Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


রেচন [Excretion]

descriptionরেচন [Excretion] Emptyরেচন [Excretion]

more_horiz

রেচন [Excretion]





►রেচনের সংজ্ঞা এবং তার ব্যাখ্যা :-

► রেচন অঙ্গ ও তন্ত্র :-

►রেচন পদার্থ :-

►রেচনের গুরুত্ব :-

►উদ্ভিদের রেচন:-

♦ উদ্ভিদের রেচনের বৈশিষ্ট্য:-

►উদ্ভিদের রেচন পদার্থ ত্যাগের পদ্ধতি :-

►উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ এবং তাদের অর্থকরী গুরুত্ব :-

(A) নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ:-

(B) নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ:-

►প্রাণীদের রেচন :-

♦ প্রাণীদের রেচনের বৈশিষ্ট্য :-

►মানবদেহের রেচন তন্ত্র :-

►বৃক্কের গঠন ও কাজ :-

[i] বহির্গঠন:-

[ii] অন্তর্গঠন:-

►নেফ্রন : কিডনির বা বৃক্কের গঠনগত এবং কার্যগত একক:-

[১] ম্যালপিজিয়ান করপাসল :-

[২] বৃক্কীয় নালিকা :-

[৩] সংগ্রাহী নালিকা

► প্রয়োজনীয় পদার্থ শোষিত হওয়ার পর বৃক্কের মাধ্যমে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্যপদার্থের বহিস্করণ :-

• মুত্র কী ?

• মুত্রের উপাদান:-

• মুত্রের প্রধান অজৈব পদার্থগুলি :-

• মুত্রের প্রধান জৈব পদার্থগুলি :-

►প্রাণীর রেচনে ত্বক বা চর্ম, ফুসফুস এবং যকৃতের ভূমিকা:-

♦ প্রাণীদের রেচনে চর্ম বা ত্বকের ভূমিকা:-

♦ প্রাণীদের রেচনে ফুসফুসের ভূমিকা:-

♦ প্রাণীদের রেচনে যকৃতের ভূমিকা:-

►উদ্ভিদ ও প্রাণীর রেচন ক্রিয়ার পার্থক্য:-

♦ রেচনের ওপর উদ্ভুদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা:-

♦ রেচন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য :-

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
►রেচনের সংজ্ঞা এবং তার ব্যাখ্যা [Definition and Explanation of Excretion] :- জীবদেহে বিপাক ক্রিয়ার ফলে উত্পন্ন অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক উপজাত দ্রব্যসমূহ যে জৈবিক ক্রিয়ার মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারিত হয় অথবা অদ্রাব্য কোলয়েড কণা হিসেবে দেহের কোনও অংশে সাময়িক ভাবে সঞ্চিত থাকে, সেই জৈবনিক ক্রিয়াকে রেচন [Excretion] বলে ।



► রেচন অঙ্গ ও তন্ত্র [Excretory organs and system]:- উদ্ভিদের কোনো নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ ও রেচন তন্ত্র থাকে না । প্রাণীদেহে রেচন ক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য কতকগুলি নির্দিষ্ট যন্ত্র থাকে । রেচনে সাহায্যকারী এই যন্ত্রগুলিকে রেচন অঙ্গ [Excretory Organs] বলে । রেচনে সাহায্যকারী অঙ্গগুলো মিলিত হয়ে যে তন্ত্র গঠিত হয় তাকে রেচনতন্ত্র [Excretory System] বলে । এককোষী প্রাণীদের নির্দিষ্ট কোনো রেচন অঙ্গ বা তন্ত্র থাকে না, এদের সংকোচি গহ্বর এবং কোষপর্দা রেচনে সহায়তা করে । স্পঞ্জ এবং হাইড্রার দেহেও কোনও নির্দিষ্ট রেচন থাকে না । চ্যাপ্টা কৃমিদের (প্লানোরিয়া, ফিতাকৃমি ইত্যাদি) রেচন অঙ্গ হল ফ্লেমকোষ বা শিখাকোষ [flame cells] । কেঁচো, জোঁক, পেরিপেটাস এবং অ্যাম্পিঅক্সাসের রেচন অঙ্গ হল নেফ্রিডিয়া [nephridia] । পতঙদের ( আরশোলা, ফড়িং, প্রজাপতি, মশা ইত্যাদি ) রেচন অঙ্গ হল ম্যালপিজিয়ান নালিকা [malpighian tubules]। চিংড়ির রেচন অঙ্গ হল সবুজ গ্রন্থি বা শুঙ্গ গ্রন্থি [green gland] । মাকড়সা ও কাঁকড়া বিছের রেচন অঙ্গ হল কক্সাল গ্রন্থি [coxal gland] । শামুক, ঝিনুক এবং মাছ থেকে স্তন্যপায়ী পর্যন্ত সমস্ত মেরুদন্ডী প্রাণীদের রেচন অঙ্গ হল বৃক্ক বা কিডনী [kidney] ।



►রেচন পদার্থ [Excretory products]:- জীব দেহকোষে উত্পন্ন বিপাকজাত দূষিত পদার্থগুলোকে রেচন পদার্থ [Excretory products] বলা হয় । মল বিপাক ক্রিয়ায় উত্পন্ন হয় না বলে মলকে রেচন পদার্থ বলা হয় না । প্রাণীদেহে অপাচ্য খাদ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় মলে পরিণত হয় এবং প্রয়োজনকালে দেহ থেকে বর্জপদার্থ হিসাবে নির্গত হয় ।

♦ উদ্ভিদ ও প্রাণীর রেচন পদার্থগুলোকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যেতে পারে, যথা:-

(i) নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ:- উদ্ভিদের গঁদ, রজন, তরুক্ষীর, ধাতব কেলাস ইত্যাদি এবং প্রাণীদের কার্বন ডাই-অক্সাইড, কিটোনবডি হল নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ ।



(ii) নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ:- উদ্ভিদের উপক্ষার ; যেমন নিকোটিন, কুইনাইন, ডাটুরিন, রেসারপিন, এবং প্রাণীদের ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, বিলিরুবিন, বিলিভারডিন প্রভৃতি হল নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ ।



(iii) কার্বনযুক্ত রেচন পদার্থ:- উদ্ভিদের ট্যানিন এবং প্রাণীদের কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) ।



►রেচনের গুরুত্ব [Importance of Excretion]:- জীবদেহে রেচনের নানা রকমের গুরুত্ব রয়েছে যেমন:-

[i] জীবদেহের সুস্থতা রক্ষা:- যেহেতু রেচন পদার্থ ক্ষতিকর তাই দেহ থেকে রেচন পদার্থ অপসারিত হয়ে জীবদেহের স্বাভাবিক সুস্থতা বজায় রাখে ।

[ii] প্রোটোপ্লাজমীয় বস্তুর সমতা রক্ষা:- প্রতিটি কোষের প্রোটোপ্লাজমে অবিরাম বিপাকীয় ক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে । অপচিতি বিপাকের ফলে যেসব দূষিত পদার্থের সৃষ্টি হয় সেগুলি কোষ থেকে দূরীভূত না হলে প্রোটোপ্লাজমের বিপাকীয় ক্রিয়া বন্ধ হয়ে কোষের মৃত্যু ঘটত, সুতরাং রেচন ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রোটোপ্লাজম থেকে দুষিত পদার্থের অপসারণ ঘটে -এর ফলে প্রোটোপ্লাজমীয় বিভিন্ন বস্তুর পরিমাণের সমতা বজায় থাকে এবং বিপাকীয় ক্রিয়া গুলি স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে ।

[iii] প্রাকৃতিক সম্পদের আবর্তন:- জীব পরিবেশ থেকে যে সব মৌলগুলি গ্রহন করে, রেচনের মাধ্যমে অধিকাংশ মৌল পরিবেশে ফিরিয়ে দিয়ে পরিবেশে মৌলগুলির স্বকীয়তা বজায় রাখে ।

[iv] অর্থনৈতিক গুরুত্ব:- উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ মানুষের নানান কাজে লাগে । ভেষজ শিল্পে, চর্মশিল্পে, আঠা প্রস্তুতিতে এবং কাষ্ঠশিল্প ইত্যাদিতে উদ্ভিদ রেচন পদার্থের অপরিসীম অর্থকরী গুরুত্ব রয়েছে ।

►রেচনের উদ্দেশ্য:- কলা কোষে উত্পন্ন বিপাকজাত দুষিত পদার্থগুলিকে কোষ থেকে অপসারণ করা এবং প্রোটোপ্লাজমের জীবজ ক্রিয়া গুলোকে স্বাভাবিক রাখাই হল রেচনের প্রধান উদ্দেশ্য ।

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
►উদ্ভিদের রেচন [Excretion in Plants]:-

♦ উদ্ভিদের রেচনের বৈশিষ্ট্য [Characteristics of plant excretion] :-

(ক) উদ্ভিদের রেচন পদার্থগুলি প্রাণীদের তুলনায় কম জটিল এবং কম ক্ষতিকারক ।

(খ) উদ্ভিদ দেহে বিপাকীয় ক্রিয়ার হার কম হওয়ায় এদের দেহে রেচন পদার্থও কম উত্পন্ন হয় ।

(গ) উদ্ভিদ দেহে উত্পন্ন রেচন পদার্থগুলির অধিকাংশই উপচিতি-বিপাকের মাধ্যমে বিভিন্ন কোশীয় দ্রব্যে সংশ্লেষিত হয় ।

(ঘ) উদ্ভিদের রেচন পদার্থগুলির অধিকাংশই কোষে কেলাস বা কলোয়েড হিসাবে সঞ্চিত থাকে ।

(ঙ) উদ্ভিদ দেহে কোনো নির্দিষ্ট রেচন অঙ্গ বা তন্ত্র না থাকায় প্রাণীদের মতো উদ্ভিদেরা কিন্তু রেচন পদার্থ দেহ থেকে নির্গত করতে পারে না ।



►উদ্ভিদের রেচন পদার্থ ত্যাগের পদ্ধতি [Means of Removal of Excretory Products in Plants]:- কয়েকটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোনও কোনও উদ্ভিদ রেচন পদার্থ ত্যাগ করে, যেমন:

[i] পত্রমোচন:- পর্ণমোচী উদ্ভিদ, যেমন: শিমুল, শিরিষ, আমড়া, অশ্বত্থ ইত্যাদি বছরের নির্দিষ্ট ঋতুতে পত্রমোচন করে পাতায় সঞ্চিত রেচন পদার্থ ত্যাগ করে । বহু বর্ষজীবী চিরহরিৎ উদ্ভিদেরা সারা বছর ধরে অল্পবিস্তর পাতা ঝরিয়ে রেচন পদার্থ ত্যাগ করে ।

[ii] বাকল মোচন:- কোনও কোনও উদ্ভিদ যেমন: অর্জুন, পেয়ারা, ইত্যাদি গাছ বাকল বা ছাল মোচনের মাধ্যমে ত্বকে সঞ্চিত রেচন পদার্থ ত্যাগ করে ।

[iii] ফল মোচন:- লেবু, তেঁতুল, আপেল ইত্যাদি ফলের ত্বকে বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড (যেমন; সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড) রেচন পদার্থ হিসাবে সঞ্চিত থাকে । ওই সব উদ্ভিদ পরিণত ফল মোচন করে দেহ থেকে রেচন পদার্থ অপসারণ করে ।



►উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ এবং তাদের অর্থকরী গুরুত্ব [Types of Excretory Products and their economic importance in Plants]:-

(A) নাইট্রোজেনবিহীন রেচন পদার্থ:-

[i] গঁদ বা গাম [Gums]:- গঁদ জলে দ্রবণীয় এক রকম বর্জ্য পদার্থ । সাধারণত সেলুলোজ দ্বারা গঠিত উদ্ভিদের কোষ প্রাচীর বিনষ্ট হলে গঁদ উত্পন্ন হয় । প্রাকৃতিকভাবে বা কোনও আঘাতের ফলে গঁদ উদ্ভিদের কান্ড ও শাখার বাকল থেকে নিঃসৃত হয় ।

• উৎস:- সজিনা, আমড়া, শিরিষ, জিওল, বাবলা, শিমূল প্রভৃতি গাছের ছাল বা বাকল থেকে গঁদ নিঃসৃত হয় ।

• অর্থকরী গুরুত্ব:- গঁদ বিভিন্ন শিল্পে, বিশেষ করে কাষ্ঠশিল্প এবং বই বাঁধাই-শিল্পে আঠা হিসাবে ব্যবহৃত হয় । জুতা তৈরি ও মেরামতিতে গঁদ আঠা হিসাবে ব্যবহৃত হয় । কর্পুর পায়েস, মিষ্টান্ন ইত্যাদি প্রস্তুতিতে গঁদ ব্যবহৃত হয় ।



[ii] রজন বা রেজিন [Resins]:- রজন ঈষৎ হলুদ রংয়ের জলে অদ্রবণীয় এক ধরনের জটিল বর্জ্য পদার্থ । রজন তিন রকমের হয় । যথা:-

(ক) কঠিন রজন [Hard resin] : চাঁচ গালা এই রকম রজনের উদাহরণ । এই রকম রজন অ্যালকোহলে দ্রবণীয় ।

(খ) ওলিও রজন [Oleo resin]: তরল রজন । টারপেনটাইন এই রকম রজনের উদাহরণ ।

(গ) গঁদ রজন [Gum resin]: এই রকম রজন গঁদের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে, তাই অর্ধ-তরল এবং আঠাল । ধুনা, হিং ইত্যাদি গঁদ রজনের উদাহরণ ।

• উৎস [Source]:- রজন সাধারণত পাইন গাছের কান্ড, শাখাপ্রশাখা ও পাতার রজন নালীতে সঞ্চিত থাকে । প্রাকৃতিকভাবে বা কোনও আঘাতের ফলে রজন উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে নিসৃত হয় । শাল গাছের বাকলে ধুনো সঞ্চিত থাকে । হিং পাওয়া যায় উক্ত গাছের ছালে ।

• অর্থকরী গুরুত্ব:- গালা , টারপেনটাইন ভার্নিশ শিল্পে অর্থাৎ কাঠ রং করতে ও পালিশ করতে এবং সাবান ও ফিনাইল প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত হয় । ধুনা পূজা-পার্বনে ব্যবহৃত হয় । হিং মিষ্টান্ন, পায়েস তৈরিতে ও মশলা রূপে ব্যবহৃত হয় ।



[iii] তরুক্ষীর বা ল্যাটেক্স [Latex]:- তরুক্ষীর প্রোটিন, গঁদ, রজন, উপক্ষার প্রভৃতি বস্তুর জলীয় মিশ্রণ । এটি উদ্ভিদের দীর্ঘ তরুক্ষীর কোষ [laticiferous cell] এবং তরুক্ষীর নালীতে [laticiferous duct] সঞ্চিত থাকে । বট, আকন্দ, পেঁপে, কাঁঠাল, রবার প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর সাদা দুধের মতো হয় । কলা, তামাক প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর সাদা জলের মতো হয় । আফিং, শিয়ালকাঁটা প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর হলুদ রং -এর হয় ।

• উৎস:- তরুক্ষীর বট, আকন্দ, পেঁপে, কাঁঠাল, রবার, ফণীমনসা, কলা, করবি, তামাক, আফিং, শিয়ালকাঁটা প্রভৃতি গাছের তরুক্ষীর কোষে বা তরুক্ষীর নালীতে সঞ্চিত থাকে । প্রাকৃতিকভাবে বা কোনও আঘাতের ফলে ওই সমস্ত উদ্ভিদের কোনো অঙ্গ বিচ্ছিন্ন হলে তরুক্ষীর নিসৃত হয় ।

• অর্থকরী গুরুত্ব:- হিভিয়া ব্রাসিলিয়েনসিস (Hevea brasiliensis) নামে প্যারা-রবার গাছের তরুক্ষীর থেকে বাণিজ্যিক রবার প্রস্তুত হয়, যা থেকে টায়ার, টিউব, ইরেজার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম প্রভৃতি নানা রকমের রবারের জিনিস প্রস্তুত হয় । পেঁপে গাছের তরুক্ষীরে প্যাপাইন (Papine) নামে একরকম উৎসেচক থাকে, যা প্রোটিন পরিপাকে সহায়তা করে । উদ্ভিদদেহের তরুক্ষীর ক্ষত সরাতে সাহায্য করে ।



(B) উদ্ভিদের নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ:-

[iv] উপক্ষার বা ক্ষারক পদার্থ বা অ্যালক্যালয়েড[Alkaloid]:- উপক্ষার একরকমের নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগিক পদার্থ । প্রোটিন ভেঙ্গে উপক্ষার সৃষ্টি হয় । উপক্ষার জলে অদ্রবণীয় এবং কোহলে দ্রবণীয় । এটি তরল বা কঠিন —উভয় রকমেরই হতে পারে । উপক্ষার স্বাদে কষা বা তিক্ত ।



• উপক্ষারের বিভিন্ন উৎস ও অর্থকরী গুরুত্ব:-
উপক্ষার --- উৎস ---- অর্থকরী গুরুত্ব
১. কুইনাইন --- ---- সিঙ্কোনা গাছের বাকল ---- ম্যালেরিয়ার ওষুধ তৈরি হয় ।
২. রেসারপিন ---- সর্পগন্ধা গাছের মূল ---- উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ তৈরি হয় ।
৩. ডাটুরিন ---- ধুতুরা গাছের পাতা ও ফল ---- হাঁপানির ওষুধ তৈরি হয় ।
৪. নিকোটিন ---- তামাক গাছের পাতা ---- এটি মাদক দ্রব্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।
৫. স্ট্রিকনিন ---- নাক্সভোমিকা বা কুঁচেলা গাছের বীজ ---- পেটের পীড়ার ওষুধ তৈরি হয় ।
৬. মরফিন ---- আফিং গাছের কাঁচাফলের ত্বক ---- ব্যথা-বেদনা উপশম ও গাঢ় নিদ্রার ওষুধ তৈরি হয় ।
৭. ক্যাফিন ---- কফি গাছের বীজ ---- ব্যথা-বেদনা উপশমকারী ওষুধ তৈরি হয় ।
৮.অ্যাট্রোপিন ---- বেলেডোনা গাছের মূলে ও পাতায় ---- রক্তচাপ বৃদ্ধিতে ও স্নায়ুকে উজ্জীবিত করতে ব্যবহার হয়

***

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
►প্রাণীদের রেচন [Excretion in Animals]:-

প্রাণীদেহে অপচিতি বিপাকের ফলে অ্যামোনিয়া, ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, প্রভৃতি নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ সৃষ্টি হয় । এগুলো সাধারণত প্রাণীদের মুত্র ও ঘামের সাহায্যে দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায় । এগুলো ছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড, কিটোন বডি, বিলিরুবিন, বিলিভারডিন প্রভৃতিও রেচন পদার্থরূপে প্রাণীদেহে উত্পন্ন হয় এবং বিশেষ প্রক্রিয়ায় ওই সব রেচন পদার্থ দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায় ।



♦ প্রাণীদের রেচনের বৈশিষ্ট্য [Characteristics of excretion in Animals]:- প্রাণীদের রেচনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল:-

(ক) প্রাণীদের রেচন পদার্থ তুলনামূলকভাবে বেশি জটিল এবং ক্ষতিকারক ।

(খ) প্রাণীদেহে প্রোটিন জাতীয় পদার্থের বিপাক বেশি হওয়ায় নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ বেশি পরিমাণে উত্পন্ন হয় ।

(গ) বেশির ভাগ প্রাণীদেহে রেচন অঙ্গ ও তন্ত্র সৃষ্টি হওয়ায় প্রাণীরা রেচন পদার্থগুলিকে দেহ থেকে বার করে দেয় ।

(ঘ) বিশেষ কয়েকটি প্রাণীছাড়া প্রাণীদেহে রেচন পদার্থ সঞ্চিত থাকে না ।

(ঙ) প্রাণীদের রেচন পদার্থ পুনরায় ব্যবহৃত হয় না ।

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
►মানবদেহের রেচন ক্রিয়া [Excretion in Man]:- মানব দেহের রেচন অঙ্গ হল বৃক্ক । এছাড়া চর্ম, ফুসফুস, যকৃৎ ইত্যাদি রেচনে সাহায্য করে বলে এদের সহায়ককারী রেচন অঙ্গ বলে ।



►মানবদেহের রেচন তন্ত্র [Excretory system of Man]:- মানবদেহের রেচন তন্ত্র এক জোড়া বৃক্ক, এক জোড়া গবিনী, একটি মুত্রাশায়, এবং একটি মুত্রনালী নিয়ে গঠিত । মানুষের বৃক্ক দুটি দেখতে শিমের বীজের মতো এবং ওজনে প্রায় 125-170 gm. । বৃক্ক দুটি মানবদেহের উদর গহ্বরের কটি অঞ্চলে (lumber region), মেরুদন্ডের উভয় পাশে ও পেরিটোনিয়ামের নীচে পৃষ্ঠপ্রাচীর সংলগ্ন অবস্থায় অবস্থিত । প্রতিটি বৃক্ক থেকে একটি করে সরু নালী নির্গত হয়ে মেরুদন্ডের দু'পাশ দিয়ে নীচের দিকে বিস্তৃত থাকে, এই নালী দু'টিকে গবিনী বা ইউরেটার (Ureter) বলে । এদের মাধ্যমে বৃক্ক থেকে নিঃসৃত মুত্র নির্গত হয় । গবিনী দুটি বস্তি গহ্বরে বা শ্রোণি গহ্বরে অবস্থিত একটি পেশিময় থলির সঙ্গে যুক্ত থাকে । এই থলিকে মুত্রথলি (urinary bludder) বলে । মুত্রথলির মধ্যে মুত্র সাময়িকভাবে সঞ্চিত থাকে । মুত্র থলিটি একটি মুত্রনালীর (urethra) সাহায্যে দেহের বাইরে উন্মুক্ত থাকে । মুত্রথলি ও মুত্রনালীর সংযোগ স্থলে একটি স্ফিংটার পেশি (sphincter muscle) থাকে, যার ফলে আমরা ইচ্ছানুযায়ী মুত্রত্যাগ করতে পারি ।



►বৃক্কের গঠন ও কাজ [Structure and function of kidney]:-

মানবদেহের বৃক্কের গঠন : গঠন অনুযায়ী মানব দেহের বৃক্ককে দু'ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: বহির্গঠন ও অন্তর্গঠন ।

[i] বহির্গঠন:-

[a] মানুষের বৃক্ক দেখতে অনেকটা শিম বীজের মতো । পরিণত মানুষের ক্ষেত্রে এটি লম্বায় 11 cm. প্রস্থে 5 cm. এবং 3 cm. পুরু হয়ে থাকে ।

[b] প্রতিটি বৃক্ক তন্তুময় যোগকলা নিয়ে গঠিত 'ক্যাপসুল' দিয়ে ঢাকা থাকে ।

[c] বৃক্কের পিঠের দিকটি উত্তল এবং ভিতরের দিকটি অবতল । বৃক্কের অবতল খাঁজটিকে বৃক্কীয় নাভী বা হাইলাম বলে ।

[d] হাইলাম অংশটি বৃক্কীয় ধমনী, বৃক্কীয় শিরা ও গাবিনীর সঙ্গে যুক্ত থাকে ।



[ii] অন্তর্গঠন:-

[a] লম্বচ্ছেদ করলে প্রতিটি বৃক্কের দুটি অংশ লক্ষ করা যায় —বাইরের গাঢ় লাল রং -এর অংশটিকে বহিঃস্তর বা কর্টেক্স এবং ভিতরের অপেক্ষাকৃত হালকা লাল অংশটিকে অন্তঃস্তর বা মেডালা বলে ।

[b] বৃক্কের কর্টেক্স অংশটি স্থানে স্থানে মেডালার গভীরে প্রবেশ করে পিরামিডের মতো গঠন রচনা করে, এগুলিকে বৃক্কীয় পিরামিড বলে ।

[c] বৃক্কের কর্টেক্স ও মেডালা প্রায় সম্পূর্ণভাবে একটি গহ্বরকে ঘিরে অবস্থান করে । এই গহ্বরটিকে বৃক্কীয় পেলভিস বলে ।

[d] ফানেলের মতো দেখতে এই অংশ থেকে গবিনী উত্পন্ন হয়েছে । গবিনী পেলভিসে ঢোকার পর কয়েকটি মেজর ক্যালিক্স বা প্রধান বৃতি গঠন করে । প্রতিটি মেজর ক্যালিক্স আবার কিছু মাইনর ক্যালিক্স বা শাখা বৃতিতে বিভক্ত হয় ।

[e] মাইনর ক্যালিক্স যে অংশে বৃক্কীয় পিরামিডের সঙ্গে যুক্ত হয় তাকে বিক্কীয় পীড়কা বলে ।

[f] প্রতিটি বৃক্ক অসংখ্য সুক্ষ্ম চুলের মতো কুণ্ডলীকৃত নালিকা নিয়ে গঠিত, এদের নেফ্রন বলে । এই নেফ্রনই হল বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একক । এক একটি বৃক্কে প্রায় দশ লক্ষ নেফ্রন থাকে ।

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
►নেফ্রন : কিডনির বা বৃক্কের গঠনগত এবং কার্যগত একক [Human Nephron as structural and functional unit of kidney]:-

নেফ্রন [nephron] হল কিডনি বা বৃক্কের গঠনগত ও কার্যগত একক, যা প্রধানত ম্যালপিজিয়াম করপাসল এবং বৃক্কীয় নালিকা নিয়ে গড়ে ওঠে এবং মুত্র তৈরিতে প্রধান ভূমিকা নিয়ে থাকে । প্রতিটি মানব বৃক্কে প্রায় দশ লক্ষ করে নেফ্রন থাকে । প্রতিটি নেফ্রন প্রধানত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত; যথা: [১] ম্যালপিজিয়ান করপাসল, [২] বৃক্কীয় নালিকা এবং [৩] সংগ্রাহী নালিকা ।

♦[১] ম্যালপিজিয়ান করপাসল [Malpighian Corpuscle]:- এটি বৃক্কের কটেক্স অঞ্চলে অবস্থিত ফানেল-আকৃতি বিশিষ্ট অংশ । এটি ব্যাওমানের ক্যাপসুল [Bowman's capsule] এবং গ্লোমেরিউলাস নামে দুটি অংশ নিয়ে গঠিত । গ্লোমেরিউলাস হল ক্যাপসুল মধ্যস্থ কুণ্ডলীকৃত রেনাল ধমনীর জালক বিশেষ । রেনাল ধমনীর একটি শাখা ক্যাপসুলের মধ্যে প্রবেশ করে কুণ্ডলীকৃত জালক সৃষ্টি করে ক্যাপসুল থেকে আবার নির্গত হয়েছে । ব্যাওমানের ক্যাপসুল হল, গ্লোমেরিউলাসকে আবৃত করে অবস্থিত একটি আবরণ বিশেষ । গ্লোমেরিউলাস অভিমুখী রেনাল ধমনীর শাখাটিকে অন্তর্মুখী ধমনিকা বলে । গ্লোমেরিউলাস থেকে দূরগামী শাখাটিকে বহির্মুখী ধমনিকা বলে ।



• কাজ:- ম্যালপিজিয়ান করপাসল পরা-পরিস্রাবকরূপে কাজ করে । গ্লোমেরিউলাস রক্তের দূষিত পদার্থগুলিকে পরিস্রুতকরে । ব্যাওমানের ক্যাপসুল গ্লোমেরিউলাসকে আবৃত করে রাখে এবং পরিস্রুত তরলকে বৃক্কীয় নালিকায় প্রেরণ করে ।



♦[২] বৃক্কীয় নালিকা [Renal tubule]:- এই নালিকাটি ব্যাওমানের ক্যাপসুলের তলদেশ থেকে উত্পন্ন হয়ে সংগ্রাহী নালিকা পর্যন্ত বিস্তৃত । এটি সুক্ষ্ম পেঁচানো বা কুণ্ডলীকৃত নালিকা বিশেষ । এর প্রথম অংশকে নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকা বা পরসংবর্ত নালিকা বলে । মাঝখানের U-আকৃতি বিশিষ্ট অংশকে হেনলীর লুপ [Henle's loop] বলে । শেষ অংশকে দূরবর্তী সংবর্ত নালিকা বা দূরসংবর্ত নালিকা বলে । বহির্মুখী ধমনিকা গ্লোমেরিউলাস ত্যাগ করার পর সংবর্ত নালিগুলির মধ্যে জালক সৃষ্টি করার পর আবার যুক্ত হয়ে একটি শিরা গঠন করে, এই শিরাটি বৃক্কীয় শিরার [renal vein] সঙ্গে যুক্ত হয় ।



• কাজ:- বৃক্কীয় নালিকার প্রধান কাজ হল পরিস্রুত তরলের প্রয়োজনীয় অংশের পুনঃশোষণ করা । নিকটবর্তী সংবর্ত নালিকার কাজ হল গ্লুকোজ, সোডিয়াম আয়ন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ক্রিয়েটিন, সালফেট, ফসফেট ইত্যাদিকে বিশোষণ করে । হেনলীর লুপ জল ও সোডিয়াম আয়ন বিশোষণ করে । দূরসংবর্ত নালিকা জলের বিশোষণে সাহায্য করে ।



♦[৩] সংগ্রাহী নালিকা [Collecting tubule]:- প্রতিটি নেফ্রনের বৃক্কীয় নালিকার শেষ অংশগুলি অপেক্ষাকৃত যে মোটা নালির যুক্ত থাকে, তাকে সংগ্রাহী নালিকা বলে । পরিস্রুত তরল, পুনঃশোষনের পর, এই অংশে মুত্ররূপে সঞ্চিত হতে থাকে এবং গাবিনীর মধ্যে প্রবেশ করে ।



• কাজ:- সংগ্রাহী নালিকা পরিস্রুত ও পুনঃবিশোষিত তরলকে মুত্ররূপে সংগ্রহ করে গবিনীতে প্রেরণ করে ।



♦ ম্যালপিজিয়ান নালিকা এবং ম্যালপিজিয়ান করপাসল -এর পার্থক্য♦
ম্যালপিজিয়ান নালিকা ---------- ম্যালপিজিয়ান করপাসল
১. ম্যালপিজিয়ান নালিকা হল পতঙ্গশ্রেণির প্রাণীদের রেচন অঙ্গ, যা মধ্য ও পশ্চাদ পৌষ্টিক নালীর সংযোগস্থলে অবস্থিত । ---------- ম্যালপিজিয়ান করপাসল হল মেরুদন্ডী প্রাণীদের বৃক্কস্থিত নেফ্রনের অংশবিশেষ ।
২. এগুলি হিমোলিম্ফে ভাসমান অবস্থায় থাকে । ---------- বৃক্কের কর্টেক্স অঞ্চলে থাকে ।
৩. এগুলির আকৃতি নলের মতো । ---------- এগুলির আকৃতি কণিকার মতো ।
৪. এরা হিমোলিম্ফ থেকে রেচন পদার্থ শোষণ করে পৌষ্টিক নালীর গহ্বরে প্রেরণ করে । ---------- দূষিত রক্তকে পরিস্রুত করে অর্থাৎ রক্ত থেকে দূষিত পদার্থগুলিকে ছেঁকে নিয়ে বৃক্কীয় নালিকায় প্রেরণ করে ।



descriptionরেচন [Excretion] Emptyবৃক্কের মাধ্যমে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্যপদার্থের বহিষ্করণ

more_horiz
বৃক্কের মাধ্যমে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্যপদার্থের বহিষ্করণ


►প্রয়োজনীয় পদার্থ শোষিত হওয়ার পর বৃক্কের মাধ্যমে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্যপদার্থের বহিষ্করণ [Excretion of nitrogenous waste through kidney after reabsorption or essential substances]:-



[১] দেহের অব্যবহৃত প্রোটিন ডি-অ্যামাইনেজ (di-aminase) নামে একরকমের উৎসেচকের প্রভাবে অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয় । এই অ্যামোনিয়া যকৃতে এসে আরজিনেজ [Arginase] নামে এক রকমের উৎসেচকের সহায়তায় অরনিথিন চক্রের (Ornithin cycle) মাধ্যমে ইউরিয়ায় পরিণত হয় ।

[২] এই ইউরিয়া এবং অন্যান্য রেচন পদার্থযুক্ত রক্ত বৃক্কীয় ধমনীর মাধ্যমে বৃক্কে পৌঁছায় এবং অন্তর্মুখী ধমনিকা দিয়ে গ্লোমেরিউলাসে আসে । অন্তর্মুখী ধমনিকার তুলনায় বহির্মুখী ধমনিকার ব্যাস সংকীর্ণ হওয়ায় গ্লোমেরিউলাসে রক্তের যে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়, তারই ফলে রক্তের জলীয় অংশ (প্রোটিন ছাড়া), রেচন পদার্থ ও বিভিন্ন খনিজ লবণসহ গ্লোমেরিউলাসের জালকের পাতলা প্রাচীর ভেদ করে পরিস্রুত হয়ে ব্যাওমান ক্যাপসুলে প্রবেশ করে ।

[৩] ব্যাওমান ক্যাপসুল থেকে পরিস্রুত তরল বৃক্কীয় নালিকায় প্রবেশ করে এবং সেখানে পরিস্রুত তরলের প্রয়োজনীয় পদার্থের (জল, গ্লুকোজ, অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কয়েক ধরণের খনিজ লবণ ) পুনঃশোষণ (reabsorption) ঘটে । অ্যান্টি-ডাই-ইউরেটিক হরমোন বা ADH বৃক্কীয় নালীর পুনঃশোষণে সহায়তা করে । পুনঃশোষণের পর বৃক্কীয় নালিকায় অবস্থিত তরলকেই মুত্র (urine) বলে । বৃক্কীয় নালিকার কিছু কিছু রেচন পদার্থ, যেমন : অ্যামোনিয়া, হিপপিউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি ক্ষরিত হয়ে মুত্রের মধ্যে অবস্থান করে । বৃক্কীয় নালিকার পুনঃশোষণের পর বাকি তরল মুত্র রূপে সংগ্রাহী নালীতে প্রবেশ করে । সেখান থেকে মুত্র মাইনর ও মেজর ক্যালিক্স হয়ে গবিনীতে নিঃসৃত হয় ।



► ADH বা অ্যান্টি-ডাই-ইউরেটিক হরমোন পিটুইটারি গ্রন্থির পশ্চাদ ভাগ থেকে ক্ষরিত হয়, যা বৃক্কীয় নালীর পুনঃশোষণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করে । এই হরমোনের কম ক্ষরণে বৃক্কীয় নালিকায় পুনঃশোষণের হার কমে যাওয়ায় অতিরিক্ত মুত্র সৃষ্টি হতে থাকে, ফলে বহুমুত্র (শর্করা বিহীন) রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় ।



• মুত্র কী ? মুত্র মেরুদন্ডী প্রাণীদের জলীয় রেচন পদার্থ । স্বাভাবিক মুত্র পরিষ্কার, ফিকে হলুদ বর্ণের এবং গন্ধযুক্ত (aromatic odour) । বৃক্কের নেফ্রনের মধ্যে মুত্র সৃষ্টি হয় এবং বৃক্ক থেকে নিঃসৃত হয়ে গবিনীর মাধ্যমে বাহিত হয়ে মুত্রাশয়ে সঞ্চিত হয় । এর পর প্রয়োজনকালে মুত্রনালীর মাধ্যমে দেহের বাহিরে নির্গত হয় ।



• মুত্রের উপাদান [Composition of urine] :- একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের প্রতিদিন প্রায় 1500 cc বা 1½ লিটার মুত্র উত্পন্ন ও নিঃসৃত হয় । ওই পরিমাণ মুত্রে জল ছাড়া প্রায় 50 gm. কঠিন পদার্থ থাকে । কঠিন পদার্থের মধ্যে নানারকম অজৈব ও জৈব পদার্থ থাকে ।



• মুত্রের প্রধান অজৈব পদার্থগুলি :- সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, সালফেট, ফসফেট, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রণ ইত্যাদি ।



• মুত্রের প্রধান জৈব পদার্থগুলি :- ইউরিয়া, অ্যামোনিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, ক্রিয়েটিনিন, হিপপিউরিক অ্যাসিড, কিটোন বডি, অ্যাসিটোন ইত্যাদি ।

***

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
►প্রাণীর রেচনে ত্বক বা চর্ম, ফুসফুস এবং যকৃতের ভূমিকা [Role of skin, Lungs, Liver in animal excretion]:- প্রাণীদেহের অন্যান্য সাহায্যকারী রেচন অঙ্গগুলি হল চর্ম, ফুসফুস, এবং যকৃৎ ।



♦ প্রাণীদের রেচনে চর্ম বা ত্বকের ভূমিকা [Role of skin in animal excretion]:- চর্ম প্রাণীদের পেশিকে আচ্ছাদন করে রাখে, ফলে এর প্রধান কাজ রক্ষণাত্মক (protective) । তা ছাড়া চর্ম স্পর্শেন্দ্রিয়রূপেও কাজ করে । চর্মের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রেচনে সহায়তা করা । চর্মে অবস্থিত ঘর্মগ্রন্থি বা স্বেদগ্রন্থি থেকে যে ঘাম নিঃসৃত হয়, তার সাহায্যে দেহের অতিরিক্ত জল, খনিজ লবণ, এবং কিছু পরিমাণ অ্যামোনিয়া ও ইউরিয়া নির্গত হয় । চর্মের মাধ্যমে সামান্য পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) গ্যাস ব্যাপন প্রক্রিয়ায় দেহের বাইরে নির্গত হয় । চর্মে অবস্থিত সিবেসিয়াস গ্রন্থির মাধ্যমে অল্প পরিমাণে কোলেস্টেরল, ফ্যাটি অ্যাসিড ও হাইড্রোকার্বন রেচন পদার্থ হিসাবে বেরিয়ে আসে ।



♦ প্রাণীদের রেচনে ফুসফুসের ভূমিকা [Role of Lungs in animal excretion]:- ফুসফুস মুখ্যত স্বাসযন্ত্র । কিন্তু ফুসফুস, গ্লুকোজ ও ফ্যাট দহনের ফলে উত্পন্ন কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্প নিশ্বাসের সময় নাসারন্ধ্র দিয়ে দেহের বাইরে নিষ্কাশিত করে রেচনে সহায়তা করে । ফুসফুস ঘন্টায় প্রায় 18 লিটার CO2 এবং দিনে প্রায় —400 ml জল (বাষ্পাকারে) নিশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত করে ।



♦ প্রাণীদের রেচনে যকৃতের ভূমিকা [Role of Liver in animal excretion]:- যকৃত মানব দেহের সবচেয়ে বড় পৌষ্টিক গ্রন্থি । যকৃতের মধ্যে হিমোগ্লোবিন বিশ্লিষ্ট হয়ে বিলিরুবিন, বিলিভারডিন, লেসিথিন প্রভৃতি রেচন পদার্থ সৃষ্টি করে । এই সব রেচন পদার্থ পিত্তরসের মাধ্যমে অন্ত্রে আসে এবং মলের সাহায্যে দেহ থেকে নির্গত হয় ।

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
►উদ্ভিদ ও প্রাণীর রেচন ক্রিয়ার পার্থক্য:-
বৈশিষ্ট্য উদ্ভিদের রেচন ক্রিয়া ----------- প্রাণীর রেচন ক্রিয়া

১.রেচন অঙ্গ/তন্ত্র
রেচন পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য উদ্ভিদ দেহে কোনও নির্দিষ্ট অঙ্গ থাকে না । এরা পত্রমোচন, বাকল মোচন, গঁদ নিঃসরণের মাধ্যমে রেচন পদার্থ ত্যাগ করে ।
----------- প্রাণীর দেহে রেচন পদার্থ নিষ্কাশনের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্গ ও তন্ত্র থাকে ।

২.সঞ্চয়
অধিকাংশ উদ্ভিদ তাদের রেচন পদার্থ গুলোকে অদ্রাব্য কেলাস বা কোলয়েডরূপে দেহের কলাকোষে সঞ্চিত রাখে । ----------- প্রাণীরা রেচন পদার্থ দেহে বেশি সময়ের জন্য সঞ্চিত রাখতে পারে না, এগুলিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে নির্গত করে । কয়েকটি সন্ধিপদ এবং সরীসৃপ প্রাণী তাদের রেচন পদার্থ সাময়িকভাবে বহিঃকঙ্কালে সঞ্চিত করে রাখে ।
৩.ব্যবহার/অর্থকরী গুরুত্ব
উদ্ভিদরা তাদের রেচন পদার্থগুলোকে বিভিন্ন উপচিতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার করে । উদ্ভিদের রেচন পদার্থগুলোর অর্থকরী গুরুত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি । ----------- প্রাণীরা তাদের রেচন পদার্থগুলোকে পুনরায় ব্যবহার করতে পারে না । প্রাণীদের রেচন পদার্থগুলোর অর্থকরী গুরুত্ব কম ।
৪.পরিমাণ
উদ্ভিদ দেহে বিপাকীয় ক্রিয়ার হার কম হওয়ায় এদের দেহে উত্পন্ন রেচন পদার্থের পরিমাণও খুব কম হয় । উদ্ভিদদেহে নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ কম সৃষ্টি হয় । ----------- প্রাণীদেহে বিপাকীয় ক্রিয়ার হার অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় এদের দেহে উত্পন্ন রেচন পদার্থের পরিমাণও বেশি । প্রাণীদেহে নাইট্রোজেন ঘটিত রেচন পদার্থ তুলনামূলকভাবে বেশি উত্পন্ন হয় ।

৫.অপসারণ

উদ্ভিদের রেচন পদার্থ কম ক্ষতিকর এবং এগুলি দেহ থেকে দ্রুত অপসারিত না হলেও তেমন কোনও ক্ষতি হয় না ।


----------- প্রাণীদের রেচন পদার্থ বেশি ক্ষতিকর এবং এগুলি দ্রুত অপসারিত না হলে কোষের বিপাকীয় ক্রিয়ার হার কমে যেতে পারে, এমনকি কোষের মৃত্যুও হাতে পারে ।



***

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
► রেচনের ওপর উদ্ভিদ ও প্রাণীর নির্ভরশীলতা:- রেচন প্রসঙ্গে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, উদ্ভিদের পক্ষে যেসব রেচন পদার্থ ক্ষতিকারক, প্রাণীদের পক্ষে তা গ্রহনযোগ্য; আবার প্রাণীদের পক্ষে যা ক্ষতিকারক, উদ্ভিদের পক্ষে তা গ্রহণযোগ্য । প্রাণী কর্তৃক নিষ্কাশিত রেচন পদার্থগুলিকে উদ্ভিদ সার হিসাবে গ্রহণ করে । আবার উদ্ভিদের বিভিন্ন রেচন পদার্থ (যেমন; রজন, গঁদ, রবার, কুইনাইন, রেসারপিন, ধুনো কর্পূর মরফিন ইত্যাদি) মানুষের নানা প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয় ।



► রেচন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য :- রেচন প্রসঙ্গে অপর একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এই যে, রেচন পদার্থগুলো দুষিত, ক্ষতিকারক এবং অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় এরা সমস্ত জীবদেহ থেকে নিষ্কাশিত হয় । কিন্তু প্রকৃতির কাছে ওই পদার্থগুলো আদৌ অপ্রয়োজনীয় বা দুষিত নয় । কারণ ওই সব রেচন পদার্থ আবার বিশ্লিষ্ট হয়ে সার পদার্থ হিসাবে প্রকৃতির বুকে ফিরে আসে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীদের দ্বারা আবার ব্যবহৃত হয় । জীব দেহ থেকে নিষ্কাশিত রেচন পদার্থের জৈব উপাদানগুলি মাটির মধ্যে অবস্থিত বিভিন্ন রকম জীবাণুর দ্বারা বিয়োজিত হয়ে জল, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য অজৈব পদার্থের লবন গঠন করে । ওই সব অজৈব উপাদান উদ্ভিদ মাটি থেকে শোষণ করে থাকে এবং উদ্ভিদ দেহে ওইগুলি আবার যৌগ পদার্থে পরিণত হয় । প্রাণীরা উদ্ভিদ-খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে ওই সব যৌগ-পদার্থ গ্রহণ করে ।

প্রকৃতির কোনো সম্পদই জীবেরা স্থায়ীভাবে অপসারিত করে না । জীব প্রকৃতির যা কিছু গ্রহণ করে, আবার তা রেচনক্রিয়ার মাধ্যমে এবং মৃত্যুর পর দেহ-পচনের মাধ্যমে, প্রকৃতির বুকেই ফিরিয়ে দেয় । সেই জন্য কোটি কোটি বছর ধরে উদ্ভিদ এবং প্রাণীরা প্রকৃতির প্রভূত সম্পদ আহরণ করলেও, প্রকৃতি আজও রিক্ত এবং নিঃস্ব হয়ে যায় নি ।

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
রেচন [Excretion] Scan0010

descriptionরেচন [Excretion] EmptyRe: রেচন [Excretion]

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum