ট্রেনে যাত্রাকালে ছিঁচকে চোরদের হাত থেকে কিভাবে বাঁচবেন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার থেকে আমি কি কি সাবধানতা নি তা আপনাদের জানাচ্ছি। আমার সমস্ত অভিজ্ঞতা  সেকেন্ড ক্লাস নন এসি স্লিপার কোচে
যাত্রাকালীন-----
1)  ট্রলি ব্যাগ কেনার সময় বা নিয়ে যাওয়ার সময় এমন সাইজের কিনবেন বা নিবেন যাতে সেটি লোয়ার বার্থের নীচে বেশ সুন্দর ভাবে সেট করে যায়। যাকে বলে খাপে খাপ। যেন অতি সহজেই সেটি বার করতে না পারে। তাতে এমন কিছু জিনিস রাখবেন না যেটি ট্রেন চলাকালীন আপনার প্রয়োজন পড়ে। সম্ভব হলে  লোয়ার বার্থের জানালার ধারে সিটের নীচে রাখার চেষ্টা করবেন। ট্রলি ব্যাগের হ্যাণ্ডেলটি যেন বেশ শক্ত পোক্ত হয়।
কাঁধের ব্যাগ হলে একই ব্যবস্থা নিবেন। ব্যাগের পিঠের দিকের মূল স্ট্রাপ দুটো যেন বেশ শক্ত পোক্ত হয়। দরকার হলে মুচিকে দিয়ে কাঁধের স্ট্রাপ দুটোতে দুটো লম্বা লম্বা শক্ত চামড়ার ফিতে লাগিয়ে নিবেন। আমার তাই করা আছে।
2)  লোহালক্কড়ের দোকান থেকে ভালো দেখে চেন কিনবেন। যেন সহজে কাতরি দিয়ে না কাটতে পারে।
আর ছোট নবতাল গোদরেজ কোম্পানির তালা। আর দুটো ছোট ঘুঙুর । ঘুঙুর গুলো চেনের মাঝখানে সরু তার দিয়ে বেঁধে নিবেন। আমি সেভাবেই করিয়ে  নিয়েছি।
একটা ঘটনা বলি আমার একবার ট্রেন ভ্রমণ কালে আর পি এফ একজন চোরকে ধরেছিল আমার সামনেই। বাতরুমের কাছে সে বসেছিল। আর একবার দু বার ট্রেনের কামরার মধ্যে যাতায়াত করছিল। রাত দশটার সময় তার পকেট থেকে বের হয়েছিল শিকল কাটার ছোট্ট একটা কাতরি আর দুটো বড় সাইজের রুমাল। দুজন ছিল একজন চেন কেটে দিত আর একজন স্টেশন এলে নিয়ে নেমে পড়ত।রুমালটা ছিল  চেনের শব্দ বন্ধ করার জন্য। যারা দরজার কাছাকাছি থাকবেন তারা অবশ্যই খুব সতর্ক থাকবেন।
3) দুটো মোবাইল ব্যবহার করবেন। আমিও তাই করি একটা অত্যন্ত সাধারণ। আর একটা টাচ ফোন। টাচ ফোনটা আমি শোবার আগে পর্যন্ত ব্যবহার করি। শোবার সময় টাচ ফোনটি আমি আমার কোমরের সাথে আটকানো waist bag এর ভেতরের দিকে  রেখে দি।
অন্য ফোনটি আমার জামার বুক পকেটে থাকে সেটিও একটি ভালো সেফটি পিন দিয়ে আটকানো থাকে। এই ফোনটি আমি রাতের বেলায় ব্যবহার করি আর পাবলিক বাসে ও অটোতে।
ফোন কখনোই জানালার ধারে বা দরজার কাছে ব্যবহার করবেন না। আমার ফোনের কাভারের ছিদ্রের সাথে একটা শক্ত দড়ি গোল করে বাঁধা আছে। নিতান্তই জানালার ধারে বা দরজার ধারে এসে ছবি তুলতে হলে ওটা কবজিতে গলিয়ে নি।
ফোনটা শক্ত করে ও ধরে থাকি।
waist bag টি যাতে সহজেই খুলে না যায় তার জন্য ক্লিপের জায়গাটা একটা ছোট্ট দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকে।
ক্লিপের দু পাশটা চাপ দিয়ে খুললেও কোমর থেকে ব্যাগ খুলবে না। ব্যাগ খুলতে হলে দড়ির গিঁট খুলতেই হবে।
3) সামনের অপরিচিত যাত্রীকে বলে রাখবেন যদি সে  কিছু সন্দেহজনক দেখে তাহলে যেন আপনাকে  উঠিয়ে দেয়।  গভীর ঘুমে থাকলেও যেন  উঠিয়ে দেয়। আপনি  কিছু মনে করবেন না সেটাও বলে রাখবেন।  
4)  মাথার কাছের জানালার সামনে এমন কিছু রাখবেন না যাতে সহজেই হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিতে পারে।  রাখলে বড়ো কিছু রাখবেন যেটা সহজে বের করতে না পারে।
5) টাকাকড়ি রাখবেন আপনার জাঙ্গিয়া বা আণ্ডার প্যাণ্টের বুক পকেটে। ঐ রকম জাঙ্গিয়া বা আণ্ডার প্যাণ্ট কিনতে পাওয়া যায় । অবশ্যই সেগুলোতে টেলারে যেয়ে চেন লাগিয়ে নিবেন। শোবার পাৎলুম বা লুঙ্গিতেও একই ব্যবস্থা করবেন।
কিছু টাকা waist bag এ ও money bag এ রাখুন।
ট্রেনের খরচের জন্য।  রাতে মানিব্যাগ থেকে  টাকা সরিয়ে জামার ভেতরের  বুক পকেটের ভেতরে রাখুন। ছোট্ট একটা সেফটি পিন লাগিয়ে নিন।
মোট পাঁচখানা ভেতরের পকেট হবে। 2+2+1
6) অন্য ব্যাগ গুলি একসাথে রাখুন মাথার কাছে রাতে। দড়ি দিয়ে বেঁধে দিন সিটের নীচের কোন অংশের সাথে  বা অন্য কোন অংশে।
এবার ঘুমোতে যান।  নিশ্চিন্তে । শয়নে পদ্মনাভশ্চ।