Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


তৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter

more_horiz
তৃতীয় অধ্যায়ঃ নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ

[You must be registered and logged in to see this link.]

►নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ:-



►নদীর কাজ [Work of River]:-

♦ নদী:

♦ নদীর কাজ করার পদ্ধতি:  

♦(ক) ক্ষয়সাধন:

♦ (খ) বহন:

♦ (গ) অবক্ষেপণ:



►কাজ অনুসারে নদীপ্রবাহের বিভাগ:

♦ (ক) পার্বত্য গতি: পার্বত্য গতিতে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয় সাধন:

♦ (খ) মধ্যগতি: মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ বহন:  

♦ (গ) নিম্নগতি: নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ অবক্ষেপণ:



►নদীর পার্বত্য গতি : নদীর ক্ষয়সাধন ও বাহনের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:

♦ আড়াআড়ি পাড় [Interlocking Spur]:  

♦ V -অক্ষরের উপত্যকা ও গিরিখাত [V-Shaped Valley & Gorge]:

♦ জলপ্রপাত [Waterfalls]:    

♦ ক্যানিয়ন [Canyon]



►নদীর মধ্যগতি : নদীর বহন ও অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্ট ভুমিরূপ :

♦ নদীর বাঁক [Meander]:

♦ অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ [Ox-bow Lake বা Horse-bow]:



► নদীর নিম্নগতি : নদীর অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্ট ভুমিরূপ :

♦ প্লাবন ভূমি [Flood Plain]

♦ ব-দ্বীপ [Delta]:



►হিমবাহের কাজ [Work of Glaciers]

♦ হিমরেখা [Snow Line]:

♦ হিমবাহ [Glacier]:

♦ হিমবাহের শ্রেণিবিভাগ:

♦ (ক) উপত্যকা হিমবাহ [Valley Glacier] বা পার্বত্য হিমবাহ [Mountain Glacier] :

♦ (খ) মহাদেশীয় হিমবাহ [Continental Glacier]

♦ (গ) পাদদেশীয় হিমবাহ [Piedmont Glacier]



►হিমবাহের কাজ [Work of Glaciers]:

► হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:

♦ বার্গস্রুন্ড ও ক্রেভাসেস [Bergschurnd and Crevasses]:

♦ সার্ক, এরিটি ও পিরামিড চূড়া [Cirque, Arete & Pyramidal Peak] :

♦ U- আকৃতির উপত্যকা [U -Shaped Valley]:

♦ রসে মাতনে [Roche Moutonne]:

♦ ঝুলন্ত উপত্যকা [Hanging Valley]:

♦ ক্র্যাগ ও টেল [Crag & Tail]:

♦ গ্রাবরেখা [Moraine]:



►হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:

♦ অবক্ষেপ ও ইরাটিক্স [Drift & Erratics]:

♦ বোল্ডার ক্লে [Boulder Clay]:

♦ ড্রামলিন [Drumlin]:

♦ এসকার [Esker] :

♦ কেম [kame] :

♦ আউট-ওয়াস-প্লেন [Out-Wash-Plain]:



► হিমশৈল:



►বায়ুর কাজ [Work of Wind]

♦ বায়ুপ্রবাহের কাজের ক্ষেত্র :

♦ বায়ুপ্রবাহের কাজ করার পদ্ধতি:

♦ (ক) অপসারণ [Deflation]:

♦ (খ) অবঘর্ষণ [Abrasion]:

♦ (গ) ঘর্ষণ [Attrition]



► বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:-

♦ গৌর [Gour]:

♦ জুগেন [Zeugen]:

♦ ইয়ারদাঙ [Yardang]:

♦ ব্লো-আউট [Blow-Out]:

♦ ইনসেলবার্জ [Inselberg]:



► বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:-

♦ বালিয়াড়ি [Sandune]:

♦ তির্যক বালিয়াড়ি [Tranverse Dune]:

♦ অণুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি [Longitudinal Dune]:

♦ বার্খান[Barkhan]:

♦ সীফ বালিয়াড়ি [Self Dune]:

♦ লোয়েস[Loess]:



► অন্যান্য বৈশিষ্ট্য:


### তোমার সাহায্যে আমরা পাশে আছি, তুমি এগিয়ে যাও।
# প্রিয় ছাত্র - ছাত্রী যদি কোথাও কোনো ভুল থেকে থাকে তবে মনে রাখবে সেটা অনিচ্ছাকৃত। নিচে কমেন্ট করো। ঠিক করে দেওয়া হবে।

CLASS TEN GEOGRAPHY MCQ wbbse
#Madhyamik #2020 #Geography #Suggestions
CLASS TEN GEOGRAPHY MCQ class x

Madhyamik pariksha 2020

Last edited by Admin on Sat Sep 12, 2020 11:04 am; edited 1 time in total

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyনদীর কাজ ও নদীপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ

more_horiz
নদীর কাজ ও নদীপ্রবাহের শ্রেণিবিভাগ

[You must be registered and logged in to see this link.]

►নদীর কাজ [Work of River]:-

♦ নদী [River] : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল বা মালভূমি থেকে বৃষ্টির জল, হিমবাহ গলা জল অথবা হ্রদ বা ঝর্ণার জল যখন ভূমির ঢাল অনুসরণ করে বিভিন্ন গতিতে প্রবাহিত হয়ে স্বাভাবিক জলধারা সৃষ্টি করে ও কোনো সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা অন্য কোনো জলাশয়ে গিয়ে পতিত হয়, তখন তাকে নদী [River] বলে ।

উদাহরণ:- গঙ্গা, সিন্ধু প্রভৃতি ।



♦ নদীর কাজ করার পদ্ধতি: উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ গতিপথে নদী প্রধানত তিন ভাবে কাজ করে থাকে, যথা- (ক) ক্ষয়সাধন, (খ) বহন, (গ) অবক্ষেপণ ।

♦ (ক) ক্ষয়সাধন: ভূমি ক্ষয় করা নদীপ্রবাহের প্রধান কাজ । নদীর এই কাজকে ক্ষয়সাধন বলা হয়েছে । পার্বত্য গতিপথে ভূমি বেশি ঢালু হওয়ার জন্য সেখানে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয়্সাধান ।

♦ (খ) বহন: ক্ষয়কার্যের ফলে যে সব শিলাচূর্ণ, বালি, কাঁকর, কাদা, নুড়ি, পলিমাটি প্রভৃতি সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে বহন করার কাজকে নদীর বহন বা পরিবহন [Transportation] বলে । নদীর পার্বত্যপ্রবাহে ও মধ্য গতিপথে শিলাচূর্ণ, বালি, কাঁকর, কাদা, নুড়ি, পলিমাটি প্রভৃতি বহন করা নদীর একটি প্রধান কাজ ।

♦ (গ) অবক্ষেপণ: অবক্ষেপন মানে জমা করা । নদী বাহিত শিলাচূর্ণ, বালি, কাঁকর, কাদা, নুড়ি, পলিমাটি প্রভৃতি নদীর দুই কূলে ও মোহনায় জমা করার কাজকে অবক্ষেপন [Deposition] বলে । নদীর বহন ক্ষমতা যখন কমে যায়, তখন নদীর অবক্ষেপনের কাজ শুরু হয় ।



►কাজ অনুসারে নদীপ্রবাহের বিভাগ: কাজ অনুসারে উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত একটি আদর্শ নদীর গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (ক) পার্বত্যগতি, (খ) মধ্যগতি ও (গ) নিম্নগতি ।

♦ (ক) পার্বত্যগতি: পার্বত্য গতিতে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয় সাধন, এবং ক্ষয় সাধনের সঙ্গে সঙ্গে নদী বহনের কাজ ও করে থাকে ।

♦ (খ) মধ্যগতি: মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ বহন । এই পর্যায়ে নদী অবক্ষেপন ও করে, আবার কূল ভাঙ্গে ও গড়ে ।

♦ (গ) নিম্নগতি: নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ অবক্ষেপণ । এখানে নদী প্রধানত নদী বাহিত শিলাচূর্ণ, বালি, কাঁকর, কাদা, নুড়ি, পলিমাটি প্রভৃতি জমা করে এবং সমভূমি ও ব-দ্বীপ ভূমি গড়ে তোলে ।



► আদর্শ নদী :- কাজ অনুসারে উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত একটি নদীর গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (ক) পার্বত্যগতি, (খ) মধ্যগতি (গ) নিম্নগতি ।

(ক) পার্বত্যগতি: পার্বত্য গতিতে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয় সাধন, এবং ক্ষয় সাধনের সঙ্গে সঙ্গে নদী বহনের কাজ ও করে থাকে ।

(খ) মধ্যগতি: মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ বহন । এই পর্যায়ে নদী অবক্ষেপন ও করে, আবার কূল ভাঙ্গে ও গড়ে ।

(গ) নিম্নগতি: নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ অবক্ষেপণ । এখানে নদী প্রধানত নদী বাহিত শিলাচূর্ণ, বালি, কাঁকর, কাদা, নুড়ি, পলিমাটি প্রভৃতি জমা করে এবং সমভূমি ও ব-দ্বীপ ভূমি গড়ে তোলে ।

উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত অংশে যে নদীর গতিপ্রবাহে এই তিনটি অবস্থা, যথা:- উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন গতিপ্রবাহ ও বিভিন্ন গতিপ্রবাহে নদীর কাজ সুস্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হয়, তাকে প্রাকৃতিক দিক থেকে ‘আদর্শ নদী’ বলা হয় ।



► গঙ্গা নদীকে আদর্শ নদী বলা হয়:- কাজ অনুসারে উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত একটি নদীর গতিপথকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- (ক) পার্বত্যগতি, (খ) মধ্যগতি (গ) নিম্নগতি ।

(ক) পার্বত্যগতি: পার্বত্য গতিতে নদীর প্রধান কাজ ক্ষয় সাধন, এবং ক্ষয় সাধনের সঙ্গে সঙ্গে নদী বহনের কাজ ও করে থাকে ।

(খ) মধ্যগতি: মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ বহন । এই পর্যায়ে নদী অবক্ষেপন ও করে, আবার কূল ভাঙ্গে ও গড়ে ।

(গ) নিম্নগতি: নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ অবক্ষেপণ । এখানে নদী প্রধানত নদী বাহিত শিলাচূর্ণ, বালি, কাঁকর, কাদা, নুড়ি, পলিমাটি প্রভৃতি জমা করে এবং সমভূমি ও ব-দ্বীপ ভূমি গড়ে তোলে ।

উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত অংশে যে নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থা, যথা:- উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন গতিপ্রবাহ ও বিভিন্ন গতিপ্রবাহে নদীর কাজ সুস্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হয়, তাকে প্রাকৃতিক দিক থেকে ‘আদর্শ নদী’ বলা হয় । উত্তরে হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিনে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে । এই দীর্ঘ গতিপথে নদীর গতিপ্রবাহের তিনটি অবস্থাই (উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন ) সুস্পষ্ট ভাবে বিদ্যমান, তাই গঙ্গানদীকে ‘আদর্শ নদী’ বলা হয় । গোমুখ থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত ২৩০ কিমি পার্বত্য পথে গঙ্গার গতিকে উচ্চগতি বলে । হরিদ্বার থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত অংশকে গঙ্গার গতিপ্রবাহকে গঙ্গার মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ বলে । আর মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের পর থেকে গঙ্গাসাগরের মোহনা পর্যন্ত অংশকে গঙ্গার গতিপ্রবাহকে নিম্ন বা বদ্বীপ প্রবাহ বলে ।



►শাখা নদী:- নদীর মূল জলপ্রবাহ থেকে যেসব জলধারা শাখার আকারে বেরিয়ে অন্যত্র পতিত হয়, তাকে শাখানদী বলে ।

উদাহরণ:- গঙ্গার প্রধান শাখা হল পদ্মা ।



► উপনদী:- প্রধান নদির গতিপথে অনেকস্থানে ছোট ছোটো নদী এসে মূল নদীতে মিলিত হয়, এইসব ছোটো নদীকে প্রধান নদীর উপনদী বলা হয় ।

উদাহরণ:- যমুনা গঙ্গার একটি উপনদী ।



► নদী অববাহিকা:- যে অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রধান নদী এবং তার শাখানদী ও উপনদী প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলকে মূল নদীর অববাহিকা বলা হয় ।

উদাহরণ:- উত্তরাখন্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি হল গঙ্গার অববাহিকা ।



► নদী উপত্যকা :- নদীর উৎপত্তি স্থল থেকে নদীর মোহনা পর্যন্ত যে খাতের মধ্যদিয়ে নদীর জলধারা প্রবাহিত হয়, সেই খাতকে নদী উপত্যকা বলে ।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyনদীর পার্বত্যগতি ও সৃষ্ট ভূমিরূপ

more_horiz
নদীর পার্বত্যগতি ও সৃষ্ট ভূমিরূপ
[You must be registered and logged in to see this link.]


►নদীর পার্বত্য গতি : নদীর ক্ষয়সাধন ও বহনের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:

পার্বত্যঅঞ্চলে নদীর প্রাথমিক গতি । এখানে নদীর স্রোত খুব প্রবল ও গভীরতা খুব বেশি । নদী এখানে খুব বেশি চওড়া হয় না । পর্বতের গা দিয়ে আঁকা বাঁকা পথে নদী এখানে বইতে থাকে এবং নানা রকমের ভূমিরূপ গঠন করে থাকে ।



♦ আড়াআড়ি পাড় বা অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ [Interlocking Spur]: পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, আড়াআড়ি পাড় বা অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ [Interlocking Spur] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ বা নদীর প্রবাহ পথে, নদীর ঘর্ষণের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত ও খাঁজ-কাটা শৈলশিরাগুলিকে অভিক্ষিপ্তাংশ বলে। পার্বত্য অঞ্চলে কোনও নদীর গতিপথে অনেক সময় পাহাড়গুলির অভিক্ষিপ্তাংশ এমন ভাবে বিন্যস্ত থাকে যে, নদীর প্রবাহপথের একটি অংশ আর একটি অংশ থেকে আড়াল হয়ে যায় এবং নদীটি সামান্য একটু বাঁক নিয়ে এঁকে বেঁকে প্রবাহিত হতে বাধ্য হয় । এই অবস্থায় দূর থেকে দেখলে নদীটির গতিপথ আড়াল হয়ে এবং মনে হয় শৈলশিরাগুলি যেন আবদ্ধ অবস্থায় আছে, একে তখন আড়াআড়ি পাড় বা অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ [Interlocking Spur] বলে।



♦ কর্তিত স্পার [Truncated Spur]: পার্বত্য উপত্যকা দিয়ে যখন হিমবাহ অগ্রসর হয়, সে সময় এই হিমবাহের গতিপথে যেসব স্পার [Spur] বা পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশ হিমবাহের গতিপথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে, হিমবাহ সেগুলিকে কেটে বা ক্ষয় করে সোজা পথে অগ্রসর হয় এবং খাড়া ঢালের সৃষ্টি করে । এর ফলে পর্বতশিরার অবতল ও উত্তল ঢালটি হঠাৎ খাড়াভাবে হিমবাহ উপত্যকায় নেমে আসে । এইভাবে হিমবাহ দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত এবং ত্রিভূজের মতো দেখতে শৈলশিরাগুলোকে কর্তিত স্পার [Truncated Spur] বা পল কাটা স্পার বলে । যে কোনো নদীর পার্বত্য গতিপথে এই ধরনের বাধা থাকলে নদীটি এঁকে বাঁক প্রবাহিত হয়, যার ফলে আড়াআড়ি পাড় বা অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরার অভিক্ষিপ্তাংশ [Interlocking Spur] -এর সৃষ্টি হয় । হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীর গতিপথে কর্তিত শৈলশিরা [Truncated Spur] দেখা যায় ।



♦ V -অক্ষরের উপত্যকা ও গিরিখাত [V-Shaped Valley & Gorge]: পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, V -অক্ষরের উপত্যকা ও গিরিখাত [V-Shaped Valley & Gorge] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চলে স্রোতের বেগ প্রচন্ড হওয়ায় নদী বড় বড় শিলাখন্ড, নুড়ি, পাথর প্রভৃতি বহন করে নামতে থাকে । শিলাখন্ডের আঘাতে নদীগর্ভ ক্ষয় হয় । পার্বত্যপথে নদীর ইংরেজি I অথবা সরু V আকৃতির নদী-উপত্যকা যখন খুব গভীর হয়, তখন তাকে গিরিখাত [Gorge] বলে । গিরিখাত যতটা গভীর ততটা চওড়া নয় । কখনো কখনো এই সমস্ত গিরিখাতের তলদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পর্বতের চূড়ার মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য প্রায় কয়েক হাজার মিটার হয়।

উদাহরণ- শতদ্রু, সিন্ধু, তিস্তা প্রভৃতি নদীর হিমালয়ের পার্বত্য গতিপথে গভীর নদী উপত্যকা বা গিরিখাত দেখতে পাওয়া যায় । সিন্ধুনদের অরুণ গিরিখাত বিখ্যাত । দক্ষিণ পেরুর কল্কা নদীর গিরিখাতটি হল বিশ্বের গভীরতম গিরিখাত যার গভীরতা সর্বাধিক ৪,৩৭৫ মিটার ।



♦ জলপ্রপাত [Waterfalls] ও প্রপাত কূপ [Plunge-pool] : পার্বত্য প্রবাহে নদীর গতিপথে আড়াআড়ি ভাবে কোনো কঠিন শিলা থাকলে, সেই কঠিন শিলা পাশের কোমল শিলা থেকে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষয় পায় এবং কালক্রমে উঁচু হয়ে থাকে । নদীস্রোত সেই খাড়া ঢাল থেকে বিপুল বেগে নীচের কোমল শিলায় পড়ে জলপ্রপাতের [Walerfalls] সৃষ্টি করে । নদীর গতিপথের যে অংশে জলপ্রপাতের জলধারা সজোরে এসে পড়ে সেখানে এই জলধারা সজোরে এসে পড়ার ফলে মন্থকূপের সৃষ্টি হয় যাকে প্রপাতকূপ [Plunge-pool] বলে । জলপ্রপাতের উপস্থিতির ফলে নীচের কোমল শিলাস্তরের ভিতরের অংশের দ্রুত ক্ষয় হওয়ায় এই ধরনের জলপ্রপাত ধীরে ধীরে পিছনের দিকে সরে আসতে থাকে, একে জলপ্রপাতের পশ্চাদপসরণ বলে । দক্ষিণ-আমেরিকার ভেনিজুয়ালার অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাতটি হল পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত ।



