Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionগঙ্গারিডি  সভ্যতার উত্স সন্ধানে Emptyগঙ্গারিডি সভ্যতার উত্স সন্ধানে

more_horiz
গঙ্গারিডি সভ্যতার উত্স সন্ধানে
জলশুদ্ধিকরণের এই বৈদিক মন্ত্র থেকেই হয়তো রবীন্দ্রনাথ অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন, ‘…যমুনা গঙ্গা , উচ্ছ্বল জলধিতরঙ্গ৷ ’প্রশ্ন জাগে , সভ্যতার বিকাশ যদি সিন্ধুর তীরেই হবে, তা হলে পবিত্র নদী গঙ্গা হল কী ভাবে ?

সভ্যতা এখানে বহমান৷ ভাষা আর সংস্কৃতি বিশ্লেষণ করে দাবি করা হচ্ছে , এই বাংলাতেই উঠেছিল সভ্যতার সূর্য৷ কিন্ত্ত সব ইতিহাসবিদ সেটি মানতে রাজি নন৷ চন্দ্রকেতুগড় ছিল গঙ্গারিডির প্রাণকেন্দ্র , এমন তথ্যও মানছেন না ইতিহাসবিদদের একাংশ৷ সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরী সরস্বতী৷

নর্মদা সিন্ধু কাবেরী জলেহস্মিন্ সংনিধিন্ কুরু৷
দিনের সেরা খবর এবার হোয়াটসঅ্যাপেসাবসক্রাইব
জলশুদ্ধিকরণের এই বৈদিক মন্ত্র থেকেই হয়তো রবীন্দ্রনাথ অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলেন, ‘…যমুনা গঙ্গা , উচ্ছ্বল জলধিতরঙ্গ৷ ’প্রশ্ন জাগে , সভ্যতার বিকাশ যদি সিন্ধুর তীরেই হবে, তা হলে পবিত্র নদী গঙ্গা হল কী ভাবে ? ভগীরথ যদি সত্যযুগে গঙ্গাকে অবতরণ করিয়ে থাকেন, যদি কপিলমুনির আশ্রম হয়ে থাকে (এখনও আছে , যদিও আসল আশ্রমের জায়গাটি সমুদ্রের গ্রাসে গিয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয় লোকজন) সাগরদ্বীপে , তা হলে সভ্যতার বিকাশ পশ্চিমে হয়েছে , সিন্ধুর তীরে হয়েছে, এ কথা কতটা হলফ করে বলা যায় ? ভারতে (মানে ভারতীয় উপমহাদেশে) পবিত্র নদীর তালিকায় রয়েছে নর্মদা, সরস্বতী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী… কিন্ত্ত সিন্ধু নেই এই তালিকায়৷


লোককথা -উপকথা সেই সব নদীকে নিয়েই গড়ে ওঠে যেখানে সভ্যতা বিকশিত হয় , কিন্ত্ত অনেক সময়ই নতুন করে গাথা তৈরি হয় না যেখানে সভ্যতা ছড়িয়ে পড়ে সেই জনপদের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী নিয়ে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সন্ধি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত আইআইটি খড্গ়পুরের অধ্যাপক জয় সেন বলেন , ‘পূর্ব ভারতের সমতলের কথা , মূর্তি পূজোর কথা ঋগ্বেদের ষষ্ঠ মণ্ডলের ৪৫-৪৭ সূক্তিতে রয়েছে৷ কিন্ত্ত এ সব কথা এড়িয়ে গিয়ে পশ্চিমের ইতিহাসবিদরা শুধু পাশ্চাত্য থেকে আর্যদের এ দেশে আসার অসত্য কথাই বলে গিয়েছেন৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গের চন্দ্রকেতুগড়েই নয়, বাংলাদেশের বড়িবটেশ্বরেও একটি জায়গা নিহ্নিত করা হয়েছে৷

এই সব জায়গা থেকে যে সব তথ্য ও নিদর্শন এখনও পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে, তা বিচার করে বলা যায়, আর্যদের পাশ্চাত্য থেকে এ দেশে আসার তথ্য ঠিক নয়৷’ প্রাচীন ভারতে যে ষোড়শ মহাজনপদ ছিল, তার মধ্যে অঙ্গ , মগধ , বৃজি, কাশী, কোশল, কুরু, বত্স্য, চেদি, মল্ল, মত্স্য , সুরসেন প্রভৃতি ছিল হয় পূর্বভারত বা গঙ্গা -যমুনা অববাহিকায়৷ উত্তরে (পশ্চিমে ) ছিল কাম্বোজ , গান্ধার , অবন্তী৷ দক্ষিণে অস্মক৷ অর্থাত্ প্রাচীন ভারতে ও বৈদিক যুগে সভ্যতা ছিল পূর্বঘেঁষা৷ বঙ্গ , পৌণ্ড্র , ঔড্র প্রভৃতি দেশ ছিলও পূর্বেই৷ পৌরাণিক কাহিনিকে ভিত্তি হিসাবে না ধরা হলেও , যদি স্থানের নামের প্রাচীনত্বের মাপকাঠি হিসাবে তাকে ধরা হয় , তা হলে বলতেই হবে , অঙ্গদেশ অতি প্রচীন , কারণ এখানেই মদনকে ভস্ম করেছিলেন মহাদেব স্বয়ং !অধ্যাপক সেন বলেন, ‘চেদিরাজ্যের কথা আমরা জানি৷ এই চেদি কথা এসেছে কোথা থেকে ? চেতি বা চেতিয়া থেকে৷ এই শব্দ এসেছে আবার চৈত্য থেকে, যার আদি অর্থ জ্ঞান বা চৈতন্য লাভ হয় এমন স্থান৷ বর্তমান অর্থ বৌদ্ধদের উপাসনা করার স্থান৷


সন্ধি প্রকল্পে কাজের সূত্রে আমরা জেনেছি , ব্রাহদ্রথ বংশের সঙ্গে যোগ ছিল চেদিদের৷ রাজা বৃহদ্রথের থেকেই ব্রাহদ্রথ বংশের উত্পত্তি৷ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মগধে এই রাজবংশের কথা পাওয়া যায় ঋগ্বেদে৷ ব্রাহদ্রথের পরে মগধের দ্বিতীয় রাজবংশ ছিল হর্যঙ্ক, যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিম্বিসার৷ তিনি মোটামুটি গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক৷ তারপরে শুরু হয় শিশুনাগ বংশের শাসনকাল৷ এরপরে নন্দবংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন মহাপদ্মনন্দ৷ নন্দবংশের রাজত্বের সীমা উত্তর -পশ্চিমে বিস্তৃত ছিল পঞ্জাব পর্যন্ত৷ দক্ষিণে ছিল বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত৷ তবে সেই সব জায়গা সময়ের সঙ্গে বদলেছে৷ নন্দবংশের শেষ রাজাকে পরাজিত করে রাজ্য অধিকার করেন চন্দ্রগুন্ত মৌর্য৷ ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রাচীন ইতিহাসের অধ্যাপক এ বি বসওয়ার্থও মনে করেন , নন্দবংশের সাম্রাজ্যের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে , তার গঙ্গারিডির সঙ্গেই মেলে৷ ’তবে যতক্ষণ পর্যন্ত এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে , ততক্ষণ তা মানতে রাজি নন অনেকেই৷


আর্কিয়োলজিক্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া ) ফেলো সৌমী চক্রবর্তী বলেন, ‘কেউ কোনও দাবি করলেই হবে না৷ আগে তথ্যপ্রমাণ দিতে হবে৷ কেউ যদি তথ্যপ্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করে দেন যে চন্দ্রকেতুগড়ই গঙ্গারিডির প্রাণকেন্দ্র ছিল , তা হলে মানতে অসুবিধা নেই৷ আগে প্রমাণ দেখি , তারপরেই এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারব৷ ’ গঙ্গারিডি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন গৌতম হালদার৷ তাঁর বাবা নরোত্তম হালদারও গঙ্গারিডি নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন , গঙ্গারিডি নিয়ে তাঁর লেখা বইও রয়েছে৷ গৌতম হালদার এখন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডিং আর্কিয়োলজিস্ট৷ তিনি বলেন , পেরিপ্লাসের বর্ণনা অনুযায়ী গঙ্গারিডির প্রধান বন্দর ছিল গঙ্গে৷ সেটি অধুনা কাকদ্বীপের কাছাকাছি জায়গায়৷ এমন বন্দর হলে তার আশপাশে প্রাচুর্য থাকে৷ কাকদ্বীপের আশপাশে আমরা সেই ধরনের নিদর্শন পেয়েছি৷ তবে গঙ্গের কোনও অবশেষ এখনও পেয়ে ওঠা হয়নি৷ সেটি সমুদ্রের গ্রাসে গিয়ে থাকতে পারে৷ কপিলমুনির আশ্রমও তো সমুদ্রের গ্রাসে গিয়েছে৷ আগে এখানে সরু একটি খালের মতো অংশ ছিল, এখন সেটিই চওড়া হয়ে গিয়েছে সমুদ্রের ভাঙনে৷ ’ আসা যাক লিপি প্রসঙ্গে৷


মহেঞ্জোদাড়ো থেকে পাওয়া সিল-মোহরের লিপির পাঠোদ্ধার এখনও সম্ভব হয়নি৷ সেই লিপির কথা বাদ দিলে ভারতের প্রাচীনতম লিপি হল ব্রাহ্মী যা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন লিপির উত্স৷ এখনও পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীন পুঁথি ‘ললিতবিস্তার সূত্র’ লেখা হয়েছিল ব্রাহ্মীতেই৷ এই নাটিকাটি পাওয়া যায় বারাণসীর কাছে৷ সেই একই লিপি পাওয়া গিয়েছে অশোকের বিভিন্ন স্তম্ভ ও শুঙ্গযুগের বিভিন্ন স্তূপে৷ গঙ্গারিডিতেও মিলেছে সেই হরফে লেখা সিল -মোহর , যা অন্তত আড়াই হাজার বছরের পুরোনো৷ তাই দেশের প্রাচীনতম হরফের সঙ্গেও নাম জুড়ছে চন্দ্রকেতুগড়ের৷ সিন্ধুর তীরে যদি সভ্যতার বিকাশ হয়েও থাকে, তাহলেও তা নিরবচ্ছিন্ন ছিল না৷ কিন্ত্ত সামান্য খোঁড়াখুঁড়ি করেই যেখানে আড়াই হাজার বছরের পুরোনো নথি মিলেছে, সেই যুগ থেকে এখনও পর্যন্ত যেখানে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সভ্যতা এগিয়ে চলেছে, সেই জায়গাকে কত দিন অবহেলা করা যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে৷ ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ সূত্রে জানা গিয়েছে , এখনও সেখানে নতুন করে উত্খনন করার কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই৷ তবে সংরক্ষিত জায়গা আরও সুরক্ষিত করার ভাবনা তাঁদের রয়েছে৷


অধ্যাপক সেন বলেন, ‘একদিকে সিন্ধু অববাহিকা , অন্যদিকে মেঘনা -পদ্মা -ভাগীরথী৷ দুই জায়গাই ভাগ হয়েছে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়৷ কিন্ত্ত অবিভক্ত জনপদের সত্ত্বাও যেন ভাগ হয়ে গিয়েছে ধর্মের নিরিখে৷ সিন্ধু অববাবিহার ইতিহাস সারা বিশ্বের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে৷ এ বার মেঘনা -পদ্মা -ভাগীরথী অববাহিকার ইতিহাসও বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে৷ ’সন্ধি প্রকল্পের কাজ এই পর্বে শেষ হলে তা নিয়ে আইসিসিআরে একটি শিক্ষামূলক আলোচনাচক্রের আয়োজন করতে চায় আইআইটি খড্গ়পুর৷ একই সঙ্গে তাদের প্রস্তাব , গঙ্গারিডি নিয়ে একটি সার্বিক জাদুঘর তৈরি হোক , যেখানে এই জনপদের নিরবচ্ছিন্ন ইতিহাস ধরা থাকবে৷ এই জাদুঘর এমন ভাবে তৈরি হোক , যার সঙ্গে যুক্ত হবে পর্যটনও৷ এই জাদুঘরে থাকবে অবিভক্ত বাংলার অর্থনৈতিক বিকাশের ইতিহাসও৷ তবে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে সমস্যা রয়েছে৷ দিলীপকুমার মৈতের চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালায় রক্ষিত নিদর্শন কবে আবার জনসমক্ষে আসবে , সে কথাই বলা যাচ্ছে না সরকারি দীর্ঘসূত্রতায়৷

Web Title : river ganges –historical, cultural and socioeconomic attributes

descriptionগঙ্গারিডি  সভ্যতার উত্স সন্ধানে EmptyRe: গঙ্গারিডি সভ্যতার উত্স সন্ধানে

more_horiz
গঙ্গারিডি  সভ্যতার উত্স সন্ধানে Body1_072718074211

descriptionগঙ্গারিডি  সভ্যতার উত্স সন্ধানে EmptyRe: গঙ্গারিডি সভ্যতার উত্স সন্ধানে

more_horiz
গঙ্গারিডি সভ্যতা
--------------------

২৩০০ বছর আগে খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে গ্রিকবীর মহামতি আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় বাংলাদেশে গঙ্গারিডি (Gangaridi) নামে একটি শক্তিশালী রাজ্য ও জাতি ছিল। গঙ্গা নদীর নামেই এই রাজ্য ও জাতির নামকরণ করা হয়েছিল বলে ইতিহাসবিদদের ধারণা। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের মধ্যভাগ থেকে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতক পর্যন্ত গঙ্গারিডি রাজ্যের সময়কাল নির্ধারিত হয়েছে। ডিওডোরাস (খ্রিস্টপূর্ব ৪১-১৪), মহাকবি ভার্জিল (খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক) টলেমি (খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক) কারাতিবাস, স্ট্রাবো, প্লিনি (খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতক) প্রমুখ গ্রিক ও ল্যাটিন লেখকদের বিবরণ থেকে এই রাজ্যের নাম ও ইতিহাস জানা যায়। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে লিখিত ‘পেরিপ্লাস অব দি ইরিথ্রিয়ান সি’ গ্রন্থে গঙ্গারিডিদের বীরত্বের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কোনো কোনো লেখক গঙ্গা নদীকে এই দেশের পূর্বসীমা আবার কেউ কেউ এর পশ্চিম সীমারূপে বর্ণনা করেছেন। প্লিনি বলেন, গঙ্গা নদীর শেষভাগ এই রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মেহচন্দ্র রায় চৌধুরী গ্রিক লেখকদের বিবরণ পরীক্ষা করে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, পদ্মা ও ভাগীরথীর মধ্যস্থলে গঙ্গারিডি রাজ্য অবস্থিত ছিল। গবেষকরা অনুমান করেন বাংলাদেশের চারটি বৃহত্তর জেলা ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা এবং পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, উত্তর চব্বিশ পরগান, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা নিয়ে এই রাজ্য গঠিত হয়েছিল।
ইতিহাসবিদ ডিওডোরাসের বিবরণ থেকে জানা যায়, আলেকজান্ডার পাঞ্জাবের বিপাশা নদী অতিক্রম করে পূর্বদিকে অগ্রসর হচ্ছেন জেনে গঙ্গারিডি ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের রাজারা দুই লাখ পদাতিক, আশি হাজার অশ্বরোহী, আট হাজার রথ এবং ছয় হাজার রণহস্তী নিয়ে দিগবিজয়ী আলেকজান্ডারের বিজয় অভিযান প্রতিরোধ করতে সমবেত হয়েছিলেন।
ডিওডোরাস আরো লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষে বহু জাতির বাস। তার মধ্যে গঙ্গারিডি জাতি সর্বশ্রেষ্ঠ। তাদের ৪ হাজার বৃহৎকায় সুসজ্জিত রণহস্তী আছে। এ জন্য অপর কোনো রাজা এই দেশ জয় করতে পারেননি। স্বয়ং আলেকজান্ডারও এই সমুদয় হস্তীর বিবরণ শুনে এই জাতিকে পরাস্ত করার দুরাশা ত্যাগ করেন।’

মহাকবি ভার্জিল ও গঙ্গারিডি জাতির শৌর্য বীর্যের প্রশংসা করেছেন। তার ‘জাজিকাস’ নামক কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন, তিনি জন্মভূমি মন্টুয়া নগরীতে প্রত্যাবর্তন করে একটি মর্মর মন্দির প্রতিষ্ঠা করবেন। এই মন্দিরের শীর্ষ দেশে স্বর্ণ ও গজদন্তে গঙ্গারিডিদের বীরত্বের কথা খোদিত করে রাখবেন।

কান্তিবাস ও কারাতিবাস লিখেছেন, গঙ্গা যে দেশের উপর দিয়ে সাগরে পতিত হয়েছে সে স্থানে গঙ্গারিডি ও প্রাসিয়য় নামক দুটি জাতির বাস। তাদের রাজা আগ্রামিসের ৩ হাজার রণহস্তী আছে। গ্রীকগণ প্রাসিয়য়দের রাজধানীর নাম পালি বোথরা (পাটলি পুত্র বর্তমান পাটনা) বলে উল্লেখ করেছেন এবং তারা গঙ্গারিডি দেশের পশ্চিমে বাস করতো। এ দুটি জাতির পরস্পর সম্বন্ধ কি ছিল, গ্রিক লেখকগণ সে সম্বন্ধে বিভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশ প্রাচীন লেখকই বলেছেন যে, এ দুটি জাতি গঙ্গারিডি রাজার অধীনে ছিল এবং তাঁর রাজ্য পাঞ্জাবের অন্তর্গত বিপাশা নদীর তীর থেকে ভারতের পূর্ব সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের সময় পূর্ব ভারতের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ধননন্দ। তিনি ছিলেন নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা মহাপদ্মনন্দের উত্তরসুরী। ধননন্দের বিশাল সৈন্যবাহিনীতে ২ লাখ পদাতিক, ২০ হাজার অশ্বারোহী এবং ২ হাজার রণহস্তী ছিল। গ্রিক লেখকগণ সম্ভবত : ধননন্দকেই গঙ্গারিডির পরাক্রমশালী রাজা বলে তাদের লেখনীতে উল্লেখ করেন। অনেকে মনে করেন ধননন্দের পূর্বপুরুষ মহা পদ্মনন্দ বাংলা থেকে পাটলি পুত্র গিয়ে রাজধানী স্থাপন করেন।

আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণকালে, তার পূর্বে ও পরে বাংলাদেশ বঙ্গ নামে পরিচিত ছিল। ঐতরেয় আরণ্যক গ্রন্থে বঙ্গ জাতির উল্লেখ রয়েছে। রামায়ণ, মহাভারত, রঘুবংশ, সিংহলের মহাবংশ নামক পালিগ্রন্থে বঙ্গ নামের উল্লেখ দৃষ্ট হয়। গ্রিক লেখকগণ বঙ্গ নাম উল্লেখ না করে কেন যে এ দেশকে গঙ্গারিডি নামে অভিহিত করেছেন তা গবেষণার বিষয়।

পেরিপ্লাস ও টলেমির বিবরণ থেকে জানা যায় খ্রিস্টীয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতকে বাংলায় স্বাধীন গঙ্গারিডির রাজ্য বেশ প্রবল ছিল এবং গঙ্গা তীরবর্তী গঙ্গে (Gange) নামক স্থানে এই রাজ্যের রাজধানী ছিল। গঙ্গে একটি প্রসিদ্ধ বন্দর ছিল এবং সূক্ষ্ম মসলিন কাপড় এখান থেকে সুদূর পশ্চিম দেশে রফতানি হতো।

গঙ্গে নগরের অবস্থান নিয়ে লেখকদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। কেউ কেউ ঝিনাইদহ জেলার বারবাজার, কেউ কেউ গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া আবার কেউ কেউ হরিণঘাটা নদীর তীরে গঙ্গে অবস্থিত ছিল বলে মনগড়া কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন। সম্প্রতি কলকাতা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসত মহকুমার দেগঙ্গা থানায় চন্দ্রকেতুগড়ে মাটির গভীরে এক লুপ্তপ্রায় সভ্যতার সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতœবিজ্ঞানীদের ধারণা চন্দ্রকেতুগড়ই হলো পেরি প্লাস এবং টলেমি বর্ণিত গঙ্গেনগরী।

ভারতীয় পুরাতত্ব বিভাগের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সুপারিনটেনডেন্ট লঙ হার্স্ট প্রথম ১৯০৬ সালে চন্দ্রকেতুগড় পরিদর্শন করেন। ১৯২২ সালে আসেন বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি প্রত্নতত্ববিদ রাখাল দাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি খনামিহিরের টিবি ও চন্দ্রকেতুগড়ের কিছু নিদর্শন দেখে বলেন, দূর অতীতে এখানে একটি উন্নত সভ্যতা প্রসার লাভ করেছিল। স্থানটি খনন করা প্রয়োজন। ১৯৫৫ সালে কলকাতায় ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেসের অধিবেশনে চন্দ্রকেতুগড় থেকে সংগৃহীত একটি সূর্য মূর্তি দেখে সমাগত প্রত্নতত্তবিদদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সত্যেন রায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এ সময়। এগিয়ে আসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ সংগ্রহশালা। ১৯৫৬ সালে প্রথম এখানে খননকার্য পরিচালিত হয়। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ নিশীথ রঞ্জন রায় একাধিকবার চন্দ্র কেতুগড়, বেড়াচাঁপা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে চন্দ্রকেতুগড়ে গড়ে উঠেছিল এক সুসমৃদ্ধ নগরী। ২০০০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ড. বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আবার নতুন করে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়।

চন্দ্রকেতুগড় একদা দেখতে ছিল পাহাড়ের মতো। মাটির তৈরি বিশাল দুর্গ প্রাচীর প্রতœ স্থলটির মূলকেন্দ্র ঘিরে আছে। আকৃতিতে আয়তকার এবং মোটামুটিভাবে এক মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ভাগীরথী ও বিদ্যাধরী নদীর কূল ঘেঁষে এর অবস্থান। এখানে খননের মাধ্যমে পাঁচটি পৃথক সাংস্কৃতিক স্তর বা পর্বের সদ্ধান পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত প্রতœ সামগ্রী চন্দ্রকেতুগড়ের প্রাচীনত্ব ও প্রতœতাত্ত্বিক গুরুত্ব প্রমাণ করে। এখানকার নিদর্শনাবলীর প্রধান অংশ কলকাতার আশুতোষ যাদুঘর ও প্রতœতাত্ত্বিক যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু নিদর্শন চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহ শালায়ও সংরক্ষিত রয়েছে।

মৌর্য থেকে গুপ্তযুগ পর্যন্ত এ স্থানের প্রধান শিল্প মাধ্যম ছিল ছাঁচ নির্মিত পোড়ামাটির সামগ্রী। কালো রঙের মৃৎপাত্রগুলো মৌর্য (খ্রি. পূ. ৩২৪-১৮৫) ও শুঙ্গ যুগের (খি. পূর্ব ১৮৫-৭৫) ধূসর বর্ণের মৃৎপাত্রগুলোর বয়স আড়াই হাজার বছর- পাণ্ডব রাজধানী হস্তিনীপুরের সমসাময়িক। মৃৎপাত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে থালা, পানীয় পাত্র, হাড়ি, কলসি, ঢাকনি, প্রদীপ, বাটি, সুরা পাত্র, ছোট ঘট, কুজো ইত্যাদি। এর মধ্যে কিছু কিছু মৃৎপাত্রের গঠন রীতিতে মহোঞ্জাদারোর মৃৎপাত্রের সাথে সাদৃশ্য বিদ্যমান। বৈদিক যুগে আর্যরা এসব সামগ্রী স্থায়ীভাবে ব্যবহার করতো। পরবর্তী সময়ে এগুলো একবার ব্যবহার করার রীতি প্রচলিত হয়। চন্দ্রকেতুগড়ের লোকেরাও এ রীতি গ্রহণ করে। তাই এখানকার সর্বত্র অসংখ্য মৃৎপাত্রের টুকরো পাওয়া যায়।

চন্দ্রকেতুগড়ে রূপা, তামা ও স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে। এখানে প্রাপ্ত মুদ্রার সঙ্গে পাটলী পুত্র, উজ্জয়িনী, কৌশাম্বী, তমলুক হরিণারায়ণপুর প্রভৃতি প্রাচীন জনপদের মুদ্রার মিল দেখা যায়। সে সময় মুদ্রার পৃষ্ঠে ঘোড়া হাতি, বৃষ, সূর্য, গাছ, পাহাড়, জাহাজ প্রভৃতির ছবি আঁকা থাকতো। চন্দ্রকেতুগড়ে প্রাপ্ত মুদ্রার গায়েও এসব ছবি রয়েছে। সে সময়ের মানুষ যে সঞ্চয়ী ছিল তারও প্রমাণ পাওয়া যায়। তখন ছোট ছোট ঘটে মুখ বন্ধ করে মুদ্রা রাখা হতো। বেড়া চাঁপাতেই একটি ঘটের মধ্যে ২৭২টি মুদ্রা পাওয়া গেছে।

চন্দ্রকেতুগড় থেকে বিপুল সংখ্যক পুতুল ও ফলক সংগৃহীত হয়েছে। তার মধ্যে মাতৃমূর্তি, দেবতা সূর্য, দেবরাজ ইন্দ্র, দেবতা অগ্নি, ধনদেবতা কুবের, ঠাকুর গণেশ, সুপুরুষ কার্তিক, ভগবান বিষ্ণু, উমা-মহশ্বের, জৈন তীর্থংকর, গৌতম বুদ্ধ, যক্ষ-যণিী, নাগ এবং মৃৎফলকে অঙ্কিত জীব-জন্তুর মূর্তি উল্লেখযোগ্য। চন্দ্রকেতুগড়ে পাওয়া সিলমোহরগুলো মাটির তৈরি, দেখতে গোলাকার। কোনো কোনো সিলের বুকে লেখার পাশাপাশি ছবিও আছে। এখানে প্রাপ্ত ষাড়ের উপর উল্লম্ফনরত মানুষের চিত্র সম্বলিত সিলমোহরের সাথে মহেঞ্জোদারোর সিলমোহরের বেশ মিল দেখা যায়। বেশ কয়েকটি অখণ্ড পাত্রের গায়ে লেখাও আছে। একটি কলসির গায়ে ‘বপণকারী কোশ’ লেখা আছে। অর্থাৎ পাত্রটিতে বপণের জন্য বীজ রাখা হতো।

এখানকার বণিকেরা নিজ দেশ ছাড়াও জলপথে অন্য দেশে বাণিজ্য করতো। সিলের গায়ে ‘জুশত্র’ নামে একজন বণিকের নাম পাওয়া যায়, যে খাদ্য বিক্রয় করে ধনী হয়েছিলেন। ‘দি জন্ম’ নামে আর এক বণিকের কথা জানা যায়। নৌযানের ছবিটি আজও সুস্পষ্ট হয়ে রয়েছে সিলের বুকে। লেখা খরোষ্টী ও ব্রাহ্মী হরফে। বণিক ‘দি জন্ম’র জাহাজের নাম ছিল ‘জলধি শত্রু’ বা সমুদ্রের ইন্দ্র। ইন্দ্র যেমন সকল দেবতার রাজা তেমনি সমুদ্রের রাজা ছিল ‘জলধি শত্রু’ জাহাজটি। বহু সিলের মধ্যে কয়েকটির পাঠোদ্ধার হয়েছে।

চন্দ্রকেতুগড়ের মৃত্তিকা অভ্যন্তরে ধান, গম, যব, ধানের খোসা, ভুট্টা প্রভৃতির সন্ধান মিলেছে। তারা শুধু নিরামিষ ভোজী ছিলেন না; মাছও খেতেন। মাছের কাঁটা ও মৃৎফলকে মাছের ছবি সে কথাই বলছে। আবিষ্কৃত হয়েছে পোড়াধান ও পোড়াচাল। ছোট ছোট ঘট ভর্তি ধান পাওয়া গেছে। দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদনই ছিল এর উদ্দেশ্য।

গৃহপালিত জীবজন্তুও ছিল তখনকার মানুষের আপনজন। মৃৎফলকে রূপায়িত পশুকূলের মূর্তি দেখে মনে হয় আজও তারা জীবন্ত। আড়াইহাজার বছর আগে এখানে যে ঘরগুলো নির্মিত হয়েছিল তা ছিল বাঁশ, কাঠ ও টালির। দেয়াল ছিল ছিটে বেড়ার। ঘরগুলো ছিল দক্ষিণমুখী। ইটের তৈরি বাড়ি ঘরেরও সন্ধান পাওয়া গেছে এখানে। হাদিপুর ও বেড়াচাঁপার বিভিন্ন স্থানে মাটির তলদেশে রয়েছে বিশাল বিশাল গৃহের ছাদ। ছাদ থাকার জন্য টিউবওয়েল বসানো যায় না। শাবল মারলে শাবল ছিটকে আসে।

তখন পাতকুয়া তৈরি হতো। পাতকুয়ার পাশে থাকতো ইটের গাঁথুনির পাকা পাতকুয়া। এ গুলোতে পরিশোধিত পানীয় জল সংরক্ষণ করা হতো। বেড়াচাঁপায় আবিষ্কৃত পাতকুয়ার পাশে রয়েছে বিরাট বিরাট কাঠের খুঁটি। সম্ভবত এ ব্যবস্থার মাধ্যমে পাতকুয়া থেকে পানি তোলা হতো।

চন্দ্রকেতুগড়ের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা রাখার ডাস্টবিন আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাচীন নগরী তক্ষশীলাতেও এ ধরনের ডাস্টবিনের সন্ধান পাওয়া গেছে। চন্দ্রকেতুগড়ের মাঠের অভ্যন্তরে আবিষ্কৃত হয়েছে পয়ঃপ্রণালী। পাইপগুলো ছিল পোড়ামাটির এবং পর পর সাজানো। প্রতিটি পাইপের দৈর্ঘ ২ ফুট ৭ ইঞ্চি। মোহেঞ্জোদারোতেও এ ধরনের ব্যবস্থা ছিল তবে তা পাকা ইটের তৈরি।

বেড়াচাঁপা, দে গঙ্গা, হাদিপুর ও চন্দ্রকেতুগড় এলাকায় নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানে খনন করলে মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসবে সিন্ধু সভ্যতার ন্যায় এক সুবিশাল প্রাচীন সভ্যতা। শুধু এ ব্যাপারে উদ্যোগ প্রয়োজন। লেখক : ইতিহাস গবেষক- লেখক।

তথ্যসূত্র :

১। বাংলা বিশ্বকোষ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ড

২। বাংলাদেশের ইতিহাস- ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার

৩। অতীত আলোকে চন্দ্রকেতুগড় দিলীপ কুমার মৈতে

৪। চন্দ্রকেতুঘর সংগ্রহশালা

সংগৃহীতঃ- টলেমির মানচিত্রে গঙ্গারিডি সভ্যতার ম্যাপ

descriptionগঙ্গারিডি  সভ্যতার উত্স সন্ধানে EmptyRe: গঙ্গারিডি সভ্যতার উত্স সন্ধানে

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply