Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature Emptyবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz

বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ:-


► বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ

[i] বিকিরণ [Radiation] ,

[ii] পরিবহন [Conduction]

[iii] পরিচলন [Convection] ।

► বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ :-

[i] অক্ষাংশ,

[ii] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা,

[iii] সমুদ্র থেকে দুরত্ব,

[iv] বায়ুপ্রভাব,

[v] সমুদ্রস্রোত,

[vi] ভূমির ঢাল,

[vii] ভূমির প্রকৃতি,

[viii] অরণ্যের অবস্থান,

►পৃথিবীর তাপবলয়

♦ সমোষ্ণরেখা :-

►তাপবলয় :-

[i] উষ্ণমণ্ডল

[ii] উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল

[iii] দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল

[iv] উত্তর হিম মণ্ডল

[v] দক্ষিণ হিম মণ্ডল

► বায়ুর চাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ

[i] বায়ুর উষ্ণতা,

[ii] বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ,

[iii] ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা,

[iv] পৃথিবীর আবর্তন,

[v] বায়ুস্তরের উচ্চতা ।

► পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় :-

[১] নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়,

[২] কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়,

[৩] মকরীয় উচ্চচাপ বলয়,

[৪] সমেরু বৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয়

[৫] কুমেরু বৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয় ।

[৬] সুমেরু উচ্চচাপ বলয়,

[৭] কুমেরু উচ্চচাপ বলয় ।

♦ অশ্ব অক্ষাংশ

►বায়ুচাপ কক্ষ :-

►সমচাপ বা সমপ্রেষ রেখা:-

descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature EmptyRe: বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz

বায়ুমন্ডলের তাপ ও তাপের তারতম্যের কারণ:-


► বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ [Major factors influencing Air Temperature]:- সূর্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস । সুর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে । বায়ুমন্ডল প্রধানত তিনটি প্রণালীতে উত্তপ্ত হয় ; যথা — [i] বিকিরণ [Radiation] , [ii] পরিবহন [Conduction] ও [iii] পরিচলন [Convection] প্রণালীতে ।

[i] বিকিরণ [Radiation] :- বায়ুমণ্ডল সূর্যকিরণের দ্বারা সরাসরিভাবে উত্তপ্ত হয় না । সুর্য থেকে আলোর তরঙ্গ বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে । সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে আগত তাপশক্তি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এলেও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে প্রথমে কঠিন ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে । ভূপৃষ্ঠের তাপ বিকীর্ণ হওয়ার ফলে ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয় ।

[ii] পরিবহন [Conduction] :- সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে আগত তাপশক্তি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এলেও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে প্রথমে কঠিন ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে । ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু ভূপৃষ্ঠের সঙ্গে লেগে থাকার ফলে পরিবহন পদ্ধতিতে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় ।

[iii] পরিচলন [Convection] :- ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে উপরে চলে যায় । তখন উপরের শীতল বায়ু এখানকার শূন্যস্থান পূরণ করতে ছুটে আসে । সেও আবার উত্তপ্ত হয়ে উপরে উঠে যায় । এইভাবে নীচ থেকে উপরে ও উপর থেকে নীচে বায়ু চলাচলের ফলে পরিচালন ক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয় ।

► বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ :- ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র তাপ সমান নয় । স্থানভেদে বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য ঘটে । বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য ঘটে বিভিন্ন কারণে, যথা —[i] অক্ষাংশ, [ii] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, [iii] সমুদ্র থেকে দুরত্ব, [iv] বায়ুপ্রভাব, [v] সমুদ্রস্রোত, [vi] ভূমির ঢাল, [vii] ভূমির প্রকৃতি, [viii] অরণ্যের অবস্থান, প্রভৃতি ।

[i] অক্ষাংশ [Latitude]:- বায়ুমন্ডলের উষ্ণতার তারতম্যে অক্ষাংশের ভূমিকা:-

ক) সুর্যরশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস হলেও, অক্ষাংশ অনুসারে সূর্যকিরণ ভূপৃষ্ঠে কোথাও লম্বভাবে বা সোজা ভাবে এবং কোথাও তির্যক ভাবে পড়ে ।

খ) লম্বভাবে পতিত রশ্মির তুলনায় তির্যকভাবে পতিত রশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয় ।

গ) নিরক্ষরেখার ওপর প্রায় সারা বছর ধরে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে ।

ঘ) নিরক্ষরেখা থেকে যতই উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর দিকে যাওয়া যায় ততই সূর্যরশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে তির্যক ভাবে পড়তে থাকে যার ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উভয় মেরুর দিকে উত্তাপ ক্রমশ কমতে থাকে ।

ঙ) সাধারণত, নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে প্রতি ১০ অক্ষাংশের তফাতে ০.২৮০ সেলসিয়াস হারে উষ্ণতা কমে যায় ।

১) নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ২৩½০ অক্ষাংশ পর্যন্ত স্থান গ্রীষ্মমণ্ডল বা উষ্ণমণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চলে দিনের দৈর্ঘ্যের বিশেষ কোনো পার্থক্য দেখা যায় না এবং প্রত্যেক স্থানে সূর্যরশ্মি বছরে দুদিন মধ্যাহ্নে লম্বভাবে পতিত হয় । এইজন্য সারা বছর ধরে এই অঞ্চল পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উষ্ণ থাকে ।

২) নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে ২৩½০ থেকে ৬৬½০ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চল গ্রীষ্মে খুব একটা উষ্ণ বা শীতে খুব একটা শীতল হয় না ।

৩) দুই মেরুর চতুর্দিকে ৬৬½০ থেকে ৯০০ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল হিমমণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সবচেয়ে তির্যকভাবে পড়ে । এই অঞ্চলের সর্বত্রই বছরে অন্তত একদিন আকাশে সূর্যকে দেখাই যায় না । এই সমস্ত কারণে এই অঞ্চল দুটি অত্যন্ত শীতল ।

সুতরাং অক্ষাংশ অনুসারে তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে ।

[ii] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা:- উচ্চতা বায়ুমন্ডলের তাপের একটি প্রধান নিয়ন্ত্রক । উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ূমন্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস পায় । সাধারণত ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে প্রতি ১ কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা ৬.৪০ সেলসিয়াস হারে কমে যায়, একে “উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার” বলে ।

ভূমি উঁচু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা কমে যাওয়ার কারণ হল :-

১) উপরের বায়ুস্তরে ধূলিকণা কম থাকায়, ঐ বায়ূস্তরের তাপ গ্রহণ ও সংরক্ষন করার ক্ষমতা কম হয়;

২) উপরের বায়ুস্তর অপেক্ষাকৃত হালকা বলে, ঐ স্তরের বায়ু সহজেই তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়;

৩) সূর্যকিরণ বায়ুমন্ডলের মধ্যে দিয়ে আসে, কিন্তু বায়ুর সূর্যকিরণের উত্তাপ সোজাসুজি গ্রহণ করার ক্ষমতা খুব কমই । সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পড়ে ভূপৃষ্ঠকে প্রথমে উত্তপ্ত করে, পরে সেই উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করলে বায়ূমন্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর সেই বিকীর্ণ তাপ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ লাভ করে । এজন্য ঠিক ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরের উপরের স্তরের বায়ু ক্রমশই কম উষ্ণতা লাভ করে বলে ওপরের বায়ুস্তরে উষ্ণতা কম হয়;

৪) ভূপৃষ্ঠের উত্তপ্ত বাতাস হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায় এবং সেখানে হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় তা শীতল হয়ে পড়ে ।

♦ উষ্ণতার বৈপরিত্য [Inversion of Temperature] :- সাধারণ নিয়ম অনুসারে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা কমতে থাকে । কিন্তু কখনও কখনও উত্ততা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ূমন্ডলের উষ্ণতা হ্রাস না পেয়ে বরং বেড়ে যায়, একে বায়ুমণ্ডলের বৈপরীত্য উত্তাপ বা বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে । এই ব্যতিক্রম সাধারণত পার্বত্য উপত্যকার শান্ত আবহাওয়ায় দেখতে পাওয়া যায় ।

বৈপরীত্য উত্তাপের কারণ:-

১) ঠান্ডা বায়ু গরম বায়ুর চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভারী । তাই শীতকালে ‘U’ আকৃতির পার্বত্য উপত্যকার উপরের অংশের বাতাস রাত্রিবেলায় তাপ বিকিরণের ফলে খুব ঠান্ডা ও ভারী হয়ে পড়ে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ওই বাতাস (যা ‘ক্যাটাবেটিক’ বায়ু নামে পরিচিত) পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আস্তে আস্তে নীচে নেমে এসে উপত্যকার নীচের অংশ বেশি ঠান্ডা হয় এবং নীচের উষ্ণ বায়ু ওপরে ওঠে । এর ফলে উপত্যকার নীচের অংশের তুলনায় ওপরের অংশে বায়ুর তাপমাত্রা বেশি হয় ।

২) ভূপৃষ্ঠ বায়ুমন্ডলের তুলনায় দ্রুতহারে তাপ বিকিরণ করে বলে ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুও বেশি শীতল হয় । অন্যদিকে, বায়ুর পরিবহণ ক্ষমতা কম হওয়ায় উপরের স্তরের বায়ু সহজে শীতল হয় না । এই কারণে বৈপরীত্য উষ্ণতার সৃষ্টি হয় ।

বৈপরীত্য উষ্ণতার উদাহরণ:- কোনও শৈলাবাসে (যেমনঃ দার্জিলিং) গেলে বৈপরীত্য উত্তাপ ব্যাপারটা ভালোভাবে পরিলক্ষিত হয় । ভোরবেলায় এখানে বৈপরীত্য উত্তাপের জন্য উপত্যকাগুলি মেঘে ঢাকা থাকে । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ূর উষ্ণতা বাড়লে উপত্যকাগুলি মেঘমুক্ত হয় ।

[iii] সমুদ্র থেকে দুরত্ব:- সমুদ্র থেকে দূরত্বের জন্য বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য ঘটে ।

১) পৃথিবীর কোনো স্থান সমুদ্র থেকে যত দূরে অবস্থিত হয়, সেখানে উষ্ণতার ততই চরম ভাব দেখা যায়, কারণ, গ্রীষ্মকালে একই অক্ষাংশে অবস্থিত মহাদেশগুলি স্থলভাগের উপরিভাগ সমুদ্রের জলের চেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত হয় । ফলে, সমুদ্র থেকে ঠান্ডা বায়ু মহাদেশগুলির দিকে প্রবাহিত হয়ে মহাদেশের উষ্ণতা হ্রাস করে ।

২) শীতকালে মহাদেশগুলির স্থলভাগের উপরিভাগ সমুদ্রের জলের চেয়ে বেশি শীতল হয়ে পড়ে এবং মহাদেশগুলি থেকে ঠান্ডা বাতাস সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয় । এই জন্য সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে আবহাওয়া কখনই চরমভাবাপন্ন হয় না, অর্থাৎ উষ্ণতার পরিমাণ কখনই খুব বেশি বা কম হয় না ।

৩) সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত মহাদেশের ভিতরের দিকে সমুদ্রের প্রভাব ততটা পড়ে না বলে জলবায়ুতে চরমভাব দেখা যায়, অর্থাৎ ঠান্ডা ও গরম দুই-ই খুব বেশি হয় ।

৪) জল ও স্থলের তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য দিনের বেলা সমুদ্র থেকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বাতাস স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, একে সমুদ্র বায়ু বলে । আবার রাত্রি বেলা স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা বাতাস জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়, একে স্থলবায়ু বলে।

[iv] বায়ুপ্রভাব :- যে দেশের উপর দিয়ে উষ্ণ বায়ু প্রবাহিত হয় সে দেশের বায়ুর তাপমাত্রা বেশি হয়; আবার যে দেশের উপর দিয়ে শীতল বায়ু প্রবাহিত হয় সে দেশের বায়ুর তাপমাত্রা কম হয় । যেমন: সাইবেরিয়ার শীতল বায়ুর জন্য শীতকালে দক্ষিণ চিনের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামে । আবার লু, ফন, চিনুক প্রভৃতি স্থানীয় বায়ু প্রবাহিত হওয়ার ফলে স্থানীয় উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটে ।

[v] সমুদ্রস্রোত :- বায়ুর তাপমাত্রার উপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব পরিলক্ষিত হায় । উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় ; আবার শীতল স্রোতের প্রভাবে তাপমাত্রা হ্রাস পায় । যেমন; উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও পশ্চিম ইউরোপের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শীতকালে প্রচন্ড ঠান্ডার হাত থেকে ওখানকার দেশগুলি রক্ষা পেয়েছে । কিন্তু শীতল লাব্রাডার স্রোতের প্রভাবে লাব্রাডার উপকূল বরফে জমে থাকে । উভয় স্রোতের [উষ্ণ ও শীতল] মিলনে সেখানে গভীর কুয়াশার সৃষ্টি হয় ।

[vi] ভূমির ঢাল :- ভূমির ঢালের তারতম্যের জন্য বায়ুর উষ্ণতার তারতম্য ঘটতে দেখা যায়, যেমন;

ক) উত্তর গোলার্ধে কোনো স্থানের ভূমির ঢাল দক্ষিণমুখী অর্থাৎ নিরক্ষরেখার দিকে হলে সেখানে সূর্যকিরণ লম্বভাবে পড়ে, কারণ উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণমুখী ঢালে সূর্য প্রায় খাড়াভাবে কিরণ দেয় । এর ফলে সেখানকার বায়ুমণ্ডল বেশি উত্তপ্ত হয় । আবার,

খ) উত্তর গোলার্ধের কোনো স্থানের ভূমির ঢাল নিরক্ষরেখার বিপরীত দিকে হলে সেখানে সূর্যকিরণ তির্যকভাবে পড়ে এবং সেখানকার বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা তুলনামূলক ভাবে কম হয় ।

যেমন, উত্তর গোলার্ধে হিমালয়, আল্পস প্রভৃতি পর্বতের দক্ষিনদিক নিরক্ষরেখার দিকে ঢালু হওয়ায় তাপমাত্রা বেশি হয়, কিন্তু উত্তর দিক উত্তর মেরুর দিকে ঢালু হওয়ায় তাপমাত্রা খুব কম হয় ।

[vii] ভূমির প্রকৃতি :- শুকনো বালি ও পাথুরে জমি সূর্যের তাপে সহজেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে, আবার দ্রুত তাপ বিকিরণ করে সহজেই শীতল হয়ে পড়ে । ফলে সেখানে দিনে ও রাতে, শীতে ও গ্রীষ্মে তাপের পার্থক্য বেশি হয় । কিন্তু যেসব ভূমি সরস পলিমাটিতে গড়া বা যেখানে জলাভুমি আছে, সেখানকার ভূমি ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয় এবং শীতল হয় ; সেই জন্য বায়ুর তাপেরও পরিবর্তন ধীরে ঘটে ।

[viii] অরণ্যের অবস্থান :- ভুমির উপর অরণ্য থাকলে ভূমি আদ্র থাকে । ফলে বায়ু দ্রুত উত্তপ্ত বা শীতল হতে পারে না । তা ছাড়া মাটি থেকে গাছ যে রস টেনে নেয়, সেই রস বাষ্পের আকারে পাতা দিয়ে বায়ুতে ছেড়ে দেয় । ফলে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় । এই জলীয়বাষ্প বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে । বৃষ্টিপাতের ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পায় । এই ভাবে অরণ্যের অবস্থান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বায়ুর তাপমাত্রার উপর প্রভাব বিস্তার করে ।

descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature EmptyRe: বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz
► পৃথিবীর তাপবলয় [Temperature belts of the Earth]

♦ সমোষ্ণরেখা [Isotherm line]:- ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র তাপমাত্রা সমান নয় । ভূপৃষ্ঠে যেসব জায়গায় বছরের একই সময় (সাধারণত জানুয়ারি ও জুলাই মাসে) গড় উষ্ণতা একই রকম থাকে, মানচিত্রে সেই সব জায়গাকে পরস্পর যোগ করে যে কাল্পনিক রেখা তৈরি হয় তাকে সমোষ্ণ রেখা বলে । অর্থাৎ, যে কাল্পনিক রেখা দিয়ে বছরের একই সময়ে একই উষ্ণতা বিশিষ্ট স্থানগুলি মানচিত্রে যোগ করা হয় তাকে সমোষ্ণ রেখা বলে । সমোষ্ণ রেখার মানচিত্রের সাহায্যে পৃথিবীর নানা স্থানে উষ্ণতার বিস্তৃতি সম্বন্ধে ধারণা করা যায় ।

►তাপবলয় :- ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র তাপমাত্রা সমান নয় । বছরের গড় তাপমাত্রা নিম্ন অক্ষাংশে সবচেয়ে বেশি, মেরু অঞ্চলে সবচেয়ে কম এবং মাঝামাঝি অঞ্চলে মাঝামাঝি ধরনের । ভূপৃষ্ঠের সুর্যতাপের পরিমাণের পার্থক্য অনুসারে পৃথিবীকে পাঁচটি তাপমণ্ডলে ভাগ করা যায়, যথা–

[i] উষ্ণমণ্ডল (Torrid Zone), [ii] উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল (North Temperate Zone), [iii] দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল (South Temperate Zone), [iv] উত্তর হিম মণ্ডল (North Frizid Zone) [v] দক্ষিণ হিম মণ্ডল (South Frizid Zone)

[i] উষ্ণমণ্ডল:- নিরক্ষরেখার উত্তরে ও দক্ষিণে উভয় দিকে ২৩½০ অক্ষাংশ পর্যন্ত কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখাদ্বয়ের মধ্যবর্তী ৫,২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত অঞ্চলকে গ্রীষ্মমণ্ডল বা উষ্ণমণ্ডল [Torrid Zone] বলে ।

এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:-

ক) দিনের দৈর্ঘ্যের বিশেষ পার্থক্য হয় না এবং প্রত্যেক স্থানে সূর্যরশ্মি বছরে অন্তত দু’দিন [২১শে মার্চ ও ২৩শে সেপ্টেম্বর] মধ্যাহ্নে লম্বভাবে পতিত হয় এবং অন্যান্য সময়েও প্রায় সোজাভাবে পড়ে ;

খ) এই সমস্ত কারণে সারা বছর ধরে এই অঞ্চল, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে উষ্ণ থাকে;

গ) এখানে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য কম;

ঘ) এই অঞ্চলের যে-কোনো জায়গায় বার্ষিক গড় উষ্ণতা ২৭০ সেলসিয়াস বা তার বেশি;

ঙ) যদিও সূর্যের আপাত গতি সাধারণভাবে কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩½০ উত্তর অক্ষরেখা) ও মকরক্রান্তি রেখার (২৩½০ দক্ষিণ অক্ষরেখা) মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কিন্তু তার প্রভাব আরও কিছু উত্তর ও দক্ষিণে পৌঁছায়, তাই উষ্ণমণ্ডলের [Torrid Zone] প্রকৃত সীমানা নিরক্ষরেখার উভয় পাশে ২৭০ সেলসিয়াস সমোষ্ণরেখা পর্যন্ত ধরা হয় ।

[ii] উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল এবং [iii] দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল:- গ্রীষ্মমণ্ডলের উত্তর ও দক্ষিণে ২৩½০ থেকে ৬৬½০ অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের [Temperate Zone] অন্তরর্গত । কর্কটক্রান্তি রেখা [২৩½০ উত্তর] থেকে সুমেরুবৃত্ত [৬৬½০ উত্তর] পর্যন্ত অঞ্চলকে উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল [North Temperate Zone] বলে । মকরক্রান্তি রেখা [২৩½০ দক্ষিণ ] থেকে কুমেরুবৃত্ত [৬৬½০ দক্ষিণ] পর্যন্ত অঞ্চলকে দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল [South Temperate Zone] বলে ।

এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:-

ক) এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি খুব তির্যক ভাবে পড়ে না । তাই এই অঞ্চল গ্রীষ্মে খুব একটা উষ্ণ বা শীতে খুব একটা শীতল হয় না ।

খ) সমোষ্ণরেখা অনুসারে প্রত্যেক গোলার্ধে ২৭০ সেলসিয়াস থেকে O০ সেলসিয়াসের মধ্যবর্তী অঞ্চল হল নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল ।

গ) উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের এই দুই অঞ্চলকে যথাক্রমে উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল ও দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল বলে ।

ঘ) এদের প্রত্যেকের বিস্তৃতি প্রায় ৪,৮০০ কিমি ।

ঙ) এই মণ্ডলের যে অংশ হিমমণ্ডলের নিকটবর্তী (প্রায় ৪৫০ - ৬৬০), তাকে শীতপ্রধান নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল এবং যে অংশ গ্রীষ্মমণ্ডলের নিকটবর্তী (প্রায় ৩০০- ৪৫০), তাকে গ্রীষ্মপ্রধান নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল বলে ।

[iv] উত্তর হিমমণ্ডল এবং [v] দক্ষিণ হিমমণ্ডল:- দুই মেরুর চতুর্দিকে ৬৬½০ থেকে ৯০০ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে হিমমণ্ডল [Frizid Zone] বলা হয় । সুমেরুবৃত্ত [৬৬½০ উত্তর] থেকে সুমেরু পর্যন্ত অঞ্চলকে উত্তর হিম মণ্ডল [North Frizid Zone] বলে । আর কুমেরুবৃত্ত [৬৬½০ দক্ষিণ] থেকে কুমেরু পর্যন্ত অঞ্চলকে দক্ষিণ হিম মণ্ডল [South Frizid Zone] বলে ।

এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য:-

ক) এই অঞ্চলে সূর্যের অবনতি বছরের সব সময় ৪৩০-র বেশি থাকে এবং সূর্যরশ্মি একেবারে তির্যকভাবে পড়ে ।

খ) এই অঞ্চলের সর্বত্রই বছরের অন্তত একদিন আকাশে সূর্যকে দেখাই যায় না ।

গ) উত্তর ও দক্ষিণ মেরুবিন্দুতে একসঙ্গে ছয় মাস দিন ও ছয় মাস রাত্রি হয় ।

ঘ) এই সমস্ত কারণে এই স্থান দুটি অত্যন্ত শীতল । সুমেরুর চতুর্দিকে উত্তর হিমমণ্ডল ও কুমেরুর চতুর্দিকে দক্ষিণ হিমমণ্ডল অবস্থিত ।

ঙ) যেহেতু এই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ২৪ ঘন্টা থেকে ৬ মাস পর্যন্ত সূর্য একেবারেই অস্ত যায় না, তাই এই অঞ্চলকে ‘নিশীথ সূর্যের দেশ’ বলে ।

চ) মেরু অঞ্চলে ছয় মাস ব্যাপী অন্ধকারের সময় আকাশে মাঝে মাঝে রামধনুর মতো অস্পষ্ট আলো দেখা যায় যাকে সুমেরু অঞ্চলে সুমেরু প্রভা ও কুমেরু অঞ্চলে কুমেরু প্রভা বলে ।

ছ) সমোষ্ণরেখা অনুসারে ০০ সেলসিয়াস সমোষ্ণরেখা থেকে উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত অঞ্চলকে হিমমণ্ডল ধরা হয় ।

descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature EmptyRe: বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz
► বায়ুর চাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ [Air Pressure and Major factors influencing it]:- পৃথিবীর যাবতীয় পদার্থের মত বায়ুরও ওজন আছে । ফলে বায়ুও চাপ দেয় । ভুপৃষ্ঠে প্রতি এক বর্গ সেন্টিমিটারে বায়ুর চাপ এক কিলোগ্রামের সমান । বায়ু চারদিক থেকে চাপ দেয় । তাই সাধারণভাবে বায়ুর চাপ অনুভূত হয় না । চাপমান যন্ত্র বা ব্যারোমিটারের পারদ-স্তম্ভের উচ্চতা থেকে বায়ুর চাপ মাপা হয় । সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর স্বাভাবিক চাপ ২৯.৯২ ইঞ্চি বা ৭৬০ মিলিমিটার পারদ-স্থম্ভের সমান । বেশির ভাগ দেশে ইঞ্চির বদলে মিলিবার-এ [Milibar] বায়ুর চাপ প্রকাশ করা হয় । ৭৬০ মিলিমিটার বা ২৯.৯২ ইঞ্চি ১০১৩ মিলিবারের সমান । পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকমের বায়ুর চাপ দেখা যায় । নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্য হয়, যেমন:- [i] বায়ুর উষ্ণতা, [ii] বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ, [iii] ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা, [iv] পৃথিবীর আবর্তন, [v] বায়ুস্তরের উচ্চতা ।

[i] বায়ুর উষ্ণতা:- বায়ুর উষ্ণতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । বায়ু উত্তপ্ত হলে বায়ু আয়তনে বাড়ে এবং বায়ুর ঘনত্ব কমে যায় । ফলে বায়ু হালকা হয়ে যায় । হালকা বায়ুর চাপও কম হয় । অতএব, বায়ুতে যখন তাপ বেশি হয় তখন বায়ুর চাপ কম হয় । একইভাবে বায়ুর উষ্ণতা হ্রাস পেলে বায়ূর ঘনত্ব বেড়ে যায় বলে বায়ুর চাপও বৃদ্ধি পায় । বায়ুচাপ সম্পূর্ণভাবে উষ্ণতার ওপর নীর্ভরশীল । উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুর চাপ বিপরীত অনুপাতে পরিবর্তিত হয়, অর্থাৎ উষ্ণতা কমলে বায়ুর চাপ বাড়ে এবং উষ্ণতা বাড়লে বায়ুচাপ কমে ।

[ii] বায়ুতে জলীয় বাষ্পের তারতম্য:- বায়ুতে জলীয়বাষ্পের তারতম্যের জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । জলীয়বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর চেয়ে হালকা । সেইজন্য যে বায়ুতে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে সেই বায়ু শুকনো বায়ুর চেয়ে হালকা এবং তার চাপ ও অপেক্ষাকৃত কম । এইকারণে বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় বায়ুর চাপ কম হয় । শুষ্ক বায়ু ভারী এবং তার চাপ ও বেশি হয় ।

[iii] ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা:- ভূপৃষ্ঠের উচ্চতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায় বাযুস্তরের গভীরতা ও ঘনত্ব তত কম হয় । অর্থাৎ উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুস্তরের ঘনত্ব কমতে থাকে । বায়ুর ঘনত্ব কমলে স্বাভাবিকভাবে বায়ুর ওজন কমে যায়, এবং ওজন কমলে বায়ুর চাপও কম হয় । সাধারণত প্রতি ৯০০ ফুট উচ্চতায় ১ ইঞ্চি বা প্রতি ২৭৪ মিটারে ৩৪ মিলিবার বায়ুর চাপ কম হয় । তবে এই হারে বায়ুর চাপ উপরের বায়ুস্তরে সব সময়ে কমে না । কারণ উপরের বায়ুস্তর ক্রমশ পাতলা ।

[iv] পৃথিবীর আবর্তন:- পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যেও বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । পৃথিবীর আবর্তনের ফলে বায়ুপ্রবাহ বাইরের দিকে ছিটকে চলে যেতে চায় । এর প্রভাবেও বায়ুর চাপের পার্থক্য হয় ।

[v] বায়ুস্তরের উচ্চতা:- বায়ুস্তরের উচ্চতার জন্য বায়ুর চাপের তারতম্য ঘটে । বায়বীয় পদার্থের নিম্নতম স্তরের যে অংশ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে (Gravitational attraction) ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন হয়ে থাকে, সেই অংশ সাধারণত বায়ুমণ্ডল নামে পরিচিত । বায়ুমণ্ডলের উপরিসীমা প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার ধরা হলেও বায়ুমণ্ডলের ৯৯% ভর ভূপৃষ্ঠের ৩২ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে । বায়ুমণ্ডলের এই অংশেই সৌরতাপ সংরক্ষণ করে এবং এই অংশের চাপই আমরা অনুভব করি ।

descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature EmptyRe: বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz
► পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয় [Pressure Belts of the World]:- পৃথিবীর বায়ুর চাপের ক্ষেত্রে দুটি অবস্থা লক্ষ করা যায়— [ক] উচ্চচাপ [High Pressure] ও [খ] নিম্নচাপ [Low Pressure] । কোনোও জায়গার বায়ুর চাপের চেয়ে তার চারিদিকের বায়ুর চাপ যদি কম হয় তাহলে সেই জায়গার বায়ুর চাপকে উচ্চচাপ [High Pressure] বলা হয় । আর কোনোও জায়গার বায়ুর চাপের চেয়ে তার চারিদিকের বায়ুর চাপ বেশি হয় তাহলে সেই জায়গার বায়ুর চাপকে নিম্নচাপ [Low Pressure] বলা হয় ।

বায়ুচাপের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীকে সাতটি নির্দিষ্ট বায়ুচাপ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে । পৃথিবীর আকৃতি প্রায় গোলাকার হওয়ার জন্য এক একটি বায়ুচাপ অঞ্চল পৃথিবীপৃষ্ঠকে এক একটি ‘রিং’ বা ‘বলয়ের মতো’ ঘিরে আছে তাই এদের বায়ুচাপ বলয়ও বলে । অর্থাৎ পৃথিবীতে নির্দিষ্ট সাতটি বায়ুচাপ বলয় আছে । এই ৭টি বায়ুচাপ বলয়ের মধ্যে ৪টি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় রয়েছে, এবং ৩টি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় রয়েছে ।

৪টি স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় হল :- [২] কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়, [৩] মকরীয় উচ্চচাপ বলয়, [৬] সুমেরু উচ্চচাপ বলয়, ও [৭] কুমেরু উচ্চচাপ বলয় ।

আর ৩টি স্থায়ী নিম্নচাপ বলয় হল:- [১] নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়, [৪] সমেরু বৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয় এবং [৫] কুমেরু বৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয় ।

[১] নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় :- নিরক্ষরেখার উভয় পাশে ১০০ অক্ষাংশের মধ্যে এই চাপ বলয় দেখা যায় । এই অঞ্চলে নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টির কারণগুলি হল :-

(ক) এখানে সূর্য সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় । ফলে এই অঞ্চলের বায়ু অন্যান্য অঞ্চলের বায়ুর থেকে উষ্ণ ও হালকা হয় ।

(খ) এই অঞ্চলে স্থলভাগের চেয়ে জলভাগের পরিমাণ বেশি থাকায়, সূর্যের প্রচন্ড উত্তাপে জল বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকে, তাই এই অঞ্চলের বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি হয় । জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস শুষ্ক বায়ুর চেয়ে হালকা হয় । ফলে হালকা বায়ু উপরে উঠে যায় ।

(গ) পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য এই অঞ্চলের ঊর্ধ্বস্তরের উষ্ণ ও আদ্র বায়ু উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে পড়ে ।

এই সব কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ, জলীয় বাষ্পপূর্ণ ও হালকা বায়ুর চাপ কম (নিম্ন) হয় এবং নিম্নচাপের বায়ু হালকা হয় বলে সোজা উপরে উঠে যেতে থাকে । প্রধানত ঊর্ধ্বগামী বলে এই বায়ুর বিভিন্ন দিকে প্রবাহ নেই বললেই চলে । এখানে বায়ু ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বয়ে চলে না বলে বায়ু প্রবাহ খুব একটা বোঝা যায় না । ফলে এখানে একটি শান্তভাব বিরাজ করে । তাই এই অঞ্চলকে নিরক্ষীয় শান্তবলয় [Eqatorial Belt of Calms বা doldrums] বলা হয় । এখানকার ঊর্ধ্বগামী আদ্র বায়ু প্রচুর পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায় ।

[২] ও [৩] কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় :-

(ক) নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণ, আদ্র ও হালকা বায়ু উপরে ওঠে এবং পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় । সেখানে ক্রমশ প্রসারিত, শীতল ও ভারী হয়ে বায়ু দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে (২৫০- ৩৫০ অক্ষাংশে) নেমে আসে । আবার,

(খ) মেরুপ্রদেশ থেকে শীতল ও ভারী বায়ু ভূপৃষ্ঠ বরাবর নিরক্ষরেখার দিকে অগ্রসর হয় । ফলে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখাদ্বয়ের কাছে বায়ুর চাপ খুব বাড়ে ।

(গ) এই অঞ্চলে বায়ুর গতি থাকে নিম্নমুখী । ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে এই বায়ু বয়ে যায় না । এইজন্য কোনো বায়ুপ্রবাহ পরিলক্ষিত হয় না । ফলে এক শান্তভাব বিরাজ করে । তাই এই অঞ্চল দুটিকে কর্কটীয় ও মকরীয় শান্তবলয় [Tropical Belt of Calms] বলা হয় ।

(ঘ) উপরের শীতল বায়ুস্তর থেকে নীচের উষ্ণতর ভূপৃষ্ঠে নেমে আসার দরুন বায়ু শুকনো হয় । সেই জন্য পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমি এখানে দেখা যায় ।

♦ অশ্ব অক্ষাংশ [Horse Latitude]:- উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখার নিকটবর্তী ২৫০ - ৩৫০ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়ের বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় এই অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে কোনো বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় না । ফলে এক ধরনের শান্তভাব বিরাজ করে, এই জন্য এই অঞ্চলকে কর্কটীয় শান্তবলয় বলে । আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর বিস্তৃত কর্কটীয় শান্তবলয়ের ৩০০ - ৩৫০ অক্ষাংশকে অশ্ব অক্ষাংশ বলে । প্রাচীনকালে পালতোলা জাহাজগুলিকে আয়নবায়ুর অভাবে দীর্ঘ সময় কর্কটীয় শান্তবলয়ে (আটল্যান্টিক মহাসাগরে) অপেক্ষা করতে হত । অনেক সময় খাদ্য ও পানীয় জলের সাশ্রয়ের জন্য জাহাজকে হালকা করার উদ্দেশ্যে জাহাজের নাবিকেরা অশ্ব বোঝাই জাহাজ থেকে অশ্ব ও মালপত্র ফেলে দিয়ে কোনো রকমে প্রাণ বাঁচাতে জাহাজ নিয়ে চলে যেত । সেই থেকে উত্তর গোলার্ধের কর্কটীয় শান্ত বলয়ের অন্তর্গত ৩০০ - ৩৫০ উত্তর অক্ষাংশকে অশ্ব অক্ষাংশ (Horse Latitude) বলা হয় ।

[৪] ও [৫] মেরুপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত অঞ্চলের নিম্নচাপ বলয়):- পৃথিবীর আবর্তনের বেগ মেরুদ্বয়ের তুলনায় দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে (৬০০- ৬৫০ অক্ষাংশে) অনেক বেশি । সেজন্য এই দুই অঞ্চলের বায়ু ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে বিক্ষিপ্ত হয় । ফলে, মেরুবৃত্ত প্রদেশে বায়ুর ঘাটতি পড়ে ও বায়ুর চাপ হ্রাস পায় এবং বায়ুতে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয় ।

[৬] ও [৭] মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় (সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয়) :-

ক) দুই মেরুর নিকটবর্তী অঞ্চলের বায়ু অতিরিক্ত শৈত্যের জন্য সর্বদাই শীতল ও ভারী হয় । উপরন্তু

খ) সূর্যকিরণের অভাবে এখানকার বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে । ফলে এখানে উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে ।

►বায়ুচাপ কক্ষ [Pressure Cell]:- ভূপৃষ্ঠে বায়ুচাপ বলয়গুলি পূর্ব থেকে পশ্চিমে অক্ষাংশ বরাবর প্রসারিত । কিন্তু জলভাগ ও স্থলভাগের অবস্থান সর্বত্র একইভাবে থাকে না । সেজন্য বায়ুচাপ বলয়গুলিও সুনির্দিষ্ট নয় । জলভাগ ও স্থলভাগের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্যে এই চাপ বলয়গুলি এক-একটি বলয় হিসাবে ঠিক থাকে না । ছোট ছোট বায়ুচাপ কক্ষ [Pressure Cell] হিসাবে অবস্থান করে ।

► সমচাপ বা সমপ্রেষ রেখা [Isobar Line]:- ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে বছরের বিভিন্ন সময়ে বায়ুচাপের তারতম্য লক্ষ করা যায় । উষ্ণতার মতো উচ্চতার পার্থক্যেও বায়ুচাপের তারতম্য হয় । সাধারণত ভূপৃষ্ঠের যে সব জায়গার বায়ুর চাপ সমান, সেই সব জায়গাকে যে কাল্পনিক রেখার সাহায্যে যোগ করা হয় তাকে সমচাপ বা সমপ্রেষরেখা বলে । পৃথিবীপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে বায়ুচাপের বিভিন্নতার জন্য আলাদা আলাদা সমচাপ রেখা আঁকা হয় ।

সাধারণভাবে জুলাই ও জানুয়ারী মাসের বায়ুর চাপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পার্থক্য লক্ষ করা যায় । সেই জন্য এই দুটি মাসের মধ্যে বায়ুর চাপের উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর সমপ্রেষরেখা মানচিত্র তৈরি হয় । এই মানচিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, জানুয়ারী মাসে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় বা কক্ষগুলি সূর্যের দাক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে নিরক্ষরেখার কিছু দক্ষিণে সরে যায় । আবার জুলাই মাসে সূর্যের উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় বা কক্ষগুলি নিরক্ষরেখার কিছু উত্তরে সরে আসে । তবে এই চাপবলয়গুলি সূর্যের মত ২৩½০ উত্তরে বা দক্ষিণে সরে না, মাত্রা ৫০ বা তার কম সরে । বায়ুচাপ বলয়ের এই স্থান পরিবর্তনের ফলে বায়ু প্রবাহের দিক ও গতি পরিবর্তিত হয় ।

descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature EmptyRe: বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz

ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর : বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপ


প্রশ্ন:- প্রতি ১ হাজার মিটার উচ্চতায় কত তাপমাত্রা হ্রাস পায় ?

উত্তর:- প্রতি ১ হাজার মিটার উচ্চতায় ৬.৪o ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা হ্রাস পায় ।

প্রশ্ন:- নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উভয় মেরুর দিকে সাধারণত প্রতি ১o অক্ষাংশের ব্যবধানে কত ডিগ্রী তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে ?

উত্তর:- নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উভয় মেরুর দিকে সাধারণত প্রতি ১o অক্ষাংশের ব্যবধানে ০.২৮o সেলসিয়াস তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে ।

প্রশ্ন:- পৃথিবীতে আগত সূর্যরশ্মির কত শতাংশ বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে ?

উত্তর:- পৃথিবীতে আগত সূর্যরশ্মির ৬৬% বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে ।

প্রশ্ন:- অ্যালবেডো কি ?

উত্তর:- সূর্যকিরণ থেকে পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ তাপ আসে তার ৩৪% উত্তাপ মেঘ, ধুলিকণা দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়, — এই ঘটনাকে অ্যালবেডো বলে ।

প্রশ্ন:- কোন অঞ্চলে সূর্য প্রায় সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় ?

উত্তর:- নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্য প্রায় সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেয় ।

প্রশ্ন:- কোন যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর চাপ মাপা হয় ?

উত্তর:- ব্যারোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর চাপ মাপা হয় ।

প্রশ্ন:- ভূপৃষ্ঠে বায়ুচাপ বলয়ের সংখ্যা কয়টি ?

উত্তর:- ভূপৃষ্ঠে বায়ুচাপ বলয়ের সংখ্যা ৭টি ।

descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature EmptyRe: বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz

অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপ


অ্যালবেডো কাকে বলে ?

সূর্যকিরণ থেকে পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ তাপ আসে তার ৩৪% তাপ মেঘপুঞ্জ, ধুলিকণা প্রভৃতি দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। পৃথিবী থেকে সূর্যরশ্মির প্রত্যাবর্তনের এই প্রাকৃতিক ঘটনাকে অ্যালবেডো বলে । পৃথিবীর গড় অ্যালবেডো হল ৩৪% । সূর্যরশ্মির তাপীয় ফলের শতকরা ৩৪ ভাগ (২ ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে, ৭ ভাগ বায়ুমন্ডল থেকে এবং শতকরা ২৫ ভাগ মেঘপুঞ্জ থেকে) মহাশূন্যে প্রতিফলিত ও বিচ্ছুরিত হয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে আবার মহাশূন্যে ফিরে যায়, ফলে এরা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করতে পারে না। একেই পৃথিবীর অ্যালবেডো বলে।

তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস বলতে কী বোঝ ? অথবা, স্বাভাবিক তাপ হ্রাসের হার কাকে বলে ?

সাধারণ প্রতি ১ কিলোমিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ৬.৪০ সেলসিয়াস (অথবা প্রতি ৩০০ ফুটে ১০ ফারেনহাইট) হারে উষ্ণতা কমে যায়, একে ‘উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার’ বা ‘উষ্ণতা হ্রাসের গড়’ বলে । তবে উষ্ণতা কমে যাওয়ার পরিমাণ সব সময় সমান হয় না, দিন-রাত্রিতে এবং ঋতুভেদেও এর পার্থক্য হয় ।

বর্ষাকালে শীতকালের তুলনায় বায়ুর চাপ কম হয় কেন ?

জলীয় বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর তুলনায় হালকা । সেই জন্য জলীয় বাষ্পপূর্ণ আদ্র বায়ু জলীয় বাষ্পহীন শুষ্ক বায়ুর তুলনায় হালকা এবং শুষ্ক বায়ুর চাপও অপেক্ষাকৃত কম । এই জন্য বর্ষাকালে জলীয় বাষ্পপূর্ণ আদ্র বায়ুর চাপ শীতকালের শুষ্ক বায়ুর তুলনায় কম হয় ।

উত্তর গোলার্ধের উচ্চভূমির দক্ষিণ ঢালের উত্তাপ উত্তর ঢাল অপেক্ষা বেশি হয় কেন ?

উত্তর গোলার্ধের উচ্চভূমির দক্ষিণ ঢালে সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত লম্বভাবে পড়ার ফলে দক্ষিণ ঢালের উষ্ণতা উত্তর ঢালের উষ্ণতার তুলনায় বেশি হয় । উত্তর ঢালে সূর্যরশ্মি অপেক্ষাকৃত তির্যকভাবে পড়ে বলে উত্তর ঢাল কম উষ্ণ হয় ।

উষ্ণতা হ্রাসের গড় (Lapse rate) কাকে বলে ?

সাধারণত প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ৬.৪০ সেলসিয়াস (অথবা প্রতি ৩০০ ফুটে ১০ ফারেনহাইট) হারে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা কমে যায়, একে ‘উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার’ বা “উষ্ণতা হ্রাসের গড়” বলে ।

উষ্ণতা কমে যাওয়ার পরিমাণ সব সময়ে সমান হয় না, দিন-রাত্রিতে এবং ঋতুভেদেও উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হারের তারতম্য হয় ।

উদাহরণঃ শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং-এর দুরত্ব বেশি নয়, কিন্তু যেহেতু দার্জিলিং শিলিগুড়ি থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত, সেই জন্য দার্জিলিং-এর তাপমাত্রা সবময়েই শিলিগুড়ি থেকে অনেক কম হয়।

উষ্ণমণ্ডল সৃষ্টির কারণ ।

১) নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকে কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তি রেখাদ্বয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা সারাবছর ধরেই বেশি থাকে (২৭০ সেলসিয়াস) ।

২) এই অঞ্চলে সারাবছরে দিনের দৈর্ঘের বিশেষ পার্থক্য হয় না এবং প্রত্যেক স্থানে সূর্যরশ্মি বছরের অন্তত দুদিন মধ্যাহ্নে লম্বভাবে পড়ে । লম্বভাবে পতিত রশ্মির উষ্ণতা অনেক বেশি হওয়ায় এই অঞ্চলের তাপমাত্রা পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় (যেখানে তির্যকভাবে সূর্যরশ্মি পড়ে) অনেক বেশি হয় ।

৩) এই অঞ্চলে শীত ঋতুর আবির্ভাব হয়না বললেই চলে ।

এই সব কারণে নিরক্ষরেখার উভয়দিকে ২৩½০ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী অঞ্চলে উষ্ণমণ্ডলের সৃষ্টি হয়েছে ।

নিরক্ষরেখা থেকে একটি দ্রাঘিমা রেখা বরাবর মেরুপ্রদেশ পর্যন্ত গেলে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করা যায় কেন ?

নিরক্ষরেখা থেকে একটি দ্রাঘিমা বরাবর মেরু অঞ্চল পর্যন্ত গেলে অক্ষাংশ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা ক্রমশ কমতে থাকে, কারণ, উষ্ণতা হল আবহাওয়া ও জলবায়ুর অন্যতম প্রধান উপাদান । জলবায়ুর অন্য সব উপাদান উষ্ণতার ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে । অক্ষাংশের পরিবর্তন হলে উষ্ণতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাই জলবায়ুরও পরিবর্তন হয় ।

নিরক্ষরেখা থেকে একটি দ্রাঘিমারেখা বরাবর মেরু অঞ্চল পর্যন্ত গেলে প্রথমে উষ্ণমন্ডলের উষ্ণ জলবায়ু এবং তার পর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের মৃদুভাবাপন্ন জলবায়ু এবং তারপরে হিমমণ্ডলের অতি শীতল জলবায়ু দেখা যাবে ।

পৃথিবীর বিভিন্ন বায়ুচাপ বলয়ের সীমা পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব কী কী ?

সূর্যের উত্তরায়ণ (উত্তরমুখী আপাত গতি) ও দক্ষিণায়ণ (দক্ষিণমুখী আপাত গতি)-এর ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপবলয় ও বায়ুচাপবলয়গুলো কিছুটা স্থান পরিবর্তন করে । যেমন সূর্যের উত্তরায়ণের সময় পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলি ৫০ - ১০০ উত্তরে সরে যায় এবং দক্ষিণায়ণের সময় এরা ৫০ - ১৫০ দক্ষিণে সরে যায় । এই ঘটনাকে বায়ুচাপ বলয়ের সীমানা পরিবর্তন বলা হয় ।

প্রভাব:

১) বায়ুচাপ বলয়ের সীমানা পরিবর্তনের ফলে নিয়তবায়ুপ্রবাহেরও পরিবর্তন ঘটে ।

২) বায়ু বলয়গুলির সঙ্গে বৃষ্টি বলয়গুলিও সরে যায় । গ্রীষ্মে আয়নবায়ুর প্রবাহ উত্তরে সরে গেলে সাভানা অঞ্চলে বৃষ্টি হয়, কিন্তু শীতে এই বায়ুপ্রবাহ দক্ষিণে সরে গেলে এর প্রভাবে সেখানে কোনও বৃষ্টিপাত হয় না ।

৩) গ্রীষ্মকালে ৩০০ - ৪০০ অক্ষাংশের মধ্যবর্তী বায়ুচাপ বলয়গুলি সামান্য উত্তরে সরে যাওয়ায় এই অঞ্চল শুষ্ক আয়ন বায়ুর প্রভাবে আসে । আবার শীতকালে এই অঞ্চলের বায়ুচাপবলয়গুলি সামান্য দক্ষিণে সরে যাওয়ায় এই অঞ্চলে আদ্র পশ্চিমাবায়ুর প্রভাব দেখা যায় । এইজন্য ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হলেও গ্রীষ্মকালে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না ।

থর মরুভূমিতে শীত ও গ্রীষ্মের পার্থক্য খুব বেশি কেন ?

নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য মরুভূমি অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য বেশি হয়ঃ

১) মরু অঞ্চলে ভূমিতে বালুকণার পরিমাণ বেশি থাকে । এছাড়া এই বালুকণার মধ্যে কোয়ার্টজ নামে এক ধরনের খনিজ পদার্থ থাকে । তাপ ধরে রাখতে পারে না বলে এরা দ্রুত উত্তপ্ত এবং দ্রুত শীতল হয় । এর ফলে মরুভূমি অঞ্চলে শীত ও গ্রীষ্মের উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি হয় ।

২) মরু ঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ার ফলে এখানে চরম প্রকৃতির আবহাওয়া দেখা যায় ।

৩) মরু ঞ্চলের বালুকাময় মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা নেই বললেই চলে, ফলে স্বাভাবিক ভাবেই গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলে উত্তাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়, আবার শীতকালের উষ্ণতা যথেষ্ট হ্রাস পায় ।

মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি উষ্ণ হয় কেন ? অথবা, মেঘমুক্ত রাত্রি থেকে মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি বেশি উত্তপ্ত হয় কেন ?

বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরের তুলনায়, নীচের স্তরের বায়ুর মধ্যে ধূলিকণা এবং জলীয় বাষ্প বেশি থাকে বলে বায়ুমণ্ডলের ওপরের স্তরের বায়ুর চেয়ে নীচের স্তরের বায়ুর তাপ গ্রহণ এবং তাপ সংরক্ষণ ক্ষমতা বেশি হয় । এজন্য মেঘাচ্ছন্ন রাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ যে তাপ বিকিরণ করে তা মেঘের দ্বারা বাধপ্রাপ্ত হয় এবং খুব বেশি উপরে না উঠতে পেরে গ্রিন হাউস এফেক্ট প্রক্রিয়ায় তা বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরকে উত্তপ্ত করে । এর ফলে মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি উত্তপ্ত হয় । অপরপক্ষে, মেঘমুক্ত রাত্রিতে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ অনেক ওপরে উঠতে পারে, তাই মেঘমুক্ত রাত্রিতে মেঘাচ্ছন্ন রাতের তুলনায় বেশি শীত লাগে ।

লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মির তুলনায় তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয় কেন ?

তির্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মির তুলনায় অনেক বেশি পথ অতিক্রম করে ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছায় এবং বেশি স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । ফলে তির্যক ভাবে পতিত রশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয় । কিন্তু লম্বভাবে পতিত রশ্মি অপেক্ষাকৃত কম পথ অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছায় এবং অপেক্ষাকৃত কম স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । ফলে লম্বভাবে পতিত রশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ বেশি হয় ।

ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে বায়ুর চাপ ক্রমশ কমে কেন ?

ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে বায়ুর চাপ ক্রমশ কমে যায়, কারণঃ

১) ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুস্তরের ঘনত্ব কমতে থাকে । সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুস্তরের ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ১,২০০ গ্রাম, অথচ ভূপৃষ্ঠের ৫ কিমি ঊর্ধ্বে বায়ুর ঘনত্ব সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় অর্ধেক কমে যায় । ঘনত্ব কমলে স্বাভাবিক ভাবেই বায়ুর ওজন কমে যায় এবং ওজন কমলে বায়ুর চাপও কম হয় ।

২) ভূপৃষ্ঠের ওপরের দিকে বায়ুস্তরের গভীরতা কম হওয়ার ফলে বায়ুতে অণুর পরিমাণ কম থাকায় বায়ুচাপ কম হয় । প্রতি ১১০ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ূর চাপ ১ সেন্টিমিটার হারে কমে যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুচাপকে যদি ১০০% ধরা হয়, তা হলে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৮ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুর চাপ মাত্র ১% হয়ে যায় ।

দিনের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে তাপের তারতম্য হয় কেন ?

সকালে এবং বিকালে কোনো স্থান থেকে সূর্য অনেক দূরে থাকে বলে সূর্যরশ্মিঃ

১) পৃথিবীপৃষ্ঠের সেই স্থানে তুলনামূলক ভাবে বেশি তির্যকভাবে পড়ে,

২) বেশি পরিমাণ বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং

৩) বেশি স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে । এজন্য সকাল এবং বিকালে সূর্য থেকে কম তাপ পাওয়া যায় ।

অন্যদিকে, দুপুরে সূর্যরশ্মি

১) পৃথিবীপৃষ্ঠের কোনো স্থানে লম্বভাবে পড়ে,

২) অল্প বায়ুস্তর ভেদ করে আসে এবং

৩) অল্প স্থান জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বলে তুলনা মূলক ভাবে বেশি উত্তাপ পাওয়া যায় ।

দুপুরে তুলনামূলকভাবে বেশি তাপ পাওয়ার আরও একটি প্রধান কারণ হল যে, বেলা ২ টো পর্যন্ত ভূপৃষ্ঠের তাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে, কিন্তু এই সময়ের পর থেকে ভূপৃষ্ঠ যে পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে সেই পরিমাণ তাপ বিকিরণ করে বলে সঞ্চিত তাপ তখন বাড়ে না । এজন্য কোনো স্থানে বেলা ২ টোয় দিনের মধ্যে সর্বাধিক তাপ অনুভূত হয় ।

শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং-এর তাপমাত্রা কম কেন ?

স্বাভাবিক অবস্থায় উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা হ্রাস পায় । বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা হ্রাসের হার হল প্রতি ১ কিলোমিটারে ৬.৪০ সেলসিয়াস। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিঙের দূরত্ব বেশি নয়, কিন্তু যেহেতু দার্জিলিং-এর উচ্চতা শিলিগুড়ির তুলনায় অনেক বেশি সেই হেতু দার্জিলিং-এর তাপমাত্রা সবসময়েই শিলিগুড়ির তাপমাত্রার তুলনায় অনেক কম হয় ।

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং ল্যাব্রাডর উপকূল একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে বরফ জমে না, অথচ ল্যাব্রাডর উপকূলে বরফ জমে, এর কারণ কী ?

ব্রিটিশ দ্বীপপূঞ্জ ও ল্যাব্রাডর উপকূল একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও ব্রিটিশ দ্বীপপূঞ্জের পাশ দিয়ে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত প্রবাহিত হয়, তাই ব্রিটিশ দ্বীপপূঞ্জের বায়ুমণ্ডল উষ্ণ হওয়ায় নিকটস্থ সমুদ্রে বরফ জমে না । কিন্তু ল্যাব্রাডর উপকূলের পাশ দিয়ে হিমমণ্ডল থেকে আসা অতি শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয় বলে ল্যাব্রাডর উপকূলের বায়ুমন্ডলে তাপমাত্রা কম থাকায় ওই উপকূলে বরফ জমে ।

descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature EmptyRe: বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz

অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : পৃথিবীর তাপবলয়


অক্ষাংশ ও উচ্চতাভেদে পৃথিবীপৃষ্ঠে উষ্ণতার তারতম্যের কারণ ব্যাখ্যা করো ।

ভূপৃষ্ঠের সব স্থানে এবং সব সময়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা একই রকম থাকে না । অক্ষাংশ ও উচ্চতা ভেদে পৃথিবীপৃষ্ঠে উষ্ণতার তারতম্য ঘটে, যেমনঃ

১) অক্ষাংশের তারতম্যে পৃথিবীপৃষ্ঠে উষ্ণতার তারতম্যের কারণ:-

ক) সূর্যরশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার প্রধান উৎস হলেও, অক্ষাংশ অনুসারে সূর্যকিরণ ভূপৃষ্ঠে কোথাও লম্বভাবে এবং কোথাও তির্যক ভাবে পড়ে ।

খ) লম্বভাবে পতিত রশ্মির তুলনায় তির্যকভাবে পতিত রশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয় ।

গ) নিরক্ষরেখার ওপর প্রায় সারা বছর ধরে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে ।

ঘ) নিরক্ষরেখা থেকে যতই উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর দিকে যাওয়া যায় ততই সূর্যরশ্মি পৃথিবীপৃষ্ঠে তির্যক ভাবে পড়তে থাকে যার ফলে নিরক্ক্ষীয় অঞ্চল থেকে উভয় মেরুর দিকে উত্তাপ ক্রমশ কমতে থাকে ।

ঙ) সাধারণত, নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর বা দক্ষিণে প্রতি ১০ অক্ষাংশের তফাতে ০.২৮০ সেলসিয়াস হারে উষ্ণতা কমে যায় ।

চ) নিরক্ষরেখার উভয় দিকে ২৩½০ অক্ষাংশ পর্যন্ত স্থান গ্রীষ্মমণ্ডল বা উষ্ণমণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চলে দিনের দৈর্ঘ্যের বিশেষ কোনো পার্থক্য দেখা যায় না এবং প্রত্যেক স্থানে সূর্যরশ্মি বছরে দুদিন মধ্যাহ্নে লম্বভাবে পতিত হয় । এইজন্য সারা বছর ধরে এই অঞ্চল পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় উষ্ণ থাকে ।

ছ) নিরক্ষরেখার উত্তর ও দক্ষিণে ২৩½০ থেকে ৬৬½০ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চল গ্রীষ্মে খুব একটা উষ্ণ বা শীতে খুব একটা শীতল হয় না ।

জ) দুই মেরুর চতুর্দিকে ৬৬½০ থেকে ৯০০ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল হিমমণ্ডলের অন্তরর্গত । এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সবচেয়ে তির্যকভাবে পড়ে । এই অঞ্চলের সর্বত্রই বছরে অন্তত একদিন আকাশে সূর্যকে দেখাই যায় না । এই সমস্ত কারণে এই অঞ্চল দুটি অত্যন্ত শীতল ।

২) উচ্চতার তারতম্যে পৃথিবীর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ: বায়ুমণ্ডল সূর্যকিরণের দ্বারা সরাসরিভাবে উত্তপ্ত হয় না । সূর্য থেকে বিকিরণ পদ্ধতিতে আগত তাপশক্তি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এলেও বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত না করে প্রথমে কঠিন ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে । পরে ওই উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয় এবং ওই তাপ ধীরে ধীরে ওপরের বায়ুস্তরে সঞ্চারিত হয় । তাই নীচের বায়ুস্তরের উষ্ণতা বেশি হয় এবং যত ওপরে ওঠা যায় বায়ুর উষ্ণতা ততই কমতে থাকে । সাধারণত প্রতি ১ কিমি উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ৬.৪০ সেলসিয়াস হারে বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা কমতে থাকে । একে ‘উষ্ণতা হ্রাসের গড়’ বলে ।

উচ্চতার হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা হ্রাস-বৃদ্ধি নিম্নলিখিত কয়েকটি কারণের জন্য ঘটে থাকে, যেমন:-

ক) সূর্যকিরণ বায়ুমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে আসে, কিন্তু সূর্যকিরণের উত্তাপ সরাসরি গ্রহণ করার ক্ষমতা বায়ুর নেই । সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পড়ে ভূপৃষ্ঠকে প্রথমে উত্তপ্ত করে, পরে সেই উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করলে বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তর সেই বিকীর্ণ তাপ সবচেয়ে বেশি পরিমাণ লাভ করে । এই জন্য ভুপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরের তুলনায় উপরের স্তরের বায়ুর উষ্ণতা কম হয় । শীতল বায়ূর সংস্পর্শে বেশি উচ্চতাযুক্ত স্থান শীতল হয় ।

খ) বেশি উচ্চতাযুক্ত স্থানের বায়ু অপেক্ষাকৃত হালকা হওয়ায় তা তাড়াতাড়ি তাপ বিকিরণ করে শীতল হয় । শীতল বায়ুর সংস্পর্শে উচ্চস্থানের উষ্ণতা কম হয় ।

গ) বেশি উচ্চতা যুক্ত স্থানের বায়ুতে ধুলিকণা কম থাকায় সেখানকার বায়ুস্থরের তাপগ্রহণ করার শক্তি কম হয়, ফলে উচ্চস্থানের তাপমাত্রাও কম হয় ।

descriptionবায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ       Air Temperature EmptyRe: বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের তারতম্যের কারণ Air Temperature

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum