Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionবায়ুমণ্ডল [Atmosphere] Emptyবায়ুমণ্ডল [Atmosphere]

more_horiz

বায়ুমণ্ডল [Atmosphere]



☼ বায়ুমণ্ডলের সংজ্ঞা [Defination of Atmosphere]:-

☼ বায়ুমণ্ডলের উপাদন [Composition  Atmosphere] :-

♦ হোমোস্ফিয়ার [Homosphere]

♦ হেটেরোস্ফিয়ার [Heterosphere]

☼ বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস [] :-

♦ ট্রোপোস্ফিয়ার [Troposphere]:-

♦ স্ট্রাটোস্ফিয়ার [Stratosphere]:-

♦ আয়নোস্ফিয়ার [Ionosphere]:-

♦ এয়ারোনমি [Aeronomy]:-

☼আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান [Elements of Weather and Climate] :-

☼আবহাওয়া ও জলবায়ুর সংজ্ঞা [Defination of Weather and Climate] :-

[i] বায়ুর উষ্ণতা [Air Temperature]

☼ বায়ুর উষ্ণতার [Air Temperature] সঙ্গে জলবায়ুর অন্যান্য উপাদানের সম্পর্ক:-


### তোমার সাহায্যে আমরা পাশে আছি, তুমি এগিয়ে যাও।
# প্রিয় ছাত্র - ছাত্রী যদি কোথাও কোনো ভুল থেকে থাকে তবে মনে রাখবে সেটা অনিচ্ছাকৃত। নিচে কমেন্ট করো। ঠিক করে দেওয়া হবে।

CLASS TEN GEOGRAPHY MCQ wbbse
#Madhyamik #2020 #Geography #Suggestions
CLASS TEN GEOGRAPHY MCQ

Madhyamik pariksha 2020

Last edited by Admin on Sat Sep 12, 2020 11:02 am; edited 1 time in total

descriptionবায়ুমণ্ডল [Atmosphere] EmptyRe: বায়ুমণ্ডল [Atmosphere]

more_horiz

বায়ুমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলের গঠন (Atmosphere and its Composotion)



☼ বায়ুমণ্ডলের সংজ্ঞা [Defination of Atmosphere]:- ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে যে অদৃশ্য গ্যাসের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, তাকে বায়ুমণ্ডল [Atmosphere] বলে । বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না, শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে আবর্তিত হয় ।

☼ বায়ুমণ্ডলের গঠন [Composition Atmosphere] :- বায়ুমণ্ডল প্রধানত (১) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, (২) জলীয় বাষ্প এবং (৩) জৈব ও অজৈব কণিকা নিয়ে গঠিত ।

(১) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ:- বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে নাইট্রোজেনের [Nitrogeb] পরিমাণ সব চেয়ে (৭৮%) এবং তার পরেই অক্সিজেনের [Oxygen] স্থান (২০.৯%) । এরা মিলিত ভাবে বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৯৮.৯% ভাগ অধিকার করে আছে । এরা ছাড়া বায়ুমণ্ডলের বাকি ১.১ ভাগ অংশে কার্বন ডাই-অক্সাইড [Carbon dioxide], আর্গন [Argon], নিওন [Neon], হিলিয়াম [Helium], ক্রিপ্টন [Krypton], জেনন [Xenon], হাইড্রোজেন [Hydrogen], মিথেন [Methane], নাইট্রাস অক্সাইড [Nitrous oxide], ওজোন [Ozone] প্রভৃতি নানা গ্যাস রয়েছে ।

(২) জলীয় বাষ্প [Water vapor]:- বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প সৌরতাপ শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় । মূলত জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্যই পৃথিবীতে মেঘ, বৃষ্টি, তুষারপাত, কুয়াশা প্রভৃতির সৃষ্টি হয় ।

(৩) জৈব ও অজৈব কণিকা [Organic and Inorganic particles]: বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের জৈব ও অজৈব কণিকা গুলির মধ্যে প্রধান হল-(i) অতি ক্ষুদ্র খনিজ লবণ, (ii) সমুদ্রতীরের ছোটো বালুকণা এবং (iii) কয়লা গুঁড়ো বা ধোঁয়া ।

☼ গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:- (১) হোমোস্ফিয়ার এবং (২) হেটেরোস্ফিয়ার ।

(১) হোমোস্ফিয়ার [Homosphere]:- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসয়নিক গঠন, বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে । এই জন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে হোমোস্ফিয়ার বলা হয় । হোমোস্ফিয়ার প্রধানত:- (ক) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ [নাইট্রোজেন (৭৮%), অক্সিজেন (২০.৯%) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নিওন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন প্রভৃতি গ্যাসের মিশ্রণ (১.১ %) ], (খ) জলীয় বাষ্প এবং (গ) জৈব ও অজৈব কণিকা যেমন- অতি ক্ষুদ্র খনিজ, লবণ, সমুদ্রতীরের বালুকণা, কয়লার গুঁড়ো বা ধোঁয়া প্রভৃতি দিয়ে গঠিত । ভু-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের প্রথম স্তরকে ট্রোপোস্ফিয়ার বলে । ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরে ১৮ কিমি থেকে ৮০ কিমি পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার বলে ।

(২) হেটেরোস্ফিয়ার [Heterosphere]:- বায়ূমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয় ।

descriptionবায়ুমণ্ডল [Atmosphere] EmptyRe: বায়ুমণ্ডল [Atmosphere]

more_horiz

বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস [Layers of the Atmosphere]



☼ বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস [Layers of the Atmosphere] :- উচ্চতা, উষ্ণতা ও উপাদানের ভিত্তিতে পৃথিবীর চতুর্দিকের বায়ুমণ্ডলকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা যায়, যেমন-

(১) ট্রোপোস্ফিয়ার, (২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার, (৩) আয়নোস্ফিয়ার (৪) এক্সোস্ফিয়ার এবং (৫) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ।

(১) ট্রোপোস্ফিয়ার [Troposphere] বা ঘনমণ্ডল:-

(i) ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ঊর্ধ্বের বায়ুস্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমণ্ডল বলে । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি ।

(ii) মেরু অঞ্চলে [Poles] ট্রপোস্ফিয়ার প্রায় ৯ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বিস্তৃত এবং নিরক্ষরেখার [Equator] ওপর ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা প্রায় ১৮ কিলোমিটার ।

(iii) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে বায়ুতে প্রায় ৯০% ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত, তুষারপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা যায়, এজন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে 'ক্ষুব্ধ মন্ডল' বলে ।

(iv) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ারই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর । বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৫% গ্যাসীয় পদার্থ এই স্তরে থাকায় এখানে বায়ুরচাপ সবচেয়ে বেশি ।

(v) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে জলীয়বাষ্প বা মেঘ থাকে না বললেই চলে ।

(vi) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে ওঠা যায় ততই তাপ মাত্রা কমতে থাকে । প্রতি কিলোমিটারে ৬.৪° বা প্রায় প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতার জন্য ১° সেন্টিগ্রেড করে তাপ কমে যায়, ‘একে উত্তাপ কমে যাওয়ার গড়’ (Average Laps rate of temperature) বলে । ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে ১০-১৩ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপ এই হারে কমতে থাকে । মধ্য অক্ষাংশে (Middle Latitude) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব সীমানায় বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ –৭৫° সেন্টিগ্রেড থেকে –৬০° সেন্টিগ্রেড হয় ।

(vii) এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ কমতে থাকে । এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ ।

(viii) ট্রপো (Tropo) ইংরেজি শব্দটির অর্থ পরিবর্তন (Change) এবং দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম বিভিন্ন পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুস্তরেও সে ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় ।

(২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার [Stratosphere] বা শান্তমণ্ডল:-

(i) ট্রপোস্ফিয়ার-এর ওপরের ১৮ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল বলে ।

(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ধূলিকণা, মেঘ প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে না ।

(iii) স্ত্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত দেখা যায় না বলে দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলো ঝড়-বৃষ্টি এড়িয়ে চলার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে চলাচল করে । জেটবিমানগুলি সাধারণত এই স্তরের মধ্যে দিয়ে চলার সময়ে আকাশে সাদা দাগ রেখে যায় ।

• ওজনস্তর:-

(i) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডলের মধ্যে উপরের দিকে ৫০ কিলোমিটার থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের যে বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোনমণ্ডল বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয় ।

(ii) এই স্তরে ওজোন গ্যাসের (O3) একটি পর্দা আছে, যার ফলে সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত অতিবেগুনি (Ultra Violet Ray) ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে না ।

(iii) ওজোন গ্যাস সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে, ফলে এই স্তরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয় ।

(iv) ওজোনোস্ফিয়ার স্তর জীবজগতের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে নেওয়ায় জীবজগৎ ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা পায় ।

(৩) আয়নোস্ফিয়ার [Ionosphere] বা থার্মোস্ফিয়ার :-

(i) ভূপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে ৮০ কিমি থেকে ৬৪০ কিমি পর্যন্ত উচ্চতায় বিস্তৃত হালকা বায়ূস্তরকে আয়নোস্ফিয়ার বলা হয় ।

(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা –৯৩° সেলসিয়াস থেকে বাড়তে বাড়তে ৪৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় ১২৩২° সেলসিয়াসে পরিণত হয় ।

(iii) প্রখর সূর্য কিরণের জন্য হালকা বায়ু দিয়ে গঠিত এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র ০.৫% আছে ।

(iv) এই স্তরের বায়ু আয়নিত অবস্থায় রয়েছে (এই বিরাট অঞ্চলটি বিদ্যুতযুক্ত অসংখ্য কণা অর্থাৎ, আয়ন ও ইলেকট্রনে পূর্ণ হয়ে আছে) । এই স্তরে তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতির জন্য এই স্তরকে আয়নোস্ফিয়ারও বলা হয় । অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের এই স্তরের দুটি নাম রয়েছে, যেমন- থার্মোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার । তবে এই স্তরটি আয়োনোস্ফিয়ার নামেই বেশি পরিচিত । এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে ।

(v) তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে এক রকম উজ্জ্বল আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বলে । ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলি আয়নোস্ফিয়ার ভেদ করে আরও ওপরে যেতে পারে না বলে এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে । তাই বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান, বাজনা, নাটক, কবিতা, সংবাদ প্রভৃতি আমরা রেডিও মারফত বাড়ি বসে শুনতে পাই ।

(৪) এক্সোস্ফিয়ার [Exosphere]:-
ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৪০ কিমি উপরের ঊর্ধ্বের বায়ূস্তরকে এক্সোস্ফিয়ার বলা হয় । এই স্তরের বায়ু এত হালকা যে এই এর অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায় না ।

(৫) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার [Magnetosphere]:- এক্সোস্ফিয়ারের উপরে অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের সর্বশেষ স্তরকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে । এই স্তরের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের আয়নিত কণার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয় ।

☼ এয়ারোনমি [Aeronomy]:- আবহবিদ্যায় ভূপৃষ্ঠের উপরে প্রায় ১০০ কি.মি. পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের স্তর সম্মন্ধে আলোচনা করা হয় । এর উপরে বায়ুমণ্ডলের যে স্তর রয়েছে, সে সম্মন্ধে যে শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়, তার নাম এয়ারোনমি ।

• ট্রোপোপজ [Tropopause]:-
ট্রোপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার- এই দুই বায়ুস্তরের সীমা নির্দেশক সংযোগ স্থলকে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তর এই অঞ্চলে এসে থেমে যায়, তাই একে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোপজ অঞ্চলে নিরক্ষরেখার ওপর বায়ুর তাপমাত্রা -৮০° সেন্টিগ্রেড এবং মেরুদ্বয়ের ওপর -৪৫° সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে, কারণ মেরুদ্বয়ের ওপর যেখানে ট্রপোপজের উচ্চতা মাত্রা ৮ কিমি, সেখানে নিরক্ষরেখার ওপর ট্রোপোপজের উচ্চতা ১৮ কিমি । ট্রপোপজের স্তরে বায়ু চলাচল বা তাপীয় ফল তেমন দেখা যায় না, তাই এই স্তরকে স্তব্ধ স্তরও বলে ।

• স্ট্র্যাটোপজ [(Stratopause]:- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যতই উঁচুতে ওঠা যায় ততই উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং (উত্তাপ) ৫০ কিমি উচ্চতায় সর্বোচ্চ (০° সেন্টিগ্রেড) হয় । তবে ৫০ কিমির বেশি উচ্চতা থেকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আবার কমতে শুরু করে, অর্থাৎ তাপমাত্রার বৃদ্ধি থেমে যায় বা পজ করে । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রার স্থিতাবস্থা থাকায় এই অঞ্চলকে স্ট্র্যাটোপজ বলা হয় ।

• মেসোস্ফিয়ার:- স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের যতদূর উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে । মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজ স্তরের ওপর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে । ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতায় এই স্তরে বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে (কম বেশি -৯৩° সেলসিয়াস) । মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলি মেসোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।

• মেসোপজ (Mesopause): মেসোস্ফিয়ারের ওপরে যে উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায়- অর্থাৎ পজ করে, তাকে মেসোপজ বলে ।

descriptionবায়ুমণ্ডল [Atmosphere] EmptyRe: বায়ুমণ্ডল [Atmosphere]

more_horiz

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান [Elements of Weather and Climate]



☼ আবহাওয়া [Defination of Weather]
:- কোনও নির্দিষ্ট জায়গার কোনও নির্দিষ্ট দিনের বা কয়েকদিনের বায়ুর তাপ, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির অবস্থাকে আবহাওয়া [Weather] বলে । বিভিন্ন দিনে, এমনকি যে কোনো দিনের বিভিন্ন সময়ে, আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটে ।

☼ জলবায়ুর সংজ্ঞা [Defination of Climate]:- দিনের বিভিন্ন সময়ের আবহাওয়ার অবস্থা লক্ষ করে দৈনিক গড় অবস্থা নির্ণয় করা হয় । এইভাবে মাসের বিভিন্ন দিনের আবহাওয়ার গড় অবস্থা থেকে মাসিক গড় অবস্থা নিরূপণ করা হয় । সাধারণত কোনও জায়গায় 35 বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে সেই জায়গার জলবায়ু [Climate] বলা হয় ।

☼ আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান [Elements of Weather and Climate]:- আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান হল

(i) বায়ুর উষ্ণতা,

(ii) বায়ুর চাপ,

(iii) বায়ুপ্রবাহ,

(iv) বায়ুর আর্দ্রতা,

(v) মেঘ,

(vi) বৃষ্টি প্রভৃতি ।

আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রকৃতি কি রকম হবে তা এইসব বিষয়ের উপর নির্ভর করে ।

(i) বায়ুর উষ্ণতা [Air Temperature] : আবহাওয়া ও জলবায়ুর একটি প্রধান উপাদান হল বায়ুর উষ্ণতা । বায়ুর উষ্ণতা বলতে বায়ুর তাপমাত্রাকে বোঝায় । বায়ুর তাপের প্রধান উত্স হল সূর্যরশ্মি । সূর্যরশ্মি সৌরশক্তির আকারে ভু-পৃষ্ঠে এসে যে তাপ সঞ্চার করে । একে সূর্যের তাপীয় ফল [Insolation] বলে । সূর্যের তাপীয় ফলের প্রভাবে বায়ু উত্তপ্ত হয় । তাপমান যন্ত্র [Thermometer], গরিষ্ঠ ও লঘিষ্ঠ তাপমান যন্ত্র [Maximum and Minimum Thermometer] প্রভৃতি দিয়ে বায়ুর তাপ মাপা হয় ।
কোনও জায়গায় জলবায়ু কীরকম হবে তা অনেকাংশে বায়ুর তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে । দিন বড় হলে বায়ু বেশি সময় সূর্যের তাপ পায়, ফলে বেশি উত্তপ্ত হয় । আবার দিন ছোটো হলে বায়ু, সূর্য থেকে কম তাপ পায়, ফলে বায়ুর তাপমাত্রা কম হয় । শীতকালে দিন ছোটো ; তাই বায়ুর উষ্ণতাও কম হয় । সাধারণত দিনের শেষভাগে ঠিক মধ্যাহ্নের পরে দিনের তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি এবং রাতের শেষভাগে তাপমাত্রা সবচেয়ে কম লক্ষ করা যায় ।

☼ বায়ুর উষ্ণতার [Air Temperature] সঙ্গে জলবায়ুর অন্যান্য উপাদানের সম্পর্ক:-

(ক) বায়ু উত্তপ্ত হলে হালকা হয়; হালকা বায়ুর চাপ কম । তাই বায়ু উষ্ণ হলে হালকা হয়ে উপরের দিকে উঠে যায় এবং নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি করে । বায়ু শীতল হলে ভারী হয় । ভারী বায়ুর চাপ বেশি । তাই ভারী বায়ু নীচের দিকে নামে । ফলে শীতল বায়ু উচ্চ চাপকেন্দ্র গঠন করে ।
(খ) বায়ুর চাপের পার্থক্যের ফলে উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায়, এইভাবে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় ।
(গ) শীতল বায়ুর চেয়ে উষ্ণ বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বেশি । উষ্ণ আর্দ্র বায়ু উপরে উঠে শীতল হলে বৃষ্টিপাত ঘটায় ।

descriptionবায়ুমণ্ডল [Atmosphere] EmptyRe: বায়ুমণ্ডল [Atmosphere]

more_horiz

ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর : বায়ুমণ্ডল

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধসীমা কত ?

উত্তর:- বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধসীমা হল ১০,০০০ কি.মি. ।

প্রশ্ন:- হোমোস্ফিয়ার বায়ুস্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে কত দূর উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ?

উত্তর:- হোমোস্ফিয়ার বায়ুস্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০ কি.মি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ।

প্রশ্ন:- হেটেরোস্ফিয়ার বায়ুস্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ?

উত্তর:- হেটেরোস্ফিয়ার বায়ুস্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০ কিমি উপরে ও ১০,০০০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ।

প্রশ্ন:- ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তরটির ঊর্ধসীমা ভূপৃষ্ঠ থেকে কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ?

উত্তর:- ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ।

প্রশ্ন:- উভয় মেরু অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কত ?

উত্তর:- উভয় মেরু অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা হল ৮ কিমি. ।

প্রশ্ন:- নিরক্ষরেখার উপরে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা কত ?

উত্তর:- নিরক্ষরেখার উপরে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা হল ১৮ কিমি. ।

প্রশ্ন:- ট্রপোপজের অবস্থান বায়ুমন্ডলের কোথায় ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের সংযোগস্থল হল ট্রপোপজের অবস্থান ।

প্রশ্ন:- হেটেরোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ স্তর কোনটি ?

উত্তর:- হেটেরোস্ফিয়ারের সর্বোচ্চ স্তরটি হল হাইড্রোজেন স্তর ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ স্তর কোনটি ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলের সর্বোচ্চ স্তরটি হল ম্যাগনেটোস্ফিয়ার ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদান কোনটি ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদানটি হল নাইট্রোজেন ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ কত ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ হল ২০.৯ % ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেনের স্বাভাবিক পরিমাণ কত ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেনের স্বাভাবিক পরিমাণ হল ৭৮.১ % ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের স্বাভাবিক পরিমাণ কত ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের স্বাভাবিক পরিমাণ হল ০.০০৩ % ।

প্রশ্ন:- পৃথিবীর আবহাওয়া গঠনকারী বেশিরভাগ ঘটনা বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে ঘটে থাকে তার নাম কী ?

উত্তর:- পৃথিবীর আবহাওয়া গঠনকারী বেশিরভাগ ঘটনা বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে ঘটে থাকে ।

প্রশ্ন:- স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাস বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে দেখা যায় ?

উত্তর:- স্বাভাবিক উষ্ণতা হ্রাস বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে দেখা যায় ।

প্রশ্ন:- ওজোন গ্যাসের স্তর বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে রয়েছে ?

উত্তর:- ওজোন গ্যাসের স্তর বায়ুমন্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে রয়েছে ।

প্রশ্ন:- পৃথিবীর রেডিও তরঙ্গগুলি বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে বাধা পেয়ে পৃথিবীতে আবার ফিরে আসে ?