♦ ক্যানিয়ন [Canyon] : পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ক্যানিয়ন [Canyon] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বৃষ্টিহীন মরুপ্রায় শুষ্ক অঞ্চলে ইংরেজী ‘I’ অক্ষরের মতো গিরিখাতকে ক্যানিয়ন [Canyon] বলা হয় । দীর্ঘপথ ধরে বৃষ্টিহীন পার্বত্য মরূ অঞ্চল দিয়ে কোনো নদী প্রবাহিত হলে নদীর জলের স্বল্পতার জন্য নদীখাতে শুধু মাত্র নিম্নক্ষয় হয় । শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম, ফলে দুই পাড় ভেঙ্গে জল নদীতে নেমে আসে না । তাই নদীর পার্শ্বক্ষয় বিশেষ হয় না । শুধুমাত্র নিম্নক্ষয়ের জন্য ‘I’ আকৃতির সুগভীর খাত বা ক্যানিয়ন [canyon] -এর সৃষ্টি হয় ।

উদাহরণ: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় কলোরাডো নদী পৃথিবী বিখ্যাত গ্রান্ড ক্যানিয়ন সৃষ্টি করেছে যার দৈর্ঘ হল ৪৪৬ কিলোমিটার এবং কোথাও কোথাও এর গভীরতা ১.৬ কিলোমিটারেরও বেশি ।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter EmptyRe: তৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter

more_horiz
নদীর মধ্যগতি ও সৃষ্ট ভুমিরূপ
[You must be registered and logged in to see this link.]


►নদীর মধ্যগতি : নদীর বহন ও অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্ট ভুমিরূপ :



নদীর মধ্যগতি ও মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ :-

উত্তর: পার্বত্য অঞ্চল ছাড়িয়ে কোনো নদী যখন সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন ওই নদীর গতিপ্রবাহকে মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ বলে । মধ্যগতিতে নদী ক্ষয়, সঞ্চয় ও বহন এই তিন ধরনের কাজই করে থাকে । নদীর মধ্যগতিতে উচ্চগতির তুলনায় নদীর গতিপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত কম থাকায় ক্ষয়কাজের পরিমাণ অনেক কমে যায় । আবার নদীর মধ্যগতিতে নিম্নগতির তুলনায় নদীর গতিপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকায় সঞ্চয় কাজও কম হয় । কাজেই মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজই হল বহন করা । মধ্যগতিতে স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় পার্বত্যঅঞ্চল থেকে বয়ে নিয়ে আসা নুড়ি, বালি, কাঁকর, কাদামাটি, শিলাচূর্ণ, পলিমাটি প্রভৃতি নদী আর বহন করতে পড়ে না । তখন সেগুলি নদী তার দুই তীরে সঞ্চিত করে এবং নানা রকম ভূমিরূপ গঠন করে । হরিদ্বার থেকে ধুলিয়ান পর্যন্ত অংশে গঙ্গার গতিপ্রবাহ হল গঙ্গার মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ ।



♦ নদীর বাঁক [Meander]: নদীর মধ্যগতিতে সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, নদীর বাঁক [Meander] হল তাদের মধ্যে অন্যতম । মধ্যগতিতে এবং বিশেষ করে নিম্নগতিতে নদীর স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় নদী কোনো রকম বাধা অতিক্রম করার শক্তি হারিয়ে ফেলে । নদী তার গতিপথে বাধা পেলে সেই বাধা এড়িয়ে আঁকা বাঁকা পথে নদী প্রবাহিত হতে থাকে । এই সময় নদীপ্রবাহের বাঁকা অংশকে নদীর বাঁক [Meander] বলা হয় । বারাণসীর কাছে গঙ্গানদীর সুন্দর নদীর বাঁক [Meander] দেখা যায় ।



♦ অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ [Ox-bow Lake বা Horse-bow Lake]: নদীর মধ্যগতিতে নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ [Ox-bow Lake বা Horse-bow Lake] হল তাদের মধ্যে অন্যতম । বাঁক ঘোরার সময় নদী তীরের যে জায়গা ঠিক স্রোতের মুখে পড়ে, সেই জায়গায় স্রোতের আঘাত সবচেয়ে বেশি লাগে । ফলে ওই জায়গায় নদী তীর ভাঙ্গতে থাকে এবং অপর দিকে নদী তীরে স্রোতের আঘাত বিশেষ না লাগায় নদী বাহিত বালি, পলি, কাদা, কাঁকর, শিলাচূর্ণ, নুড়ি প্রভৃতি জমে চড়ার সৃষ্টি হয় । এই প্রক্রিয়া ক্রমাগত চলার ফলে নদীর বাঁক বাড়তে থাকে ও দুই বাঁকের মধ্যবর্তী স্থান ক্রমাগত ক্ষয় পেতে থাকে ও সংকীর্ণ হতে থাকে । শেষ পর্যন্ত দুই বাঁক পরস্পরের সঙ্গে মিলে যায় এবং নদীর পুরনো খাতের মুখ বন্ধ হয়ে বাওড় বা হ্রদের সৃষ্টি হয় । এই রকম হ্রদ ঘোড়ার খুরের মত দেখতে হয়, তখন তাকে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ [Horse-bow বা Ox-bow Lake] বলা হয় । নদীর দুই বাঁকের মধ্যবর্তী পরস্পরের সঙ্গে মিলে জুড়ে গেলে নদী আবার সোজা পথে অগ্রসর হয় ।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyনদীর নিম্নগতি ও সৃষ্ট ভুমিরূপ

more_horiz
নদীর নিম্নগতি ও সৃষ্ট ভুমিরূপ
[You must be registered and logged in to see this link.]


► নদীর নিম্নগতি : নদীর অবক্ষেপণের ফলে সৃষ্ট ভুমিরূপ : নদী মধ্যপ্রবাহ থেকে মোহনার দিকে যতই অগ্রসর হতে থাকে, ততই নদীর স্রোতের বেগ কমতে থাকে । স্রোতের বেগ কমে যাওয়ায় শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাদা, পলি, বালি, প্রভৃতি নদী গর্ভে ও নদীর দুই তীরে জমা হতে থাকে । ফলে নানা রকম ভূমিরূপ গড়ে ওঠে ।



♦ প্লাবন ভূমি [Flood Plain] নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, প্লাবন ভূমি [Flood Plain] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ ।

১) নদীর মধ্য ও নিম্ন গতিতে সমভূমি অঞ্চলে নদীর ঢাল ক্রমশ কমতে থাকায় নদীর সঞ্চয় কাজ ক্রমেই বাড়তে থাকে । নদী বাহিত নুড়ি, কাদা, পলি প্রভৃতি জমে নদীগর্ভ ভরাট ও অগভীর হয়ে যায় ।

২) বর্ষাকালে নদীর প্রবাহপথের এই অংশে নদীর জল হঠাৎ বেড়ে গেলে নদী উপত্যকায় প্লাবন বা বন্যা হয় ।

৩) প্লাবনের পর নদীর জল নেমে গেলেও নদীর উঁচু পাড় স্বাভাভিক বাঁধের মতো অবস্থান করায় নীচু সমতলভূমির জল বেরোতে পারে না, ফলে তারা প্লাবিত হয়েই থাকে ।

৪) নদীর প্লাবনের জলে থাকা পলি নদী উপত্যকার নিম্ন অংশে থিতিয়ে পড়ে ও সঞ্চিত হয় । প্রায় প্রতি বছর এই অঞ্চলে নতুন পলি সঞ্চয় ঘটে ।

৫) এইভাবে নদী উপত্যকার নিম্ন অংশে পলি সঞ্চয়ের ফলে যে ভুমিরুপের সৃষ্টি হয় তাকে প্লাবনভূমি বলে ।

৬) নদীবাহিত পলি অনেকদিন ধরে নদীর দু’পাশে সঞ্চিত হলে পলিগঠিত যে সমতল ভূ-ভাগের সৃষ্টি হয় তাকে পলি সমভূমি বলে।

উদাহরণ: উত্তর প্রদেশের হরিদ্বার থেকে বিহারের রাজমহল পর্যন্ত নানান স্থানে গঙ্গার গতিপথের দু'পাশে প্লাবনভূমি ও স্বাবাভিক বাঁধ দেখা যায় । মিশরের নীল নদের গতিপথে প্রথমে প্রথমে স্বাভাবিক বাঁধ এবং পরে বিস্তৃত প্লাবনভূমি দেখা যায় ।



