পাহাড়ের ভ্রমনের প্রয়োজনীয় কর্তব্য

পাহাড় ভ্রমণের মূলতঃ তিনটি ভাগ। ১। গাড়ি ২। হাঁটা ৩। পর্বতারোহণ। আমরা বাঙালীরা পাহাড় খুব ভালোবাসি। প্রতি বছর একবার পাহাড় না গেলে যেন মন কেমন কেমন করে। কিন্তু আমরা অনেক কিছু না জেনেই পাহাড়ে চলে যাই, তাই আমার এই সামান্য চেষ্টা। কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।
সবার আগে আমাদের জানা দরকার পাহাড়ের উচ্চতা সম্পর্কে। ৪৯০০ ফুট থেকে ১১৫০০ ফুট কে বলা হয় High Altitude, ১১৬০০ ফুট থেক ১৮০০০ ফুটকে বলা হয় Very High Altitude এবং ১৮০০০ ফুটের উপর কে বলা হয় Extreme Altitude।
এবার বলি পাহাড়ে শরীর খারাপের লক্ষণ। সর্ব প্রথম যে অসুখ হয় তার নাম হল Acute Mountain Sickness (AMS) : মাথার পিছন দিক টিপ টিপ করে ব্যথা করা, ঘুম না হওয়া, খিদে না পাওয়া, খিটখিটে হয়ে যাওয়া। তারপর হয় High Altitude Cerebral Edema (HACE): জ্বর, বমি ইত্যাদি এবং সবশেষে High Altitude Pulmonary Edema (HAPE) পাগলের মত ব্যবহার করা। শেষ দুটো ক্ষেত্রে রুগীকে নিচে নামিয়ে না আনতে পারলে মৃত্যু অনিবার্য ।
অক্সিজেন লেভেলঃ মানুষের বেঁচে থাকতে গেলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন দরকার।। অক্সিজেনের অভাব হলে আমাদের মৃত্যু অনিবার্য। তাই আমাদের জানতে হবে কোন উচ্চতায় কত অক্সিজেন থাকে। সাধারনত High Altitude পর্যন্ত পর্যাপ্ত অক্সিজেন (৬০ থেকে ৭০ শতাংশ) থাকে। তারপর আস্তে আস্তে সেটা কমতে থাকে। Very High Altitude এ কমে হয় ৫০ শতাংশ এবং Extreme Altitude এ তা হয়ে ৩০ শতাংশ।
সঠিক সময় নির্বাচন : পাহাড়ের ২টো রূপ। ফুল ও বরফ (বর্ষা বাদ দিলে)। নিজেদের ঠিক করতে হবে কোন রূপ টা দেখবো। মে মাস হল পাহাড় বেড়ানোর আদর্শ সময়। বর্ষার সময়ে পাহাড়ে ধস নেমে রাস্তার খুব ক্ষতি করে। তাই একেবারেই তখন যাওয়া ঠিক নয়। তবে লাদাখের ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন, সেখানে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুব ভাল আবহাওয়া থাকে।
প্রয়োজনীয় কর্তব্য
১। পাহাড়ে কখনো খালি পিঠে হাঁটবেন না। রুকস্যাক অথবা ছোট পিঠ ব্যাগ নিয়ে হাঁটবেন।
২। স্পোর্টস সু পরে পাহাড়ে হাঁটবেন না। রাবার সোলের জুতো খুব ভাল (বাটা জগার)
৩। জিন্স বা ভারি কোন প্যান্ট পরে হাঁটবেন না।
৪। জামা বা মোটা গেঞ্জি পরে হাঁটবেন না। সুতির হাল্কা গেঞ্জি পরবেন।
৫। এ.ম.স হলে গারলিক সুপ খাবেন (যাদের ব্লাড প্রেসার অনেক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন)
৬। বরফ থাকে এমন স্থানে লোহা বা স্টিলের ঘড়ি, সানগ্লাস ইত্যাদি পরবেন না।
৭। টিমের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে তালমিল থাকা খুব দরকার।
৮। ট্রেকিং এর প্রথম দিন সব সময় কঠিণ, সেটা যত সহজ রাস্তাই হোক না কেন। শুরুতে কখনো জোরে হাঁটবেন না।
৯।হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ বসে বিশ্রাম নেবেন না
১০।পাহাড়ে সাধারণত এক দিকে খাদ থাকে, খাদের দিক ধরে হাঁটবেন না
১১।নিশ্বাস নাক দিয়ে নিয়ে নাক দিয়ে ছাড়তে হয়, মুখের ব্যবহার করবেন না
১২।৪ লিটার জল খেতেই হবে, খুব ঠাণ্ডায় জল খাওয়া যায় না বলে, লাল চা, স্যুপ ইত্যাদি পান করবেন
১৩। এক দিনে ৩০০০ ফুট উচ্চতার বেশি যাবেন না
১৪। পাহাড়ে Acclimatize ঠিক মত হতে না পারলে এ.ম.স্ হয়। আমাদের শরীরের একমাত্র কান শরীরকে Acclimatize করে। তাই সবসময় কান ঢেকে রাখবেন না। মাথায় টুপি পরবেন কিন্তু মাঙ্কি টুপি কখনো নয়।
১৫। নামার সময় সোজাসুজি পা ফেলতে নেই, পায়ের নখ ও হাঁটুর ক্ষতি হয়, (পেঙ্গুইনের মতো পা টা একটু বেঁকিয়ে হাঁটতে হয়)
১৬। খাড়া ঢালে নামার সময় সোজাসুজি হাঁটবেন না, ট্রেভাস করে (এঁকে বেঁকে) নামবেন।
১৭। পাহাড় শক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। হাঁটার সময় কখন প্রতিযোগিতা করবেন না।
১৮। গন্তব্য স্থলে পৌঁছে টেন্ট/ঘরের মধ্যে ঢুকে বিশ্রাম নেবেন না
১৯। ট্রেকিং যাবার আগে আপনার স্লিপিং ব্যাগ,ডাউন/হলোফিল জ্যাকেট, টেন্ট ইত্যাদি ভালো করে রোদে শুকিয়ে নেবেন।
২০। পাহাড়কে ভালোবেসে ট্রেক করুন, বিলাসিতা করবেন না ও পাহাড় নোংরা করবেন না (লজেন্স ইত্যাদি খেয়ে প্যাকেট বাইরে ফেলবেন না)