Ranchi, Jharkhand
রাঁচি ভ্রমণে সদস্যসংখ্যা ছিল 12 জন। যদিও একে ভ্রমণ না বলে এক্সকার্শন বলাই শ্রেয়। কারণ আমার সাথে ছিল ভূগোল অনার্সের 11 জন ছাত্রছাত্রী।

এই এক্সকার্শনে আমরা দেখেছি রাঁচির ভূমিরূপ, শিলার গঠন, দারণ, প্রকৃতি,
নদী- উপনদী, নদী গঠিত ভূমিরূপ, যান্ত্রিক আবহবিকারের ধরণ, মিশ্র শুষ্ক পর্নমোচী অরণ্য, ড্যাম, জলাধার, মোনাডোনাক ।

সকলে মিলে সকল স্পট গুলি ভৌগোলিক দৃষ্টিকোণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।

একই সঙ্গে আর্থিক চাপ যাতে সকলের উপর না পড়ে , সেই জন্য এই ট্যুরটি 3000 টাকা মাথাপিছু খরচের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।

এক্সকার্শন তারিখ: 18oct to 20 oct, 2022

18 oct, 2022:-
আজ আমাদের হাওড়া স্টেশন থেকে kriyajoga express ছিল। সময় রাত 9টা 30মিনিটে।
মাত্র 255 টাকা স্লিপার ক্লাসে টিকিট।
রাতের খাবার সকলে বাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছিল । আর সকলে সকলের জন্য নিয়ে আসায়, অনেক খাবার বেশি হয়ে গিয়েছিল। যাইহোক স্টেশন এ নিজেদের মধ্যে পরিচয় পর্ব সেরে, গ্রুপ ফটো, সেলফি ইত্যাদি নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। ট্রেন যথা সময়ে ছাড়লো। সকলের একই কোচ এ পড়েছিল। তাই রাতে 11 জনকে আর পায় কে! ট্রেনই শুরু করলো গানের লড়াই। যদিও এটা অন্য যাত্রীদের কাছে বিরক্তির কারণ। তাই ওদের সাবধান করলাম । কিন্তু ওদের বাঁধভাঙা আনন্দকে কি আর থামানো যায়!! আবার এদের মধ্যে প্রায় পাঁচজন এই প্রথম দূরপাল্লার ট্রেন যাত্রা করছে। ওদের কাছে upper আর middle seat আর এক নতুন রোমাঞ্চ। ট্রেনের ঝাঁকুনি, দুলুনি ওদের সারা রাতের ঘুম কেড়েছে। একই সঙ্গে অনেকের একসাথে নাক ডাকার শব্দ শুনে ওদের হাসি আর কে থামায়!!!

সব মিলে সারারাত জেগে ঘুমিয়ে প্রায় 415 km পথ অতিক্রম করে অবশেষে পরদিন ভোরে রাঁচি ।।

19 oct 2022:

এখন রাঁচির তাপমাত্রা 17 থেকে 23 ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর 5.30 train থেকে নামের সকলে দেখে নিল তাপমাত্রা 20 ডিগ্রি সেলসিয়াস।। হাওড়ার থেকে প্রায় 6থেকে7 ডিগ্রি কম।

এই ঠান্ডায় এক কাপ করে গরম চা হলে মন্দ হয় না।। যেহেতু রাঁচির হোটেল গুলির যেকোনো সময় ধরে 24 ঘন্টা চেক ইন আর চেক আউট। তাই হোটেল অত ভোরে নিলে আবার ছাড়তে হবে ওই ভোর ভোর। এই ভেবে ঘন্টা খানেক স্টেশন এই কাটিয়ে নিলাম। এর মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা দেখে নিলো রাঁচি স্টেশন এর MSL অর্থাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে রাঁচির উচ্চতা কত।
ওদের এই উৎসাহ দেখে নিজের খুব ভালো লাগলো।

যাইহোক ডেস্টিনাশন স্টেশন এর নাম লেখা স্থানে সকলে মিলে গ্রুপ ফটো নিয়ে, স্টেশন এই অদূরেই আগে থেকে বুক করা হোটেলে উঠলাম।
হোটেলের নাম : Hotel The Blossom,
Gurdwara road. 100 meter away from station।
আমরা যেহেতু 12 জন সদস্য, তাই 4 বেড রুম তিনটে নিয়েছিলাম।আমি তিন জন ছাত্রের সাথেই একটা রুমে ছিলাম। আর 8 জন ছাত্রীর জন্য দুটি রুম বরাদ্দ ছিল।
Room rent : 1800 টাকা প্রতি দিন ছিলো। একটু ছোট রুমগুলো ছিল কিন্তু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও ভালো বেড ও বাথরুম ছিল। রুম decoration ও ভালো ছিলো।
যাইহোক সকাল 8টার মধ্যে সকলে রেডি হয়ে, আমাদের 13 সিটের বুক করা winger গাড়ি ডেকে নিলাম। গাড়ি নিয়েছিলাম BABLU CAB SERVICE(8340234523) থেকে। গাড়িভাড়া দিন প্রতি 5500 করে।

রাস্তার পাশের এক দোকান থেকে breakfast এ কেউ নিলো ইডলি, কেউ নিলো মশলা ধোসা।

8.30 am এ যাত্রা শুরু করলাম।
ইতিমধ্যেই ছাত্রছাত্রীরা রুট ম্যাপ distance ও time অনুসারে করে নিয়ে ছিল।
সেই অনুসারে আমাদের প্রথম দিনের geographical location গুলি ছিল-

1. Jagannath Mandir
2. Surya Mandir
3. Dasam Falls
4. Tagore Hill
5. Kake Dam.

এই ক্ষেত্রে সকল স্পট গুলির গাইড ছিলাম আমরা নিজেরাই। এক একটি স্থানের ইতিহাস, ভূগোল সম্পর্কিত সকল তথ্য এক একটি ছাত্র বা ছাত্রীকে সংগ্রহ করার দায়িত্ব দিয়েছিলাম। ফলে প্রত্যেকটি স্থানের বিবরণ সকল ছাত্রছাত্রীরাই শুনেছিল ও স্থান গুলির সাথে মিলিয়ে দেখে নিচ্ছিল। এইভাবেই কোনো ট্যুর ধাপে ধাপে এক্সকার্শন এ পরিণত হচ্ছিল ছাত্রছাত্রীদের হাত ধরেই।

Dasam falls এ গিয়ে ওরা নিজের চোখে আবিষ্কার করলো cascade, plung pool, boulder , tributary river ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কত কি।
ওদের এই প্রচেষ্টা গুলো দেখে নিজেকে মনে মনে বললাম , আগের batch গুলির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে কেন এক্সকার্শনে নিয়ে আসিনি। যাইহোক, কোনো এক জায়গা থেকে সবাই শুরু করে। 2022 না হয় আমার ক্ষেত্রে শুরু।

Tagore hill থেকে ওরা বুঝলো bird's eye view কি? ছাত্রছাত্রীরা hill থেকে দেখলো দূরের সমগ্র রাঁচি শহরকে।
দেখলো মালভূমি মাথা কেমন চ্যাপ্টা হয় ।
দেখলো বিক্ষিপ্তভাবে থাকা মোনাডোনাকগুলি, যেগুলো ওরা প্রথমে পাহাড়ের চূড়া ভেবেছিল।।

আর সাক্ষী রইলো দূরের অজানা কোন পাহাড়ের কোলে ঘটে যাওয়া সূর্যের অস্তমিত হওয়ার ঘটনায়।।

সন্ধ্যা নামার পর আর কাঁকে জলাধার যাওয়া হলো না। কিন্তু একরাশ আনন্দ, একগুচ্ছ ধারণা , স্মৃতি নিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম।

শিক্ষক হল Friend, philosopher and guide. তাই ছাত্র- শিক্ষক সম্পর্ক যাতে আরো সুদৃঢ় হয়, আরো নিকট হয় সেই জন্য আমি আমার পক্ষ থেকে সকল ছাত্রছাত্রীদের একসাথে birthday celebration এর জন্য কেকের আয়োজন করে ছিলাম। তা দেখে ওরা খুব আপ্লুত হল, আনন্দিত হলাম আমি।

সবাই খুব আনন্দ ও উৎসাহের সাথে সেলিব্রেশন করলাম। এর পর ওদের সাথেই গানের লড়াইয়ে যোগ দিলাম।সন্ধ্যার আগের ছিলাম ওদের guide, আর হলাম ওদের friend.
এর পর রাতের dinner শেষ করে ঘুমের দেশে যাত্রা করলাম। আবার আগামীকাল সকাল সকাল হোটেল ছেড়ে দিতে হবে আর অনেক গুলো স্পটও কভার করতে হবে।
20 oct, 2022:
সকলে 7.30তে রেডি হয়ে হোটেল চেক আউট করে রাস্তার ধারে মাটির হাঁড়িতে তৈরি চা পান করে 8am এ যাত্রা শুরু করলাম।
আমাদের পুর্ব নির্ধারিত স্পট গুলি হলো-
1. Jonha Falls
2. Hundru Falls
3. Getalsud Dam
4.Patratu Valley and Dam

সীতা ফলস কে প্রথম থেকে বাদ দিয়ে ছিলাম, কভার করার সময় হবে না বলে।

যাত্রাপথে একস্থানে গাড়ি থামিয়ে, লুচি, ঘুগনি দিয়ে জব্বর breakfast করে চললাম jonha falls এর দিকে।
প্রায় 700 সিঁড়ি অতিক্রম করে falls এর কাছে পৌঁছানো।
জলপ্রপাত যে কিভাবে ধাপে ধাপে নেমে আসে , আর কি তার গর্জন ,তা দেখতে হলে এই স্থানে আসতেই হবে।
জলকনায় সূর্যের আলো বিচ্ছুরিত হয়ে সর্বদা রামধনুর সৃষ্টি করছে।
চারিদিকে গ্রানাইট শিলার বোল্ডার, সাথে গ্রানাইট সিস্টের উপস্থিতি।
আর চারপাশে মিশ্র পর্ণমোচি অরণ্য। রয়েছে শাল ,মহুয়া, জারুল, কেন্দু পাতার জঙ্গল। ছাত্রছাত্ররা নিজেরাই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করলো এই রকম অরণ্যের বৈশিষ্ট্য।
আর দেখলো ওই স্থানের আদিবাসী মানুষের কিভাবে instant হাতে করে কাঠের বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করছে।

এর পরের গন্তব্য Hundru falls, প্রায় 1500 সিড়ি updown। আদিবাসী গ্রামের মাঝ দিয়ে গাড়ি চললো হুন্ড্রুর দিকে।
এটি ঝাড়খণ্ডের এক অনন্য সুন্দর উচ্চতম জলপ্রপাত।
প্রায় 90 মিটার উঁচু থেকে সুবর্ণরেখা নদী নিচে পড়ে hundru এর সৃষ্টি।
Granite ও Gniss শিলার সুস্পষ্ট গঠন এই স্থানে দেখা যায়।
ছাত্রছাত্রীরা এখানেই খুঁজে পেল তাদের বইয়ে পড়া শল্কমোচন ও প্রস্তর চাঁই খণ্ডিকরনের মতো আবহবিকারের বাস্তব চিত্র।
অনেকটা সময় উপভোগ করে দেশি মুরগির ঝোল ভাত তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে এগিয়ে চললাম Getalsud Dam এর দিকে।
25 মিনিট পর পৌছালাম dam এ।
ছাত্রছাত্রীরা প্রথম দেখল জলাধার কি সুবিশাল হয়, আর বাঁধ কি সুদীর্ঘ হয়।।
সুবর্ণরেখা নদীর গতিপথে এই বাঁধ ও জলাধার তৈরি হয়েছে।

এরপর মসৃন পথ ধরে এগোতে থাকলাম সকলের বহু দিনের আশা Patratu Valley এর দিকে। গুগল কর্তার মাধ্যমে সবাই দেখে নিয়েছিল Patratu এর রূপ ।
প্রায় 1ঘন্টা 15 মিনিট পর পৌছালাম Patratu. এই স্থান থেকে সূর্যাস্ত না দেখে ফেরাই যায় না। এখানে zigzag রাস্তা সকলে wow বলতে বাধ্য করলো। রাস্তার ধারে guardwall এর বসে ওরা আবিষ্কার করলো toposheet এ শেখা superimposed profile, ridge, conical hill এর মত landscape features।
আর সাক্ষী থাকলো এক না ভোলা সূর্যাস্তের ঘটনার।
আজ ফিরতে হবে, রাতে ট্রেন। ফিরতে কারোর মন চাইছে না। তাই সন্ধ্যার অনেকটা পর পর্যন্ত patratu তে সময় কাটিয়ে গাড়িতে হৈ হৈ করতে করতে স্টেশনে চলে এলাম। আজ রাতের মেনু তন্দুরি রুটি, বাটার মশালা, হাক্কা নুডলস।

রাতের একই ট্রেন kriyajoga. সময় 10.15pm.
সকলের মন ভারাক্রান্ত। ফিরতে যে ইচ্ছে করছে না। ফিরলেই তো সেই কলেজ, সেই tuition, সেই পড়া।
যাইহোক,
রাতে ট্রেনে উঠে সকলে cadburry দিয়ে একটু মিষ্টি মুখ করে সেই যে ঘুমোতে গেলাম, এক ঘুমে santragachi

21oct, 2022:
সকাল 5.45 am এ santragachi নেমে পরের বারের যাত্রায় আবার থাকবো, এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রত্যেকে বাড়ি ফিরলাম।

শিখলাম অনেক, জানলাম অনেক, মিশলাম অনেক,
যদিও সময় ছিল কিছু খনেক।

এর পরেও যদি কিছু বাকি থাকে,
নিচের ফটোতে তা খুঁজে নাও একটু কাজের ফাঁকে।

..................................................................