মুর্শিদাবাদ টা ঘুরে ফেলবো তাহলে তকর ধারণা সুম্পূর্ণ ভুল| আমি নিজে ৩ দিন থেকে ও পুরো শহর দেখে উঠতে পারিনি|

যাই হোক হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস এর টিকিট কাটলাম, এই ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ যাবার সবথেকে ভালো ট্রেন, এসি ও চেয়ারকার, জেনারেল সবই আছে আপনি যাতে খুশি যেতে পারেন| ট্রেনটি ছারে কলকাতা স্টেশন থেকে সকাল ৬:৫০ মিনিটে আর মুর্শিদাবাদে পৌছায় ১০:২৭ মিনিটে|আমি বুকিং করেছিলাম মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত, অনেকে বহরমপুরে নেবে যায় কিন্তু বহরমপুর থেকে বেড়াতে যাবার জায়গা গুলো অনেক দুরে হয়|নেট থেকে অনেক গুলো হোটেলের নম্বর ও নাম নিয়েছিলাম| যেহেতু আমি অফসিজিনে গিয়েছিলাম তাই ওখানে গিয়ে আমার হোটেল পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি|তবে আপনারা যদি সিজেনে যান তবে অবশ্যই হোটেল বুকিং করে যাবেন| আপনাদের সুবিধার জন্য কযেকটি ভালো হোটেলের নম্বর ও নাম দিয়েদিলাম|

হোটেল নাম ও নম্বর :-

১)হোটেল অন্যেসা

মোবাইল নম্বর: ৯৪৩৪১১৫৪৭০

২)ফ্রেন্ডস হোটেল

মোবাইল নম্বর: ৯৭৩২৬০৯০৮৪

৩) হোটেল মঞ্জুসা

মোবাইল নম্বর:০৩৪৮২২৭০৩২১

ট্রেন থেকে নাবার সাথে সাথে এক টোটো দাদা এগিয়ে এসে বলে যে ভালো হোটেল আছেযাবেন ?তো আমি হোটেলের নাম জিগাসা করি তো হোটেল অন্যেসার কথা বলে, যেহেতু এই হোটেল টা ঠিক ইমামবাড়ার পিছনেই তাই এইটা আমার আগেই পছন্দ ছিলো| তাই এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম| স্টেশন থেকে দুটো টোটো নিলাম যেহেতু আমরা ৬ জন ছিলাম| স্টেশন থেকে টোটোতে যেতে যেতে টোটোর দাদা টা ই জিগাসা করলো যে আপনারা কদিন থাকবেন ?তো আমরা বললাম যে আমরা ৩ দিন থাকবো|তখন ওই দাদাই বলল যে ওনাকে যদি আমরা বলি তো উনিই আমাদের ভালো করে ঘুরিয়ে দেবে| হোটেলে গিয়ে টোটোর দাদা কে আমার ঘুরতে যাবার তালিকা টা দেখালাম, তালিকাটা দেখে দাদা টা খুশি ই হলো কারণ ওরা লোককে ঘোরাতে ভালবাসে ওদের শহরের কথা বলতে ভালোবাসে|তো ওই দাদাটার সাথে কথা বলে ঠিক হলো যে ৩ দিন পুরো ঘোরাবে তারসাথে ফেরার দিন ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবে| দুটো টোটো তে মোট ৩৬০০ টাকা নেবে বলল (টোটোর ভাড়া সিজেনে পরিবর্তন হতে পারে)|আমি রাজি হয়ে গেলাম|আমরা হোটেল অন্যেসাতে ছিলাম, হোটেল টা বেশ ভালো, ঘর গুলো ও বেশ বড় বড়| যেহেতু আমরা অফসিজেনে গিয়ে ছিলাম তাই ৮০০ টাকাতে একটা ৬ বেডের রুম পেয়ে গিয়েছিলাম|হোটেলে এসি রুম ও আছে|

টোটোর দাদা টা বলল যে আপনারা একিটু রেস্ট নিয়েনিন ঠিক ১টা নাগাদ এসে আপনাদের দুপুরের খাবার খেতে নিয়েযাব তারপর বেড়াতে বের হবো|ঠিক ১ টার সময় আমরা খেতে গেলাম গঙ্গার ধারে একটা হোটেলে|খাওয়া শেষ করে টোটো নিয়ে বের হয়ে পরলাম ইতিহাসের খোঁজে|

প্রথম দর্শনিয় স্থান:-

টোটোর দাদা টা আমাদের প্রথম নিয়ে যায় কাঠগোলা বাগান বাড়িতে|

এই বার প্রথমে একটু জেনে নেওয়া যাক এই কাঠগোলা বাগান বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে|

কাঠগোলা বাগান বাড়ি :-

মহিমাপুরে, নশিপুর রাজ বাড়ি থেকে কয়েক গজ দূরে কাঠগোলাতে জগৎ শেঠের পুরাতন ব্যাংকিং বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, যা ইতিহাস বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনার সাথে যুক্ত। "জগৎ শেঠ" দ্বারা (জগৎসাথ) বোঝানো হয়েছে "বিশ্বের ব্যাংকার" এবং তাদের লেনদেনগুলি ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের মতো বিস্তৃত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। "জগৎ শেঠ" নামটি প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে বাংলার ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত নাম হিসাবে পরিচিত। ধর্ম অনুসারে তারা ছিল জৈন, এবং বর্ণ অনুসারে মারোয়ারি। মূলত, "জগৎ শেঠের" নবাবের ব্যাংকার হিসাবে যে বিশাল পরিমাণ সম্পদ তিনি জমা করেছিলেন তার জন্য খ্যাতি লাভ করেছিল। "জগৎ শেঠের" জাদ বাণিজ্যে তাদের মূল ভাগ্য তৈরি করেছিল - সেই সময়গুলিতে বার্মার সবুজ জেড মুঘল দরবারদের দ্বারা অত্যন্ত মূল্যবান বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল কারণ এতে যদি বিষযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হত তবে এটি ভেঙে যাবে বা বর্ণহীন হবে। পান্নাগুলি তত্কালীন মুঘল শাসকরা এবং তাদের দরবারীরা অত্যন্ত মূল্যবান ছিল|

আদিনাথ মন্দির:-

কাঠগোলা একটি অলঙ্কৃত, চারতলা, মনোরম উদ্যানগুলির সাথে সজ্জিত প্রাসাদমণ্ডল। মেনশনের সামনের দিকটি সঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। কাঠগোলার অভ্যন্তরটি আমদানিকৃত উপকরণ দিয়ে ১৯ শতকের শেষদিকে তৈরি করা হয়েছিল। এখানে কাঠগোলা গার্ডেন হাউসে উইলিয়াম ওয়াটস এবং ওয়ালশ পলাশীর যুদ্ধের তিন দিন পরে মীর জাফর এবং রাজা রাই দুর্লভের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন এবং যুদ্ধের আগে তাদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ পরিশোধের বিষয়ে সম্মানিত করেছিলেন। ক্লাইভ, ওয়াটস, লুক স্ক্র্যাটন, মিরান এবং রাই দুর্লভও ২৯ শে জুন, ১৯৭৫ সালে এখানে উপস্থিত ছিলেন, যখন ক্লাইভ ওমিচাঁদের সাথে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কাঠগোলা কমপ্লেক্সটিতে ১৮ তম শতাব্দীর আদিনাথ মন্দির ছিটমহল রয়েছে, যা হ্যারেক চাঁদ ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেছিলেন। সাধারণত জৈন শৈলীর অলঙ্কার এই জৈন মন্দিরকে একটি অনন্য সৌন্দর্য দেয়। কাঠগোলা এবং আদিনাথ মন্দির ধনী জৈন বণিক ধনপত সিং দুগার এবং তাঁর পরিবারের জন্য একাকী হয়ে পড়েছিল।

মুর্শিদাবাদের শেঠগুলির উত্স হেরানন্দ সাহু, যাঁরা রাজপুতদের মাড়োয়ারি উপজাতির অন্তর্গত এবং যোধপুরের নিকটবর্তী তার জন্ম গ্রামে থেকে চলে এসেছিলেন এবং ১৬৫২ সালে পাটনায় স্থায়ী হয়েছিলেন | তাঁর সাত ছেলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ মানিক চাঁদ ঢাকা চলে যান, সেখান থেকে তিনি দেওয়ান ও তাঁর বন্ধু মুর্শিদকুলি খানকে অনুসরণ করে মুর্শিদাবাদে চলে যান। মুর্শিদকুলী খান তাঁর "চাহেল সেতুন" নামে প্রাসাদটি তৈরি করেছিলেন এবং মানিক চাঁদের প্রাসাদটি "চাহেল সেতুন" থেকে ৩ কিমি দূরে মহিমাপুরে ছিল । এখানে মানিক চাঁদ নবাবের ব্যাংকার এবং কনসোলারর হয়েছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লিতে বাংলার অবদানের অর্থ এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা প্রেরণের অভিযোগ আনা হয়েছিল। নবাবের ব্যক্তিগত ধনগুলি প্রায়শই তাঁর কাছে রাখতেন। মুর্শিদকুলী খানের সুপারিশে তিনি ১৭১৫ সালে দিল্লিতে সম্রাট ফররুখসিয়রের কাছ থেকে "শেঠ" উপাধি পেয়েছিলেন। একই সুপারিশ অনুসারে, তার গৃহীত পুত্র ফতেহ চাঁদ ১২২৪ সালে সম্রাট মুহম্মদ শাহের কাছ থেকে "জগৎ শেঠ" উপাধি পেয়েছিলেন।

অনান্য :-

কাঠগোলা বাগান বাড়ি তে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা তবে ২০ টাকার টিকিট এ শুধু বাড়ির নিচের অংশ টি ঘোরা যায়| উপরের অংশে যেতে গেলে আরো ১৫ টাকার টিকিট কাটতে হয়| এই টিকিট টি বাড়ির নিচের তলাতে এ পাবেন | এছাড়া আছে এই বাগান বাড়ির ভিতর চিড়িয়াখানা যাতে আছে বিভিন্ন পাখি যেমন ককটেল, বদরিকা, জাভা, ফিঞ্চ ইত্যাদি | এছাড়া আছে রঙিন মাছ | এই চিড়িয়াখানার প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা প্রতি জন| মন্দিরে প্রবেশের জন্য কোনো টাকা লাগেনা | মন্দিরের ঝিলে বোটিং করার ব্যবস্তা আছে তার টিকিট আলাদা করে কাটতে হয় |

আজ আপাতত এই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে বাকিটা |

 ঐতিহাসিক সম্পর্কিত তথ্য গুগুল জ্যাঠার নিকট হইতে প্রাপ্ত |

descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  EmptyRe: মুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz
মুর্শিদাবাদ (দ্বিতীয় পর্ব)

দ্বিতীয় দর্শনিয় স্থান :-

কাঠগোলা বাগান বাড়ি থেকে বের হয়ে টোটো নিয়ে চললাম পরবর্তী দর্শনিয় স্থানে, সেটি হলো জগৎ শেঠের বাড়ি | এই বাড়িটি একটি সংগ্রহ শালা হিসাবে বর্তমানে ব্যবহার করা হয় | এই বাড়ি তে প্রবেশ মূল্য হলো ১৫ টাকা করে ( টিকিটের মূল্য পরিবর্তন ও হতে পারে)| এই বার জেনে নেওয়া যাক জগৎ শেঠের বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে কিছু কথা

জগৎ শেঠের বাড়ি (The House of Jagat Seth):-

জগৎ শেঠ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব অংশে, মুর্শিদাবাদ, বেঙ্গল অঞ্চলের একটি ধনী ব্যবসা, ব্যাংকিং এবং অর্থ প্রদানকারী পরিবার ছিল।

জৈন আচার্য শ্রী ভরতুচন্দ্র সুরি তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন। আঠারো শতকের প্রথমার্ধে শেঠগুলি ভারতের অন্যতম শক্তিশালী ব্যাংকারদের মধ্যে ছিল। রোবেন ওর্মে (ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সরকারী ঐতিহাসিক) জগৎ শেঠসকে জ্ঞাত বিশ্বে সবচেয়ে বড় মানি চেঞ্জার এবং ব্যাংকার হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

নিক রবিন্সের মতে: জগৎ শেঠগুলি তাদের আর্থিক শক্তির জন্য উত্তর ভারতে অতুলনীয় ছিল। বিশ্বের ব্যাংকার হিসাবে খ্যাত এই মারোয়ারী পরিবার সাম্রাজ্যীয় পুদিনা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাপক অর্থোপার্জনের পিছনে প্রচুর অর্থনৈতিক সম্পদ তৈরি করেছিল। তারা বাঙালি আদালতে এই আর্থিক জালিয়াতি চালিয়েছিল এবং তত্কালীন এক ফরাসী ভাষ্যকারের দ্বারা 'বাংলায় বিপ্লবের প্রধান কারণ' হিসাবে গণ্য হন।

তিনি ওমিচুন্ড এবং মীর জাফরের সাথে রবার্ট ক্লাইভ দ্বারা ইঞ্জিনিয়ারড নবাবের বিরুদ্ধে সফল ষড়যন্ত্রে যোগ দেন, যার কারণে নবাব পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হন। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া সংস্থা এইভাবে ভারতে একটি প্রধান শক্তি দালাল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। মীর জাফর পূর্ব ভারত কোম্পানির সহায়তায় বাংলার শাসক হন।

মীর জাফরের উত্তরসূরি মীর কাসিমের সৈন্যবাহিনী দ্বারা জগৎ শেঠকে ১৭৬৩ সালে একটি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। মীর কাসিমকে প্রথমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষ থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ দিক থেকে সমর্থন করা হয়েছিল, কিন্তু পরে তিনি তাদের শক্তি দমন ও পূর্ব ভারত থেকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

অনান্য :-

এই বাড়ির ভিতরে একটি পাতাল ঘর আছে যা এখন একটি সংগ্রহ শালা রূপে ব্যবহার হচ্ছে, এই সংগ্রহ শালাতে আছে বিভিন্ন অস্ত্র, নবাবি আমলে ব্যাবহিত জামা কাপড় , থালা, বাসন, পুতুল আরো অনেক কিছু , তবে এই সংগ্রহ শালার ভিতর কোনো ছবি তুলতে পারবেন না | এই বাড়ির ভিতর একটি জৈন মন্দির ও আছে |

তৃতীয় দর্শনিয় স্থান :-

জগৎ শেঠের বাড়ি থেকে বের হয়ে আমরা চললাম আর এক দর্শনিয় স্থানে, জায়গাটির নাম হলো নশিপুর রাজবাড়ি | নশিপুর রাজবাড়ি টি আসলে হাজারদুয়ারির আদলে তৈরি, এর ভিতরে একটি ছোট মন্দির আছে, এবং ভিতরে আরো অনেক ঠাকুরের মূর্তি আছে | স্থানীয় দের মতে এটি নাকি ডাকাত কালী বাড়ি ছিল রাতের অন্ধকারে ডাকাতরা ডাকাতি করতে বের হতো, হবার আগে নাকি ওই মন্দিরে পূজা দিয়ে বের হতো| এছাড়া আছে একটি ছোট সংগ্রহ শালা| এখানে প্রবেশ মূল্য হলো ১০ টাকা করে, এর ভিতরে আপনি ছবি তুলতে পারেন| এবার জেনে নেওয়া যাক এই নশিপুর রাজবাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে কিছু কথা |

নশিপুর রাজবাড়ি :-

কাঠগোলা জৈন প্রাসাদের ঠিক উত্তরে নাশিপুর প্যালেস, হাজারদুয়ারী প্রাসাদের একটি ক্ষুদ্র প্রতিরূপ। এটি হাজারদুয়ারী প্রাসাদ থেকে প্রায় ২.৭ কিমি দূরে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে কর আদায়কারী হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে খ্যাতিমান রাজা দেবী সিনহার আদালতের স্থান ছিল নাশিপুর রাজবাড়ি। বয়সের জরাজীর্ণ প্রাসাদটি হিন্দু আইকনোগ্রাফির বিস্তৃত চিত্র সহ এক রহস্যময় সৌন্দর্যকে বহন করে চলেছে। নাশিপুর রাজ এস্টেট ছিল বাংলার অন্যতম বৃহৎ জমিদারি। জমিদারিটি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলা, মুর্শিদাবাদ জেলা এবং মালদা জেলার বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে। রাজশাহী জেলার একটি বড় অংশ বর্তমানে বঙ্গদেশে এবং বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলা এবং বোগুরা জেলার ছোট্ট অংশ নশীপুর রাজ পরিবারের অধীনে ছিল। রাজ প্রাঙ্গণটি একটি বৃহত অঞ্চল দখল করে এবং প্রধান মন্দিরের মধ্যে রয়েছে ঠাকুর বাড়ী, যার মন্দিরটি রয়েছে পারিবারিক দেবতা, শ্রী রামচন্দ্র দেব ঠাকুর। ঠাকুর বাড়ির অভ্যন্তরীণ চতুষ্কোণে প্রতিদিনের উপাসনা প্রাপ্ত প্রতিটি চিত্রকে একটি কুলুঙ্গি বা ঘর বরাদ্দ করা হয়।

রাজ বারির মূল বিল্ডিং, যা সিঁড়ির দুর্দান্ত ফ্লাইট সহ দোতলা বাড়ি বিশাল এবং প্রশস্ত ড্রয়িং রুমটি সজ্জিত এবং গৃহসজ্জার সামগ্রীযুক্ত। রাজ বারির সাথে দেখা করার জন্য ভাইসরয় লর্ড কার্জন বলেছিলেন: "আপনি যখন আপনার ঘরকে নম্র ঘর বলে থাকেন তখন আমি আপনার সাথে একমত হই না। এটি আমাদের চেয়ে ভাল। এটি রাজপরিবারের বাসস্থান" । ওল্ড রাজ বারী ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজা দেবী সিনহা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। বর্তমান রাজ বারী ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে রাজা কীর্তি চন্দ্র সিনহা বাহাদুর নির্মিত করেছিলেন। ভগবান রাধা-কৃষ্ণের ভালবাসা উদযাপন ঝুলন উত্সব খুব জনপ্রিয়। নাশিপুর প্রাসাদে অনুষ্ঠিত এই উত্সবটি পরিচালনা করেন হিন্দু বৈষ্ণব সম্প্রদায়।

চথুর্ত দর্শনিয় স্থান :-

এর পর আমরা চললাম পরবর্তী স্থানে, এটি রাস্তার উপরে এ পরে , অনেক টোটো বা টাঙ্গা এই স্থানে দাড়াতে চাই না কারণ টা কিছু পর্যটকের ব্যবহারের জন্য হয়েছে | আসলে এই স্থান টি তে মীরজাফরের বংশধররা থাকে| জায়গাটি নেমকহারাম দেউরি নাম পরিচিত | এটি একটি ভগ্নপ্রাপ্ত প্রাসাদ বলা চলে, এই খানে প্রবেশ নিসিদ্ধ কারণ ভিতরে যারা বসবাস করে তারা অসুবিধা বোধ করে| তবে বাইরে থেকে আপনি এই ভগ্ন প্রাপ্ত প্রাসাদ টির প্রবেশ দ্বারের ছবি তুলতে পারেন কিন্তু প্রবেশ দ্বারের ভিতরের ছবি তোলার চেষ্টা করবেন না কারণ ভিতরের কোনো বসবাস করি দেখে নিলে আপনি অপমানিত হতে পারেন|

এবার জেনে নেওয়া যাক এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু কথা |

জাফরগঞ্জ দেওড়ী (নেমকহারাম দেউরি ):-

জাফরগঞ্জ কবরস্থানের ঠিক বিপরীতে, মহিমাপুরের নিকটে মীর জাফরের বাসস্থান জাফরগঞ্জ দেওড়ী, তিনি বাংলার মুসনাদে আরোহণের আগে, যখন সুবীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন তখন এই খানে বসবাস করতেন। এটি টাওয়ার দিয়ে সুরক্ষিত ছিল এবং কামান সরবরাহ করা হয়েছিল। যদিও এই প্রাসাদের কিছুই অবশিষ্ট নেই কেবল অতীতের সাক্ষী হিসাবে বিশাল দেওড়ী (ফটক) দাঁড়িয়ে আছে। লোকে এই ফটককে নিমক হারাম দেওড়ী বা বিশ্বাসঘাতক গেট বলে। এখানে প্লাসির যুদ্ধের আগে শেষ গোপন সম্মেলনটি উইলিয়াম ওয়াটসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল (কোস্টিমবাজারের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান ফ্যাক্টর, যিনি পালমে দেওড়িতে প্রবেশ করেছিলেন, হারেমের পূর্দাশীন মহিলা হিসাবে ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন) এবং মীর জাফর এবং তাঁর পুত্র মীরন। মীরাণ সেরাগ্লিওর একটি অ্যাপার্টমেন্টে (একজন মুসলমানের স্ত্রী ও উপপত্নীর জন্য বদ্ধ আদালত) ওয়াটস গ্রহণ করেছিল। তারপরে তাঁর কুরআন মাথায় রেখে এবং তাঁর পুত্রের মাথায় হাত রেখে মীর জাফর অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে শপথ করেছিলেন যে তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সমস্তই বিশ্বস্ততার সাথে পালন করবেন।

সইর মুতাখেরিন অনুসারে, সিরাজ-উদ-দৌল্লাকে (সিরাজ-উদ-দৌল্লা) যে জায়গাটি হত্যা করা হয়েছিল, সেটিকে ১৭৫৭ সালের ২ রা জুলাই নিম গাছের নীচে পাবলিক রোডের পাশের দেওড়ির প্রাঙ্গনে ছিল। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির সিদ্ধান্তহীন যুদ্ধ। মুহাম্মদ-ই-বেগের অভিনয় প্রত্যক্ষ করা দেয়ালগুলির আর অস্তিত্ব নেই। রবার্ট ওর্মের (১৭২৮-১৮০১ খ্রিস্টাব্দ) অনুসারে খুনের দৃশ্যটি নদীর অপর পারে (জাফরগং দেওড়ির বিপরীতে) মনসুরগঞ্জ প্রাসাদে বলে মনে হবে। কারও কারও মতে সিরাজ-উদ-দৌল্লাকে মনসুরগঞ্জে হত্যা করা হয়েছিল যেখানে মিরণ বাস করত এবং তার মাচা লাশ ভাগীরথী নদীর ওপারে পেরিয়ে রাতে জাফরগঞ্জে রাখা হয়। পরের দিন সকালে এটি একটি হাতির উপর স্থাপন করা হয়েছিল এবং তার মায়ের বাড়ির পাশ দিয়ে শহরের রাস্তাগুলি পেরেক করে পরে নদী পেরিয়ে খোশবাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

আজ আপাতত এই পর্যন্ত বাকিটা পরের পর্বে |

 ঐতিহাসিক সম্পর্কিত তথ্য গুগুল জ্যাঠার নিকট হইতে প্রাপ্ত |

descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  EmptyRe: মুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz

মুর্শিদাবাদ (তৃতীয় পর্ব)
এর পর আবার আমাদের যাত্রা শুরু হলো টোটো তে করে , তবে আমাদের ওই টোটো দাদা টি খুব ভালো ছিল , অনেক পুরানো কথা বলছিল অনেক গল্প করছিল, আমার সব থেকে বড় ভুল ওই দাদার কথা গুলো আমি রেকর্ড করিনি আর ওনার ফোন নাম্বার টা ও হারিয়ে ফেলেছি | যাই হোক এর পর আমরা পৌছে গেলাম জাফরগঞ্জ কবরস্থানে | এই স্থানে মীরজাফরের বংশের কেউ মারা গেলে কবর দেয়া হয়, এখানে পুরো জায়গাটাতে প্রচুর কবর, কোনটা কার কবর চিনতে পারা দুষ্কর, তাই এই স্থান টিতে গাইড নেওয়া ভালো, যদি আপনি সমস্ত কবরের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চান তবেই গাইড নেবেন | টিকিটের মূল্য খুবই কম ৩ টাকা করে, গাইড নিলে আলাদা টাকা লাগবে ( সমস্ত মূল্যই কিন্তু পরিবর্তন হতে পারে ) | এই বার জেনে নেওয়া যাক এই স্থান সম্পর্কে কিছু ঐতিহাসিক কিছু কথা |
পঞ্চম দর্শনীয় স্থান :-
জাফরগঞ্জ কবরস্থান :-
জাফরগঞ্জের কবরেরস্থান দেয়ালের একটি ঘেরের মধ্যে, হাজারদুয়ারী প্রাসাদ থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে, মীর জাফরের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাসাদ জাফরগঞ্জে পৌঁছে। এতে মীর জাফর আলী খান থেকে শুরু করে হুমায়ুন জাহ পর্যন্ত নবাব নাজিমের সমাধি রয়েছে। বাংলার শেষ নবাব নাজিমের দেহাবশেষ সিউদ মনসুর আলি খানকে সাময়িকভাবে একটি খিলানে জমা করা হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে তাঁর টেস্টামেন্টের আওতায় আরবের কারবালায় (সমাধিস্থলে) অপসারণ করা হয়। মীর জাফরের বাবা সাইদ আহমদ নাজাফি, আলীবর্দী খানের বোন শাহ খানুম বেগম, মীর জাফরের বিধবা, মুনি বেগম ও বাব্বু বেগম, মীর জাফরের ভাই মুহাম্মদ আলী খান এবং ইসমাইল আলী খান ও আশরাফ আলী খান মীর জাফরের জামাতা, এখানে কবর দেওয়া। প্রতিটি মোহামেডানের লাশ উত্তর দিকে মাথা এবং পশ্চিমে মুখের সাথে ডানদিকে সমাধিতে নীচে পড়ে রয়েছে। এই কবরস্থানটি মীর জাফর ৩.৫১ একর জায়গার উপরে তৈরি করেছিলেন। এখন এই স্থানটি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সোসাইটির নিয়ন্ত্রণাধীন। এই কবরস্থানের জন্য প্রবেশের প্রবেশমূল্য কেবল ৩ টাকা।
📷
অন্যান্য :
এই স্থান টি পুরোটাই কবরে ভরা তাই চলাফেরা করার সময় একটু সাবধানে চলাফেরা করা ভালো, আর পুরো জায়গাটা নিস্স্তব্দ তার চাদরে মরা থাকে সারাক্ষণ, তাই হয়ত কিছুটা গাছমছমে ব্যাপার আছে |
ষঠ দর্শনীয় স্থান :-
বেগম আজিম-উন-নিসার কবর :-
এই স্থান পরিদর্শন করে টোটোতে করে আর এক জায়গাতে চললাম | এর পরের স্থান টি ও একটি কবরের স্থান, এই স্থান টিতে বেগম আজিম-উন-নিসা কে কবর দেয়া হয়েছে, এই কবরটি বেশ রহ্যসময় | এই কবরের সম্পর্কে অনেক কিছু শোনা যায় | বেগম আজিম-উন-নিসার কবরের ইতিহাস সম্পর্কে এই বার কিছু জানা যাক |
বেগম আজিম-উন-নিসার কবর :
মহিমাপুর থানার বিপরীতে নশিপুরের দিকে যাওয়ার পথে মুর্শিদকুলী খানের কন্যা আজিম-উন-নিসার সমাধিসৌধ রয়েছে। শোনা যায় একবার আজিম-উন-নিসা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হাকিম (ডাক্তার) তাকে সন্তানের লিভার থেকে প্রস্তুত ওষুধের পরামর্শ দিয়েছিলেন। আজিম-উন-নিসা গোপনে এই ওষুধটি গ্রহণ করতেন। অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার পরে পরে তিনি এই ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়েন। মুর্শিদকুলি খান যখন নিরীহ প্রাণহানির বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন, তখন তিনি তাঁর মেয়েকে জীবিত কবর দিয়েছিলেন।
তবে কিছু ঐতিহাসিক বলেছেন যে আজিম-উন-নিসা মারা গেছেন ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ তাঁর বাবার মৃত্যুর ৫ বছর পরে। মুর্শিদকুলি খান যখন মেয়েদের ওষুধের জন্য নিরীহ বাচ্চাদের হত্যার কথা জানতে পেরেছিলেন, তখন তিনি আজিম-উন-নিসা ওড়িশায় প্রেরণ করেছিলেন। পরে সুজা-উদ-দৌলা নবাব হওয়ার পরে তিনি মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন। কিন্তু সুজা-উদ-দৌলা তার স্ত্রী আজিম-উন-নিসাকে তার অভিনয়ের জন্য জীবিত কবর দিয়েছিলেন।
অন্যান্য :
এই কবরটি অন্য কবরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, এই কবরটি আছে একটি মাচা বা বড় স্টেজ মত জায়গার নিচে, ওই জায়গাটিতে ওঠার জন্য সিড়ি আছে, আর কবর টি আছে ঠিক সিড়ির নিচের দিকে, মানে আপনি যদি উপরে উঠেন তো আপনাকে ওই কবরের উপর দিয়ে যেতে হবে | কথিত আছে এতেই নাকি বেগম আজিম-উন-নিসার পাপ ক্ষয় হবে | সিরি দিয়ে উপরে উঠলে জায়গাটিতে একটি ধংসপ্রাপ্ত দরজা দেকতে পাবেন আর যদি শীত কালে যান তো অনেক রকমের ফুল দেকতে পাবেন | এই স্থানের প্রবেশ মূল্য ও খুব কম তবে এই স্থানে ঢুকতে গেলে আপনাকে জুত খুলে ঢুকতে হবে |
মুর্শিদাবাদে বেড়াতে এলে আপনার খারাপ লাগবেনা বা আপনাকে হোটেলে বসে থাকতে হবে না | আসলে দেখার এত জায়গা আছে যে আপনি দেখে শেষ ই করতে পারবেন না | টি আমরাও পরবর্তী জায়গার জন্য বের হয়ে পরলাম |
সপ্তম দর্শনীয় স্থান :-
এর পরে আমরা পৌছালাম নশিপুর আখড়া তে | এটি নশিপুর রাজবাড়ি থেকে কিছুটা দুরে আছে | এই খানে প্রবেশ মূল্য আছে, প্রতি জন ১৫ টাকা করে, ছবি তলার জন্য কোনো আলাদা টাকা লাগে না | ঝুলন যাত্রার সময় গেলে এই আখড়া এক অপরূপ সৌন্দর্য্য ধারণ করে | তবে আমার সে সৌভাগ্য এখনো হয়নি | এর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক |
নশিপুর আখড়া : -
নশিপুর রাজবাড়ির দক্ষিন – পশ্চিম দিকে ৪০/৫০ মিটার গেলে এই আখড়া পাওয়া যায় | এখানে রামানুজ সম্প্রদায়ভুক্ত সাধুসন্তগন থাকেন | মুর্শিদাবাদ শহর নবাবি আমলে যখন চরম উত্কর্শলাভ তখন ওই সম্প্রদায়ের সাধুগণ বসবাসের জন্য তাদের আহার ও পূজাপাঠ সুচারুরূপে সম্পাদিত হওয়ার জন্য বহু ধনসম্পত্তি দান করেন |এইখানে দেব দেবীর নিত্য সেবাপুজা হয় | শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা উপলক্ষ্যে বিরাট মেলা হয় যা পাঁচ দিন ধরে হয় |
অন্যান্য :
এই আখড়া তে একটি রুপার রথ আছে , যার ওজন ২২ মন এবং একটি পুরানো গাড়ি আছে যা কিনা আগেকার দিনে ৮০ টাকা দিয়ে কেনা হয়ে ছিল | এই দুটি জিনিস ই সর্বসাধারণের দেখার জন্য একটি জায়গাতে রাখা আছে |
আজকের পর্ব এই পর্যন্তই থাক , বাকিটা পরের পর্বে |
Ø ঐতিহাসিক সম্পর্কিত তথ্য গুগুল জ্যাঠার নিকট হইতে প্রাপ্ত |

descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  EmptyRe: মুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz
মুর্শিদাবাদ ( চতুর্থ পর্ব )

এরপ টোটো আবার চলতে শুরু করলো, এর পর টোটো পারার ভিতর দিকে যেতে লাগলো । আমি তখন জিজ্ঞাসা করলাম যে এই দিক দিয়ে কোথায় যাচিছ, তখন টোটোর দাদা বলল পরবর্তী দর্শনীয় স্থানের নাম ।

অষ্টম দর্শনীয় স্থান :

এটি হলো একটি কামান, যার নাম জাহান কোষ । এটি আছে একেবারে পারার ভিতরে, একটি সিমেন্ট এর বেদির উপর বসানো এবং চারিদিকে লোহার গিরিল দিয়ে ঘেরা, একটি দরজা আছে সেটা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়। কোনো টিকিট লাগেনা সব থেকে বড় কথা এখানে এই কামান টিকে দেখাসনা করার জন্য কোনো লোক নেই । শুধু একটি সাইন বোর্ড লাগানো আছে আমাদের ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের । আমরা তো গিয়ে একটা মজার জিনিস ও দেখলাম যে অনেক গুলো বাচ্চা ছেলে মেয়ে ওই কামান টার উপর উঠে খেলা করছে ।আর চারি ধারের গিরিলে লোকেরা জামা কাপড় শুকাতে দিয়েছে । এই জিনিস টা দেখে কিছুটা খারাপ ও লাগলো যে এই রকম একটা গুরুত্ব পূর্ণ ঐতিহাসিক জিনিসের কোনো মূল্য নেই এখানকার মানুষের কাছে ।

এই জায়গাটি তোপখানা নাম ও পরিচিত । এই বের জেনে নেওয়া যাক এই তোপখানা আর জাহান কোষ কামান সম্পর্কে কিছু ঐতিহাসিক কথা ।

জাহান কোষা :-

কাটরা মসজিদের দক্ষিণ পূর্বের এক চতুর্থাংশ মাইল হ'ল "তোপে খানা", নবাবদের আর্টিলারি পার্কের সাইট এবং পুরাতন রাজধানীর পূর্ব প্রবেশদ্বারটি শহরের পূর্ব সীমানা জুড়ে পূর্ব দিকে সুরক্ষিত ছিল, গোব্রা নালা, যা স্থানীয়ভাবে কাট্রা ঝিল নামে পরিচিত | এখানে জাহান কোশাকে বলা হয় "বিশ্বের ধ্বংসকারী" নামে একটি দুর্দান্ত বন্দুক, যা মূলত চাকা সহ একটি গাড়ীতে চড়ে বিশ্রাম নিয়েছিল এবং এটি একটি পিপাল গাছ (ফিকাস রিলিজিয়োসা) এ এমবেড করা ছিল, যা তার পাশেই বেড়েছিল এবং প্রায় চার ফুট উঁচুতে ধরে ছিল। জমি এটি উপরে তোলা। চাকাগুলি অদৃশ্য হয়ে গেছে। গাড়ীর লোহার কাজ এবং ট্রুনিয়নগুলি এখনও দৃশ্যমান। কামানটি আটটি ধাতুর সমন্বয়ে তৈরি, যেমন সোনার, রৌপ্য, তামা, সিসা, দস্তা, পারদ, লোহা এবং টিন। এটি টাচ হোল প্রান্তে ৫ ফুট গিরির সাথে ১৭ ফুট এবং ৬ ইঞ্চি দীর্ঘ। টাচ হোলের ব্যাস ১১/২ ইঞ্চি, এবং অরফিসের দৈর্ঘ্য ৬ ইঞ্চি। কামানের ওজন প্রায় ৭,৯০০ কেজি এবং একক শেলিংয়ের জন্য ১৭ কেজি গানপাউডার প্রয়োজন ।

মুগল সম্রাট শাহজাহানের (১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্বকালে ইসলাম খান বাংলার সুবাহদার থাকাকালীন জাহান কোষ বন্দুকটি তৈরি করা হয়েছিল। এটি তৎকালীন বিখ্যাত জনার্দন কর্মকার দ্বারা তৈরি হয়েছিল, দারোগা শেরে মাহোমেদের নির্দেশে এবং ১৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে হারা বল্লভ দাসের তত্ত্বাবধানে।

বন্দুক সম্পর্কে নিম্নলিখিত বিবরণটি মেজর শোয়ার্স ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে দিয়েছিল। "প্রকৃতিবিদ ও সাধারণ পর্যবেক্ষকের কাছে জাহান কোশা যে অবস্থানটিতে পড়েছিলেন তা থেকে কৌতূহলবশত। এটি দুটি পিপ্পাল গাছের ডাল দ্বারা আঁকড়ে ধরে এবং জমি থেকে প্রায় ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত সমর্থন করে। স্থানীয় ঐতিহ্য অনুসারে এটি ছিল একটি গাড়ীতে করে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয়েছিল, এবং চাকাগুলি কাদায় ডুবে যাওয়ার কারণে সেটিকে সেখানে রেখে দেওয়া হয়েছিল এবং সেগুলি উদ্ধার করা যায় নি, গাছটি অবশ্যই তার নীচে ছড়িয়ে পড়েছিল, এবং কাণ্ড গুলি যখন বেড়েছে, বন্দুকটি ধরেছিল এবং সমর্থন অব্যাহত রেখেছে গাড়িটি সরে যাওয়ার পরে সেখান থেকে পড়ে যাওয়ার পরে পিছনের ট্রুনিয়নটি ট্রাঙ্কের মধ্যে ডুবে থাকে এবং এটি দেখা যায় না; তবে দুটি স্তম্ভ এবং একটি আংটি দেখা যায়, যা সম্ভবত গাড়ীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সামনের ট্রুনিয়নটি লোহার কাজ যুক্ত করে, ইদানীং অবধি, গাছটিতে ডুবে ছিল ......... অন্য এক বিশেষত্ব আছে যা লক্ষ্য করা যথাযথ হতে পারে, যেমন গাছের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ঘটনাটি প্রদর্শন করা হয়।দুটি কাণ্ড রয়েছে যা বন্দুককে সমর্থন করে , তবে আমি ভাবতে আগ্রহী যে এগুলির শাখা একটি গাছ "।



বন্দুকটিতে শিলালিপি সহ নয়টি ব্রাসের ট্যাবলেট লাগানো আছে। মেজর শাওয়ারগুলি পার্সিয়ান পাশাপাশি শিলালিপিটির অনুবাদও দিয়েছে। "বিশ্বের প্রভু; মহান শাহজাহান, অসমাপ্ত - দ্বিতীয় সাহেব কিরান, ইসলামের রাজা। এই বন্দুকের এমন মর্যাদা, যে সর্বোচ্চ স্বর্গে। সময়টি এটিকে সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি স্টেশন হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর শক্তি এবং দুর্গন্ধের খবর ভয়াবহ ও বিস্ময়কর।শত্রুর দুর্গ দুর্ঘটনাক্রমে কাঁপল। মহৎ গুণাবলীর প্রধানের সময়ে, যার দ্বারা বাংলার রাজ্যটি সুসংগঠিত হয়েছিল, প্রসিদ্ধ ইসলাম খান , যার দ্বারে সমৃদ্ধি সর্বনিম্ন মেনিয়াল হিসাবে অপেক্ষা করেছিল; যখন এখান থেকে সর্পের বন্দুক তৈরি করা হয়েছিল। রাজার শত্রুদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে। আমি এর সমাপ্তির বছর প্রতিবিম্বের পথে চেষ্টা করেছি; এসেছিলেন "শীর্ষে জাহান কাশা" "অনুপ্রেরণা দ্বারা।

নবম প্লেটটি গদ্যের মধ্যে রয়েছে এবং "তোপ জাহান কাশা নামে এই কামান" শের মাহোমেদ এর তত্ত্বাবধানে জাহাঙ্গীরনগর ওরফে ডাকাকে এবং জুমাদি-উস-সানির মাসে জোনার্দন কর্মকারের দ্বারা হরবাল্লব দাসের কেরানি দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। রাজত্বের বছর অনুসারে ১০৪৭ (অক্টোবর - ১৬১৭) ওজন ২১২ মণ, শমরি তিলের ৩৬ টি বাঁধের পরিমাপ ২৮ টি দর্শকের "

মজার ব্যাপার :



মেজর জেমস রেনেল, যিনি ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে Dacca পরিদর্শন করেছিলেন, তাঁর " Memoir of Hindustan" গ্রন্থে ২২ ফুট ১০১/২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের একটি বন্দুকের বর্ণনা দিয়েছেন, যার ওজন ,৪,৮১৪ পাউন্ড। রেনেল আরও মন্তব্য করেছেন যে বন্দুকটি "ততক্ষণে নদীর তীরে পড়েছে, একই সাথে যে নদীর তীরে বিশ্রাম নিয়েছিল"। মোর জুমলার সৈন্যদের প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল দুটি বড় কামান যা সোওয়ারি ঘাটে এবং অন্য কামানটি দুটি বড় কামানের সাথে মুঘলানি চরে জলে নামানো হয়েছিল, এবং বিপদের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসাবে পরিবেশনার জন্যও। এই কামানগুলি আসামে সামরিক অভিযানের সময় মুঘল সুবেদার মীর জুমলা নিয়ে এসেছিলেন। ১২৪৬ হিজরিতে। (১৮৩০-৩১ এডি।) মিঃ ওয়াল্টার্স ম্যাজিস্ট্রেটের অবশিষ্ট তোপ ছিল, "বিবি মরিয়ম" নামক সোওয়ারি ঘাট সেখান থেকে নিয়ে গিয়ে চক বাজারে স্থাপন করা হয়েছিল। মোগল এবং উপনিবেশিক আমলের মধ্য দিয়ে চক বাজার ছিল প্রধান বাজার / বর্গক্ষেত্র। "কালে জামজম" নামে পরিচিত নদীতে যে কামানটি নেমে গিয়েছিল সেটি "জাহান কোষা" "র সাথে খুব মিল ছিল।

অন্যান্য : এই জায়গাতে আপনি যত খুসি ছবি তুলতে পারেন কেউ কোনো আপত্তি করবে না ।

এর পরের গন্তব্য স্থল এখান থেকে বেশ কিছুটা দুরে কাটরার মসজিদ ।

নবম দর্শনীয় স্থান :-

কাটরার মসজিদ এটি একটি খুব সুন্দর স্থান । এটি রেললাইন পার হয়ে যেতে হয়, এটি আসলে একটি সমাধিস্থল । এটি বাংলার সুবেদার মুর্শিদকুলী খাঁ নিজের সমাধিরুপে তৈরি করে ছিলেন ।এই স্থানে প্রবেশ করার জন্য টিকিট কাটতে হয়, তবে ছবি তলার জন্য আলাদা করে কোনো টিকিট কাটতে হয়না । এই বারে জেনে নেওয়া যাক এই কাটরার মসজিদ সম্পর্কে কিছু কথা ।

ইতিহাস :-

কাটরা মসজিদ (যার নাম কাটরা বা বাজারের কাছাকাছি ছড়িয়ে পড়েছিল) এটি মুর্শিদাবাদ শহরের উত্তর-পূর্ব দিকে প্রায় এক মাইল দূরে অবস্থিত এবং মুর্শিদাবাদ রেলস্টেশন থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি নবাব মুর্শিদকুলি খান ১১৩৭ এএইচ, ১৭২৩ এডি সালে নির্মাণ করেছিলেন। মুরাদ ফারাশ নামে এক স্থপতি এই মসজিদটি এক বছরের মধ্যেই তৈরি করেছিলেন। ৫৪ মিটার উঁচু বর্গাকার প্লিন্টে দাঁড়িয়ে এই ইট নির্মিত মসজিদটি চারপাশে দ্বৈত গম্বুজযুক্ত কোষ দ্বারা বেষ্টিত যা তার সামনে প্রশস্ত উঠোনে একটি চৌকাঠ তৈরি করে। এই চতুর্ভুজটির চারটি কোণে চারটি বিশাল মিনার নির্মিত হয়েছিল যার একটি উত্তর-পশ্চিম এবং অন্যটি দক্ষিণ-পশ্চিমে এখন বেঁচে আছে। অষ্টভুজাকার আকারে মিনারগুলি উপরের দিকে টেপা হয়। প্রতিটি মিনারের অভ্যন্তরে একটি ঘুরানো সিঁড়ি রয়েছে যা শীর্ষে নিয়ে যায়। পূর্ব থেকে চৌদ্দ ধাপে বিমানটি মসজিদে পৌঁছনো যায়। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে মুর্শিদকুলী খানের মর্ত্যের সমাধিতে মসজিদের পদক্ষেপের নীচে রয়েছে। কথিত আছে যে মুর্শিদকুলি খান এটিকে বিনীততার বাইরে আদেশ করেছিলেন, যাতে উপরে ওঠা-নামা করা সমস্ত লোকই পায়ে হেঁটে যায়; শিলালিপিতে এটির একটি ধারণা থাকতে পারে, যা চলতে থাকে - "মুহাম্মদ, আরবীয়, উভয় বিশ্বের গৌরব। তাঁর পোর্টালের ধুলো নয় এমন ব্যক্তির মাথায় ধুলাবালি থাকুন"।



মসজিদটি প্রতিটি বর্গক্ষেত্রের উঠোনের মধ্যে একটি উঁচু প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে এবং প্রতিটি পাশেই ৫০.৬০ মিটার দৈর্ঘ্য। মসজিদটি যথাযথভাবে আয়তক্ষেত্রাকার (৪৫.৫ মিটার x ৭.৩২ মিটার) পাঁচটি উপসাগরে বিভক্ত, প্রত্যেকটি একটি বহুবিধ খিলান দ্বারা খোলা হয়েছে, কেন্দ্রীয়টি বিশিষ্ট এবং পাতলা জালের দ্বারা প্রচ্ছদযুক্ত। মসজিদটির ৫ টি গম্বুজ রয়েছে যার মধ্যে দুটি কেন্দ্রীয় অংশের পাশেই ভেঙে পড়েছে। কেন্দ্র এবং অন্য দুটি শেষ দিকে, ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের এক বিশাল ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গিয়েছিল, যা প্রায় পুরো ভবনটিকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। মসজিদের মোট আয়তন প্রায় ১৯.৫ একর। সম্মুখভাগটি আয়তক্ষেত্রাকার প্যানেল, বাজমেন্ট এবং কোণার মিনারগুলির সাথে সজ্জিত। পাঁচটি উপসাগরের প্রতিটিটিতে শীর্ষে একটি বাল্বাস গম্বুজকে উত্থাপন করার জন্য তিনটি মিহরাব রয়েছে তাদের পাশের দেয়াল থেকে ট্রান্সভার্স খিলানগুলি দিয়ে বসন্ত। অতীতে মসজিদের মিনার ও অংশ ভেঙে পড়েছে। মসজিদের সাথে যুক্ত কয়েকটি ছাদবিহীন হল মাদ্রাসা (স্কুল) হিসাবে ব্যবহৃত হত। কাতরা প্রাঙ্গনে ৭০০ কোরান পাঠককে জায়গা দেওয়া যায়। মসজিদের ২০০০ এর মধ্যে প্রাঙ্গণে একই সাথে লোক নামাজ আদায় করতে পারে। মসজিদের দু'পাশে প্রায় ৭০ ফুট এবং ব্যাসের ২৫ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটি বড় টাওয়ার রয়েছে। এই টাওয়ারগুলির শীর্ষে পৌঁছে মুর্শিদাবাদ শহরের একটি বড় অংশ দেখা যায়। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম হজস নামে এক ভ্রমণকারী লিখেছিলেন যে ৭০০ কারিস বা কোরান পাঠক একসময় এই বিশাল মসজিদে বাস করতেন। হজস তাঁর 'সিলেক্ট ভিউজ ইন ইন্ডিয়া' বইটিতে [১] এটিকে বর্ণনা করেছেন, "মসজিদ দ্বারা সুসজ্জিত মুসালমান শিক্ষার একটি মহাবিদ্যালয়, যা আশেপাশের সমস্ত বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে যায়"। মসজিদটি এবং চারপাশে দুটি তলা ঘর, যেখানে ৭০০ কোরান পাঠক ছিল, প্রায় সব চলে গেছে, মসজিদ এবং খিলানযুক্ত কক্ষগুলির মাঝখানে, উভয় পাশে ১৩ ফুট প্রশস্ত এবং পিছনের দিকে ৪২ ফুট প্রশস্ত জায়গা রয়েছে মসজিদ. কোষগুলি প্রায় ২০ ফুট বর্গক্ষেত্র, প্রত্যেকের ৬ টি খিলানযুক্ত দরজা এবং জানালা রয়েছে। পাথর দিয়ে ১৫ টি ধাপে গেটটি পর্যন্ত প্রবেশ করা হয়েছে, যার দু'পাশে ৫ টি খিলান রয়েছে যার মধ্য দিয়ে একটি পাথর বিশিষ্ট একটি রাস্তা মসজিদের সামনের দরজা পর্যন্ত মসজিদের কেন্দ্রীয় দরজা পর্যন্ত চলেছে ১৬৬ ফুট বাই ১১০ ফুট। মসজিদের প্রাঙ্গণটি একটি হিন্দু শিব মন্দির ধরে রেখেছে।

দশম দর্শনীয় স্থান :-

এর পরের দর্শনীয় স্থান হলো ফুটি মসজিদ । এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান হলেও এটি খুব অযতনে পরে আছে, পুরো জায়গা টা বনজঙ্গলে ভর্তি হয়ে আছে, এটি টোটো তে করে যাবার রাস্তা তে ই পরে, কিন্তু জঙ্গলে ভর্তি থাকার জন্য জায়গাটিতে আমরা নেমে ঘুরতে পারিনি । টোটো থেকে দেখে ই চলে যেতে হলো।

এই বার জেনে নেওয়া যাক এই মসজিদ সম্পর্কে কিছু কথা ।

ফুটি মসজিদ :-



কুমারপুরের হাজারদুয়ারী প্রাসাদের পূর্ব দিকে মাইলের প্রায় তিন চতুর্থাংশ হ'ল ফুটি মসজিদ, যিনি ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে এক রাতেই সরফরাজ খান নির্মিত করেছিলেন বলে খ্যাত। এটি শহরের বৃহত্তম মসজিদগুলির মধ্যে একটি, এটি ১৩৫ ফুট দীর্ঘ এবং ৩৮ ফুট প্রশস্ত। এটি পাঁচটি গম্বুজ দ্বারা সজ্জিত, যার কয়েকটি অসম্পূর্ণ। চার কোণে চারটি সর্পিল সিঁড়ি রয়েছে চারটি কাপোলাস দ্বারা সজ্জিত। ফুটি মসজিদটি এখন জঙ্গলে উপচে পড়া।

অন্য এক বিবরণ অনুসারে, বিশাল মসজিদটি নির্মাণে রাজমিস্ত্রিরা কয়েক মাস ধরে নিযুক্ত ছিলেন। যখন মাস্টার রোলকে একদিন ডাকা হয়েছিল তখন দেখা গেল যে একজন ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছে। এই রহস্যময় ঘটনাটি বেশ কয়েক দিন যাচাই করা হয়েছিল, যখন এটি এতটাই কুখ্যাত হয়ে উঠল যে রহস্যময় অতিরিক্ত কর্মীরা হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেল, কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

এর পর আমরা আমাদের প্রথম দিনের শেষ দর্শনীয় স্থান টি দেখতে চললাম টোটো নিয়ে, এটি ও বেশ দুরে এ আছে , স্থান টির নাম হলো মতিঝিল ।

একাদশ দর্শনীয় স্থান :-

মতিঝিল এটি আসলে একটি অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ, এই হ্রদ টি কে ঘিরে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি খুব সুন্দর পার্ক তৈরি করে দিয়েছে । এই পার্কের প্রবেশ মূল্য হলো ২০ টাকা করে । এই পার্কটি আয়তনে বেশ বড় যার জন্য এই পার্কে বয়স্কদের ঘোরার জন্য বাটারি চালিত গাড়ি আছে যা ভাড়া নিতে গেলে আলাদা করে ভাড়া নিতে হয় । মতিঝিলের বাইরে অনেক খাবার দোকান আছে যেখান থেকে আপনি অনেক কিছুই খেতে পারেন । মতিঝিলের প্রবেশ দ্বারের পাশে একটি ধ্বংশপ্রাপ্ত কবরেরস্থান আছে যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও অনেক কিন্তু এটি ও আজ অবহেলায় পরে আছে ।

এই বার জেনে নেওয়া যাক এই মতিঝিল সম্পর্কে কিছু কথা ।

মতিঝিল :-

মতি ঝিল বা পার্ল হ্রদটি লালবাগের প্রায় দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে এবং হাজারদুয়ারী প্রাসাদের প্রায় তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। জেমস রেনেলের মতে ঘোড়া-জুতার আকৃতির হ্রদটি ভাগীরথীর অন্যতম এক অন্যতম পাঠ্যক্রম ছিল যা একসময় এই অঞ্চলের কাছে প্রবাহিত হয়েছিল। হ্রদের মোড়ের মধ্যে 'সাং-ই-দালান' (পাথরের প্রাসাদ) নামে একটি সুন্দর প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল, একটি উঁচু প্রবেশদ্বার, একটি মসজিদ, একটি মহলসরাই বা হারেম এবং কিছু অন্যান্য কাঠামো লিখেছিলেন নবাবেশ মুহাম্মদ খান ওরফে শাহমত জাং, ভাতিজা এবং পুত্র- নবাব আলীবর্দী খানের শ্বশুরবাড়ি। নওয়াজেশ মুহাম্মদের প্রাসাদটি উপকরণ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল, বিশেষত কালো বাসাল্ট স্তম্ভগুলি গৌড়ের ধ্বংসাবশেষ থেকে আনা হয়েছিল এবং এভাবেই নাম-ই-দালান নাম ধরে নেওয়া হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর বিধবা ঘাসেটি বেগম [মেহের-উন-নিসা বেগম] সিরাজ-উদ-দৌলা (সিরাজ-উদ-দৌল্লা) রাজপ্রাসাদটি গ্রহণ না করে এবং ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রচুর পরিমাণে ধনসম্পদ দখল করেন।

নবাবেশ মুহাম্মদের মসজিদ, এটি 'কালা মসজিদ' নামেও পরিচিত, হ্রদের ঘাড়ে উত্তর দিকে অবস্থিত এবং বছরটিতে নির্মিত হয়েছিল ১১৫৩ হিজরি (১৭৪০ খ্রি।) যেমন রাজা বা রাজবংশের নাম উল্লেখ না করে স্মৃতিসৌধের সম্মুখভাগে সংযুক্ত একটি ফারসি শিলালিপিতে উল্লিখিত হয়েছিল। ফার্সি ভাষায় নিম্নলিখিত দম্পতি মসজিদের দ্বারপথে প্রদর্শিত হয়েছে: - "দিলপে তেরখ জে সেড কো সাফা গোফট উজু কুর্দূত মসজিদ বা পা ১১৫৩"। মসজিদটি পরিকল্পনায় আয়তক্ষেত্রাকার এবং তিনটি গোলার্ধ গম্বুজ দ্বারা আবৃত। মসজিদের প্লেনথ আয়তনের ক্ষেত্রফল ৫৯৮৬ বর্গফুট এবং অষ্টভুজ গোলের উপর পাঁজর সজ্জিত বিশিষ্ট বিশিষ্ট গম্বুজগুলি পদ্ম এবং কলস সমাপ্তি দ্বারা মুকুটযুক্ত। মসজিদটির চারটি কোণে উত্কীর্ণ অষ্টভুজাকার মিনারগুলি সরু স্তম্ভগুলিতে সমর্থিত বাল্বস কিওস্ক দ্বারা আবদ্ধ। মিনারগুলির শ্যাফ্টগুলি অগভীর কুলুঙ্গি মোটিফ এবং ছাঁচযুক্ত ব্যান্ডগুলি দিয়ে সজ্জিত। পোর্টালটি মূল প্রাচীর থেকে প্রজেক্ট করা হয়েছে এবং দু'পাশে গুলদস্তাস দ্বারা ফ্ল্যাঙ্ক করা হয়েছে। অলঙ্কৃত মার্লনের সাথে যুদ্ধযুক্ত প্যারাপেট বিল্ডিংয়ে কিছু সৌন্দর্য যুক্ত করে। মসজিদটি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক সমীক্ষার সুরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভ।



নওয়াজেশ মুহাম্মদের মসজিদের পূর্বে একটি ছোট ছোট ঘের রয়েছে যার মধ্যে চারটি সমাধি রয়েছে এবং এর পূর্বে এবং এর বাইরে একটি সমাধি রয়েছে। এই পাঁচটি সমাধির মধ্যে দুটি মার্বেল [নওয়াজেশ মুহাম্মদ এবং একরাম-উদ-দৌলা], একটি কালো পাথর [একরাম-উদ-দৌলার গৃহশিক্ষক], সাধারণ বালির পাথরগুলির একটি [নওয়াজেশ মুহাম্মদের শমসেরী আলী খান জেনারেল] এবং পঞ্চম হ'ল সাধারন রাজমিস্ত্রি [একরাম-উদ-দৌলার নার্স]। একরাম-উদ-দৌল্লা সিরাজ-উদ-দৌলার ছোট ভাই ছিলেন এবং তাঁর কাদামাটি নবজেশ মুহম্মদ খান কর্তৃক কোনও পুত্রসন্তান না হওয়ার কারণে তাঁর কপালে দত্তক নিয়েছিলেন। মসজিদ এবং কবরস্থানের মোট আয়তন ২.৫২ একর। ভাগীরথী এখনকার চেয়ে ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে মতি ঝিলের নিকটবর্তী ছিল। মতি ঝিলের বাগান বা পার্কটি প্রায় জলে ঘেরা ছিল এবং একটি ঘাড়ে শহরের সাথে সংযুক্ত ছিল। এর শীর্ষে 'সাং-ই-দালান' এর স্থান ছিল নবাবেশের নির্মিত প্রাসাদ। ঘাড়ের উত্তরে একটি 'আবদ্ধ' মসজিদ 'কালা মসজিদ' সম্বলিত একটি আবদ্ধ যৌগ ছিল, যার বিপরীতে পূর্ব পাড়ে ছিল 'রায়েশ বাগ' নামক একটি সুন্দর মসজিদ। ঘাড়ের দক্ষিণে ঝিলের অংশে একটি গভীর খনন ট্যাঙ্ক ছিল, যার নাম ছিল 'সাঁথি পুকুর', যার তীরে ছিল অফিস।



ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে থাকার বিষয়টি থেকে মতি ঝিলকে "সংস্থা বাঘ" নামেও পরিচিত। ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে (প্লাজে সিরাজের পরাজয়ের পরে) মীর জাফর এখানে বারো দরজা দিয়ে একটি প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন, যার নাম "বড় দুয়ারী" (বারো দরজা) । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে, দেওয়ানি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে স্থানান্তরিত করার জন্য নবাবদের সাথে আলোচনার জন্য লর্ড ক্লাইভ এখানে ছয় দিন অবস্থান করেছিলেন। ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দের দিকে, দেওয়ানি সুরক্ষার পরে কলকাতায় ফিরে আসা ক্লাইভ আবার মতি ঝিলে এসে সেখানে অবস্থান করেছিলেন, এবং সেই মাসের ২৯ শে তারিখে প্রথম ইংরেজ পুন্নাহোর এখানে রাজস্ব আদায় শুরু করার অনুষ্ঠানের পাশে বসেছিলেন। নবাবদের পাশে (ক্লাইভ দেওয়ান হয়ে বসেছিলেন, নাজম-উদ-দৌলা নাজিমের ভূমিকায় বসেছিলেন)। নবাব নাজিমের (১৭৭১ - ১৭৭৩ খ্রি।) দরবারের রাজনৈতিক রাষ্ট্রপতি হওয়ার সময় মতি ঝিল ওয়ারেন হেস্টিংসের আবাসভূমি ছিলেন। জন শোর, প্রথম ব্যারন টেগেনমাউথও এখানে থাকতেন এবং এর "শীতল কবুতর, কালো পাখি এবং শিং ঝরানো স্রোতগুলি" উপভোগ করেছিলেন।

"ঐতিহাসিক সংস্থাগুলি ছাড়াও মতিঝিল তার সৌন্দর্যের কারণে দেখার জন্য উপযুক্ত। হ্রদটি একটি দীর্ঘ, প্রশস্ত প্রসারণের চারদিকে বক্ররেখা এবং তার উজ্জ্বল জলের এবং উজ্জ্বল তীরগুলি বসন্তের সকালে একটি আকর্ষণীয় আকর্ষণ তৈরি করে হ্রদের কিনারায় দাঁড়িয়ে ছিল, এবং মাঠগুলি সজ্জিত ছিল, যেমন ঐতিহ্য অনুসারে তারা একশো উদ্যানের মতে কুবলা খানের পক্ষে এটি অবশ্যই একটি উপভোগ্য বাড়ি ছিল। রাঙ্গামাটির উঁচু সমভূমি, তবে এক বাঙালি মতিঝিলকে জেলার সর্বাধিক সুন্দর স্থান এবং ভূকাইল বা পার্থিব স্বর্গ হিসাবে বিবেচনা করবে।প্রবর্তকটি এখনও আগেনিটি বাঘ নামে পরিচিত,

অন্যান্য :

মতিঝিল এর ভিতরে সন্ধ্যা ৭ টার সময় একটি লাইট ও সাউন্ড এর সো হয় সেটি যদি আপনার দেখতে চান তো আগেথেকে টোটো আপনার গাড়ি কে বলে রাখতে হবে কারণ সো টি বেশ কিছুক্ষণ ধরে হয় । এর টিকিট আলাদা করে কাটতে হয় যা আপনি মতিঝিল পার্কের ভিতরে যে খানে সো টি হয় সেখানে পাবেন । টিকিট মূল্য ৫০ টাকা করে ( পরিবর্তন হতে পারে) । এই সো তে বাংলার শেষ নবাবের ইতিহাস সম্পর্কে বলা হয়েছে । আশা করি আপনাদের এই সো ভালো লাগবে ।

এই সো দেখার পর আমরা সবাই মতিঝিল পার্ক থেকে বের হয়ে টোটো তে করে হোটেল এর দিকে চললাম ।

তবে রাতের মুর্শিদাবাদ শহর এক অচেনা শহরে পরিনত হয় পতি মুহুর্তে আপনার মনে হবে শহর টি যেন পুরনো সেই ইতিহাসের যুগে ফিরে গেছে আর আপনার কানে কানে শুধু তাদের ইতিহাস বলে যাচ্ছে । এই অনুভব টা যদি আরো ভালোভাবে করতে চান তো একটু রাতের দিকে হাজারদুয়ারীর সামনে গঙ্গার ঘাটে বসতে পারেন ।

আজ এই পর্যন্তই । আমাদের প্রথম দিনের ঘোরা এই খানেই শেষ হলো । টোটোর দাদা টা বলল যে কাল সকালে ৭ টার মধ্যে আমাদের নিতে আসবে এবং পরের দিনের দর্শনীয় স্থান গুলি দেখাবেন ।

 ঐতিহাসিক সম্পর্কিত তথ্য গুগুল জ্যাঠার নিকট হইতে প্রাপ্ত |

descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  EmptyRe: মুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz
মুর্শিদাবাদ পঞ্চম পর্ব ( দ্বিতীয় দিন )

দ্বিতীয় দিন আমাদের টোটো ঠিক ৭.৩০ মিনিটে আমাদের হোটেলের সামনে চলে এসেছিল | আমরা ও তৈরি ছিলাম সঙ্গে সঙ্গে টোটো তে উঠে পরলাম, টোটো তে উঠে আমার বাবা টোটোর দাদা কে জিজ্ঞাসা করলেন যে প্রাতরাস কোথায় করা হবে ? টোটোর দাদা টা বলল যে চিন্তা করতে হবেনা আমি একটা ভালো দোকানে আপনাদের নিয়েযাব ওখানে করে নেবেন |

কথা মত টোটো একটা মিষ্টির দোকানের সামনে দাড়ালো | সেখানে ভালো হিং এর কচুরি র মিষ্টির সাথে প্রাতরাস টা সারা হলো এবং সঙ্গে করে কিছু মিষ্টি ও নিয়ে নিলাম কারণ টোটোর দাদা টা বলে দিয়েছে যে রাস্তা তে সেরকম আর খাবার দোকান পরবে না | এর পর টোটো সোজা চলল নৌকা ঘাটের দিকে | এই নৌকা ঘাটে গিয়ে একটা জিনিস দেখে খুব অবাক হলাম, দেখলাম যে দুটো বড় বড় নৌকা একসাথে একটা বাঁশের পাটাতন দিয়ে জোড়া আছে আর টোটো, বাইক, এমন কি টাটাসুম পর্যন্ত তুলে পারাপার হচ্ছে | এই টা আমার জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা | আমাদের দুটো টোটো ও ওই ভাবে নৌকাতে উঠে গেল তার সাথে আমরা ও উঠলাম| নৌকাতে করে আমরা লালবাগ ঘাটে গেলাম | আমাদের গন্তব্য স্থল হলো শিরাজ – উদ – দৌল্লার সমাধি , যার অপর নাম খোশবাগ | এখানেই আমাদের বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন | এই জায়গাটি লালবাগ ঘাট থেকে বেশ কিছু টা দুরে | খোশবাগ রক্ষনাবেক্ষনের দ্বায়িত্বে আছে আমাদের ভারতের পুরাত্বত্ত বিভাগ | খোশবাগের প্রবেশ মূল্য হলো ১০ টাকা | খোশবাগে প্রবেশ দ্বার দিয়ে ঢুকেই একটি সুন্দর বাগান পরে যেটি শীত কালে যদি আপনারা বেড়াতে যান তো আরো সুন্দর ভাবে বিভিন্ন রকমের ফুল গাছ দিয়ে সাজানো থাকে | এই বাগানের অংশ টি পার হলে একটি পাচিল দিয়ে ঘেরা অংশ পরবে, যার মধ্যে আছে বেশ কিছু কবর, এই কবর গুলির পরিচয় আমি আপনাদের নিচে খোশবাগের ইতিহাসে দিয়ে দেব | এই জায়গাটিতে প্রবেশ করতে গেলে আপনাকে জুত খুলে পরবেশ করতে হবে | এই অংশ টি পার হয়ে দেখতে পাবেন নবাব শিরাজ-ঊদ-দৌল্লার সমাধি, যেটি গৃহের ভিতর সসম্মানে রাখা আছে | সমাধি গৃহের পিছনের দিকে আছে একটি পার্থনা গৃহ এবং এই পিছনের দিকটি ও ফুল গাছ দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো থাকে |

এই বার জেনে নেওয়া যাক এই খোশবাগ সম্পর্কে কিছু ঐতিহাসিক ত্বথ্য |

ইতিহাস :-

খোশবাগ পশ্চিমে ভাগীরথী নদীর বিপরীত তীরে অবস্থিত। নিউ প্যালেস ঘাট (জেটি) থেকে বা মোটর-বোটে লালবাগ সদর ঘাট থেকে খোশবাগ পৌঁছানো যায়। ভাগীরথী নদীর বিপরীত তীর থেকে এটি প্রায় এক মাইল দূরে। খোশবাগ (সুখের উদ্যান) নবাব আলীবর্দী খান (আলবর্দী খাঁ) দিল্লির জামে মসজিদের লাইনের পাশে নির্মাণ করেছিলেন। এটিতে প্রাচীরযুক্ত ঘেরগুলি, বাইরের দেয়ালগুলি ছিল যা মিস্ত্রি জন্য লুপযুক্ত ছিল এবং অষ্টভুজ ঘাঁটি দ্বারা সজ্জিত ছিল। এখানে সিরাজ-উদ-দৌল্লার স্ত্রী লুৎফ-উনেকে একটি তোরণ বারান্দার চারপাশে ঘেরা একটি বর্গাকার সমতল ছাদযুক্ত কক্ষের ভিতরে নবাব আলীবর্দী খাঁ, আলীবর্দীর মা সিরাজ-উদ-দৌল্লার সমাধি রয়েছে। লুৎফ-উন -নিসা এবং নবাব পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। সিরাজ-উদ-দৌলার মৃত্যুর পরে লুৎফ-উন-নিসা, যিনি মীর জাফরের হারেমে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিলেন, তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে যান। পরে তিনি ফিরে এসে বেশ কয়েক বছর বাঘ (বাগানে) কবরে এবং গোলাপের ঝোপঝাড়ের জন্য বাস করতেন যার মধ্যে ১০৮ টি জাত ছিল। লুৎফ-উন-নিসা খোশবাগের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১০০০ টাকা ব্যায় করত এবং তার মৃত্যুর পরে ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে তাকে সিরাজ-উদ-দৌলার কাছে সমাধিস্থ করা হয়।

কবরস্থানটি ৭.৬৫ একর জমির উপরে নির্মিত হয়েছে। এটি একটি ২৭৪১ ফুট দীর্ঘ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। এখানকার মসজিদটি আলীবর্দী খান নির্মিত |

এরপর আমাদের টোটো পরের দর্শনীয় স্থান টির দিকে রহনা দিলো | পরবর্তী দর্শনীয় স্থান টি হলো ভট্টবাটির মন্দির | এই মন্দির টি খোশবাগ থেকে বেশ কিছুটা দুরে পারার ভিতরে আছে , এই জায়গাটিতে সাধারণত কেউ যায় না | রাস্তা বেশ খারাপ ছিল আমরা যখন গিয়েছিলাম | এই মন্দিরটির ও বাইরে আমাদের ভারতীয় পুরাত্বত্ত বিভাগের বোর্ড লাগানো আছে কিন্তু রক্ষনা বেক্ষণ সেই ভাবে হয় না, মন্দিরটিতে বেশ সুন্দর কাজ করা আছে | মন্দিরের ভিতরে ভগবান শিবের একটি লিঙ্গ আছে , যা রোজ পূজিত হয় |

এই বার জেনে নেওয়া যাক এই মন্দির সম্মন্ধে কিছু কথা|

ইতিহাস :-

ভট্টাবতী নবগ্রাম থানার অন্তর্গত, এবং লালবাগ সদর ঘাট থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। জনশ্রুতি অনুসারে, আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে (১৪৯৪-১৪১৯ খ্রিস্টাব্দ), বাংলার স্বাধীন সুলতান, দক্ষিণ ভারতের কর্ণাত থেকে প্রায় ১২০০ ভট্ট ব্রাহ্মণ পরিবার এই স্থানে বসতি স্থাপন করতে এসেছিল। এই জায়গাটির নাম ভট্টাবতী (ভট্টদের আবাস) বা ভট্টামতি (ভট্টদের ভূমি) নামে পেয়েছে। কথিত আছে যে ১৮ শতকের গোড়ার দিকে রত্নেশ্বর মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল যখন বাংলার দ্বিতীয় কানুনগো জয় নারায়ণ (জয় জাতি) এখানে ভট্টাবতীতে থাকতেন, এবং প্রথম কানুনগো দর্প নারায়ণ (দর্প নারায়ন) দাহাপাড়ায় অবস্থান করেছিলেন। এই মন্দিরটি কে এবং কখন অবিকল তৈরি করেছিলেন তা জানা যায়নি। এই পঞ্চ-রত্ন (পাঁচটি পিনাকল) শিব মন্দিরটি দৃষ্টিনন্দন টেরাকোট্টা আর্টস, সম্ভবত এই জেলার সবচেয়ে সুন্দর মন্দির এবং এটি পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও পোড়ামাটির মন্দিরের সাথে সহজে তুলনা করতে পারে।

মন্দিরের এই একক দরজাটি দক্ষিণ দিকে মুখ করে। প্রবেশপথের একপাশে রামের জীবন থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনা। অন্যদিকে শ্রীকৃষ্ণের জীবনকে চিত্রিত করে পোড়ামাটির চিত্র রয়েছে। প্রবেশ পথের গোড়ায় টেরাকোটার সৈন্যদের সারি রয়েছে। কেন্দ্রীয় প্যানেলে প্রতিদিনের জীবনের দৃশ্য রয়েছে, কিছু প্যানেলে রাজা নাচের মেয়েদের দেখায়।

এই মন্দির টির কাজ আমাকে মুগ্ধ্ করেদিয়ে ছিল তাই এই স্থান থেকে বের হতে বেশ কিছু টা দেরি হলো | এর পর আমাদের গন্ত্যব স্থল হলো জগবন্ধু ধাম |

জগবন্ধু ধাম :

এটি একটি আশ্রম এখানে রোজ প্রভু জগবন্ধুর পূজা হয় | আশ্রম টি বেশ বড় ঘুরে ঘুরে দেখতে বেশ লাগে | এই আশ্রমের একটি বেশ বড় বাগান আছে , তাতে বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ আছে | এবার জেনে নেওয়া যাক এই আশ্রমের সম্পর্কে কিছু কথা |

ইতিহাস :

ডাহাপাড়া আশ্রম নামে পরিচিত জগদ্ধবন্ধু ধামটি আজিমগঞ্জের দাহাপাড়ায় অবস্থিত। এটি শ্রী শ্রী প্রভু জগদ্ধবন্ধু সুন্দর জন্মভূমি। প্রভু জগৎবন্ধু সুন্দর একজন তপস্বী বৈষ্ণব প্রচারক ছিলেন, যিনি চৈতন্য পরবর্তী যুগে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভক্তি যোগ ও হরি নাম সংকীর্তনের দর্শন প্রচার করেছিলেন। তিনি ১৮৭১ সালের মে মাসে দাহাপাড়ার একটি দরিদ্র তবে বিদ্বান ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ পন্ডিত দীননাথ ন্যায়রত্ন এবং মাতা ছিলেন বামা দেবী। তিনি জীবনের প্রথম দিকে তার বাবা-মা উভয়কে হারিয়েছিলেন এবং তার বড় বোন তার লালন-পালন করেছিলেন। তিনি জীবনের বেশিরভাগ অংশ বাংলাদেশের ফরিদপুরে কাটিয়েছেন। প্রভু জগৎবন্ধু তার যৌবনে বিস্তর ভ্রমণ করেছিলেন এবং তাঁর কাছে আগত হাজারো মানুষকে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন এবং হরি ভক্তি (পরমেশ্বরের প্রতি ভক্তি) এর জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ ২০ বছর মহাগম্ভীরা লীলাতে কাটিয়েছিলেন - ধ্যান ও সান্নিধ্যের প্রায় একটানা রাজ্য যখন তিনি নিজেকে বাইরে থেকে আলাদা করে রেখে একটি ছোট্ট কুটিররে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন। তিনি এই মানব রূপটি ১৯২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রেখেছিলেন। শ্রী কুঞ্জজাদ ব্রহ্মচারী প্রতিষ্ঠিত আশ্রমটি আশেপাশের মনোরম পরিবেশে স্থাপন করা হয়েছে। প্রভু জগদ্ধবন্ধুর চিত্রের পূজা এবং বার্ষিক জন্ম বার্ষিকী সেখানে সমস্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করা হচ্ছে।

এই আশ্রম থেকে বের হতে আমাদের বেশ কিছু টা দেরি হয়ে ছিল, এখানথেকে বের হয়ে আমাদের টোটো চলল পরবর্তী দর্শনীয় স্থানের দিকে | যার নাম হলো কিরীটেশ্বরী মন্দির|

কিরীটেশ্বরী মন্দির :

এই মন্দিরটি পাড়ার ভিতরে আছে, মন্দিরটি একটি বিশাল বড় মাঠের মধ্যে আছে| আদি মন্দিরটি আজ ভগ্ন প্রাপ্ত তার মধ্যে কোনো বিগ্রহ নেই কিন্তু পুরানো মন্দির গুলি কালের গর্ভে একেবারে বিলীন হয়নি| পুরানো মন্দির গুলো চারি দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে| নতুন মন্দিরটি তে রোজ পূজা হয়| এই মন্দির এর নাম কিরীটেশ্বরী মন্দির তার একটি কারণ আছে , তার কারণ টি হলো এই স্থানে মা পার্বতীর করটি পরে ছিল যার ফলে এই মন্দিরের নাম হয় কিরীটেশ্বরী মন্দির| এই মন্দিরে মা পার্বতীর করোটির পূজা হয় | এই স্থানে শীত কালে একটি খুব বরো মেলা হয় |

এই বার জেনে নেওয়া যাক এই মন্দির সম্পর্কে কিছু কথা

ইতিহাস :

দাহাপাড়া রেলস্টেশন থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে কিরীটেশ্বরী মন্দির, মুর্শিদাবাদ জেলার প্রাচীনতম মন্দির এবং দুর্দান্ত প্রাচীনতার একটি স্থান। মহাদেবের কাঁধে বহন করা সতীদেহের দেহ যখন বিষ্ণুর চক্র দ্বারা খন্ডিত হয়েছিল, তখন তাঁর মুকুট এখানে পড়ল। দেবীদের নাম বিমোলা এবং কিরীটেশ্বরী বা ক্রাউন দেবী হিসাবে পরিচিত। পুরাণে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। পিঠা শব্দের অর্থ বেদী বা আসন যেখানে দেবী সতীর দেহের অঙ্গ পড়েছিল।



দাহাপাড়ার 'বঙ্গাধিকারি' বা কানুনগোস [২] মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিস্তৃত বিধান রেখেছিলেন। তাদের পূর্বপুরুষদের একজন ভগবান রায় দিল্লি থেকে কিরীটশ্বরীর অঞ্চলটি জাগির হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। মূল কিরীটকোনা মন্দিরটি ১৪০৫ খ্রিস্টাব্দে ধ্বংস করা হয়েছিল। জঙ্গলে জরাজীর্ণ মন্দিরটি সংস্কার করেছিলেন বঙ্গাধারী দর্পা নারায়ণ। তিনি বেশ কয়েকটি নতুন মন্দির তৈরি করেছিলেন এবং কাছাকাছি একটি ট্যাঙ্ক খনন করেছিলেন, যার নাম ছিল 'কালী সাগর'। ভবানীঠন বা কিরীটেশ্বরীতে অনুষ্ঠিত বার্ষিক মেলাটি পরিচালনা করেছিলেন দর্পা নারায়ণ। কিরীটেশ্বরীর মন্দিরটি ছিল রাণী ভবানীর স্বামী রাজা রাম কৃষ্ণের একটি প্রিয় জায়গা। গ্রামে বর্তমান মন্দিরটি বর্ধমান রাজের রাজা কীর্তিচাঁদ (১৭০২-১৭৪০) দ্বারা প্রায় ১৭৩০ সালে নির্মিত হয়েছিল। কিরীটেশ্বরীর মন্দিরের সাথে এটি একটি দুর্দান্ত পবিত্রতা জুড়ে রয়েছে। মীর জাফর যখন মৃত্যু শয্যায় ছিলেন, মহারাজা নন্দ কুমারের পরামর্শে কিরীটেশ্বরীর চরনামৃত গ্রহণ করেছিলেন। রাণী ভবানীর পুত্র, রাজা রাম কৃষ্ণ ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ সক্ত (এক ব্যক্তি যিনি শিবের স্ত্রী হিসাবে শক্তি উপাসনা করেছিলেন)। তিনি একটি বেল গাছের নীচে পাঁচটি মানুষের খুলির উপরে বসানো আসনে তাঁর ধ্যান পরিচালনা করেছিলেন। তিনি কিরীটেশ্বরীর মাজারে ঘন ঘন দর্শনার্থী ছিলেন এবং ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি বারানগর থেকে সেই জায়গায় একটি খাল খনন করেছিলেন যাতে তিনি নৌকায় করে সেখানে যেতে পারেন।





descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  EmptyRe: মুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz
মুর্শিদাবাদ ষষ্ঠ পর্ব
কিরীটীশ্বরী মন্দির থেকে বেরহতে বেশ একটু দেরি হলো , এরপর আমাদের টোটো চললো পরবর্তী দর্শনীয় স্থানে । এই সময় টোটো দাদা আমাকে বললো যে অনেক টা যেতে হবে , কারণ এর পর আমরা যাচ্ছি সবথেকে দূরে যে মন্দির আছে সেটি হলো চারবাংলা মন্দির । এই মন্দির টি দেখার পর আমার মনে হয়েছে যে মুর্শিদাবাদের সবথেকে সুন্দর মন্দির যদি বলতে হয় তো এটি সেই মন্দির ।
চার বাংলা মন্দির :
এই মন্দিরটি মুর্শিদাবাদের গঙ্গার ওপারে আছে| আজিমগঞ্জ এর একদম শেষ এ অবস্থিত| এই খানে যেতে গেলে আপনাদের নয় চার চাকা গাড়ি ভাড়া করতে হবে অথবা টোটো করে যেতে হবে তবে এই খানে সব টোটো যেতে চাই না কারণ জায়গাটা অনেকটা দূর|তবে যদি একবার কষ্ট করে যেতে পারেন তো খুব সুন্দর একটি কারুকার্যে ভরা মন্দির দেখতে পাবেন| এই জায়গা টি ও আমাদের ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে, তবে মন্দির টি গঙ্গার একদম ধারে অবস্থিত এবং গঙ্গার পার এখানে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে যদি তারাতারি পার বাধানো না হয় তো মন্দির টি গঙ্গায় তলিয়ে যেতে পারে|এখানে চার টি মন্দির একসাথে বর্গাকারে জোড়া আছে| চারটি মন্দিরে ই ভগবান শিব অধিষ্ঠান করছেন| পুরো মন্দির টিতে বিভিন্ন কারুকার্যে ভর্তি| এই মন্দিরটি থেকে আরো কিছুটা দুরে আরেকটি মন্দির আছে কিন্তু দুর্ভাগ্য ক্রমে আমার ওখানে জায়া হয়নি কিন্তু আপনারা যদি যান তো অবশ্যই ওই মন্দির টি ও দর্শন করে আসবেন|তার বর্ণনাও আমি আপনাদের দিয়ে দিলাম নিচে | এবার জেনে নেওয়া যাক এই মন্দির গুলো সম্পর্কে কিছু কথা |
ইতিহাস :
বরানাগোড় (বড়োনগর)
সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, মুর্শিদাবাদে গঙ্গার তীরে আজিমগঞ্জ নামে একটি ছোট বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠল। নাটোরের রাজ পরিবার, বর্তমানে বাংলাদেশে, আজিমগঞ্জের নিকটবর্তী একটি গ্রামে একটি নদীর ধারের প্রাসাদ তৈরি করেছিল এবং এটিকে বরানাগোড় (যার অর্থ একটি বড় শহর) বলে অভিহিত করে। ভাগীরথী নদীর পশ্চিম তীরে, আজিমগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে প্রায় কয়েক মাইল দূরে বরানাগোর, পূর্বে রাজশাহীর (বাংলাদেশ) রায় উদাই নারায়ণের (রায় রায় নারায়ণ) আবাস। মুর্শিদকুলী খানের সময়ে উদাই নারায়ণ চাকল রাজশাহীর জমিদার ছিলেন। তিনি বিদ্রোহ করেছিলেন এবং মুর্শিদকুলী খান মুহাম্মদ জানকে তাঁর বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী সহ প্রেরণ করেছিলেন। উদাই নারায়ণের প্রাসাদের নিকটে একটি যুদ্ধ হয় এবং গোলাম মুহাম্মদ নিহত হন। এরপরে মুর্শিদকুলি খানের অসন্তুষ্টির ভয়ে উদাই নারায়ণ আত্মহত্যা করেছিলেন। মুরশিদ কুলি খান নাটোরের রাম জীবন ও কালা কুয়ারকে জমিদারী দিয়েছিলেন। রামজীবন রাম কান্তকে তাঁর পুত্র এবং উত্তরসূরি হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, যিনি রানী ভবানীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন। ১৭৩০ সালে রাম কান্ত রাজশাহীর পুরো জমিদারি ১৮ বছর বয়সে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। জমিদারী প্রশাসনে পুরোপুরি অনভিজ্ঞ হয়ে তিনি জমিদারির বিষয়টিকে অবহেলা করে বেশিরভাগ সময় ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে কাটিয়েছিলেন। ভাগ্যক্রমে, রানী ভবানী, তাঁর স্ত্রী এবং অত্যন্ত দূরদর্শিতা, সচেতনতা এবং বুদ্ধিমত্তার এক মহিলা, বিশ্বস্ত দেওয়ান দয়ারামের সহায়তায় জমিদারিকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেছিলেন।

এখানে পবিত্র ভাগীরথীর তীরে বিখ্যাত রানী ভবানী (রানি ভবানী ১৭১৬ - ১৭৯৫) থাকতেন, যিনি অনুদান ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণদের রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্যান্য দাতব্য কাজের জন্য তাঁর জমিদারের বড় অংশ ব্রাহ্মণদের দিয়েছিলেন। তিনি হিন্দু শিক্ষার এক মহান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি বৃহত্তর অর্থ প্রদান করেছিলেন। তাঁর ধর্মনিষ্ঠা ও নিষ্ঠা অতুলনীয় ছিল এবং একজন ধার্মিক, ধর্মপ্রাণ, উদার এবং সক্রিয়ভাবে দানশীল মহিলা হিসাবে তাঁর ভাল নাম বাংলায় একটি গৃহবধূ হয়ে উঠেছে। একজন হিন্দু আধিকারিক তাকে বর্ণনা করেছেন, গেজেটিয়ারের জন্য অবদানের একটি নোটে, "আঠারো শতকের বাংলার ইতিহাসে যে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং সবচেয়ে ধার্মিক হিন্দু ভদ্রমহিলা রচিত, এবং যার অদম্য তাত্পর্য এবং গুণাবলী এখনও প্রতিটি হিন্দুতে খোদাই করা আছে হৃদয় "। নাজিমকে তার প্রদত্ত রাজস্ব ছিল সত্তর লক্ষ টাকা এবং তার আদায় করা ভাড়া দেড় কোটিরও বেশি ছিল। রাণী ভবানী, ১৭১৬ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ৩২ বছর বয়সে বিধবা হয়েছিলেন, প্রশাসনিক দক্ষতার জন্য কিংবদন্তি হয়েছিলেন। ধর্ম দ্বারা চালিত, তিনি বাংলায় বারাণসী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৭৫৫ সাল থেকে বরানাগরে এক ডজনেরও বেশি মন্দির সহ একটি বিশাল কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছিল। অনেকে তখন থেকে ধূলিকণায় পরিণত হয়েছে, তবে কয়েকটি এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে, যা বাংলার অতীতের গৌরব প্রমাণ।
বরানাগোড় মন্দিরগুলি ১৮ শতকের হিন্দু জমিদারী মুর্শিদাবাদকে উপস্থাপন করে। তারা আজিমগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে মাত্র এক মাইল দূরে। বরানাগোরে দেড় কিলোমিটার ব্যাসার্ধে ছড়িয়ে থাকা হিন্দু মন্দিরের একটি সজ্জা (মন্দিরগুলি) নাটোরের রাজা এবং তার বংশের জন্য দায়ী। নাটোরের রানী, রানী ভবানী, আঠারো শতকের শেষভাগে মন্দিরের উদ্ভাবন এবং নান্দনিকতার প্রধান উত্স ছিল। বড়নগরের প্রধান আকর্ষণ হ'ল চরবাংলা মন্দির (চারবাংলা) । "চর" শব্দের অর্থ চারটি। রাণী ভবানী ১৭৬০ সালে নির্মিত, এটি একটি ছোট বর্গক্ষেত্র যা চারটি বিশাল মন্দির (চারটি মন্দিরের একটি চতুর্ভুজ কনফিগারেশন) দ্বারা বেড়া। প্রত্যেকটি ১.৫ ফুট উঁচু ভিত্তিতে নির্মিত এবং দোচালা (দুটি ছাদযুক্ত) কুটির, এটি বাংলার স্থাপত্যের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ। প্রতিটি মন্দিরের ভিতরে তিনটি শিব আইকন সহ তিনটি দরজা রয়েছে। হিন্দু মহাকাব্য, রামায়ণ এবং মহাভারতের দৃশ্যগুলি "টেরাকোটায়" মন্দিরের দেয়ালে চিত্রিত হয়েছে। এটি বাংলার পোড়ামাটির মন্দিরগুলির মধ্যে অনন্য। হিন্দু মোটিফগুলিও দৃশ্যমান।
১৭৫৫ সালে রানী ভবানীর কন্যা তারাসুন্দরী দ্বারা নির্মিত ভবানেশ্বরের শিব মন্দির (ভবানীশ্বর) ১৮ মিটার উঁচুতে একটি বিশাল গম্বুজ এবং ভিতরে এবং বাইরের উভয় জায়গায় ফ্রেস্কোর কাজ দ্বারা সজ্জিত। রাজ রাজেশ্বরী মন্দিরে দেবী দুর্গার একটি দেবতা রয়েছে যা 'অষ্ট ধাতু' (একটি আট ধাতব মিশ্র) দ্বারা তৈরি। এটি একটি ১৫.২ সেমি x ২০.৩ সেমি প্যানেলে ভাস্কর্যযুক্ত। মূল প্রদর্শনীতে হিন্দু আইকনগুলি মদনগোপাল, জয়দুর্গা, করুণাময়ী, মহালক্ষ্মী এবং বিষ্ণু মন্দিরেও শিবের একটি অনন্য পাঁচ মুখী আইকন রয়েছে। এই শিব আইকনের জন্য স্থানীয় ভাষায় উল্লেখটি হ'ল 'পঞ্চানন শিব'। তদতিরিক্ত, এখানে একটি বিরল 'হায়গ্রীব বিষ্ণু' আইডলও রাখা হয়েছে। রামনাথেশ্বর মন্দির মন্দিরগুলির বারাণাগোর সেটের অন্যতম প্রাচীন মন্দির। এটি প্রধান প্রবেশদ্বারের উপরে একটি প্যানেলে খোদাই করা হিসাবে ১৬৬৩ সাকা এরা (অর্থাৎ ১৭৪১ খ্রিস্টাব্দ) সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কাঠামোটি 'একদুয়ারি' (একক প্রবেশদ্বার), 'চারচালা' এবং এতে পোড়ামাটির প্যানেল এবং সুন্দর ফুলকারীর অলঙ্কার রয়েছে।
সম্ভবত এগুলির সর্বোত্তম মন্দির গঙ্গেশ্বর, এটি জোড়বাংলা (জোরবাংলা) মন্দির নামেও পরিচিত। জোড়-বাংলা মন্দিরটি 18 শতকে রানী ভবানী নির্মিত হয়েছিল, এটি বাংলার পোড়ামাটির মন্দিরগুলির সেরা নমুনা । 'জোড়' শব্দের অর্থ জুটি। জোড়-বাংলা শিব মন্দির বাংলার অনন্য স্টাইলের পোড়ামাটির শিল্পের চিত্র প্রদর্শন করে। এই মন্দিরে তিনটি শিব মন্দিরের উপসেট রয়েছে: গঙ্গেশ্বর শিব (গাঙ্গেশ্বর), কস্তুরেশ্বর শিব (কস্তুরেশ্বর) এবং নাগেশ্বর শিব (নাগেশ্বর)। কস্তুরেশ্বর শিবলিঙ্গম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রানী ভবানীর মা কস্তুরি দেবী। গঙ্গেশ্বর মন্দিরটি চর বাংলা মন্দির থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এটি বারান্দা এক-বাংলা মন্দির সমন্বয়ে বারান্দা ভারী অলঙ্কৃত এবং তিনটি খিলানের উপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রধান প্রবেশ পথটি পশ্চিমে মুখোমুখি। মন্দিরটি ১৮ শতকের মাঝামাঝি। এই মন্দিরের মাত্রা ৬.৯০ মি x ৭.৮০ মি এবং উচ্চতা প্রায় ৫.৫০ মিটার। তিনটি খিলানটি প্রথম স্তরের ০.৮৫ মিটার এবং সেখান থেকে দ্বিতীয় স্তরের শেষ পর্যন্ত ০.৬২ মিটার পরিমাপের স্তম্ভগুলি দ্বারা সমর্থিত। বরানাগোরে রাজপরিবারের প্রাসাদটি বাদ দেওয়া উচিত নয়। রানী ভবানী এখানে ৭৯ বয়সে ১৭৯৫ সালে মারা যান।

descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  EmptyRe: মুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz

মুর্শিদাবাদ সপ্তম পর্ব
দ্বিতীয় দিন ঘুরে হোটেল এ ফিরতে বেশ দেরি হয় | সন্ধ্যে ৭ টা নাগাদ আমরা হোটেল এ ফিরে আসি, হোটেলে বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবার পর বাইরে একটু ঘুরতে বের হই আমরা সবাই | যেহেতু আমরা হাজারদুয়ারীর ঠিক পিছনে ই ছিলাম তাই গঙ্গার ধার আমাদের হোটেল এর খুব কাছে ছিল | তাই আমরা সবাই গঙ্গার ধারে গিয়ে বসলাম | এই খানে বসে একটা কথা মনে পড়ল যে কেউ একজন আমাকে বলেছিল মুর্শিদাবাদের ইতিহাস কথা বলে আজ সেটা বেশি করে মনে হচ্ছে কারণ এই রাতে গঙ্গার ধারে আলোআধারি তে বসে মনে হচ্ছে যে কেউ কিছু কানে কানে বলে যাচ্ছে অস্পষ্ট ভাবে | কারোর যদি ভুতুরে পরিবেশ ভালো লাগে তাহলে তাকে বলব যে মুর্শিদাবাদ এ রাতের দিকে হাজারদুয়ারীর পিছনে গঙ্গার ধারে কিছুক্ষণ বসে থাকতে তবে খুব বেশি রাত এই খানে থাকা ভালো নয় কারণ জায়গাটা বেশ ফাকা থাকে রাতের দিকে | এই ফাকা থাকার কারণ ও আছে একটা , সেটি হলো হাজারদুয়ারীর পিছন দিকে যে দোকান থাকে সেগুলো তে কোনো আলো নেই | সব দোকান গুলোতে ব্যাটারির আলো আছে |
যাই হোক তৃতীয় দিন ও সকালে ৮.৩০ টা নাগাদ টোটো করে বের হলাম | প্রথমে আমরা একটা ভালো হোটেলে ঢুকে প্রাতরাস সেরে নিলাম কচুরি ও মিষ্টি যোগে | এই প্রাতরাসের বিষয় টি আমরা টোটো দাদাদের ই উপর ছেড়ে দিতাম আর ওনারাও আমাদের খুব ভালো জায়গাতে নিয়ে যেতেন |
আর্মেনিয়ান গির্জা
প্রতরাস শেষ করার পর তৃতীয় দিনের যাত্রা শুরু হলো আমাদের, প্রথমে আমাদের দর্শনীয় স্থান হলো আর্মেনিয়ান গির্জা | এই গির্জা টি বহু পুরানো গির্জা | এই গির্জায় প্রবেশ করতে গেলে কোনো মূল্য লাগেনা | গির্জার ভিতরে খুব সুন্দর করে সাজানো ফুলগাছ ও অনান্য বাহারি গাছ দিয়ে |গির্জা টি বেশ বড় জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে, গির্জার ভিতরে একটি বেশ বড় পার্থনা গৃহ আছে | ভিতরে আপনি ছবি তুলতে পারেন |
এই বারে জেনে নেওয়া যাক এই গির্জার সম্পর্কে কিছু কথা
ইতিহাস
সৈয়দাবাদ (কোসিমবাজার) এর সমৃদ্ধ জনবসতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ী দের জন্য । কমপক্ষে ১৭ শতকের গোড়ার দিকে আর্মেনিয়ানরা বঙ্গীয় বাণিজ্য ও রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের উপস্থিতি বাণিজ্য ও উত্পাদন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, শহর ও বন্দরগুলির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল।
মঘল সম্রাট ওরঙ্গজেব জারি করা রাজকীয় ফরমানের ভিত্তিতে মুর্শিদাবাদ শহরতলির সৈয়দাবাদে আর্মেনীয়দের এক টুকরো জমি দিয়েছিলেন, এখানে আর্মেনিয়ান উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। খোজাহ পেট্রাস আরথুন কলকাতায় আর্মেনিয়ান সম্প্রদায়ের প্রধান ছিলেন এবং তাঁর স্বদেশপ্রেম ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য তাঁর দেশবাসী তাকে সম্মানিত করেছিলেন। খোজা পেট্রস নিজের ব্যয় এবং তাঁর পিতামাতার স্মরণে ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে সৈয়দাবাদ আর্মেনিয়ান চার্চটি তৈরি করেছিলেন। চার্চটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল দুই লাখ ছত্রিশ হাজার টাকা।
সৈয়দাবাদে বসবাসকারী আর এক বিশিষ্ট আর্মেনিয়ান বণিক হলেন মানটসাকেন সুমবাত ভারডন। তিনি ১৮২২ সালের ২ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত আর্মেনিয়ান কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মানটসকেন ভারডন ১৩ ই অক্টোবর, ১৮২৭ সালে সৈয়দাবাদে এই জীবন ত্যাগ করেন, ৫৫ বছর বয়সে জুলফা (আর্মেনিয়ান কোয়ার্টার) ইস্পাহানে ৬ ই সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সৈয়দাবাদে গির্জায় সমাহিত
চার্চ অফ দ্য ব্লেসিড ভার্জিন মেরিটি ১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল এবং শেষ পরিষেবাটি সেখানে ১৮৬০ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছিল যার পরে চার্চটি প্রায় এক শতাব্দীর জন্য বন্ধ ছিল কারণ আর্মেনিয়ানরা বাণিজ্য ও বাণিজ্য পতনের কারণে ১৮৬০ এর শেষ দিকে চলে যায়। ধারাবাহিক তত্ত্বাবধায়করা এটির দেখাশোনা করেছিলেন, শেষ জন ছিলেন প্রয়াত মিঃ ম্যাথেভোস ক্যারাপাইট যিনি সেখানে ১৯৮৮ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী মেরি ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটি দেখাশোনা করে চলেছেন। ২০০৬ সালের ৫ ই ডিসেম্বর আর্মেনিয়ান অ্যাপোস্টলিক চার্চ অফ হোলি ভার্জিন মেরি সাইদাবাদকে তাঁর এমিনেন্স আর্চবিশপ আঘান বালিয়োজিয়ান পুনর্গঠন করেছিলেন।
পুরাতন ইংরেজি কবরস্থান
চার্চ থেকে বেরহয়ে আমাদের টোটো করে পরবর্তী দর্শনীয় স্থানের দিকে এগিয়ে চললাম | পরবর্তীয় স্থান টি হলো একটি পুরানো ব্রিটিশ কবরের স্থান | এই কবরের স্থান টি কিছু টা পারার ভিতরে আছে | এই খানে প্রবেশ করতে গেলে কোনো মূল্য লাগে না | কবরের স্থান টি ফাকা থাকে |
এই বার জেনে নেওয়া যাক কিছু কথা -
এই কবরস্থানে দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তাদের সমাধি রয়েছে যারা পলাসির যুদ্ধের পরে কাসিমবাজারে অবস্থান করেছিলেন। এখানে ওয়ারেন হেস্টিংস এবং তাঁর মেয়ে এলিজাবেথের কবর দেওয়া হয়েছিল। শিলালিপি প্রদর্শিত হবে:
স্মরণে
শ্রীমতী. মেরি হাস্টিংস এবং তার মেয়ে এলিজাবিথ
যিনি তার বয়সের ২৪ বছরে ১৭৫৯ সালে জুলাই মারা গেছেন,
এই স্মৃতিস্তম্ভটি তার স্বামী ওয়ারেন হস্টিংস নির্মাণ করেছিলেন
তার স্মৃতি প্রসঙ্গে।
পরবর্তীকালে ১৮৬৩ সালে বাংলা সরকার পুনরুদ্ধার করে।
একই কবরস্থানে মিঃ দুগাল্ড ক্যাম্পবেলের একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে, যিনি ৬ ই অক্টোবর, ১৭৮২ সালে রাঙ্গামাটিতে মারা গিয়েছিলেন, তিনি ৩২ বছর বয়সে। সম্ভবত তিনি মিসেস হেস্টিংসের প্রথম স্বামী ক্যাপ্টেন জন বুচানন, যিনি দুর্গে রক্ষাকারী ছিলেন, তাঁর এক যোগসূত্র ছিলেন। উইলিয়াম ১৭৫৬ সালে তিনি কলকাতায় "ব্ল্যাক হোল" ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন। এছাড়াও মিঃ লিয়ন প্রাগার, ডায়মন্ড মার্চেন্ট এবং ইন্ডিগো ও ড্রাগসের পরিদর্শক একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে যা ১২ ই মে, ১৭৯৩-এ ৪৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। লিওন প্রাগারের এপিটাফে ইংরেজির নীচে ফারসি ও নাগরীতে শিলালিপি রয়েছে এক. যারা কবরস্থানে শুয়ে থাকেন তাদের বেশিরভাগই তাদের যৌবনে বা জীবনের প্রথম দিকে মারা গিয়েছিলেন। চার্লস ক্রোমেলিন, তিনি ৮১ বছর বয়সে ১৭৮৮ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর মারা যান। চার্লস ক্রোমেলিন হিউগেনোট পরিবারের একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ১৭৩২ সালে বোম্বেতে কোম্পানির চাকরিতে যোগদান করেন এবং ১৭৬০ -১৭৬৭ সালে বোম্বেয়ের গভর্নর হন। ইংল্যান্ডে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ১৭৭২ সালে নিখরচায় ব্যবসায়ী হিসাবে ভারতে ফিরে আসেন এবং ১৭৮৪ সালে গোয়ায় ব্রিটিশ কনসাল হয়েছিলেন। অন্য সমাধিগুলি হলেন আনস্ট্র্রুথার (১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দ), এ ডাউনি (১৭৮১ খ্রিস্টাব্দ), ক্যাপ্টেন জনের শিশু এবং রোজ গ্রান্ট (১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ), ক্যাপ্টেন হার্টি (১৭৮২ খ্রি।), ক্যাপ্টেন ক্লার্ক (১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দ), জন পিচ (১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ), ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিনিয়র বণিক। ১৮৪৭ সালে ভাগীরথীর বন্যায় পুরাতন রেসিডেন্সি কবরস্থানটি ধুয়ে ফেলা হয়েছিল। ১৮৪৪ সালের ৪ শে মার্চ কলকাতা গেজেটে একটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে সাতটি স্মৃতিচিহ্নগুলি স্মৃতিস্তম্ভগুলি থেকে সরিয়ে টোল অফিসে জমা দেওয়া হয়েছিল, এবং আত্মীয়রা আবেদনের জন্য উপলব্ধ ছিল বা মৃত বন্ধু।
কর্নেল গ্যাস্ট্রেল বলেছে যে কিছু পুরানো স্মৃতি স্ল্যাবগুলি "তীর থেকে খনন করা হয়েছিল, সম্ভবত এটি একটি পুরানো দুর্গের অংশ, রেসিডেন্সির ধ্বংসাবশেষের উত্তরে ছিল। মিসেস চার্লস অ্যাডামসের স্মৃতিতে একটি স্ল্যাব তারিখের সাথে খোদাই করা আছে" ২৯ শে মে, ১৭৪১. " মিঃ বেভারিজ বলেছেন যে এই সমাধিপাথরটি বেরহামপুরের নিকটবর্তী বাবুলবুনার (বাবুলবোনা) মিঃ লায়ালের চত্বরে সরানো হয়েছিল, আরেকটি লেখা ছিল ইসাবেলা গ্রেয়ের স্মৃতিতে লাতিন শিলালিপি সহ, যিনি ১৭৩৭ খ্রিস্টাব্দে মারা গিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, জর্জ গ্রে সম্ভবত মালদার প্রধান ছিলেন এবং পরে কলকাতার সদস্য পরিষদ ছিলেন, যিনি ক্লাইভের সাথে ঝগড়া করেছিলেন এবং ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে দেশ ত্যাগ করেছিলেন।
ডাচ কবরের স্থান
এরপর আরো একটি কবরের স্থান এর উদ্দেশে আমরা রহনা দিলাম , এটি ও একটি ব্রিটিশ কবরের স্থান | এই কবরের স্থান টি আপনি ট্রেন থেকে দেখতে পাবেন যখন আপনি মুর্শিদাবাদ স্টেশন এর দিকে যাবেন | এখানে ও কোনো প্রবেশ মূল্য নেই |
এইবার জেনে নেওয়া যাক এই কবরের স্থান সম্পর্কে কিছু কথা –
ইতিহাস –
রেসিডেন্সি কবরস্থানের সামান্য পশ্চিমে কালকাপুর, যেখানে ডাচ কারখানা দাঁড়িয়ে ছিল। বার্নিয়ার ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে এটি অস্তিত্ব হিসাবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে এটি ৭০০ বা ৮০০ জন পুরুষকে নিযুক্ত করেছিল। জোসেফ টিফেন্টহেলার ডাচ ভবনগুলি বিস্তৃত এবং দুর্দান্ত বলে বর্ণনা করেছেন। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংসের বন্ধু জর্জ লুই ভার্নেট একজন ফরাসী লোক এখানে দ্বিতীয় কমান্ডে ছিলেন এবং সিরাজ-উদ-দৌল্লার সিসি-উদ-দৌল্লা কর্তৃক কোসিমবাজার এবং কলকাতা দখল করার পরে ইংরেজদের প্রতি অত্যন্ত দয়া প্রকাশ করেছিলেন। )। ১৭২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ৪৩ টি স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে যা ডাচ কবরস্থানে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই ,কেবল কয়েকটি সমাধি ভাল অবস্থায় রয়েছে। গ্রেগরিয়াস হার্ক্লোটস, ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (চিনসুরার গ্রেগরি হার্কলোটের চাচাত ভাই) ১৭৩৯ সালে মারা যান। ম্যাথিয়াস আর্নল্ডাস ব্রাহে, ২০ ই আগস্ট ১৭৭২ সালে মারা গিয়েছিলেন। টেমেরাস ক্যান্টস ভ্যাচার, মারা যান ১৭৭৮, ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান মার্চেন্ট। জোহান গ্যান্টভোর্ট ভ্যান অ্যাসফটেন, ২০ ই অক্টোবর ১৭৯২ এ কোম্পানির সার্জন মারা যান। এবং, জোহানা পেট্রোনেলা ভ্যান সোর্জেন। ডাচ কবরস্থানটি কাসিমবাজার রেলস্টেশনের কাছে অবস্থিত।
বাইসপুর শিব মন্দির –
এই বারে যে জায়গা তে আমাদের নিয়ে গেল টোটো দাদারা সেটি আমার বেড়াবার তালিকাতে ই ছিল না, তাই কিছু টা অবাক হয়ে ছিলাম | তবে পৌছাবার পর মনে হয়েছিল যে সত্যি একটা ভালো জায়গা আমার তালিকা থেকে বাদ পরে গিয়েছিল , টোটো দাদাদের জন্য আমরা একটা ভালো জায়গা দেখা হলো | জায়গাটির নাম হলো বাইসপুর মন্দির, এটি হলো একটি ভগবান শিবের মন্দির | মন্দিরটি বেশ কারুকার্য ময় | এই মন্দিরটি তে ঢুকতে কোনো প্রবেশ মূল্য লাগেনা | এই মন্দির টি তে প্রতি দিন এ পূজা হয় | শ্রাবণ মাসে মন্দিরে অনেক ভক্তের আগমন ঘটে বাবা ভোলানাথের মাথায় জল ঢালার জন্য |
এই বার জানা যাক মন্দিরের ইতিহাস -
কোসিমবাজার নতুন প্রাসাদ (কোসিমবাজার ছোট রাজবাড়ি) এর নিকটে দুর্দান্ত কাজের লোকের শিব মন্দির অবস্থিত। এই মন্দিরটি রাম কেশব দেব শর্মা (রাম কেশব দেব শর্মা), পন্ডিত কৃষ্ণ নাথ নয়াপঞ্চনন (পন্ডিত কৃষ্ণনাথ সত্য পঞ্চানন) এর পিতা ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটি ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে লালগোলার জমিদার রাজা রাও জোগেন্দ্র নারায়ণ রায় (রাজা রাও যোগেন্দ্র নারায়ন রায় বাহাদুর) সংস্কার করেছিলেন। বর্তমান মন্দিরটি ১৩ ই মার্চ, ১৯৯৯ সালে শ্রী অমিত কুমার ভোঁসলে (বালু বাবু নামেও পরিচিত) দ্বারা পুনর্গঠন করা হয়েছিল | মন্দিরটি সমৃদ্ধ পোড়ামাটির ফ্যাসাদ, স্টুকো ফিগার এবং এক-বাংলা (একবাংলা) বারান্দার সাথে একটি অনন্য বিপরীত পদ্ম-গম্বুজ রয়েছে একটি বাঁকা কর্নিশের উপরে।
বাইসপুর মন্দির দুটি স্থাপত্য নকশার সংমিশ্রণ বলা যেতে পারে। মন্দিরের নীচের আয়তক্ষেত্রাকার অংশটি একাকলা (একবাংলা) ধরণের বরনাগোড়ের মন্দিরের (বড়োনগর) সাথে মিলিত হয় এবং এর উপরের অংশটি বারানাগোরের "ভবানেশ্বর" (ভবানীশ্বর) মন্দিরের অনুরূপ। মন্দিরের প্রথম নীচের অংশটি কর্নিসের ছাঁচযুক্ত আকারে বর্গক্ষেত্র। এই অংশটির উচ্চতা ২৫ ফুট (৭.৫ মিটার)। দ্বিতীয় অংশে টি বৃহৎ বিপরীত পদ্ম পাপড়ি এবং অষ্টভুজাকার গম্বুজটির গোড়ায় ঘোরানো ছোট ছোট উল্লম্ব পদ্ম পাপড়ি রয়েছে। এই অংশের উচ্চতা ১৫ ফুট (৪.৫ মিটার)। গম্বুজের তৃতীয় বা শীর্ষতম অংশটি অষ্টভুজাকৃতির উল্টানো পদ্মপোডের আকারে রয়েছে, যার সাথে রয়েছে এম্বেলিকা (আমলক) মালকি, পদ্ম (পদ্ম), কলস (কলস) এবং তারপরে পতাকা মেরু (গণকদন্ড) শীর্ষে এই অংশের উচ্চতা ১৫ ফুট (৪.৫ মিটার)। মন্দিরের মোট উচ্চতা ৫৫ ফুট (১৭ মিটার)। নীচে বর্গক্ষেত্রের অংশটি প্রতিটি পাশের ১৫ ফুট (৪.৫ মিটার) এবং এক-বাংলা ভেরান্দহ ১১ ফুট বাই ৬ ফুট (৩.৫ মিটার ২ মিটার)। শিবলিঙ্গম উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট বিষ্ণু অবতার, দুর্গা, কালী, কৃষ্ণলীলার দৃশ্যে বিভিন্ন ফুল ও পাখির ভাস্কর্যের সাথে দেয়ালে চিত্রিত করা হয়েছে। মন্দিরের প্রাচীরের ইস্টার মুখের উপরে রাধা কৃষ্ণের ভাস্কর্য রয়েছে, উত্তর দিকে ডাকিনী-যোগিনী এবং কালী এবং পশ্চিম দিকে লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং দুর্গা।
প্রতি বছর শ্রাবণ বা শ্রাবণে বাংলা মাসে, যা জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত শুরু হয় ভক্তগণ পবিত্র গঙ্গা নদীতে নিমগ্ন হন এবং পবিত্র জলটি নিয়ে যান বাইসপুর মন্দিরে শিবের মূর্তি। এই প্রক্রিয়াটিতে তারা গোড়াবাজার থেকে কাসিমবাজার পর্যন্ত খালি পায়ে কয়েক মাইল হেঁটে যায়।
পাতলেশ্বর শিব মন্দির –
এর পরে আমরা টোটো নিয়ে এগিয়ে চললাম পরবর্তী দর্শনীয় স্থানের দিকে , সেটি হলো পাতলেশ্বর শিব মন্দির, এই মন্দিরটি বেশ বড় জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে , মন্দিরটির সামনে একটি বড় বট গাছ আছে | এই মন্দিরের পাসে একটি নদীর ঘাট আছে যার সাথে একটি ঐতিহাসিক ঘটনাও জড়িত | এই বার আমরা ওই ঘটনার কথা জেনে নিই |
ইতিহাস -
সপ্তদশ শতাব্দীতে ভাগীরথী নদীটি তার প্রধান গতিপথ পরিবর্তন করেছিল এবং কাসিমবাজারের মধ্য দিয়ে এটি একটি গরুর ধনুকের হ্রদ তৈরি করেছিল, যা বারহামপুর থেকে ২ কিলোমিটার দূরে ফরাসডাঙ্গায় (ফরাস ডাঙ্গা) শেষ হয়েছিল। একটি বলদ-ধনুকের হ্রদ তৈরির প্রাচীন পাঠ্যক্রমটি কটিগঙ্গা (কাটি গঙ্গা) নামে পরিচিত। কাটিগঙ্গার দক্ষিণ তীরে প্রায় ৩০০ বছর পুরানো পাতলেশ্বর মন্দিরটি (পাতালেশ্বর শিবদ্ধির) অবস্থিত। হিন্দু পুরাণ অনুসারে পাতাল [5] শব্দটির অর্থ মাটির তলায়। এখানকার শিবলিঙ্গকে স্বয়ম্ভুস জ্যোতির্লিঙ্গ (স্বয়ম্বু জ্যোতির্লিঙ্গ) বলা হয়। স্বয়ম্ভুস শব্দের অর্থ তারা নিজেরাই বেড়ে উঠেছিল। মূল মন্দিরটি ছিল অঞ্চলটিতে মাত্র ৬৪ বর্গফুট এবং ছোট ছোট ইট দিয়ে তৈরি। ২০০৬ সালে মন্দির পুনরুদ্ধারের জন্য "পাতলেশ্বর মন্দির নির্ধারণ কমিটি" (পাতালেশ্বর মন্দির নির্মান কমিটি) নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। প্রায় ৪,০০,০০০ টাকা কসিমবাজারের স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায় দান করেছিল। পুনরুদ্ধারের পরে মন্দিরটি গ্লাসযুক্ত টাইলস এবং মার্বেল কাজের সাথে সজ্জিত ছিল, যা এটি মূল মন্দির চেয়ে একটি বিশাল কাঠামোয় রূপান্তরিত করেছিল।
শীতকালে প্রচুর পরিযায়ী পাখি এই মন্দিরের উত্তরে কাটিগঙ্গার নিকটে এই অঞ্চলটি ঘুরে দেখেন। সতীদাহ ঘাট []] (সতীদাহ ঘাট) যেখানে রাজা রাম মোহন রায় (রাজা রামমোহন রায়) একবার এই মন্দিরের উত্তরে এসেছিলেন। রাম মোহন রায় (১৭৭২ - ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ) ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদে এসেছিলেন এবং একই বছর ১১ ই আগস্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির "রাইটিং সার্ভিসে" প্রাইভেট ক্লার্ক "মুন্সি" (মুন্সিসি) -এর নিবন্ধক থমাস উডফোর্ডের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। মুর্শিদাবাদে আপিল আদালত। রাম মোহন রায় এখানে দুই বছর অবস্থান করেছিলেন। ১৭৪২ সালে, জন সাফানিয়াহ হলওয়েলে একটি সতীদাহ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেছিলেন ১৮ বছরের কিশোরীর "সতীদাহ ঘাটে"। কোসিমবাজার কারখানার বিপরীতে বসবাসরত রাম চাঁদ পণ্ডিত নামে এক ধনী মারাঠা ব্যবসায়ী ৩০ বছর বয়সে ৪ ফেব্রুয়ারি ১৭৪২ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তাঁর এক পুত্র ও দুই কন্যার (বড় এক মাত্র চার বছর) তাঁর স্ত্রী "সতী" হওয়ার ইচ্ছে করেছিলেন , স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় পাইরে নিজেকে জ্বালিয়ে দিয়ে। সেই সময় মিঃ ফ্রান্সিস রাসেল কোসিমবাজার কারখানার প্রধান ছিলেন। তাঁর স্ত্রী লেডি রাসেল এই মেয়েটিকে বাঁচানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। হলওয়াল তাঁর "বাংলার প্রদেশগুলিতে এবং ইন্দোস্টানের সাম্রাজ্যের সাথে সম্পর্কিত আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক ঘটনাবলী" বইয়ে লিখেছিলেন "শেষবারের মতো তিনি কীভাবে মর্যাদাপূর্ণ ও নিরপেক্ষ মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং তার আসনটি ধরে নিয়েছিলেন, তার জন্যই কেবল ধারণা করা যায়, শব্দগুলি তার সম্পর্কে একটি ন্যায্য ধারণা জানাতে পারে না। - জন সাফানিয়াহ হলওয়েল।
পাতলেশ্বর মন্দিরের কাছে (যা পাথুরেঘাটা শিব নামেও পরিচিত ছিল) পাথরঘাটা শিব) প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি বাঁধঘাট (বাঁধঘাট) নামে একটি ঘাট ছিল, যেখানে কাসিমবাজার শ্রীপুর প্রাসাদে পূজা করা দেব-দেবীদের মূর্তিগুলি নিমজ্জন অনুষ্ঠানের জন্য আনা হয়েছিল (বিসর্জন) )। "বাঁধা ঘাট", "সতী দহ ঘাট" সহ পাতলেশ্বর মন্দিরের চারপাশের মোট অঞ্চলটি "ব্যাস কাশি" নামে পরিচিত ছিল ব্যাসকাশী, যেহেতু এই অঞ্চলে ১০৮ টি শিব মন্দির ছিল। ১৮১০ খ্রিস্টাব্দে, ৬১ বছর বয়সী শিল্পী টমাস ড্যানিয়েল (১৭৪৯-১৯ মার্চ, ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দ), বাঁধাঘাটের সাথে গঙ্গায় দুর্গা নিমজ্জন অনুষ্ঠানের একটি চিত্র আঁকেন। এই চিত্রকর্মটি কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
ইংরেজী, ফরাসি এবং ডাচদের এখানে কোসিমবাজারে কারখানা ছিল এবং একটি বন্দর ছিল; এই মন্দিরের কাছাকাছি কাটিগঙ্গার তীরে এই বন্দরের অবশেষ পাওয়া যায়। এই বন্দর দিয়ে রেশমের রফতানি করা হয়েছিল, তবে ভাগীরথী নদীটি তার পথ পরিবর্তন করেছিল এবং কাসিমবাজার বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছিল এবং ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই জায়গা থেকে বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাসিমবাজার পুরোপুরি তার গৌরবময় অতীতটি হারাতে বসল।
কাশিমবাজার বড় রাজবাড়ি –
এর পরবর্তী স্থান টি হলো কাশিমবাজার এর সবথেকে আকর্ষনীয় জায়গা | সেটি হলো কাশিমবাজার রাজবাড়ি গুলি | আসলে এখানে দুটি রাজবাড়ি আছে একটি বড় আর একটি ছোট রাজবাড়ি | প্রথমে আমরা যাব বড় রাজবাড়িতে | তবে বড় রাজবাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয় না | কারণ টা আমার জানা নেই তাই বাইরে থেকে ই দর্শন করতে হয় |
এবার জেনে নেওয়া যাক এই রাজ বাড়ি সম্পর্কে কিছু কথা –
ইতিহাস –
কসিমবাজার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বর্ধমানের শিজনার কালী নাথ নন্দী, তিনি এসে কাসিমবাজারের নিকটে শ্রীপুরে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নাতি রাধা কৃষ্ণ নন্দী একটি দোকান রেখেছিলেন যেখানে তিনি সিল্ক, ঘুড়ি এবং সুপারি বাদাম বিক্রি করেছিলেন। তাঁর পুত্র কৃষ্ণ কান্ত নন্দী, যিনি কান্ত বাবু নামে পরিচিত (কণা বাবু), ওয়ারেন হেস্টিংসের খুব পছন্দের হয়েছিলেন, যিনি তাকে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার গভর্নর পদে নিয়োগের সময় বেশ কিছু লাভজনক জমিদারির তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কথিত আছে যে কান্ত বাবু ওয়ারেন হেস্টিংসে আশ্রয় দিয়েছিলেন যখন ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে সিরাজ-উদ-দৌলা (সিরাজ-উদ-দৌল্লা) কসিমবাজার কারখানায় আক্রমণ করেছিলেন। ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে কান্ত বাবুকে শোধ করেছিলেন যখন তিনি মাদ্রাজ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাঁকে দেওয়ান বানিয়ে বাংলার গভর্নর নির্বাচিত হন। হেস্টিংসের কৃষিক্ষেত্রের অধীনে (১৭৭২-১৭৭৭) বহরবন্ড (বর্তমানে মূলত গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা) সহ অনেকগুলি পরগনা কান্ট বাবুকে চাষ করা হয়েছিল। বেনারসের চৈত সিং (চৈত সিং) এর বিরুদ্ধে হেস্টিংস মার্চে ওয়ারেন হেস্টিংসের সাথে ছিলেন, যিনি তাকে গাজীপুরে একটি জগির দিয়েছিলেন এবং তাঁর পুত্র লোকেনাথকে বাংলার নবাব নাজিমের কাছ থেকে মহারাজের উপাধি দিয়েছিলেন। চৈত সিংহের বাড়ির প্রস্তর স্তম্ভ এবং খিলানগুলি কান্ত বাবু নিয়ে এসেছিলেন এবং কাসিমবাজার রাজ বাড়ি (প্রাসাদ) এ ব্যবহার করেছিলেন। কান্ত বাবু ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে মারা যান।
শ্রীপুর প্রাসাদটি ৮.৫৩ একর জায়গার উপর অবস্থিত। এই প্রাসাদের চারপাশে ৬৯৬৬ বর্গফুট (০.১৬ একর) খোলা জায়গা রয়েছে। সামনের মুখটি ১২০ ফুট এবং এর মধ্যে চিত্তাকর্ষক গেটওয়ে (সিংহ দরজা সিংহ দরজা) ২০ ফুট প্রশস্ত। প্রাসাদের প্যালাডিয়ান আর্কিটেকচারটি নতুন ধ্রুপদী গন্ধের সাথে মিশ্রিত হয়েছে, কঠোর প্রতিসাম্য ব্যবস্থা ব্যবহার করে। প্রধান প্রবেশদ্বারটি কেন্দ্রবিন্দু, আয়তক্ষেত্রাকার জানালা দিয়ে শীর্ষে এবং একটি প্রাচীরের মুখের সাথে প্রয়োগ করা আলংকারিক সামান্য-প্রজেক্টিং কলাম দ্বারা সমর্থিত একটি বিস্তৃত এনট্যাব্ল্যাচার (মোডিংস এবং ব্যান্ডগুলি যা কলামগুলির উপরে অনুভূমিকভাবে আবদ্ধ রয়েছে) দিয়ে আবদ্ধ। মূল প্রবেশপথের কেন্দ্রস্থল থেকে গথিক স্তম্ভগুলি রয়েছে যেখানে রয়েছে একটি পোর্টিকো, একটি অভ্যন্তরীণ এককতলা ঘর, বিদ্ধ প্রাচীর রয়েছে যা উপাদানগুলির জন্য খোলা রয়েছে। প্রাসাদটিতে ১০০ টি স্তম্ভ রয়েছে, যার সবটিতেই রয়েছে দুর্দান্ত পদ্মের নকশা। এর দেয়ালগুলি পোড়ামাটির শিল্পে সজ্জিত। মিনার্ভার সুবিতলা মন্দিরের মতো ত্রিভুজাকার শীর্ষে স্তম্ভগুলি মিশ্রিত হয়ে প্রবেশদ্বারযুক্ত এই প্রতিসামান্য মন্দিরের মতো ঘরটি এর কেন্দ্র থেকে দূরে সজ্জিত সমান প্রতিসাম্যযুক্ত ডানা রয়েছে। মূল প্রবেশপথ পেরিয়ে প্রাসাদে প্রবেশের পরে ১০০ ফুট বাই ৪০ ফুটের একটি খোলা জায়গা রয়েছে। একবার এখানে ইটালিয়ান মার্বেল এবং ঝর্ণার মূর্তি বিদ্যমান ছিল। এই প্রশস্ত জায়গাটির চারপাশে এক বিস্তৃত ভেরান্ডা প্রথম তলে এবং এছাড়াও চলতে থাকে। প্রথম তলায় লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির (লক্ষ্মী নারায়ন) রয়েছে, যার দেয়ালে রামায়ণ এবং মহাভারত থেকে চিত্রিত দৃশ্য রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে ৫৫ ফুট বাই ৫৪ ফুট অন্দর মহল (রাজপরিবারের ব্যবহৃত ঘর), ০.২৭ একর পুকুর, ০.২২ একর রেকর্ড রুম, ১.৫৯ একর স্থিতিশীল, ০.২৮ একরের বাগান, রান্নাঘর, থাকার ঘর, আচার ঘর (ধর্মীয় বা ধর্মগ্রন্থের জন্য ঘর) অনুশীলন) এই প্রাসাদে। এই প্রাসাদের মধ্যে ১০ লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির ডালানস (একটি ইট নির্মিত বা পাথর দ্বারা নির্মিত প্ল্যাটফর্ম বা একটি মন্দিরের কমপ্লেক্সে ঘর বা হল), ১২ নটমন্দির ডালানস (নটমন্দির [নাটমন্দির] মন্দিরের সামনে বা সামনে একটি হল রয়েছে ভক্তিমূলক নৃত্য এবং বাদ্যযন্ত্র পারফরম্যান্স) এবং অন্য ১৫ টি মন্দির ডালানস। প্রাসাদ নৃত্য হলের অভ্যন্তরে মহারাজা মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দীর (মহারাজা মনিন্দ্রচন্দ্র নন্দী) একটি মূর্তি রয়েছে। প্রাসাদের সামনের উঠোনে ২৪ জৈন মন্দির ছিল। এই মন্দিরগুলি জৈন ধর্মের সমস্ত তীর্থঙ্করকে স্মরণ করে। এর কোনটিই নেই। ২০১০ অবধি ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় থেকে যায় এটির সংস্কার ও নতুন চেহারা দেওয়া হয়েছিল।
বঙ্গিয় সাহিত্য সম্মিলনের প্রথম বার্ষিক সম্মেলন (বাংলা সাহিত্যের সম্মেলন জাতীয় সাহাবী সম্মেলন) এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল (বাংলা ক্যালেন্ডার: ১ এবং ১৮ কার্টিক ১৩১৪ বঙ্গাব্দো। ১৭,১৮ কর্টিক ১৩১৪) ১ লা ও ২ য় নভেম্বর ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে এবং সভাপতিত্ব করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) লিখেছেন।
এই রাজবাড়ির ছবি বারে থেকে এ তুলতে হয় | তবে যদি কেউ এই রাজবাড়ি ভিতর থেকে দেখার ব্যবস্থা করেদেন তো খুব উপকৃত হব |
এর পর আমাদের টোটো চলল কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির দিকে |
কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি
কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়িটি কাশিমবাজার রেল স্টেশন এর কাছে আছে | এই রাজ বাড়িটি খুব সুন্দর ভাবে সাজানো আছে | এই রাজবাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে ২০ টাকা করে টিকিট কাটতে হয় | ভিতরে এমপি ছবি তুলতে পারেন তবে সব জায়গাতে নয় | ঢোকার সময় একজন গাইড কে নিয়ে ঢুকতে হয় না হলে আপনি এই রাজবাড়ির ভিতর পথ হারাতে পারেন এবং প্রবেশ করা বারণ এই রকম জায়গাতে গিয়ে পড়তে পারেন | এই রাজবাড়ির সব জায়গা তে প্রবেশ করার অনুমতি নেই কারণ বর্তমানে যিনি রাজা এবং তার পরিবার মাঝে মাঝে এখানে আসেন ও ওই অংশ টি তে বাস করেন |
ভিতরে একটি বসে পারিবারিক আড্ডা দেবার জায়গা আছে যেটি খুবই মনোরম জায়গা | একটি ঠাকুর দালান আছে যে খানে মা দুর্গার পূজা হয় | এ ছাড়া রাজবাড়ির পিছনের দিকে একটি পুকুর আছে এবং তার সাথে আছে একটি টেনিস খেলার মাঠ |
জেনে নেওয়া যাক এই রাজ বাড়ির সম্পর্কে কিছু কথা –
ইতিহাস –
১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে আলীবর্দী খাঁর (আলিবর্দী খাঁ) রাজত্বকালে দিনবন্ধু রায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কাসিমবাজার রেলস্টেশনের একেবারে নিকটে এই সুন্দর প্রাসাদটি। কাসিমবাজার নতুন প্রাসাদের পরিবার তাদের "চট্টোপাধ্যায়" বা "চ্যাটার্জী" উপাধি অর্জন করেছিল এবং রাজা আদিসুরের বেদে প্রাপ্ত পাঁচটি ব্রাহ্মণের মধ্যে দক্ষিণের বংশধর ছিলেন। পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা অযোধ্যা নারায়ণ রায় (আধ্যাত্মিক নারায়ন রায়) তত্কালীন নবাব নাজিম তাঁর মেধাবী সেবার প্রশংসা করে তাঁকে "রাই" এর বংশগত উপাধি দিয়েছিলেন। তাঁর পুত্র দিনোবান্ধু রায় (ডেস্কটপ রায়) প্রথমে কাসিমবাজারে স্থায়ী হন। সুপরিচিত রাজা আশুতোষ নাথ রায় (রাজা আশুতোষ নাথ রায়) এই সম্ভ্রান্ত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
প্রাসাদটি বেশ ভালভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে | প্রাসাদের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি ছোট সংগ্রহশালা এবং একটি সুন্দর দুর্গা মন্দির এবং লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির। প্রাসাদের ওয়াচ টাওয়ার থেকে দিগন্তের একটি সুন্দর দৃশ্য পাওয়া যায়।
আজকের মত এই পর্ব এই খানেই শেষ করলাম |

descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  EmptyRe: মুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz
মুর্শিদাবাদ ( অষ্টম ও শেষ পর্ব )
হাজারদুয়ারী :
মুর্শিদাবাদের কথা মাথায় এলেই আগে মনে পরে হাজারদুয়ারীর কথা | কিন্তু আমার ঘোরার তালিকাতে হাজারদুয়ারীর নাম ছিল সবার লাস্টে | তার কারণ আমি আগে থেকেই ঠিক করেছিলাম যে হাজারদুয়ারীর যতটা সম্ভব আমি কাছে হোটেল নেব এবং লাস্ট দিনকে হাজারদুয়ারি খুব ভালো করে দেখব | তাই টোটো করে কাশিমবাজার থেকে ফেরার পর আমরা টোটো ছেড়ে দিই | দিয়ে হাজারদুয়ারি তে ঢুকি | হাজারদুয়ারি তে ঢুকতে গেলে প্রবেশমূল্য লাগে তবে এখানে একটা কথা বলে রাখি আপনাদের ভুলেও আপনারা গাইড নেবেন না | গাইড এর জন্য এরা আলাদা টাকা নেয় | গাইড আমি নিতে বারণ করছি তার কারণ আপনি ভাববেন যে গাইড নিলে সে আপনাকে ভিতরে গিয়ে ভালো করে দেখাবে সে টা সম্পূর্ণ ভুল কারণ গাইড কে হাজারদুয়ারি প্যালেসে ঢুকতে দেয়না | গাইড যা বলার বাইরে থেকে আপনাকে বলেদেবে যেটা ওই সময়ের মধ্যে ভালো করে আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় | এর থেকে আপনি বই র নেট থেকে ভালো ভাবে জানতে পারবেন |যাই হোক হাজারদুয়ারীর ভিতর ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন নিয়ে ও ঢুকতে দেয়না | ও গুলো টিকিট যে খান থেকে কেটেছেন ও খানে জমা রাখতে হয় | তবে হাজারদুয়ারীর মাঠে আপনি বিনা মূল্যে প্রবেশ করতে পারেন এবং যত খুশি ছবি তুলতে পারেন |
এই প্রাসাদ টি ইতালীয় স্থাপত্যকলার এক জীবন্ত নিদর্শন | তবে এই প্রাসাদ টির নামকরণ সম্পর্কে সঠিক ভাবে কেউ বলতে পারেন না | সাধারণত মনে করা হয় যে হাজার টা দরজা থাকার জন্য এই রূপ নাম হয়েছে | লোক মুখে একটি কথা সোনা যায় যে এই প্রাসাদ গাথুনির কাজে নাকি ডিমের ব্যবহার করা হয়েছিল | এই প্রাসাদ টি তিনতলা প্রতি টা ঘর খুব সুন্দর কারুকার্য করা | এক তলাতে আছে অস্ত্রাগার | এই অস্ত্রাগারে আছে মোট ২৬০০ টি অস্ত্র | মনে করা হয় যে এই অস্ত্র গুলি পলাশীর যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল | এই অস্ত্র গুলির মধ্যে বিখ্যাত হলো আলিবর্দ্দী খাঁয়ের ব্যবহার করা তলোয়ার ও বহুনল বিশিষ্ট বন্দুক, নাদিরশাহের শিরস্ত্রাণ , মিরকাশিমের ছুরি এবং বিভিন্ন ধরনের ছোরা ও কামান এবং আরো একটি সব থেকে বিখ্যাত জিনিস আছে সেটি হলো মোহম্মদী বেগ সিরাজ-উ-দ্দৌলাকে যে ছোরা দিয়ে হত্যা করে ছিল |
দোতলায় ও তিন তলাতে আছে আর্ট গালারি ও লাইবেরি , এখানে বহু নাম করা শিল্পীর চিত্র আছে | এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো The Burial of Sir John More, Adom & Eve Black Bent. লাইবেরি তে আছে বিভিন্ন দলিল,দস্তাবেজ,বই,নভেল ও বেদাশি ভাষায় লিখিত বিভিন্ন গ্রন্থ | তাছাড়া বাগদাদের বিখ্যাত লেখক হারুন অল রসিদের হাতে লিখিত কোরান আছে এখানে|
এই হাজারদুয়ারীর সামনে খুব সুন্দর বাগান আছে যে টি শীত কালে বিভিন্ন ফুলে আরো সুন্দর ভাবে সেজে ওঠে | একতলা প্যালেসের সামনে বিশাল সিরি উঠে গেছে দরবার কক্ষ পর্যন্ত | সিড়ির দুপাশে দুটি সিংহের মূর্তি বসানো আছে যেটি প্যালেসের সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে |
তবে হাজারদুয়ারি প্যালাস প্রতি শুক্রবার বন্ধ থাকে |
এবার জেনে নেওয়া জাক হাজারদুয়ারীর সম্পর্কে কিছু কথা :
ইতিহাস :
'হাজারদুয়ারী' অর্থাৎ হাজার দরজা সহ প্রাসাদটি ভাগীরথী নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। প্রাসাদটি এর হাজারটি আসল এবং মিথ্যা দরজা থেকে নামটি পেয়েছে (এটিতে কল্পনা করার জন্য ৯০০ টি বাস্তব দরজা এবং ১০০ টি দরজা রয়েছে)। এটি মুর্শিদাবাদে আকর্ষণীয় প্রধান বিষয় এবং এটি সম্ভবত ভারতের অন্য ধর্মনিরপেক্ষ বিল্ডিংয়ের তুলনায় বেশি আগ্রহের বিষয় রয়েছে। স্থাপত্যশৈলীর কাজগুলিতে এটি একটি সর্বাধিক বিশিষ্ট স্থান ধারণ করে, এটি সর্বাধিক চমত্কার গৃহ। প্রাসাদটি যে ঘেরের অভ্যন্তরে অবস্থিত, তাকে নিজামাত দুর্গ বা নিজামাত কিলাও বলা হয়। এটি নবাব নাজিম হুমায়ূন জাহ হুমায়ূন জাঁ ১৮২৯-১৮৩৭ সালে তৈরি করেছিলেন। এই বিল্ডিংটির ভিত্তি নবাব দ্বারা তত্কালীন গভর্নর-জেনারেল লর্ড উইলিয়াম ক্যাভেনডিশ বেন্টিঙ্কের উপস্থিতিতে ২৯ আগস্ট ১৮২৯-এ নবাব স্থাপন করেছিলেন। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে এই বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজটি সম্পূর্ণ হয়েছিল।
হাজারদুয়ারী কমপ্লেক্সের মোট আয়তন ৪১ একর। এই চমত্কার বিল্ডিংটি ২০.৫ লক্ষ ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল। প্রাসাদে ১১৪ টি কক্ষ এবং ৮ টি গ্যালারী রয়েছে। ভবনটির স্থপতি ছিলেন বেঙ্গল কর্পস-এর কর্নেল ডানকান ম্যাকলিড, যিনি নিজেও কাজটি তদারকি করেছিলেন।
ঘড়ি মিনার :
হাজারদুয়ারীর মাঠের ভিতর ইমামবারা ও প্রাসাদের মধ্যে এই বড় ঘড়ি মিনার টি আছে | এই মিনারটির উপরে একটি বড় ঘড়ি আছে | লোক মুখে সোনা যায় যে এই ঘড়ির শব্দ শুনে মুর্শিদাবাদের সাধারণ মানুষ তখন সময় জানতে পারত |
এবার জেনে নেওয়া যাক এই মিনার সম্পর্কে কিছু কথা :
ইতিহাস :
ইমামবাড়া এবং প্রাসাদের মধ্যে, পুরানো মদিনার বৃত্তাকার কাপোলার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বা বরং বৈসাদৃশ্যপূর্ণ, এটি দুর্দান্ত স্থাপত্য সৌন্দর্যের এবং লাবণ্য উচ্চতার দীর্ঘ মিনার, যা কার্যকর আলোকসজ্জার উদ্দেশ্যে একটি দুর্দান্ত ফ্রেমের কাজ সরবরাহ করে। এটি একটি ভারী সাউন্ডিং বেল দ্বারা সুরক্ষিত হয় যা প্রচুর দূর থেকে শোনা যায়। নিচতলার ছাদের চার কোণে চারটি রাজমিস্ত্রির স্থাপন করা হয়েছে, চারটি রাজমিস্ত্রি সিংহ দ্বারা সমর্থিত। নদীর দিকে ডায়াল মুখগুলি, হ্যান্ডলগুলি এবং পরিসংখ্যানগুলি বিপরীত তীর থেকে দৃশ্যমান এবং ঘড়ির কাঁটা ঘনঘন সময় ব্যয় না করে "মুর্শিদাবাদের বড় বেন" বলা যেতে পারে। এই টাওয়ারটির নকশা করেছিলেন প্রাসাদটির স্থপতি কর্নেল ম্যাকলিয়ডের আদি সহকারী সাগর মিস্ত্রি।
ইমামবাড়া :
ইমামবাড়া এত হাজারদুয়ারীর ঠিক বিপরীত দিকে এ আছে | এটি একটি সাদা রঙের সুবিশাল প্রাসাদ | এখনে সাধারণ লোকের প্রবেশ বারণ আছে একমাত্র মহরমের সময় এটি সাধারণ লোকের জন্য খুলে দেওয়া হয় | সেই সময় এই খানে অনেক লোকের সমাবেশ হয় এবং এই সময় এখানে একটি খুব বড় মেলা ও হয় |
এই বার জেনে নেওয়া যাক ইমামবাড়া সম্পর্কে কিছু কথা :
ইতিহাস :
হাজারদুয়ারী প্রাসাদের উত্তর দিকের সমান্তরালে দাঁড়িয়ে আছে নিজামাত ইমামবাড়া, ১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত। সিরাজ-উদ-দৌলার নির্মিত কাঠের ইমামবাড়া টি ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে ডিসেম্বর পাঁচ মাস বয়সী নবাব হাসান আলী মির্জার (হাসান) খির খোতালের (বা দুধ ছাড়ানোর) অনুষ্ঠানের সময় মধ্যরাতে এটি ইউরোপীয়দের দেওয়া একটি পার্টি উপলক্ষে আতশবাজি থেকে আগুন ধরে যায় এবং পুরোপুরি পুড়ে যায়।"মদিনা" ব্যতীত একটিও জিনিস সংরক্ষণ করা হয়নি।এর পর নবাব হুমায়ুন জার পুত্র বাংলা, বিহার ও উরিষ্যার শেষ নবাব নাজিম মনসুর আলী খা ফেরদুন জা ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বর্তমানের ইমামবাড়া টি তৈরি করে | আগুনে ধ্বংস পুরানো ইমামবাড়ার ভিত্তি সিরাজ-উদ-দৌলা নিজেই করেছিলেন, যিনি নিজের হাতে ইট এবং মর্টার নিয়ে এসে ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। এই "মদিনা" যে জমির উপর নির্মিত হয়েছিল তার জমিটি ছয় ফুট গভীরতার মধ্যে খনন করে মক্কা থেকে পবিত্র মাটি নিয়ে এসে ভরাট করা হয়েছিল। বর্তমান ইমামবাড়াটি ৮০ ফুট দীর্ঘ এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের সাথে কেন্দ্রীয় ব্লকটি ৩০০ ফুট রয়েছে।
সিরাজ – উদ – দ্দৌলার মদিনা :
এই মদিনাটি সিরাজের সময়ের একমাত্র নিদর্শন | নবাব সিরাজদ্দৌলা নিজে এই মদিনার জন্য কারবালা থেকে পবিত্র মাটি মাথায় করে এনেছে | কথিত আছে নবাবের মা আমিনা বেগম প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তার পুত্র নবাব হলে মদিনার পবিত্র মাটি নিয়েএসে বহু মূল্যবান রত্ন দিয়ে দরজা তৈরি করবেন | শোনা যায় মীরকাশিম পরে নবাব হলে তিনি মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তরিত করবার সময় এই মদিনার ধনরত্ন মুঙ্গেরে নিয়ে যায় | এই মদিনার দরজাটি কেবল মাত্র মহরমের সময় খুলে দেওয়া হয়, আর বাকি সময় বন্ধ থাকে |
বাচ্চাওয়ালি তোপ :
হাজারদুয়ারীর উত্তর দিকে একটি বাধানো বেদির উপর এই বড় কামান টি রাখা আছে | এর ই নাম হলো বাচ্চাওয়ালি তোপ | এই কামান টিকে নবাব হুমায়ুন জার সময় নদী থেকে উদ্ধার করা হয় | ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে জনার্দন কর্মকার এই কামান তৈরি করেছে বলে শোনা যায় | এই কামান টিতে তিনটি চেম্বার আছে এবং কামান দাগবার সময় ১৮ সের বারুদ প্রয়োজন হত | লোক মুখে শোনা যায় যে এই কামান টি মাত্র একবার দাগা হয়েছিল এবং এর প্রচন্ড শব্দ ১০ মাইল পর্যন্ত চড়িয়ে পরেছিল এবং অনেক গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত ঘটে গিয়েছিল, সেই কারণে এই কামানের নাম হয় বাচ্চাওয়ালী তোপ | এর দৈর্ঘ্য ১৮ ফুট এবং ওজন ১৬,৮৮০ পাউন্ড | এই ঘটনার পরথেকে এই কামান দাগা বন্ধ হয়ে যায় |
ওয়াসেফ মঞ্জিল বা নিউ প্যালেস :
এটি হাজারদুয়ারীর পিছনের দিকের গেট দিয়ে বেরহলে কিছুটা গিয়ে দেখা যায় | এই প্রাসাদে প্রবেশ করা যায় কি না আমার জানা নেই কারণ আমি যে সময়ে গিয়ে ছিলাম এই প্রাসাদে কিছু কাজ হচ্ছিল তাই বন্ধ ছিল | আসলে এটি এখন মুর্শিদাবাদের সরকারী দপ্তর হিসাবে বব্যহার করা হয় | এই প্রাসাদের চার পাসে বড় বাগান আছে কিন্তু বাগান টি সে রকম ভাবে সাজানো নয় |
এই বার জেনে জেয়া যাক এই প্রাসাদ সম্পর্কে কিছু কথা :
ইতিহাস :
মুর্শিদাবাদের নবাব স্যার ওয়াসেফ আলী মির্জা নিজের বসবাসের জন্য এই প্রাসাদ টি তৈরি করে | এই প্রাসাদের দক্ষিন দিকের দরজা দিয়ে হাজারদুয়ারী যাওয়া যায় | সুরেন্দ্র বরাট নামে এক বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার এই প্রাসাদ টি তৈরি করে | এই প্রাসাদ টির উত্তর দিকে অতীতে একটি কৃত্রিম পাহাড় ও বাগান ছিল যা আজ বিনষ্ট হয়ে গেছে | বর্তমানে এই প্রাসাদ টি মুর্শিদাবাদের এষ্টেট ম্যানেজারের কাচারী ও বাসস্থান হিসাবে বব্যহার করা হয় |
চক মসজিদ :
এটি ও হাজারদুয়ারীর পিছনের গেট দিয়ে বেরহলে ওয়াসেফ মঞ্জিল টা পার্করে যেতে হয় | এই মসজিদ টি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত | এটির ভিতরে প্রবেশ করা যায় না কিন্তু আপনি বাইরে থেকে ফটো তুলতে পারেন |
এইবার জেনে নেওয়া যাক এর সম্পর্কে কিছু কথা :
ইতিহাস :
চক মসজিদ টি চক বাজারের পশ্চিম দিকে অবস্থিত | মীরজাফরের স্ত্রী মনি বেগম বিণাকার ওয়াজেদ আলীর নাম মসজিদটি দান করেছিলেন | এই খানে ওয়াজেদ আলীর সমাধি আছে | ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে মীরজাফর এই মসজিদ টি তৈরি করেন | এই মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২৫ ফুট | এই মসজিদ টির ৭ টি গম্বুজ আছে | আগে এই মসজিদটি তে নিয়মিত নামাজ কোরান পাঠ হতো |
এই বারের মত আমাদের মুর্শিদাবাদ ঘোরার পালা শেষ হলো | আসা করি আমার এই লেখা আপনাদের ভালো লেগেছে |
তবে এই টুকু বলতে পারি আমি যে মুর্শিদাবাদে ঘোরার জায়গা অনেক আছে যা আমি ও সব জায়গা দেখে উঠতে পারিনি | চেষ্টা করব আবার মুর্শিদাবাদে গিয়ে না দেখা জায়গা গুলো দেখে আপনাদের সামনে তুলে ধরার |

descriptionমুর্শিদাবাদ Murshidabad  EmptyRe: মুর্শিদাবাদ Murshidabad

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply