আমার #দ্বাদশ_জ্যোতিরলিঙ্গ #মহাকাল ভ্রমন কাহিনী
23/04/2018
বিকাল 4:30 সময় গোপাল জী ফোন করলেন , ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম ..এবার তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন আর তৈরী হয়ে নিন , আমি 5টার সময় হোটেলের নীচে গাড়ী নিয়ে চলে আসবো ।। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে আমি আর দাদু হোটেলের রিসেপশন এ বসে চা খাচ্ছি ....গোপাল জী চলে আসলেন যথা সময়ে ....জিজ্ঞেস করলাম আজ কি কি জায়গা/স্থান ঘুরে দেখাবেন আমাদের ....গাড়ীতে উঠেই বললেন ....সন্দীপনি আশ্রম , মঙ্গলনাথ মন্দির , গোধকালিকা মন্দির (Godkalika Temple),সিদ্ধ বট ,কালভৈরব মন্দির , ভ্রাতৃতর গুহা (Bhartihari cave),চক্রতীর্থ ঘাট (শ্মশান) ।।
প্রথমে গেলাম ....
#সন্দীপনি_আশ্রম :--- প্রাচীন কাল থেকেই
উজ্জয়ন মহাভারতকালের শুরুতে শিক্ষার একটি মহান আসন হওয়ার খ্যাতি অর্জন করেছিলো ।পৌরাণিক ঐতিহ্যের কথা অনুযায়ী, শ্রী সন্দীপানির আশ্রমে কৃষ্ণ , বলরাম ও সুদামা তাদের শিক্ষা লাভ করে। মন্দিরের ভিতর যে পাথরটি পাওয়া যায় 1 থেকে 100 নম্বর সংখ্যাটি লেখা সেটি গুরু সন্দীপানি দ্বারা লেখা হয়েছে। পুঁথি ঘেঁটে জানা যায় যে গোমতী কুণ্ড থেকে প্রাচীনকালে আশ্রামের তৃস্নার জল সরবরাহের উৎস ছিল। আশ্রমের ভিতর 64 টা ঘর আছে , শোনা যায় শ্রী কৃষ্ণ তার কূটনীতির 64 বিদ্যা আশ্রমের ওই 64ঘর গুলো থেকেই পেয়েছিলেন ।।
#মঙ্গলনাথ_মন্দির :--
হিন্দুশাস্ত্রে স্কন্দপুরান, মৎসপুরান হতে জানা যায়, শিপ্রা নদীর তীরে অবন্তিকা নগরী তে মঙ্গল গ্রহের জন্মস্থান ।। মৎসপুরান থেকে আরও জানা যায় যে , এখন যেখানে মন্দির অবস্থিত ওই স্থানেই আন্নাহাকাসুরের সাথে ভগবান শিবের ভীষন যুদ্ধ হয়, যুদ্ধের সময় শিবের কপাল থেকে এক ফোঁটা ঘাম মাটিতে পড়ে , তার থেকেই এই মঙ্গলের সৃষ্টি ।। মন্দিরে মঙ্গলনাথ বলতে আলাদা কোনো বিগ্রহ নেই , শিবলিঙ্গ কেই মঙ্গলনাথ রূপে পুজো করা হয় , এবং এখানে বাহন হিসাবে নন্দী মহারাজ নন ....মেষ এর মূর্তি স্থাপন করা আছে , যা কিনা মঙ্গল এর বাহন ।। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী জন্মকুন্ডলী তে মঙ্গলের ভৌমদোষ বা মঙ্গলের অন্য কোনো দোষ থাকলে তা একমাত্র এই মন্দিরেই নিবারণ করা হয় ।।
#গোধকালিকা_মাতা_মন্দির
হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী আমাদের 51টি শক্তিপীঠ আছে , এই 51পিঠের এক সতীপীঠ এই গদাকারিকা বা গোধকালিকা মাতার মন্দির , আবার উজ্জয়নের 22টি শ্বেতপীঠের ও একটি ।। এখানে সতীর #উপরের_ঠোঁট পতিত হয়েছে ।। মহান কবি কালিদাস এই দেবীর আরাধনা করেন বলে জানা যায় , এবং এখানেই দেবীর আশীর্বাদ লাভ করে , কবিতার জ্ঞান অর্জন করেন ।। এবং পরে রাজা বিক্রমাদিত্য'র সভা অলঙ্করণ করে ছিলেন , সভার নবরত্নের এক রত্ন হিসাবে ।।
#সিদ্ধ_বট
শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত এই সিদ্ধ বট গাছটি ।। উজ্জয়ন বাসী বিশ্বাস করে এই বটগাছ স্বয়ং দেবী দুর্গা নিজে হাতে রোপন করেন ।। এখন এই বটগাছ মন্দিরের ন্যায় পূজা হয় , এবং এর কান্ড শিব রূপে পূজা পাচ্ছে ।। হর পার্বতী পুত্র কার্তিক এখানে দারিদ্র তরনাচরনকে হত্যা করেছে বলে জানা যায় ।। এই সিদ্ধবট এ জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী কারোর জন্মকুন্ডলী তে কালসর্প দোষ থাকলে , পিত্রদোষ থাকলে তা নিবারণ করা হয় ।। এখানে পিন্ডদান ও করা হয় ।। আরও শোনা যায় ..রাজা বিক্রমাদিত্য বেতাল সাধনার জন্য এই সিদ্ধবটের তলায় ধ্যান করতেন ।।
#কালভৈরব_মন্দির
অষ্ট ভৈরব পুজো শিবের বিশেষ পুজোর একটি অংশ , তার মধ্যে প্রধান ভৈরব বাবা কালভৈরব ।। শোনা যায় এই মন্দিরটি শিপ্রার তীরে অবস্থিত ছিলো ,বর্তমান মন্দিরটি পুরানো মন্দিরের দেহাবশেষের উপর নির্মিত হয়েছে ..এই মূল মন্দিরটি রাজা ভদ্রসেন নির্মাণ করে দেন ।। স্কন্দপুরান এ অবন্তিকা খণ্ডে উল্লেখ আছে এই মন্দির তান্ত্রিক , অঘোর , কাপালিক সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্দির ।। যা কিনা আগে শুধুমাত্র এইসব সম্প্রদায়ের মানুষজন ছাড়া অনন্য সম্প্রদায়ের মানুষের মন্দিরের ভিতর প্রবেশ নিষেধ ছিলো ।।
বাবা ভৈরবের মূর্তিটি একটি মুখবিবরণী বা মুখ যা কুমকুম দিয়ে লেপন করা ।। ভৈরব বাবা'র রূপালী মাথা , একটি মারাঠা- শৈলী পাগড়ি সঙ্গে সজ্জিত করা হয় ।। ভৈরব বাবার সামনে ছোট্ট আর এক ভৈরব আছে ..যাকে বটুক ভৈরব নামে জানা যায় ।। বটুক ভৈরব ভৈরব বাবারই নিজের বাল্য রূপ ।।
ভৈরবের পুজো পঞ্চ #ম কারে হয়ে থাকে ।। পাঁচটি তান্ত্রিক আচারের মাধম্যে ভৈরবের কাছে পুজো দেওয়ার রীতি ছিলো তখনকার আমলে .. সুরা (মদ), মানসিক (মাংস), মীনা বা মৎস্য(মাছ), মুদ্রা (অঙ্গভঙ্গি বা পাকা শস্য) এবং মৈতুন(যৌন সম্পর্ক) ।। সেই সময়ে, ভৈরবের কাছে পাঁচটি জিনিস উত্সর্গ করা হলেও, এখন কেবল অ্যালকোহল দেওয়া হয় , অন্য চারটি উপহার সাংকেতিক (symbolic) রীতিনীতিগুলির রূপেই থাকে বলে জানা যায় ।। মন্দিরের বাইরে মদ কিনতে পাওয়া যায় ..দেশি কিংবা ইংরেজি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী কিনে মন্দিরে নিয়ে গেলে , পুরোহিত আপনার নাম গোত্র উচ্চারণ করে ,সুরা রূপার নির্মিত বাটির মাধ্যমে ভৈরবের ঠোঁটের সামনে রাখলে , মদ/সুরা নিমেষের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাবে ।।
এই অবন্তিকা তথা উজ্জয়ন নগরীর রাজা হলো বাবা মহাকাল , আর তারই রুদ্র রূপ কালভৈরব বাবা উজ্জয়ন তথা অবন্তিকা নগরীর দ্বারপাল বা সেনাপতি ।। তার অনুমতি বা দর্শন না করে মহাকাল জীর দর্শন করা হয় না , ভৈরব বাবা আদেশ বা অনুমতি না দিলে বাবা মহাকালের ভস্মরতি শৃঙ্গার দর্শন অনুচিত বলেই ধরা হয় , এবং ভৈরব দর্শন ছাড়া মহাকাল পূজা অর্ধেক পূণ্য ফল লাভ হয় ।।
{আমি আর দাদু ভৈরবের পুজোর জন্য কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম মদ/সুরা ।। পুজো দিয়েছি তখন সুরা অদৃশ্য হতেও দেখেছি , বিশ্বাস না থাকলে ..অযথা তর্ক করবেন না ধর্মীয় ব্যাপারে}
#ভ্রাতৃতর_গুহা (Bharthari Cave)
বলা হয় যে রাজা ভার্থী তিনি এখানে ধ্যান করতেন ।। এটি রাজা ভার্থী, আদি গুরু গোরখনাথ এবং দাদা গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথের তপসিয়া স্থল ।। রাজা ভার্থী ছিলেন বিক্রমাদিত্য'র বড় ভাই । সবাই বিশ্বাস করেন যে তিনি পার্থিব জীবন ছেড়ে এখানে ধ্যান এবং তপস্যা করেছেন এবং তার বিখ্যাত রচনা "বৈরাগী -সাংস্কৃতিক" সম্ভবত এখানেই রচনা করেছেন ।। এই গুহা প্রাকৃতিক গুহা , এর দেওয়ালে নানা ভাস্কর্য করা আছে ।।
{আমি আর দাদু কাছ থেকে ঘুরেই চলে এসেছিলাম, গুহার ভেতর সেই ভাবে যাওয়া হয় নি অন্ধকার হয়ে গেছিলো বলে , তারওপর দাদুর শরীরের দিকেও আমাকে খেয়াল রাখতে হচ্ছিলো এই গরমে}
#চক্রতীর্থ_ঘাট (মহাকাল শ্মশান)
গোপাল'জী কে একপ্রকার জোড় করেই নিয়ে গেছিলাম , এই পবিত্র শ্মশানে ।। আসল ইচ্ছা ছিলো অঘোরী বোম বোম নাথ জীর সাথে সাক্ষাৎ করার ।। আসলে যখনই মহাকাল -উজ্জয়ন নিয়ে Youtube এ ভিডিও দেখেছি , বারে বারে ওনার ও ভিডিও দেখেছি ..একপ্রকার ভালো লাগা আর ভীষণ কৌতূহল নিয়েই যাওয়া ওই রাতে শ্মশানে ।। গা ছম ছমে পরিবেশে জ্বলন্ত চিতা গুলো দেখলাম ....পৃথিবীর মায়া শেষ করে ইহ লোক ত্যাগ করে ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে ,মনে হয় লোভ মায়া সবই ত্যাগ করে তাড়া বেশ খুশি হয়েই ইহ লোক ত্যাগ করেছে ।।
গেলাম ওনার কুঠিরে , ওনার সবসময়ের সাথী শিষ্য অঘোরী বাবা কে জানালেন ....কোলকাতা থেকে 2জন এসেছেন ।। উনি খুশি হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের কে কুঠিরে ডেকে নিলেন , বসলাম কাছে ....সেই রাগ -গম্ভীর অঘোরী ব্যাপার নেই , একদম খুশি মনে আমাদের আসার কারন জিজ্ঞেস করলেন .....বলেছিলাম আমার জন্মদিন তাই দাদু কে নিয়ে এসেছি মহাকাল জী'র আশীর্বাদ পেতে ,সাথে তার শিষ্য অঘোরী বোম বোম নাথ জীর ও
হটাৎ কিছুক্ষন চুপ থেকে শিশু'র মতন হাসতে লাগলেন ।। খুব খুশি হয়েছিলেন আমার জন্মদিনে দাদু কে তীর্থ করাতে এনেছি শুনে
কোলকাতা নিয়ে অনেক কথা বললেন , ওনার অঘোরী জীবন কোলকাতার নিমতলা শ্মশানে ও কেটেছে ....পরবর্তী কালে গুরুর আদেশে উজ্জয়ন চলে আসা ।। আমাদের বেহালা নিয়েও ওনার অনেক গল্প ...বিশেষ করে সৌরভ গাঙ্গুলি কে নিয়েও ওই রাতেই 2জনকে ওনার যজ্ঞস্থলের কাছে নিয়ে যান ....বেশ কিছুক্ষন বসে ছিলাম আমরা , তারপর তো উনি আসতে আসতে ওনার নিজের অঘোর চর্চায় ব্যস্ত হয়ে যান ।। আমরা চলে আসার সময় উনি পরের দিন ভাণ্ডারায় যোগ দেবার জন্য নিমতন্ন করেন
যখন চলে আসছি ওনার কুঠির ছেড়ে তখন ওনার কালু ভুলুরা গাড়ী পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসে , বোম বোম জীর আদেশে ।।
কিছুক্ষন পরে হোটেল ফিরে আসি , ভীষন ক্লান্ত লাগছিলো আমাদের , কিছুক্ষন পর হাত মুখ ধুয়ে .. আমরা উজ্জয়ন নগরী'তে বেড়িয়ে পরি জন্মদিনের খাওয়া দাওয়া করার জন্য ...সাথে গোপাল জী কে নিয়ে একটি হোটেলে নিরামিষ থালি অর্ডার করে পেট পুজো সেরে আবার ফিরে আসা হোটেলে ।। রাতে শুয়ে ....শুধু অপেক্ষা পরের দিন ভোরে মহাকাল জী'র ভস্মরতি দর্শন করার জন্য .....
23/04/2018
বিকাল 4:30 সময় গোপাল জী ফোন করলেন , ঘুম ভাঙিয়ে দিলাম ..এবার তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন আর তৈরী হয়ে নিন , আমি 5টার সময় হোটেলের নীচে গাড়ী নিয়ে চলে আসবো ।। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে আমি আর দাদু হোটেলের রিসেপশন এ বসে চা খাচ্ছি ....গোপাল জী চলে আসলেন যথা সময়ে ....জিজ্ঞেস করলাম আজ কি কি জায়গা/স্থান ঘুরে দেখাবেন আমাদের ....গাড়ীতে উঠেই বললেন ....সন্দীপনি আশ্রম , মঙ্গলনাথ মন্দির , গোধকালিকা মন্দির (Godkalika Temple),সিদ্ধ বট ,কালভৈরব মন্দির , ভ্রাতৃতর গুহা (Bhartihari cave),চক্রতীর্থ ঘাট (শ্মশান) ।।
প্রথমে গেলাম ....
#সন্দীপনি_আশ্রম :--- প্রাচীন কাল থেকেই
উজ্জয়ন মহাভারতকালের শুরুতে শিক্ষার একটি মহান আসন হওয়ার খ্যাতি অর্জন করেছিলো ।পৌরাণিক ঐতিহ্যের কথা অনুযায়ী, শ্রী সন্দীপানির আশ্রমে কৃষ্ণ , বলরাম ও সুদামা তাদের শিক্ষা লাভ করে। মন্দিরের ভিতর যে পাথরটি পাওয়া যায় 1 থেকে 100 নম্বর সংখ্যাটি লেখা সেটি গুরু সন্দীপানি দ্বারা লেখা হয়েছে। পুঁথি ঘেঁটে জানা যায় যে গোমতী কুণ্ড থেকে প্রাচীনকালে আশ্রামের তৃস্নার জল সরবরাহের উৎস ছিল। আশ্রমের ভিতর 64 টা ঘর আছে , শোনা যায় শ্রী কৃষ্ণ তার কূটনীতির 64 বিদ্যা আশ্রমের ওই 64ঘর গুলো থেকেই পেয়েছিলেন ।।
#মঙ্গলনাথ_মন্দির :--
হিন্দুশাস্ত্রে স্কন্দপুরান, মৎসপুরান হতে জানা যায়, শিপ্রা নদীর তীরে অবন্তিকা নগরী তে মঙ্গল গ্রহের জন্মস্থান ।। মৎসপুরান থেকে আরও জানা যায় যে , এখন যেখানে মন্দির অবস্থিত ওই স্থানেই আন্নাহাকাসুরের সাথে ভগবান শিবের ভীষন যুদ্ধ হয়, যুদ্ধের সময় শিবের কপাল থেকে এক ফোঁটা ঘাম মাটিতে পড়ে , তার থেকেই এই মঙ্গলের সৃষ্টি ।। মন্দিরে মঙ্গলনাথ বলতে আলাদা কোনো বিগ্রহ নেই , শিবলিঙ্গ কেই মঙ্গলনাথ রূপে পুজো করা হয় , এবং এখানে বাহন হিসাবে নন্দী মহারাজ নন ....মেষ এর মূর্তি স্থাপন করা আছে , যা কিনা মঙ্গল এর বাহন ।। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী জন্মকুন্ডলী তে মঙ্গলের ভৌমদোষ বা মঙ্গলের অন্য কোনো দোষ থাকলে তা একমাত্র এই মন্দিরেই নিবারণ করা হয় ।।
#গোধকালিকা_মাতা_মন্দির
হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী আমাদের 51টি শক্তিপীঠ আছে , এই 51পিঠের এক সতীপীঠ এই গদাকারিকা বা গোধকালিকা মাতার মন্দির , আবার উজ্জয়নের 22টি শ্বেতপীঠের ও একটি ।। এখানে সতীর #উপরের_ঠোঁট পতিত হয়েছে ।। মহান কবি কালিদাস এই দেবীর আরাধনা করেন বলে জানা যায় , এবং এখানেই দেবীর আশীর্বাদ লাভ করে , কবিতার জ্ঞান অর্জন করেন ।। এবং পরে রাজা বিক্রমাদিত্য'র সভা অলঙ্করণ করে ছিলেন , সভার নবরত্নের এক রত্ন হিসাবে ।।
#সিদ্ধ_বট
শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত এই সিদ্ধ বট গাছটি ।। উজ্জয়ন বাসী বিশ্বাস করে এই বটগাছ স্বয়ং দেবী দুর্গা নিজে হাতে রোপন করেন ।। এখন এই বটগাছ মন্দিরের ন্যায় পূজা হয় , এবং এর কান্ড শিব রূপে পূজা পাচ্ছে ।। হর পার্বতী পুত্র কার্তিক এখানে দারিদ্র তরনাচরনকে হত্যা করেছে বলে জানা যায় ।। এই সিদ্ধবট এ জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী কারোর জন্মকুন্ডলী তে কালসর্প দোষ থাকলে , পিত্রদোষ থাকলে তা নিবারণ করা হয় ।। এখানে পিন্ডদান ও করা হয় ।। আরও শোনা যায় ..রাজা বিক্রমাদিত্য বেতাল সাধনার জন্য এই সিদ্ধবটের তলায় ধ্যান করতেন ।।
#কালভৈরব_মন্দির
অষ্ট ভৈরব পুজো শিবের বিশেষ পুজোর একটি অংশ , তার মধ্যে প্রধান ভৈরব বাবা কালভৈরব ।। শোনা যায় এই মন্দিরটি শিপ্রার তীরে অবস্থিত ছিলো ,বর্তমান মন্দিরটি পুরানো মন্দিরের দেহাবশেষের উপর নির্মিত হয়েছে ..এই মূল মন্দিরটি রাজা ভদ্রসেন নির্মাণ করে দেন ।। স্কন্দপুরান এ অবন্তিকা খণ্ডে উল্লেখ আছে এই মন্দির তান্ত্রিক , অঘোর , কাপালিক সম্প্রদায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্দির ।। যা কিনা আগে শুধুমাত্র এইসব সম্প্রদায়ের মানুষজন ছাড়া অনন্য সম্প্রদায়ের মানুষের মন্দিরের ভিতর প্রবেশ নিষেধ ছিলো ।।
বাবা ভৈরবের মূর্তিটি একটি মুখবিবরণী বা মুখ যা কুমকুম দিয়ে লেপন করা ।। ভৈরব বাবা'র রূপালী মাথা , একটি মারাঠা- শৈলী পাগড়ি সঙ্গে সজ্জিত করা হয় ।। ভৈরব বাবার সামনে ছোট্ট আর এক ভৈরব আছে ..যাকে বটুক ভৈরব নামে জানা যায় ।। বটুক ভৈরব ভৈরব বাবারই নিজের বাল্য রূপ ।।
ভৈরবের পুজো পঞ্চ #ম কারে হয়ে থাকে ।। পাঁচটি তান্ত্রিক আচারের মাধম্যে ভৈরবের কাছে পুজো দেওয়ার রীতি ছিলো তখনকার আমলে .. সুরা (মদ), মানসিক (মাংস), মীনা বা মৎস্য(মাছ), মুদ্রা (অঙ্গভঙ্গি বা পাকা শস্য) এবং মৈতুন(যৌন সম্পর্ক) ।। সেই সময়ে, ভৈরবের কাছে পাঁচটি জিনিস উত্সর্গ করা হলেও, এখন কেবল অ্যালকোহল দেওয়া হয় , অন্য চারটি উপহার সাংকেতিক (symbolic) রীতিনীতিগুলির রূপেই থাকে বলে জানা যায় ।। মন্দিরের বাইরে মদ কিনতে পাওয়া যায় ..দেশি কিংবা ইংরেজি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী কিনে মন্দিরে নিয়ে গেলে , পুরোহিত আপনার নাম গোত্র উচ্চারণ করে ,সুরা রূপার নির্মিত বাটির মাধ্যমে ভৈরবের ঠোঁটের সামনে রাখলে , মদ/সুরা নিমেষের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাবে ।।
এই অবন্তিকা তথা উজ্জয়ন নগরীর রাজা হলো বাবা মহাকাল , আর তারই রুদ্র রূপ কালভৈরব বাবা উজ্জয়ন তথা অবন্তিকা নগরীর দ্বারপাল বা সেনাপতি ।। তার অনুমতি বা দর্শন না করে মহাকাল জীর দর্শন করা হয় না , ভৈরব বাবা আদেশ বা অনুমতি না দিলে বাবা মহাকালের ভস্মরতি শৃঙ্গার দর্শন অনুচিত বলেই ধরা হয় , এবং ভৈরব দর্শন ছাড়া মহাকাল পূজা অর্ধেক পূণ্য ফল লাভ হয় ।।
{আমি আর দাদু ভৈরবের পুজোর জন্য কিনে নিয়ে গিয়েছিলাম মদ/সুরা ।। পুজো দিয়েছি তখন সুরা অদৃশ্য হতেও দেখেছি , বিশ্বাস না থাকলে ..অযথা তর্ক করবেন না ধর্মীয় ব্যাপারে}
#ভ্রাতৃতর_গুহা (Bharthari Cave)
বলা হয় যে রাজা ভার্থী তিনি এখানে ধ্যান করতেন ।। এটি রাজা ভার্থী, আদি গুরু গোরখনাথ এবং দাদা গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথের তপসিয়া স্থল ।। রাজা ভার্থী ছিলেন বিক্রমাদিত্য'র বড় ভাই । সবাই বিশ্বাস করেন যে তিনি পার্থিব জীবন ছেড়ে এখানে ধ্যান এবং তপস্যা করেছেন এবং তার বিখ্যাত রচনা "বৈরাগী -সাংস্কৃতিক" সম্ভবত এখানেই রচনা করেছেন ।। এই গুহা প্রাকৃতিক গুহা , এর দেওয়ালে নানা ভাস্কর্য করা আছে ।।
{আমি আর দাদু কাছ থেকে ঘুরেই চলে এসেছিলাম, গুহার ভেতর সেই ভাবে যাওয়া হয় নি অন্ধকার হয়ে গেছিলো বলে , তারওপর দাদুর শরীরের দিকেও আমাকে খেয়াল রাখতে হচ্ছিলো এই গরমে}
#চক্রতীর্থ_ঘাট (মহাকাল শ্মশান)
গোপাল'জী কে একপ্রকার জোড় করেই নিয়ে গেছিলাম , এই পবিত্র শ্মশানে ।। আসল ইচ্ছা ছিলো অঘোরী বোম বোম নাথ জীর সাথে সাক্ষাৎ করার ।। আসলে যখনই মহাকাল -উজ্জয়ন নিয়ে Youtube এ ভিডিও দেখেছি , বারে বারে ওনার ও ভিডিও দেখেছি ..একপ্রকার ভালো লাগা আর ভীষণ কৌতূহল নিয়েই যাওয়া ওই রাতে শ্মশানে ।। গা ছম ছমে পরিবেশে জ্বলন্ত চিতা গুলো দেখলাম ....পৃথিবীর মায়া শেষ করে ইহ লোক ত্যাগ করে ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে ,মনে হয় লোভ মায়া সবই ত্যাগ করে তাড়া বেশ খুশি হয়েই ইহ লোক ত্যাগ করেছে ।।
গেলাম ওনার কুঠিরে , ওনার সবসময়ের সাথী শিষ্য অঘোরী বাবা কে জানালেন ....কোলকাতা থেকে 2জন এসেছেন ।। উনি খুশি হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের কে কুঠিরে ডেকে নিলেন , বসলাম কাছে ....সেই রাগ -গম্ভীর অঘোরী ব্যাপার নেই , একদম খুশি মনে আমাদের আসার কারন জিজ্ঞেস করলেন .....বলেছিলাম আমার জন্মদিন তাই দাদু কে নিয়ে এসেছি মহাকাল জী'র আশীর্বাদ পেতে ,সাথে তার শিষ্য অঘোরী বোম বোম নাথ জীর ও
হটাৎ কিছুক্ষন চুপ থেকে শিশু'র মতন হাসতে লাগলেন ।। খুব খুশি হয়েছিলেন আমার জন্মদিনে দাদু কে তীর্থ করাতে এনেছি শুনে
কোলকাতা নিয়ে অনেক কথা বললেন , ওনার অঘোরী জীবন কোলকাতার নিমতলা শ্মশানে ও কেটেছে ....পরবর্তী কালে গুরুর আদেশে উজ্জয়ন চলে আসা ।। আমাদের বেহালা নিয়েও ওনার অনেক গল্প ...বিশেষ করে সৌরভ গাঙ্গুলি কে নিয়েও ওই রাতেই 2জনকে ওনার যজ্ঞস্থলের কাছে নিয়ে যান ....বেশ কিছুক্ষন বসে ছিলাম আমরা , তারপর তো উনি আসতে আসতে ওনার নিজের অঘোর চর্চায় ব্যস্ত হয়ে যান ।। আমরা চলে আসার সময় উনি পরের দিন ভাণ্ডারায় যোগ দেবার জন্য নিমতন্ন করেন
যখন চলে আসছি ওনার কুঠির ছেড়ে তখন ওনার কালু ভুলুরা গাড়ী পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসে , বোম বোম জীর আদেশে ।।
কিছুক্ষন পরে হোটেল ফিরে আসি , ভীষন ক্লান্ত লাগছিলো আমাদের , কিছুক্ষন পর হাত মুখ ধুয়ে .. আমরা উজ্জয়ন নগরী'তে বেড়িয়ে পরি জন্মদিনের খাওয়া দাওয়া করার জন্য ...সাথে গোপাল জী কে নিয়ে একটি হোটেলে নিরামিষ থালি অর্ডার করে পেট পুজো সেরে আবার ফিরে আসা হোটেলে ।। রাতে শুয়ে ....শুধু অপেক্ষা পরের দিন ভোরে মহাকাল জী'র ভস্মরতি দর্শন করার জন্য .....