গরমে নাভিশ্বাস, তাই ঠিক করলাম এবার যেতেই হবে পাহাড়ে I কিন্তু কোথায়? শুরুতেই বাতিল করলাম দার্জিলিং বা গ্যাংটকের মতো ঘিঞ্জি শহর কে I সবাই মিলে ঠিক করলাম জঙ্গুর শান্ত গ্রাম তিংভংI তার সঙ্গে লাচুং, লাচেন আর ফেরার পথে আরো একবার ছোট্ট গ্রাম সিঙ্ঘিক I শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে চারজনে চেপে বসলাম I এনজিপি থেকে মনগন হয়ে গন্ত্যব্য তিংভং I তিস্তা কে পাশে রেখে এগিয়ে চললাম I হঠাৎ ড্রাইভার দাদা নদীর কিছুটা শুকিয়ে যাওয়া অংশে গাড়ি নামিয়ে দিলেন I জল কম থাকলে এভাবেই নদীর ওপর দিয়ে পারাপার করতে হয় I আর জল বেড়ে গেলে ভরসা রাফটিং বোট I কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের গ্রাম তিংভং I আমরা থাকবো দুপদেন লেপচার সাজানো হোমস্টে তে I সত্যি স্বপ্নের গ্রাম I চারদিকে শুধু সবুজ তার সঙ্গে রংবেরং এর ফুল I অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা ভরা তিংভং I দুপদেন এর আতিথেয়তা মন ভরিয়ে দিলো I পরদিন সকালে আকাশের মুখ ভার তবুও বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম I স্কুল, মনাস্ট্রি আর জঙ্গলে ভরা ঘন্টা তিনেকের ট্রেকিং I ধুলো ধোঁয়া ছাড়া সবুজ তিনভং I রাতে কোনো কাজ নেই শুধুমাত্র এখানকার নিস্তব্ধতাকে উপভোগ করা ছাড়া I নিজের নিঃশাস টাও শুনতে পারা যায় I এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা I

পরদিন আমরা বেরিয়ে পড়লাম লাচেন এর পথে I এবার আমাদের তিনদিনের সঙ্গী ড্রাইভার দাদা, সবসময় হাসিমুখ, মামাজী I বিকেলের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাচেন I লাচেন এর ধুলো ধোঁয়া ভরা শহরে মনে পড়ছিলো শান্ত সবুজ তিনভং কে I পরদিন ভোর পাঁচটায় মামাজী আমাদের নিয়ে রওনা হলো I মাঝে আধ ঘন্টার নুডুলস ব্রেক তারপর সোজা গুরদুম্মার লেক I অসামান্য দৃশ্য মন ভরিয়ে দিলো I চমক এবার ফেরার পথে, মামাজীর সাজেশন নিয়ে আমরা চললাম কালা পাত্থার I বরফে মোরা চারধার আর কিছু পথ যেতেই স্নো-ফল I লাচেন গেলে অবশ্যই যেতে হবে কালা পাত্থার I না হলে কিন্তু সত্যি মিস I এবার লাঞ্চ সেরে লাচুং I

লাচুং এ আমরা থাকবো মেন্ শহর থেকে একটু আগে ভিড় এড়িয়ে লাচুং হোমস্টে তে I লাচুং এ পেলাম নদীর টাটকা মাছ I বাঙালির মাছ পেলে তো সোনায় সোহাগা I পরের দিন সকালে বরফে মোরা রাস্তা দিয়ে প্রথমে জিরো পয়েন্ট তারপর ফেরার পথে য়ুমথাং এর ঠান্ডা হাওয়া I অসামান্য I সময় বেশি নেই আবার বেরিয়ে পড়া I গন্ত্যব্য সিঙ্ঘিক I মামাজী কে বিদায় দেবার পালা I সত্যি মন খারাপ লাগছে সরল হাসিখুশি এই মানুষ টার জন্য I তিনটে দিন আমাদের মাতিয়ে রেখেছিলো আমাদের সব আবদার পূরণ করে I

সিঙ্ঘিক এর সরকারি গেস্ট হাউস টি দুর্দান্ত I সবচেয়ে সুন্দর এদের ব্যবহার তার সাথে এখানকার খাবার I বাইরে বৃষ্টি I লোডশেডিং I ক্যান্ডেল লাইট আড্ডা তারপর ক্যান্ডেল লাইট ডিনার I আজকেই তো শেষ রাত, কাল আবার ফেরার পালা I সকালে ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম একটু ওপরে হাটা পথে ছোট্ট একটা মনাস্ট্রি দেখতে I ছোট হলেও খুব সুন্দর I আর সময় নেই I এবার ফিরতে হবে I সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি সুন্দর কিছু ভালোলাগা ছবি, কিছুটা ক্যামেরা তে আর অনেকটা মনের ভেতরে I