মুর্শিদাবাদ (প্রথম পর্ব)
মুর্শিদাবাদ ইতিহাসের শহর, আমাদের গর্বের শহর| যেখানে আমাদের শেষ বাংলার স্বাধীন সম্রাট লড়াই করেছিল তার বাংলার স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য| এই শহরের প্রতি কোনায় ছড়িয়ে আছে ইতিহাস, এখানের প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রাসাদের আলাদা আলাদা ইতিহাস আছে যা তারা প্রতিনিয়ত রাতের নিস্তব্দতায় বলে চলেছে| কেন জানিনা এই শহরটা আমাকে বরাবর টানে তার কাছে| তাই ঠিক করে ফেললাম যে মুর্শিদাবাদ যাব| যেমন ভাবা তেমন কাজ, আবর আমি স্মরনাপন্ন হলাম আমাদের সকলের প্রিয় গুগুল জ্যাঠার, সব সন্ধান পেলাম মোট ২৯ টা জায়গা| এখানে একটা কথা বলে রাখি যে কেউ যদি মনে করে থাকে যে নাইট টু নাইট টুরে গত মুর্শিদাবাদ টা ঘুরে ফেলবো তাহলে তকর ধারণা সুম্পূর্ণ ভুল| আমি নিজে ৩ দিন থেকে ও পুরো শহর দেখে উঠতে পারিনি|
যাই হোক হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস এর টিকিট কাটলাম, এই ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ যাবার সবথেকে ভালো ট্রেন, এসি ও চেয়ারকার, জেনারেল সবই আছে আপনি যাতে খুশি যেতে পারেন| ট্রেনটি ছারে কলকাতা স্টেশন থেকে সকাল ৬:৫০ মিনিটে আর মুর্শিদাবাদে পৌছায় ১০:২৭ মিনিটে|আমি বুকিং করেছিলাম মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত, অনেকে বহরমপুরে নেবে যায় কিন্তু বহরমপুর থেকে বেড়াতে যাবার জায়গা গুলো অনেক দুরে হয়|নেট থেকে অনেক গুলো হোটেলের নম্বর ও নাম নিয়েছিলাম| যেহেতু আমি অফসিজিনে গিয়েছিলাম তাই ওখানে গিয়ে আমার হোটেল পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি|তবে আপনারা যদি সিজেনে যান তবে অবশ্যই হোটেল বুকিং করে যাবেন| আপনাদের সুবিধার জন্য কযেকটি ভালো হোটেলের নম্বর ও নাম দিয়েদিলাম|
হোটেল নাম ও নম্বর :-
১)হোটেল অন্যেসা
মোবাইল নম্বর: ৯৪৩৪১১৫৪৭০
২)ফ্রেন্ডস হোটেল
মোবাইল নম্বর: ৯৭৩২৬০৯০৮৪
৩) হোটেল মঞ্জুসা
মোবাইল নম্বর:০৩৪৮২২৭০৩২১
ট্রেন থেকে নাবার সাথে সাথে এক টোটো দাদা এগিয়ে এসে বলে যে ভালো হোটেল আছেযাবেন ?তো আমি হোটেলের নাম জিগাসা করি তো হোটেল অন্যেসার কথা বলে, যেহেতু এই হোটেল টা ঠিক ইমামবাড়ার পিছনেই তাই এইটা আমার আগেই পছন্দ ছিলো| তাই এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম| স্টেশন থেকে দুটো টোটো নিলাম যেহেতু আমরা ৬ জন ছিলাম| স্টেশন থেকে টোটোতে যেতে যেতে টোটোর দাদা টা ই জিগাসা করলো যে আপনারা কদিন থাকবেন ?তো আমরা বললাম যে আমরা ৩ দিন থাকবো|তখন ওই দাদাই বলল যে ওনাকে যদি আমরা বলি তো উনিই আমাদের ভালো করে ঘুরিয়ে দেবে| হোটেলে গিয়ে টোটোর দাদা কে আমার ঘুরতে যাবার তালিকা টা দেখালাম, তালিকাটা দেখে দাদা টা খুশি ই হলো কারণ ওরা লোককে ঘোরাতে ভালবাসে ওদের শহরের কথা বলতে ভালোবাসে|তো ওই দাদাটার সাথে কথা বলে ঠিক হলো যে ৩ দিন পুরো ঘোরাবে তারসাথে ফেরার দিন ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবে| দুটো টোটো তে মোট ৩৬০০ টাকা নেবে বলল (টোটোর ভাড়া সিজেনে পরিবর্তন হতে পারে)|আমি রাজি হয়ে গেলাম|আমরা হোটেল অন্যেসাতে ছিলাম, হোটেল টা বেশ ভালো, ঘর গুলো ও বেশ বড় বড়| যেহেতু আমরা অফসিজেনে গিয়ে ছিলাম তাই ৮০০ টাকাতে একটা ৬ বেডের রুম পেয়ে গিয়েছিলাম|হোটেলে এসি রুম ও আছে|
টোটোর দাদা টা বলল যে আপনারা একিটু রেস্ট নিয়েনিন ঠিক ১টা নাগাদ এসে আপনাদের দুপুরের খাবার খেতে নিয়েযাব তারপর বেড়াতে বের হবো|ঠিক ১ টার সময় আমরা খেতে গেলাম গঙ্গার ধারে একটা হোটেলে|খাওয়া শেষ করে টোটো নিয়ে বের হয়ে পরলাম ইতিহাসের খোঁজে|
প্রথম দর্শনিয় স্থান:-
টোটোর দাদা টা আমাদের প্রথম নিয়ে যায় কাঠগোলা বাগান বাড়িতে|
এই বার প্রথমে একটু জেনে নেওয়া যাক এই কাঠগোলা বাগান বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে|
কাঠগোলা বাগান বাড়ি :-
মহিমাপুরে, নশিপুর রাজ বাড়ি থেকে কয়েক গজ দূরে কাঠগোলাতে জগৎ শেঠের পুরাতন ব্যাংকিং বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, যা ইতিহাস বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনার সাথে যুক্ত। "জগৎ শেঠ" দ্বারা (জগৎসাথ) বোঝানো হয়েছে "বিশ্বের ব্যাংকার" এবং তাদের লেনদেনগুলি ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের মতো বিস্তৃত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। "জগৎ শেঠ" নামটি প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে বাংলার ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত নাম হিসাবে পরিচিত। ধর্ম অনুসারে তারা ছিল জৈন, এবং বর্ণ অনুসারে মারোয়ারি। মূলত, "জগৎ শেঠের" নবাবের ব্যাংকার হিসাবে যে বিশাল পরিমাণ সম্পদ তিনি জমা করেছিলেন তার জন্য খ্যাতি লাভ করেছিল। "জগৎ শেঠের" জাদ বাণিজ্যে তাদের মূল ভাগ্য তৈরি করেছিল - সেই সময়গুলিতে বার্মার সবুজ জেড মুঘল দরবারদের দ্বারা অত্যন্ত মূল্যবান বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল কারণ এতে যদি বিষযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হত তবে এটি ভেঙে যাবে বা বর্ণহীন হবে। পান্নাগুলি তত্কালীন মুঘল শাসকরা এবং তাদের দরবারীরা অত্যন্ত মূল্যবান ছিল|
আদিনাথ মন্দির:-
কাঠগোলা একটি অলঙ্কৃত, চারতলা, মনোরম উদ্যানগুলির সাথে সজ্জিত প্রাসাদমণ্ডল। মেনশনের সামনের দিকটি সঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। কাঠগোলার অভ্যন্তরটি আমদানিকৃত উপকরণ দিয়ে ১৯ শতকের শেষদিকে তৈরি করা হয়েছিল। এখানে কাঠগোলা গার্ডেন হাউসে উইলিয়াম ওয়াটস এবং ওয়ালশ পলাশীর যুদ্ধের তিন দিন পরে মীর জাফর এবং রাজা রাই দুর্লভের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন এবং যুদ্ধের আগে তাদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ পরিশোধের বিষয়ে সম্মানিত করেছিলেন। ক্লাইভ, ওয়াটস, লুক স্ক্র্যাটন, মিরান এবং রাই দুর্লভও ২৯ শে জুন, ১৯৭৫ সালে এখানে উপস্থিত ছিলেন, যখন ক্লাইভ ওমিচাঁদের সাথে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কাঠগোলা কমপ্লেক্সটিতে ১৮ তম শতাব্দীর আদিনাথ মন্দির ছিটমহল রয়েছে, যা হ্যারেক চাঁদ ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেছিলেন। সাধারণত জৈন শৈলীর অলঙ্কার এই জৈন মন্দিরকে একটি অনন্য সৌন্দর্য দেয়। কাঠগোলা এবং আদিনাথ মন্দির ধনী জৈন বণিক ধনপত সিং দুগার এবং তাঁর পরিবারের জন্য একাকী হয়ে পড়েছিল।
মুর্শিদাবাদের শেঠগুলির উত্স হেরানন্দ সাহু, যাঁরা রাজপুতদের মাড়োয়ারি উপজাতির অন্তর্গত এবং যোধপুরের নিকটবর্তী তার জন্ম গ্রামে থেকে চলে এসেছিলেন এবং ১৬৫২ সালে পাটনায় স্থায়ী হয়েছিলেন | তাঁর সাত ছেলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ মানিক চাঁদ ঢাকা চলে যান, সেখান থেকে তিনি দেওয়ান ও তাঁর বন্ধু মুর্শিদকুলি খানকে অনুসরণ করে মুর্শিদাবাদে চলে যান। মুর্শিদকুলী খান তাঁর "চাহেল সেতুন" নামে প্রাসাদটি তৈরি করেছিলেন এবং মানিক চাঁদের প্রাসাদটি "চাহেল সেতুন" থেকে ৩ কিমি দূরে মহিমাপুরে ছিল । এখানে মানিক চাঁদ নবাবের ব্যাংকার এবং কনসোলারর হয়েছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লিতে বাংলার অবদানের অর্থ এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা প্রেরণের অভিযোগ আনা হয়েছিল। নবাবের ব্যক্তিগত ধনগুলি প্রায়শই তাঁর কাছে রাখতেন। মুর্শিদকুলী খানের সুপারিশে তিনি ১৭১৫ সালে দিল্লিতে সম্রাট ফররুখসিয়রের কাছ থেকে "শেঠ" উপাধি পেয়েছিলেন। একই সুপারিশ অনুসারে, তার গৃহীত পুত্র ফতেহ চাঁদ ১২২৪ সালে সম্রাট মুহম্মদ শাহের কাছ থেকে "জগৎ শেঠ" উপাধি পেয়েছিলেন।
অনান্য :-
কাঠগোলা বাগান বাড়ি তে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা তবে ২০ টাকার টিকিট এ শুধু বাড়ির নিচের অংশ টি ঘোরা যায়| উপরের অংশে যেতে গেলে আরো ১৫ টাকার টিকিট কাটতে হয়| এই টিকিট টি বাড়ির নিচের তলাতে এ পাবেন | এছাড়া আছে এই বাগান বাড়ির ভিতর চিড়িয়াখানা যাতে আছে বিভিন্ন পাখি যেমন ককটেল, বদরিকা, জাভা, ফিঞ্চ ইত্যাদি | এছাড়া আছে রঙিন মাছ | এই চিড়িয়াখানার প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা প্রতি জন| মন্দিরে প্রবেশের জন্য কোনো টাকা লাগেনা | মন্দিরের ঝিলে বোটিং করার ব্যবস্তা আছে তার টিকিট আলাদা করে কাটতে হয় |
আজ আপাতত এই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে বাকিটা |
ঐতিহাসিক সম্পর্কিত তথ্য গুগুল জ্যাঠার নিকট হইতে প্রাপ্ত |
মুর্শিদাবাদ ইতিহাসের শহর, আমাদের গর্বের শহর| যেখানে আমাদের শেষ বাংলার স্বাধীন সম্রাট লড়াই করেছিল তার বাংলার স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য| এই শহরের প্রতি কোনায় ছড়িয়ে আছে ইতিহাস, এখানের প্রতিটি ঐতিহাসিক প্রাসাদের আলাদা আলাদা ইতিহাস আছে যা তারা প্রতিনিয়ত রাতের নিস্তব্দতায় বলে চলেছে| কেন জানিনা এই শহরটা আমাকে বরাবর টানে তার কাছে| তাই ঠিক করে ফেললাম যে মুর্শিদাবাদ যাব| যেমন ভাবা তেমন কাজ, আবর আমি স্মরনাপন্ন হলাম আমাদের সকলের প্রিয় গুগুল জ্যাঠার, সব সন্ধান পেলাম মোট ২৯ টা জায়গা| এখানে একটা কথা বলে রাখি যে কেউ যদি মনে করে থাকে যে নাইট টু নাইট টুরে গত মুর্শিদাবাদ টা ঘুরে ফেলবো তাহলে তকর ধারণা সুম্পূর্ণ ভুল| আমি নিজে ৩ দিন থেকে ও পুরো শহর দেখে উঠতে পারিনি|
যাই হোক হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস এর টিকিট কাটলাম, এই ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ যাবার সবথেকে ভালো ট্রেন, এসি ও চেয়ারকার, জেনারেল সবই আছে আপনি যাতে খুশি যেতে পারেন| ট্রেনটি ছারে কলকাতা স্টেশন থেকে সকাল ৬:৫০ মিনিটে আর মুর্শিদাবাদে পৌছায় ১০:২৭ মিনিটে|আমি বুকিং করেছিলাম মুর্শিদাবাদ পর্যন্ত, অনেকে বহরমপুরে নেবে যায় কিন্তু বহরমপুর থেকে বেড়াতে যাবার জায়গা গুলো অনেক দুরে হয়|নেট থেকে অনেক গুলো হোটেলের নম্বর ও নাম নিয়েছিলাম| যেহেতু আমি অফসিজিনে গিয়েছিলাম তাই ওখানে গিয়ে আমার হোটেল পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি|তবে আপনারা যদি সিজেনে যান তবে অবশ্যই হোটেল বুকিং করে যাবেন| আপনাদের সুবিধার জন্য কযেকটি ভালো হোটেলের নম্বর ও নাম দিয়েদিলাম|
হোটেল নাম ও নম্বর :-
১)হোটেল অন্যেসা
মোবাইল নম্বর: ৯৪৩৪১১৫৪৭০
২)ফ্রেন্ডস হোটেল
মোবাইল নম্বর: ৯৭৩২৬০৯০৮৪
৩) হোটেল মঞ্জুসা
মোবাইল নম্বর:০৩৪৮২২৭০৩২১
ট্রেন থেকে নাবার সাথে সাথে এক টোটো দাদা এগিয়ে এসে বলে যে ভালো হোটেল আছেযাবেন ?তো আমি হোটেলের নাম জিগাসা করি তো হোটেল অন্যেসার কথা বলে, যেহেতু এই হোটেল টা ঠিক ইমামবাড়ার পিছনেই তাই এইটা আমার আগেই পছন্দ ছিলো| তাই এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম| স্টেশন থেকে দুটো টোটো নিলাম যেহেতু আমরা ৬ জন ছিলাম| স্টেশন থেকে টোটোতে যেতে যেতে টোটোর দাদা টা ই জিগাসা করলো যে আপনারা কদিন থাকবেন ?তো আমরা বললাম যে আমরা ৩ দিন থাকবো|তখন ওই দাদাই বলল যে ওনাকে যদি আমরা বলি তো উনিই আমাদের ভালো করে ঘুরিয়ে দেবে| হোটেলে গিয়ে টোটোর দাদা কে আমার ঘুরতে যাবার তালিকা টা দেখালাম, তালিকাটা দেখে দাদা টা খুশি ই হলো কারণ ওরা লোককে ঘোরাতে ভালবাসে ওদের শহরের কথা বলতে ভালোবাসে|তো ওই দাদাটার সাথে কথা বলে ঠিক হলো যে ৩ দিন পুরো ঘোরাবে তারসাথে ফেরার দিন ট্রেনে তুলে দিয়ে আসবে| দুটো টোটো তে মোট ৩৬০০ টাকা নেবে বলল (টোটোর ভাড়া সিজেনে পরিবর্তন হতে পারে)|আমি রাজি হয়ে গেলাম|আমরা হোটেল অন্যেসাতে ছিলাম, হোটেল টা বেশ ভালো, ঘর গুলো ও বেশ বড় বড়| যেহেতু আমরা অফসিজেনে গিয়ে ছিলাম তাই ৮০০ টাকাতে একটা ৬ বেডের রুম পেয়ে গিয়েছিলাম|হোটেলে এসি রুম ও আছে|
টোটোর দাদা টা বলল যে আপনারা একিটু রেস্ট নিয়েনিন ঠিক ১টা নাগাদ এসে আপনাদের দুপুরের খাবার খেতে নিয়েযাব তারপর বেড়াতে বের হবো|ঠিক ১ টার সময় আমরা খেতে গেলাম গঙ্গার ধারে একটা হোটেলে|খাওয়া শেষ করে টোটো নিয়ে বের হয়ে পরলাম ইতিহাসের খোঁজে|
প্রথম দর্শনিয় স্থান:-
টোটোর দাদা টা আমাদের প্রথম নিয়ে যায় কাঠগোলা বাগান বাড়িতে|
এই বার প্রথমে একটু জেনে নেওয়া যাক এই কাঠগোলা বাগান বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে|
কাঠগোলা বাগান বাড়ি :-
মহিমাপুরে, নশিপুর রাজ বাড়ি থেকে কয়েক গজ দূরে কাঠগোলাতে জগৎ শেঠের পুরাতন ব্যাংকিং বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, যা ইতিহাস বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমালোচনার সাথে যুক্ত। "জগৎ শেঠ" দ্বারা (জগৎসাথ) বোঝানো হয়েছে "বিশ্বের ব্যাংকার" এবং তাদের লেনদেনগুলি ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের মতো বিস্তৃত হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। "জগৎ শেঠ" নামটি প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে বাংলার ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত নাম হিসাবে পরিচিত। ধর্ম অনুসারে তারা ছিল জৈন, এবং বর্ণ অনুসারে মারোয়ারি। মূলত, "জগৎ শেঠের" নবাবের ব্যাংকার হিসাবে যে বিশাল পরিমাণ সম্পদ তিনি জমা করেছিলেন তার জন্য খ্যাতি লাভ করেছিল। "জগৎ শেঠের" জাদ বাণিজ্যে তাদের মূল ভাগ্য তৈরি করেছিল - সেই সময়গুলিতে বার্মার সবুজ জেড মুঘল দরবারদের দ্বারা অত্যন্ত মূল্যবান বলে বিশ্বাস করা হয়েছিল কারণ এতে যদি বিষযুক্ত খাবার পরিবেশন করা হত তবে এটি ভেঙে যাবে বা বর্ণহীন হবে। পান্নাগুলি তত্কালীন মুঘল শাসকরা এবং তাদের দরবারীরা অত্যন্ত মূল্যবান ছিল|
আদিনাথ মন্দির:-
কাঠগোলা একটি অলঙ্কৃত, চারতলা, মনোরম উদ্যানগুলির সাথে সজ্জিত প্রাসাদমণ্ডল। মেনশনের সামনের দিকটি সঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। কাঠগোলার অভ্যন্তরটি আমদানিকৃত উপকরণ দিয়ে ১৯ শতকের শেষদিকে তৈরি করা হয়েছিল। এখানে কাঠগোলা গার্ডেন হাউসে উইলিয়াম ওয়াটস এবং ওয়ালশ পলাশীর যুদ্ধের তিন দিন পরে মীর জাফর এবং রাজা রাই দুর্লভের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন এবং যুদ্ধের আগে তাদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ পরিশোধের বিষয়ে সম্মানিত করেছিলেন। ক্লাইভ, ওয়াটস, লুক স্ক্র্যাটন, মিরান এবং রাই দুর্লভও ২৯ শে জুন, ১৯৭৫ সালে এখানে উপস্থিত ছিলেন, যখন ক্লাইভ ওমিচাঁদের সাথে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কাঠগোলা কমপ্লেক্সটিতে ১৮ তম শতাব্দীর আদিনাথ মন্দির ছিটমহল রয়েছে, যা হ্যারেক চাঁদ ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈরি করেছিলেন। সাধারণত জৈন শৈলীর অলঙ্কার এই জৈন মন্দিরকে একটি অনন্য সৌন্দর্য দেয়। কাঠগোলা এবং আদিনাথ মন্দির ধনী জৈন বণিক ধনপত সিং দুগার এবং তাঁর পরিবারের জন্য একাকী হয়ে পড়েছিল।
মুর্শিদাবাদের শেঠগুলির উত্স হেরানন্দ সাহু, যাঁরা রাজপুতদের মাড়োয়ারি উপজাতির অন্তর্গত এবং যোধপুরের নিকটবর্তী তার জন্ম গ্রামে থেকে চলে এসেছিলেন এবং ১৬৫২ সালে পাটনায় স্থায়ী হয়েছিলেন | তাঁর সাত ছেলের মধ্যে জ্যেষ্ঠ মানিক চাঁদ ঢাকা চলে যান, সেখান থেকে তিনি দেওয়ান ও তাঁর বন্ধু মুর্শিদকুলি খানকে অনুসরণ করে মুর্শিদাবাদে চলে যান। মুর্শিদকুলী খান তাঁর "চাহেল সেতুন" নামে প্রাসাদটি তৈরি করেছিলেন এবং মানিক চাঁদের প্রাসাদটি "চাহেল সেতুন" থেকে ৩ কিমি দূরে মহিমাপুরে ছিল । এখানে মানিক চাঁদ নবাবের ব্যাংকার এবং কনসোলারর হয়েছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে দিল্লিতে বাংলার অবদানের অর্থ এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা প্রেরণের অভিযোগ আনা হয়েছিল। নবাবের ব্যক্তিগত ধনগুলি প্রায়শই তাঁর কাছে রাখতেন। মুর্শিদকুলী খানের সুপারিশে তিনি ১৭১৫ সালে দিল্লিতে সম্রাট ফররুখসিয়রের কাছ থেকে "শেঠ" উপাধি পেয়েছিলেন। একই সুপারিশ অনুসারে, তার গৃহীত পুত্র ফতেহ চাঁদ ১২২৪ সালে সম্রাট মুহম্মদ শাহের কাছ থেকে "জগৎ শেঠ" উপাধি পেয়েছিলেন।
অনান্য :-
কাঠগোলা বাগান বাড়ি তে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা তবে ২০ টাকার টিকিট এ শুধু বাড়ির নিচের অংশ টি ঘোরা যায়| উপরের অংশে যেতে গেলে আরো ১৫ টাকার টিকিট কাটতে হয়| এই টিকিট টি বাড়ির নিচের তলাতে এ পাবেন | এছাড়া আছে এই বাগান বাড়ির ভিতর চিড়িয়াখানা যাতে আছে বিভিন্ন পাখি যেমন ককটেল, বদরিকা, জাভা, ফিঞ্চ ইত্যাদি | এছাড়া আছে রঙিন মাছ | এই চিড়িয়াখানার প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা প্রতি জন| মন্দিরে প্রবেশের জন্য কোনো টাকা লাগেনা | মন্দিরের ঝিলে বোটিং করার ব্যবস্তা আছে তার টিকিট আলাদা করে কাটতে হয় |
আজ আপাতত এই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বে বাকিটা |
ঐতিহাসিক সম্পর্কিত তথ্য গুগুল জ্যাঠার নিকট হইতে প্রাপ্ত |