ঐতিহাসিক টেরাকোটা গ্রাম – মালুটি ---- মা মৌলীক্ষা মন্দির – তুম্বানি ফরেস্ট রেঞ্জ – ব্রাহ্মণী নদী
তারা মায়ের দর্শনে তারাপীঠ যাননি এমন লোক বোধ করি খুব কম আছেন। রামপুরহাট হয়ে তারাপীঠ সবাই গিয়ে থাকেন। সাধক বামদেবের স্মৃতি বিজরিত তারাপীঠের কথা আমরা যতটা জানি – বামদেবের প্রথম সাধনা ক্ষেত্র মালুটি ---- মৌলীক্ষা মন্দির সম্বন্ধে ততোটাই কম জানি। বস্তুত মালুটি ---- মৌলীক্ষা মন্দিরের কথা আমার ও আগে জানা ছিল না। রামপুরহাট থেকে 20 km দূরে রামপুরহাট – দুমকা’র রাস্তায় গিয়ে বাংলা – ঝাড়খণ্ড সীমান্তে মালুটি মোড় থেকে বাঁদিকের রাস্তায় 5 – 6 km গেলে পৌঁছে যাবেন – মালুটি গ্রাম। বর্তমানে গ্রামটি ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। লৌকিক কথিত অনুসারে মালুটি’র মৌলীক্ষা মন্দিরে সাধক বামদেব প্রথম পুরোহিত হয়ে আসেন। এখানেতেই প্রথমবার বামদেব সিদ্ধিলাভ করেন - মৌলীক্ষা মন্দির পরিসরে বামদেবের যে সাধনা কক্ষটি রয়েছে – সেখানেতে বামদেবের ত্রিশূল ও বামদেব ব্যবহৃত বৃহৎ শঙ্খটি, আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে। মৌলীক্ষা মায়ের মন্দিরটিকে অনেকে শক্তিপীঠের স্থান দিয়ে থাকেন। এখানকার ইতিহাসকার শ্রী গোপাল দাস মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের ও তেমনি মত। এখানকার মানুষজন মা মৌলীক্ষা’কে বড়মা আর তারাপীঠের তারামা’কে ছোট’মা বলে ডাকেন। মন্দিরটি বেশ জাগ্রত। মন্দিরের শান্ত পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আমরা খুব ভালো ভাবে মায়ের পুজো দিতে পেড়েছিলাম। মন্দির নিয়ে গ্রামটির দূরের বিস্তীর্ণ মাঠ ও টিলার পটভূমি – অসাধারণ। মন্দিরের খুব কাছেই ঝাড়খণ্ড সরকারের যাত্রী নিবাস রয়েছে। মন চাইলে মন্দিরের শান্ত পরিবেশে এক দিন থাকতেই পারেন।
মন্দির দর্শন করে এবার পালা – মালুটি গ্রামটি ঘুরে দেখা। গ্রামটির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় 72 টি ছোট বড় মন্দির রয়েছে। বলা হয়ে থাকে আগে মোট 108 টি ছিল। অনেক গুলি সম্পূর্ণ নস্ত হয়ে গেছে। মন্দির গুলি বাংলার একচালা ও চারচালা শৈলীর এক সুন্দর নিদর্শন। মন্দির গুলি প্রায় সব’কটি পোড়ামাটির তৈরি অর্থাৎ টেরাকোটার। টেরাকোটার বর্গাকার প্যানেল বসিয়ে মন্দিরগুলির গায়ে বসানো হয়েছে। টেরাকোটার পানেল গুলিতে রামায়ণ, মহাভারতের ও শাক্ত পদাবলীর মহিসাসুর ও মা দুর্গার যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলায় টেরাকোটার মন্দির অনেক জায়গায় আছে, তবে শাক্ত পদাবলীভিত্তিক টেরাকোটার কাজ খুব কম মদিরেই পাওয়া গেছে। সে দিক দিয়ে দেখলে মালুটি’র মন্দিররাজি – এক অনন্য উদাহরণ। এছাড়া সাধারণ গ্রাম্য জীবনকে ও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কিছু কিছু মন্দিরের গায়ে। মন্দির গুলি সপ্ত দশ থেকে শুরু করে উনিশ শতকে তৈরি – রাজা বাজ বসন্তের বংশের ভিন্ন ভিন্ন রাজাদের আমলে। কথিত আছে পঞ্চদশ শতকে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ – গরিব ব্রাহ্মণ সন্তান বসন্তকে...সুলতানের বাজপাখি ধরে দেয়ার উপহার স্বরূপ এই গ্রাম ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল – করমুক্ত ভাবে নানকার রাজ হিসাবে দেন। বাজ বসন্তের বংশের অন্য রাজারা বড় প্রাসাদ বা অট্টালিকা না তৈরি করে একের পর এক মন্দির তৈরি করতে থাকেন। মন্দির তৈরির এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মন্দিরের আদল একচালা ও চারচালার থাকলেও বৈশিষ্ট্য ভিত্তিক ছোট ও বড়। অপেক্ষাকৃত নতুন মন্দিরগুলির মধ্যে একটি বিশেষ মন্দিরের শৈলী বেশ চোখে পরে। আদতে এটি তিনটি মন্দিরের সমাবেশ। তিনটি মন্দিরের চূড়ার আদল ভিন্ন ভিন্ন – একটির চূড়া হিন্দু মন্দিরের আদলে তৈরি, আর একটির চূড়া মসজিদের আদলে আর অন্যটির চূড়া গির্জার আদলে তৈরি। মন্দিরের গায়ে বিভিন্ন লিপি ও উৎকীর্ণ করা আছে …।পুরনো বাংলাভাষায়। যা বাংলা, প্রাকৃত ও সংস্কৃতের সংমিশ্রণ।
মন্দির গুলিতে এখন সংস্কারের কাজ চলছে। Global Heritage Fund এর তথ্য অনুসারে মালুটি’র মন্দিররাজি সহ গোটা মালুটি গ্রাম – “The World’s twelve vanishing cultural Heritage Sites”. বর্তমানে Global Heritage Fund ও Indian Trust for Rural and Heritage Development এর উদ্যোগে মালুটি’র মন্দিররাজি সহ গোটা মালুটি গ্রাম; এর সংস্কারের কাজ চলছে। মালুটি নিয়ে লৌকিক কথার শেষ নেই – কেউ কেউ বলে থাকেন যে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের অধিনে ছিল – এই মালুটি। কারণ সেই সময় বর্তমানের বীরভূম সহ ঝাড়খান্ডের ছোট নাগপুর মালভূমি অঞ্চল মল্লভুমি...আর মৌলহাটি থেকে কালক্রমে মালুটি। আর ও একটি কথা প্রচলিত আছে – মালুটি কথা রাজা বাজ বসন্তের ও আগে পাওয়া যায় – বলা হয়ে থাকে সুঙ্গ বংশের রাজত্বকালে ভারতবর্ষের প্রথম ব্রাহ্মন রাজা পুশ্যমিত্র সুঙ্গের সময় কালে সেকালের বিখ্যাত বিদ্যা অধ্যায়নের স্থান হিসাবে মালুটি স্থাপিত হয়। বলা হয়ে থাকে আদি শঙ্করাচায বারানসি গমন পথে এখানে কিছুকাল ছিলেন।অবিভক্ত বাংলা’র সময় বীরভূম ও সম্মিলিত সাঁওতাল পরগনা একসাথে রাঢ় বাংলা বা রাঢ় বঙ্গ ও বলা হত। মালুটি আজও বিচিত্র এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বিদ্যমান – বুকে আগলে রাঢ় বঙ্গের পুরানো ঐতিহ্যকে – অপেক্ষায় রয়েছে নতুন করে চিনে নেবার সংকল্পে। তবে বলে রাখি – আমি মালুটি গিয়েছিলাম ঝাড়খান্ডের পাকুড় থেকে – দূরত্ব প্রায় 80 km. পুরো রাস্তাটাই সাঁওতাল পরগনা’র মধ্যে দিয়ে গিয়েছে – পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খান্ড’কে আলাদা করা এই রাস্তায় বেশ মুশকিল। ছোট নাগপুর মালভূমির বিস্তীর্ণ টিলার প্রান্তর এ এক অনন্য Topography আপনার সামনে তুলে ধরে।
মালুটি দেখে ফেরার পথে আমরা গিয়েছিলাম বীরভূমের তুম্বানি ফরেস্ট রেঞ্জের মধ্য দিয়ে। সঙ্গে ছিল বিস্তীর্ণ শালের জঙ্গল আর সঙ্গে বাংলা – ঝাড়খান্ডের সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রাহ্মণী নদী। মালুটি থেকে রামপুরহাটের রাস্তায় কিছুটা এগিয়ে গিয়ে নারায়ানপুরের মোড় দিয়ে বাঁদিকের রাস্তায় প্রায় 8 km দূরে নারায়ানপুর পেরিয়ে পড়বে ব্রাহ্মণী নদীর ব্রিজ। ব্রিজ পেরিয়ে নদির পাশ বরাবর বালি মাটির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। পথে পরে তুম্বানি ফরেস্ট রেঞ্জের শালের জঙ্গল আর তারপাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রাহ্মণী নদী। নদি আর শাল জঙ্গলের এই জায়গাটাতে সময় যে কেমন করে বেরিয়ে যায় – তা কথায় বলে বোঝানো যাবে না। পিকনিক করার একটি আদর্শ জায়গা এটি। এর পর শাল জঙ্গলকে পিছে রেখে আমরা এগিয়ে চলি বৈধড়ার দিকে। এখানেতে ব্রাহ্মণী নদী উপরে লকগেট আছে...সঙ্গে ছোট্ট একটি পার্ক। এখান থেকে রাস্তা এক দিকে চলে গেছে রাম পুরহাটের দিয়ে আর অন্য দিকে নলহাটি। পাকুড় ফেরার জন্য আমরা নলহাটির রাস্তা ধরলাম। তারাপীঠে পুজো দিয়ে আপনারা ও একবার ঘুরে আসতে পারে্ন মালুটি’তে। দেখে আসতে পারেন প্রাচীন বাংলার প্রায় ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে – একচালা আর চারচালা মন্দিরের ইতিহাস......
তারা মায়ের দর্শনে তারাপীঠ যাননি এমন লোক বোধ করি খুব কম আছেন। রামপুরহাট হয়ে তারাপীঠ সবাই গিয়ে থাকেন। সাধক বামদেবের স্মৃতি বিজরিত তারাপীঠের কথা আমরা যতটা জানি – বামদেবের প্রথম সাধনা ক্ষেত্র মালুটি ---- মৌলীক্ষা মন্দির সম্বন্ধে ততোটাই কম জানি। বস্তুত মালুটি ---- মৌলীক্ষা মন্দিরের কথা আমার ও আগে জানা ছিল না। রামপুরহাট থেকে 20 km দূরে রামপুরহাট – দুমকা’র রাস্তায় গিয়ে বাংলা – ঝাড়খণ্ড সীমান্তে মালুটি মোড় থেকে বাঁদিকের রাস্তায় 5 – 6 km গেলে পৌঁছে যাবেন – মালুটি গ্রাম। বর্তমানে গ্রামটি ঝাড়খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। লৌকিক কথিত অনুসারে মালুটি’র মৌলীক্ষা মন্দিরে সাধক বামদেব প্রথম পুরোহিত হয়ে আসেন। এখানেতেই প্রথমবার বামদেব সিদ্ধিলাভ করেন - মৌলীক্ষা মন্দির পরিসরে বামদেবের যে সাধনা কক্ষটি রয়েছে – সেখানেতে বামদেবের ত্রিশূল ও বামদেব ব্যবহৃত বৃহৎ শঙ্খটি, আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে। মৌলীক্ষা মায়ের মন্দিরটিকে অনেকে শক্তিপীঠের স্থান দিয়ে থাকেন। এখানকার ইতিহাসকার শ্রী গোপাল দাস মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের ও তেমনি মত। এখানকার মানুষজন মা মৌলীক্ষা’কে বড়মা আর তারাপীঠের তারামা’কে ছোট’মা বলে ডাকেন। মন্দিরটি বেশ জাগ্রত। মন্দিরের শান্ত পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আমরা খুব ভালো ভাবে মায়ের পুজো দিতে পেড়েছিলাম। মন্দির নিয়ে গ্রামটির দূরের বিস্তীর্ণ মাঠ ও টিলার পটভূমি – অসাধারণ। মন্দিরের খুব কাছেই ঝাড়খণ্ড সরকারের যাত্রী নিবাস রয়েছে। মন চাইলে মন্দিরের শান্ত পরিবেশে এক দিন থাকতেই পারেন।
মন্দির দর্শন করে এবার পালা – মালুটি গ্রামটি ঘুরে দেখা। গ্রামটির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় 72 টি ছোট বড় মন্দির রয়েছে। বলা হয়ে থাকে আগে মোট 108 টি ছিল। অনেক গুলি সম্পূর্ণ নস্ত হয়ে গেছে। মন্দির গুলি বাংলার একচালা ও চারচালা শৈলীর এক সুন্দর নিদর্শন। মন্দির গুলি প্রায় সব’কটি পোড়ামাটির তৈরি অর্থাৎ টেরাকোটার। টেরাকোটার বর্গাকার প্যানেল বসিয়ে মন্দিরগুলির গায়ে বসানো হয়েছে। টেরাকোটার পানেল গুলিতে রামায়ণ, মহাভারতের ও শাক্ত পদাবলীর মহিসাসুর ও মা দুর্গার যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলায় টেরাকোটার মন্দির অনেক জায়গায় আছে, তবে শাক্ত পদাবলীভিত্তিক টেরাকোটার কাজ খুব কম মদিরেই পাওয়া গেছে। সে দিক দিয়ে দেখলে মালুটি’র মন্দিররাজি – এক অনন্য উদাহরণ। এছাড়া সাধারণ গ্রাম্য জীবনকে ও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কিছু কিছু মন্দিরের গায়ে। মন্দির গুলি সপ্ত দশ থেকে শুরু করে উনিশ শতকে তৈরি – রাজা বাজ বসন্তের বংশের ভিন্ন ভিন্ন রাজাদের আমলে। কথিত আছে পঞ্চদশ শতকে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ – গরিব ব্রাহ্মণ সন্তান বসন্তকে...সুলতানের বাজপাখি ধরে দেয়ার উপহার স্বরূপ এই গ্রাম ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল – করমুক্ত ভাবে নানকার রাজ হিসাবে দেন। বাজ বসন্তের বংশের অন্য রাজারা বড় প্রাসাদ বা অট্টালিকা না তৈরি করে একের পর এক মন্দির তৈরি করতে থাকেন। মন্দির তৈরির এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মন্দিরের আদল একচালা ও চারচালার থাকলেও বৈশিষ্ট্য ভিত্তিক ছোট ও বড়। অপেক্ষাকৃত নতুন মন্দিরগুলির মধ্যে একটি বিশেষ মন্দিরের শৈলী বেশ চোখে পরে। আদতে এটি তিনটি মন্দিরের সমাবেশ। তিনটি মন্দিরের চূড়ার আদল ভিন্ন ভিন্ন – একটির চূড়া হিন্দু মন্দিরের আদলে তৈরি, আর একটির চূড়া মসজিদের আদলে আর অন্যটির চূড়া গির্জার আদলে তৈরি। মন্দিরের গায়ে বিভিন্ন লিপি ও উৎকীর্ণ করা আছে …।পুরনো বাংলাভাষায়। যা বাংলা, প্রাকৃত ও সংস্কৃতের সংমিশ্রণ।
মন্দির গুলিতে এখন সংস্কারের কাজ চলছে। Global Heritage Fund এর তথ্য অনুসারে মালুটি’র মন্দিররাজি সহ গোটা মালুটি গ্রাম – “The World’s twelve vanishing cultural Heritage Sites”. বর্তমানে Global Heritage Fund ও Indian Trust for Rural and Heritage Development এর উদ্যোগে মালুটি’র মন্দিররাজি সহ গোটা মালুটি গ্রাম; এর সংস্কারের কাজ চলছে। মালুটি নিয়ে লৌকিক কথার শেষ নেই – কেউ কেউ বলে থাকেন যে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের অধিনে ছিল – এই মালুটি। কারণ সেই সময় বর্তমানের বীরভূম সহ ঝাড়খান্ডের ছোট নাগপুর মালভূমি অঞ্চল মল্লভুমি...আর মৌলহাটি থেকে কালক্রমে মালুটি। আর ও একটি কথা প্রচলিত আছে – মালুটি কথা রাজা বাজ বসন্তের ও আগে পাওয়া যায় – বলা হয়ে থাকে সুঙ্গ বংশের রাজত্বকালে ভারতবর্ষের প্রথম ব্রাহ্মন রাজা পুশ্যমিত্র সুঙ্গের সময় কালে সেকালের বিখ্যাত বিদ্যা অধ্যায়নের স্থান হিসাবে মালুটি স্থাপিত হয়। বলা হয়ে থাকে আদি শঙ্করাচায বারানসি গমন পথে এখানে কিছুকাল ছিলেন।অবিভক্ত বাংলা’র সময় বীরভূম ও সম্মিলিত সাঁওতাল পরগনা একসাথে রাঢ় বাংলা বা রাঢ় বঙ্গ ও বলা হত। মালুটি আজও বিচিত্র এক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বিদ্যমান – বুকে আগলে রাঢ় বঙ্গের পুরানো ঐতিহ্যকে – অপেক্ষায় রয়েছে নতুন করে চিনে নেবার সংকল্পে। তবে বলে রাখি – আমি মালুটি গিয়েছিলাম ঝাড়খান্ডের পাকুড় থেকে – দূরত্ব প্রায় 80 km. পুরো রাস্তাটাই সাঁওতাল পরগনা’র মধ্যে দিয়ে গিয়েছে – পশ্চিমবঙ্গ আর ঝাড়খান্ড’কে আলাদা করা এই রাস্তায় বেশ মুশকিল। ছোট নাগপুর মালভূমির বিস্তীর্ণ টিলার প্রান্তর এ এক অনন্য Topography আপনার সামনে তুলে ধরে।
মালুটি দেখে ফেরার পথে আমরা গিয়েছিলাম বীরভূমের তুম্বানি ফরেস্ট রেঞ্জের মধ্য দিয়ে। সঙ্গে ছিল বিস্তীর্ণ শালের জঙ্গল আর সঙ্গে বাংলা – ঝাড়খান্ডের সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রাহ্মণী নদী। মালুটি থেকে রামপুরহাটের রাস্তায় কিছুটা এগিয়ে গিয়ে নারায়ানপুরের মোড় দিয়ে বাঁদিকের রাস্তায় প্রায় 8 km দূরে নারায়ানপুর পেরিয়ে পড়বে ব্রাহ্মণী নদীর ব্রিজ। ব্রিজ পেরিয়ে নদির পাশ বরাবর বালি মাটির রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। পথে পরে তুম্বানি ফরেস্ট রেঞ্জের শালের জঙ্গল আর তারপাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রাহ্মণী নদী। নদি আর শাল জঙ্গলের এই জায়গাটাতে সময় যে কেমন করে বেরিয়ে যায় – তা কথায় বলে বোঝানো যাবে না। পিকনিক করার একটি আদর্শ জায়গা এটি। এর পর শাল জঙ্গলকে পিছে রেখে আমরা এগিয়ে চলি বৈধড়ার দিকে। এখানেতে ব্রাহ্মণী নদী উপরে লকগেট আছে...সঙ্গে ছোট্ট একটি পার্ক। এখান থেকে রাস্তা এক দিকে চলে গেছে রাম পুরহাটের দিয়ে আর অন্য দিকে নলহাটি। পাকুড় ফেরার জন্য আমরা নলহাটির রাস্তা ধরলাম। তারাপীঠে পুজো দিয়ে আপনারা ও একবার ঘুরে আসতে পারে্ন মালুটি’তে। দেখে আসতে পারেন প্রাচীন বাংলার প্রায় ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে – একচালা আর চারচালা মন্দিরের ইতিহাস......