ভারতের এক রহস্যময় মন্দির:
বীরভদ্রস্বামী মন্দির;লেপাক্ষী,
জেলা-অনন্তপুর, অন্ধ্রপ্রদেশ।
দেশের পর্যটন মানচিত্রে অন্ধ্রপ্রদেশ একটি উপেক্ষিত রাজ্য বলা চলে।যেসব পর্যটক প্রাচীন স্থাপত্য, শিল্পকলা, ঐতিহ্য ও ইতিহাস বিষয়ে উৎসাহী, তাঁরা ছাড়া এই রাজ্যে যে প্রাচীন ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যকলা সমৃদ্ধ স্থানগুলো আছে তাদের সম্বন্ধে আর বিশেষ কেউ ওয়াকিবহাল নন।কারণ তাদের হায়দ্রাবাদ, ভাইজাক,আরাকু বা তিরুপতির মতো ব্র্যান্ড ভ্যালু নেই, নেই উপভোগ করার মতো চোখজুড়ানো পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য,উচ্ছল সমুদ্র ও ফূর্তি করার মতো ক্যাসিনো বা নাইট ক্লাব।
যাই হোক,যদিও লেপাক্ষী অন্ধ্রপ্রদেশে তবু ব্যাঙ্গালোর থেকে একদিনের একটি ছোট ট্যুরে লেপাক্ষী দর্শন সাঙ্গ করে ফেলা যায়।কারণ এই স্থান অন্ধ্রপ্রদেশে হলেও তা কর্ণাটক ঘেঁষে অর্থাৎ দুই রাজ্যের সীমান্তে,ব্যাঙ্গালোর থেকে একশো চল্লিশ কিলোমিটার দূরে উত্তরে। পক্ষান্তরে হায়দ্রাবাদ থেকে লেপাক্ষীর দূরত্ব 480 km.
ব্যাঙ্গালোর থেকে এখানে আসার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো সড়কপথ। দুটি সড়কপথ আছে এখানে আসার। একটি পথ হোল ব্যাঙ্গালোর হায়দ্রাবাদ জাতীয় সড়ক (NH- 7, বর্তমানে NH-44), ভায়া হেব্বাল,য়েলাহান্কা, দেভানাহাল্লী,চিক্কাবাল্লাপুর ও বাগেপল্লী, তারপর লেপাক্ষী।কোদিকোণ্ডা চেকপোস্ট থেকে বাঁ দিকে 16 km.গেলে লেপাক্ষী।
আর একটা পথ হোল ভায়া হেব্বাল, য়েলাহান্কা তারপর রাজ্যসড়ক ধরে দদ্দাবাল্লাপুর,গৌরীবিদানুর ও হিন্দুপুর হয়ে লেপাক্ষী।
তবে বাসে এলে যথাক্রমে বাগেপল্লী ও হিন্দুপু্রে নেমে আলাদা লোকাল বাস ধরে লেপাক্ষী পৌঁছতে হয়। আমার এখানে আসা ব্যাঙ্গালোর থেকে solo traveler হিসেবে বাসে হিন্দুপুর হয়ে। ব্যাঙ্গালোর থেকে হিন্দুপুর 125 km. এবং হিন্দুপুর থেকে লেপাক্ষী 15 km.
তবে নিজের গাড়িতে বা ভাড়া গাড়িতে এলে ভায়া NH 7 ধরে আসা ভালো,রাস্তা বড়ই সুন্দর ও পথের দূরত্বও কিছু কম।
বিমানযোগে এখানে আসার উপায় আছে। নিকটবর্তী বিমানবন্দর হোল পুর্তাপুর্তিতে শ্রীসত্যসাই বিমানবন্দর যেখান থেকে লেপাক্ষীর দূরত্ব 43 km.ব্যঙ্গালোর থেকে এক ঘন্টার উড়ান।রেলপথে ব্যাঙ্গালোর থেকেও আসা যায়। নিকটবর্তী রেলস্টেশন হোল হিন্দুপুর। হিন্দুপুর হলো ব্যাঙ্গালোর গুন্টাকল শাখা লাইনের একটি স্টেশন।ট্রেনে এটুকু রাস্তা আসতে তিন ঘন্টা লাগিয়ে দেয়।
লেপাক্ষীর মন্দিরটি বীরভদ্রস্বামীর মন্দির নামে পরিচিত। মন্দিরটি বাসস্ট্যান্ড থেকে চারশো মিটার দূরে লেপাক্ষী গ্রামের দক্ষিণে একটি অনুচ্চ কূর্ম আকৃতির (Tortoise shaped) গ্রাণাইট পাথরের পাহাড়ের উপর অবস্থিত। মন্দিরের এলাকা পাঁচ একর। মন্দির নির্মাণের সময় কোন ভিত পাথরের উপর খোঁড়া হয় নি। পাহাড়টি ভেঙে তার থেকে পাথরের স্ল্যাব ও ব্লক আলাদা করা হয়েছে, কোনো পাথরের খাদান থেকে পাথর খুঁড়ে বের করা হয়নি বা দূরবর্তী কোন স্থান থেকে পাথর আনা হয় নি। বড়ো বড়ো পাথরের স্ল্যাব ইন্টারলক্ করে বাইরের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। বাইরের প্রাচীরে নানা রকমের লিপি খোদাই করা আছে।
সমগ্র মন্দির প্রাঙ্গণটি দুটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। বাইরের প্রাচীরে তিনটি গেট আছে। উত্তরের প্রবেশ পথ বা গোপুরমটি সর্বদা ব্যবহার করা হয় এবং এটি প্রতি স্তরে মূর্তি দ্বারা শোভিত। মন্দির প্রাঙ্গণে গোপুরম দিয়ে ঢুকে সামনে উঁচু সোনার মত রঙের দীপস্তম্ভ ও বালিপীঠ আছে। বাঁ দিকে ঢুকে নিরেট গ্রাণাইট পাথরের স্তম্ভযুক্ত লম্বা ও চওড়া বারান্দা দেখা যায়।
এই মন্দির কমপ্লেক্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো বীরভদ্রস্বামীর মন্দির।বীরভদ্রের উৎপত্তি শিবের জটা থেকে। মহাদেব দক্ষযজ্ঞস্থলে
তাঁর পত্নী সতীর দেহ ত্যাগের খবর পেয়ে ক্রোধে অন্ধ হয়ে তার একটি জটা ছিঁড়ে নিক্ষেপ করলে বীরভদ্র নামে এক ভয়ংকর দেবতার জন্ম হয়। তিনি শিবের অনুমতিতে দক্ষযজ্ঞস্থলে ধ্বংস লীলা চালিয়ে দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করেন ও প্রজাপতি দক্ষের শিরচ্ছেদ করেন। শিবের দেহ থেকে উৎপত্তি বলে এনাকে শিবের এক অবতার বলে মনে করা হয়। দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করার পরে নারায়ণ বীরভদ্রকে মঙ্গলগ্রহ রূপে মহাকাশে স্থাপন করেন।
বীরভদ্র মন্দিরটি আদিতে নির্মাণ করেন মহামুনি অগস্ত্য।বীরভদ্র মন্দিরটির গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে একটি প্রকোষ্ঠে উনি বসবাস ও সাধনা করতেন।স্কন্দপুরাণ অনুসারে এই মন্দির ভগবান শিবের একটি দিব্যক্ষেত্র হিসেবে পরিগণিত হয়।সেই ত্রেতা যুগ থেকে এই মন্দির বহুবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, তবে প্রাচীন কিছু জিনিস এখনো এখানে টিকে আছে যা নবীন স্থাপত্যের সঙ্গে খাপ খায় না।এর ব্যাখ্যা আমি লেখার পরবর্তী অংশে দেব।
এখন আমরা যে রূপে এই মন্দিরকে দেখতে পাই তা নির্মিত হয় বিজয়নগর সাম্রাটের রাজত্ব কালে এবং সম্পুর্ন বিজয়নগর স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। মন্দিরের নির্মাণকাল 1522-1538 সাল।সেই সময়ে বিজয়নগর সম্রাট ছিলেন রাজা অচ্যুতদেবরায়। তাঁর অধীনস্থ নিকটবর্তী পেণুকোণ্ডার শাসন কর্তা দুই ভাই বীরুপান্না ও বীরান্না এই মন্দির নির্মাণ করেন।
মূল মন্দিরটি তিনটি ভাগে বিভক্ত,যথা মুখমণ্ডপ বা নৃত্যমণ্ডপ(Dancing Hall) বা রঙ্গমণ্ডপ (Assembly Hall), অর্ধমণ্ডপ বা অন্তরাল (Antechamber) এবং গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহের প্রবেশপথের দুপাশে গঙ্গা ও যমুনার মূর্তি দেখা যায়। গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে মানুষের মত প্রমাণ সাইজের ভগবান বীরভদ্রের মূর্তি আছে। ওনার মূর্তি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও কণ্ঠে নরকরোটির মালা শোভা পাচ্ছে। এখানে অগস্ত্য মুনির প্রকোষ্ঠের কথা আগেই বলেছি। তিনি এখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠার সময় বসবাস করতেন।বীরভদ্র ছাড়া আরও যে সমস্ত দেবতার গর্ভগৃহ এই মন্দিরে দেখা যায় সেগুলি হলো গণেশ, দূর্গা, ভদ্রকালী,নবগ্রহ, পার্বতী,
বিষ্ণু, লক্ষ্মী,শিবলিঙ্গ ও নন্দী। ভদ্রকালীর ভৈরব রূপে বীরভদ্র এখানে বিরাজমান। মন্দির কমপ্লেক্সের ভিতরে মোট পাঁচটি শিবলিঙ্গ দেখা যায়।এর মধ্যে মূল মন্দিরে তিনটি ও মন্দির প্রাঙ্গণে আরো দুটি শিবলিঙ্গ আছে। মন্দিরে যে তিনটি শিবলিঙ্গ আছে তাঁদের নাম হলো পাপনাশেশ্বর, রামলিঙ্গম ও হনুমান লিঙ্গম।রঙ্গমণ্ডপের কেন্দ্রস্থলে বারোটি স্তম্ভে শিব ও পার্বতীর বিবাহ উপলক্ষে একটি নাচের দৃশ্য দেখা যায়। স্বর্গের অপ্সরা রম্ভা নৃত্য করছেন,শিব ও পার্বতী তা অবলোকন করছেন,সূর্যদেব বাঁশী বাজাচ্ছেন,চন্দ্রদেব তাম্বুরা, ব্রহ্মা ও নন্দী ড্রাম বাজাচ্ছেন ও ঋতেশ্বর(শিবের অবতার) হারমোনিয়াম। নৃত্যগুরু তিন পা ওয়ালা ভৃঙ্গী যার চোখ ও দাঁত গুলো ঘোড়ার মতো সেই নাচে পা মেলাচ্ছেন। এছাড়া এখানে এক একটি স্তম্ভে দত্তাত্রেয়,বরাহ অবতার, ঋষি সনাতনেশ্বর, ভিক্ষাাটানা শিব, আদর্শ পুরুষ বাস্তুপুরুষ ও আদর্শ নারী পদ্মিনীর মূর্তি আছে।
এই প্রসঙ্গে ভৃঙ্গীর তিনটি পা হবার কাহিনী পাঠকদের জানাতে চাই। শিবের অনুচর ভৃঙ্গী ছিলেন বড়ই শিবভক্ত।শিবই ব্রহ্ম।তিনি শক্তির(ব্রহ্মের স্ত্রীরূপ) গুরুত্ব স্বীকার করতেন না। ব্রহ্মের রূপ যে অর্ধনারীশ্বর তা তিনি মানতেন না।ভৃঙ্গী সাপের রূপ ধারণ করে অর্ধনারীশ্বর রূপ থেকে দেবী শক্তি বা মহামায়াকে পৃথক করার চেষ্টা করেছিলেন।এইজন্য দেবী শক্তি ক্রোধে তাঁর দেহ রক্ত ও মাংস শূন্য করে কঙ্কালে পরিণত করেন। শিব ঐসময় তাকে একটি অতিরিক্ত পা বরদান করে তাকে দাঁড়াবার শক্তি দেন।তারপর ভৃঙ্গী সাধনার দ্বারা দেবীকে সন্তুষ্ট করে আবার পূর্বের রূপ ফিরে পান।এর কারণ রক্ত ও মাংস মায়ের (শক্তি, প্রকৃতিদেবী) কাছ থেকে আসে ও অস্থি পুরুষ (পিতা) থেকে প্রাপ্ত হয়।শিব ভৃঙ্গীকে তাঁর অর্ধনারীশ্বর রূপ দেখিয়ে তাকে চৈতন্য প্রদান করেন।এক নম্বর বাদামী গুহাতে এইরকম কঙ্কালসার ভৃঙ্গী ও অর্ধনারীশ্বর মূর্তি আছে।
এখানে একটি স্তম্ভে শিবের ভিক্ষাটানা মূর্তিতে ভিক্ষা করতে দেখা যায়।শিব এখানে ভিক্ষুকের বেশে দেবী অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করছেন। দেবী অন্নপূর্ণা আলুথালু বেশে শাড়ি স্খলিত অবস্থায় সব কাজ ফেলে রেখে শিবকে ভিক্ষা দিতে উদ্যত। তাঁর প্রতি অন্নপূর্ণার কতখানি ভক্তিশ্রদ্ধা তা পরীক্ষা করার জন্য শিব এই রূপ ধারণ করে ছিলেন।
এই মণ্ডপের দক্ষিণ পূর্ব দিকে একটি স্তম্ভ আছে যেটি ভূমিতে স্পর্শ করে নেই।এটির উচ্চতা আট ফুট।একে অন্তরীক্ষ স্তম্ভ বা Hanging Pillar বলা হয়।বীরভদ্র মন্দিরের অজানা গোপন কারিগরি বিদ্যা এই স্তম্ভটির মধ্যে লুকিয়ে আছে। ইংরেজ আমলে 1902 সালে হ্যামিল্টন নামে একজন বৃটিশ ইঞ্জিনিয়ার এর রহস্য ভেদ করতে চেয়ে স্তম্ভের তলায় লোহার রড্ ঢুকিয়ে একে উপরে তুলতে চেয়েছিলেন।এর ফলে সমস্ত মন্দিরে একটা ঘড় ঘড় আওয়াজ হতে থাকে এবং এই স্তম্ভটি সহ অন্যান্য স্তম্ভ গুলো নড়তে শুরু করে এবং সমগ্র মন্দিরটি দুলতে থাকে। প্রাণের ভয়ে সেই ইঞ্জিনিয়ার পালিয়ে যায় এবং তারপর থেকে এই মন্দিরে আর কোন পরীক্ষা করা হয় নি। কিন্তু এই ঘটনার পরে এই স্তম্ভটি মেঝেতে উত্তর পশ্চিম কোনায় মাত্র একটি বিন্দু দিয়ে স্পর্শ করে আছে বলে মনে হয়। অন্যান্য স্তম্ভগুলিরও সামান্য কিছু চ্যুতি লক্ষ্য করা যায়।আমি দেখলাম লোকজন স্তম্ভটির তলা দিয়ে কাপড় ও খবরের কাগজ চালিয়ে দেখছে, কিন্তু কাগজ তলা দিয়ে যাচ্ছে না,ঐ একটি ঠেকে যাওয়া বিন্দূতে আটকে যাচ্ছে। সমস্ত মন্দিরের ভারকেন্দ্র যে এই ঝুলন্ত স্তম্ভটির উপর স্থাপিত তা ঐ সাহেবের করা পরীক্ষায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।এই মণ্ডপ নির্মাণে কি কারিগরি বিদ্যা প্রয়োগ করা হয়েছে তার রহস্য আজও ভেদ করা যায় নি।
নৃত্যমণ্ডপে দেখা যাচ্ছে সকলেই নৃত্য করছেন। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৃত্য করতে করতে স্তম্ভগুলির একটি যেন ভূমি থেকে নিজেকে তুলে নিয়েছে বলে মনে হয়।এইবার উপরের দিকে তাকিয়ে নৃত্যমণ্ডপের শিলিংটি দেখলাম।এটি বারোটি পাথর দিয়ে তৈরি একশত পাপড়ি বিশিষ্ট পদ্মের আকৃতির।একে বলে শতপত্রকমল।
গর্ভগৃহ, অন্তরাল ও নৃত্য মণ্ডপ ও অন্যান্য গর্ভগৃহে শিলিং সুন্দর সুন্দর ফ্রেস্কোর চিত্রাবলী দ্বারা শোভিত। গর্ভগৃহের শিলিং এ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বীরুপান্না ও বীরান্নার ফ্রেস্কো চিত্র রয়েছে। তাঁরা ও তাঁদের বংশধরেরা ভগবান শিবের কাছ থেকে বিভূতি গ্রহণ করছেন। দুজন বালকের পিছনে মন্দিরের চিত্রকর হাসপান্না ও জাকান্না দাঁড়িয়ে আছেন।
গর্ভগৃহের সামনে অর্ধমণ্ডপের শিলিং এর ফ্রেস্কোচিত্রটি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়(23 ফুট লম্বা ও 13 ফুট চওড়া)। এতে শিবের চোদ্দো জন অবতারের মূর্তি চিত্রিত আছে।যেমন যোগদক্ষিণামূর্তি,চণ্ডেম অনুগ্রহ মূর্তি, ভিক্ষাটানা,হরিহর, অর্ধনারীশ্বর, কল্যাণ সুন্দর, ত্রিপুরান্তক,নটরাজ, গৌরীপ্রসাদাকা, লিঙ্গোদভব ও অন্ধকাসুরসংহারা । এছাড়া কিরাতবেশি শিব ও অর্জুনের যুদ্ধ,শিব কর্তৃক অজ্ঞতার দৈত্য আপাসমারাকে দমন করা, একটি চিত্রে বালক মার্কণ্ডেয় ও শিবলিঙ্গ থেকে নির্গত মহদেবকে দেখা যায়। এছাড়া অন্তরালের অন্ধকার অংশে পার্বতীর একটি সুন্দর চিত্র রয়েছে।
নৃত্যমণ্ডপের ফ্রেস্কোচিত্রগুলি রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের ঘটনা আশ্রিত।ফ্রেস্কোর কাজ বিজয়নগর চিত্রকলার উৎকর্ষতার সাক্ষ্য দেয়।চূণের পলস্তারার উপরে এগুলো প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে আঁকা।রঙ আহরণ করা হোত ভেষজ ও ধাতব উপাদান থেকে।এইসব রঙের সঙ্গে চূণজল মেশানো হোত। পটভূমিটা রাখা হোত লাল।
এইবার আমি Hanging Pillar থেকে সিঁড়ি দিয়ে নীচে প্রাঙ্গনে নেমে মন্দিরের পিছন দিকে চলে এলাম।এখান থেকে ডানদিকে ঘুরে শেষ অবধি হেঁটে গিয়ে আবার ডান দিকে ঘুরে বিশালাকার বারো ফুট উঁচু শিবলিঙ্গের দেখা পেলাম যেটি ভিতরের প্রাঙ্গনের দক্ষিণ পূর্ব কোনে অবস্থিত।এটি
শিবলিঙ্গটি বিশালাকার এক নাগের তিনটি কুণ্ডলীর উপর স্থাপিত এবং সেই নাগ তার সাতটি প্রশস্ত ফণা বিস্তার করে লিঙ্গের মাথায় ছাতা ধরে আছে। এইরূপ লিঙ্গকে বলে নাগলিঙ্গ।এটি এই মন্দিরের চতুর্থ শিবলিঙ্গ। বিশ্বে আর কোথাও এতবড় নাগলিঙ্গ নেই। মন্দিরের অন্য সব ভাস্কর্য ও মূর্তি মানুষের দেহানুপাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নাগলিঙ্গই বা এত বিশাল কেন?নাগলিঙ্গটির সৃষ্টির পিছনে এক মনোজ্ঞ কাহিনী আছে। কথিত আছে এই মন্দিরের ভাস্কর মধ্যাহ্নকালে ক্ষুধার্ত হয়ে রসুইঘরে এসে তার মায়ের কাছে খাবার চায়। কিন্তু সেই সময় মা জানান যে তখনও আহার্য প্রস্তুত হয় নি, আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। সেই ভাস্কর বসে থেকে সময় নষ্ট না করে রসুইঘরের সামনে পড়ে থাকা একটি বৃহৎ পাথরের খণ্ডটিকে নাগলিঙ্গের রূপ দিতে শুরু করলেন এবং আহার্য তৈরি হবার মধ্যে তা সম্পূর্ণ করে ফেললেন।এইরূপ কম সময়ের মধ্যে এত সুন্দর ও বিশাল নাগলিঙ্গ ভাস্করেরা কিভাবে তৈরি করলেন তা তাদের মা রসুইঘর থেকে বের হয়ে বিস্ফারিত নেত্রে অবলোকন করতে লাগলেন।বলা হয় তাঁর সেই নজরে বৃহৎ প্রস্তখণ্ডটিতে তিনটি ফাটল ধরে যায়। এত অল্প সময়ের মধ্যে যারা কোনো আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া পাথর নিয়ে এইরকম ছেলেখেলা করতে পারে তাঁরা কারা ছিলেন? এদিকে আধুনিক পণ্ডিতের দল বলে থাকেন আগেকার মানুষ ছিল অসভ্য ও অনুন্নত,যা কিছু বর্তমান উন্নতি হয়েছে সবই আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে। তাহলে তখন কোন বিজ্ঞান ছিল?কাদের বিজ্ঞান ছিল? মিশরের পিরামিডেও কি আমরা পাথর নিয়ে এইরকম ছেলেখেলা দেখতে পাই না?
নাগলিঙ্গের পিছনে লাগোয়া একটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে একখণ্ড পাথর কেটে তৈরি করা বিশাল এক গণেশ মূর্তি আছে যার উচ্চতা ছ'ফুট। এখানে নীচে নাগলিঙ্গের বেদীতে সপ্তমাতৃকার মূর্তি খোদাই করা আছে,তাতে হলুদ লেপা ও সিঁদুরের টিপ দেওয়া আছে।অন্ধকাসুর বধের সময় শিব এই দেবীদের সাহায্য নিয়েছিলেন।
নাগলিঙ্গের পিছনে উপরে পাথরের গায়ে শ্রীকলাহস্তী ভাস্কর্য দেখা যায়। এখানে শিবের তিনজন ভক্ত যথা মাকড়সা (শ্রী),নাগ(কাল) ও হস্তীকে শিব লিঙ্গের পূজো করতে দেখা যায়।একে বলা হয় শ্রীকলাহস্তী ভাস্কর্য।
নাগলিঙ্গ অতিক্রম করে তার পিছনে উঁচু ভিতের উপর একটি ছাদবিহীন অসমাপ্ত মণ্ডপ দেখতে পাওয়া যায়,যার স্তম্ভগুলিই (আটত্রিশটি স্তম্ভ) কেবল নির্মাণ করা হয়েছে।এটির নাম কল্যাণমণ্ডপ বা বিবাহ মণ্ডপ।ভিতের গায়ে হাঁসের সারি দেখতে পাওয়া যায় যারা ঠোঁটে করে পদ্মফুল নিয়ে যাচ্ছে। এই মণ্ডপের নির্মাণের অসমাপ্তির পিছনে একটি কারণ আছে।রাজা অচ্যুতদেবরায় এই মন্দিরের নির্মাতা বিরুপান্নাকে রাজকোষের অর্থ তছরূপের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।কারণ বিরুপান্না রাজার অনুপস্থিতিতে রাজার অজ্ঞাতে মন্দির নির্মাণে রাজকোষের প্রভূত অর্থ ব্যয় করে ফেলেছিলেন। রাজা পরবর্তী কালে এই খবর জানতে পেরে মন্দির নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন এবং ক্রুদ্ধ হয়ে বিরুপান্নার চোখ উপড়ে নেওয়ার আদেশ দেন। এতে সৎ এবং রাজানুগত বিরুপান্না অত্যন্ত অভিমানে নিজেই নিজের চোখ উপড়ে ফেলে দেওয়ালে নিক্ষেপ করেন। সেইজন্য আজও পশ্চিমদিকে ভিতরের সীমানা প্রাচীরের গায়ে দুটি রক্তচিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।বলা হয় এগুলি বিরুপান্নার রক্তাক্ত চোখ নিক্ষেপের চিহ্ন। অনেকেই বলেন এই জায়গার নামকরণের পিছনে এই ঘটনা জড়িত।লেপাক্ষী শব্দের অর্থ হলো 'উপড়ে নেওয়া চোখের গ্রাম' বা (Village of the plucked eyes).
কল্যাণ মণ্ডপটিতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে স্তম্ভের সারি দেখতে পাওয়া যায়। প্রবেশপথের দুপাশে রাজর্ষি বিশ্বামিত্র ও ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ শিব ও পার্বতীর বিবাহে অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের দুপাশে অন্যান্য দশজন মুনি ঋষিরা কমণ্ডুল হাতে দণ্ডায়মান। মণ্ডপের স্তম্ভগুলি সব বৃত্তাকারে বিন্যস্ত। মন্দিরের বাৎসরিক উৎসবের সময়ে শিব ও পার্বতীর বিবাহ উদযাপন করার জন্য এই মণ্ডপ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।স্তম্ভের ভাস্কর্য গুলো দেখায় যে শিব পার্বতীর বিবাহ উৎসবে যোগদান করতে স্বর্গের অনেক দেবদেবী ও মুনি ঋষিরা যোগদান করতে এসেছেন।যেমন দেবেন্দ্র ইন্দ্র,বশিষ্ঠ, বৃহস্পতি,বিশ্বামিত্র,পবনদেব,যম,বরুণ,কুবের,মেনকা ইত্যাদি।এছাড়া শিব ও পার্বতী হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং গিরিরাজ হিমালয় তাঁর কন্যা পার্বতীকে সম্প্রদান করছেন।দেখা যায় চতুর্মুখ ব্রহ্মা,সদাশিব (শিবের অবতার,পাঁচটি মুখ ও দশটি হাত) দত্তাত্রেয় মুনি (শিবের অবতার), গন্ধর্ব,নন্দী ইত্যাদি সকলেই অতিথি হিসেবে উপস্থিত। বিভিন্ন দেবতাদের সনাক্ত করতে হয় তাঁদের বাহন দেখে। প্রত্যেক দেবমূর্তির নীচে বেদীতে তাঁদের বাহনের মূর্তি উৎকীর্ণ করা আছে।যেমন ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত, অগ্নির মেষ, পবনদেবের হরিণ,যমের মহিষ, বরুণের কচ্ছপ, কুবেরের হাতি ইত্যাদি।
এই অসমাপ্ত মণ্ডপে ৩৮ টি গ্রাণাইট পাথরের স্তম্ভ আছে। যদি মণ্ডপটি সম্পূর্ণ হয়ে যেত তবে এক অপরূপ স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হতে পারতো।
কল্যাণ মণ্ডপের পরে মূলমণ্ডপের পিছনে করিডোর সমেত একটি খোলা জায়গা আছে যেটি পিছনের দেওয়ালকে ঘিরে রেখেছে। এই স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো।
কল্যাণ মণ্ডপটির পিছনে মন্দির প্রাঙ্গণে পাথরের উপর একটি বড় আড়াই ফুট লম্বা ডান পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়, যেটি সর্বদা জলে সিক্ত থাকে।জল মুছে শুকিয়ে ফেললেও কিছুক্ষণ পরে তলা থেকে জল এসে আবার পায়ের ছাপটিকে ভিজিয়ে দেয়।গাইড জানালেন যে এটি সীতামাতার দক্ষিণ পদচিহ্ন।পদচিহ্নটির যা আকার তাতে পদচিহ্নের মালিকের উচ্চতা চব্বিশ ফুট হওয়া উচিত। উনি জানালেন যে ত্রেতাযুগে মানুষের উচ্চতা ছিল চৌদ্দ হাত।রাবণ যখন সীতাকে অপহরণ করে পুষ্পক রথে করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন জটায়ুপাখী রাবণকে এই কূর্মশীলায় বাধাদান করেছিলেন এবং তার সঙ্গে প্রবল যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু রাবণ তার একটি ডানা কেটে ফেলাতে তিনি এই পাহাড়ের উপরে ভূপাতিত হন।যতক্ষণ না রামকে জটায়ু তাঁর অপহরণের সংবাদ বলেন ততক্ষণ তাঁকে জীবিত থাকার বরদান সীতাদেবী দিয়েছিলেন।সেই সময় সীতাদেবীর দক্ষিণ চরণচিহ্ন এখানে পড়ে এবং বাম চরণচিহ্ন তামিলনাড়ুর পানমুণ্ডা পাহাড়ের উপর পড়ে। শ্রীরাম ও লক্ষণ সীতার সন্ধান করতে করতে এখানে এসে পৌঁছলে ভূপাতিত আহত জটায়ু পাখিকে দেখে রামচন্দ্র বলেন "লে পক্ষী", তেলেগু ভাষায় যার অর্থ "উঠ পক্ষী"।অনেকের মতে সেই থেকে এই জায়গার নাম হয় লেপাক্ষী।
সীতার পদচিহ্নের কাছেই ছত্রিশটি স্তম্ভবিশিষ্ট একটি মণ্ডপ দেখতে পাওয়া যায়। এটির নাম লতামণ্ডপ। স্তম্ভগুলির প্রতিটি তলে সুন্দর নক্সা কাটা রয়েছে,যার অনুকরণে এখানকার বিখ্যাত লেপাক্ষী শাড়ির পাড়ের নক্সার ডিজাইন করা হয়। ছত্রিশটি স্তম্ভের চারটি করে তলে মোট একশো চুয়াল্লিশটি নক্সা দেখা যায়।আজও ফ্যাশান ডিজাইনাররা এই মন্দির দর্শন করেন তাঁদের তৈরি পোশাকের নকশা নেওয়ার জন্যে।
সীতার পায়ের ছাপের কাছে কল্যাণ মণ্ডপটির পিছনে একটি ছোট মণ্ডপের ভিতর একটি শিব লিঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়।এই শিবলিঙ্গটির নাম তাণ্ডবেশ্বর।এটি এই মন্দিরের পঞ্চম শিবলিঙ্গ।এটি প্রতিষ্ঠা করেন চোলরাজ মাধববর্মা।
মন্দির প্রাঙ্গনের পূর্ব দিকে একটি ছোট গর্ভগৃহে একখণ্ড পাথর থেকে তৈরি শিব ও পার্বতীর যুগ্ম মূর্তি আছে। এখানেই অপর একটি গর্ভগৃহে বিষ্ণুমূর্তি আছে।
মন্দিরের উত্তর ধারের কোণে দুটি স্তম্ভযুক্ত মণ্ডপ আছে।এই দুটির একটি 'হাবান্ কুণ্ড' ও অপরটি 'পঞ্চাঙ্গ শ্রাবণ'।হাবান কুণ্ডে শিবরাত্রির উৎসবে যজ্ঞ সম্পন্ন হয় ও পঞ্চাঙ্গ শ্রাবণে জনগণ শুভ তিথি সম্পর্কে তথ্য পেয়ে থাকে ও জ্যোতিষীকথা শ্রবণ করে।
বীরভদ্র মন্দির থেকে চারশো মিটার পূর্বে একটি সুরম্য উদ্যানের মাঝখানে খোলা আকাশের নিচে বীরভদ্র মন্দিরের নাগলিঙ্গের নন্দী বা বাসবান্না বিরাজ করছেন।নন্দীর উচ্চতা পনেরো ফুট এবং দৈর্ঘ্যে সাতাশ ফুট।এটি একখণ্ড পাথর কেটে তৈরি এবং ভারতের সর্ববৃহৎ নন্দী। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে মহীশুরের চামুণ্ডি পাহাড়ের নন্দী ও হ্যলোবিদের হোয়াসলেশ্বর মহাদেবের নন্দী।নন্দীর মুখ নাগলিঙ্গের দিকে।অন্য সকল মন্দিরে আমরা দেখি নন্দী শিবলিঙ্গের দিকে আনত মুখে উপবিষ্ট। কিন্তু এখানে আমরা দেখি নন্দী তার মুখ একটু উঠিয়ে নাগলিঙ্গের দিকে তাকিয়ে আছে।নন্দীর গা আশ্চর্য রকমের মশৃণ ও গলার মালা ও ঘন্টা সবই নিখুঁত।মনোরম উদ্যানের পাশে একটি ছোট সুন্দর জলাশয় আছে এবং পাশে অপরদিকে অনুচ্চ পাহাড়ের বোল্ডারের উপর জটায়ু পাখির মূর্তি আছে।
মনে প্রশ্ন কি জাগে না যে এই মন্দিরের বিশাল পায়ের ছাপ,নাগলিঙ্গ ও নন্দী এত বড়ো কেন? ঐতিহাসিকরা বলেন এই মন্দির বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আমলে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষ অন্য কথা বলেন। তাঁরা বলেন বিজয়নগররাজ এই মন্দির সংস্কার ও পুণর্গঠন করেছিলেন, কিন্তু তার আগেও এখানে মন্দির ছিল। বিধ্বংসী এক বন্যায় এই মন্দির ভেঙে পড়ে, কিন্তু বীরভদ্র মন্দিরের গর্ভগৃহ, যেটি অগস্ত্য মুনি নির্মাণ করেছিলেন, নাগলিঙ্গ, পায়ের ছাপ ও নন্দী থেকে যায়। মন্দিরের পূর্ব দিকে বর্তমান প্রাচীরের বাইরে চারটি মণ্ডপ দখল হয়ে গিয়েছে। বিজয়নগররাজ পরবর্তী কালে যখন মন্দিরের পুনর্গঠন করেন তখন নন্দী মূর্তি বাইরে রয়ে গেল। তাহলে ঐ বৃহদাকার নন্দী কাদের উপাসনার কাজে আসতো?শৈব উপাসকদের বিশ্বাস নন্দীর দুটি শিং এর অগ্রভাগে বাঁ হাতের দুটি আঙ্গুলের অগ্রভাগ স্থাপন করে যে গোলাকার opening বা window সৃষ্টি হয় তার মধ্যে দিয়ে শিব লিঙ্গের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা জানাতে হয়।লেপাক্ষীর এই নন্দীর দুটি শিং এর মধ্যে দৃষ্টিপাত করলে বীরভদ্র মন্দিরের নাগলিঙ্গটি নজরে আসে। এইভাবে নন্দীর শিং এর কাছে যারা চোখ নিয়ে যেতে পারতো তাঁরা কি দৈত্য ছিলেন? শুধু যে আমাদের প্রাচীন গ্রন্থেই দৈত্যদের কাহিনী রয়েছে তাই নয়, পৃথিবীর সব প্রাচীন ধর্মের মহাকাব্যে দৈত্যদের বর্ণনা আছে,যেমন প্রাচীন গ্রীক, রোমান, ইহুদী,মায়া ইত্যাদি। চোখে একরাশ বিস্ময় ও মনে পর্বত প্রমাণ জিজ্ঞাসা নিয়ে সন্ধ্যায় বাস ধরে ব্যাঙ্গালোরে আমার হোটেলে ফিরে এলাম।
সমাপ্ত
বীরভদ্রস্বামী মন্দির;লেপাক্ষী,
জেলা-অনন্তপুর, অন্ধ্রপ্রদেশ।
দেশের পর্যটন মানচিত্রে অন্ধ্রপ্রদেশ একটি উপেক্ষিত রাজ্য বলা চলে।যেসব পর্যটক প্রাচীন স্থাপত্য, শিল্পকলা, ঐতিহ্য ও ইতিহাস বিষয়ে উৎসাহী, তাঁরা ছাড়া এই রাজ্যে যে প্রাচীন ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যকলা সমৃদ্ধ স্থানগুলো আছে তাদের সম্বন্ধে আর বিশেষ কেউ ওয়াকিবহাল নন।কারণ তাদের হায়দ্রাবাদ, ভাইজাক,আরাকু বা তিরুপতির মতো ব্র্যান্ড ভ্যালু নেই, নেই উপভোগ করার মতো চোখজুড়ানো পাহাড়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য,উচ্ছল সমুদ্র ও ফূর্তি করার মতো ক্যাসিনো বা নাইট ক্লাব।
যাই হোক,যদিও লেপাক্ষী অন্ধ্রপ্রদেশে তবু ব্যাঙ্গালোর থেকে একদিনের একটি ছোট ট্যুরে লেপাক্ষী দর্শন সাঙ্গ করে ফেলা যায়।কারণ এই স্থান অন্ধ্রপ্রদেশে হলেও তা কর্ণাটক ঘেঁষে অর্থাৎ দুই রাজ্যের সীমান্তে,ব্যাঙ্গালোর থেকে একশো চল্লিশ কিলোমিটার দূরে উত্তরে। পক্ষান্তরে হায়দ্রাবাদ থেকে লেপাক্ষীর দূরত্ব 480 km.
ব্যাঙ্গালোর থেকে এখানে আসার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হলো সড়কপথ। দুটি সড়কপথ আছে এখানে আসার। একটি পথ হোল ব্যাঙ্গালোর হায়দ্রাবাদ জাতীয় সড়ক (NH- 7, বর্তমানে NH-44), ভায়া হেব্বাল,য়েলাহান্কা, দেভানাহাল্লী,চিক্কাবাল্লাপুর ও বাগেপল্লী, তারপর লেপাক্ষী।কোদিকোণ্ডা চেকপোস্ট থেকে বাঁ দিকে 16 km.গেলে লেপাক্ষী।
আর একটা পথ হোল ভায়া হেব্বাল, য়েলাহান্কা তারপর রাজ্যসড়ক ধরে দদ্দাবাল্লাপুর,গৌরীবিদানুর ও হিন্দুপুর হয়ে লেপাক্ষী।
তবে বাসে এলে যথাক্রমে বাগেপল্লী ও হিন্দুপু্রে নেমে আলাদা লোকাল বাস ধরে লেপাক্ষী পৌঁছতে হয়। আমার এখানে আসা ব্যাঙ্গালোর থেকে solo traveler হিসেবে বাসে হিন্দুপুর হয়ে। ব্যাঙ্গালোর থেকে হিন্দুপুর 125 km. এবং হিন্দুপুর থেকে লেপাক্ষী 15 km.
তবে নিজের গাড়িতে বা ভাড়া গাড়িতে এলে ভায়া NH 7 ধরে আসা ভালো,রাস্তা বড়ই সুন্দর ও পথের দূরত্বও কিছু কম।
বিমানযোগে এখানে আসার উপায় আছে। নিকটবর্তী বিমানবন্দর হোল পুর্তাপুর্তিতে শ্রীসত্যসাই বিমানবন্দর যেখান থেকে লেপাক্ষীর দূরত্ব 43 km.ব্যঙ্গালোর থেকে এক ঘন্টার উড়ান।রেলপথে ব্যাঙ্গালোর থেকেও আসা যায়। নিকটবর্তী রেলস্টেশন হোল হিন্দুপুর। হিন্দুপুর হলো ব্যাঙ্গালোর গুন্টাকল শাখা লাইনের একটি স্টেশন।ট্রেনে এটুকু রাস্তা আসতে তিন ঘন্টা লাগিয়ে দেয়।
লেপাক্ষীর মন্দিরটি বীরভদ্রস্বামীর মন্দির নামে পরিচিত। মন্দিরটি বাসস্ট্যান্ড থেকে চারশো মিটার দূরে লেপাক্ষী গ্রামের দক্ষিণে একটি অনুচ্চ কূর্ম আকৃতির (Tortoise shaped) গ্রাণাইট পাথরের পাহাড়ের উপর অবস্থিত। মন্দিরের এলাকা পাঁচ একর। মন্দির নির্মাণের সময় কোন ভিত পাথরের উপর খোঁড়া হয় নি। পাহাড়টি ভেঙে তার থেকে পাথরের স্ল্যাব ও ব্লক আলাদা করা হয়েছে, কোনো পাথরের খাদান থেকে পাথর খুঁড়ে বের করা হয়নি বা দূরবর্তী কোন স্থান থেকে পাথর আনা হয় নি। বড়ো বড়ো পাথরের স্ল্যাব ইন্টারলক্ করে বাইরের প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। বাইরের প্রাচীরে নানা রকমের লিপি খোদাই করা আছে।
সমগ্র মন্দির প্রাঙ্গণটি দুটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। বাইরের প্রাচীরে তিনটি গেট আছে। উত্তরের প্রবেশ পথ বা গোপুরমটি সর্বদা ব্যবহার করা হয় এবং এটি প্রতি স্তরে মূর্তি দ্বারা শোভিত। মন্দির প্রাঙ্গণে গোপুরম দিয়ে ঢুকে সামনে উঁচু সোনার মত রঙের দীপস্তম্ভ ও বালিপীঠ আছে। বাঁ দিকে ঢুকে নিরেট গ্রাণাইট পাথরের স্তম্ভযুক্ত লম্বা ও চওড়া বারান্দা দেখা যায়।
এই মন্দির কমপ্লেক্সের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মন্দির হলো বীরভদ্রস্বামীর মন্দির।বীরভদ্রের উৎপত্তি শিবের জটা থেকে। মহাদেব দক্ষযজ্ঞস্থলে
তাঁর পত্নী সতীর দেহ ত্যাগের খবর পেয়ে ক্রোধে অন্ধ হয়ে তার একটি জটা ছিঁড়ে নিক্ষেপ করলে বীরভদ্র নামে এক ভয়ংকর দেবতার জন্ম হয়। তিনি শিবের অনুমতিতে দক্ষযজ্ঞস্থলে ধ্বংস লীলা চালিয়ে দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করেন ও প্রজাপতি দক্ষের শিরচ্ছেদ করেন। শিবের দেহ থেকে উৎপত্তি বলে এনাকে শিবের এক অবতার বলে মনে করা হয়। দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করার পরে নারায়ণ বীরভদ্রকে মঙ্গলগ্রহ রূপে মহাকাশে স্থাপন করেন।
বীরভদ্র মন্দিরটি আদিতে নির্মাণ করেন মহামুনি অগস্ত্য।বীরভদ্র মন্দিরটির গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে একটি প্রকোষ্ঠে উনি বসবাস ও সাধনা করতেন।স্কন্দপুরাণ অনুসারে এই মন্দির ভগবান শিবের একটি দিব্যক্ষেত্র হিসেবে পরিগণিত হয়।সেই ত্রেতা যুগ থেকে এই মন্দির বহুবার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, তবে প্রাচীন কিছু জিনিস এখনো এখানে টিকে আছে যা নবীন স্থাপত্যের সঙ্গে খাপ খায় না।এর ব্যাখ্যা আমি লেখার পরবর্তী অংশে দেব।
এখন আমরা যে রূপে এই মন্দিরকে দেখতে পাই তা নির্মিত হয় বিজয়নগর সাম্রাটের রাজত্ব কালে এবং সম্পুর্ন বিজয়নগর স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। মন্দিরের নির্মাণকাল 1522-1538 সাল।সেই সময়ে বিজয়নগর সম্রাট ছিলেন রাজা অচ্যুতদেবরায়। তাঁর অধীনস্থ নিকটবর্তী পেণুকোণ্ডার শাসন কর্তা দুই ভাই বীরুপান্না ও বীরান্না এই মন্দির নির্মাণ করেন।
মূল মন্দিরটি তিনটি ভাগে বিভক্ত,যথা মুখমণ্ডপ বা নৃত্যমণ্ডপ(Dancing Hall) বা রঙ্গমণ্ডপ (Assembly Hall), অর্ধমণ্ডপ বা অন্তরাল (Antechamber) এবং গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহের প্রবেশপথের দুপাশে গঙ্গা ও যমুনার মূর্তি দেখা যায়। গর্ভগৃহের অভ্যন্তরে মানুষের মত প্রমাণ সাইজের ভগবান বীরভদ্রের মূর্তি আছে। ওনার মূর্তি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও কণ্ঠে নরকরোটির মালা শোভা পাচ্ছে। এখানে অগস্ত্য মুনির প্রকোষ্ঠের কথা আগেই বলেছি। তিনি এখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠার সময় বসবাস করতেন।বীরভদ্র ছাড়া আরও যে সমস্ত দেবতার গর্ভগৃহ এই মন্দিরে দেখা যায় সেগুলি হলো গণেশ, দূর্গা, ভদ্রকালী,নবগ্রহ, পার্বতী,
বিষ্ণু, লক্ষ্মী,শিবলিঙ্গ ও নন্দী। ভদ্রকালীর ভৈরব রূপে বীরভদ্র এখানে বিরাজমান। মন্দির কমপ্লেক্সের ভিতরে মোট পাঁচটি শিবলিঙ্গ দেখা যায়।এর মধ্যে মূল মন্দিরে তিনটি ও মন্দির প্রাঙ্গণে আরো দুটি শিবলিঙ্গ আছে। মন্দিরে যে তিনটি শিবলিঙ্গ আছে তাঁদের নাম হলো পাপনাশেশ্বর, রামলিঙ্গম ও হনুমান লিঙ্গম।রঙ্গমণ্ডপের কেন্দ্রস্থলে বারোটি স্তম্ভে শিব ও পার্বতীর বিবাহ উপলক্ষে একটি নাচের দৃশ্য দেখা যায়। স্বর্গের অপ্সরা রম্ভা নৃত্য করছেন,শিব ও পার্বতী তা অবলোকন করছেন,সূর্যদেব বাঁশী বাজাচ্ছেন,চন্দ্রদেব তাম্বুরা, ব্রহ্মা ও নন্দী ড্রাম বাজাচ্ছেন ও ঋতেশ্বর(শিবের অবতার) হারমোনিয়াম। নৃত্যগুরু তিন পা ওয়ালা ভৃঙ্গী যার চোখ ও দাঁত গুলো ঘোড়ার মতো সেই নাচে পা মেলাচ্ছেন। এছাড়া এখানে এক একটি স্তম্ভে দত্তাত্রেয়,বরাহ অবতার, ঋষি সনাতনেশ্বর, ভিক্ষাাটানা শিব, আদর্শ পুরুষ বাস্তুপুরুষ ও আদর্শ নারী পদ্মিনীর মূর্তি আছে।
এই প্রসঙ্গে ভৃঙ্গীর তিনটি পা হবার কাহিনী পাঠকদের জানাতে চাই। শিবের অনুচর ভৃঙ্গী ছিলেন বড়ই শিবভক্ত।শিবই ব্রহ্ম।তিনি শক্তির(ব্রহ্মের স্ত্রীরূপ) গুরুত্ব স্বীকার করতেন না। ব্রহ্মের রূপ যে অর্ধনারীশ্বর তা তিনি মানতেন না।ভৃঙ্গী সাপের রূপ ধারণ করে অর্ধনারীশ্বর রূপ থেকে দেবী শক্তি বা মহামায়াকে পৃথক করার চেষ্টা করেছিলেন।এইজন্য দেবী শক্তি ক্রোধে তাঁর দেহ রক্ত ও মাংস শূন্য করে কঙ্কালে পরিণত করেন। শিব ঐসময় তাকে একটি অতিরিক্ত পা বরদান করে তাকে দাঁড়াবার শক্তি দেন।তারপর ভৃঙ্গী সাধনার দ্বারা দেবীকে সন্তুষ্ট করে আবার পূর্বের রূপ ফিরে পান।এর কারণ রক্ত ও মাংস মায়ের (শক্তি, প্রকৃতিদেবী) কাছ থেকে আসে ও অস্থি পুরুষ (পিতা) থেকে প্রাপ্ত হয়।শিব ভৃঙ্গীকে তাঁর অর্ধনারীশ্বর রূপ দেখিয়ে তাকে চৈতন্য প্রদান করেন।এক নম্বর বাদামী গুহাতে এইরকম কঙ্কালসার ভৃঙ্গী ও অর্ধনারীশ্বর মূর্তি আছে।
এখানে একটি স্তম্ভে শিবের ভিক্ষাটানা মূর্তিতে ভিক্ষা করতে দেখা যায়।শিব এখানে ভিক্ষুকের বেশে দেবী অন্নপূর্ণার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করছেন। দেবী অন্নপূর্ণা আলুথালু বেশে শাড়ি স্খলিত অবস্থায় সব কাজ ফেলে রেখে শিবকে ভিক্ষা দিতে উদ্যত। তাঁর প্রতি অন্নপূর্ণার কতখানি ভক্তিশ্রদ্ধা তা পরীক্ষা করার জন্য শিব এই রূপ ধারণ করে ছিলেন।
এই মণ্ডপের দক্ষিণ পূর্ব দিকে একটি স্তম্ভ আছে যেটি ভূমিতে স্পর্শ করে নেই।এটির উচ্চতা আট ফুট।একে অন্তরীক্ষ স্তম্ভ বা Hanging Pillar বলা হয়।বীরভদ্র মন্দিরের অজানা গোপন কারিগরি বিদ্যা এই স্তম্ভটির মধ্যে লুকিয়ে আছে। ইংরেজ আমলে 1902 সালে হ্যামিল্টন নামে একজন বৃটিশ ইঞ্জিনিয়ার এর রহস্য ভেদ করতে চেয়ে স্তম্ভের তলায় লোহার রড্ ঢুকিয়ে একে উপরে তুলতে চেয়েছিলেন।এর ফলে সমস্ত মন্দিরে একটা ঘড় ঘড় আওয়াজ হতে থাকে এবং এই স্তম্ভটি সহ অন্যান্য স্তম্ভ গুলো নড়তে শুরু করে এবং সমগ্র মন্দিরটি দুলতে থাকে। প্রাণের ভয়ে সেই ইঞ্জিনিয়ার পালিয়ে যায় এবং তারপর থেকে এই মন্দিরে আর কোন পরীক্ষা করা হয় নি। কিন্তু এই ঘটনার পরে এই স্তম্ভটি মেঝেতে উত্তর পশ্চিম কোনায় মাত্র একটি বিন্দু দিয়ে স্পর্শ করে আছে বলে মনে হয়। অন্যান্য স্তম্ভগুলিরও সামান্য কিছু চ্যুতি লক্ষ্য করা যায়।আমি দেখলাম লোকজন স্তম্ভটির তলা দিয়ে কাপড় ও খবরের কাগজ চালিয়ে দেখছে, কিন্তু কাগজ তলা দিয়ে যাচ্ছে না,ঐ একটি ঠেকে যাওয়া বিন্দূতে আটকে যাচ্ছে। সমস্ত মন্দিরের ভারকেন্দ্র যে এই ঝুলন্ত স্তম্ভটির উপর স্থাপিত তা ঐ সাহেবের করা পরীক্ষায় প্রমাণ হয়ে গিয়েছে।এই মণ্ডপ নির্মাণে কি কারিগরি বিদ্যা প্রয়োগ করা হয়েছে তার রহস্য আজও ভেদ করা যায় নি।
নৃত্যমণ্ডপে দেখা যাচ্ছে সকলেই নৃত্য করছেন। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নৃত্য করতে করতে স্তম্ভগুলির একটি যেন ভূমি থেকে নিজেকে তুলে নিয়েছে বলে মনে হয়।এইবার উপরের দিকে তাকিয়ে নৃত্যমণ্ডপের শিলিংটি দেখলাম।এটি বারোটি পাথর দিয়ে তৈরি একশত পাপড়ি বিশিষ্ট পদ্মের আকৃতির।একে বলে শতপত্রকমল।
গর্ভগৃহ, অন্তরাল ও নৃত্য মণ্ডপ ও অন্যান্য গর্ভগৃহে শিলিং সুন্দর সুন্দর ফ্রেস্কোর চিত্রাবলী দ্বারা শোভিত। গর্ভগৃহের শিলিং এ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বীরুপান্না ও বীরান্নার ফ্রেস্কো চিত্র রয়েছে। তাঁরা ও তাঁদের বংশধরেরা ভগবান শিবের কাছ থেকে বিভূতি গ্রহণ করছেন। দুজন বালকের পিছনে মন্দিরের চিত্রকর হাসপান্না ও জাকান্না দাঁড়িয়ে আছেন।
গর্ভগৃহের সামনে অর্ধমণ্ডপের শিলিং এর ফ্রেস্কোচিত্রটি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড়(23 ফুট লম্বা ও 13 ফুট চওড়া)। এতে শিবের চোদ্দো জন অবতারের মূর্তি চিত্রিত আছে।যেমন যোগদক্ষিণামূর্তি,চণ্ডেম অনুগ্রহ মূর্তি, ভিক্ষাটানা,হরিহর, অর্ধনারীশ্বর, কল্যাণ সুন্দর, ত্রিপুরান্তক,নটরাজ, গৌরীপ্রসাদাকা, লিঙ্গোদভব ও অন্ধকাসুরসংহারা । এছাড়া কিরাতবেশি শিব ও অর্জুনের যুদ্ধ,শিব কর্তৃক অজ্ঞতার দৈত্য আপাসমারাকে দমন করা, একটি চিত্রে বালক মার্কণ্ডেয় ও শিবলিঙ্গ থেকে নির্গত মহদেবকে দেখা যায়। এছাড়া অন্তরালের অন্ধকার অংশে পার্বতীর একটি সুন্দর চিত্র রয়েছে।
নৃত্যমণ্ডপের ফ্রেস্কোচিত্রগুলি রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের ঘটনা আশ্রিত।ফ্রেস্কোর কাজ বিজয়নগর চিত্রকলার উৎকর্ষতার সাক্ষ্য দেয়।চূণের পলস্তারার উপরে এগুলো প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে আঁকা।রঙ আহরণ করা হোত ভেষজ ও ধাতব উপাদান থেকে।এইসব রঙের সঙ্গে চূণজল মেশানো হোত। পটভূমিটা রাখা হোত লাল।
এইবার আমি Hanging Pillar থেকে সিঁড়ি দিয়ে নীচে প্রাঙ্গনে নেমে মন্দিরের পিছন দিকে চলে এলাম।এখান থেকে ডানদিকে ঘুরে শেষ অবধি হেঁটে গিয়ে আবার ডান দিকে ঘুরে বিশালাকার বারো ফুট উঁচু শিবলিঙ্গের দেখা পেলাম যেটি ভিতরের প্রাঙ্গনের দক্ষিণ পূর্ব কোনে অবস্থিত।এটি
শিবলিঙ্গটি বিশালাকার এক নাগের তিনটি কুণ্ডলীর উপর স্থাপিত এবং সেই নাগ তার সাতটি প্রশস্ত ফণা বিস্তার করে লিঙ্গের মাথায় ছাতা ধরে আছে। এইরূপ লিঙ্গকে বলে নাগলিঙ্গ।এটি এই মন্দিরের চতুর্থ শিবলিঙ্গ। বিশ্বে আর কোথাও এতবড় নাগলিঙ্গ নেই। মন্দিরের অন্য সব ভাস্কর্য ও মূর্তি মানুষের দেহানুপাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই নাগলিঙ্গই বা এত বিশাল কেন?নাগলিঙ্গটির সৃষ্টির পিছনে এক মনোজ্ঞ কাহিনী আছে। কথিত আছে এই মন্দিরের ভাস্কর মধ্যাহ্নকালে ক্ষুধার্ত হয়ে রসুইঘরে এসে তার মায়ের কাছে খাবার চায়। কিন্তু সেই সময় মা জানান যে তখনও আহার্য প্রস্তুত হয় নি, আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। সেই ভাস্কর বসে থেকে সময় নষ্ট না করে রসুইঘরের সামনে পড়ে থাকা একটি বৃহৎ পাথরের খণ্ডটিকে নাগলিঙ্গের রূপ দিতে শুরু করলেন এবং আহার্য তৈরি হবার মধ্যে তা সম্পূর্ণ করে ফেললেন।এইরূপ কম সময়ের মধ্যে এত সুন্দর ও বিশাল নাগলিঙ্গ ভাস্করেরা কিভাবে তৈরি করলেন তা তাদের মা রসুইঘর থেকে বের হয়ে বিস্ফারিত নেত্রে অবলোকন করতে লাগলেন।বলা হয় তাঁর সেই নজরে বৃহৎ প্রস্তখণ্ডটিতে তিনটি ফাটল ধরে যায়। এত অল্প সময়ের মধ্যে যারা কোনো আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়া পাথর নিয়ে এইরকম ছেলেখেলা করতে পারে তাঁরা কারা ছিলেন? এদিকে আধুনিক পণ্ডিতের দল বলে থাকেন আগেকার মানুষ ছিল অসভ্য ও অনুন্নত,যা কিছু বর্তমান উন্নতি হয়েছে সবই আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে। তাহলে তখন কোন বিজ্ঞান ছিল?কাদের বিজ্ঞান ছিল? মিশরের পিরামিডেও কি আমরা পাথর নিয়ে এইরকম ছেলেখেলা দেখতে পাই না?
নাগলিঙ্গের পিছনে লাগোয়া একটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে একখণ্ড পাথর কেটে তৈরি করা বিশাল এক গণেশ মূর্তি আছে যার উচ্চতা ছ'ফুট। এখানে নীচে নাগলিঙ্গের বেদীতে সপ্তমাতৃকার মূর্তি খোদাই করা আছে,তাতে হলুদ লেপা ও সিঁদুরের টিপ দেওয়া আছে।অন্ধকাসুর বধের সময় শিব এই দেবীদের সাহায্য নিয়েছিলেন।
নাগলিঙ্গের পিছনে উপরে পাথরের গায়ে শ্রীকলাহস্তী ভাস্কর্য দেখা যায়। এখানে শিবের তিনজন ভক্ত যথা মাকড়সা (শ্রী),নাগ(কাল) ও হস্তীকে শিব লিঙ্গের পূজো করতে দেখা যায়।একে বলা হয় শ্রীকলাহস্তী ভাস্কর্য।
নাগলিঙ্গ অতিক্রম করে তার পিছনে উঁচু ভিতের উপর একটি ছাদবিহীন অসমাপ্ত মণ্ডপ দেখতে পাওয়া যায়,যার স্তম্ভগুলিই (আটত্রিশটি স্তম্ভ) কেবল নির্মাণ করা হয়েছে।এটির নাম কল্যাণমণ্ডপ বা বিবাহ মণ্ডপ।ভিতের গায়ে হাঁসের সারি দেখতে পাওয়া যায় যারা ঠোঁটে করে পদ্মফুল নিয়ে যাচ্ছে। এই মণ্ডপের নির্মাণের অসমাপ্তির পিছনে একটি কারণ আছে।রাজা অচ্যুতদেবরায় এই মন্দিরের নির্মাতা বিরুপান্নাকে রাজকোষের অর্থ তছরূপের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।কারণ বিরুপান্না রাজার অনুপস্থিতিতে রাজার অজ্ঞাতে মন্দির নির্মাণে রাজকোষের প্রভূত অর্থ ব্যয় করে ফেলেছিলেন। রাজা পরবর্তী কালে এই খবর জানতে পেরে মন্দির নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন এবং ক্রুদ্ধ হয়ে বিরুপান্নার চোখ উপড়ে নেওয়ার আদেশ দেন। এতে সৎ এবং রাজানুগত বিরুপান্না অত্যন্ত অভিমানে নিজেই নিজের চোখ উপড়ে ফেলে দেওয়ালে নিক্ষেপ করেন। সেইজন্য আজও পশ্চিমদিকে ভিতরের সীমানা প্রাচীরের গায়ে দুটি রক্তচিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।বলা হয় এগুলি বিরুপান্নার রক্তাক্ত চোখ নিক্ষেপের চিহ্ন। অনেকেই বলেন এই জায়গার নামকরণের পিছনে এই ঘটনা জড়িত।লেপাক্ষী শব্দের অর্থ হলো 'উপড়ে নেওয়া চোখের গ্রাম' বা (Village of the plucked eyes).
কল্যাণ মণ্ডপটিতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে স্তম্ভের সারি দেখতে পাওয়া যায়। প্রবেশপথের দুপাশে রাজর্ষি বিশ্বামিত্র ও ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ শিব ও পার্বতীর বিবাহে অতিথিদের স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের দুপাশে অন্যান্য দশজন মুনি ঋষিরা কমণ্ডুল হাতে দণ্ডায়মান। মণ্ডপের স্তম্ভগুলি সব বৃত্তাকারে বিন্যস্ত। মন্দিরের বাৎসরিক উৎসবের সময়ে শিব ও পার্বতীর বিবাহ উদযাপন করার জন্য এই মণ্ডপ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।স্তম্ভের ভাস্কর্য গুলো দেখায় যে শিব পার্বতীর বিবাহ উৎসবে যোগদান করতে স্বর্গের অনেক দেবদেবী ও মুনি ঋষিরা যোগদান করতে এসেছেন।যেমন দেবেন্দ্র ইন্দ্র,বশিষ্ঠ, বৃহস্পতি,বিশ্বামিত্র,পবনদেব,যম,বরুণ,কুবের,মেনকা ইত্যাদি।এছাড়া শিব ও পার্বতী হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং গিরিরাজ হিমালয় তাঁর কন্যা পার্বতীকে সম্প্রদান করছেন।দেখা যায় চতুর্মুখ ব্রহ্মা,সদাশিব (শিবের অবতার,পাঁচটি মুখ ও দশটি হাত) দত্তাত্রেয় মুনি (শিবের অবতার), গন্ধর্ব,নন্দী ইত্যাদি সকলেই অতিথি হিসেবে উপস্থিত। বিভিন্ন দেবতাদের সনাক্ত করতে হয় তাঁদের বাহন দেখে। প্রত্যেক দেবমূর্তির নীচে বেদীতে তাঁদের বাহনের মূর্তি উৎকীর্ণ করা আছে।যেমন ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত, অগ্নির মেষ, পবনদেবের হরিণ,যমের মহিষ, বরুণের কচ্ছপ, কুবেরের হাতি ইত্যাদি।
এই অসমাপ্ত মণ্ডপে ৩৮ টি গ্রাণাইট পাথরের স্তম্ভ আছে। যদি মণ্ডপটি সম্পূর্ণ হয়ে যেত তবে এক অপরূপ স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত হতে পারতো।
কল্যাণ মণ্ডপের পরে মূলমণ্ডপের পিছনে করিডোর সমেত একটি খোলা জায়গা আছে যেটি পিছনের দেওয়ালকে ঘিরে রেখেছে। এই স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো।
কল্যাণ মণ্ডপটির পিছনে মন্দির প্রাঙ্গণে পাথরের উপর একটি বড় আড়াই ফুট লম্বা ডান পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়, যেটি সর্বদা জলে সিক্ত থাকে।জল মুছে শুকিয়ে ফেললেও কিছুক্ষণ পরে তলা থেকে জল এসে আবার পায়ের ছাপটিকে ভিজিয়ে দেয়।গাইড জানালেন যে এটি সীতামাতার দক্ষিণ পদচিহ্ন।পদচিহ্নটির যা আকার তাতে পদচিহ্নের মালিকের উচ্চতা চব্বিশ ফুট হওয়া উচিত। উনি জানালেন যে ত্রেতাযুগে মানুষের উচ্চতা ছিল চৌদ্দ হাত।রাবণ যখন সীতাকে অপহরণ করে পুষ্পক রথে করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন জটায়ুপাখী রাবণকে এই কূর্মশীলায় বাধাদান করেছিলেন এবং তার সঙ্গে প্রবল যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু রাবণ তার একটি ডানা কেটে ফেলাতে তিনি এই পাহাড়ের উপরে ভূপাতিত হন।যতক্ষণ না রামকে জটায়ু তাঁর অপহরণের সংবাদ বলেন ততক্ষণ তাঁকে জীবিত থাকার বরদান সীতাদেবী দিয়েছিলেন।সেই সময় সীতাদেবীর দক্ষিণ চরণচিহ্ন এখানে পড়ে এবং বাম চরণচিহ্ন তামিলনাড়ুর পানমুণ্ডা পাহাড়ের উপর পড়ে। শ্রীরাম ও লক্ষণ সীতার সন্ধান করতে করতে এখানে এসে পৌঁছলে ভূপাতিত আহত জটায়ু পাখিকে দেখে রামচন্দ্র বলেন "লে পক্ষী", তেলেগু ভাষায় যার অর্থ "উঠ পক্ষী"।অনেকের মতে সেই থেকে এই জায়গার নাম হয় লেপাক্ষী।
সীতার পদচিহ্নের কাছেই ছত্রিশটি স্তম্ভবিশিষ্ট একটি মণ্ডপ দেখতে পাওয়া যায়। এটির নাম লতামণ্ডপ। স্তম্ভগুলির প্রতিটি তলে সুন্দর নক্সা কাটা রয়েছে,যার অনুকরণে এখানকার বিখ্যাত লেপাক্ষী শাড়ির পাড়ের নক্সার ডিজাইন করা হয়। ছত্রিশটি স্তম্ভের চারটি করে তলে মোট একশো চুয়াল্লিশটি নক্সা দেখা যায়।আজও ফ্যাশান ডিজাইনাররা এই মন্দির দর্শন করেন তাঁদের তৈরি পোশাকের নকশা নেওয়ার জন্যে।
সীতার পায়ের ছাপের কাছে কল্যাণ মণ্ডপটির পিছনে একটি ছোট মণ্ডপের ভিতর একটি শিব লিঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়।এই শিবলিঙ্গটির নাম তাণ্ডবেশ্বর।এটি এই মন্দিরের পঞ্চম শিবলিঙ্গ।এটি প্রতিষ্ঠা করেন চোলরাজ মাধববর্মা।
মন্দির প্রাঙ্গনের পূর্ব দিকে একটি ছোট গর্ভগৃহে একখণ্ড পাথর থেকে তৈরি শিব ও পার্বতীর যুগ্ম মূর্তি আছে। এখানেই অপর একটি গর্ভগৃহে বিষ্ণুমূর্তি আছে।
মন্দিরের উত্তর ধারের কোণে দুটি স্তম্ভযুক্ত মণ্ডপ আছে।এই দুটির একটি 'হাবান্ কুণ্ড' ও অপরটি 'পঞ্চাঙ্গ শ্রাবণ'।হাবান কুণ্ডে শিবরাত্রির উৎসবে যজ্ঞ সম্পন্ন হয় ও পঞ্চাঙ্গ শ্রাবণে জনগণ শুভ তিথি সম্পর্কে তথ্য পেয়ে থাকে ও জ্যোতিষীকথা শ্রবণ করে।
বীরভদ্র মন্দির থেকে চারশো মিটার পূর্বে একটি সুরম্য উদ্যানের মাঝখানে খোলা আকাশের নিচে বীরভদ্র মন্দিরের নাগলিঙ্গের নন্দী বা বাসবান্না বিরাজ করছেন।নন্দীর উচ্চতা পনেরো ফুট এবং দৈর্ঘ্যে সাতাশ ফুট।এটি একখণ্ড পাথর কেটে তৈরি এবং ভারতের সর্ববৃহৎ নন্দী। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে মহীশুরের চামুণ্ডি পাহাড়ের নন্দী ও হ্যলোবিদের হোয়াসলেশ্বর মহাদেবের নন্দী।নন্দীর মুখ নাগলিঙ্গের দিকে।অন্য সকল মন্দিরে আমরা দেখি নন্দী শিবলিঙ্গের দিকে আনত মুখে উপবিষ্ট। কিন্তু এখানে আমরা দেখি নন্দী তার মুখ একটু উঠিয়ে নাগলিঙ্গের দিকে তাকিয়ে আছে।নন্দীর গা আশ্চর্য রকমের মশৃণ ও গলার মালা ও ঘন্টা সবই নিখুঁত।মনোরম উদ্যানের পাশে একটি ছোট সুন্দর জলাশয় আছে এবং পাশে অপরদিকে অনুচ্চ পাহাড়ের বোল্ডারের উপর জটায়ু পাখির মূর্তি আছে।
মনে প্রশ্ন কি জাগে না যে এই মন্দিরের বিশাল পায়ের ছাপ,নাগলিঙ্গ ও নন্দী এত বড়ো কেন? ঐতিহাসিকরা বলেন এই মন্দির বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আমলে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় মানুষ অন্য কথা বলেন। তাঁরা বলেন বিজয়নগররাজ এই মন্দির সংস্কার ও পুণর্গঠন করেছিলেন, কিন্তু তার আগেও এখানে মন্দির ছিল। বিধ্বংসী এক বন্যায় এই মন্দির ভেঙে পড়ে, কিন্তু বীরভদ্র মন্দিরের গর্ভগৃহ, যেটি অগস্ত্য মুনি নির্মাণ করেছিলেন, নাগলিঙ্গ, পায়ের ছাপ ও নন্দী থেকে যায়। মন্দিরের পূর্ব দিকে বর্তমান প্রাচীরের বাইরে চারটি মণ্ডপ দখল হয়ে গিয়েছে। বিজয়নগররাজ পরবর্তী কালে যখন মন্দিরের পুনর্গঠন করেন তখন নন্দী মূর্তি বাইরে রয়ে গেল। তাহলে ঐ বৃহদাকার নন্দী কাদের উপাসনার কাজে আসতো?শৈব উপাসকদের বিশ্বাস নন্দীর দুটি শিং এর অগ্রভাগে বাঁ হাতের দুটি আঙ্গুলের অগ্রভাগ স্থাপন করে যে গোলাকার opening বা window সৃষ্টি হয় তার মধ্যে দিয়ে শিব লিঙ্গের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা জানাতে হয়।লেপাক্ষীর এই নন্দীর দুটি শিং এর মধ্যে দৃষ্টিপাত করলে বীরভদ্র মন্দিরের নাগলিঙ্গটি নজরে আসে। এইভাবে নন্দীর শিং এর কাছে যারা চোখ নিয়ে যেতে পারতো তাঁরা কি দৈত্য ছিলেন? শুধু যে আমাদের প্রাচীন গ্রন্থেই দৈত্যদের কাহিনী রয়েছে তাই নয়, পৃথিবীর সব প্রাচীন ধর্মের মহাকাব্যে দৈত্যদের বর্ণনা আছে,যেমন প্রাচীন গ্রীক, রোমান, ইহুদী,মায়া ইত্যাদি। চোখে একরাশ বিস্ময় ও মনে পর্বত প্রমাণ জিজ্ঞাসা নিয়ে সন্ধ্যায় বাস ধরে ব্যাঙ্গালোরে আমার হোটেলে ফিরে এলাম।
সমাপ্ত