♦ ব-দ্বীপ [Delta]: নদীর সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ব-দ্বীপ [Delta] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । নদী যেখানে সমুদ্রে এসে পড়ে তাকে নদীর মোহনা বলে । ব-দ্বীপ হল নদীর মোহনায় মাত্রাহীন বাংলা ব -অক্ষরের এর মত ত্রিকোণাকার এক রকম দ্বীপ [∆] । মোহনার কাছে নিম্ন গতিতে নদীর গতিপথের ঢাল একেবারে কমে যাওয়ায় নদীতে জলপ্রবাহের গতিবেগ খুব একটা থাকে না । মোহনার কাছে সাগরের জলে স্রোত কম থাকলে নদীগর্ভ, হ্রদ বা সাগরসঙ্গম নদীবাহিত পলি ( নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি) জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় নতুন ত্রিকোণাকার ভূভাগ বা দ্বীপের সৃষ্টি হয় । দ্বীপের চারদিকে থাকে জল। নদী তখন সেই দ্বীপের দু-দিক দিয়ে বয়ে চলে । দ্বীপকে দেখতে গ্রিক অক্ষর ডেল্টা [∆] -এর মতো হলেও বাংলা অক্ষর মাত্রাহীন ব-এর সঙ্গে তার কিছুটা সাদৃশ্য থাকায় তাকে ব-দ্বীপ [Delta] বলা হয় । পৃথিবীর বেশিরভাগ ব-দ্বীপই গ্রিক অক্ষর ডেল্টার মতো দেখতে হলেও, কোনো কনো ব-দ্বীপ বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে, যেমন, ভারতে কৃষ্ণা নদীর বদ্বীপ অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরী-মিসিসিপি নদীর বদ্বীপ অনেকটা পাখির পায়ার মতো দেখতে ।

সাধারণত তিন ধরনের বদ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়, যেমন:-

১) ত্রিকোণ আকৃতির ব-দ্বীপ (যেমন:- গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ);

২) হ্রদ ব-দ্বীপ (হ্রদের ওপর গড়ে ওঠা বদ্বীপ:- কাস্পিয়ান সাগরে এই ধরনের বদ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়);

৩) সমুদ্র ব-দ্বীপ (সমুদ্রের ওপর যে বদ্বীপ সৃষ্টি হয়, যেমন, সুন্দরবন বদ্বীপ )।



ব-দ্বীপ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ:- নদীতে ব-দ্বীপ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশগুলি হল-

১) মোহনার কাছে নদীর স্রোতের বেগ কম হওয়া দরকার ।

২) নদী তার মোহনার যে অংশে সাগর, উপসাগর, হ্রদে এসে মেশে সেখানকার গভীরতা হওয়া দরকার ।

৩) নদীর জলে অবক্ষেপনযোগ্য বা সঞ্চয়যোগ্য পলির পরিমাণ বেশি হতে হবে ।

৪) নদীবাহিত পলি দ্রুত অধঃক্ষিপ্ত হওয়ার জন্য নদীর মোহনামুখে সমুদ্র জলের লবণত্ব বেশি হওয়ার প্রয়োজন ।

৫) নদী মোহনায় সঞ্চয়ের হার সমুদ্রস্রোতের অপসারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হওয়ার জন্য নদীর মোহনামুখে জোয়ার-ভাটার আধিক্য কম হওয়া প্রয়োজন ।

৫) নদী মোহনায় প্রচুর পলি সরবরাহের জন্য নদী অববাহিকার আয়তন বেশি হওয়া দরকার । এছাড়া উন্মুক্ত সমুদ্রের তুলনায় স্থলবেষ্টিত সমুদ্রে নদী পতিত হলে ব-দ্বীপ গঠনের পক্ষে সহায়ক হয় ।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyহিমবাহের কাজ ও শ্রেণিবিভাগ

more_horiz
হিমবাহের কাজ ও শ্রেণিবিভাগ
[You must be registered and logged in to see this link.]


►হিমবাহের কাজ [Work of Glaciers] পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চলে ও উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে অত্যধিক ঠান্ডা । এইসব অঞ্চলে তুষারক্ষেত্র ও হিমবাহ দেখা যায় । অত্যধিক শীতের জন্য পর্বতের উঁচু চুড়ায় ও মেরু অঞ্চলের বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প সারা বছর তুষারে জমে থাকে । পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের প্রধান কাজ ভূমি ক্ষয় করা [ক্ষয়্সাধান] এবং ক্ষয়ীভূত শিলাচূর্ণ বহন করা [বহন] । পার্বত্য অঞ্চল থেকে নামার পরে হিমবাহের প্রধান কাজ বাহিত শিলা চূর্ণ ও নুড়ি-পাথর জমা করা অর্থাৎ অবক্ষেপন বা সঞ্চয় ।



♦ হিমরেখা [Snow Line]: মেরুপ্রদেশ ও উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের তীব্র শৈত্যে, যে সীমারেখার উপরে অত্যধিক শীতলতার জন্য সারা বছর তুষার জমে থাকে এবং নীচে উত্তাপে তুষার গলে যায় তাকে সেই সীমারেখাকে হিমরেখা [Snow Line] । হিমরেখার ওপরে থাকে চির তুষারক্ষেত্র । হিমরেখার ঊর্ধ্বে বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে সর্বদা তুষারপাত হয় । ক্রমাগত সঞ্চয় এবং পারস্পারিক চাপের ফলে প্রাথমিক আলগা তুষার কণাগুলি কালক্রমে দৃঢ়সংবদ্ধ হয়ে বরফে পরিণত হয় । পৃথিবীর সর্বত্র হিমরেখা একই উচ্চতায় অবস্থান করে না । অক্ষাংশ, উচ্চতা ও জলীয়বাষ্পের পরিমানের উপর হিমারেখার সীমা নির্ভর করে । মেরুপ্রদেশে হিমরেখা সমুদ্র সমতলে, নিরক্ষীয় অঞ্চলে হিমারেখা ৫৫০০ মিটার উচ্চতায়, পূর্ব হিমালয়ে হিমরেখা ৩৯৬০ মিটার, পশ্চিম হিমালয়ে ৩৮০০ মিটার, মধ্য আল্পস পর্বতে হিমরেখা ২৭০০ মিটার এবং আন্দিজ ও কিলিমাঞ্জারো পর্বতে হিমরেখা ৫৪৩০ মিটার উচ্চতায় অবস্থান করে । এইসব অঞ্চলে হিমরেখার ঊর্ধ্বে সারা বছরই তুষার জমে থাকে ।



♦ হিমবাহ [Glacier]: হিমারেখার উপরে তুষারক্ষেত্র । সেখানে যে তুষারপাত হয় তা প্রথম অবস্থায় আলগা আলগা হয়ে পড়ে থাকে । ফরাসি ভাষায় একে নেভে [Neve] বলে । এই তুষারকণা ক্রমশ পরস্পরের সঙ্গে মিশে বরফের স্থরে [Ice Sheet] এ পরিণত হয় । ক্রমশ আরও জামাট বেঁধে ও আয়তনে বড় হয়ে বরফের স্তুপের আকার ধারণ করে । তারপর উপরের চাপ ও বরফের নিজস্ব উষ্ণতায় নীচের কিছু বরফ গলে গেলে সেই বরফের স্তুপ পর্বতের ঢালে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করে । এই চলমান বরফের স্তুপকে হিমবাহ [Glacier] বলা হয় । প্রকৃতপক্ষে হিমবাহ এক বরফের নদী । নদীর মত হিমবাহ দুরন্ত গতিশীল নয় । দিনে হিমবাহের গতি কয়েক সেন্টিমিটার মাত্র ।

উদাহরণ: যমুনা নদী যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হয়েছে ।



♦ হিমানী-সম্প্রপাত: পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পার্বত্য অঞ্চলে হিমরেখার উপরে অর্থাৎ তুষারক্ষেত্রের জমাট বাঁধা বরফ অত্যন্ত ধীরগতিতে পর্বতের ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসতে থাকে । কখনো কখনো পাহাড়ের ঢালে চলমান এইরকম হিমবাহ থেকে বিশাল বরফের স্তূপ ভেঙে প্রচন্ড বেগে নীচের দিকে পড়তে দেখা যায়, একে হিমানী সম্প্রপাত বলে। বিশাল আকৃতির হিমানী সম্প্রপাতের ফলে নিকটবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় ও এই হিমানী-সম্প্রপাতের গতি পথে অবস্থিত বাড়িঘর, গাছপালা প্রভৃতি ধ্বংস হয়ে যায়।



♦ হিমবাহের শ্রেণিবিভাগ: হিমবাহ প্রধানত তিন প্রকার, যথা- (ক) উপত্যকা হিমবাহ [Valley Glacier] বা পার্বত্য হিমবাহ [Mountain Glacier] (খ) মহাদেশীয় হিমবাহ [Continental Glacier] (গ) পাদদেশীয় হিমবাহ [Piedmont Glacier]



♦ (ক) উপত্যকা হিমবাহ [Valley Glacier] বা পার্বত্য হিমবাহ [Mountain Glacier] : উচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কিংবা অতি উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে প্রচন্ড ঠান্ডার জন্য তুষার জমে সৃষ্টি যেসব হিমবাহ পর্বতের উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং যেসব হিমবাহ তাদের গতি প্রবাহকে পার্বত্য উপত্যকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে, সেইসব হিমবাহকে পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ [Mountain Glacier বা Valley Glacier] বলে ।

উদাহরণ:- ১) হিমালয়ের উত্তরে কারাকোরামের সিয়াচেন হিমবাহ (দৈর্ঘ ৭২ কিমি); বিয়াফো (৬৩ কিমি ) ও বলটারো (৫৮ কিমি), হিসপার (৫০ কিমি.) ও বাতুরা (৬০ কিমি); ২) কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ (দৈর্ঘ ৩৯ কিমি এই হিমবাহ থেকে গঙ্গানদীর উৎপত্তি হয়েছে), কেদারনাথ (১৪ কিমি.) কাঞ্চন জঙ্ঘার জেমু হিমবাহ (দৈর্ঘ ২৬ কিমি এর থেকে তিস্তা নদীর উৎপত্তি হয়েছে) প্রভৃতি হিমালয়ের উপত্যকা হিমবাহ গুলি দৈর্ঘ্যে পৃথিবীর অন্যতম ।



♦ (খ) মহাদেশীয় হিমবাহ [Continental Glacier] : মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যে হিমবাহ অবস্থান করে তাকে মহাদেশীয় হিমবাহ [Continental Glacier] বলে । সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চল জুড়ে যে বিরাট বরফের স্তর দেখা যায় তাকেই আসলে মহাদেশীয় হিমবাহ বলে । তুষারযুগে মহাদেশগুলির অনেক অঞ্চল বরফের স্তর দ্বারা আবৃত ছিল। ধীরে ধীরে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে মহাদেশীয় হিমবাহের [Continental Glacier] বিস্তার হ্রাসপ্রাপ্ত হয়ে দুটি মেরু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়েছে ।

উদাহরণ: অ্যান্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট হিমবাহটি পৃথিবীর দীর্ঘতম মহাদেশীয় হিমবাহ । গ্রিনল্যান্ডেও এই রকম হিমবাহ দেখা যায় ।



♦ (গ) পাদদেশীয় হিমবাহ [Piedmont Glacier] : হিমবাহ যখন উঁচু পর্বতের থেকে নেমে এসে পর্বতের পাদদেশে বিরাট অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে, তখন তাকে পাদদেশীয় হিমবাহ [Piedmont Glacier] বলে । উচ্চ অক্ষাংশে অবস্থিত পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে উষ্ণতা কম থাকায় সহজেই পাদদেশীয় হিমবাহ সৃষ্টি হয় ।

উদাহরণ: আলাস্কার মালাসপিনা হিমবাহটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, এটি প্রায় ৪,০০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyহিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

more_horiz
হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ


► হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:

[You must be registered and logged in to see this link.]


♦ বার্গস্রুন্ড [Bergschurnd]: হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বার্গস্রুন্ড [Bergschurnd] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহ যখন উঁচু পার্বত্য উপত্যকা বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসতে থাকে, তখন অনেক সময় অসমতল পর্বতের খাঁজকাটা গা এবং হিমবাহের মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি হয়, এই সমস্ত ফাটলগুলিকে বার্গস্রুন্ড [Bergschurnd] বলে । বার্গস্রুন্ড কেবলমাত্র গ্রীষ্মকালেই পরিলক্ষিত হয় । বছরের অন্য সময় এইসব ফাটলগুলো পাতলা তুষার দ্বারা ঢেকে যায়, তখন এদের উপস্থিতি ওপর থেকে বোঝা যায় না । এই জন্য কখনো কখনো বার্গস্রুন্ডগুলি পর্বতারোহিদের কাছে চরম বিপদসংকুল হয়ে ওঠে ।



♦ ক্রেভাসেস [Crevasses] : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ক্রেভাসেস [Crevasses] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহ যখন উঁচু পার্বত্য উপত্যকা বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসতে থাকে, তখন অনেক সময় অসমতল পর্বতের খাঁজকাটা গা এবং হিমবাহের মধ্যে ফাটলের সৃষ্টি হয় । হিমবাহের গায়ে পর পর কয়েকটি ফাটল ধরলে তাকে ক্রেভাসেস [Crevasses] বলে । হিমবাহ যদি আগাগোড়া সমান ঢাল বিশিষ্ট অঞ্চল এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তবে ক্রেভাসেস -এর সৃষ্টি হয় না । কিন্তু যখন হিমবাহ উপত্যকার ঢাল বেড়ে যায় হিমবাহের বিভিন্ন অংশের মধ্যে গতির পার্থক্য ঘটায় । ফলে হিমবাহের পৃষ্ঠে টান পড়ে, তখনই ক্রেভাসেসের [Crevasses] সৃষ্টি হয় ।



♦ সার্ক [Cirque] বা করি [Corrie] : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, সার্ক [Cirque] বা করি [Corrie] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের অত্যাধিক চাপ ও ঘর্ষনের ফলে উপত্যকার উপরের অংশ খুব খাড়াই হয় এবং মধ্য অংশে অনেকটা গর্তের মতো অবনত জায়গার সৃষ্টি হয় । হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে পুরো উপত্যকাটির আকৃতি অনেকটা হাতল ছাড়া ডেক চেয়ারের মতো দেখতে হয় । এই রকম আকৃতিবিশিষ্ট উপত্যকাকে ফরাসি ভাষায় সার্ক [Cirque] এবং ইংরেজিতে কুম [Cumbe, Cwm] বা করি [Corrie] বলে । উপত্যকা হিমবাহের উৎসক্ষেত্রে ক্ষয়কাজের ফলে সার্কের সৃষ্টি হয় । পার্বত্য উপত্যকাটি যতদিন পর্যন্ত হিমবাহে চাপা থাকে ততদিন সার্ক দেখা যায় না, হিমবাহ সরে গিয়ে উপত্যকাটি বরফযুক্ত হলে তবেই সার্ক দেখা যায় ।



♦ এরিটি [Arete] : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, এরিটি [Arete] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের অত্যাধিক চাপ ও ঘর্ষনের ফলে উপত্যকার উপরের অংশ খুব খাড়াই হয় এবং মধ্য অংশে অনেকটা গর্তের মতো অবনত জায়গার সৃষ্টি হয় । হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে পুরো উপত্যকাটির আকৃতি অনেকটা হাতল ছাড়া ডেক চেয়ারের মতো দেখতে হয় । এই রকম আকৃতিবিশিষ্ট উপত্যকাকে ফরাসি ভাষায় সার্ক [Cirque] এবং ইংরেজিতে কুম [Cumbe, Cwm] বা করি [Corrie] বলে । উপত্যকা হিমবাহের উৎসক্ষেত্রে ক্ষয়কাজের ফলে সার্কের সৃষ্টি হয় । পাশাপাশি দুটি সার্কের মধ্যবর্তী খাড়াই অংশকে অ্যারেৎ বা এরিটি [Arete] বলে । এরিটি [Arete] এর শীর্ষদেশে অনেকটা করাতের মতো খাঁজ কাটা থাকে ।



♦ পিরামিড চূড়া [Pyramidal Peak] : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, পিরামিড চূড়া [Pyramidal Peak] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের অত্যাধিক চাপ ও ঘর্ষনের ফলে উপত্যকার উপরের অংশ খুব খাড়াই হয় এবং মধ্য অংশে অনেকটা গর্তের মতো অবনত জায়গার সৃষ্টি হয় । হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে পুরো উপত্যকাটির আকৃতি অনেকটা হাতল ছাড়া ডেক চেয়ারের মতো দেখতে হয় । এই রকম আকৃতিবিশিষ্ট উপত্যকাকে ফরাসি ভাষায় সার্ক [Cirque] এবং ইংরেজিতে কুম [Cumbe, Cwm] বা করি [Corrie] বলে । উপত্যকা হিমবাহের উৎসক্ষেত্রে ক্ষয়কাজের ফলে সার্কের সৃষ্টি হয় । যখন একটি পাহাড়ের বিভিন্ন দিক থেকে তিন-চারটি সার্ক পাশাপাশি এক সঙ্গে বিরাজ করে, তখন এদের মধ্যবর্তী খাড়া পর্বত চূড়াটিকে পিরামিডের মতো দেখায় । পিরামিডের মতো আকৃতিবিশিষ্ট এই ধরনের পর্বত চূড়াকে পিরামিড চূড়া [Pyramidal Peak] বলে ।

উদাহরণ: আল্পস পর্বতের ম্যাটারহর্ন এবং গঙ্গোত্রীর কাছে অবস্থিত হিমালয় পর্বতের নীলকন্ঠ ও শিবলিঙ্গ শৃঙ্গ দুটি পিরামিড চুড়ার [Pyramidal Peak] উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ।



♦ U- আকৃতির উপত্যকা [U -Shaped Valley]: হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, U- আকৃতির উপত্যকা [U -Shaped Valley] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় যেখানে হিমবাহের ক্রমাগত পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় সমানভাবে হওয়ার ফলে পার্বত্য উপত্যকাটির আকৃতি ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়ে যায়, একে ‘U’ আকৃতির উপত্যকা [U -Shaped Valley] বা হিমদ্রোণী [Glacial trough] বলে । হিমবাহ কোনো নদী উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে হিমবাহ ও নদীর একই সঙ্গে ক্ষয়কাজের ফলে বেশিরভাগ হিমদ্রোণী গড়ে ওঠে বলে বিজ্ঞানীরা অভিমত পোষণ করেন । অনেক সময় হিমদ্রোণীর মধ্য হিমবাহ গলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয় ।



♦ রসে মাতনে [Roche Moutonne]: হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, রসে মাতনে [Roche Moutonne] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অনেক সময় উপত্যকার মধ্যে উঁচু ঢিবির মতো কঠিন শিলাখন্ডের ওপর দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয় । হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে হিমবাহের প্রবাহের দিকে শিলাখন্ডটি মসৃণ এবং তার বিপরীত দিকে অসমতল বা এবড়োখেবড়ো হয়ে যায় । পার্বত্য হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে শক্ত শিলাখন্ডে গঠিত একদিকে মসৃণ এবং আর এক দিকে এবড়োখেবড়ো এইরকম শিলাখন্ড বা ঢিবিকে রসে মোতনে [Roche Moutonne] বলা হয়। রসে মোতানে হল পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কাজের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।



♦ ঝুলন্ত উপত্যকা [Hanging Valley]: উপত্যকা হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ঝুলন্ত উপত্যকা [Hanging Valley] হল তাদের মধ্যে অন্যতম । প্রধান নদীর সঙ্গে যেমন ছোটো ছোটো উপনদী এসে মেশে, সেই রকম প্রধান হিমবাহের সঙ্গে ছোটো ছোটো হিমবাহও মেশে । প্রধান হিমবাহের উপত্যকা খুব বড় ও গভীর হয় । তাই ছোটো হিমবাহের উপত্যকা প্রধান হিমবাহের উপত্যকার উপর ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে । তখন একে ঝুলন্ত উপত্যকা [Hanging Valley] বলা হয়। হিমবাহ সরে গিয়ে নদীর সৃষ্টি হলে ঝুলন্ত উপত্যকার মুখে প্রায়ই জলপ্রপাত গঠিত হয় ।

উদাহরণ:- ভারতের গাড়োয়াল হিমালয়ের বদ্রীনাথের কাছে নরপর্বত থেকে নীচের দিকে কুবের নামে এইরকম ঝুলন্ত উপত্যকা হিমবাহ দেখা যায় ।



♦ ক্র্যাগ ও টেল [Crag & Tail]: হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ক্র্যাগ ও টেল [Crag & Tail] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের গতিপথে কঠিন শিলাস্তরের পিছনে নরম শিলাস্তর থাকলে, অনেক সময় কঠিন শিলাস্তরটি পশ্চাদবর্তী নরম শিলাস্তরটিকে হিমবাহের ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে । এর ফলে কঠিন শিলাস্তুপটি উঁচু ঢিপির মত আর পেছনের নরম শিলা সরু লেজের মত বিরাজ করে । এই রকম কঠিন শিলাকে ক্রাগ [Crag] এবং পিছনের ঢালযুক্ত নরম শিলাকে টেল [Tail] বলে । টেল অংশটি যতই ক্রাগ থেকে দূরে যায়, ততই সরু হয়ে পড়ে ।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyহিমবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

more_horiz
[You must be registered and logged in to see this link.]



►হিমবাহের সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:



♦ গ্রাবরেখা [Moraine]: হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এইসব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণে কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেহে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । এই সব সঞ্চিত শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা [Moraine] বলে ।



♦ গ্রাবরেখার শ্রেণিবিভাগ: গ্রাবরেখার অবস্থান অনুযায়ী গ্রাবরেখা নানান ধরনের হয়, যেমন:-

১) পার্শ্ব-গ্রাবরেখা [Lateral Moraine] : হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের দু’পাশে স্তূপাকারে প্রাচীরের মতো সঞ্চিত হলে তাকে পার্শ্ব-গ্রাবরেখা [Lateral Moraine] বলে।

২) প্রান্ত-গ্রাবরেখা [Terminal Moraine]: হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে । এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সামনে স্তূপাকারে সঞ্চিত হলে তাকে প্রান্ত-গ্রাবরেখা [Terminal Moraine] বলে ।

৩) মধ্য-গ্রাবরেখা [Medival Moraine] : হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের দু’পাশে স্তূপাকারে প্রাচীরের মতো সঞ্চিত হলে তাকে পার্শ্ব-গ্রাবরেখা বলে। যখন দুটি হিমবাহ, দুদিক থেকে এসে একসঙ্গে মিলিত হলে উভয়ের পরস্পর সন্নিহিত পার্শ্ব-গ্রাবরেখা দুইটি মিশে গেলে তাকে মধ্য-গ্রাবরেখা [Medival Moraine] বলে ।

৪) তলদেশ-গ্রাবরেখা [Ground Moraine] : হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের তলায় স্তূপাকারে সঞ্চিত হলে তাকে ভূমি-গ্রাবরেখা বা তলদেশ-গ্রাবরেখা [Ground Moraine] বলে ।

৫) আবদ্ধ গ্রাবরেখা: হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা [Moraine] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখন্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এই সব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখন্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু’পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয় । সঞ্চিত এইসব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে । শিলাখন্ড বা শিলাচূর্ণ, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের মধ্যে আটকে পড়ে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে আবদ্ধ-গ্রাবরেখার সৃষ্টি করে ।

উদাহরণ: তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচুং ও লাচেন অঞ্চলে নানা ধরনের গ্রাবরেখা দেখা যায়।



♦ অবক্ষেপ [Drift]: পর্বতের নিম্নাংশ ও নিম্নভূমিতে হিমবাহ প্রধানত অবক্ষেপণ করে থাকে । নদী যেমন তার বাহিত বস্তুগুলিকে যথা- নুড়ি, পাথর, কাদা, বালি, কাঁকর প্রভৃতি আকৃতি অনুসারে বিভিন্ন অংশে সঞ্চিয় করে, হিমবাহ তা করে না । হিমবাহ উপর থেকে বিভিন্ন আকৃতির শিলাচূর্ণ একই সঙ্গে নিয়ে এসে এক জায়গায় জমা করে, এগুলিকে একত্রে অবক্ষেপ [Drift] বলে ।



♦ আগামুক বা ইরাটিক [Erratics] : হিমবাহ উপর থেকে বিভিন্ন আকৃতির শিলাচূর্ণ একই সঙ্গে নিয়ে এসে এক জায়গায় জমা করে, এগুলিকে একত্রে অবক্ষেপ [Drift] বলে । হিমবাহ অবক্ষেপিত বৃহৎ শিলাখন্ডগুলির সঙ্গে আঞ্চলিক শিলাসমূহের আকৃতিগত ও প্রকৃতিগত কোনো সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় না, তাই ওই হিমবাহ অবক্ষেপিত বৃহৎ শিলাখন্ডগুলিকে আগামুক [Erratics] বলে। কাশ্মীরের পহেলগামের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরনের আগামুক [Erratics] দেখা যায় ।



♦ বোল্ডার ক্লে [Boulder Clay]: হিমবাহ গলে গেলে তার নীচে হিমবাহের সঙ্গে বয়ে আনা বালি ও কাদার সঙ্গে বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি-পাথর অবক্ষেপ হিসাবে সঞ্চিত হলে তাদের একসঙ্গে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ [Boulder Clay] বলা হয়।



♦ ড্রামলিন [Drumlin]: হিমবাহের সঞ্চয় কাজের ফলে যেসব ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ড্রামলিন [Drumlin] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপের নিদর্শন । হিমবাহ গলে গেলে তার নীচে হিমবাহের সঙ্গে বয়ে আনা বালি ও কাদার সঙ্গে বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি-পাথর অবক্ষেপ হিসাবে সঞ্চিত হলে তাদের একসঙ্গে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ [Boulder Clay] বলা হয়। স্তুপিকৃত বোল্ডার ক্লে অনেক সময়ে সারিবদ্ধ টিলা বা ছোটো ছোটো স্তুপের আকারে বিরাজ করে । ভূ-পৃষ্ঠের উপর এদের দেখতে অনেকটা উলটানো নৌকা বা চামচের মতো আকৃতির হয় । এই চামচের মতো আকৃতির ভূমিরূপকে ড্রামলিন [Drumlin] বলা হয়।

একটি আদর্শ ড্রামলিন ১-২ কি.মি. দীর্ঘ ৪০০-৬০০ মিটার প্রশস্ত এবং ১৫-৩০ মিটার উঁচু হয় । ড্রামলিনের ক্ষেত্রে হিমবাহ প্রবাহের দিকে অমসৃণ এবং বিপরীত দিকটি মসৃণ হয়ে থাকে । হিমবাহ যেদিকে প্রবাহিত হয় ড্রামলিনগুলি সেদিকে সমান্তরাল ভাবে অথবা লম্বালম্বিভাবে বা কোণাকুণিভাবে অবস্থান করে । এছাড়া ড্রামলিনের ঢাল হিমবাহের উজানের দিকে খাড়া এবং ভাটির দিকে মৃদু হয় ।

একক ড্রামলিন সাধরণত দেখা যায় না, সাধারণত ঝাঁকে ঝাঁকে ড্রামলিন দেখা যায় । বহু ড্রামলিন একসঙ্গে অবস্থান করলে তাদের মধ্যবর্তী অবনত অঞ্চলগুলোতে জল জমে জলাভূমি সৃষ্টি হয় । অনেক উঁচুজায়গা থেকে দেখলে ড্রামলিনগুলিকে ‘ডিম ভর্তি ঝুড়ির’মতো মনে হয় । ড্রামলিন অধ্যুষিত অঞ্চলকে তাই ঝুড়ি ভর্তি ডিমের মতো ভূ-পকৃতি বলে ।

উদাহরণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চল, উত্তর ইংল্যান্ড, উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি স্থানে বহু ড্রামলিন দেখা যায়।



♦ এসকার [Esker] : হিমবাহের সঞ্চয় কাজের ফলে যেসব ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, এসকার [Esker] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপের নিদর্শন । উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে হিমবাহের বহন করে আনা বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি, পাথর, কাদা, বালি, কাঁকর প্রভৃতি জমা হয়ে এক একটি দীর্ঘ, আঁকাবাঁকা, নাতিউচ্চ ও সংকীর্ণ বাঁধের মতো শৈলশিরা বা উচ্চভূমি গঠন করে । এই ধরনের শৈলশিরা উচ্চ ভূমিকে এস্‌কার [Esker] বলে ।



♦ কেম [kame] : হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, কেম [Kame] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অনেক সময় পার্বত্য হিমবাহের শেষপ্রান্তে হিমবাহ যেখানে গলতে শুরু করে সেখানে কাদা, বালি, নুড়ি, পাথর, কাঁকর ইত্যাদি স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে বদ্বীপের মতো ত্রিকোণাকার যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, তাকে কেম [Kame] বলে । এগুলি উপত্যকার পার্শ্বদেশের সঙ্গে মিশে ধাপ তৈরি করে । কেম হল হিমবাহ ও জলের মিলিত সঞ্চয়জাত ভূমিরূপের একটি প্রকৃষ্ট নিদর্শন।



♦ আউট-ওয়াস-প্লেন [Out-Wash-Plain]: হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বহিঃধৌত সমভূমি বা আউট-ওয়াশ সমভূমি [Out-Wash-Plain] হল তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিরূপ । উচ্চ পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ এসে পৌঁছালে তা গলে নদীর সৃষ্টি হয় এবং সেখানে হিমবাহ-বাহিত পাথরের টুকরো, নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমি গঠন করে তাকে আউট-ওয়াশ প্লেন বা বহিঃধৌত সমভূমি [Out-Wash-Plain] বলে।



► হিমশৈল [Iceberg] : মেরু উপকূলে হিমবাহ সাগর জলে নেমে এলে তরঙ্গের আঘাতে ভেঙ্গে বিশাল বরফের স্তূপ বিচ্ছিন্ন হয়ে সংলগ্ন মহাসাগরে ভেসে বেড়ায় । সমুদ্রে ভাসমান এইসব বিশাল বরফের স্তূপকে হিমশৈল [Iceberg] বলে । হিমশৈল মাত্র ১ / ৯ অংশ সমুদ্রে ভেসে থাকে। এই রকম একটি হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে টাইটানিক জাহাজ তার প্রথম যাত্রাতেই গভীর সমুদ্রে ডুবে যায়।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyবায়ুপ্রবাহের কাজ ও কাজ করার পদ্ধতি

more_horiz
বায়ুপ্রবাহের কাজ ও কাজ করার পদ্ধতি
[You must be registered and logged in to see this link.]


►বায়ুর কাজ [Work of Wind] বায়ুপ্রবাহের প্রধান কাজ ক্ষয়সাধন করা । বায়ু প্রবাহ সহজেই বালুকণাকে উপরে তুলে উড়িয়ে নিয়ে যায় । ভূমি বা মাটির কাছাকাছি বায়ু প্রবাহের গতিবেগ কম হয় । কারণ ভূমির সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে কিছু শক্তি কমে যায় । আবার মাটি থেকে বেশি উপরে বায়ুতে বালুর পরিমাণ কমে যাওয়ার দরুন বায়ু প্রবাহের ক্ষয় করার শক্তি কম হয় । তাই এর মাঝামাঝি জায়গায় অর্থাৎ মাটি থেকে মিটার খানেক উপরে বায়ুপ্রবাহের ক্ষয় করার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি হয় । কারণ এই অংশে একদিকে বায়ুপ্রবাহের গতি বেগ থাকে বেশি, আবার অপরদিকে বায়ুতে বালুকণার পরিমাণ ও থাকে বেশি । সেই জন্য ভূমির কিছু উপরে দন্ডায়মান পাথরের স্তুপ বা শিলাময় ভূমির ক্ষয় বেশি হয় । এর ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ।



♦ বায়ুপ্রবাহের কাজের ক্ষেত্র : মরুভূমি শুকনো বালির দেশ, গাছপালাহীন শূন্য প্রান্তর । সেখানে শিথিল বালুর উপর বায়ুপ্রবাহ সহজেই তার শক্তিকে কাজে লাগায় ও ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় ।


♦ বায়ুপ্রবাহের কাজ করার পদ্ধতি: বায়ুপ্রবাহ প্রধানত তিনভাবে কাজ করে ; যথা- (ক) অপসারণ [Deflation], (খ) অবঘর্ষণ [Abrasion], (গ) ঘর্ষণ [Attrition]

♦ (ক) অপসারণ [Deflation]: শিথিল বালিকে বাতাসের সঙ্গে তুলে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়াকে অপসারণ বলে ।

♦ (খ) অবঘর্ষণ [Abrasion]: বাযুস্থিত বালির আঘাতে শিলাস্থার ক্ষয় করার নাম অবঘর্ষণ [Abrasion] ।
♦ (গ) ঘর্ষণ [Attrition] বায়ুস্থিত শিলাকণার পরস্পর সংঘর্ষের নাম ঘর্ষণ [Attrition] । বায়ু একদিকে শিলাস্থর ক্ষয় করে এবং অন্যদিকে শিলাধূলি ও বালি বহন ও অবক্ষেপন করে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় ।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyবায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

more_horiz
বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
[You must be registered and logged in to see this link.]


► বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:-



♦ গৌর [Gour]: বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গৌর হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বায়ুর গতিপথে কোনও কঠিন ও নরম শিলায় গড়া শিলাস্তূপ অবস্থান করলে এবং ওই শিলাস্তুপের নিচে নরম শিলা ও উপরে কঠিন শিলা থাকলে, নিচের কোমল অংশে বায়ুর ক্ষয়কার্যের তীব্রতা বেশি হয় । এর ফলে শিলাস্তূপটির নীচের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু স্তম্ভের মতো হয় এবং ওপরের কম ক্ষয়প্রাপ্ত কঠিন শিলাস্তরটি বিরাট আয়তন নিয়ে ব্যাঙের ছাতা বা স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকে । স্তম্ভাকৃতি এই রকম শিলাস্তূপ গৌর [Gour] নামে পরিচিত । রাজস্থানের থর মরুভূমিতে গৌর আকৃতির অনেক শিলাস্তূপ দেখা যায় ।



♦ জুগেন [Zeugen]: বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, জুগেন [Zeugen] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । কখনো কখনো দেখা যায় যে, কোনো কোনো শিলাস্তূপের কঠিন ও কোমল শিলাস্তরগুলো ওপর-নিচে পরস্পরের সমান্তরালভাবে অবস্থান করে । প্রচন্ড সূর্যতাপে এইসব উচ্চভূমিতে ফাটল সৃষ্টি হলে ওই সব ফাটলের মধ্য দিয়ে বায়ুপ্রবাহ ক্ষয়কার্য চালাতে থাকে । ফলে কঠিন শিলাস্তরগুলো অতি অল্প ক্ষয় পেয়ে টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে এবং কোমল শিলাস্তরগুলি বেশি ক্ষয় পেয়ে ফাটল বরাবর লম্বা খাত বা গহ্বরের সৃষ্টি করে । এই রকম দুটো খাতের মধ্যে চ্যাপ্টা মাথা টিলার মতো যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তাকে জুগেন [Zeugen] বলে । এর উচ্চতা সাধারণত ৩ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হয় । উত্তর আমেরিকার সোনেরান মরুভূমি অঞ্চলে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায় ।



♦ ইয়ারদাং [Yardang]: বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ইয়ারদাং [Yardang] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বায়ুপ্রবাহের দ্বারা ভূপৃষ্ঠের লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত কঠিন ও কোমল শিলার অসমানভাবে ক্ষয় পায় । এর ফলে বিভিন্ন মূর্তির আকারে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় । এই সব বিভিন্ন মূর্তির আকারে সৃষ্ট ভূমিরূপকে ইয়ারদাং [Yardang] বলা হয় । মরুভূমিতে অনেক সময় পরস্পর স্তরে স্তরে লম্বালম্বিভাবে অবস্থিত কঠিন ও কোমল শিলাস্তরগুলো বায়ুপ্রবাহের দিকে আড়াআড়িভাবে অবস্থান করে । প্রচন্ড সূর্যতাপে এইসব শিলাস্তরে ফাটল ধরলে এইসব ফাটলের মধ্যে বায়ু প্রবেশ করে ক্ষয় করতে শুরু করে । এর ফলে কোমল শিলাস্তর সহজেই ক্ষয় পেলে কেবলমাত্র কঠিন শিলাস্তরগুলি বায়ুপ্রবাহের দিকে নানারকম মূর্তি গঠন করে টিলার মতো বিচ্ছিন্ন ভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ইয়ারদাং গঠন করে । ইয়ারদাং -এর উচ্চতা সাধারণত ৬ মিটার পর্যন্ত হয় । থর মরুভূমি অঞ্চলে বহু ইয়ারদাং ভূমিরূপ দেখা যায়।



♦ ব্লো-আউট [Blow-Out]: অনেক সময় বাতাসের তাড়নায় বালু অন্যত্র চলে গেলে এক অবনত জায়গার সৃষ্টি হয় । একে ব্লো-আউট [Blow-Out] বলে ।

[You must be registered and logged in to see this link.]



♦ ইনসেলবার্জ [Inselberg]: বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ইনসেলবার্জ [Inselberg] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অনেক সময় মরুভূমির জায়গায় জায়গায় কঠিন শিলায় গঠিত অনুচ্চ ক্ষয়ীভূত পাহাড় টিলার আকারে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । যুগ যুগ ধরে ক্ষয় পেয়ে এই সব পর্বতগাত্রের ঢাল খুব বেশি, পর্বতগাত্র মসৃণ এবং দেখতে গোলাকার হয় । গোলাকৃতি এইসব অনুচ্চ টিলাকে ইনসেলবার্জ [Inselberg] বলে ।

উদাহরণ: মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি পাহাড়ে ইনসেলবার্জ ভূমিরূপ দেখা যায়।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter Emptyবায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

more_horiz
বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
[You must be registered and logged in to see this link.]


► বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:-



♦ বালিয়াড়ি [Sandune]: বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বালিয়াড়ি [Sandune] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে শিলাধূলি ও বালির সৃষ্টি হয়, সেগুলি আবার কোথাও কোথাও জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে । বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে কোনো বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপ গঠিত হলে তাকে বালিয়াড়ি [Sandune] বলে । বালিয়াড়ি হল বালির পাহাড় । মরুভূমি ছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায় (যেমন, দিঘা বালিয়াড়ি) । তবে সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়ি সাধারনত আকারে ছোটো হয় । বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াড়ি গতিশীল হয় । বালিয়াড়ি কখনো ভাঙ্গে আবার কখনো গড়ে, আবার আকৃতির পরিবর্তন ঘটায় । রাজস্থানের মরুভূমিতে এরূপ চলন্ত বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলা হয় ।

[You must be registered and logged in to see this link.]


♦ তির্যক বালিয়াড়ি [Tranverse Dune]: বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বালিয়াড়ি [Sandune] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে শিলাধূলি ও বালির সৃষ্টি হয়, সেগুলি আবার কোথাও কোথাও জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে । বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে কোনো বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপ গঠিত হলে তাকে বালিয়াড়ি [Sandune] বলে । বালিয়াড়ি হল বালির পাহাড় । মরুভূমি ছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায় (যেমন, দিঘা বালিয়াড়ি) । তবে সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়ি সাধারনত আকারে ছোটো হয় । বায়ুপ্রবাহের গতিপথে আড়াআড়িভাবে যে সব বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে তাকে তির্যক বালিয়াড়ি [Tranverse Dune] বলে ।



♦ অণুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি [Longitudinal Dune]: বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বালিয়াড়ি [Sandune] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে শিলাধূলি ও বালির সৃষ্টি হয়, সেগুলি আবার কোথাও কোথাও জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে । বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে কোনো বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপ গঠিত হলে তাকে বালিয়াড়ি [Sandune] বলে । বালিয়াড়ি হল বালির পাহাড় । মরুভূমি ছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায় (যেমন, দিঘা বালিয়াড়ি) । তবে সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়ি সাধারনত আকারে ছোটো হয় । বায়ুপ্রবাহের গতিপথের সমান্তরালে যে সব বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে তাদের অনুদীর্ঘ বালিয়াড়ি [Longitudinal Dune] বলে ।


[You must be registered and logged in to see this link.]

♦ বার্খান[Barkhan]: বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বালিয়াড়ি [Sandune] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে শিলাধূলি ও বালির সৃষ্টি হয়, সেগুলি আবার কোথাও কোথাও জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে । বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে কোনো বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপ গঠিত হলে তাকে বালিয়াড়ি [Sandune] বলে । বালিয়াড়ি হল বালির পাহাড় । মরুভূমি ছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায় (যেমন, দিঘা বালিয়াড়ি) । তবে সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়ি সাধারনত আকারে ছোটো হয় । বালিয়াড়ির অন্যতম একটি বিশেষ শ্রেণি হল বার্খান [Barkhan] । ‘বার্খান’ একটি তুর্কি শব্দ, এর অর্থ হল ‘কিরঘিজ স্টেপস্‌’ অঞ্চলের বালিয়াড়ি । উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে বালিয়াড়ি অর্ধ-চন্দ্র আকারে বিরাজ করে । এই রকম বালিয়াড়িকে বার্খান [Barkhan] বলা হয় । বার্খানের সামনের দিকে উত্তল এবং পিছনের দিক অবতল আকৃতির হয়ে থাকে । এছাড়া, বার্খানের দুই প্রান্তে অর্ধচন্দ্রকারে দুটি শিং-এর মতো শিরা অবস্থান করে । এইসব বালিয়াড়ি বায়ুর গতির দিকে ক্রমশ ঢালু ও বিপরীত দিকে ক্রমশ খারাই হয় । যে সব মরু অঞ্চলে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, সেখানে বার্খানের সৃষ্টি হয়ে থাকে । বার্খানগুলির সবচেয়ে বেশি উচ্চতা হয় সাধারণত ১৫ মিটার এবং প্রস্থ ৪০-৭০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে । তবে অনেকক্ষেত্রে এরা ২০-৩০ মিটার উঁচু এবং ১৪০ মিটার বা তার বেশি চওড়া হয় ।



♦ সীফ বালিয়াড়ি [Seif Dune]: বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বালিয়াড়ি [Sandune] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে শিলাধূলি ও বালির সৃষ্টি হয়, সেগুলি আবার কোথাও কোথাও জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে । বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে কোনো বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপ গঠিত হলে তাকে বালিয়াড়ি [Sandune] বলে । বালিয়াড়ি হল বালির পাহাড় । মরুভূমি ছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায় (যেমন, দিঘা বালিয়াড়ি) । তবে সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়ি সাধারনত আকারে ছোটো হয় । এগুলি আরবদের লম্বা সরু তলোয়ারের মতো দেখতে হয় । তাই এই বালিয়াড়ির নাম সিফ । তীবতা ঘূর্ণি বায়ুর আঘাতে পরপর অনেকগুলি বালিয়াড়ি ভেঙ্গে গেলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে বেশ সংকীর্ণ কিন্তু খুব লম্বা বালিয়াড়ি তৈরি হয় । এই রকম দীর্ঘ্ অথচ সংকীর্ণ বালিয়াড়িকে সিফ বালিয়াড়ি [Seif Dune] বলে । স্থায়ী বালিয়াড়ির মধ্যভাগ বায়ুপ্রবাহের ফলে ভেঙে সিফ বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয় । এরকম বালিয়াড়ির দৈর্ঘ কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে এবং উচ্চতা ১০০ মিটারের্ব বেশি হয় । পরস্পর সমান্তরালভাবে একাধিক সিফ বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে।



♦ লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] : বায়ুপ্রবাহের পরিবহন ও সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অতিসূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা বা মৃত্তিকা বায়ুর দ্বারা পরিবাহিত হয়ে মরুভূমি সীমানার অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে জমা হয়ে যে সমভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] । এর রং হলদে । কিন্তু এই মাটি খুবই উর্বর ।

উদাহরণ: মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে শীতকালীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বাহিত হয়ে বিপুল পরিমাণে লোয়েস মৃত্তিকা উত্তর চিনের হোয়াংহো নদীর অববাহিকায় দীর্ঘদিন ধরে সঞ্চিত হয়ে সেখানে এক বিস্তীর্ণ ও উর্বর লোয়েস সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে ।



► প্লায়া হ্রদ [Playa] : প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির বালি অপসারিত হয়ে ছোটো-বড়ো অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়। এই গর্তগুলো কখনো কখনো খুব গভীর হয়ে ভূগর্ভের জলস্তরকে স্পর্শ করে । তারপর যখন ভূগর্ভস্থ জল ও বৃষ্টির জল জমা হয়ে সেখানে হ্রদের সৃষ্ঠি হয় । মরুভূমির প্রখর তাপে অত্যধিক বাষ্পীভবনের জন্য সাধারণত এই সব হ্রদের জল লবণাক্ত হয়ে থাকে । এই ভাবে যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে লবণ হ্রদ বলে । এই সব লবণ হ্রদ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্লায়া হ্রদ [Playa] ও আফ্রিকায় শটস [Shotts] নামে পরিচিত ।

রাজস্থানের সম্বর হ্রদ হল প্লায়া হ্রদের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, এই অঞ্চলে প্লায়া হ্রদগুলি ধান্দ নামে পরিচিত ।
[You must be registered and logged in to see this link.]



► মরু অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টির জলে সৃষ্ট সাময়িক নদী প্রবাহ যেসব নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি জমা করে সমতল জায়গা গঠন করে তা বাজাদা [Bajada] নামে পরিচিত । এখানকার পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলের ক্ষয়প্রাপ্ত প্রায় সমতলভূমিকে পেডিমেন্ট [Piedmont] বলে ।

descriptionতৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter EmptyRe: তৃতীয় অধ্যায়-- নদী, হিমবাহ ও বায়ুর কাজ 3rd chapter

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum