Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি Emptyপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি

more_horiz
প্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি

পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ —পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি



► পর্বত [Mountain]

♦ সংজ্ঞা-

♦ উৎপত্তি :-

► পর্বতের শ্রেণিবিভাগ-



► (ক) ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত [Fold Mountain]  

♦ ভঙ্গিল পর্বতের সংজ্ঞা :-

♦ ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি:-

♦ ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজের বিভিন্ন প্রকৃতি:-

উদাহরণ :



► (খ) স্তুপ পর্বত [Block Mountain]:-

♦ স্তুপ পর্বতের সংজ্ঞা :-

♦ স্তুপ পর্বতের উৎপত্তি:-

উদাহরণ :



► (গ) আগ্নেয় পর্বত  বা সঞ্চয়জাত পর্বত [Volcano or Mountain of Accumulation] :-

♦ আগ্নেয় পর্বতের সংজ্ঞা :-

♦ আগ্নেয় পর্বতের উৎপত্তি:-

উদাহরণ :



► (ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত  [Relict or Erosional or Residual Mountain]

♦ ক্ষয়জাত পর্বতের সংজ্ঞা :-

♦ ক্ষয়জাত পর্বতের উৎপত্তি:-

উদাহরণ :



► মালভূমি [Plateau]

♦ সংজ্ঞা:-

♦ মালভূমির আকার ও আকৃতি:-

♦ মালভূমির গঠন:-

► মালভূমির শ্রেণিবিভাগ :



► (ক) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau]:-

♦ ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির সংজ্ঞা :-

♦ ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির উৎপত্তি:-

উদাহরণ:-



►(খ) পর্বত ঘেরা মালভূমি [Intermontane Plateau]:-

♦ পর্বত ঘেরা মালভূমির সংজ্ঞা :-

♦ পর্বত ঘেরা মালভূমির উৎপত্তি:-

উদাহরণ:-



►(গ) লাভা মালভূমি  [Lava Plateau]:-

♦ লাভা মালভূমির উৎপত্তি:-

উদাহরণ:-



► সমভূমি [Plains]

♦ সমভূমির সংজ্ঞা:-

♦ সমভূমির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট :-

♦ সমভূমির উৎপত্তি ও শ্রেণিবিভাগ :



►মানুষের কাজকর্মের ওপর ভূমিরূপের প্রভাব : [Influence of Landforms on Human Activities]

♦ মানুষের জীবনে পর্বতের প্রভাব : [Influence of Mountain on Human Lives]

♦ মানুষের জীবনে মালভূমির প্রভাব : [Influence of Plateau on Human Lives]

♦ মানুষের জীবনে সমভূমির প্রভাব : [Influence of Plains on Human Lives]


### তোমার সাহায্যে আমরা পাশে আছি, তুমি এগিয়ে যাও।
# প্রিয় ছাত্র - ছাত্রী যদি কোথাও কোনো ভুল থেকে থাকে তবে মনে রাখবে সেটা অনিচ্ছাকৃত। নিচে কমেন্ট করো। ঠিক করে দেওয়া হবে।

CLASS TEN GEOGRAPHY MCQ wbbse
#Madhyamik #2020 #Geography #Suggestions
CLASS TEN GEOGRAPHY MCQ class x

Madhyamik pariksha 2020

Last edited by Admin on Sat Sep 12, 2020 11:06 am; edited 1 time in total

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি

more_horiz
পর্বত [Mountain]




► পর্বত [Mountain]

♦ সংজ্ঞা- সাধারণত ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু আর অনেক বিস্তৃত শিলাময় ভূ-ভাগকে পর্বত [Mountain] বলে । পর্বতের মাথায় থাকে অনেকগুলি আকাশ-ছোঁয়া চূড়া বা শৃঙ্গ । শৃঙ্গগুলি অনেক সময় সাদা বরফের আবরণে ঢাকা থাকে ।



♦ উৎপত্তি:- পর্বত [Mountain] সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে । অনেকের মতে পৃথিবী অবিরাম তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে চলেছে । এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠ শীতল হয়ে সংকুচিত হচ্ছে । ভূ-পৃষ্ঠের সংকোচনই পর্বত গঠনের প্রধান কারণ । সংকোচনের ফলে যে আলোড়ন বা কম্পন হয় তাতে ভূ-ত্বকের কোনো অংশ বসে যায়, আবার কোনো অংশ উঁচু হয়ে উঠে । এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠে ভাঁজের সৃষ্টি হয় । ভাঁজের উচু অংশগুলিই পর্বত বা মালভূমি ।



♦ পর্বতের শ্রেণিবিভাগ- (ক) ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত [Fold Mountain], (খ) স্তুপ পর্বত [Block Mountain], (গ) আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত [Volcano or Mountain of Accumulation], (ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত [Relict or Erosional or Residual Mountain]



► (ক) ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত [Fold Mountain]

♦ ভঙ্গিল পর্বতের সংজ্ঞা :- ভূ-ত্বকের শিলা স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে । এই শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে যে পর্বত গঠিত হয় তাকে ভঙ্গিল বা ভাঁজ [Fold Mountain] পর্বত বলে ।



♦ ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি:- ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে, এদের মধ্যে প্রধান দুটি মতবাদ হল—

১) মহীখাত তত্ত্ব [Geosyncline Theory] :- মহীখাত তত্ত্ব অনুসারে– এখন যেখানে ভঙ্গিল পর্বতগুলো অবস্থান করছে প্রাচীন কালে সেখানে ছিল বিশালাকার গহ্বর, ভূতাত্ত্বিক ভাষায় যার নাম মহীখাত বা অগভীর সমুদ্র । কালক্রমে যুগ যুগ ধরে পলি পড়ে এই সমুদ্রকে প্রায় ভরাট করে ফেলেছিল । ক্রমাগত পলি জমার ফলে ভূ-স্তরে নিম্নমুখী ও পার্শ্বমুখী চাপের সৃষ্টি হয় তার ফলে অগভীর সমুদ্রের সঞ্চিত পলিতে ভাঁজ পড়তে থাকে। পরবর্তী কালে এইসব ভাঁজগুলো দৃঢ়ভাবে সংবদ্ধ ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] সৃষ্টি করেছে।

পাতসংস্থান বা পাতসঞ্চালন তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory) : বর্তমানে ভূ-বিজ্ঞানীরা পাতসঞ্চালন (Plate tectonic) মতবাদের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করেছেন । পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে, ভূ-ত্বক [Lithosphere] কয়েকটি গতিশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত, যারা গুরুমন্ডলের নীচের দিকে অতি উত্তপ্ত ও তরল ম্যাগমা স্তরের ওপর ভেসে থাকে। একেকটি পাত কেবল মহাদেশ (বা দেশ) কিংবা মহাসাগর অথবা দুইই মিলিয়ে গঠিত হতে পারে, যেমন– ইউরেশিয়ান প্লেট, আফ্রিকান প্লেট, ভারতীয় প্লেট, প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট প্রভৃতি । ভয়ংকর উষ্ণতার ফলে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরে যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়, তার ফলে এই পাতগুলো গতি শক্তি লাভ করে এবং অতি ধীরগতিতে বছরে প্রায় ১০ মিলিমিটার চলতে থাকে। এইসব গতিশীল পাতগুলোর মধ্যে যে-কোনো দুটি পাত যখন পরস্পরের মুখো মুখি হয়, তখন ওই দুটি পাতের সংযোগ রেখা বরাবর উপসাগর, সাগর কিংবা মহাসাগরের তলদেশে সঞ্চিত পাললিক শিলাস্তরের দুদিক থেকে প্রবল পার্শ্ববর্তী চাপে শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ার ফলে শিলাচ্যুতি ঘটে এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় ।

পাতসঞ্চালন তত্ত্বের ভিত্তিতে, ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] দু’ভাবে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন—

ক) প্রচন্ড ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর ওপরকার কোনো জায়গা বসে গিয়ে বা উঁচু হয়ে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে ছোটো ছোটো ভাঁজের সৃষ্টি হয় । ভূমিকম্প যতই বাড়তে থাকে, ভাঁজগুলো ততই বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে চলে এসে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] সৃষ্টি করে । আবার,

খ) প্রচন্ড পার্শ্ব চাপের ফলেও ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে ভাঁজ সৃষ্টি হয় । চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজগুলো বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে এসে ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] সৃষ্টি করতে পারে। ‘ভঙ্গিল’ বা ‘ভাঁজ’ শব্দটি পর্বতের একটি বিশেষ গঠন প্রক্রিয়ার ।



♦ ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] বৈশিষ্ট্য:-

১) বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কোমল পাললিক শিলায় ঢেউয়ের মতো ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়;

২) ভঙ্গিল পর্বতগুলি সাধারণত পাললিক শিলায় গঠিত হলেও অনেক সময় ভঙ্গিল পর্বতে আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলার সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয় (কারণ, ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় শিলাস্তরে ফাটল সৃষ্টি হলে, সেই ফাটল দিয়ে ভূগর্ভের ম্যাগমা লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে যা ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে । এর পর কালক্রমে প্রচন্ড চাপ ও তাপের ফলে আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় );

৩) ভঙ্গিল পর্বতের উপরের দিকের ভাঁজকে ঊর্ধ্বভঙ্গ [Anticline] ও নীচের দিকের ভাঁজকে অধোভঙ্গ [Syncline] বলে;

৪) ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজগুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন- প্রতিসম ভাঁজ, অপ্রতিসম ভাঁজ, একটি ভাঁজের উপর অন্য একটি ভাঁজের [Overfold] এসে পড়া প্রভৃতি;

৫) প্রবল ভূ-আলোড়নের জন্য ভঙ্গিল পর্বতে ভাঁজ ছাড়াও অনেক চ্যুতি বা ফল্ট (Fault) দেখা যায়;

৬) প্রধানত সমুদ্র গর্ভ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল বলে ভঙ্গিল পর্বতে জীবাশ্ম (Fossil) দেখা যায়;

৭) ভঙ্গিল পর্বতগুলো সাধারণত প্রস্থের তুলনায় দৈর্ঘে অনেক বেশি বিস্তৃত হয়;

৮) ভঙ্গিল পর্বতগুলো সাধারণত বহু শৃঙ্গবিশিষ্ট ও ছুঁচালো হয়;

৯) ভঙ্গিল পর্বতের গঠন স্থায়ী নয়;

১০) উৎপত্তিকালের তুলনামূলক বিচারে ভঙ্গিল পর্বতকে নবীন (যেমন- হিমালয়) ও প্রাচীন (যেমন-আরাবল্লী) এই দুই ভাগে ভাগ করা যায় ।



♦ উদাহরণ: (১) ভারতের হিমালয়, (২) ইউরোপের আল্পস ও জুরা, (৩) আফ্রিকার আটলাস, (৪) উত্তর আমেরিকার রকি, (৫) দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ প্রভৃতি ভঙ্গিল বা ভাঁজ পর্বতের উদাহরণ ।



► (খ) স্তুপ পর্বত [Block Mountain]:-

♦ স্তুপ পর্বতের সংজ্ঞা :- ভূ-আন্দোলনের ফলে শিলাস্তরে ফাটল ধরে এবং ফাটলে ফাটলে শিলাস্তর খন্ডে খন্ডে [Block -এ] বিভক্ত হয়ে যায় । সমান্তরাল দুই ফাটলের মধ্যবর্তী খন্ডিত ভূমি অনেক সময় নিচে থেকে চাপ খেয়ে ওপরে উঠে পড়ে পর্বতের আকার ধারণ করে, এইভাবে যে পর্বত গঠিত হয় তাকে স্তুপ পর্বত [Block Mountain] বলে ।



♦ স্তুপ পর্বতের উৎপত্তি:- ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশের শিলাস্তরের চ্যুতির ঝুলন অংশের উত্থান কিংবা বসে যাওয়ার মতো ভূপ্রাকৃতিক ঘটনার ফলেই স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] উৎপত্তি হয় ।

১) প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-ত্বকের [Lithosphere] কোথাও সংকোচন টান আবার কোথাও প্রসারণ চাপ পড়ে। এর ফলে শিলাস্তরে ক্র্যাক বা গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয় । এরপর যদি আবার ভূ-আলোড়ন হয় তবে ওই ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ থেকে আর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, একে চ্যুতি [Fault] বলে । ভূত্বকের যে রেখা বরাবর চ্যুতির [Fault] সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতিরেখা এবং যে তলে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে চ্যুতিতল বলে।

২) প্রবল উর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপের ফলে কোনো দুটি চ্যুতির [Fault] মধ্যবর্তী অঞ্চল যখন পাশের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চ্যুতিরেখা বরাবর খাড়াভাবে ওপরে উঠে আসে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দুটি নীচে বসে যায়, তখন ওপরে উঠে আসা অংশটি স্তূপ পর্বতে [Block Mountain] পরিণত হয় এবং নীচে বসে যাওয়া অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকা [Rift Valley] রূপে বিরাজ করে । এইভাবে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের উত্থানের ফলে সৃষ্টি হওয়া স্তূপ পর্বতকে হোর্স্ট (horst) বলা হয়। এর আর এক নাম চ্যুতি পর্বত [Fault Mountain]

৩) ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের প্রবল চাপের ফলে কোনো সময় দুটি সমান্তরাল চ্যুতিরেখার মধ্যবর্তী অংশ যদি খাড়া ভাবে নীচে বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকায় [Rift Valley] পরিণত হয়, তখন গ্রস্ত উপত্যকাটির দু'পাশের খাড়া অংশ দুটি স্তূপ পর্বতের আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। এই ভাবে সৃষ্টি হওয়া গ্রস্ত উপত্যকাগুলি জার্মানিতে ‘গ্রাবেন’নামে পরিচিত।



♦ স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] বৈশিষ্টি:-

১) স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] মাথা কিছুটা চ্যাপ্টা হয়;

২) এই পর্বতের ঢাল বেশ খাড়া হয়;

৩) এই পর্বতে অনেক চ্যুতি (Fault) ও গ্রস্ত উপত্যকা [Rift Valley] দেখা যায়;

৪) স্তূপ পর্বতের উচ্চতা খুব বেশি হয় না;

৫) এই পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের মতো বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয় না;

৬) সাধারণত লম্বভাবে ভূ-আলোড়নের ফলে স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] সৃষ্টি হয়ে থাকে।



♦ উদাহরণ:-

(ক) দাক্ষিনাত্যের (১) সাতপুরা, (২) নীলগিরি, (৩) আন্নামালাই, (৪) ফ্রান্সের ভোজ, (৫) জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট স্তূপ পর্বতে উদাহরণ । ভারতের সাতপুরা পর্বত হোর্স্ট জাতীয় স্তূপ পর্বতের উদাহরণ ।

(খ) ভারতের (১) নর্মদা নদীর উপত্যকা ও (২) জার্মানির রাইন নদীর উপত্যকা গ্রস্থ উপত্যকার উদাহরণ ।



► (গ) আগ্নেয় [Volcano] বা সঞ্চয়জাত [Mountain of Accumulaion] পর্বত :-

♦ আগ্নেয় পর্বতের সংজ্ঞা :- ভূগর্ভের উত্তপ্ত গলিত তরল শিলা বা ম্যাগমা ভূস্তরের ফাটল দিয়ে লাভারূপে বাইরে বেরিয়ে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে যে গম্বুজাকৃতি পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে সঞ্চয়জাত পর্বত [Mountain of Accumulaion] বা আগ্নেয় পর্বত [Volcano] বলে।



♦ আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] উৎপত্তি:-

পাতসঞ্চালন তত্ত্ব বা Plate Tectonic Theory অনুসারে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয়পর্বতের [Volcani] উৎপত্তি:-

১) কোনো একটি মহাসাগরীয় পাত অপর একটি মহাদেশীয় পাতের দিকে অগ্রসর হলে দুইটি পাতের সংযোগস্থলে মহাসাগরীয় প্লেটের প্রান্তসীমা মহাদেশীয় পাতের নীচে ঢুকে যায় (subduction) । এই প্রক্রিয়ার ফলে দুটি পাতের সংযোগস্থলে প্রচন্ড চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠের ৮০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার নীচে তাপমাত্রা ভয়ানক বেড়ে যায় । এই তাপে ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন পদার্থ গলে গিয়ে তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমার [Magma] সৃষ্টি হয় এবং গ্যাসের উৎপত্তি হয় ।

২) গ্যাসীয় বুদবুদগুলোর প্রচন্ড চাপে ভূ-গর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমা ভুত্বকের নলের মতো ফাটল বা সুড়ঙ্গ পথে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে এবং আগ্নেয় গিরির শীর্ষদেশে অবস্থিত জ্বালামুখ নামে এক বা একাধিক মুখ বা গহ্বর (crater) দিয়ে লাভা রূপে ছড়িয়ে পড়ে ।

৩) ঊর্ধ্বগামী সমস্ত ম্যাগমা [Magma] একসঙ্গে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে না, ভূপৃষ্ঠের ৩-৫ কিলোমিটার নীচে ম্যাগমা ঘর (Magma Chamber) নামে একটি ঘরে কিছুক্ষণ থাকার পর গ্যাসের চাপ আরও বৃদ্ধি পেলে ম্যাগমা স্রোত ক্রমান্বয়ে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে । জ্বালামুখ দিয়ে ভূপৃষ্ঠে নির্গত লাভা ক্রমশ শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয় পর্বতে [Volcano] পরিণত হয়।

৪) বিভিন্ন সময়ের ব্যবধানে বারংবার লাভা নির্গমনের সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকে এবং আগ্নেয় পর্বতটি [Volcano] ক্রমশ শঙ্কুর মতো আকৃতি নেয় । তবে পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে আগ্নেয়গিরির শঙ্কুর মতো আকৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে যায় । তাই বেশির ভাগ আগ্নেয় পর্বতগুলো মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট হয় এবং এদের ঢাল মাঝামাঝি রকমের হয় । অগ্নুৎপাতের সময় লাভা ছাড়াও আগ্নেয় ধূলিকণা (Volcanic Dust), ছোটো বড়ো পাথরের টুকরো এবং সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO2) প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ [Crater] দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।



♦ অগ্নুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] শ্রেণিবিভাগ:-

অগ্নুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতগুলোকে [Volcano] সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা—

১) সক্রিয় [Active Volcano]- এই ধরনের আগ্নেয়গিরিতে প্রায়ই অগ্নুৎপাত হয় (যেমন, ভিসুভিয়াস) । সক্রিয় আগ্নেয়গিরিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা —

(ক) অবিরাম: - এই সব আগ্নেয়গিরিতে অবিরাম অগ্নুৎপাত হয় (যেমন, ভিসুভিয়াস) এবং

(খ) সবিরাম- এই সব আগ্নেয়গিরিতে কিছুদিন পর পর অগ্নুৎপাত হয় (যেমন, সিসিলি দ্বীপের স্টোম্বলি) ।

২) সুপ্ত [Dormant Volcano] - যেসব আগ্নেয়গিরিতে বহুকাল অগ্নুৎপাত হয়নি কিন্তু ভবিষ্যতে হওয়ার আশঙ্কা আছে (যেমন, জাপানের ফুজিয়ামা) ।

৩) মৃত [Extinct Volcano]- যেসব আগ্নেয় পর্বতে স্মরণাতিত কাল থেকে কোনো অগ্নুৎপাত হয়নি (যেমন, মায়ানমার-এর পোপো) ।



♦ আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] বৈশিষ্ট্য:-

১) অগ্নুৎপাতের সময় ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা গলিত লাভা জমাট বেঁধে আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] সৃষ্টি করে;

২) সাধারণত আগ্নেয় পর্বতকে দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ বা শঙ্কুর মতো হয়;

৩) আগ্নেয় পর্বতের শীর্ষদেশে এক বা একাধিক জ্বালামুখ (Crater) নামে গহ্বর থাকে যা একটি নলের মতো পথের মাধ্যমে ভূগর্ভের ম্যাগমা গহ্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকে;

৪) প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলভাগ এবং সমুদ্রের শৈলশিরার ওপর ভূত্বকের দুর্বল স্থানগুলোতে আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] আধিক্য দেখা যায়;

৫) অনেক সময় আগ্নেয় পর্বতগুলো গভীর সমুদ্রতল থেকে সঞ্চিত হতে হতে দ্বীপের মতো সমুদ্রের ওপরে উঠে আসে;

৬) কখনও কখনও আগ্নেয় পর্বতগুলোতে লাভাস্তরের মধ্যে ছাই এবং প্রস্তরখন্ড দেখা যায়;

৭) পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে কোনো কোনো আগ্নেয় পর্বত [Volcano] অনেকাংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায় (যেমন, ক্রাকাতোয়া আগ্নেয় পর্বতটি ১৯৯৩ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় );

৮) আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] ঢাল ও উচ্চতা খুব বেশি হয় না ।



♦ উদাহরণ:-(১) ইতালির ভিসুভিয়াস, (২) জাপানের ফুজিয়ামা, (৩) আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, (৪) মেক্সিকোর পোপোক্যাটেপেটল, (৫) দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকনকাগুয়া, চিম্বোরাজো, কাটোপাক্সি (৬) ভারতের আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত ব্যারন ও নারকনডাম দ্বীপের আগ্নেয়গিরি প্রভৃতি । সাম্প্রতিককালে ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে ও ১৯৯৫ সালের জানুয়ারী মাসে ব্যারন দ্বীপের আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্নুৎপাত হয়েছে ।

পৃথিবীর প্রধান আগ্নেয়গিরি বলয়টি প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে একটি মালার মত দক্ষিণ আমেরিকার হর্ন অন্তরীপ থেকে শুরু করে আন্দিজ ও রকি পর্বত মালা হয়ে আলাস্কা পার হয়ে কামচাটকা, সাখালিন, জাপান ও ফিলিপাইনস দ্বীপপুঞ্জ হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে শেষ হয়েছে । এর নাম 'প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা' ।



► (ঘ) ক্ষয়জাত পর্বত:-[Relict or Erosional or Residual Mountain]

♦ ক্ষয়জাত পর্বতের সংজ্ঞা:- প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ও ক্ষয়কাজের ফলে বিস্তির্ণ উচ্চভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে ক্ষয়জাত পর্বত [Erosional or Residual Mountain] বলে ।



♦ ক্ষয়জাত পর্বতের উৎপত্তি:- ভঙ্গিল পর্বত, স্তূপ পর্বত ও আগ্নেয় পর্বত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে ক্ষয়জাত পর্বত [Relict Mountain] বলে । ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ বৃষ্টি, নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি কাজের ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে । এইভাবে, অনেক সময় শক্ত শিলায় গড়া জায়গা কম ক্ষয় পেয়ে আশেপাশে বেশি ক্ষয়ে যাওয়া নরম শিলায় গঠিত জায়গা থেকে আলাদা হয়ে উঁচুতে থেকে যায়, এইভাবে ক্ষয়জাত পর্বত [Relict Mountain] সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের কম ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়া অবশিষ্ট অংশ পর্বতে পরিণত হয় বলে ক্ষয়জাত পর্বতকে অবশিষ্ট পর্বতও [Residual Mountain] বলা হয়।



♦ উদাহরণ:- (১) ভারতের আরাবল্লী, (২) পূর্বঘাট পর্বত (৩) স্পেনের সিয়েরা নেভাদা (৪) নরওয়ের ও সুইডেনের পর্বতশ্রেণি, (৫) নীলগিরি, রাজমহল প্রভৃতি পর্বতগুলি ক্ষয়জাত পর্বতের উদাহরণ । আরাবল্লী পৃথিবীর এক অতি প্রাচীন পর্বতমালা ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি

more_horiz
মালভূমি [Plateau]




► মালভূমি [Plateau]

♦ সংজ্ঞা:- সাধারণত যে বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগ সমুদ্র সমতল থেকে বেশ উঁচু প্রায় ৩০০ মিটার,অথচ যার পৃষ্ঠদেশ বা উপরিভাগ খুব অসমতল নয় এবং চারপাশ খাড়া ঢালযুক্ত থাকে তাকে মালভূমি [Plateau] বলা হয় ।



♦ মালভূমির [Plateau] আকার ও আকৃতি:-

উচ্চতা ছাড়াও মালভূমির [Plateau] অন্য যেসব উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো হল—

ক) মালভূমি এক বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি,

খ) এর উপরিভাগ প্রায় সমতল বা কিছুটা তরঙ্গায়িত,

গ) চারদিকে ঢাল বেশ বেশি,

ঘ) দেখতে অনেকটা টেবিলের মতো বলে, যার আর এক নাম টেবিল ল্যান্ড [Table Land] এবং

ঙ) উচ্চতা ৩০০ মিটারের বেশি।

চ) মালভূমির উচ্চতা কয়েক হাজার মিটার হতে পারে যেমন তিব্বতের মালভূমি প্রায় ৪৫০০ মিটার উঁচু । পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমি হল পামীর মালভূমি । এর উচ্চতা ৪৮৭৩ মিটার । অত্যাধিক উচ্চতার জন্য একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয় । ভারতের মধ্যে কাশ্মীরের লাডাক মালভূমি সবচেয়ে উঁচু এবং এর উচ্চতা ৩৫০০ মিটার ।

ছ) মালভূমির উপর পাহাড় বা পর্বত থাতে পারে ।



♦ মালভূমির [Plateau] গঠন:- মালভূমি গঠিত হওয়ার তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে, যেমন-

১) ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ীভন,

২) ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন এবং

৩) ভূপৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয়।

১) ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষয়ীভবন: দীর্ঘ দিন ধরে নদী, হিমবাহ, সূর্যতাপ কিংবা বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে পার্বত্য অঞ্চল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মালভূমিতে [Plateau] পরিণত হয়। যেমন অ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালার অ্যালিঘেনি মালভূমি, মধ্যভারতের বুন্দেলখন্ড ও বাঘেলখন্ড প্রভৃতি মালভূমি গুলি ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ীভবনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে ।

২) ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন: ভূত্বক কয়েকটি গতিশীল পাত বা টেকটনিক প্লেট-এ বিভক্ত । গুরুমন্ডল বা ম্যান্টলের ওপর দিয়ে এইসব গতিশীল পাতগুলির সঞ্চারণশীলতা হল মালভূমি [Plateau] সৃষ্টির অন্যতম কারণ । পাত সঞ্চালনের ফলে ভূমিকম্প আর ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold mountain] সৃষ্টি হলে দুটি ভঙ্গিল পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চল পর্বতবেষ্টিত মালভূমিতে [Intermontane Plateau] পরিণত হয় (যেমন, তিব্বত মালভূমি) । অনেক বিজ্ঞানির মতে, ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া মালভূমিগুলিকে দু ভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন-

১) দুটি ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী মালভূমি (যেমন, তিব্বত মালভূমি)। এবং

২) পর্বত গঠনকালে ভূপৃষ্ঠের চ্যুতির ফলে উৎপন্ন মালভূমি, (যেমন- পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন মালভূমি)। তবে এই জাতীয় মালভূমির [Plateau] উচ্চতা স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] তুলনায় কম হয়।

যেমন প্রবল ভূমিকম্পের ফলে প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ড ও আঙ্গারাল্যান্ডের মহাদেশীয় পাতগুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমি, আরব মালভূমি, ব্রাজিল মালভূমি, আফ্রিকার মালভূমি এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মালভূমির সৃষ্টি করেছে ।

৩) ভূপৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয়: কোনো রকম বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূপৃষ্ঠের একাধিক ফাটল বা সুড়ঙ্গপথে ভূগর্ভ থেকে নির্গত লাভা ভূপৃষ্ঠে যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত হয়ে লাভা গঠিত মালভূমি [Lava Plateau] সৃষ্টি করে। যেমন:- দাক্ষিণাত্যের ডেকানট্র্যাপ ।



♦ মালভূমির শ্রেণিবিভাগ : মালভূমি প্রধানত তিন প্রকার , যথা— (ক) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] (খ) পর্বত ঘেরা মালভূমি [Intermontane Plateau] (গ) লাভা মালভূমি [Lava Plateau] । এছাড়া আরও কয়েক রকমের মালভূমি আছে যেমন, মহাদেশীয় মালভূমি বা অধিত্যকা ভূমি [Continental Plateau বা Table land ], পর্বতের পাদদেশীয় মালভূমি [ Piedmont Plateau] প্রভৃতি ।



► (ক) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau]:- ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ের ফলে সৃষ্টি হওয়া মালভূমি, যেমন- ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau],

♦ ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] সংজ্ঞা :- নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা কোনো প্রাচীন ও বিস্তীর্ণ মালভূমি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, নরম শিলায় গঠিত অংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কঠিন শিলায় গঠিত অংশ কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । পরবর্তী কালে নীচু অংশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়ে উঁচু অংশগুলোকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করে বা বিচ্ছিন্ন করে, তাই একে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] বলে।



♦ ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির উৎপত্তি:- প্রাচীন বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি বাহু বছর ধরে নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মালভূমিতে পরিণত হয় । নরম শিলায় গঠিত অংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কঠিন শিলায় গঠিত অংশ কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । পরবর্তী কালে নীচু অংশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়ে উঁচু অংশগুলোকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করে বা বিচ্ছিন্ন করে, তাই একে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] বলে।



♦ ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির বৈশিষ্ট্য:-

১) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] অঞ্চলগুলি কঠিন ও কোমল- এই দুই ধরনের শিলাতেই গঠিত হয়ে থাকে;

২) হিমবাহ, নদী, ঝড়বৃষ্টি, বাতাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয় পেয়ে কোমল শিলা অপসারিত হলে কঠিন শিলা গঠিত স্থানগুলি নাতিউচ্চ পাহাড় বা টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে;

৩) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] সাধারণত বিভিন্ন নদীউপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়;

৪) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] থেকে সৃষ্টি হওয়া বেশিরভাগ পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় একই রকমের হয়;

৫) এই ধরনের মালভূমি বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অবশেষে তা বহু পাহাড় ও উপত্যকার সমষ্টিতে পরিণত হয়;

৬) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি মোটামুটি সমতল কিন্তু মৃদু ঢাল যুক্ত হয়।



♦উদাহরণ: ভারতের পূর্বঘাট ও পশ্চিম ঘাট পার্বত্য অঞ্চলে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] দেখা যায়।

১) ঝাড়খন্ডের ছোটোনাগপুর মালভূমি, ২) দক্ষিন ভারতের কর্ণাটকের মালনাদ অঞ্চল ৩) মধ্যভারতের অন্তর্গত বিন্ধ্য মালভূমি এবং ৪) গ্রেট ব্রিটেনের ওয়েলস মালভূমি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] নিদর্শন।

কর্ণাটক মালভূমির মালনাদ অঞ্চলটি কাবেরী ও তার বিভিন্ন উপনদী (সিমসা, হিমবতী, ভবানী প্রভৃতি) দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] সৃষ্টি করেছে।



♦ ছোটনাগপুর মালভূমির বিবর্তন [ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি]

ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলটি দামোদর, সুবর্ণরেখা, বরাকর, কোয়েল প্রভৃতি নদীর সংকীর্ণ উপত্যকার দ্বারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] সৃষ্টি করেছে।

১) আজ যেখানে হিমালয় পর্বত দাঁড়িয়ে আছে , বহু কোটি বছর আগে সেখানে টেথিস সাগর নামে একটি অগভীর সমুদ্রের দক্ষিণে আগ্নেয় শিলায় গড়া গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে বহু প্রাচীন একটি বিস্তীর্ণ স্থলভাগ ছিল ।

২) ভূত্বকে পাতসঞ্চালনের প্রভাবে প্রবল ভূমিকম্পের ফলে সুবিস্তীর্ণ গন্ডোয়ানা ভূখন্ডটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে দক্ষিন ভারত, আরব প্রভৃতি স্থানে মহাদেশীয় মালভূমিতে পরিণত হয় । ছোটনাগপুরের মালভূমিটি হল পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূখন্ড গন্ডোয়ানা ল্যান্ডের অংশবিশেষ- যা অতি প্রাচীন প্রায় ১০০ কোটি বছর আগের প্রিক্যামব্রিয়ান যুগের আগ্নেয় (গ্রানাইট) এবং রূপান্তরিত (নাইস) শিলায় গড়া ।

৩) পরবর্তীকালে সূর্যকিরণ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেলে বিভিন্ন নদনদী ও তাদের শাখা-প্রশাখা সুপ্রাচীন এই মালভূমি অঞ্চলটিকে বিচ্ছিন্ন করে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিতে [Dissected Plateau] পরিণত করে।

৪) যুগ যুগ ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে বর্তমানে ছোটনাগপুর মালভূমি পূর্ব দিকের অংশটি সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে যার মাঝে মধ্যে অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলায় গঠিত নাতিউচ্চ ছোটো ছোটো পাহাড় বা মোনাডনক দেখা যায় (যেমন, পরেশনাথ ও পাঞ্চেত পাহাড়) ।





►(খ) পর্বত ঘেরা মালভূমি [Intermontane Plateau]:-

♦ পর্বত ঘেরা মালভূমির [Intermontane Plateau] সংজ্ঞা :- যে সব মালভূমির চারিদিকে পর্বতের সাহায্যে ঘেরা থাকে তাদের পর্বত ঘেরা বা পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে । ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি সৃষ্টি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত নীচু স্থানগুলি কিছুটা উঁচু ও খাড়া ঢালযুক্ত হয়ে মালভূমির [Plateau] আকৃতি নেয় । চারি দিকে পর্বতবেষ্টিত হওয়ায় এই সব মালভূমিকে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি [Intermontane Plateau] বলে।



♦ পর্বত ঘেরা মালভূমির [Intermontane Plateau] উৎপত্তি:-

১) ভূ-ত্বক [Lithosphere] কয়েকটি গতিশীল পাত বা টেকটনিক প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত, যারা গুরুমন্ডলের নীচের দিকে অতি উত্তপ্ত, তরল ম্যাগমা স্তরের ওপর ভেসে থাকে ।

২) ভয়ংকর উত্তাপের ফলে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরে যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়, তার ফলে এই পাতগুলি অতি ধীরগতিতে বছরে প্রায় ১০ মিলিমিটার গতিতে চলতে থাকে ।

৩) দুটি পাত যখন পরস্পরের মুখোমুখি হয় তখন ওই দুটি পাতের সংযোগরেখা বরাবর শিলাচ্যুতি এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

৪) পাত সঞ্চালনের ফলে ভূমিকম্প হয় আর এই ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হলে দুটি ভঙ্গিল পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চল মালভূমিতে পরিণত হয় । চার দিকে পর্বত বেষ্টিত হওয়ায় এই সব মালভূমিগুলিকে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি [Intermontane Plateau] বলে।



♦উদাহরণ: (১) মধ্যএশিয়ার পামির মালভূমি, (২) হিমালয় ও কুনলুন পর্বতের মধ্যে অবস্থিত তিব্বত মালভূমি, (৩) এলবুর্জ ও জাগ্রোস পর্বতের মধ্যে অবস্থিত ইরানের মালভূমি, (৪) পন্টিক ও টরাস পর্বতের মধ্যে অবস্থিত আনাতোলিয়ার মালভূমি, বলিভিয়ার মালভূমি প্রভৃতি মালভূমিগুলি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির [Intermontane Plateau] উদাহরণ ।





►(গ) লাভা মালভূমি [Lava Plateau]:-

♦ লাভা মালভূমির উৎপত্তি:- ভূ-পৃষ্ঠের দুর্বল অংশের ফাটল দিয়ে কখন কখন উত্তপ্ত লাভা বেরিয়ে আসে এবং ভূ-পৃষ্ঠে সঞ্চিত হয় । কালক্রমে এই লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে মালভূমির আকার ধারণ করে । একে লাভা মালভূমি [Lava Plateau] বলে ।



♦ লাভাগঠিত মালভূমি [Lava Plateau] : ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ১৩-১৪ কোটি বছর আগে ভূগর্ভের গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল অঞ্চল থেকে অতি উত্তপ্ত তরল লাভা স্রোত বহু ফাটলের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে এসে কোনো রকম বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম ভাগের প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার অঞ্চলকে লাভায় ঢেকে ফেলে ছিল, কালক্রমে যা জমাট বেঁধে দাক্ষিণাত্য মালভূমি সৃষ্টি করেছে ।



♦লাভাগঠিত ডেকান্ট্রাপ মালভূমির বিবর্তন: ছয় সাত কোটি বছর আগে ভূপৃষ্ঠের অসংখ্য ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলা বা ম্যাগমা [Magma] কোনো বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে অতি ধীর গতিতে লাভা রূপে বেরিয়ে এসে দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশের প্রায় পাঁচ লক্ষ বর্গমিটার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে প্রধানত ব্যাসল্ট জাতীয় নিঃসারী আগ্নেয় শিলায় ঢেকে ফেলে ছিল । পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন- রোদ, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ, নদী প্রভৃতির ক্ষয়কাজের প্রভাবে এই মালভূমি অঞ্চলের ওপরের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানের আকার ধারণ করেছে । ব্যাসল্ট জাতীয় আগ্নেয় শিলায় গঠিত হওয়ায় এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির শীর্ষদেশ চ্যাপ্টা এবং পার্শ্বদেশ পশ্চিম থেকে পূর্বে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে ঢালু হয়ে নীচের দিকে নেমে যাওয়ায় দাক্ষিণাত্যর মালভূমির উত্তর-পশ্চিমের এই অঞ্চলটিকে ডেকানট্রাপ বলা হয় । সুইডিস ভাষায় ট্রাপ কথাটির অর্থ হল সিঁড়ি ।



♦লাভা মালভূমির [Lava Plateau] বৈশিষ্ট্য:-

আগ্নেয়গিরির প্রবল অগ্নুৎপাত অথবা বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে ভূপৃষ্ঠের একাধিক দূর্বল অংশ বা ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভের গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল স্তর থেকে ব্যাসল্ট জাতীয় উত্তপ্ত তরল শিলা স্রোত বা ম্যাগমা বেরিয়ে এসে লাভা রূপে সেই ভূখন্ডে জমা হতে থাকে। শক্ত ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত এই লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম অংশে লাভা মালভূমির [Lava Plateau] সৃষ্টি করেছে। ব্যাসল্ট জাতীয় কঠিন আগ্নেয় শিলায় গঠিত হওয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে কোটি কোটি বছর ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া সত্বেও লাভা মালভূমি [Lava Plateau] অঞ্চলের পাহাড়গুলি পুরোপুরি ক্ষয়ে না গেলেও ক্ষয়ের ফলে এইসব পাহাড়ের শীর্ষদেশ চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে।



♦ উদাহরণ:- (১) দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত মহারাষ্ট্র মালভূমি লাভা দিয়ে তৈরি, (২) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া-স্নেক নদীর অববাহিকায়, (৩) পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া ও ইথিউপিয়া, (৪) দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ায় অলটিপ্লানো, (৫) পশ্চিম মেক্সিকোয় পশ্চিম সিয়েরা মাদ্রে, (৬) মধ্যপ্রদেশ ও কাথিয়াওয়াড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে লাভা গঠিত মালভূমি দেখা যায় ।



♦তির্যক মালভূমি:- প্রবল ভূমিকম্পে বিস্তীর্ণ ভূখন্ড একদিকে কাত হয়ে বা হেলে গিয়ে যে মালভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে তির্যক মালভূমি বলে। যেমন, দাক্ষিণাত্য মালভূমিটি পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে কাত হয়ে আছে।

♦উদাহরণ:- ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি, মেঘালয় মালভূমি, ইউরোপে স্পেনের মেসেটা মালভূমি, দক্ষিন আমেরিকার ব্রাজিল মালভূমি প্রভৃতি হল তির্যক মালভূমির উদাহরণ ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি

more_horiz
► সমভূমি [Plains]

♦ সমভূমির সংজ্ঞা:- সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে বা সামান্য উঁচুতে (৩০০ মিটারের মধ্যে) অবস্থিত সমতল স্থলভাগকে সমভূমি [Plain] বলে।



♦ সমভূমির [Plain] প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট :-

১) সমভূমির [Plain] উপরিভাগ সাধারণত সমতল হয়;

২) সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশি উঁচু হয়না;

৩) কোনো কোনো স্থানে সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ কিছুটা উঁচু হয়, যেমন- উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতের পাদদেশের সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিকটা উঁচু ;

৪) কোনো কোনো স্থানের সমভূমি আবার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কিছুটা নীচে অবস্থিত হয়, যেমন- এশিয়া মহাদেশের কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল ভাগের সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নীচু ;

৫) কখনও কখনও সমভূমি সামান্য কিছুটা ঢেউখেলানো হয়, যেমন- বর্ধ্মান জেলার সমভূমি কিছুটা ঢেউ খেলানো ।

৬) পৃথিবীর বেশিরভাগ সমভূমি সমুদ্র উপকূল এবং নদী অববাহিকায় গড়ে উঠেছে ।

৭) সমভূমি অতি ধীরে ঢালু হয়ে সাগর পৃষ্ঠের সঙ্গে মিশে ।



♦ সমভূমির উৎপত্তি ও শ্রেণিবিভাগ :

সমভূমি নানাভাবে সৃষ্টি হয় । পৃথিবীর যে অংশের বহিরাবরাণে এখানও ভাঁজ পড়ে নি, সেখানে সুবিস্তৃত সমতল ক্ষেত্র বিরাজ করছে । যেমন এশিয়ার উত্তরে সাইবেরিয়ার সমভূমি । অবনত ভূমি অনেক সময় নদী ও হিমবাহ বাহিত পলি ও মোরেণ দিয়ে ভরাট হয়ে সমভূমিতে পরিণত হয় । ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্র থেকে উপকূল সমভূমি জেগে ওঠে । উৎপত্তি অনুসারে বিভিন্ন সমভূমিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

১) সঞ্চয়জাত সমভূমি,

২) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং

৩) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।

সঞ্চয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: যুগ যুগ ধরে নদীর দু’পাশে বা নদী মোহনায় পলি জমে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় । সঞ্চয়জাত সমভূমিকে প্রধানত ৮ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

ক) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain]: উঁচু পর্বত থেকে নদী খরবেগে নীচে নামে । নামার সময়ে নুড়ি, পাথর, বালি,কাঁকর, কাদা নিয়ে আসে । নীচে নেমে নদীর স্রোতের বেগ কমে যায় । নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছাকাছি চলে এলে নদীপথের ঢাল হ্রাস পায় এবং নদীবাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদী তার দুই তীরে জমা করতে থাকে । ক্রমশ এই পলিমাটি জমে নদীর দুই তীরের নিচু জায়গা ভরাট হয়ে যায় ও সমভূমির রূপ নেয় । পলি দিয়ে এই সমভূমি গঠিত হয় বলে এর নাম পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] ।

উদাহরণ:-উত্তর ভারতের সুবিশাল সমভূমি সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের পলি দিয়ে গড়ে উঠেছে। ইয়াংসিকিয়াং, মেকং, মেনাম, ইরাবতী, ইউফ্রেটিস, টাইগ্রিস, মিসিসিপি-মিসৌরী প্রভৃতি নদীর অববাহিকার সমভূমি পলিমাটি দিয়ে তৈরি ।



খ) প্লাবনসমভূমি বা বন্যাগঠিত ভূমি [Flood Plain] সৃষ্টির কারণ- নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছা কাছি চলে এলে নদীর ভূমির ঢাল হ্রাস পায় এবং নদী বাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদীগর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে যার ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ কমে যায় । বর্ষাকালে হঠাৎ নদীতে জল বেড়ে গেলে এই অগভীর নদী উপত্যকা অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না, এর ফলে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । বন্যার জল দুকূল প্লাবিত করে এবং প্লাবিত অঞ্চলে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে এক নতুন ভূমিরূপ বা প্লাবন সমভূমির [Flood Plain] সৃষ্টি হয় । পলিমাটি সঞ্চিত হয়ে এই সমভূমি গঠিত হয় বলে একে সঞ্চয়জাত সমভূমিও বলে । নদীর দুই তীরে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি ক্রমাগত জমা হলে নদী তীর ধীরে ধীরে বাঁধের মতো উঁচু হয়ে যায় এই বাঁধ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়, তাই একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে । পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার গতিপথের দুপাশে প্লাবনভূমি ও স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায় । কলকাতা শহর গঙ্গার স্বাভাবিক বাঁধের উপর অবস্থিত।

উদাহরণ:- পৃথিবীর প্রায় সব নদীর তীরে কম-বেশি প্লাবন-সমভূমি দেখা যায় । গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র এবং এদের উপনদী গুলির তীরে বিস্তৃত প্লাবন সমভূমি গড়ে উঠেছে । গাঙ্গেয় সমভূমি ভারতের সর্ববৃহৎ সঞ্চয়জাত সমভূমি ।



গ) ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] সৃষ্টির কারণ- নদী যেখানে সমুদ্রে এসে পড়ে তাকে নদীর মোহনা বলে । এই মোহানাতে নদীর জলের সঙ্গে বাহিত পলি জমে ( নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি) যে নতুন ভূভাগের সৃষ্টি হয় তাকে দ্বীপ বলে । দ্বীপের চারিদিকেই জল থাকে । এই দ্বীপকে দেখতে যখন অনেকটা বাংলা ‘ব’বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টা -র মতো হয়, তখন তাকে বদ্বীপ বা ডেল্টা (Delta) বলে । বদ্বীপ সৃষ্টির পর নদীর জল বদ্বীপে বাধাপ্রাপ্ত হলে নদী বহু শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং বদ্বীপগুলির চার ধারে আরও বেশি মাত্রায় পলি জমতে থাকে, যার ফলে বদ্বীপগুলো ক্রমশ আয়তনে বড় হয়ে মূল ভূভাগের সঙ্গে মিশে যায় । এইভাবে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তাকে ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] বলে।

উদাহরণ: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার মধ্যবর্তী সমভূমিটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি । আফ্রিকার নীলনদের বদ্বীপ সমভূমিটি উর্বরতা ও কৃষি উৎপাদনের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত । এছাড়া হোয়াংহো, ইয়াংসিকিয়াং, মিসিসিপি-মিসৌরী নদীর মোহনার কাছাকাছি জায়গায় ব-দ্বীপ সমভূমি দেখা যায় ।



ঘ) উপকূলীয় সমভূমি [Coastal Plain] সৃষ্টির কারণ- নানাভাবে উপকূল সমভূমি সৃষ্টি হয়, যেমন-

১) সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে আসা পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি পদার্থ উপকূলের অগভীর সমুদ্রে ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে উপকূলে সমভূমির সৃষ্টি করে; আবার

২) সমুদ্রের ঢেউ এবং জোয়ার-ভাটার প্রভাবে উপকূলের ভূমির ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে সমভূমির সৃষ্টি করে । এছাড়া

৩) উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলি দ্বারা ভরাট হয়ে বা ভূমিকম্পের ঊর্ধ্বচাপের প্রভাবে উঁচু হয়েও উপকূলীয় সমভূমি সৃষ্টি হতে পারে।

উদাহরণ: ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের কোনও কোনও অংশে উপকূলীয় সমভূমি দেখা যায়। দিঘার নিকটবর্তী জুনপুটে পলি জমে এরকম সমভূমি সৃষ্টি হচ্ছে ।



ঙ) হ্রদ সমভূমি সৃষ্টির কারণ- নদীবাহিত বালি, নুড়ি, কাঁকর, পলি প্রভৃতি দ্বারা কোনো হ্রদ ভরাট হলে কালক্রমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে হ্রদ সমভূমি বলে। কাশ্মীর উপত্যকা ও উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল হ্রদ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ।



চ) লাভা সমভূমি [Lava Plain] সৃষ্টির কারণ- আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে পৃথিবীর ভিতরকার গলিত লাভা ভূগর্ভের ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে অনেক সময় যে সমতল ভূমির সৃষ্টি করে, তাকে লাভা সমভূমি [Lava Plain] বলে। দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম দিকের কিছু অংশে লাভা সমভূমি [Lava Plain] দেখা যায়।



ছ) হিমবাহ সমভূমি সৃষ্টির কারণ- যেসব সমভূমি হিমবাহের প্রবল চাপ, ঘর্ষণ প্রভৃতি কারণের ফলে সৃষ্টি হয়, তাদের হিমবাহ সমভূমি বলে । ভারতের কাশ্মীর ও কুমায়ুন অঞ্চলে এই ধরনের সমভূমি দেখা যায়। উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চলের সমভূমি হিমবাহ সমভূমির উদাহরণ ।



জ) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] : বায়ুপ্রবাহের পরিবহন ও সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অতিসূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা বা মৃত্তিকা বায়ুর দ্বারা পরিবাহিত হয়ে মরুভূমি সীমানার অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে জমা হয়ে যে সমভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] । এর রং হলদে । কিন্তু এই মাটি খুবই উর্বর ।

উদাহরণ: মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে শীতকালীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বাহিত হয়ে বিপুল পরিমাণে লোয়েস মৃত্তিকা উত্তর চিনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকায় দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত হয়ে সেখানে এক বিস্তীর্ণ ও উর্বর লোয়েস সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে ।



ক্ষয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নীচু মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্ষয়জাত সমভূমির সৃষ্টি হয়। ক্ষয়জাত সমভূমি দু ধরনের হয় যথা— ক) সমপ্রায় ভূমি এবং খ) পাদদেশীয় সমভূমি।

ক) সমপ্রায় ভূমি সৃষ্টির কারণ: নদীর জলপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাচীন মালভূমি এবং উচ্চভূমি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচু-নীচু ঢেউ-খেলানো ভূমি বা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে তাদের সমপ্রায় ভূমি বলা হয়।

উদাহরণ:- ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমির কোনো কোনো অংশ সমপ্রায়ভূমি এবং এদের মধ্যে পরেশনাথ ও পাঞ্চেত পাহাড় দুটি হল মোনাডনক ।

খ) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টির কারণ- বায়ু এবং জলের ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে মরুভূমি অঞ্চলের পর্বতের ঢাল ও পাদদেশভাগ পাথরে ঢাকা ঢালু সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টি হয় (অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশের সমভূমি )।



ভু-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: ভূ-আন্দোলনের ফলে সাধারণত দু’রকমের সমভূমির সৃষ্টি হয়, যথা— ক) উন্নত সমভূমি ও খ) অবনত সমভূমি । ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল) এবং উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।

ক) উন্নত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল)

খ) অবনত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।



♦আউট-ওয়াস সমভূমি [Out-Wash-Plain]:- হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বহিঃধৌত সমভূমি বা আউট-ওয়াশ সমভূমি [Out-Wash-Plain] হল তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিরূপ । উচ্চ পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ এসে পৌঁছালে তা গলে নদীর সৃষ্টি হয় এবং সেখানে হিমবাহ-বাহিত পাথরের টুকরো, নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমি গঠন করে তাকে আউট-ওয়াশ প্লেন বা বহিঃধৌত সমভূমি [Out-Wash-Plain] বলে ।



♦উদাহরণ:-

১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] (যেমন- গাঙ্গেয় সমভূমি পলিগঠিত সমভূমির উদাহরণ );

২) প্লাবন সমভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি [Flood Plain] (যেমন, ব্রহ্মপুত্র সমভূমি প্লাবন সমভূমির উদাহরণ );

৩) বদ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] (গাঙ্গেয় মোহনায় অবস্থিত ব-দ্বীপটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সমভূমি);

৪) উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] ( দিঘার জুনপুটে গঠিত সমভূমি উপকূল সমভূমির উদাহরণ );

৫) হ্রদ সমভূমি (উত্তর ও দক্ষিন দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল হ্রদ সমভূমির উদাহরণ );

৬) লাভা সমভূমি [Lava Plain] (দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর দিকের কিছু অংশ লাভা সমভূমির উদাহরণ );

৭) হিমবাহ সমভূমি (উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চলের সমভূমি হিমবাহ সমভূমির উদাহরণ ) এবং

৮) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] এর রং হলদে (চিনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকার সমভূমি লোয়েস সমভূমির উদাহরণ) ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি

more_horiz
►মানুষের কাজকর্মের ওপর ভূমিরূপের প্রভাব : [Influence of Landforms on Human Activities]

মানুষের জীবন ও তার কাজকর্মের ওপর ভূমিরূপের প্রভাব অসামান্য । তাই দেখা যায়,পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবনধারার সঙ্গে সমভূমি ও মালভূমি অঞ্চলের মানুষের জীবনধারার মধ্যে কত পার্থক্য ।



♦ মানুষের জীবনে পর্বতের প্রভাব : [Influence of Mountain on Human Lives]

মানবজীবনে পর্বতের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবগুলি হল: -

১) পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি বন্ধুর, জলবায়ু শীতল আর মাটি অনুর্বর । তাই সেখানকার মানুষের চাষবাস করার সুযোগ কম । সামান্য পরিমাণে কৃষিকাজ, পশুপালন, আর কাঠ সংগ্রহ করা সেখানকার মানুষের প্রধান উপজীবিকা ।

২) বন্ধুর স্থলপথে যাতায়াত করা বা খরস্রোতা নদীর জলপথে পরিবহন করা অসুবিধাজনক বলে মালপত্র আদানপ্রদান করা ব্যবসা-বাণিজ্য করা বা শিল্প গড়ে তোলা সহজ নয় ।

৩) জীবিকার অভাবের জন্য পার্বত্য অঞ্চলের লোকবসতি খুবই কম ।

৪) পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ কষ্টসহিষ্ণু, পরিশ্রমী ও সাহসী হয় ।

৫) পর্বতের মনোরম পরিবেশে স্বাস্থ্যনিবাস গড়ে ওঠে ।

৬) উঁচু পর্বতশ্রেণি কোনো দেশের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রন করে,

৭) পার্বত্য হিমবাহের বরফগলা জল কৃষিকাজ ও পানীয় জলের যোগান দেয়,

৮) পার্বত্য অঞ্চলের খরস্রোতা নদীগুলির জল থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়,

৯) উঁচু পর্বতের ঢালে সরলবর্গীয় অরণ্য এবং নিম্ন পার্বত্য অঞ্চলে সাধারনত চিরহরিৎ বৃক্ষের বনভূমির সৃষ্টি হয়,

১০) পর্বতের ঢালে চা, কফি প্রভৃতি বাগিচা ফসল এবং নানান রকমের ফলের চাষ করা হয়,

১১) মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন ও হোটেল ব্যবসা গড়ে ওঠে।



♦ মানুষের জীবনে মালভূমির প্রভাব : [Influence of Plateau on Human Lives]

১) মালভুমির জায়গায় জায়গায় জলবায়ুর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ।

২) যে সব মালভূমিতে বৃষ্টিপাত হয় সেখানে চাষবাস উন্নত । শুষ্ক মালভূমিতে পশুপালন করা মানুষের প্রধান উপজীবিকা । জীবিকা আর কাজের সুযোগ সুবিধার অভাব থাকায় সেখানকার মানুষের বসতি সাধারণত ঘন হয় না ।

৩) যেসব মালভূমিতে প্রচুর খনিজসম্পদ পাওয়া যায় সেখানে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠে ও জনবসতি ঘন হয় ।



♦ মানুষের জীবনে সমভূমির প্রভাব : [Influence of Plains on Human Lives]

১) সমভূমি সমতল, সহজে যাতায়াত করা যায় ও পথঘাট তৈরি হয় ।

২) সমতলে নদী ধীর গতিতে চলে । তাই জলপথে সহজে যাতায়াত করা যায় ।

৩) সমভুমিতে সহজে যাতায়াত করা যায় বলে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠে ও শিল্প-কারখানা গড়ে উঠে ।

৪) নদীর পলি মাটিতে গড়া সমভূমি খুব উর্বর । তাই সেখানে কৃষিকাজ মানুষের প্রধান উপজীবিকা ।

৫) সমভূমিতে সহজে খাদ্য ও কাজকর্ম পাওয়া যায় । তাই জনবসতি খুব বেশি । পৃথিবীর সমভূমি অঞ্চলগুলি শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা ও সম্পদে সমৃদ্ধ ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি Emptyছোটো প্রশ্ন ও উত্তর:- পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ —পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি

more_horiz
ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর:- পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ —পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি



প্রশ্ন:- ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain) সৃষ্টির প্রধান কারণ কী  ?

উত্তর:- ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain) সৃষ্টির প্রধান কারণ ভুখন্ডের পার্শ্ববর্তী চলন ।



প্রশ্ন:- ভারতের হিমালয় পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- হিমালয় পর্বত ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain) শ্রেণির পর্বত।



প্রশ্ন:- ইউরোপের আল্পস ও জুরা পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ইউরোপের আল্পস ও জুরা পর্বত ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- আফ্রিকার আটলাস পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- আফ্রিকার আটলাস পর্বত ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- উত্তর আমেরিকার রকি পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- উত্তর আমেরিকার রকি পর্বত ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বত ভঙ্গিল পর্বত বা ভাঁজ পর্বত (Fold Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- স্তুপ পর্বতের মাথা কেমন আকৃতির দেখতে হয় ?

উত্তর:- স্তুপ পর্বতের মাথা চ্যাপ্টা আকৃতির দেখতে হয় ।



প্রশ্ন:- ভারতের সাতপুরা পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ভারতের সাতপুরা পর্বত স্তুপ পর্বত (Block Mountain) বা চ্যুতি পর্বত (Faulty Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- ভারতের নীলগিরি পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ভারতের নীলগিরি পর্বত স্তুপ পর্বত (Block Mountain) বা চ্যুতি পর্বত (Faulty Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- ভারতের আন্নামালাই পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ভারতের আন্নামালাই পর্বত স্তুপ পর্বত (Block Mountain) বা চ্যুতি পর্বত (Faulty Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- ভারতের বিন্ধ্য পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ভারতের বিন্ধ্য পর্বত স্তুপ পর্বত (Block Mountain) বা চ্যুতি পর্বত (Faulty Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- ফ্রান্সের ভোজ পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ফ্রান্সের ভোজ পর্বত স্তুপ পর্বত (Block Mountain) বা চ্যুতি পর্বত (Faulty Mountain) শ্রেণির পর্বত।



প্রশ্ন:- জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট কোন কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট স্তুপ পর্বত (Block Mountain) বা চ্যুতি পর্বত (Faulty Mountain)  শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- ভারতের আরাবল্লী পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ভারতের আরাবল্লী পর্বত ক্ষয়্জাত পর্বত বা অবশিষ্ট (Relict বা Erosional বা Residual Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- ভারতের পূর্বঘাট পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ভারতের পূর্বঘাট পর্বত ক্ষয়্জাত পর্বত বা অবশিষ্ট (Relict বা Erosional বা Residual Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- বিহারের রাজমহল পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- বিহারের রাজমহল পর্বত ক্ষয়্জাত পর্বত বা অবশিষ্ট (Relict বা Erosional বা Residual Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- স্পেনের সিয়েরা নেভাদা পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- স্পেনের সিয়েরা নেভাদা পর্বত ক্ষয়্জাত পর্বত বা অবশিষ্ট (Relict বা Erosional বা Residual Mountain) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- ইটালির ভিসুভিয়াস পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- ইটালির ভিসুভিয়াসপর্বত আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত (Volcano বা Mountain of accumulation) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- জাপানের ফুজিয়ামা পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- জাপানের ফুজিয়ামা পর্বত আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত (Volcano বা Mountain of accumulation) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো পর্বত আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত (Volcano বা Mountain of accumulation) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- মেক্সিকোর পোপোক্যাটেপেটল পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- মেক্সিকোর পোপোক্যাটেপেটল পর্বত আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত (Volcano বা Mountain of accumulation) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকনকাগুয়া পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকনকাগুয়া পর্বত আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত (Volcano বা Mountain of accumulation) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- দক্ষিণ আমেরিকার চিম্বোরাজো পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- দক্ষিণ আমেরিকার চিম্বোরাজো পর্বত আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত (Volcano বা Mountain of accumulation) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- দক্ষিণ আমেরিকার কটোপাক্সি পর্বত কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- দক্ষিণ আমেরিকার কটোপাক্সি পর্বত আগ্নেয় পর্বত বা সঞ্চয়জাত পর্বত (Volcano বা Mountain of accumulation) শ্রেণির পর্বত ।



প্রশ্ন:- গ্রস্ত উপত্যকা (Rift Valley) কোথায় দেখা যায় ?

উত্তর:- স্তুপ পর্বতে গ্রস্ত উপত্যকা (Rift Valley) দেখা যায় ।



প্রশ্ন:- দামোদর উপত্যকা কোন শ্রেণির উপত্যকার উদাহরণ ?

উত্তর:-  দামোদর উপত্যকা হল ভারতের একটি গ্রস্ত উপত্যকার (Rift Valley) উদাহরণ ।



প্রশ্ন:- ভারতের একটি জীবন্ত আগ্নেয় পর্বতের নাম কী ?

উত্তর:- ভারতের একটি জীবন্ত আগ্নেয় পর্বত হল ব্যারেন দ্বীপ ।



প্রশ্ন:- ভঙ্গিল পর্বত কোন শিলা থেকে সৃষ্টি হয় ?

উত্তর:- ভঙ্গিল পর্বত পাললিক শিলা (Sedimentary Rocks) থেকে সৃষ্টি হয় ।



প্রশ্ন:- ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (Dissected Plateau) বিচ্ছিন্ন হয় মূলত কিসের দ্বারা ?

উত্তর:- ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (Dissected Plateau) বিচ্ছিন্ন হয় মূলত নদী উপত্যকা দ্বারা।



প্রশ্ন:- পৃথিবীর বৃহত্তম উচ্চ-মালভূমির নাম কী ?

উত্তর:- পৃথিবীর বৃহত্তম উচ্চ-মালভূমি নাম হল তিব্বত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- ঝাড়খন্ডের ছোটনাগপুর মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- ঝাড়খন্ডের ছোটনাগপুর মালভূমি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (Dissected Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- কর্ণাটকের মালনাদ মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- কর্ণাটকের মালনাদ মালভূমি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (Dissected Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- মধ্যভারতের বিন্ধ্য মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- মধ্যভারতের বিন্ধ্য মালভূমি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (Dissected Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- গ্রেট বৃটেনের ওয়েলস মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- গ্রেট বৃটেনের ওয়েলস মালভূমি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (Dissected Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- হিমালয় ও কুনলুন পর্বতের মধ্যে অবস্থিত তিব্বত মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- তিব্বত মালভূমি পর্বতঘেরা মালভূমি (Intermontane Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- এলবুর্জ ও জাগ্রোস পর্বতের মধ্যে অবস্থিত ইরাণের মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- এলবুর্জ ও জাগ্রোস পর্বতের মধ্যে অবস্থিত ইরাণের মালভূমি পর্বতঘেরা মালভূমি (Intermontane Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- পন্টিক ও টরাস মধ্যে অবস্থিত আনাতোলিয়ার মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- পন্টিক ও টরাস মধ্যে অবস্থিত আনাতোলিয়ার মালভূমি পর্বতঘেরা মালভূমি (Intermontane Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- দাক্ষিণাত্যের ডেকানট্রাপ মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- দাক্ষিণাত্যের ডেকানট্রাপ মালভূমি লাভাগঠিত মালভূমি (Lava Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত মহারাষ্ট্র মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে অবস্থিত মহারাষ্ট্র মালভূমি লাভাগঠিত মালভূমি (Lava Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া-স্নেক নদীর অববাহিকায় অবস্থিত মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া-স্নেক নদীর অববাহিকায় অবস্থিত মালভূমি লাভাগঠিত মালভূমি (Lava Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ায় অবস্থিত মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ায় অবস্থিত মালভূমি লাভাগঠিত মালভূমি (Lava Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:-  দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ায় (অল্টিপ্লানো) অবস্থিত মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়ায় (অল্টিপ্লানো) অবস্থিত মালভূমি লাভাগঠিত মালভূমি (Lava Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- পশ্চিম মেক্সিকোয় (পশ্চিম সিয়েরা মাদ্রে ) অবস্থিত মালভূমি কোন শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ?

উত্তর:- পশ্চিম মেক্সিকোয় (পশ্চিম সিয়েরা মাদ্রে ) অবস্থিত মালভূমি লাভাগঠিত মালভূমি (Lava Plateau) শ্রেণিভুক্ত মালভূমি ।



প্রশ্ন:- সমভূমি [Plains] কয় প্রকার ও কী কী ?

উত্তর:- সমভূমিকে [Plains] নানা প্রকারে ভাগ করা যায় ; যথা —(ক) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain]  (খ) প্লাবন সমভূমি [Flood Plain]  (গ) ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] (ঘ) উপকূল সমভূমি [Coastal Plain]  (ঙ) সমপ্রায় সমভূমি । এছাড়া আরও অনেক রকমের সমভূমি আছে, যেমন —তরঙ্গায়িত সমভূমি, হ্রদ-সমভূমি, লাভা সমভূমি, লোয়েস সমভূমি প্রভৃতি ।



প্রশ্ন:- উত্তর ভারতের সুবিশাল সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সমভূমি কোন শ্রেণির সমভূমি ?  

উত্তর:- উত্তর ভারতের সুবিশাল সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সমভূমি পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] শ্রেণির সমভূমি ।



প্রশ্ন:- ইয়াংসিকিয়াং নদীর অববাহিকার সমভূমি কোন শ্রেণির সমভূমি ?

উত্তর:- ইয়াংসিকিয়াং নদীর অববাহিকার সমভূমি পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] শ্রেণির সমভূমি ।



প্রশ্ন:- মেকং নদীর অববাহিকার সমভূমি কোন শ্রেণির সমভূমি ?

উত্তর:- মেকং নদীর অববাহিকার সমভূমি পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] শ্রেণির সমভূমি।



প্রশ্ন:- মেনাম নদীর অববাহিকার সমভূমি কোন শ্রেণির সমভূমি ?

উত্তর:- মেনাম নদীর অববাহিকার সমভূমি পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] শ্রেণির সমভূমি।



প্রশ্ন:- ইরাবতী নদীর অববাহিকার সমভূমি কোন শ্রেণির সমভূমি ?

উত্তর:- ইরাবতী নদীর অববাহিকার সমভূমি পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] শ্রেণির সমভূমি ।



প্রশ্ন:- ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকার সমভূমি কোন শ্রেণির সমভূমি ?

উত্তর:- ইউফ্রেটিস নদীর অববাহিকার সমভূমি পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] শ্রেণির সমভূমি ।



প্রশ্ন:- টাইগ্রিস নদীর অববাহিকার সমভূমি কোন শ্রেণির সমভূমি ?

উত্তর:- টাইগ্রিস নদীর অববাহিকার সমভূমি পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] শ্রেণির সমভূমি।



প্রশ্ন:- মিসিসিপি-মিসৌরী নদীর অববাহিকার সমভূমি কোন শ্রেণির সমভূমি ?

উত্তর:- মিসিসিপি-মিসৌরী নদীর অববাহিকার সমভূমি পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] শ্রেণির সমভূমি ।



প্রশ্ন:- প্লাবন সমভূমি [Flood Plain] কোথায় দেখা যায় ?

উত্তর:- পৃথিবীর প্রায় সব নদীর তীরে কম-বেশি প্লাবন সমভূমি [Flood Plain] দেখা যায় ।



প্রশ্ন:- সঞ্চয়জাত সমভূমি কাকে বলে ?

উত্তর:- প্লাবন সমভূমিকে সঞ্চয়জাত সমভূমিও বলে । এই সমভূমি পলিমাটি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয় বলে একে সঞ্চয়জাত সমভূমি বলে । গাঙ্গেয় সমভূমি ভারতের সর্ববৃহৎ সঞ্চয়জাত সমভূমি ।  



প্রশ্ন:-  ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] কোথায় দেখা যায় ?

উত্তর:- গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, হোয়াংহো, ইয়াংসিকিয়াং, মিসিসিপি-মিসৌরী, নীলনদ প্রভৃতি নদ-নদীর মোহনার কাছাকাছি জায়গায় ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] দেখা যায় ।



প্রশ্ন:- উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] কোথায় দেখা যায় ?

উত্তর:- এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা প্রভৃতি সব মহাদেশের উপকূলে উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] দেখা যায় । এই সমভূমি সাধারণত সমুদ্রের দিকে ঢালু হয় ।



প্রশ্ন:- যাবতীয় পর্বতের মধ্যে সবচেয়ে নবীন কোন শ্রেণির পর্বত ?

উত্তর:- যাবতীয় পর্বতের মধ্যে সবচেয়ে নবীন ভঙ্গিল পর্বত ।



প্রশ্ন:- পৃথিবীর উচ্চতম আগ্নেয়গিরির নাম কী ?

উত্তর:- পৃথিবীর উচ্চতম আগ্নেয়গিরির নাম হল হাওয়াই দ্বীপের মৌনালোয়া ।



প্রশ্ন:-পৃথিবীর বৃহত্তম সমভূমি কোনটি ?

উত্তর:- পৃথিবীর বৃহত্তম সমভূমি হল ইউরেশিয়া সমভূমি ।



প্রশ্ন:- ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি কোনটি ?

উত্তর:- ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হল ব্যারেন দ্বীপ ।



প্রশ্ন:- ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমির নাম কী ?

উত্তর:- ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমির নাম হল লাদাখ ।



প্রশ্ন:- পাখির পায়ের মতো দেখতে একটি ব-দ্বীপের নাম কী ?

উত্তর:- পাখির পায়ের মতো দেখতে একটি ব-দ্বীপের নাম হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী-মিসিসিপির ব-দ্বীপ ।



প্রশ্ন:- জীবাশ্ম দেখা যায় কোন শ্রেণীর পর্বতে ?

উত্তর:- জীবাশ্ম দেখা যায় ভঙ্গিল শ্রেণীর পর্বতে ।



প্রশ্ন:- পৃথিবীর ছাদ কাকে বলে ?

উত্তর:-  পামীর মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ বলে ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি Emptyঅধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[প্রথম অধ্যায়-১ম অংশ]

more_horiz
অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[প্রথম অধ্যায়-১ম অংশ]


প্রশ্ন-১. ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] কীভাবে সৃষ্টি হয় ?

উত্তর:-  পাললিক শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয় ।

ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে, এদের মধ্যে প্রধান দুটি মতবাদ হল—

১) মহীখাত তত্ত্ব[Geosyncline Theory] :- মহীখাত তত্ত্ব অনুসারে– এখন যেখানে ভঙ্গিল পর্বতগুলো অবস্থান করছে প্রাচীন কালে সেখানে ছিল বিশালাকার গহ্বর, ভূতাত্ত্বিক ভাষায় যার নাম মহীখাত বা অগভীর সমুদ্র । কালক্রমে যুগ যুগ ধরে পলি পড়ে এই সমুদ্রকে প্রায় ভরাট করে ফেলেছিল । ক্রমাগত পলি জমার ফলে ভূ-স্তরে নিম্নমুখী ও পার্শ্বমুখী চাপের সৃষ্টি হয় তার ফলে অগভীর সমুদ্রের সঞ্চিত পলিতে ভাঁজ পড়তে থাকে। পরবর্তী কালে এইসব ভাঁজগুলো দৃঢ়ভাবে সংবদ্ধ ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] সৃষ্টি করেছে।

২) পাতসঞ্চালন তত্ত্ব [Plate Tectonic Theory]:- পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে– ভূ-ত্বকের গতিশীল পাতগুলির মধ্যে যেকোনো দুটি পাত যখন পরস্পরের কাছে চলে আসে, তখন ওই দুটিপাতের সংযোগরেখা বরাবর শিলাচ্যুতি ঘটে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় । ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বত দুভাবে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন-

ক) প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থান বসে গেলে বা উঁচু হলে শিলাস্তরে ছোটো ছোটো ভাঁজের সৃষ্টি হয় । পরবর্তীকালে ভূ-আলোড়ন যতই বাড়ে, ভাঁজগুলো ততই বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে চলে আসে এবং ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] সৃষ্টি করে ।

খ) প্রচন্ড পার্শ্বচাপের ফলেও শিলাস্তরে ভাঁজ সৃষ্টি হয় । পার্শ্ব চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিলাস্তরের এই ভাঁজগুলো ক্রমশ বড়ো ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করতে পারে ।



প্রশ্ন-২.  ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] উৎপত্তির মহীখাত তত্ত্ব বা জিওসিনক্লাইন থিয়োরি (Geosyncline Theory) ব্যাখ্যা করো ।

উত্তর:  ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] উৎপত্তির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে, এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বগুলির মধ্যে একটি হল মহীখাত তত্ত্ব বা জিওসিনক্লাইন থিয়োরি (Geosyncline Theory) :—

মহীখাত তত্ত্ব (Geosyncline Theory) : ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, এখন যেসব জায়গায় ভঙ্গিল পর্বতগুলো অবস্থান করছে, অতি প্রাচীন কালে সেখানে ছিল বিস্তীর্ণ অবনত অঞ্চল- ভুতাত্ত্বিক ভাষায় যার নাম মহীখাত বা অগভীর সমুদ্র । পরবর্তীকালে যুগ যুগ ধরে পলি পড়ে এই অগভীর সমুদ্র প্রায় ভরাট হয়ে গিয়েছিল । ক্রমাগত পলি জমার ফলে নীচের পলিস্তর পাললিক শিলায় পরিণত হয় । এক সময় পলিস্তর বৃদ্ধির ফলে নিম্নমুখী চাপের পরিমাপও বেড়ে যায়। এর পর প্রবল পার্শ্বচাপের ফলে পাললিক শিলাস্তরে ভাঁজ পড়তে থাকে । পরবর্তীকালে এইসব ভাঁজগুলো দৃঢ়ভাবে সংঘবদ্ধ ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] সৃষ্টি করেছে।



প্রশ্ন-৩.  ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain]  উৎপত্তির পাতসঞ্চালন [Plate Tectonic Theory] তত্ত্ব ব্যাখ্যা করো ।

উত্তর:  ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] উৎপত্তির কারণ সম্পর্কে নানান মতবাদ প্রচলিত আছে, এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বগুলির মধ্যে একটি হল পাতসংস্থান বা পাতসঞ্চালন তত্ত্ব বা প্লেট টেকটনিক থিয়োরি (Plate Tectonic Theory):—

পাতসংস্থান বা পাতসঞ্চালন তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory) : বর্তমানে ভূ-বিজ্ঞানীরা পাতসঞ্চালন (Plate tectonic) মতবাদের ভিত্তিতে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির প্রধান কারণ ব্যাখ্যা করেছেন । পাতসঞ্চালন তত্ত্ব অনুসারে, ভূ-ত্বক [Lithosphere] কয়েকটি গতিশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত, যারা গুরুমন্ডলের নীচের দিকে অতি উত্তপ্ত ও তরল ম্যাগমা স্তরের ওপর ভেসে থাকে। একেকটি পাত কেবল মহাদেশ (বা দেশ) কিংবা মহাসাগর অথবা দুইই মিলিয়ে গঠিত হতে পারে, যেমন–  ইউরেশিয়ান প্লেট, আফ্রিকান প্লেট, ভারতীয় প্লেট, প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট প্রভৃতি । ভয়ংকর উষ্ণতার ফলে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরে যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়, তার ফলে এই পাতগুলো গতি শক্তি লাভ করে এবং অতি ধীরগতিতে বছরে প্রায় ১০ মিলিমিটার চলতে থাকে। এইসব গতিশীল পাতগুলোর মধ্যে যে-কোনো দুটি পাত যখন পরস্পরের মুখো মুখি  হয়, তখন ওই দুটি পাতের সংযোগ রেখা বরাবর উপসাগর, সাগর কিংবা মহাসাগরের তলদেশে সঞ্চিত পাললিক শিলাস্তরের দুদিক থেকে প্রবল পার্শ্ববর্তী চাপে শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ার ফলে শিলাচ্যুতি ঘটে এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় ।

পাতসঞ্চালন তত্ত্বের ভিত্তিতে, ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] দু’ভাবে সৃষ্টি হতে পারে, যেমন—

ক) প্রচন্ড ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর ওপরকার কোনো জায়গা বসে গিয়ে বা উঁচু হয়ে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে ছোটো ছোটো ভাঁজের সৃষ্টি হয় । ভূমিকম্প যতই বাড়তে থাকে, ভাঁজগুলো ততই বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে চলে এসে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] সৃষ্টি করে । আবার,

খ) প্রচন্ড পার্শ্ব চাপের ফলেও ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরে ভাঁজ সৃষ্টি হয় । চাপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঁজগুলো বড়ো ও উঁচু হয়ে পরস্পরের কাছে এসে ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain] সৃষ্টি করতে পারে। ‘ভঙ্গিল’ বা ‘ভাঁজ’ শব্দটি পর্বতের একটি বিশেষ গঠন প্রক্রিয়ার ।



প্রশ্ন-৪. ভঙ্গিল পর্বতের [Fold Mountain] বৈশিষ্ট্য কী কী ?

উত্তর:  ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

১) বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কোমল পাললিক শিলায় ঢেউয়ের মতো ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়;

২) ভঙ্গিল পর্বতগুলি সাধারণত পাললিক শিলায় গঠিত হলেও অনেক সময় ভঙ্গিল পর্বতে আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলার সহাবস্থান পরিলক্ষিত হয় (কারণ,  ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় শিলাস্তরে ফাটল সৃষ্টি হলে, সেই ফাটল দিয়ে ভূগর্ভের ম্যাগমা লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে যা ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে । এর পর কালক্রমে প্রচন্ড চাপ ও তাপের ফলে আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় );

৩) ভঙ্গিল পর্বতের উপরের দিকের ভাঁজকে ঊর্ধ্বভঙ্গ [Anticline] ও নীচের দিকের ভাঁজকে অধোভঙ্গ [Syncline] বলে;

৪) ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজগুলো বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন- প্রতিসম ভাঁজ, অপ্রতিসম ভাঁজ, একটি ভাঁজের উপর অন্য একটি ভাঁজের [Overfold] এসে পড়া প্রভৃতি;

৫) প্রবল ভূ-আলোড়নের জন্য ভঙ্গিল পর্বতে ভাঁজ ছাড়াও অনেক চ্যুতি বা ফল্ট (Fault) দেখা যায়;

৬) প্রধানত সমুদ্র গর্ভ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল বলে ভঙ্গিল পর্বতে জীবাশ্ম (Fossil) দেখা যায়;

৭) ভঙ্গিল পর্বতগুলো সাধারণত প্রস্থের তুলনায় দৈর্ঘে অনেক বেশি বিস্তৃত হয়;

৮) ভঙ্গিল পর্বতগুলো সাধারণত বহু শৃঙ্গবিশিষ্ট ও ছুঁচালো হয়;

৯) ভঙ্গিল পর্বতের গঠন স্থায়ী নয়;

১০) উৎপত্তিকালের তুলনামূলক বিচারে ভঙ্গিল পর্বতকে নবীন (যেমন- হিমালয়) ও প্রাচীন (যেমন-আরাবল্লী) এই দুই ভাগে ভাগ করা যায় ।



প্রশ্ন-৫. উদাহরণ সহ স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] বৈশিষ্টি আলোচনা করো ।

উত্তর:  স্তূপ পর্বতের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

১) স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] মাথা কিছুটা চ্যাপ্টা হয়;

২) এই পর্বতের ঢাল বেশ খাড়া হয়;

৩) এই পর্বতে অনেক চ্যুতি (Fault) ও গ্রস্ত উপত্যকা [Rift Valley] দেখা যায়;

৪) স্তূপ পর্বতের  উচ্চতা খুব বেশি হয় না;

৫) এই পর্বত ভঙ্গিল পর্বতের মতো বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয় না;

৬) সাধারণত লম্বভাবে ভূ-আলোড়নের ফলে স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] সৃষ্টি হয়ে থাকে।



প্রশ্ন-৬. স্তূপ পর্বত [Block Mountain] ও গ্রস্ত উপত্যকার [Rift Valley] উৎপত্তি পরস্পর সংযুক্ত’, কেন ?

উত্তর:  ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশের শিলাস্তরের চ্যুতির ঝুলন অংশের উত্থান কিংবা বসে যাওয়ার মতো ভূপ্রাকৃতিক ঘটনার ফলেই স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] উৎপত্তি হয় । স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকার উৎপত্তি পরস্পর সংযুক্ত কারণ-

১) প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে ভূ-ত্বকের [Lithosphere] কোথাও সংকোচন টান আবার কোথাও প্রসারণ চাপ পড়ে। এর ফলে শিলাস্তরে ক্র্যাক বা গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয় । এরপর যদি আবার ভূ-আলোড়ন হয় তবে ওই ফাটল বরাবর শিলার একটি অংশ থেকে আর একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, একে চ্যুতি [Fault] বলে । ভূত্বকের যে রেখা বরাবর চ্যুতির [Fault] সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতিরেখা এবং যে তলে চ্যুতির সৃষ্টি হয়, তাকে চ্যুতিতল বলে।

২) প্রবল উর্ধ্বচাপ ও নিম্নচাপের ফলে কোনো দুটি চ্যুতির [Fault] মধ্যবর্তী অঞ্চল যখন পাশের অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চ্যুতিরেখা বরাবর খাড়াভাবে ওপরে উঠে আসে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল দুটি নীচে বসে যায়, তখন ওপরে উঠে আসা অংশটি স্তূপ পর্বতে [Block Mountain] পরিণত হয় এবং নীচে বসে যাওয়া অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকা [Rift Valley] রূপে বিরাজ করে । এইভাবে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের উত্থানের ফলে সৃষ্টি হওয়া স্তূপ পর্বতকে হোর্স্ট (horst) বলা হয়। উদাহরণ, ভারতের সাতপুরা পর্বতটি হল হোর্স্ট জাতীয় স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] উদাহরণ ।

৩) ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের প্রবল চাপের ফলে কোনো সময় দুটি সমান্তরাল চ্যুতিরেখার মধ্যবর্তী অংশ যদি খাড়া ভাবে নীচে বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকায় [Rift Valley] পরতিণত হয়, তখন গ্রস্ত উপত্যকাটির দু,পাশের  খাড়া অংশ দুটি স্তূপ পর্বতের আকৃতিপ্রাপ্ত হয়। এই ভাবে সৃষ্টি হওয়া গ্রস্ত উপত্যকাগুলি জার্মানিতে ‘গ্রাবেন’নামে পরিচিত।

উদাহরণ- ফ্রান্সের ভোজ ও জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট স্তূপ পর্বত দুটি এই ভাবে সৃষ্টি হয়েছে।



প্রশ্ন-৭. আগ্নেয় [Volcano]  বা সঞ্চয়জাত  [Mountain of Accumulaion] পর্বত কাকে বলে ?

সঞ্চয়জাত পর্বত বা আগ্নেয় পর্বত:  ভূগর্ভের উত্তপ্ত গলিত তরল শিলা বা ম্যাগমা ভূস্তরের ফাটল দিয়ে লাভারূপে বাইরে বেরিয়ে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে যে গম্বুজাকৃতি পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে সঞ্চয়জাত পর্বত [Mountain of Accumulaion] বা আগ্নেয় পর্বত [Volcano] বলে।

উদাহরণ- ইতালির ভিসুভিয়াস।



প্রশ্ন-৮. উদাহরণ সহ আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] উৎপত্তি বর্ণনা করো ।

উত্তর:  পাতসঞ্চালন তত্ত্ব বা Plate Tectonic Theory  অনুসারে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয়পর্বতের [Volcani] উৎপত্তি:-

১) কোনো একটি মহাসাগরীয় পাত অপর একটি মহাদেশীয় পাতের দিকে অগ্রসর হলে দুইটি পাতের সংযোগস্থলে মহাসাগরীয় প্লেটের প্রান্তসীমা মহাদেশীয় পাতের নীচে ঢুকে যায় (subduction) । এই প্রক্রিয়ার ফলে দুটি পাতের সংযোগস্থলে প্রচন্ড চাপের ফলে ভূপৃষ্ঠের ৮০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার নীচে তাপমাত্রা ভয়ানক বেড়ে যায় । এই তাপে ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন পদার্থ গলে গিয়ে তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমার [Magma] সৃষ্টি হয় এবং গ্যাসের উৎপত্তি হয় ।

২) গ্যাসীয় বুদবুদগুলোর প্রচন্ড চাপে ভূ-গর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত বা ম্যাগমা ভুত্বকের নলের মতো ফাটল বা সুড়ঙ্গ পথে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে এবং আগ্নেয় গিরির শীর্ষদেশে অবস্থিত জ্বালামুখ নামে এক বা একাধিক মুখ বা গহ্বর (crater) দিয়ে লাভা রূপে ছড়িয়ে পড়ে ।

৩) ঊর্ধ্বগামী সমস্ত ম্যাগমা [Magma] একসঙ্গে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে না, ভূপৃষ্ঠের ৩-৫ কিলোমিটার নীচে ম্যাগমা ঘর (Magma Chamber) নামে একটি ঘরে কিছুক্ষণ থাকার পর গ্যাসের চাপ আরও বৃদ্ধি পেলে ম্যাগমা স্রোত ক্রমান্বয়ে ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে । জ্বালামুখ দিয়ে ভূপৃষ্ঠে নির্গত লাভা ক্রমশ শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয়গিরি বা আগ্নেয় পর্বতে [Volcano] পরিণত হয়।

৪) বিভিন্ন সময়ের ব্যবধানে বারংবার লাভা নির্গমনের সঙ্গে সঙ্গে আগ্নেয়গিরির উচ্চতা ক্রমশ বেড়ে যেতে থাকে এবং আগ্নেয় পর্বতটি [Volcano] ক্রমশ শঙ্কুর মতো আকৃতি নেয় । তবে পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে আগ্নেয়গিরির শঙ্কুর মতো আকৃতি অনেকটা নষ্ট হয়ে যায় । তাই বেশির ভাগ আগ্নেয় পর্বতগুলো মাঝারি উচ্চতাবিশিষ্ট হয় এবং এদের ঢাল মাঝামাঝি রকমের হয় । অগ্নুৎপাতের সময় লাভা ছাড়াও আগ্নেয় ধূলিকণা (Volcanic Dust), ছোটো বড়ো পাথরের টুকরো এবং সালফার ডাই-অক্সাইড (SO2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO2) প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ [Crater] দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।

উদাহরণ: জাপানের ফুজিয়ামা, ইতালির ভিসুভিয়াস প্রভৃতি ।



প্রশ্ন-৯. অগ্নুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] শ্রেণিবিভাগ করো ।

উত্তর: অগ্নুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয় পর্বতগুলোকে [Volcano] সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা—

১) সক্রিয় [Active Volcano]- এই ধরনের আগ্নেয়গিরিতে প্রায়ই অগ্নুৎপাত হয় (যেমন, ভিসুভিয়াস) । সক্রিয় আগ্নেয়গিরিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা —

(ক) অবিরাম: - এই সব আগ্নেয়গিরিতে অবিরাম অগ্নুৎপাত হয়  (যেমন,  ভিসুভিয়াস) এবং

(খ) সবিরাম- এই সব আগ্নেয়গিরিতে কিছুদিন পর পর অগ্নুৎপাত হয় (যেমন, সিসিলি দ্বীপের স্টোম্বলি) ।

২) সুপ্ত [Dormant Volcano] - যেসব আগ্নেয়গিরিতে বহুকাল অগ্নুৎপাত হয়নি কিন্তু ভবিষ্যতে হওয়ার আশঙ্কা আছে (যেমন,  জাপানের ফুজিয়ামা) ।

৩) মৃত [Extinct Volcano]- যেসব আগ্নেয় পর্বতে স্মরণাতিত কাল থেকে কোনো অগ্নুৎপাত হয়নি (যেমন,  মায়ানমার-এর পোপো) ।



প্রশ্ন-১০. আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] বৈশিষ্ট্য কী কী ?

উত্তর: আগ্নেয় পর্বতের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য গুলি হল:-

১) অগ্নুৎপাতের সময় ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা গলিত লাভা জমাট বেঁধে আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] সৃষ্টি করে;

২) সাধারণত আগ্নেয় পর্বতকে দেখতে অনেকটা ত্রিভুজ বা শঙ্কুর মতো হয়;

৩) আগ্নেয় পর্বতের শীর্ষদেশে এক বা একাধিক জ্বালামুখ (Crater) নামে গহ্বর থাকে যা একটি নলের মতো পথের মাধ্যমে ভূগর্ভের ম্যাগমা গহ্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকে;

৪) প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলভাগ এবং সমুদ্রের শৈলশিরার ওপর ভূত্বকের দুর্বল স্থানগুলোতে আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] আধিক্য দেখা যায়;

৫) অনেক সময় আগ্নেয় পর্বতগুলো গভীর সমুদ্রতল থেকে সঞ্চিত হতে হতে দ্বীপের মতো সমুদ্রের ওপরে উঠে আসে;

৬) কখনও কখনও আগ্নেয় পর্বতগুলোতে লাভাস্তরের মধ্যে ছাই এবং প্রস্তরখন্ড দেখা যায়;

৭) পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে কোনো কোনো আগ্নেয় পর্বত [Volcano] অনেকাংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায় (যেমন, ক্রাকাতোয়া আগ্নেয় পর্বতটি ১৯৯৩ সালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় );

৮) আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] ঢাল  ও উচ্চতা খুব বেশি হয় না ।



প্রশ্ন-১১. বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়গিরির [Volcano] বর্ণনা দাও ।

উত্তর:  অগ্নুৎপাতের বৈশিষ্ট্য অনুসারে আগ্নেয়পর্বতগুলিকে [Volcano] সাধারনত তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা—

১) সক্রিয় [Active Volcano] - এই ধরনের আগ্নেয়গিরিতে প্রায়ই অগ্নুৎপাত হয় (যেমন:- ভিসুভিয়াস) । সক্রিয় আগ্নেয়গিরিকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

ক) অবিরাম- এইসব আগ্নেয়গিরিতে অবিরাম অগ্নুৎপাত হয় (উদাহরণ-  ভিসুভিয়াস) ও

খ) সবিরাম-  কিছুদিন পর পর অগ্নুৎপাত হয় (উদাহরণ- ইতালির স্টোম্বলি) ।

২) সুপ্ত [Dormant Volcano]- যেসব আগ্নেয় পর্বতে বহুকাল অগ্নুৎপাত হয়নি কিন্তু ভবিষ্যতে হতে পারে (যেমন, ফুজিয়ামা)।

৩) মৃত [Extinct Volcano] - যেসব আগ্নেয় পর্বতে স্মরণাতীত কাল থেকে কোনো অগ্নুৎপাত হয়নি (যেমন, মায়ানমারের পোপো) ।



প্রশ্ন-১২. ক্ষয়জাত [Relict Mountain or Erosional Mountain] পর্বত কাকে বলে ?

উত্তর:  ক্ষয়জাত পর্বত: ভঙ্গিল পর্বত, স্তূপ পর্বত ও আগ্নেয় পর্বত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে ক্ষয়জাত পর্বত [Relict Mountain] বলে । ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগ বৃষ্টি, নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি কাজের ফলে প্রতিনিয়ত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে । এইভাবে, অনেক সময় শক্ত শিলায় গড়া জায়গা কম ক্ষয় পেয়ে আশেপাশে বেশি ক্ষয়ে যাওয়া নরম শিলায় গঠিত জায়গা থেকে আলাদা হয়ে উঁচুতে থেকে যায়, এইভাবে ক্ষয়জাত পর্বত [Relict Mountain] সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের কম ক্ষয় প্রাপ্ত হওয়া অবশিষ্ট অংশ পর্বতে পরিণত হয় বলে ক্ষয়জাত পর্বতকে অবশিষ্ট পর্বতও [Residual Mountain] বলা হয়।

উদাহরণ:- স্কটল্যান্ড ও নরওয়ের পর্বতশ্রেণি, ভারতের আরাবল্লী, নীলগিরি, রাজমহল প্রভৃতি পর্বতগুলি ক্ষয়জাত পর্বতের উদাহরণ।



প্রশ্ন-১৩. ক্ষয়জাত পর্বতের [Erosional Mountain] সঙ্গে আগ্নেয় পর্বতের কী কী পার্থক্য রয়েছে ?

উত্তর:  ক্ষয়জাত পর্বত [Erosional Mountain] ও আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] পার্থক্য:-

ক্ষয়জাত পর্বত [Erosional Mountain]
vs

আগ্নেয় পর্বত [Volcano]

১) ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের শক্ত শিলায় গঠিত অংশের কম ক্ষয়প্রাপ্ত কোনো স্থান পার্শ্ববর্তী বেশি ক্ষয়ে যাওয়া নরম শিলায় গঠিত স্থান থেকে আলাদা হয়ে উঁচুতে উঠে গেলে ক্ষয়জাত [Erosional Mountain] পর্বতের সৃষ্টি হয়।
vs

১) ভূগর্ভের ম্যাগমা [Magma] ভূস্তরের ফাটল দিয়ে লাভা রূপে বারংবার বাইরে বেরিয়ে এসে জমাট বেঁধে উঁচু হয়ে শঙ্কুর মতো আকৃতি প্রাপ্ত হলে আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] সৃষ্টি হয় ।

২) ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে ভঙ্গিল পর্বত [Fold Mountain], স্তূপ পর্বত [Block Mountain] এবং আগ্নেয় পর্বতগুলি [Volcano] ক্ষয়জাত পর্বতে [Erosional Mountain] রূপান্তরিত হয়।
vs

২) অগ্নুৎপাতের সময় ভূগর্ভ থেকে উঠে আসা গলিত লাভা জমাট বেঁধে আগ্নেয় পর্বত [Volcano] সৃষ্টি করে।

৩) ক্ষয়ের ফলে এই পর্বতের মাথা চ্যাপ্টা হয় এবং এই সব পর্বতের শীর্ষদেশে আগ্নেয় পর্বতের মতো গহ্বর থাকে না ।

vs
৩) আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] শিখরে এক বা একাধিক জ্বালামুখ নামে গহ্বর থাকে [Crater], যার নলের মতো পথের মাধ্যমে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।

৪) বহু প্রাচীন পর্বতশ্রেণিই বহু হাজার বছর ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে ক্ষয়জাত পর্বতে [Erosional Mountain] রূপান্তরিত হয়েছে ।

vs
৪) প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলভাগ এবং সমুদ্রের শৈলশিরার ওপর ভূত্বকের দূর্বল স্থান গুলিতে আগ্নেয় পর্বতের [Volcano] আধিক্য দেখা যায়।

৫) ক্ষয়জাত পর্বতগুলো [Erosional Mountain] হঠাৎ ধ্বংশ হয়ে যায় না।

vs
৫) পরবর্তী অগ্নুৎপাতের প্রবল বিস্ফোরণে কোনো কোনো আগ্নেয় পর্বত [Volcano] অনেকাংশে ধ্বংস হয়ে যায়।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি Emptyঅধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[প্রথম অধ্যায়-২য় অংশ]

more_horiz
অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[প্রথম অধ্যায়-২য় অংশ]


প্রশ্ন-১. মালভূমি [Plateau] সৃষ্টির কারণগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো ।

উত্তর:  ভূপৃষ্ঠে মালভূমি [Plateau] সৃষ্টি হওয়ার তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে, যেমন-

১) ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ীভন,

২) ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন এবং

৩) ভূপৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয়।

১) ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষয়ীভবন: দীর্ঘ দিন ধরে নদী, হিমবাহ, সূর্যতাপ কিংবা বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে পার্বত্য অঞ্চল ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মালভূমিতে [Plateau] পরিণত হয়।

উদাহরণ: অ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালার অ্যালিঘেনি মালভূমি, মধ্যভারতের বুন্দেলখন্ড ও বাঘেলখন্ড প্রভৃতি মালভূমি গুলি ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ীভবনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে ।

২) ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন: ভূত্বক কয়েকটি গতিশীল পাত বা টেকটনিক প্লেট-এ বিভক্ত । গুরুমন্ডল বা ম্যান্টলের ওপর দিয়ে এইসব গতিশীল পাতগুলির সঞ্চারণশীলতা হল মালভূমি [Plateau] সৃষ্টির অন্যতম কারণ । পাত সঞ্চালনের ফলে ভূমিকম্প আর ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের [Fold mountain] সৃষ্টি হলে দুটি ভঙ্গিল পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চল পর্বতবেষ্টিত মালভূমিতে [Intermontane Plateau] পরিণত হয় (যেমন,  তিব্বত মালভূমি) । অনেক বিজ্ঞানির মতে, ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া মালভূমিগুলিকে দু ভাগে বিভক্ত করা যায়, যেমন-

১) দুটি ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী মালভূমি (যেমন, তিব্বত মালভূমি)। এবং

২) পর্বত গঠনকালে ভূপৃষ্ঠের চ্যুতির ফলে উৎপন্ন মালভূমি, (যেমন- পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন মালভূমি)। তবে এই জাতীয় মালভূমির [Plateau] উচ্চতা স্তূপ পর্বতের [Block Mountain] তুলনায় কম হয়।

উদাহরণ: প্রবল ভূমিকম্পের ফলে প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ড ও আঙ্গারাল্যান্ডের মহাদেশীয় পাতগুলি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমি, আরব মালভূমি, ব্রাজিল মালভূমি, আফ্রিকার মালভূমি এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মালভূমির সৃষ্টি করেছে ।

৩) ভূপৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয়: কোনো রকম বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূপৃষ্ঠের একাধিক ফাটল বা সুড়ঙ্গপথে ভূগর্ভ থেকে নির্গত লাভা ভূপৃষ্ঠে যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত হয়ে লাভা গঠিত মালভূমি [Lava Plateau] সৃষ্টি করে।

উদাহরণ: দাক্ষিণাত্যের ডেকানট্র্যাপ ।



প্রশ্ন-২. মালভূমির [Plateau] বৈশিষ্ট্য কী কী ?

উত্তর:  সমুদ্র সমতল থেকে ৩০০ মিটার উঁচু, চারপাশে খাড়া ঢাল যুক্ত বিস্তীর্ণ ভূ-ভাগকে মালভূমি [Plateau] বলে।

মালভূমির [Plateau] বৈশিষ্ট্য:-  উচ্চতা ছাড়াও মালভূমির [Plateau] অন্য যেসব উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো হল—

১) বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি,

২) যার উপরিভাগ প্রায় সমতল বা কিছুটা তরঙ্গায়িত,

৩) চারদিকে ঢাল বেশ বেশি,

৪) দেখতে অনেকটা টেবিলের মতো বলে, যার আর এক নাম টেবিল ল্যান্ড [Table Land] এবং

৫) উচ্চতা ৩০০ মিটারের বেশি।



প্রশ্ন-৩. পর্বতবেষ্টিত মালভূমির [Intermontane Plateau] সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর:  ভূ-আন্দোলনের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত নীচু স্থানগুলো চাপের ফলে কিছুটা উঁচু ও খাড়া ঢালযুক্ত হয়ে মালভূমির আকৃতি নেয়। চারিদিকে পর্বতবেষ্টিত থাকায় এই জাতীয় মালভূমিগুলিকে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি [Intermontane Plateau] বলা হয়।

উদাহরণ: তিব্বত মালভূমি, ইরানের মালভূমি প্রভৃতি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির [Intermontane Plateau] উদাহরণ ।



প্রশ্ন-৪. পর্বতবেষ্টিত মালভূমি [Intermontane Plateau] কীভাবে সৃষ্টি হয় বিস্তারির ভাবে আলোচনা কর ?

উত্তর:

১) ভূ-ত্বক [Lithosphere] কয়েকটি গতিশীল পাত বা টেকটনিক প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত, যারা গুরুমন্ডলের নীচের দিকে অতি উত্তপ্ত, তরল ম্যাগমা স্তরের ওপর ভেসে থাকে ।

২) ভয়ংকর উত্তাপের ফলে ভূগর্ভের ম্যাগমা স্তরে যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়, তার ফলে এই পাতগুলি অতি ধীরগতিতে বছরে প্রায় ১০ মিলিমিটার গতিতে চলতে থাকে ।

৩) দুটি পাত যখন পরস্পরের মুখোমুখি হয় তখন ওই দুটি পাতের সংযোগরেখা বরাবর শিলাচ্যুতি এবং ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

৪) পাত সঞ্চালনের ফলে ভূমিকম্পের ফলশ্রুতিতে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হলে দুটি ভঙ্গিল পর্বতের মধ্যবর্তী অঞ্চল মালভূমিতে পরিণত হয় । চার দিকে পর্বত বেষ্টিত হওয়ায় এই সব মালভূমিগুলিকে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি [Intermontane Plateau] বলে।

উদাহরণ: মধ্য এশিয়ার পামির মালভূমি, তিব্বত মালভূমি প্রভৃতি মালভূমিগুলি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির [Intermontane Plateau] উদাহরণ ।



প্রশ্ন-৫. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করো ।

উত্তর:  নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা কোনো প্রাচীন ও বিস্তীর্ণ মালভূমি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে এক বা একাধিক নদী ও তাদের শাখাপ্রশাখা ধীরে ধীরে মালভূমিকে ছোটো ছোটো অংশে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এই ভাবে কোনো বিস্তীর্ণ মালভূমি অঞ্চল সংকীর্ণ নদী উপত্যকার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] বলা হয়।



বৈশিষ্ট্য:-

১) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] অঞ্চলগুলি কঠিন ও কোমল- এই দুই ধরনের শিলাতেই গঠিত হয়ে থাকে;

২) হিমবাহ, নদী, ঝড়বৃষ্টি, বাতাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয় পেয়ে কোমল শিলা অপসারিত হলে কঠিন শিলা গঠিত স্থানগুলি নাতিউচ্চ পাহাড় বা টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে;

৩) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] সাধারণত বিভিন্ন নদীউপত্যকা দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়;

৪) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] থেকে সৃষ্টি হওয়া বেশিরভাগ পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় একই রকমের হয়;

৫) এই ধরনের মালভূমি বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অবশেষে তা বহু পাহাড় ও উপত্যকার সমষ্টিতে পরিণত হয়;

৬) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি মোটামুটি সমতল কিন্তু মৃদু ঢাল যুক্ত হয়।

উদাহরণ:  ভারতের পূর্বঘাট ও পশ্চিম ঘাট পার্বত্য অঞ্চলে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] দেখা যায়।

১) পূর্বভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমি,

২) মধ্যভারতের অন্তর্গত বুন্দেলখন্ড ও বাঘেলখন্ড মালভূমি এবং

৩) দক্ষিন ভারতের কর্ণাটক মালভূমির মালনাদ অঞ্চল ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] নিদর্শন ।



প্রশ্ন-৬. ভারতে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] কীভাবে সৃষ্টি হয় ? উদাহরণ দাও।

উত্তর:  নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা কোনো প্রাচীন ও বিস্তীর্ণ মালভূমি অঞ্চল ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে এক বা একাধিক নদী ও তাদের শাখাপ্রশাখা ধীরে ধীরে ওই ক্ষয়প্রাপ্ত মালভূমি অঞ্চলকে ছোটো ছোটো অংশে বিচ্ছিন্ন করে ফেললে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] সৃষ্টি হয় । এই ভাবে কোনো বিস্তীর্ণ মালভূমি অঞ্চল সংকীর্ণ নদী উপত্যকার দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] সৃষ্টি করে ।

উদাহরণ:

১) কর্ণাটক মালভূমির মালনাদ অঞ্চলটি কাবেরী ও তার বিভিন্ন উপনদী (সিমসা, হিমবতী, ভবানী প্রভৃতি) দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির [Dissected Plateau] সৃষ্টি করেছে।

২) ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলটি দামোদর, সুবর্ণরেখা, বরাকর, কোয়েল প্রভৃতি নদীর সংকীর্ণ উপত্যকার দ্বারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির  [Dissected Plateau] সৃষ্টি করেছে।



প্রশ্ন-৭. লাভা মালভূমিতে [Lava Plateau] চ্যাপ্টা মাথা যুক্ত পাহাড় সৃষ্টি হয় কেন ?

উত্তর:  আগ্নেয়গিরির প্রবল অগ্নুৎপাত অথবা বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে ভূপৃষ্ঠের একাধিক দূর্বল অংশ বা ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভের গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল স্তর থেকে ব্যাসল্ট জাতীয় উত্তপ্ত তরল শিলা স্রোত বা ম্যাগমা বেরিয়ে এসে লাভা রূপে সেই ভূখন্ডে জমা হতে থাকে। শক্ত ব্যাসল্ট শিলায় গঠিত এই লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম অংশে লাভা মালভূমির [Lava Plateau] সৃষ্টি করেছে। ব্যাসল্ট জাতীয় কঠিন আগ্নেয় শিলায় গঠিত হওয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে কোটি কোটি বছর ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া সত্বেও লাভা মালভূমি [Lava Plateau] অঞ্চলের পাহাড়গুলি পুরোপুরি ক্ষয়ে না গেলেও ক্ষয়ের ফলে এইসব পাহাড়ের শীর্ষদেশ চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছে।



প্রশ্ন-৮. তির্যক মালভূমি কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

উত্তর:  প্রবল ভূমিকম্পে বিস্তীর্ণ ভূখন্ড একদিকে কাত হয়ে বা হেলে গিয়ে যে মালভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে তির্যক মালভূমি বলে। যেমন, দাক্ষিণাত্য মালভূমিটি পশ্চিম দিক থেকে পূর্বদিকে কাত হয়ে আছে।

উদাহরণ:-  ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি, মেঘালয় মালভূমি, ইউরোপে স্পেনের মেসেটা মালভূমি, দক্ষিন আমেরিকার ব্রাজিল মালভূমি প্রভৃতি হল তির্যক মালভূমির উদাহরণ ।



প্রশ্ন-৯. যে-কোনো তিন ধরনের মালভূমি ব্যাখ্যা করো ।

উত্তর:-

১) ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া মালভূমি, যেমন- পর্বতবেষ্টিত মালভূমি [Intermontane Plateau] ,

২) ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়ের ফলে সৃষ্টি হওয়া মালভূমি, যেমন- ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau],

৩) ভূপৃষ্ঠে সঞ্চয়ের ফলে গঠিত মালভূমি, যেমন- লাভাগঠিত মালভূমি [Lava Plateau]।

১) পর্বত বেষ্টিত মালভূমি [Intermontane Plateau]: ভূমিকম্পের ফলে ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি [Fold Mountain] সৃষ্টি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণির মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত নীচু স্থানগুলি কিছুটা উঁচু ও খাড়া ঢালযুক্ত হয়ে মালভূমির [Plateau] আকৃতি নেয়। চারি দিকে পর্বতবেষ্টিত হওয়ায় এই সব মালভূমিকে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি [Intermontane Plateau] বলে।

উদাহরণ: মধ্যএশিয়ার পামির মালভূমি, তিব্বত মালভূমি, ইরানের মালভূমি, আনাতোলিয়ার মালভূমি, বলিভিয়ার মালভূমি প্রভৃতি মালভূমিগুলি পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উদাহরণ ।

২) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] : নদীপ্রবাহ, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টির জল প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা কোনো প্রাচীন ও বিস্তীর্ণ মালভূমি ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে, নরম শিলায় গঠিত অংশ বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কঠিন শিলায় গঠিত অংশ কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । পরবর্তী কালে নীচু অংশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়ে উঁচু অংশগুলোকে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত করে বা বিচ্ছিন্ন করে, তাই একে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি [Dissected Plateau] বলে।

উদাহরণ: ছোটনাগপুরের মালভূমি।

৩) লাভাগঠিত মালভূমি [Lava Plateau] : ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় ১৩-১৪ কোটি বছর আগে ভূগর্ভের গুরুমন্ডল বা ম্যান্টল অঞ্চল থেকে অতি উত্তপ্ত তরল লাভা স্রোত বহু ফাটলের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে এসে কোনো রকম বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম ভাগের প্রায় ৫ লক্ষ কিলোমিটার অঞ্চলকে লাভায় ঢেকে ফেলে ছিল, কালক্রমে যা জমাট বেঁধে দাক্ষিণাত্য মালভূমি সৃষ্টি করেছে । মধ্যপ্রদেশ ও কাথিয়াওয়াড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এই রকম লাভা গঠিত মালভূমি দেখা যায়।



প্রশ্ন-১০. দুটি উল্লেখযোগ্য মালভূমির বিবর্তন আলোচনা করো।

ছোটনাগপুর মালভূমির বিবর্তন [ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি]

১) আজ যেখানে হিমালয় পর্বত দাঁড়িয়ে আছে , বহু কোটি বছর আগে সেখানে টেথিস সাগর নামে একটি অগভীর সমুদ্রের দক্ষিণে আগ্নেয় শিলায় গড়া গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে বহু প্রাচীন একটি বিস্তীর্ণ স্থলভাগ ছিল ।

২) ভূত্বকে পাতসঞ্চালনের প্রভাবে প্রবল ভূমিকম্পের ফলে সুবিস্তীর্ণ গন্ডোয়ানা ভূখন্ডটি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে দক্ষিন ভারত, আরব প্রভৃতি স্থানে মহাদেশীয় মালভূমিতে পরিণত হয় । ছোটনাগপুরের মালভূমিটি হল পৃথিবীর  প্রাচীনতম ভূখন্ড গন্ডোয়ানা ল্যান্ডের অংশবিশেষ- যা অতি প্রাচীন প্রায় ১০০ কোটি বছর আগের প্রিক্যামব্রিয়ান যুগের আগ্নেয় (গ্রানাইট) এবং রূপান্তরিত (নাইস) শিলায় গড়া ।

৩) পরবর্তীকালে সূর্যকিরণ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেলে বিভিন্ন নদনদী ও তাদের শাখা-প্রশাখা সুপ্রাচীন এই মালভূমি অঞ্চলটিকে বিচ্ছিন্ন করে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিতে [Dissected Plateau] পরিণত করে।

৪) যুগ যুগ ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে বর্তমানে ছোটনাগপুর মালভূমি পূর্ব দিকের অংশটি সমপ্রায় ভূমিতে পরিণত হয়েছে যার মাঝে মধ্যে অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলায় গঠিত নাতিউচ্চ ছোটো ছোটো পাহাড় বা মোনাডনক দেখা যায় (যেমন, পরেশনাথ ও পাঞ্চেত পাহাড়) ।

লাভাগঠিত ডেকান্ট্রাপ মালভূমির বিবর্তন:  ছয় সাত কোটি বছর আগে ভূপৃষ্ঠের অসংখ্য ফাটলের মধ্য দিয়ে ভূগর্ভের অতি উত্তপ্ত তরল শিলা বা ম্যাগমা [Magma] কোনো বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে অতি ধীর গতিতে লাভা রূপে বেরিয়ে এসে দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশের প্রায় পাঁচ লক্ষ বর্গমিটার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে প্রধানত ব্যাসল্ট জাতীয় নিঃসারী আগ্নেয় শিলায় ঢেকে ফেলে ছিল । পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন- রোদ, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ, নদী প্রভৃতির ক্ষয়কাজের প্রভাবে এই মালভূমি অঞ্চলের ওপরের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানের আকার ধারণ করেছে । ব্যাসল্ট জাতীয় আগ্নেয় শিলায় গঠিত হওয়ায় এই অঞ্চলের পাহাড়গুলির শীর্ষদেশ চ্যাপ্টা এবং পার্শ্বদেশ পশ্চিম থেকে পূর্বে সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে ঢালু হয়ে নীচের দিকে নেমে যাওয়ায় দাক্ষিণাত্যর মালভূমির উত্তর-পশ্চিমের এই অঞ্চলটিকে ডেকানট্রাপ বলা হয় । সুইডিস ভাষায় ট্রাপ কথাটির অর্থ হল সিঁড়ি ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি Emptyঅধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[প্রথম অধ্যায়-৩য় অংশ]

more_horiz
অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[প্রথম অধ্যায়-৩য় অংশ]


প্রশ্ন-১. সমভূমি [Plain] সৃষ্টির কারণ গুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করো ।

উত্তর: উৎপত্তি অনুসারে বিভিন্ন সমভূমিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

১) সঞ্চয়জাত সমভূমি,

২) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং

৩) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।

১) সঞ্চয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নদীর দু’পাশে বা নদী মোহনায় পলি জমে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় । সঞ্চয়জাত সমভূমিকে প্রধানত ৮ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

ক) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] সৃষ্টির কারণ- নদীর দু’পাশে বা নদী মোহনায় পলি জমে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, গাঙ্গেয় সমভূমি)।

খ) প্লাবন সমভূমি বা বন্যাগঠিত ভূমি [Flood Plain] সৃষ্টির কারণ- বন্যার জলে সঞ্চিত পলির দ্বারা এই সমভূমি গড়ে ওঠে (যেমন, ব্রহ্মপুত্র সমভূমি)।

গ) বদ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] সৃষ্টির কারণ- নদীর মোহনায় পলি জমে ব -আকৃতির সমভূমি গড়ে ওঠে (যেমন, গঙ্গার মোহনায় অবস্থিত ব-দ্বীপটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি ) ।

ঘ) উপকূলীয় সমভূমি [Coastal Plain] সৃষ্টির কারণ- উপকূলের কাছাকাছি সমূদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলির দ্বারা ভরাট হয়ে অথবা ভূমিকম্পের ফলে উঁচু হয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, দিঘার জুনপুটে গঠিত সমভূমি)।

ঙ) হ্রদ সমভূমি সৃষ্টির কারণ- নদীবাহিত নুড়ি, পলি প্রভৃতির দ্বারা কোনো হ্রদ ভরাট হয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল)।

চ) লাভা সমভূমি [Lava Plain] সৃষ্টির কারণ- আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে লাভা গঠিত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর দিকের কিছু অংশ)।

ছ) হিমবাহ সমভূমি সৃষ্টির কারণ- হিমবাহের দ্বারা সৃষ্টি হয়ে হিমবাহ সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চলের সমভূমি)।

জ) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] সৃষ্টির কারণ- মরুভূমির বালি উড়ে গিয়ে বহু দূরে সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, গোবি মরুভূমির বালিতে হোয়াং হো নদীর অববাহিকায় এই রকম সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে)।

২) ক্ষয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নীচু মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্ষয়জাত সমভূমির সৃষ্টি হয়। ক্ষয়জাত সমভূমি দু ধরনের হয় যথা— ক) সমপ্রায় ভূমি এবং খ) পাদদেশীয় সমভূমি।

ক) সমপ্রায় ভূমি সৃষ্টির কারণ: প্রাচীন মালভূমি বা উচ্চভূমি বহু দিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ঢেউ খেলানো প্রায় সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে সমপ্রায় ভূমিতে সৃষ্টি করে (যেমন, ঝাড়খন্ডের ছোটনাগপুরের মালভূমির কোনো কোনো অংশ)।

খ) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টির কারণ- বায়ু এবং জলের ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে মরুভূমি অঞ্চলের পর্বতের ঢাল ও পাদদেশভাগ পাথরে ঢাকা ঢালু সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টি হয় (অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশের সমভূমি )।

৩) ভু-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: ভূ-আন্দোলনের ফলে সাধারণত দু’রকমের সমভূমির সৃষ্টি হয়, যথা— ক) উন্নত সমভূমি ও খ) অবনত সমভূমি । ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল) এবং উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।

ক) উন্নত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল)

খ) অবনত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।



প্রশ্ন-২. সমভূমির [Plain] বৈশিষ্ট্য কী ?

উত্তর: সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে বা সামান্য উঁচুতে (৩০০ মিটারের মধ্যে) অবস্থিত সমতল স্থলভাগকে সমভূমি [Plain] বলে।

সমভূমির [Plain] বৈশিষ্ট্য:-

১) সমভূমির [Plain] উপরিভাগ সাধারণত সমতল হয়;

২) সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশি উঁচু হয়না;

৩) কোনো কোনো স্থানে সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ কিছুটা উঁচু হয় (উদাহরণ, উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতের পাদদেশের সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিকটা উঁচু);

৪) কোনো কোনো স্থানের সমভূমি আবার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কিছুটা নীচে অবস্থিত হয় (উদাহরণ, এশিয়া মহাদেশের কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল ভাগের সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নীচু);

৫) কখনও কখনও সমভূমি সামান্য কিছুটা ঢেউখেলানো হয় (উদাহরণ, বর্ধ্মান জেলার সমভূমি কিছুটা ঢেউ খেলানো) ।



প্রশ্ন-৩. উদাহরণ সহ বিভিন্ন প্রকার সমভূমির বর্ণনা দাও।

উত্তর: সমুদ্রপৃষ্ঠের একই তলে বা সামান্য উঁচুতে ৩০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত বিস্তীর্ণ সমতল স্থলভাগকে সমভূমি [Plains] বলে । পৃথিবীর বেশিরভাগ সমভূমি সমুদ্র উপকূল এবং নদী অববাহিকায় গড়ে উঠেছে ।

♦ উৎপত্তি ও ভূমিরূপ গঠনের বৈচিত্র অনুসারে পৃথিবীর সমভূমিগুলিকে প্রধান তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

ক) সঞ্চয়জাত সমভূমি, খ) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং গ) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।

ক) সঞ্চয়জাত সমভূমি: যুগ যুগ ধরে পলি সঞ্চিত হওয়ার ফলে নদী, সমুদ্র বা হ্রদ ভরাট হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে সঞ্চয়জাত সমভূমি বলা হয় । উৎপত্তি অনুসারে সঞ্চয়জাত সমভূমিকে আট ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-

১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain]:- অনেকদিন ধরে নদীর দুপাশে বা নদী মোহনায় নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে এই ধরনের সমতল ভূভাগের সৃষ্টি হয় । উদাহরণ, উত্তর ভারতের সিন্ধু, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র সমভূমি এই রকমের সমভূমির উদাহরণ।

২) প্লাবনসমভূমি এবং স্বাভাবিক বাঁধ [Flood Plain]:- নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছা কাছি চলে এলে নদীর ভূমির ঢাল হ্রাস পায় এবং নদী বাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদীগর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে যার ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ কমে যায় । বর্ষাকালে হঠাৎ নদীতে জল বেড়ে গেলে এই অগভীর নদী উপত্যকা অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না, এর ফলে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । বন্যার জল দুকূল প্লাবিত করে এবং প্লাবিত অঞ্চলে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে এক নতুন ভূমিরূপ বা প্লাবন সম ভূমির [Flood Plain] সৃষ্টি হয় । নদীর দুই তীরে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি ক্রমাগত জমা হলে নদী তীর ধীরে ধীরে বাঁধের মতো উঁচু হয়ে যায় এই বাঁধ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়, তাই একে স্বাভাবিক বাঁধ বলে । পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গার গতিপথের দুপাশে প্লাবনভূমি ও স্বাভাবিক বাঁধ দেখা যায় । কলকাতা শহর গঙ্গার স্বাভাবিক বাঁধের উপর অবস্থিত।

৩) ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] : নদীর মোহনায় নদীবাহিত পলি জমে (নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি) অনেকটা মাত্রাহীন ‘ব’ মতো যে সমতল ভূভাগ সৃষ্টি হয় তাকে ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] বলে।

উদাহরণ: গঙ্গা নদীর ব-দ্বীপটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি ।

৪) উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] : উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলিদ্বারা ভরাট হয়ে যে সমতল ভূমি সৃষ্টি হয় তাকে উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] বলে । দিঘার নিকটবর্তী জুনপুটে পলি জমে এরকম সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।

৫) হ্রদ সমভূমি: নদীবাহিত বালি, নুড়ি, কাঁকর, পলি প্রভৃতি দ্বারা কোনো হ্রদ ভরাট হলে কালক্রমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে হ্রদ সমভূমি বলে। কাশ্মীর উপত্যকা ও উত্তরবঙ্গের তাল সমভূমি অঞ্চল হ্রদ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ।

৬) লাভা সমভূমি [Lava Plain] : আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে পৃথিবীর ভিতরকার গলিত লাভা ভূগর্ভের ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে অনেক সময় যে সমতল ভূমির সৃষ্টি করে, তাকে লাভা সমভূমি [Lava Plain] বলে। দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম দিকের কিছু অংশে লাভা সমভূমি [Lava Plain] দেখা যায়।

৭) হিমবাহ সমভূমি: যেসব সমভূমি হিমবাহের প্রবল চাপ, ঘর্ষণ প্রভৃতি কারণের ফলে সৃষ্টি হয়, তাদের হিমবাহ সমভূমি বলে । ভারতের কাশ্মীর ও কুমায়ুন অঞ্চলে এই ধরনের সমভূমি দেখা যায়।

৮) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain]: মরুভূমির সূক্ষ্ম বালিরাশি কখনও কখনও বহুদূরে উঁড়ে গিয়ে সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি সৃষ্টি করে তাকে লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] বলে। উদাহরণ, চিনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকায় এই ধরনের সমভূমি দেখা যায় ।



খ) ক্ষয়জাত সমভূমি: নীচু মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে ক্ষয়জাত সমভূমি বলে।

ক্ষয়জাত সমভূমিকে প্রধানত দু ভাগে ভাগ করা যায়, যথা— ১) সমপ্রায় ভূমি এবং ২) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট।

১) সমপ্রায় ভূমি: নদীর জলপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাচীন মালভূমি এবং উচ্চভূমি বহুদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচু-নীচু ঢেউখেলানো ভূমি বা প্রায়-সমতলভূমিতে পরিণত হয়, এদের সমপ্রায় ভূমি বলে। উদাহরণ, ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছোটনাগপুর মালভূমির কোনো কোনো অংশ সমপ্রায় ভূমি এবং এদের মধ্যে পরেশনাথ ও পাঞ্চেত পাহাড় দুটি হল মোনাডনক।

২) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট: ক্রমাগত জল এবং বায়ুর ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে মরুভূমি অঞ্চলে পর্বতের ঢাল ও পাদদেশভাগ যখন পাথরে ঢাকা ঢালু সমতল ভূমিতে পরিণত হয় তখন তাকে পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট বলে। উদাহরণ- আফ্রিকা মহাদেশের সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায়।



গ) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি: ভূমিকম্পের ফলে এই ধরনের সমভূমির সৃষ্টি হয়।

১) উন্নত সমভূমি- ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি করে , যেমন- ভারতের করমন্ডল উপকূল)।

২) অবনত ভূমি- ভূমিকম্পের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো উঁচু স্থান বসে গিয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি করে । তুরানের নিম্ন সমভূমি অবনত সমভূমির উদাহরণ।



প্রশ্ন-৪. উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে তিন রকমের সঞ্চয়জাত সমভূমির বর্ণনা দাও ।

উত্তর: উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে, সঞ্চয়জাত সমভূমিগুলিকে প্রধান তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain], ২) ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] এবং ৩) উপকূলিয় সমভূমি [Coastal Plain] ।

১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] এবং প্লাবন ভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি (Alluvial Flood Plain): নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছাকাছি চলে এলে নদীপথের ঢাল হ্রাস পায় এবং নদীবাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদী গর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে, এর ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ কমে যায় । বর্ষাকালে হঠাৎ জল বেড়ে গেলে এই অগভীর নদী অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না এবং এর ফলে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । নদীতে বন্যা দেখা দিলে বন্যার জলে দু’কূল প্লাবিত হয় এবং প্লাবিত অঞ্চলে পলি, বালি ও কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে এক নতুন ভূমিরূপ বা প্লাবনভূমির সৃষ্টি হয় তাকে পলিগঠিত সমভূমি বলা হয়। নদীতীরের দুপাশে বন্যার জলে সঞ্চিত পলির দ্বারা গড়ে ওঠা সমতলভূমিকে প্লাবনভূমি বলে।

২) বদ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] : নদী যেখানে সমুদ্রে এসে পড়ে তাকে নদীর মোহনা বলে । এই মোহানাতে নদীর জলের সঙ্গে বাহিত পলি জমে ( নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি) যে নতুন ভূভাগের সৃষ্টি হয় তাকে দ্বীপ বলে । দ্বীপের চারিদিকেই জল থাকে । এই দ্বীপকে দেখতে যখন অনেকটা বাংলা ‘ব’বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টা -র মতো হয়, তখন তাকে বদ্বীপ বা ডেল্টা (Delta) বলে । বদ্বীপ সৃষ্টির পর নদীর জল বদ্বীপে বাধাপ্রাপ্ত হলে নদী বহু সাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং বদ্বীপগুলির চার ধারে আরও বেশি মাত্রায় পলি জমতে থাকে, যার ফলে বদ্বীপগুলো ক্রমশ আয়তনে বড় হয়ে মূল ভূভাগের সঙ্গে মিশে যায় । এইভাবে যে সমভূমি সৃষ্টি হয় তাকে ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] বলে।

উদাহরণ: গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার মধ্যবর্তী সমভূমিটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সমভূমি । আফ্রিকার নীলনদের বদ্বীপ সমভূমিটি উর্বরতা ও কৃষি উৎপাদনের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত ।

৩) উপকূলীয় সমভূমি (Coastal Plain) : নানাভাবে উপকূল সমভূমি সৃষ্টি হয়, যেমন-

১) সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে আসা পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি পদার্থ উপকূলের অগভীর সমুদ্রে ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে উপকূলে সমভূমির সৃষ্টি করে; আবার

২) সমুদ্রের ঢেউ এবং জোয়ার-ভাটার প্রভাবে উপকূলের ভূমির ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে সমভূমির সৃষ্টি করে । এছাড়া

৩) উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলি দ্বারা ভরাট হয়ে বা ভূমিকম্পের ঊর্ধ্বচাপের প্রভাবে উঁচু হয়েও উপকূলীয় সমভূমি সৃষ্টি হতে পারে।

উদাহরণ: ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের কোনও কোনও অংশে উপকূলীয় সমভূমি দেখা যায়। দিঘার নিকটবর্তী জুনপুটে পলি জমে এরকম সমভূমি সৃষ্টি হচ্ছে ।



প্রশ্ন-৫ . উৎপত্তি ও গঠন অনুযায়ী উদাহরণ সহ সমভূমির [Plains] শ্রেণিবিভাগ করো।

উত্তর: উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে সমস্ত সমভূমিকে [Plains] প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

১) সঞ্চয়জাত সমভূমি,

২) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং

৩) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।

ক) সঞ্চয়জাত সমভূমির শ্রেণিবিভাগ:- সঞ্চয়জাত সমভূমিকে প্রধানত ৮ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—

১) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] (যেমন- গাঙ্গেয় সমভূমি পলিগঠিত সমভূমির উদাহরণ );

২) প্লাবন সমভূমি বা বন্যাগঠিত সমভূমি [Flood Plain] (যেমন, ব্রহ্মপুত্র সমভূমি প্লাবন সমভূমির উদাহরণ );

৩) বদ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] (গাঙ্গেয় মোহনায় অবস্থিত ব-দ্বীপটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ সমভূমি);

৪) উপকূল সমভূমি [Coastal Plain] ( দিঘার জুনপুটে গঠিত সমভূমি উপকূল সমভূমির উদাহরণ );

৫) হ্রদ সমভূমি (উত্তর ও দক্ষিন দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল হ্রদ সমভূমির উদাহরণ );

৬) লাভা সমভূমি [Lava Plain] (দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর দিকের কিছু অংশ লাভা সমভূমির উদাহরণ );

৭) হিমবাহ সমভূমি (উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চলের সমভূমি হিমবাহ সমভূমির উদাহরণ ) এবং

৮) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] এর রং হলদে (চিনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকার সমভূমি লোয়েস সমভূমির উদাহরণ) ।



প্রশ্ন-৬. আউট-ওয়াস সমভূমি [Out-Wash-Plain] কাকে বলে উদাহরণ সহ লেখ।

উত্তর:- আউট-ওয়াস সমভূমি [Out-Wash-Plain] :- পর্বতের হিমবাহ উত্তাপে গলতে শুরু করলে, হিমবাহ বাহিত পাথর, কাঁকর, নুড়ি, বালি প্রভৃতি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সঞ্চিত হয়ে যে বিশাল সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে আউট ওয়াস সমভূমি [Out-Wash-Plain] বলে।



প্রশ্ন-৭. প্লায়া হ্রদ কাকে বলে উদাহরণ সহ লেখ।

উত্তর:- প্লায়া হ্রদ: প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির বালি অপসারিত হয়ে ছোটো বড়ো অনেক গর্তের সৃষ্টি হলে সেই গর্তগুলি যদি খুব গভীর হয়ে ভূগর্ভের জলস্তরকে স্পর্শ করে, তাহলে ভুগর্ভস্থ জল ও বৃষ্টির জল জমা হয়ে সেখানে প্লায়া হ্রদের সৃষ্টি হয় । মরুভূমির প্রখর তাপে অত্যাধিক বাষ্পীভবনের জন্য সাধারনত এইসব হ্রদের জল লবনাক্ত হয়ে থাকে। রাজস্থানের সম্বর হ্রদ হল প্লায়া হ্রদের একটি ভারতীয় উদাহরণ । এই অঞ্চলের প্লায়া হ্রদগুলি ধান্দ নামে পরিচিত ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ:পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum