নির্জন সমুদ্রসৈকত ও চিল্কার নীল জলরাশির যুগলবন্দি
সমুদ্র এবং পাহাড় আমাদের বারবার হাতছানি দেয়। নির্জন সমুদ্রসৈকত ভালোবেসে এবার পুজোর ছুটিতে গিয়েছিলাম ওড়িশার গোপালপুর। গোপালপুর-অন- সী-র কথা অনেকের মুখেই শুনেছিলাম।পাহাড় আর সমুদ্রের যুগলবন্দি দেখার জন্য বেশিরভাগ মানুষই ভাইজাগ ছোটেন।গোপালপুর যাওয়ার জন্য নামতে হয় ব্রহ্মপুর(বেরহামপুর) স্টেশনে।ছবির মতো স্টেশন। তাছাড়া ব্রহ্মপুর পৌঁছানোর আগেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেই হয়। চিল্কার পাশ দিয়ে ট্রেন ছুটছে।ভোরের সূর্য আপনাকে স্বাগত জানাবে।দূরের পাহাড়শ্রেণি গল্প শোনাবে।ব্রহ্মপুর স্টেশন থেকে অটো করে রওনা দিলাম গোপালপুর সী বিচের উদ্দেশ্যে।অসাধারণ রাস্তা। স্টেশন থেকে প্রথমে উঠব হাওড়া-চেন্নাই এক্সপ্রেসওয়েতে । তারপর সী বিচ পৌঁছানোর অন্য রাস্তা। গোপালপুরে খুব বেশি হোটেল নেই।সমুদ্রের ধারের কয়েকটি হোটেলের ভাড়াও বেশি। তবে হোটেলে বসে নির্জন সমুদ্রকে অনুভব করার জন্য আমরা ছিলাম 'song of the sea'তে।সত্যিই সমুদ্র আমাদের গান শুনিয়েছে দিনরাত। গোপালপুরের অন্যতম আকর্ষণ পাটিসোনাপুর বিচ। গোপালপুর থেকে দূরত্ব পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। এই বিচটিকে স্থানীয়রা বলেন 'ওড়িশার মরিশাস'। নীল-সবুজ রঙের জল আর সোনালি বালুরাশি চোখের সামনে অপূর্ব দৃশ্যপট তৈরি করবে।বিশেষ করে বিচে পৌঁছানোর আগে পেরোতে হবে বহুদা নদী-ব্রিজ।নদীর মোহনা অংশটি ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত। ঝাউবনের সারি উপরিপাওনা।এখানে আসার আগে দেখে নিয়েছি মা ভৈরবীর মন্দির। মন্দিরদর্শন করে আমরা আপ্লুত। মা ভৈরবীর মন্দির চত্বরেই রয়েছে একশো আট দেবতার মন্দির এবং জগন্নাথ মন্দির। একশো আট দেবতার মূর্তি দেখে বিস্মিত হলাম। একসঙ্গে একশো আট দেবতা পূজিত হন।পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি এখানকার মন্দির। মনোরম পরিবেশ। অটোচালকের মুখ থেকে শুনলাম গঞ্জাম জেলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে তাদের গর্বের কথা। সত্যিই গর্ব করার মতো। পাহাড়,অরণ্য,পর্বতের পাশাপাশি চিল্কার নীল জল গঞ্জাম জেলাকে সাজিয়ে তুলেছে। ভৈরবী মাতার মন্দির দেখে ফিরে এসে বৈকালিক সমুদ্রস্নান।আকাশ জুড়ে মেঘ। বৃষ্টি এল ঝেঁপে।সমুদ্রের ঢেউ যেন আলিঙ্গন করল মেঘ-বৃষ্টিকে। গোপালপুর থেকে আমরা যাব রাম্ভা।রাস্তায় যেতে যেতে অনেক ছোট ছোট টিলা,সবুজ পাহাড়শ্রেণি,কাজুবাদামের গাছ,সবুজ মাঠ পেরোলাম। পথে তারাতারিণীর মন্দির দেখবার জন্য গাড়ি থামালাম। পাহাড়ের উপর মন্দির।দেবী অষ্টভুজা।গোপালপুর থেকে দূরত্ব তিরিশ কিলোমিটার। মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য রোপওয়ে আছে।রোপওয়ে থেকে চারদিকের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। নিচে বয়ে চলেছে ঋষিকুল্যা নদী। মন্দিরের গায়ের কারুকার্য লিঙ্গরাজ মন্দিরের মতো । যদিও মন্দিরের পুনর্গঠনের কাজ চলছে। রোপওয়ে ছাড়া গাড়িও উঠছে পাহাড়চূড়ায়।হেঁটেও ওঠা যায়,তবে অনেক(প্রায় এক হাজার) সিঁড়ি ভাঙতে হবে।
তারাতারিণীর মন্দির দর্শন করে রাম্ভা পৌঁছালাম।চিল্কার ধারে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই জায়গাটি ভালো লাগবেই। বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে। ও .টি. ডি. সি. র পান্থনিবাসে থাকতে পারেন। আমরা ছিলাম বরকুলে।বরকুলও চিল্কার ধারে। আধ ঘন্টায় বোটিং করে যাওয়া যায় কালিজায় মন্দির দর্শনে।ও.টি.ডি.সি.র পান্থনিবাসে থেকে ওদেরই বোট বুকিং করে যেতে পারেন। বেসরকারি বোটও আছে।পূর্বঘাট পর্বতমালাকে ছুঁয়ে আছে যেন নীল জলরাশি । বরকুল থেকে চিল্কায় বোটিং ভ্রমণকে অন্য মাত্রা দেবে।ছোট একটি দ্বীপে কালিজায় মাতার মন্দির। খুবই জাগ্রত এই দেবী।বরকুল থেকেই ফেরার পালা। বরকুলের নিকটবর্তী স্টেশন বালুগাঁও। একটু বেশিই পরিচ্ছন্ন স্টেশন। কারণ কী? জানতে পারলাম এই স্টেশন 'মাছের স্টেশন '।চিল্কার মাছ ওড়িশাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যে যায় এই স্টেশনকে কেন্দ্র করে। তাই আঁশটে গন্ধ দূর করতে সবসময় তৎপর রেলের সাফাইকর্মীরা। সবশেষে আর কথা না বলে পারছি না,বরকুল যাওয়ার পথে চিলিকা ধাবায় কব্জি ডুবিয়ে খেতে কিন্তু ভুলবেন না। কিভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে যশবন্তপুর এক্সপ্রেস অথবা চেন্নাই মেল ধরে ব্রহ্মপুর স্টেশন। সেখান থেকে অটো করে গোপালপুর। গোপালপুর থেকে ছোট গাড়ি করে ঘোরা। থাকবেন কোথায় :গোপালপুরে হোটেল আছে।তাছাড়া গোপালপুর ও বরকুুলে ওটিডিসির পান্থনিবাস আছে।অন লাইন বুুুকিং হয়। কখন যাবেন:সব সময় যাওয়া যায়। তবে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি বেশি ভালো।
সমুদ্র এবং পাহাড় আমাদের বারবার হাতছানি দেয়। নির্জন সমুদ্রসৈকত ভালোবেসে এবার পুজোর ছুটিতে গিয়েছিলাম ওড়িশার গোপালপুর। গোপালপুর-অন- সী-র কথা অনেকের মুখেই শুনেছিলাম।পাহাড় আর সমুদ্রের যুগলবন্দি দেখার জন্য বেশিরভাগ মানুষই ভাইজাগ ছোটেন।গোপালপুর যাওয়ার জন্য নামতে হয় ব্রহ্মপুর(বেরহামপুর) স্টেশনে।ছবির মতো স্টেশন। তাছাড়া ব্রহ্মপুর পৌঁছানোর আগেই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেই হয়। চিল্কার পাশ দিয়ে ট্রেন ছুটছে।ভোরের সূর্য আপনাকে স্বাগত জানাবে।দূরের পাহাড়শ্রেণি গল্প শোনাবে।ব্রহ্মপুর স্টেশন থেকে অটো করে রওনা দিলাম গোপালপুর সী বিচের উদ্দেশ্যে।অসাধারণ রাস্তা। স্টেশন থেকে প্রথমে উঠব হাওড়া-চেন্নাই এক্সপ্রেসওয়েতে । তারপর সী বিচ পৌঁছানোর অন্য রাস্তা। গোপালপুরে খুব বেশি হোটেল নেই।সমুদ্রের ধারের কয়েকটি হোটেলের ভাড়াও বেশি। তবে হোটেলে বসে নির্জন সমুদ্রকে অনুভব করার জন্য আমরা ছিলাম 'song of the sea'তে।সত্যিই সমুদ্র আমাদের গান শুনিয়েছে দিনরাত। গোপালপুরের অন্যতম আকর্ষণ পাটিসোনাপুর বিচ। গোপালপুর থেকে দূরত্ব পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার। এই বিচটিকে স্থানীয়রা বলেন 'ওড়িশার মরিশাস'। নীল-সবুজ রঙের জল আর সোনালি বালুরাশি চোখের সামনে অপূর্ব দৃশ্যপট তৈরি করবে।বিশেষ করে বিচে পৌঁছানোর আগে পেরোতে হবে বহুদা নদী-ব্রিজ।নদীর মোহনা অংশটি ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত। ঝাউবনের সারি উপরিপাওনা।এখানে আসার আগে দেখে নিয়েছি মা ভৈরবীর মন্দির। মন্দিরদর্শন করে আমরা আপ্লুত। মা ভৈরবীর মন্দির চত্বরেই রয়েছে একশো আট দেবতার মন্দির এবং জগন্নাথ মন্দির। একশো আট দেবতার মূর্তি দেখে বিস্মিত হলাম। একসঙ্গে একশো আট দেবতা পূজিত হন।পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি এখানকার মন্দির। মনোরম পরিবেশ। অটোচালকের মুখ থেকে শুনলাম গঞ্জাম জেলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে তাদের গর্বের কথা। সত্যিই গর্ব করার মতো। পাহাড়,অরণ্য,পর্বতের পাশাপাশি চিল্কার নীল জল গঞ্জাম জেলাকে সাজিয়ে তুলেছে। ভৈরবী মাতার মন্দির দেখে ফিরে এসে বৈকালিক সমুদ্রস্নান।আকাশ জুড়ে মেঘ। বৃষ্টি এল ঝেঁপে।সমুদ্রের ঢেউ যেন আলিঙ্গন করল মেঘ-বৃষ্টিকে। গোপালপুর থেকে আমরা যাব রাম্ভা।রাস্তায় যেতে যেতে অনেক ছোট ছোট টিলা,সবুজ পাহাড়শ্রেণি,কাজুবাদামের গাছ,সবুজ মাঠ পেরোলাম। পথে তারাতারিণীর মন্দির দেখবার জন্য গাড়ি থামালাম। পাহাড়ের উপর মন্দির।দেবী অষ্টভুজা।গোপালপুর থেকে দূরত্ব তিরিশ কিলোমিটার। মন্দিরে পৌঁছানোর জন্য রোপওয়ে আছে।রোপওয়ে থেকে চারদিকের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। নিচে বয়ে চলেছে ঋষিকুল্যা নদী। মন্দিরের গায়ের কারুকার্য লিঙ্গরাজ মন্দিরের মতো । যদিও মন্দিরের পুনর্গঠনের কাজ চলছে। রোপওয়ে ছাড়া গাড়িও উঠছে পাহাড়চূড়ায়।হেঁটেও ওঠা যায়,তবে অনেক(প্রায় এক হাজার) সিঁড়ি ভাঙতে হবে।
তারাতারিণীর মন্দির দর্শন করে রাম্ভা পৌঁছালাম।চিল্কার ধারে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই জায়গাটি ভালো লাগবেই। বোটিং-এর ব্যবস্থা আছে। ও .টি. ডি. সি. র পান্থনিবাসে থাকতে পারেন। আমরা ছিলাম বরকুলে।বরকুলও চিল্কার ধারে। আধ ঘন্টায় বোটিং করে যাওয়া যায় কালিজায় মন্দির দর্শনে।ও.টি.ডি.সি.র পান্থনিবাসে থেকে ওদেরই বোট বুকিং করে যেতে পারেন। বেসরকারি বোটও আছে।পূর্বঘাট পর্বতমালাকে ছুঁয়ে আছে যেন নীল জলরাশি । বরকুল থেকে চিল্কায় বোটিং ভ্রমণকে অন্য মাত্রা দেবে।ছোট একটি দ্বীপে কালিজায় মাতার মন্দির। খুবই জাগ্রত এই দেবী।বরকুল থেকেই ফেরার পালা। বরকুলের নিকটবর্তী স্টেশন বালুগাঁও। একটু বেশিই পরিচ্ছন্ন স্টেশন। কারণ কী? জানতে পারলাম এই স্টেশন 'মাছের স্টেশন '।চিল্কার মাছ ওড়িশাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্যে যায় এই স্টেশনকে কেন্দ্র করে। তাই আঁশটে গন্ধ দূর করতে সবসময় তৎপর রেলের সাফাইকর্মীরা। সবশেষে আর কথা না বলে পারছি না,বরকুল যাওয়ার পথে চিলিকা ধাবায় কব্জি ডুবিয়ে খেতে কিন্তু ভুলবেন না। কিভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে যশবন্তপুর এক্সপ্রেস অথবা চেন্নাই মেল ধরে ব্রহ্মপুর স্টেশন। সেখান থেকে অটো করে গোপালপুর। গোপালপুর থেকে ছোট গাড়ি করে ঘোরা। থাকবেন কোথায় :গোপালপুরে হোটেল আছে।তাছাড়া গোপালপুর ও বরকুুলে ওটিডিসির পান্থনিবাস আছে।অন লাইন বুুুকিং হয়। কখন যাবেন:সব সময় যাওয়া যায়। তবে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি বেশি ভালো।