অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[প্রথম অধ্যায়-৩য় অংশ]
প্রশ্ন-১. সমভূমি [Plain] সৃষ্টির কারণ গুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো ।
উত্তর: উৎপত্তি অনুসারে বিভিন্ন সমভূমিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
১) সঞ্চয়জাত সমভূমি,
২) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং
৩) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।
১) সঞ্চয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নদীর দু’পাশে বা নদী মোহনায় পলি জমে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় । সঞ্চয়জাত সমভূমিকে প্রধানত ৮ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
ক) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] সৃষ্টির কারণ- নদীর দু’পাশে বা নদী মোহনায় পলি জমে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, গাঙ্গেয় সমভূমি)।
খ) প্লাবন সমভূমি বা বন্যাগঠিত ভূমি [Flood Plain] সৃষ্টির কারণ- বন্যার জলে সঞ্চিত পলির দ্বারা এই সমভূমি গড়ে ওঠে (যেমন, ব্রহ্মপুত্র সমভূমি)।
গ) বদ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] সৃষ্টির কারণ- নদীর মোহনায় পলি জমে ব -আকৃতির সমভূমি গড়ে ওঠে (যেমন, গঙ্গার মোহনায় অবস্থিত ব-দ্বীপটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি ) ।
ঘ) উপকূলীয় সমভূমি [Coastal Plain] সৃষ্টির কারণ- উপকূলের কাছাকাছি সমূদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলির দ্বারা ভরাট হয়ে অথবা ভূমিকম্পের ফলে উঁচু হয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, দিঘার জুনপুটে গঠিত সমভূমি)।
ঙ) হ্রদ সমভূমি সৃষ্টির কারণ- নদীবাহিত নুড়ি, পলি প্রভৃতির দ্বারা কোনো হ্রদ ভরাট হয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল)।
চ) লাভা সমভূমি [Lava Plain] সৃষ্টির কারণ- আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে লাভা গঠিত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর দিকের কিছু অংশ)।
ছ) হিমবাহ সমভূমি সৃষ্টির কারণ- হিমবাহের দ্বারা সৃষ্টি হয়ে হিমবাহ সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চলের সমভূমি)।
জ) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] সৃষ্টির কারণ- মরুভূমির বালি উড়ে গিয়ে বহু দূরে সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, গোবি মরুভূমির বালিতে হোয়াং হো নদীর অববাহিকায় এই রকম সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে)।
২) ক্ষয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নীচু মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্ষয়জাত সমভূমির সৃষ্টি হয়। ক্ষয়জাত সমভূমি দু ধরনের হয় যথা— ক) সমপ্রায় ভূমি এবং খ) পাদদেশীয় সমভূমি।
ক) সমপ্রায় ভূমি সৃষ্টির কারণ: প্রাচীন মালভূমি বা উচ্চভূমি বহু দিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ঢেউ খেলানো প্রায় সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে সমপ্রায় ভূমিতে সৃষ্টি করে (যেমন, ঝাড়খন্ডের ছোটনাগপুরের মালভূমির কোনো কোনো অংশ)।
খ) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টির কারণ- বায়ু এবং জলের ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে মরুভূমি অঞ্চলের পর্বতের ঢাল ও পাদদেশভাগ পাথরে ঢাকা ঢালু সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টি হয় (অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশের সমভূমি )।
৩) ভু-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: ভূ-আন্দোলনের ফলে সাধারণত দু’রকমের সমভূমির সৃষ্টি হয়, যথা— ক) উন্নত সমভূমি ও খ) অবনত সমভূমি । ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল) এবং উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।
ক) উন্নত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল)
খ) অবনত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।
প্রশ্ন-২. সমভূমির [Plain] বৈশিষ্ট্য কী ?
উত্তর: সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে বা সামান্য উঁচুতে (৩০০ মিটারের মধ্যে) অবস্থিত সমতল স্থলভাগকে সমভূমি [Plain] বলে।
সমভূমির [Plain] বৈশিষ্ট্য:-
১) সমভূমির [Plain] উপরিভাগ সাধারণত সমতল হয়;
২) সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশি উঁচু হয়না;
৩) কোনো কোনো স্থানে সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ কিছুটা উঁচু হয় (উদাহরণ, উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতের পাদদেশের সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিকটা উঁচু);
৪) কোনো কোনো স্থানের সমভূমি আবার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কিছুটা নীচে অবস্থিত হয় (উদাহরণ, এশিয়া মহাদেশের কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল ভাগের সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নীচু);
৫) কখনও কখনও সমভূমি সামান্য কিছুটা ঢেউখেলানো হয় (উদাহরণ, বর্ধ্মান জেলার সমভূমি কিছুটা ঢেউ খেলানো) ।
প্রশ্ন-৩. উদাহরণ সহ বিভিন্ন প্রকার সমভূমির বর্ণনা দাও।
উত্তর: সমুদ্রপৃষ্ঠের একই তলে বা সামান্য উঁচুতে ৩০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত বিস্তীর্ণ সমতল স্থলভাগকে সমভূমি [Plains] বলে । পৃথিবীর বেশিরভাগ সমভূমি সমুদ্র উপকূল এবং নদী অববাহিকায় গড়ে উঠেছে ।
উৎপত্তি ও ভূমিরূপ গঠনের বৈচিত্র অনুসারে পৃথিবীর সমভূমিগুলিকে প্রধান তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
ক) সঞ্চয়জাত সমভূমি, খ) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং গ) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।
ক) সঞ্চয়জাত সমভূমি: যুগ যুগ ধরে পলি সঞ্চিত হওয়ার ফলে নদী, সমুদ্র বা হ্রদ ভরাট হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে সঞ্চয়জাত সমভূমি বলা হয় । উৎপত্তি অনুসারে সঞ্চয়জাত সমভূমিকে আট ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-
১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain]:- অনেকদিন ধরে নদীর দুপাশে বা নদী মোহনায় নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে এই ধরনের সমতল ভূভাগের সৃষ্টি হয় । উদাহরণ, উত্তর ভারতের সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র সমভূমি এই রকমের সমভূমির উদাহরণ।
২) প্লাবনসমভূমি এবং স্বাভাবিক বাঁধ [Flood Plain]:- নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছা কাছি চলে এলে নদীর ভূমির ঢাল হ্রাস পায় এবং নদী বাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদীগর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে যার ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ কমে যায় । বর্ষাকালে হঠাৎ নদীতে জল বেড়ে গেলে এই অগভীর নদী উপত্যকা অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না, এর ফলে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । বন্যার জল দুকূল প্লাবিত করে এবং প্লাবিত অঞ্চলে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে এক নতুন ভূমিরূপ বা প্লাবন সম ভূমির [Flood Plain] সৃষ্টি হয় । নদীর দুই তীরে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি ক্রমাগত জমা হলে নদী তীর ধীরে ধীরে বাঁধের মতো উঁচু হয়ে যায় এই বাঁধ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়, তাই একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে । পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার গতিপথের দুপাশে প্লাবনভূমি ও স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায় । কলকাতা শহর গঙ্গার স্বাভাবিক বাঁধের উপর অবস্থিত।
৩) ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] : নদীর মোহনায় নদীবাহিত পলি জমে (নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি) অনেকটা মাত্রাহীন ‘ব’ মতো যে সমতল ভূভাগ সৃষ্টি হয় তাকে ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] বলে।
উদাহরণ: গঙ্গা নদীর ব-দ্বীপটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি ।
৪) উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] : উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলিদ্বারা ভরাট হয়ে যে সমতল ভূমি সৃষ্টি হয় তাকে উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] বলে । দিঘার নিকটবর্তী জুনপুটে পলি জমে এরকম সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
৫) হ্রদ সমভূমি: নদীবাহিত বালি, নুড়ি, কাঁকর, পলি প্রভৃতি দ্বারা কোনো হ্রদ ভরাট হলে কালক্রমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে হ্রদ সমভূমি বলে। কাশ্মীর উপত্যকা ও উত্তরবঙ্গের তাল সমভূমি অঞ্চল হ্রদ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ।
৬) লাভা সমভূমি [Lava Plain] : আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে পৃথিবীর ভিতরকার গলিত লাভা ভূগর্ভের ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে অনেক সময় যে সমতল ভূমির সৃষ্টি করে, তাকে লাভা সমভূমি [Lava Plain] বলে। দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম দিকের কিছু অংশে লাভা সমভূমি [Lava Plain] দেখা যায়।
৭) হিমবাহ সমভূমি: যেসব সমভূমি হিমবাহের প্রবল চাপ, ঘর্ষণ প্রভৃতি কারণের ফলে সৃষ্টি হয়, তাদের হিমবাহ সমভূমি বলে । ভারতের কাশ্মীর ও কুমায়ুন অঞ্চলে এই ধরনের সমভূমি দেখা যায়।
৮) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain]: মরুভূমির সূক্ষ্ম বালিরাশি কখনও কখনও বহুদূরে উঁড়ে গিয়ে সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি সৃষ্টি করে তাকে লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] বলে। উদাহরণ, চিনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকায় এই ধরনের সমভূমি দেখা যায় ।
খ) ক্ষয়জাত সমভূমি: নীচু মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে ক্ষয়জাত সমভূমি বলে।
ক্ষয়জাত সমভূমিকে প্রধানত দু ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— ১) সমপ্রায় ভূমি এবং ২) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট।
১) সমপ্রায় ভূমি: নদীর জলপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাচীন মালভূমি এবং উচ্চভূমি বহুদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচু-নীচু ঢেউখেলানো ভূমি বা প্রায়-সমতলভূমিতে পরিণত হয়, এদের সমপ্রায় ভূমি বলে। উদাহরণ, ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমির কোনো কোনো অংশ সমপ্রায় ভূমি এবং এদের মধ্যে পরেশনাথ ও পাঞ্চেত পাহাড় দুটি হল মোনাডনক।
২) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট: ক্রমাগত জল এবং বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে মরুভূমি অঞ্চলে পর্বতের ঢাল ও পাদদেশভাগ যখন পাথরে ঢাকা ঢালু সমতল ভূমিতে পরিণত হয় তখন তাকে পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট বলে। উদাহরণ- আফ্রিকা মহাদেশের সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায়।
গ) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি: ভূমিকম্পের ফলে এই ধরনের সমভূমির সৃষ্টি হয়।
১) উন্নত সমভূমি- ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি করে , যেমন- ভারতের করমন্ডল উপকূল)।
২) অবনত ভূমি- ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো উঁচু স্থান বসে গিয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি করে । তুরানের নিম্ন সমভূমি অবনত সমভূমির উদাহরণ।
প্রশ্ন-৪. উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে তিন রকমের সঞ্চয়জাত সমভূমির বর্ণনা দাও ।
উত্তর: উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে, সঞ্চয়জাত সমভূমিগুলিকে প্রধান তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain], ২) ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] এবং ৩) উপকূলিয় সমভূমি [Coastal Plain] ।
১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] এবং প্লাবন ভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি (Alluvial Flood Plain): নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছাকাছি চলে এলে নদীপথের ঢাল হ্রাস পায় এবং নদীবাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদী গর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে, এর ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ কমে যায় । বর্ষাকালে হঠাৎ জল বেড়ে গেলে এই অগভীর নদী অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না এবং এর ফলে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । নদীতে বন্যা দেখা দিলে বন্যার জলে দু’কূল প্লাবিত হয় এবং প্লাবিত অঞ্চলে পলি, বালি ও কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে এক নতুন ভূমিরূপ বা প্লাবনভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পলিগঠিত সমভূমি বলা হয়। নদীতীরের দুপাশে বন্যার জলে সঞ্চিত পলির দ্বারা গড়ে ওঠা সমতলভূমিকে প্লাবনভূমি বলে।
২) বদ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] : নদী যেখানে সমুদ্রে এসে পড়ে তাকে নদীর মোহনা বলে । এই মোহানাতে নদীর জলের সঙ্গে বাহিত পলি জমে ( নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি) যে নতুন ভূভাগের সৃষ্টি হয় তাকে দ্বীপ বলে । দ্বীপের চারিদিকেই জল থাকে । এই দ্বীপকে দেখতে যখন অনেকটা বাংলা ‘ব’বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টা -র মতো হয়, তখন তাকে বদ্বীপ বা ডেল্টা (Delta) বলে । বদ্বীপ সৃষ্টির পর নদীর জল বদ্বীপে বাধাপ্রাপ্ত হলে নদী বহু সাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং বদ্বীপগুলির চার ধারে আরও বেশি মাত্রায় পলি জমতে থাকে, যার ফলে বদ্বীপগুলো ক্রমশ আয়তনে বড় হয়ে মূল ভূভাগের সঙ্গে মিশে যায় । এইভাবে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তাকে ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] বলে।
উদাহরণ: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার মধ্যবর্তী সমভূমিটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি । আফ্রিকার নীলনদের বদ্বীপ সমভূমিটি উর্বরতা ও কৃষি উৎপাদনের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত ।
৩) উপকূলীয় সমভূমি (Coastal Plain) : নানাভাবে উপকূল সমভূমি সৃষ্টি হয়, যেমন-
১) সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে আসা পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি পদার্থ উপকূলের অগভীর সমুদ্রে ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে উপকূলে সমভূমির সৃষ্টি করে; আবার
২) সমুদ্রের ঢেউ এবং জোয়ার-ভাটার প্রভাবে উপকূলের ভূমির ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে সমভূমির সৃষ্টি করে । এছাড়া
৩) উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলি দ্বারা ভরাট হয়ে বা ভূমিকম্পের ঊর্ধ্বচাপের প্রভাবে উঁচু হয়েও উপকূলীয় সমভূমি সৃষ্টি হতে পারে।
উদাহরণ: ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের কোনও কোনও অংশে উপকূলীয় সমভূমি দেখা যায়। দিঘার নিকটবর্তী জুনপুটে পলি জমে এরকম সমভূমি সৃষ্টি হচ্ছে ।
প্রশ্ন-৫ . উৎপত্তি ও গঠন অনুযায়ী উদাহরণ সহ সমভূমির [Plains] শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর: উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে সমস্ত সমভূমিকে [Plains] প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
১) সঞ্চয়জাত সমভূমি,
২) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং
৩) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।
ক) সঞ্চয়জাত সমভূমির শ্রেণিবিভাগ:- সঞ্চয়জাত সমভূমিকে প্রধানত ৮ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] (যেমন- গাঙ্গেয় সমভূমি পলিগঠিত সমভূমির উদাহরণ );
২) প্লাবন সমভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি [Flood Plain] (যেমন, ব্রহ্মপুত্র সমভূমি প্লাবন সমভূমির উদাহরণ );
৩) বদ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] (গাঙ্গেয় মোহনায় অবস্থিত ব-দ্বীপটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সমভূমি);
৪) উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] ( দিঘার জুনপুটে গঠিত সমভূমি উপকূল সমভূমির উদাহরণ );
৫) হ্রদ সমভূমি (উত্তর ও দক্ষিন দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল হ্রদ সমভূমির উদাহরণ );
৬) লাভা সমভূমি [Lava Plain] (দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর দিকের কিছু অংশ লাভা সমভূমির উদাহরণ );
৭) হিমবাহ সমভূমি (উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চলের সমভূমি হিমবাহ সমভূমির উদাহরণ ) এবং
৮) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] এর রং হলদে (চিনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকার সমভূমি লোয়েস সমভূমির উদাহরণ) ।
প্রশ্ন-৬. আউট-ওয়াস সমভূমি [Out-Wash-Plain] কাকে বলে উদাহরণ সহ লেখ।
উত্তর:- আউট-ওয়াস সমভূমি [Out-Wash-Plain] :- পর্বতের হিমবাহ উত্তাপে গলতে শুরু করলে, হিমবাহ বাহিত পাথর, কাঁকর, নুড়ি, বালি প্রভৃতি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সঞ্চিত হয়ে যে বিশাল সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে আউট ওয়াস সমভূমি [Out-Wash-Plain] বলে।
প্রশ্ন-৭. প্লায়া হ্রদ কাকে বলে উদাহরণ সহ লেখ।
উত্তর:- প্লায়া হ্রদ: প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির বালি অপসারিত হয়ে ছোটো বড়ো অনেক গর্তের সৃষ্টি হলে সেই গর্তগুলি যদি খুব গভীর হয়ে ভূগর্ভের জলস্তরকে স্পর্শ করে, তাহলে ভুগর্ভস্থ জল ও বৃষ্টির জল জমা হয়ে সেখানে প্লায়া হ্রদের সৃষ্টি হয় । মরুভূমির প্রখর তাপে অত্যাধিক বাষ্পীভবনের জন্য সাধারনত এইসব হ্রদের জল লবনাক্ত হয়ে থাকে। রাজস্থানের সম্বর হ্রদ হল প্লায়া হ্রদের একটি ভারতীয় উদাহরণ । এই অঞ্চলের প্লায়া হ্রদগুলি ধান্দ নামে পরিচিত ।