উত্তর:- পৃথিবীর রেডিও তরঙ্গগুলি বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরে বাধা পেয়ে পৃথিবীতে আবার ফিরে আসে ।

প্রশ্ন:- আকাশকে নীল দেখায় কেন ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলে ধুলিকণার অবস্থিতির জন্য আকাশকে নীল দেখায় ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলের কোন গ্যাস সৌরতাপের বন্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস সৌরতাপের বন্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ।

প্রশ্ন:- জেট বিমানগুলি বায়ুমন্ডলের কোন স্তর দিয়ে যাতায়াত করে ?

উত্তর:- জেট বিমানগুলি বায়ুমন্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর দিয়ে যাতায়াত করে ।

প্রশ্ন:- বায়ুদূষণকারী পদার্থগুলি প্রধানত বায়ুমন্ডলের কোন স্তরে অবস্থান করে ?

উত্তর:- বায়ুদূষণকারী পদার্থগুলি প্রধানত বায়ুমন্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে অবস্থান করে ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলের কোন স্তর মূলত সৌরতাপ শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলের জলীয় বাস্পের স্তর মূলত সৌরতাপ শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলের কোন স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে আসতে বাধা দেয় ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলের ওজোন গ্যাসের স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে আসতে বাধা দেয় ।

প্রশ্ন:- বায়ুমন্ডলের কোন গ্যাস জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভুমিকা পালন করে ?

উত্তর:- বায়ুমন্ডলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভুমিকা পালন করে ।

descriptionবায়ুমণ্ডল [Atmosphere] EmptyRe: বায়ুমণ্ডল [Atmosphere]

more_horiz

অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : বায়ুমণ্ডল (Atmosphere)



☼ বায়ুমণ্ডল: ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বে যে অদৃশ্য গ্যাসের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে, তাকে বায়ুমণ্ডল বলে । বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না, তবু আমরা এর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির জন্য বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে আবর্তিত হতে থাকে । ১) বিভিন্ন ধরনের গ্যাস, যেমন: নাইট্রোজেন (৭৮.১%), অক্সিজেন (২০.৯%) এবং ওজোন, কার্বন ডাই-অক্সাইড (০.০০৩%) প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যসের মিশ্রণ, ২) জলীয় বাষ্প এবং ৩) নানা রকম সূক্ষ্ম জৈব ও অজৈব কণিকা (ধুলো, ধোঁয়া, বালি প্রভৃতি) নিয়ে বায়ুমণ্ডল গঠিত ।

বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্বসীমা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,০০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৯৭% বায়ুই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিমি উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে । এছাড়া ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ুকে অনেকাংশে প্রভাবিত করে ।

☼ গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস: গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দুই ভগে ভাগ করা যায়, যথা:- ১) হোমোস্ফিয়ার (ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বৃস্তৃত বায়ুস্তর) এবং ২) হেটেরোস্ফিয়ার (৮০ কিমির ওপরের বায়ুস্তর) । হোমোস্ফিয়ার প্রধানত (১) নাইট্রোজেন, অক্সিজেন প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, (২) জলীয় বাষ্প এবং ৩) নানারকম অতি সূক্ষ্ম জৈব ও অজৈব কণিকা দিয়ে গঠিত। বায়ুমণ্ডলের হেটেরোস্ফিয়ার স্তরটি প্রধানতঃ ১) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর, ২) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর, ৩) হিলিয়াম স্তর এবং ৪) হাইড্রোজেন স্তর দিয়ে গঠিত ।

হোমোস্ফিয়ার:- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসয়নিক গঠন, বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকায় বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে হোমোস্ফিয়ার বলা হয় । হোমোস্ফিয়ার প্রধানতঃ ১) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ [নাইট্রোজেন (৭৮.১%), অক্সিজেন (২০.৯%) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নিওন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন প্রভৃতি গ্যাসের মিশ্রণ (১%)], ২) জলীয় বাষ্প এবং ৩) জৈব ও অজৈব কণিকা (যেমনঃ অতি ক্ষুদ্র খনিজ, লবণ, সমুদ্রতীরের বালুকণা, কয়লার গুঁড়ো বা ধোঁয়া প্রভৃতি) দিয়ে গঠীত ।

হোমোস্ফিয়ারের স্তরবিন্যাস:-

১) হোমোস্ফিয়ারের প্রথম স্তরটি হল ট্রপোস্ফিয়ার, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৯০% জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা, ধোঁয়া প্রভৃতি পদার্থ এই স্তরে অবস্থান করে । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরেই বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বিদ্যুৎ প্রভৃতি আবহাওয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়া ঘটতে দেখা যায়;

২) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮-৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত হোমোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরটিকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলে। এই স্তরে ধুলো বা ধোঁয়া না থাকলেও খুব সামান্য জলীয়বাষ্প ও ওজোন গ্যাসের স্তর থাকে যা ভেদ করে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারেনা।

হেটেরোস্ফিয়ারঃ বায়ূমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৯০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয় ।

স্তরবিন্যাস: হেটেরোস্ফিয়ারের বায়ুমণ্ডল মোটামুটী চারটি স্তরে বিভক্ত, যথাঃ ১) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (৮০-২০০ কিমি), ২) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (২০০-১,১০০ কিমি), ৩) হিলিয়াম স্তর (১,১০০-৩,৫০০ কিমি) এবং ৪) হাইড্রোজেন স্তর (৩,৫০০-১০,০০০ কিমি)।

☼ বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের গুরুত্:- বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে, যেমন:-

১) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের গুরুত্ব:- বায়ুমণ্ডলে থাকা বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে নাইট্রোজেন বায়ুতে নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিসেবে অবস্থান করলেও i) বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন গ্যাস বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে উদ্ভিদের গ্রহণ যোগ্য খাদ্যে পরিণত হয় । ii) বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন গ্যাস জীবের শ্বাসকার্য, শক্তি উৎপাদন ও তাপ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । iii) বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস উদ্ভিদের খাদ্য উৎপাদন, সৌরতাপ শোষণ ও বন্টনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে, অন্যদিকে সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মিকে ভূপৃষ্ঠে আসতে বাধা দেয় ।

২) বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব:- বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প সৌরতাপ শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় । মূলত জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্যই বায়ুমণ্ডলে ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে মেঘ, বৃষ্টি, তুষারপাত, কুয়াশা প্রভৃতির সৃষ্টি হয় ।

☼ গভীরতা অনুসারে বায়ুমণ্ডলের শ্রেণিবিন্যাস: গভীরতা অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে ৫টি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা:

১) ট্রোপোস্ফিয়ার (ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর),

২) স্ট্রাটোস্ফিয়ার (১৮-৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর),

৩) আয়নোস্ফিয়ার (৮০-৬৪০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর)

৪) এক্সোস্ফিয়ার (৬৪০ কিমির বেশি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর) এবং

৫) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (৬৪০ কিমি থেকে আরও ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তর)।

ট্রপোস্ফিয়ার কী ?

ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুস্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বলে। পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ার স্তরটি অনধিক ৮ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বিস্তৃত, অথচ নিরক্ষরেখার ওপর ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের উচ্চতা সর্বাধিক (প্রায় ১৮ কিমি) ।

১) বায়ুমণ্ডলে ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ১° সেলসিয়াস করে তাপ কমে যায়, একে উত্তাপ কমে যাওয়ার গড় বলে । ভূপৃষ্ঠের ওপরে ১০-১৩ কিমি উচ্চতায় বায়ুর তাপ এই হারে কমতে থাকে ।

২) বায়ুমণ্ডলে এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ কমতে থাকে ।

৩) ট্রপোস্ফিয়ার স্তরেই মেঘ দেখা যায়-এটি মেঘের রাজ্য, এখানেই বায়ুপ্রবাহ সৃষ্টি হয় । এছাড়া বায়ুমণ্ডলের এই স্তরেই প্রায় ৯০% জলীয় বাষ্প, মেঘ, ধুলিকণা, ধোঁয়া প্রভৃতি আবহাওয়া ঘটিত উপাদান বর্তমান থাকায় এখানে বজ্রপাত, ঝড়বৃষ্টি, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি ঘটনা ঘটতে দেখা যায়- এই জন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডল তথা ট্রপোস্ফিয়ারকে ‘ক্ষুব্ধ মণ্ডল’ বলা হয় । দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুমণ্ডলেরও সে ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় ।

৪) মেরু অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা ৮ কিমি, অথচ নিরক্ষরেখা অঞ্চলে এর উচ্চতা প্রায় ১৮ কিমি ।

৫) বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব এই স্তরেই সবচেয়ে বেশি ।

৬) মধ্য অক্ষাংশে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমানায় বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ -৫৭° সেলসিয়াস থেকে – ৬০° সেলসিয়াস হয় ।

৭) ট্রপোপজ স্তর পর্যন্ত ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের তাপমাত্রা ক্রমশ কমে যেতে থাকে ।

প্রশ্ন: বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন ?

উত্তর: আমাদের পৃথিবীর চারিদিক বায়ুমণ্ডল দিয়ে পরিবেষ্টিত এবং আমরা বিশাল বায়ু সমুদ্রের নিম্নতম স্তর অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ারের আধিবাসী । ১) ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের বায়ুতে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি থাকায় এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটতে দেখা যায় । ২) অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসসহ বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৫% গ্যাসীয় পদার্থ এই স্তরে থাকায় এখানে আমরা শ্বাসগ্রহণ করতে পারি, বৃষ্টি হয়, গাছপালা জন্মায় । এই সব কারণে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর ।

স্ট্যাটোস্ফিয়ার:- ট্রপোস্ফিয়ার-এর ঊর্ধ্বে ১৮-৫০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বলা হয় । এই স্তরে কোনো বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বিদ্যুৎ, ধূলিকণা, ধোঁয়া প্রভৃতি না থাকল্ব ওজোন গ্যাসের স্তর এবং সামান্য পরিমাণ জলীয়বাষ্প দেখা যায় । এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব কম ।

১) মেরু দেশে এই স্তরের গভীরতা ৭২ কিমি এবং নিরক্ষরেখায় ৬২ কিমি ।

২) বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরেই উচ্চতা অনুযায়ী বায়ুচাপের বিশেষ তারতম্য ঘটে না বলে, এখানে কোনো বায়ুপ্রবাহ, মেঘ বা বিদ্যুৎ দেখা যায় না । ঝড়-বৃষ্টি নেই বলে জেট-বিমানগুলি সাধারণত এই বায়ুস্তরে বিনা বাধায় চলাচলের সময় আকাশে সাদা দাগ রেখে যায় ।

৩) এখানকার বায়ুতে জলীয়বাষ্প ও ধুলিকণার পরিমাণ খুব কম থাকে । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যত উঁচুতে ওঠা যায় ততই উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় উত্তাপ সর্বোচ্চ (১০° সেলসিয়াস) হয় ।

৪) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে উচ্চতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা একই রকম থাকে ।

প্রশ্ন:- জেট বিমান স্ট্র্যাটস্ফিয়ারের ভেতর দিয়ে যাওয়া সুবিধাজনক মনে করে কেন ?

উত্তর:- স্ট্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ থাকে না এবং মেঘ, ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয় না বলে দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলি ঝড়-বৃষ্টি এড়িয়ে চলার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের ভেতর দিয়ে যাওয়াই সুবিধাজনক মনে করে ।

প্রশ্ন:- অতিবেগুনি রশ্মি স্ট্র্যাটস্ফিয়ারে বাধাপ্রাপ্ত হয় কেন ?

উত্তর:- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে যে ওজোন গ্যাসের স্তর রয়েছে তা সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত আল্ট্রা-ভায়োলেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে নেয় । ওজোন স্তরের উপস্থিতির জন্যই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি স্ট্র্যাটস্ফিয়ার স্তরে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তা পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে না, ফলে সমগ্র প্রাণীজগৎ এই রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পায় ।

ট্রোপোপজ:- ট্রোপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার- এই দুই বায়ুস্তরের সীমা নির্দেশক সংযোগস্থলকে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তর এই অঞ্চলে এসে পজ করে, অর্থাৎ থেমে যায়, তাই একে ট্রপোপজ বলে । ট্রপোপজ অঞ্চলে নিরক্ষরেখার ওপর বায়ুর তাপমাত্রা -৮০° সেন্টিগ্রেড এবং মেরুদ্বয়ের ওপর -৪৫° সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে, কারণ মেরুদ্বয়ের ওপর যেখানে ট্রপোপজের উচ্চতা মাত্রা ৮ কিমি, সেখানে নিরক্ষরেখার ওপর ট্রোপোপজের উচ্চতা ১৮ কিমি । ট্রপোপজের স্তরে বায়ু চলাচল বা তাপীয় ফল তেমন দেখা যায় না, তাই এই স্তরকে স্তব্ধ স্তরও বলে ।

স্ট্যাটোপজ:- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে দিয়ে যতই উঁচুতে ওঠা যায় ততই উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং (উত্তাপ) ৫০ কিমি উচ্চতায় সর্বোচ্চ (০° সেন্টিগ্রেড) হয় । তবে ৫০ কিমির বেশি উচ্চতা থেকে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা আবার কমতে শুরু করে, অর্থাৎ তাপমাত্রার বৃদ্ধি থেমে যায় বা পজ করে । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রার স্থিতাবস্থা থাকায় এই অঞ্চলকে স্ট্র্যাটোপজ বলা হয় ।

ওজনোস্ফিয়ার/ওজনস্তর:- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যে বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোনমণ্ডল বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয় । এই স্তরে ওজোন গ্যাসের (O3) একটি স্তর বা পর্দা আছে, যা ভেদ করে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে নিয়ে জীবজগতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে ।

ওজোন স্তরের সংকোচন:- বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে যে ওজোন গ্যাসের স্তর রয়েছে তা সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত আল্ট্রা-ভায়োলেট ফলে সমগ্র প্রাণীজগৎ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা পায় । বর্তমানে পৃথিবীর বায়ূমণ্ডলে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) জাতীয় একধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান অসম্ভব বেড়ে যাওয়ায় ওজোন স্তরের ক্ষয় ও সংকোচন দেখা দিয়েছে । ওজন স্তরের ক্ষয়ের ফলে সেখানকার বায়ু স্তরে ওজোন হোল-এর সৃষ্টি হয়েছে যার মধ্য দিয়ে প্রাণীদেহের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছে । ওজন স্তরের সংকোচন প্রতিরোধে বর্তমানে নানা রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ।

মেসোস্ফিয়ার:- স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের যতদূর উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে । মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজ স্তরের ওপর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে । ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতায় এই স্তরে বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে (কম বেশি-৯৩° সেলসিয়াস) । মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলি মেসোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।

মেসোপজ (Mesopause): মেসোস্ফিয়ারের ওপরে যে উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায়- অর্থাৎ পজ্‌ করে, তাকে মেসোপজ বলে ।

আয়নোস্ফিয়ার:- ভূপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে ৮০ কিমি থেকে ৫০০ কিমি পর্যন্ত উচ্চতায় বিস্তৃত হালকা বায়ূস্তরকে আয়নোস্ফিয়ার বলা হয় ।

১) প্রখর সূর্য কিরণের জন্য হালকা বায়ু দিয়ে গঠিত এই স্তরের বায়ু আয়নিত অবস্থায় রয়েছে । তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতির জন্য এই স্তরকে আয়নস্ফিয়ার বলা হয় । এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে ।

২) তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে এরকম উজ্জ্বল আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বলে;

৩) ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলো আয়নোস্ফিয়ার স্তর ভেদ করে আরও ওপরে যেতে পারে না বলে এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে, তাই বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান, বাজনা, নাটক, কবিতা, সংবাদ প্রভৃতি আমরা রেডিও মারফত বাড়ি বসে শুনতে পাই ।

প্রশ্ন:- ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়বীয় স্তরকে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলা হয় কেন ?

উত্তর:- ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন ১৮ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুস্তরেই প্রায় ৯০% জলীয়বাষ্প, মেঘ, ধূলিকণা, ধোঁয়া প্রভৃতি উপাদান বর্তমান থাকায় এখানে বজ্রপাত, ঝড়বৃষ্টি, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে । এই জন্য ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে ‘ক্ষুব্ধমণ্ডল’ বলা হয় ।

প্রশ্ন:- বর্তমানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের ক্ষতি হচ্ছে কেন ?

উত্তর:- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে ওজোন গ্যাসের স্তর রয়েছে তা সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত আল্ট্রা-ভায়লেট রে বা অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে নেয় । ওজোন স্তরের উপস্থিতির জন্যই সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে না, ফলে সমগ্র প্রাণীজগৎ এই রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা পায় ।

বর্তমানে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন জাতীয় (CFC) এক ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান অসম্ভব বেড়ে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের ভয়ানক ক্ষতি হচ্ছে । ওজোন গ্যাসের সংকোচন প্রতিরোধে বর্তমানে নানারকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ।

প্রশ্ন:- পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের বিনাশ ঠেকাতে কী কী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ?

উত্তর: ওজোন স্তর ধ্বংসকারী ক্লোরিনের প্রধান উপাদান হল ক্লোরোফ্লুরো কার্বন (CFC) –যা বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি স্প্রে, নরম ফোম, এয়ারকন্ডিশনার, ফ্রিজ প্রভৃতিতে ব্যবহার করা হয় । বর্তমানে ওজোন স্তর বিনাশের প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা হিসেবে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, মিথাইল ক্লোরোফর্ম প্রভৃতি রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে ।

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে কী ঘটতে পারে ?

উত্তর: বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে যে ওজোন গ্যাসের স্তর রয়েছে তা সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে নেয় বলে এই স্তরের উপস্থিতির জন্য সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছতে পারে না, যার ফলে সমগ্র প্রাণীজগৎ সূর্যের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা পায় । বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরে ছিদ্র হলে ছিদ্ররের মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীর বায়ূমণ্ডলে প্রবেশ করবে যার ফলে প্রাণীদেহে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাবের সৃষ্টি হবে । কারণ এর ফলে প্রাণীদেহে চামড়ার ক্যানসার, চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়া, প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দেবে ।

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের আয়নোস্ফিয়ার স্তরের বিস্তার গুরুত্ব লেখো ।

১) ভূপৃষ্ঠের ঊর্ধ্বে ৮০ – ৬৪০ কিমি. পর্যন্ত বিস্তৃত হালকা বায়ুস্তরকে আয়নোস্ফিয়ার বলে । ২) তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতির জন্য এই স্তর আয়নোস্ফিয়ার নামে পরিচিত । ৩) এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে । ৪) প্রখর সূর্য কিরণের জন্য হালকা বায়ু দিয়ে গঠিত এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র ০.৫% আছে । ৫) ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলো আয়নোস্ফিয়ার স্তর ভেদ করে আরও ওপরে যেতে পারে না বলে এই স্তরথেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে, তাই বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান, বাজনা, নাটক, কবিতা, সংবাদ প্রভৃতি আমরা রেডিও মারফত বাড়ি বসে শুনতে পাই ।

প্রশ্ন:- বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

উত্তর: বায়ুমণ্ডলের উপাদান:- বায়ুমণ্ডল প্রধানত ১) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, ২) জলীয় বাষ্প এবং ৩) জৈব ও অজৈব কণিকা নিয়ে গঠিত ।

১) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ:- বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের মধ্যে নাইট্রোজেনের পরিমাণ সর্বাধিক (৭৮.১%) এবং তার পরেই অক্সিজেনের স্থান (২০.৯%) । এরা মিলিত ভাবে বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৯৯% অধিকার করে আছে । এরা ছাড়া বায়ুমণ্ডলের বাকি মাত্র ১ ভাগ অংশে কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নিওন, হিলিয়াম, ক্রিপ্টন, জেনন, হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজোন প্রভৃতি নানা গ্যাস রয়েছে ।

২) জলীয় বাষ্প:- বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প সৌরতাপ শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় । মূলত জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্যই পৃথিবীতে মেঘ, বৃষ্টি, তুষারপাত, কুয়াশা প্রভৃতির সৃষ্টি হয় ।

৩) জৈব ও অজৈব কণিকা: বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের জৈব ও অজৈব কণিকা গুলির মধ্যে প্রধান হল-(i) অতি ক্ষুদ্র খনিজ লবণ, (ii) সমুদ্রতীরের ছোটো বালুকণা এবং (iii) কয়লা গুঁড়ো বা ধোঁয়া ।

প্রশ্ন:- উচ্চতা, উষ্ণতা ও উপাদানের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তর বিন্যাসের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও ।


উত্তর:- উচ্চতা, উষ্ণতা ও উপাদানের ভিত্তিতে পৃথিবীর চতুর্দিকের বায়ুমণ্ডলকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা যায়, যেমন-

১) ঘনমণ্ডল বা ট্রোপোস্ফিয়ার:- ১) ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ঊর্ধ্বের বায়ুস্তরকে ঘনমণ্ডল বা ট্রপোস্ফিয়ার বলে । বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে আমরা বাস করি । ২) এখানে বায়ুতে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প, কুয়াশা, মেঘ প্রভৃতি থাকে । এই জন্য এই স্তরে ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি ঘটনাগুলি ঘটতে দেখা যায় । ৩) বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ারই হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর । বায়ুমণ্ডলের প্রায় ৭৫% গ্যাসীয় পদার্থ এই স্তরে থাকায় এখানে বায়ুরচাপ সবচেয়ে বেশি । ৪) ট্রপোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরে জলীয়বাষ্প বা মেঘ থাকে না বললেই চলে । ৫) বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে প্রতি ১৬৫ মিটার উচ্চতার জন্য ১° সেন্টিগ্রেড করে তাপ কমে যায়, ‘একে উত্তাপ কমে যাওয়ার গড়’ (Average Laps rate of temperature) বলে । ভূ-পৃষ্ঠের ওপরে ১০-১৩ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপ এই হারে কমতে থাকে । মধ্য অক্ষাংশে (Middle Latitude) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব সীমানায় বায়ুমণ্ডলের উত্তাপ – ৭৫° সেন্টিগ্রেড থেকে – ৬০° সেন্টিগ্রেড হয় । ৬) এই অংশে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর চাপ কমে যায় । বায়ুমণ্ডলের এই অংশেই মেঘ দেখা যায় । এটি মেঘের রাজ্য, এখানেই বায়ুপ্রবাহিত হয় । এছড়া বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ধূলিকণা এবং জলীয়বাষ্প থাকে । ৭) ট্রপো (Tropo) ইংরেজি শব্দটির অর্থ পরিবর্তন (Change) এবং দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম বিভিন্ন পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুস্তরেও সে ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় । ৮) মেরু অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ার প্রায় ৮ কিলোমিটার ঊর্ধ্বে বিস্তৃত অথচ নিরক্ষরেখার ওপর ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা প্রায় ১৮ কিলোমিটার ।

২) ট্রপোপজ:- ১) ট্রপোস্ফিয়ার এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার – এই দুই বায়ুস্তরের সীমা নির্দেশক সংযোগস্থলকে ট্রপোপজ বলে । বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তর এই অঞ্চলে এসে পজ করে, অর্থাৎ থেমে যায়, তাই একে ট্রপোপজ বলে । ২) ট্রপোপজ অঞ্চলে নিরক্ষরেখার ওপর বায়ুর তাপমাত্রা –৮০০ সেন্টিগ্রেড এবং মেরুদ্বয়ের ওপর বায়ুর তাপমাত্রা –৪৫০ সেন্টিগ্রেড হয়ে থাকে, কারণ মেরুদ্বয়ের ওপর যেখানে ট্রপোপজের উচ্চতা মাত্র ৮ কিলোমিটার, সেখানে নিরক্ষরেখার ওপর ট্রপোপজের উচ্চতা ১৮ কিলোমিটার । ৩) ট্রপোপজ স্তরে বায়ু চলাচল তেমন দেখা যায় না বলে এই স্তরকে স্তব্ধ স্তরও বলা হয় ।

৩) শান্তমণ্ডল বা স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার:- ১) ট্রপোস্ফিয়ার-এর ওপরের ১৮ – ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে স্ট্র্যাটস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল বলে । ২) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ধূলিকণা, মেঘ প্রভৃতি না থাকায় এখানে ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক ঘটনা ঘটে না । ৩) স্ত্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাত দেখা যায় না বলে দ্রুতগতিসম্পন্ন জেটবিমানগুলো ঝড়-বৃষ্টি এড়িয়ে চলার জন্য স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে চলাচল করে । জেটবিমানগুলি সাধারণত এই স্তরের মধ্যে দিয়ে চলার সময়ে আকাশে সাদা দাগ রেখে যায় ।

স্ট্র্যাটোপজ (Stratopause): স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে যতই ঊঁচুতে ওঠা যায় ততই উত্তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং (উত্তাপ) ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় সর্বোচ্চ (০° সেন্টিগ্রেড) হয় । তবে ৫০ কিলোমিটার বেশি উচ্চতা থেকে তাপমাত্রা আবার কমতে শুরু করে, অর্থাৎ তাপমাত্রার বৃদ্ধি থেমে যায় বা পজ্‌ করে । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তাপমাত্রার স্থিতাবস্থা বজায় থাকে বলে এই অঞ্চলকে স্ট্র্যাটোপজ বলে ।

৪) ওজোন মণ্ডল বা ওজোনোস্ফিয়ার:- ১) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডলের উপর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যে বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোনমণ্ডল বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয় । ২) এই স্তরে ওজোন গ্যাসের (O3) একটি পর্দা আছে, যার ফলে সূর্যের অতিবেগুনি (Ultra Violet Ray) ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে না । ৩) ওজোন গ্যাস সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে, ফলে এই স্তরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয় । ৪) ওজোনোস্ফিয়ার স্তর জীবজগতের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে নেওয়ায় জীবজগৎ ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা পায় ।

৫) মেসোস্ফিয়ার: ১) স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের যতদূর পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে । ২) মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজের ওপর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । ৩) ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ -কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে (কম-বেশি – ৯৩° সেলসিয়াস) । মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলো এই স্তরের মধ্যে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।

মেসোপজ (Mesopause): মেসোস্ফিয়ারের ওপরে যে উচ্চতায় তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া থেমে যায় বা পজ্‌ করে তাকে মেসোপজ বলে ।

৬) থার্মোস্ফিয়ার এবং আয়নোস্ফিয়ার: ১) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার তথা মেসোপজের ওপরে বায়ূর তাপমাত্রা আবার দ্রুতগতিতে বেড়ে যেতে শুরু করে, তাই মেসোপজের ওপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ৪৮০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বায়ূমণ্ডলের যে স্তর আছে, তাকে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয় । ২) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা – ৯৩০ সেলসিয়াস থেকে বাড়তে বাড়তে ৪৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় ১২৩২০ সেলসিয়াসে পরিণত হয় । ৩) প্রখর সূর্য কিরণের জন্য হালকা বায়ু দিয়ে গঠিত এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র ০.৫% আছে । ৪) এই স্তরের বায়ু আয়নিত অবস্থায় রয়েছে (এই বিরাট অঞ্চলটি বিদ্যুতযুক্ত অসংখ্য কণা অর্থাৎ, আয়ন ও ইলেকট্রনে পূর্ণ হয়ে আছে) । এই স্তরে তড়িৎযুক্ত কণা বা আয়নের উপস্থিতির জন্য এই স্তরকে আয়নোস্ফিয়ারও বলা হয় । অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের এই স্তরের দুটি নাম রয়েছে, যেমন- থার্মোস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ার । তবে এই স্তরটি আয়োনোস্ফিয়ার নামেই বেশি পরিচিত । এখানে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ওজোন প্রভৃতি গ্যাস আয়নিত অবস্থায় থাকে । ৫) তড়িতাহত অণুর চৌম্বক বিক্ষেপের ফলে সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে এক রকম উজ্জ্বল আলোক বিচ্ছুরণ দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বলে । ভূপৃষ্ঠের বেতার তরঙ্গগুলি আয়নোস্ফিয়ার ভেদ করে আরও ওপরে যেতে পারে না বলে এই স্তর থেকে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসে । তাই বিভিন্ন রেডিও স্টেশন থেকে প্রচারিত গান, বাজনা, নাটক, কবিতা, সংবাদ প্রভৃতি আমরা রেডিও মারফত বাড়ি বসে শুনতে পাই ।

৭) বহিঃমণ্ডল বা সক্সোস্ফিয়ার: ১) আয়নমণ্ডলের উপর দিয়ে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হালকা বায়ুস্তরকে বহিঃমণ্ডল বা স্কসোস্ফিয়ার বলে । ২) এই স্তরে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায় । ৩) এখানে বায়ুর সব উপাদানই আয়োনিত অবস্থায় থাকে । ৪) এখানে বায়ু এত হালকা যে তার অস্তিত্ব প্রায় বোঝাই যায় না । ৫) এক্সোস্ফিয়ার স্তরটি ধীরে ধীরে মহাশূন্যে মিশে গিয়েছে ।

৮) চৌম্বক মণ্ডল বা ম্যাগনেটোস্ফিয়ার: বহিঃমণ্ডলের উপরে প্রায় বায়ুশূন্য অঞ্চলটিকে চৌম্বক মণ্ডল বা ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে । এই স্তরে বায়ুমণ্ডলকে বেষ্টন করে একটি প্রোটন ও ইলেকট্রনের চৌম্বকক্ষেত্র আছে ।

প্রশ্ন:- গঠনবিন্যাসের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস বর্ণনা করো ।

উত্তর:- রাসায়নিক গঠনের তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলের প্রধান স্তর দুটি হল- হোমোস্ফিয়ার এবং হেটেরোস্ফিয়ার ।

১) হোমোস্ফিয়ার:- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত অংশে বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন এবং বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম হওয়ায়, বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে হোমোস্ফিয়ার বলা হয় ।

হোমোস্ফিয়ার প্রধানত- ১) নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ, ২) জলীয় বাষ্প এবং ৩) জৈব ও অজৈব কণিকা দিয়ে গঠিত ।

২) হেটেরোস্ফিয়ার: বায়ুমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৯০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয় ।

হেটেরোস্ফিয়ারের বায়ুমণ্ডল মোটামুটি চারটি স্তরে বিভক্ত, যথাঃ ১) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর (৮০-২০০ কিমি)। ২) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর (২০০-১,২০০ কিমি) । ৩) হিলিয়াম স্তর (১,১০০-৩,৫০০ কিমি) । এবং ৪) হাইড্রোজেন স্তর (৩,৫০০-১০,০০০ কিমি) ।

প্রশ্ন:- উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করো এবং তাদের বিবরণ দাও ।

উত্তর: উষ্ণতার ভিত্তিতে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন-

১) ট্রপোস্ফিয়ার: বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তর “ট্রপোস্ফিয়ার”-এ প্রতি কিলোমিটারে ৬.৪° সেন্টিগ্রেড হারে উত্তাপ কমতে থাকে । মধ্য অক্ষাংশে ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্ব সীমানায় উত্তাপ ৫৭° সেন্টিগ্রেড থেকে ৬০° সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হয় ।

২) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার: ট্রপোস্ফিয়ারের পরবর্তী বায়ুস্তর স্ট্র্যাটস্ফিয়ারের মধ্য দিয়ে যতই ঊঁচুতে ওঠা যায় ততই উত্তাপ ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং ৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় উত্তাপ সবচেয়ে বেশি (অর্থাৎ ০০ সেন্টিগ্রেড) হয় ।

৩) মেসোস্ফিয়ার: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের পরে বায়ুর উত্তাপ আবার ক্রমশ বাড়তে থাকে । এই স্তরকে মেসোস্ফিয়ার বলে । মেসোস্ফিয়ার স্তরটিও ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত । ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে (কম বেশি -৯৩° সেলসিয়াস) । মহাকাশ থেকে যেসব উল্কা পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে সেগুলো এই স্তরের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।

৪) মেসোপজ:
মেসোস্ফিয়ারের ওপর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৮৫ কিলোমিটার উচ্চতার স্তরকে মেসোপজ বলে । এই স্তরে বায়ুর উষ্ণতা-৮৩° সেন্টিগ্রেড হয় ।

৫) থার্মোস্ফিয়ার: মেসোপজের ওপরে বায়ুর উষ্ণতা দ্রুত হারে বাড়তে থাকে বলে মেসোপজের উপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ৪৮০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের যে স্তর আছে তাকে থার্মোস্ফিয়ার বলে । ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এই স্তরের ২০০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর উষ্ণতা ৭০০° সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত হয় । স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপরে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা-৯৩° সেলসিয়াস থেকে বাড়তে বাড়তে ৪৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় প্রায় ১,২৩২° সেলসিয়াসে পরিণত হয় ।

৬) সমতাপ অঞ্চল [Isothermal Region]: থার্মোস্ফিয়ারের আরও উঁচু স্তরে উত্তাপ বৃদ্ধির হার কমে যায় । এই স্তরে উত্তাপ প্রায় সমান বা এক রকম থাকে বলে এই স্তরকে সমতাপ অঞ্চল বলে ।

descriptionবায়ুমণ্ডল [Atmosphere] EmptyRe: বায়ুমণ্ডল [Atmosphere]

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum