হাওড়া থেকে সকালের বর্ধমান লোকালে উঠে পড়লাম । এক্সপ্রেসের কনফার্ম সিটের জায়গায় বর্ধমান লোকালে উঠে দাঁড়িয়েই কিছুটা যেতে হল।পরে অবশ্য সিট পেয়েছিলাম।ব্যান্ডেল স্টেশন আসতে নেমে পড়লাম।আমরা মোট ৪ জন গেছিলাম। (৩ জন বড় ও ১ জন ছোট বাচ্চা।)

ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে বেড়িয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে শেয়ারে অটো করে প্রথমে গায়ত্রী আশ্রমে পৌঁছালাম ।অটোভাড়া পড়ল ৮০ টাকা।খুব সুন্দর আশ্রম ।১২ জায়গার শিবলিঙ্গ,শিবের নটরাজ মূর্তি ,যজ্ঞশালা,সপ্তঋষি মন্দির,আর অপূর্ব আশ্রম প্রাঙ্গন ।সেখানে ভাল করে ঘুরে ফটো তুলে বেরোতেই ৯:৫০ বাজল।ঐ আশ্রম থেকে ওখানে তৈরী ঘি,আর হরিদ্বারের ধূপকাঠি কিনলাম।

এরপর অটো করে লাহিড়ী বাবার আশ্রমে পৌঁছালাম ।অটোভাড়া পড়ল ৩০ টাকা।সত্যি নয়ন ভরানো এই আশ্রম ।এখানে ঢুকতে গেলে মাথা শরীর কাপড় দিয়ে ঢেকে ঢুকতে হয় মেয়েদের।আর সেরকম ওড়না না থাকার জন্য ওড়না ভাড়া করতে হল।জুতো রাখার জন্য ও ওড়না ভাড়া পড়ল (৬+৫)=১১ টাকা।এর ভিতরে আছে মা দূর্গার মন্দির,ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির, মুসলিম, খ্রীষ্ট ধমের্র সমাহার,লাহিড়ী বাবার বিশাল মূর্তি, পুরো মন্দির ও মূর্তি সকল সাদা মার্বেল পাথরে গড়া।শিবের বিশাল মূর্তি একটি খড়ের ছাউনি দেওয়া ঘরের মধ্যে,যার উপর থেকে অবিরত জল পড়ছে।এখানে ভোগ পাওয়া যায় দুপুর ১ টা থেকে।আশ্রমের ভিতর ছবি তোলা নিষেধ।কিন্তু আমাদের আরও অন্য জায়গায় ঘোরার প্ল্যান থাকায় আমরা র ওখানে কালবিলম্ব না করে ওখান থেকে রওনা দিলাম অটো করে ওলাইচন্ডী মাতা মন্দিরের উদ্দেশ্যে ।

আমাদের যাওয়ার কথা ছিল বেলুর মঠের আদলে তৈরী ওলাইচন্ডী মাতা মন্দিরে যাওয়ার।কিন্তু সঠিক ঠিকানা মনে না থাকায় আমরা অন্য ওলাইচন্ডী মাতা মন্দিরে পৌঁছালাম রির্সাভ অটো করে।অটো নিল ২৫০ টাকা।মনটা একটু বিষন্ন হল।সকাল থেকেই সব ওলটপালট হচ্ছে ।যাইহোক এই মন্দির টিও ভাল।ঠাকুর প্রনাম সেরে বেরোনোর সময় ঠাকুরমশাই সন্দেশ বাতাসা দিলেন,তা খেয়ে এই মন্দির দেখেই মনকে সন্তুষ্ট করলাম।মনকে বোঝালাম পরেরবার এসে মনিপুরের,ওলাইচন্ডী মাতা মন্দির দর্শন করে যাব।এই মন্দিরের কোন ছবি তোলা নিষেধ।তাই তোলাও হল না।এই মন্দির দর্শন করে আমরা ঐ রির্সাভ করা অটো করেই রওনা হলাম ব্যান্ডেল চার্চে র দিকে।আগে কোনদিন আমরা ব্যান্ডেল চার্চে আসিনি।তাই পুরো টাই ঘুরে দেখলাম।যীশু,মা মেরীর স্ট্যাচু, প্রার্থনা র বিশাল হল ঘর,মূর্তি সকল,ছাদে আরাধনার জায়গা,সব জায়গা।কমবেশি সব মানুষেরই এই জায়গা ঘোরা,তাই বিস্তারিত এই জায়গা সম্পর্কে লিখে আর দীর্ঘায়িত করছি না।

ব্যান্ডেল চার্চ থেকে অটো করে হুগলী পৌছালাম ।অটোভাড়া নিল ৩৫ টাকা।কি হিসাব ধরে অটোওয়ালা এই ভাড়া নিলেন তা যদিও আমাদের বোধগম্য র বাইরে।

হুগলী থেকে ট্রেনে করে আমরা শ্রীরামপুর পৌছালাম ।ওখান থেকে টোটো করে শ্রীরামপুর রাজবাড়ী গেলাম।রাজবাড়ি র ভিতর দেখতে যাওয়ার কথা বলতে রাজবাড়ী র যে কেয়ার টেকার. খুব জঘন্য ভাবে খেঁকিয়ে উঠল,এসবের জন্য তার নাকি চা খাওয়ার সময় নষ্ট হচ্ছে।যাইহোক ওনার সাথে মুখ নষ্ট না করে আমরা রাজবাড়ীর ভিতর ঢুকে ঘুরে দেখলাম।কিছু ছবি তুললাম।ওখানে আমাদের ডেনমার্ক এ যাওয়ার ছিল,কিন্তু সময়ের অভাবে যাওয়া হল না।পরে আবার আসা যাবে ভেবে অতঃপর ছানার কেক খেয়ে আবার ওখান থেকে অটো করে শ্রীরামপুর ফেরীঘাটে পৌছালাম ।অটো নিল ৩০ টাকা।ফেরিঘাটের ভটভটিতে ওঠার ভাড়া পড়ল ১৮ টাকা।ওতে করে আমরা ব্যারাকপুরে পৌঁছালাম।

ব্যারাকপুর ধোবিঘাট থেকে অটোতে করে আমরা পৌঁছালাম দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে তৈরী অন্নপূর্ণার মন্দিরে।রিসার্ব অটো নিল ১৩০ টাকা।তৈরী করেছেন রানী রাসমনী র ছোট মেয়ে জগদম্বা ও জামাই মুকুট মোহন বিশ্বাস ।দক্ষিণেশ্বরের নিয়মেই এটি চালিত হয়।বিকেল ৪:৩০ ঘটে সময় মন্দির খুললে ঠাকুর দর্শন করে আমরা টোটো করে ব্যারাকপুর স্টেশনে পৌছালাম ।শিয়ালদহ আসার জন্য টিকিট কাটলাম।টিকিট পড়ল ৩০ টাকা।

আজকের মত আমাদের ঘোরা র পর্ব শেষ হল।যদি কোন ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে, অবশ্যই জানাবেন।