Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionবুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh Emptyবুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh

more_horiz
বুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা :

রাজপুত রাজা রুদ্র প্রতাপ সিং (১৫০১-১৫৩১) বুন্দেলারাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন ওরছাতে। মহম্মদ সেলিম ভারত সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে একবার যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ইতিহাসে যা "খোকা বিদ্রোহ" নামে পরিচিত। তখন মহম্মদ সেলিমকে আশ্রয় ও সৈন্যসামন্ত দিয়ে সাহায্য করেছিল রাজা রুদ্র প্রতাপ সিং। পরবর্তীকালে যখন মহম্মদ সেলিম (জাহাঙ্গীর) দিল্লির মসনদে বসেন তখন রুদ্র প্রতাপ সিং কে প্রচুর অর্থও স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন। এখানে সম্রাট জাহাঙ্গীর একবার এসেছিলেন তার জন্য বানানো হয়েছিল জাহাঙ্গীর মহল। রয়েল গেট দিয়ে ঢোকার মুখে আপনাকে অভিবাদন জানাবে দুটি হাতি। মহলের ভেতরের আর্কিটেকচার, ঝুল বারান্দার কাজ, প্রাসাদ চূড়ার গম্বুজের কাজ অসাধারণ।

প্রেমিকা রাই পারভীন :

প্রাসাদের অন্য কোণে আছে শিশমহল যা বর্তমানে MPTDC হোটেল। তার পাশেই অপরূপ সুন্দরী, সুগায়িকা নৃত্যশিল্পী পারভীন এর জন্য রাজকুমার ইন্দ্রজিতের তৈরি রাই পারভীন মহল। রাই পারভীনের রূপে ও নৃত্য কলায় রাজকুমার ইন্দ্রজিৎ তার প্রেমে আচ্ছন্ন, ভালবেসে তার জন্য বানিয়েছিলেন রায় পারভীন মহল। রায় পারভীনের রূপ ও সঙ্গীতে সমগ্ৰ আর্যাবর্তের রাজারা আচ্ছন্ন ,, ভারতসম্রাট আকবরের একবার ইচ্ছে হলো সেই রূপ আস্বাদন করা। সুতরাং রাই পারভিন গেলেন মোগল দরবারে। সম্রাট কে বললেন, " মিনতি রায় পারভিন কি শুনিয়ে শা সুজান / ঝুটি পাতর ভরকত হ্যায় বারী, বায়স শ্নান,,,,, অর্থাৎ হে সম্রাট শুধুমাত্র চাকর, কাক, কুকুর অন্যের এটো স্পর্শ করে। বুঝে নিতে দেরি হয়নি ভারত সম্রাটের। তিনি রাই পারভীনকে সসম্মানে বহু উপহারসহ ওরছা ফিরিয়ে দেন।

রাজমহল :

রাজা রুদ্রপ্রতাপ সিং তার ছয় রাজপুত রাণীদের জন্য বানিয়েছিলেন। মহলের বাইরের দিকে রয়েছে দেওয়ান-ই-আম ভিতরের দিকে রয়েছে দেওয়ান-ই-খাস, রায় পারভীন যেখানে নৃত্য পরিবেশন করত সেই মঞ্চ, সঙ্গীতমহল, বিশ্রামঘর, রানীদের ঘর।

কিভাবে যাবেন - ঝাঁসি রেল স্টেশন থেকে অটোতে ১৫/- ভাড়া দিয়ে চলে আসুন ঝাসি বাসস্ট্যান্ড। প্রতি আধা ঘণ্টা অন্তর ওরছা যাওয়ার বাস ছাড়ে বাস ভাড়া জনপ্রতি ২০/- টাকা। যদি ঝাসি স্টেশন থেকে অটো বুক করে আসেন যাওয়া-আসা মিলিয়ে 600 থেকে 700 টাকা।
Orchha fort entry fees - 10/- + Camera 25/-

খাওয়া-দাওয়া - ওরছা চতুর্ভুজ মন্দিরের গুজিয়া অবশ্যই খেয়ে দেখবেন।

descriptionবুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh EmptyRe: বুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh

more_horiz

Orchha (or Urchha) is a town in Niwari district of Madhya Pradesh state, India. The town was established by Rudra Pratap Singh some time after 1501, as the seat of an eponymous former princely state of covering parts of central & north India, in the Bundelkhand region.#Orchha lies on the Betwa River, 80 km from #Tikamgarh & 15 km from #Jhansi in $Uttar Pradesh.

Last edited by Admin on Thu Nov 28, 2019 2:22 pm; edited 1 time in total

descriptionবুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh EmptyRe: বুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh

more_horiz
Orchha town in Madhya Pradesh makes it to tentative list of UNESCO World Heritage Sites

Orchha is located around 80 km away from Tikamgarh district in Madhya Pradesh and 15 km from Jhansi of Uttar Pradesh

The architectural heritage of Orchha town in Madhya Pradesh which depict peculiar style of the Bundela dynasty have been included in the tentative list of the UNESCO’s world heritage sites following a proposal sent by the Archaeological Survey of India (ASI) to the United Nations (UN) body.

The ASI had sent a proposal to the UNESCO on April 15, 2019 to include the sites in its list, an ASI official said.

According to the rules, to be a part of UNESCO’s World Heritage sites, the heritage or any historical site first has to be on the tentative list. After it makes to the tentative list, another proposal is sent to the UNESCO, the official said.

The ASI in its earlier proposal had requested to include Orchha in the list of cultural heritage.
Quick facts about Orchcha

Orchha is situated on the banks of the Betwa river. It is located around 80 km away from Tikamgarh district in Madhya Pradesh and 15 km from Jhansi of Uttar Pradesh. Orchha was built by king Rudra Pratap Singh of Bundela dynasty in the 16th century. The ancient town is famous for its Chaturbhuj Temple, Orchha fort complex, Raja Mahal among others.

The Bundela architecture has Mughal influence since the two dynasties were very close. The famous King of Bundela dynasty Veer Singh Dev was a close friend of Mughal emperor Jahangir and fought wars as Akbar’said.




Orchha is also famous for its two elevated minaret called Saavan and Bhadon and its four palaces -- Jahangir Palace, Raj Mahal, Sheesh Mahal and Rai Praveen Mahal -- and for its concept of open bungalows, stone work windows, animal statues depicting the culture of Bundelkhand.


It is the only place in India where Lord Ram is worshipped as a king with a dedicated temple in his name called Sri Ram Raja Mandir.

#tourism and #leisure
United Nations
#Madhya #Pradesh

 

descriptionবুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh EmptyRe: বুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh

more_horiz
#ওরছা(ভারতের মিউজিয়াম নগরী)
---------

ওরছাতে আমার লজ্ টা ছিল রামরাজা মন্দিরের পিছনে। লজ্ থেকে বেরিয়ে ওরছার দূর্গপ্রাসাদ পরিদর্শন করাই আজ বিকেলে আমার পরিকল্পনা। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে ওরছার দ্রষ্টব্য স্থান সমূহ ঘুরে দেখার জন্য নিজের পদযুগলের উপর ভরসা রাখা উচিত।ছোট শহর ওরছাতে এগুলো স্বল্পপরিসরের মধ্যে অবস্থিত,তাই গাড়ি ভাড়া করার কোনো প্রয়োজন পড়ে না। রাজারাম মন্দিরের প্রাঙ্গণের বাজারটি অতিক্রম করে একটা বড় রাস্তার চৌমাথার মোড়ে এসে পড়লাম। এখানে কয়েকটি হোটেল, লজ্, ডাকঘর ও ব্যাঙ্ক রয়েছে। এখানেই অটোরিকশার স্ট্যান্ড। চৌমাথাটা অতিক্রম করে সোজা এগিয়ে পূর্বদিকে দিকে গিয়ে একটা সেতুর মতো রাস্তা দেখতে পেলাম, যেটি একটি নিম্ন ভূমির উপর দিয়ে ওরছার দূর্গপ্রাসাদের সঙ্গে ওরছার মূল শহরের সংযোগ রক্ষা করেছে।এই সেতু দিয়ে এগিয়ে গেলে রাজা মহলের প্রধান ফটকের সামনে এসে পৌছে যাওয়া যায়।ওরছার দূর্গপ্রাসাদ দর্শন করতে হলে প্রথমে রাজা মহলে থেকে শুরু করতে হয়।

রাজা মহল :------ রাজা মহলের ফটকটিতে দেখলাম বড় বড় ছুঁচলো মোটা মোটা গজাল গাঁথা আছে যাতে হাতি দিয়ে এই ফটকটি না ভাঙা যায়।রাজামহল প্রাসাদটি একটি বর্গাকার জমির উপরে নির্মিত। জমিটি আবার দুটি প্রাঙ্গণে বিভক্ত।প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকেই যে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলাম সেখানে টিকিট কাউন্টার রয়েছে এবং এখান থেকে টিকিট সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক।ভারতীয়দের জন্য প্রবেশমূল্য দশ্ টাকা ও ক্যামেরার চার্জ পঁচিশ টাকা। এই টিকিট সংরক্ষণ করতে হবে,কারণ এই টিকিটে ওরছার আরও কিছু স্থাপত্য ও মন্দির দেখা যাবে।বিদেশিদের জন্য প্রবেশমূল্য আড়াইশো টাকা।ভিডিও ক্যামেরার জন্য দুশো টাকা।এখানে লাইট অ্যাণ্ড সাউণ্ড শোয়ের জন্য দর্শনী একশো টাকা।
লাইট অ্যাণ্ড সাউণ্ড শোয়ের সময়:----
7-30 PM (English); 8-45 PM (Hindi)

এই প্রাসাদের বৈশিষ্ট্য হলো এর বিস্ময়কর স্থাপত্য এবং রাজকীয় বিলাসবহুল রাজাদের বসবাসের কক্ষসমূহ, সুউচ্চ ব্যালকনি ও পরস্পর সংযোগরক্ষাকারী করিডোর। মনোরম পাথরের জাফরির কাজ ,প্রবেশপথগুলির আঁকা বাঁকা খিলান,মিনার, প্রাসাদশীর্ষদেশের গম্বুজযুক্ত প্যাভিলিয়ন একে দর্শনীয় করে তুলছে।
রাজা মহলের ভিতরের প্রাঙ্গণদুটি রাণীদের দ্বারা ব্যবহৃত হতো।প্রধান প্রাঙ্গণটি চারিদিকে প্রসাদ দিয়ে ঘেরা।এর একটি দিকে চারতলা মহল রয়েছে, অন্য তিন দিক পাঁচতলা
মহল দ্বারা পরিবেষ্টিত।এই মহলটি হিন্দু ও মুঘল স্থাপত্য শৈলীর মিশ্রণে নির্মিত।
মুঘলদের অনুকরণে নির্মিত দেওয়ান-ই-আম এই মহলের উত্তর দিকের কোণে অবস্থিত।এখানে রাজা আম জনতার সঙ্গে মিলিত হতেন,তাদের অভাব অভিযোগ শুনতেন এবং বিচার করতেন।রাজার সিংহাসন স্থাপনের স্থানটি উঁচু বেদির মত এবং একপাশে রয়েছে দেখা গেল। এইরূপ অবস্থানের কারণ হিসাবে জানা গেল যে বিচার করার সময়ে রাজা বিচারপ্রার্থীর মুখদর্শন করতেন না,পাছে বিচারপ্রার্থীর মুখদর্শন করে কোন পক্ষপাতিত্ব তিনি না করে ফেলেন। রাজসভায় সকল শ্রেণীর মানুষের উপস্থিতিতে বিচার চলত।রাজার একদম পাশে থাকতেন তাঁর আত্মীয়স্বজন,তারপর মন্ত্রীগণ,তারপর অন্যান্য সভাসদগণ,ব্রাহ্মণগণ ও তারপর সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ ব্রাহ্মণগণ মারফত রাজার কাছে বিচারের আর্জি পেশ করতে পারতেন।দেখলাম পর্যটকরা এর দেওয়ালে চক্, কয়লা বা লোহা দিয়ে নিজেদের নাম ও কিছু অশ্লীল কথাবার্তা লিখে রেখেছেন। হায় ভগবান! ভাবলাম কবে যে আমাদের দেশের লোকের একটু শুভবুদ্ধির উদয় হবে?
পূর্বদিকের প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে বাঁদিকে দেওয়ান-ই-খাস্।এখানে বসে রাজা তাঁর মন্ত্রী ও পাত্র মিত্রদের সঙ্গে একান্তে শলাপরামর্শ করতেন।এখান থেকে একটি গুপ্তসুরঙ্গ আছে জঙ্গলে পালিয়ে যাওয়ার জন্য।এর দেওয়ালে ও সিলিং এ এখনও মলিন হয়ে যাওয়া পার্সীয়ান কার্পেটের মতো মোটিফের কাজ দেখতে পাওয়া যায়।জানলার পাথরের ফ্রেমের কারুকার্যগুলি খুবই সূক্ষ্ম ও মনোমুগ্ধকর। দেওয়ান-ই-খাসের বিপরীতে একটি মঞ্চ আছে যেখানে নর্তকীরা তাদের নৃত্যকলা প্রদর্শন করতেন। আমি দেখলাম কয়েকটি মেয়ে বেড়াতে এসে আনন্দে মঞ্চের উপরে নৃত্য করছে।
দুর্গপ্রাসাদ থেকে এইবার আমি প্রাসাদের ভিতরের প্রাঙ্গণে চলে এলাম।এই প্রাঙ্গণের ধারে রাজা ও রাণীদের বাসগৃহগুলি অবস্থিত।একতলার ডানদিকে অর্থাৎ যে দিক দিয়ে আমি ঢুকেছিলাম সেই ঘর রাজা মধুকর শাহের রাণীর জন্য।এই ঘরের সিলিং ও দেওয়াল অপূর্ব রাজপুত ঘরাণার ফ্রেস্কোর কাজের চিত্রাবলী দ্বারা শোভিত। ফ্রেস্কো পেন্টিং হলো দেওয়াল ও ছাদ জুড়ে স্থায়ীভাবে চিত্রাঙ্কনের বহু পুরনো একটি পদ্ধতি। দেওয়াল ভিজে থাকা অবস্থায় জলরঙে চিত্রাঙ্কন করা হতো।পলস্তারা শুকিয়ে গেলে চিত্রটি স্থায়ীভাবে দেওয়ালের শোভাবর্ধন করত। ব্যবহৃত রং ভেষজ এবং ধাতব উপাদান থেকে সংগ্রহ করা হতো। রেনেশাঁ বা নবজাগরণের সময়ে ইটালিতে ফ্রেস্কো পেন্টিং এর সূচনা হয়। রাজামহল প্রাসাদের বৈশিষ্ট্য হলো বাইরে থেকে দেখতে সাধারণ, কিন্তু এর খিলানাকৃতি দরওয়াজা ও রঙিন ফ্রেস্কোর চিত্রাবলী দর্শকের মন হরণ করে নেয়। নানান বিষয় যেমন রামায়ণ, মহাভারত,নানান দেবদেবী,বিষ্ণুর দশ অবতার, পৌরাণিক কাহিনী, রাজকীয় নানা ঘটনা, অন্দরমহলের সখী পরিবৃত রাণীদের জীবনযাত্রা, নানান উৎসব অনুষ্ঠানের বা যুদ্ধের দৃশ্য.......... বিভিন্ন রঙের সমাহারে অপূর্ব সুন্দর করে চিত্রিত আছে কক্ষের দেওয়ালে ও ছাদে.......এমনকি কুলুঙ্গিতেও। তন্ময় হয়ে দেখছিলাম........হঠাৎ বিদেশী একসেন্টে!
"ওয়াও,লাভলি"
শুনে ফিরে তাকিয়ে দেখি এক সোনালী চুলের নীলনয়না সুন্দরী বিদেশিনী মুগ্ধ হয়ে চিত্রকলা দেখছে,ফটো তুলছে আর নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছে। প্রাসাদের জানলাগুলি এমনভাবে স্থাপিত যে উপর থেকে জানলা খুললেই চতুর্ভুজ মন্দির পরিষ্কার দেখা যায়।
রাজা মধুকর শাহের ছয়জন রাণী ছিলেন। প্রাঙ্গণের উভয় পাশে তিনটি তিনটি করে ঘরে তাঁরা বসবাস করতেন। মধুকর শাহের প্রধান মহিষী গণেশ কুয়ারী দেবী ছিলেন ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের একনিষ্ঠ ভক্ত। তাঁর ব্যবহৃত কক্ষে রামায়ণের চিত্রাবলীর প্রাধান্য দেখা যায়।
রাজা মধুকর শাহের কক্ষটি রাণীদের ঘরের মাঝখানে।তাঁর কক্ষের একপার্শ্বে তিনজন রাণীর কক্ষ এবং অপর পার্শ্বে আরও তিন জন রাণীর কক্ষ। রাজার কক্ষের সঙ্গে সবকটি রাণীদের কক্ষের যোগাযোগ রয়েছে।রাজা মধুকর শাহ্ ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পরম ভক্ত। তাঁর কক্ষে কৃষ্ণলীলার বিভিন্ন চিত্রাবলী দেখা যায়।
প্রাঙ্গণের অপর দিকে রয়েছে স্নানাগার।বেতোয়া নদী থেকে জলবাহকদের দিয়ে জল এখানে নিয়ে আসা হতো।শীতকালে জল গরম করার জন্য স্নানাগারের মাঝখানে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা ছিল।স্নানাগারের ভিতরে একটি স্থানে চন্দন ও অন্যান্য সুগন্ধি দ্রব্য রাখার ব্যবস্থা ছিল।
ওরছার দূর্গপ্রাসাদ ঘুরে দেখার জন্য একজন গাইড নেওয়া উচিত যিনি বন্ধ ঘর ও লুকোনো দরওয়াজা দিয়ে ঢুকিয়ে পুরনো জাঁকজমক দেখাতে পারবেন।
1530 খ্রিস্টাব্দে রাজা রুদ্রপ্রতাপ সিং এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। কিন্তু তিনি এর নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করতে পারেন নি কারণ 1531 খ্রিস্টাব্দে তাঁর অকালমৃত্যু ঘটে। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রাসাদ নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর পুত্র ভারতী চাঁদ সম্মুখভাগ ও প্রধান অংশের নির্মাণ সম্পূর্ণ করতে চেষ্টা করেন,কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।তারপর নির্মাণের দায়িত্ব এসে পড়ে রাজা মধুকর শাহের উপরে।তিনি এই প্রাসাদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন।এই প্রাসাদ রাজপুত ও মোগল ঘরাণার স্থাপত্য শৈলীর মিশ্রণে তৈরি।বূন্দেলখণ্ডের প্রবল গরমের মোকাবিলা করার জন্য এই প্রাসাদের নির্মাণে এমন পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল যা বেশী উত্তপ্ত হয়ে ওঠে না। তাছাড়া পাথরের জাফরির ভিতর দিয়ে যখন বাইরে থেকে বায়ুপ্রবাহ হতো তখন Venturi effect এর জন্য ভিতরটা ঠাণ্ডা রাখতো।এই প্রাসাদের অবস্থান,গঠন,জানলার অবস্থান ও খিলানযুক্ত করিডোর এমন ভাবে বিন্যস্ত যে দিনের বিভিন্ন সময়ে সূর্যালোক ও ছায়া বিভিন্ন মুডে খেলা করে থাকে।1783 খ্রিস্টাব্দে রাজামহল পরিত্যক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত ওরছার রাজারা এখানেই বসবাস করতেন।প্রাসাদের নিচে রয়েছে তোপখানা।
রাজা মহল দেখে কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করে রাজামহলের পূর্ব দিকে অপর একটি অনুপম স্থাপত্য জাহাঙ্গীর মহল দেখতে এলাম।জাহাঙ্গীর মহলের প্রধান প্রবেশপথটি পূর্ব দিকে, কিন্তু এখানে প্রবেশ করার জন্য রাজা মহল থেকে একটি সর্টকাট রাস্তা আছে।রাজামহল প্রাসাদ থেকে কয়েক ধাপ সিঁড়ি উঠে একটি প্রাঙ্গণ অতিক্রম করে এখানে পৌছে যাওয়া যায়।এই প্রাঙ্গণের বাঁদিকে শীষমহল প্রাসাদ দেখা যায়।

জাহাঙ্গীর মহলে:---এই সুন্দর প্রাসাদটি মুঘল ও রাজপুত স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে নির্মিত।সেইজন্য এটিতে দুটি ঘরাণার স্থাপত্য শৈলীর প্রভাব সুস্পষ্ট।যেমন মুঘলদের প্রতীক ময়ূর,আবার বুন্দেলাদের প্রতীক হাতি;মুঘলদের স্থাপত্য গম্বুজ, আবার বুন্দেলাদের স্থাপত্য ছত্রী;মুঘলদের পছন্দ সবুজ রঙ,আবার বুন্দেলাদের সেটি নীলরঙ-এই প্রাসাদে দুরকম স্থাপত্যশৈলীর সকল বৈশিষ্ট্যসমূহ প্রবলভাবে বিদ্যমান। তাই বলা হয় মোগল ও বুন্দেলাদের সম্প্রীতি রক্ষার প্রতীক হলো এই প্রাসাদের নির্মাণ। রাজামহল নির্মাণের প্রায় ষাট বছর পরে এই মহল নির্মিত হয়। দূর্গপ্রাসাদ কমপ্লেক্সের ভিতরের দিকের প্রাঙ্গণে একটি সুষম বর্গাকার জমির উপরে এই মহল অবস্থিত। এই প্রাসাদের প্রতিটি কোণায় একটি করে গোলাকৃতি মিনার শোভাবর্ধন করছে এবং মিনারগুলির শীর্ষ দেশ গম্বুজাকার।দুই সারি মনোরম ঝুলন বারান্দা কারুকার্য সম্বলিত ব্রাকেটের উপর স্থাপিত এবং তা মাঝের তলাটির সীমানা নির্দেশ করছে।প্রাসাদের শীর্ষদেশটি আটটি বৃহদাকার গম্বুজ দ্বারা শোভিত। তাদের মাঝখানে মাঝখানে ছোট ছোট গম্বুজ আছে।গম্বুজগুলো সব কারুকার্য খচিত রেলিং শোভিত।এই প্রাসাদে প্রত্নতত্ত্ব দফতরের মিউজিয়াম বসেছে।
সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে 1618 খ্রিস্টাব্দে রাজা বীর সিং দেও তাঁর মিত্র মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরকে ওরছাতে স্বাগত জানাতে এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। জাহাঙ্গীর ওরছায় একরাত্রি অবস্থান করেছিলেন, তবে এই প্রাসাদেই অবস্থান করেছিলেন কিনা সঠিক জানা যায় না।
আকবর ওরছা জয় করার জন্য যুবরাজ সেলিম,আবদুল হাসান,আসফ খান এবং আবুল ফজলকে পাঠিয়েছিলেন। যুবরাজ সেলিমের সঙ্গে বারো হাজার সৈন্য পাঠানো হয়েছিল। রাজা বীর সিং দেও যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সন্ধি করতে বাধ্য হলেন। তিনি অঙ্গীকার করেন যে আকবরের সঙ্গে জোট কখনো ভাঙবেন না।তাঁকে পাঁচ হাজার পদাতিক ও এক হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের উপর প্রভুত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছিল।এই ঘটনার তিন বছর পর যুবরাজ সেলিম আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ওরছা পালিয়ে আসেন এবং রাজা বীর সিং দেও তাঁকে আশ্রয় প্রদান করেন ও সকল প্রকার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। আকবর বিদ্রোহ দমন করতে ও যুবরাজ সেলিমকে হত্যা করার জন্য সৈন্য সামন্ত সহ আবুল ফজলকে ওরছা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু রাজা বীর সিং দেও আবুল ফজলকে হত্যা করে তাঁর ছিন্ন মুণ্ড সেলিমকে উপহার দিয়েছিলেন।এর ফলে যুবরাজ সেলিম ও রাজা বীর সিং দেও এর মধ্যে এক মিত্রতার সম্পর্ক তৈরি হয়।সেলিম পরবর্তী কালে জাহাঙ্গীর নাম নিয়ে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করলে রাজা বীর সিং দেও বন্ধু জাহাঙ্গীরকে ওরছায় আমন্ত্রণ জানান এবং জাহাঙ্গীরের ওরছা আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে রাজা বীর সিং দেও এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন।
আর একটি ঐতিহাসিক ঘটনা এই প্রাসাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। 1635 খ্রিস্টাব্দের 4th October ষোল বছর বয়সে ঔরঙ্গজেব সম্রাট শাহজাহানের প্রতিনিধি হিসেবে বুন্দেলাদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভ করে জাহাঙ্গীর মহলের শীর্ষে মোগল পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।তখন দেবী সিং কে ওরছার সিংহাসনে বসানো হয়েছিল। বিদ্রোহী রাজা জুঝাড় সিং কে হত্যা করে শাহজাহান ওরছার সম্রাট হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন।
এই তিনতলা প্রাসাদটির বৈশিষ্ট্য হলো এর অপূর্ব ভাস্কর্য,ঝুলন্ত ব্যালকনি,সূক্ষ্ম কারুকার্য সম্বলিত বিম,ছত্রীসমূহ,গম্বুজাকার শিখর, কতগুলি প্রাঙ্গণ এবং অসংখ্য বিলাসবহুল কক্ষ। একশোটির বেশি ঘর আছে এই প্রাসাদে। অনেকগুলি ঘর ভূগর্ভস্থ। বর্তমানে ভূগর্ভস্থ ঘরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। তিন তলার উপর থেকে একদিকে বেতোয়া নদী এবং অপর দিকে চতুর্ভুজ মন্দির দেখতে পাওয়া যায়।
ছাদের উপর অনুচ্চ হেলান প্যরাপিট যা শিখরে অবধি উঠে গিয়েছে তা ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ। শিখরগুলিতে সব শকুনের বাসা। আগেই বলা হয়েছে যে ছাদের উপর আটটি গম্বুজাকার শিখর রয়েছে।

এই মহলের প্রধান প্রবেশ পথটি যে পূর্বদিকে তা আগেই বলা হয়েছে।প্রবেশপথটিতে টার্কিস্ টালির কাজ দেখতে পাওয়া যায়।প্রবেশদ্বারের দুপাশে হাতির মূর্তি আছে,যা ঘন্টা নিয়ে আগন্তুককে স্বাগত জানায়।সবুজ ও নীল-এই দুই রকম রঙের টালি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।
এরপর যে স্থাপত্যটি দেখলাম তা হোল শীষমহল প্রাসাদ।

শীষমহল:---রাজামহল ও জাহাঙ্গীর মহলের মাঝখানে এটি অবস্থিত।শীষমহলের বাঁয়ে রাজামহল ও ডানদিকে জাহাঙ্গীর মহল।এই মহলটিতে মধ্যযুগে ভারতের সমৃদ্ধশালী ঐতিহ্য,পরম্পরা ও উন্নত স্থাপত্যশৈলীর ঝলকানি দেখা যায়।এটি একটি সুন্দর স্থাপত্য এবং বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট করপোরেশনের (MPTDC) অধীন একটি বিলাসবহুল হোটেলে পরিণত হয়েছে।ওরছার মহারাজা উদিত সিং এর বসবাসের জন্য 1554 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1592 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাজা মধুকর শাহ্ এই মহল নির্মাণ করেছিলেন।রাজা সুইট ও রাণী সুইট ছাড়া আরও চারটি বিলাসবহুল কক্ষ এখানে আছে।এই মহলের ডাইনিং হলটি অতুলনীয়।এই মহলের শীর্ষদেশ থেকে সমগ্র ওরছা নগরীর সুন্দর দৃশ্য খুব সহজেই প্রতীয়মান হয়।

জাহাঙ্গীর মহলের সুদৃশ্য পূর্বদিকের তোরণদ্বার থেকে উটখানা,বেতোয়া নদী,রাই পারভীন মহল ও সঙ্গে আনন্দবাগ এবং নদীর তীরের কিছু স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।জাহাঙ্গীর মহলে কিছু ফটোগ্রাফি করার পরে আমি পূর্বদিকের তোরণদ্বার দিয়ে রাস্তাতে নেমে এলাম।এই রাস্তার সন্নিকটে কয়েকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপত্য আছে যেগুলো হলো শ্যমদুয়া কোঠি,রসালদার কোঠি এবং রাই পারভীন মহল।
উটখানা:--(উটের থাকার জায়গা)
দুর্গপ্রাসাদের ঠিক পরেই এর অবস্থান।এটি একটি অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান।এর ছাদের উপর উঠে ওরছা শহরের সামগ্রিক দৃশ্য দেখা বড়ই মনোরম অভিজ্ঞতা।দুর্গপ্রাসাদের পিছনে ভগ্নাবশেষের সৌন্দর্য বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এখানে অনেক সামরিক পদাধিকারীর বাসস্থান,মন্ত্রী ও আমলাদের বাসগৃহ,রাস্তা ও বারুদের কারখানা ইত্যাদির ভগ্নাবশেষ রয়েছে।

শ্যামদুয়া কোঠি:--এটি ছিল প্রধান সেনাপতির
আবাসস্থল।শ্যামদুয়া ছিলেন রাইমান দুয়ার পৌত্র। রাইমান দুয়া ছিলেন রাজা বীর সিং দেও এর সভাসদ। রাইমান দুয়ার পরিবার কোন এক অজ্ঞাত কারণে আগুনে পুড়ে আত্মহত্যা করেন।শোকাহত রাজা বীর সিং দেও রাইমান দুয়ার পুত্রবধূকে ওরছাতে ডেকে পাঠান এবং তাঁর বসবাসের জন্য একটি মহল নির্মাণ করে দেন।এই মহলের নাম হয় শ্যমদুয়া কোঠি।এই মহলটি দ্বিতল এবং এতে একটি বিশালাকার প্রাঙ্গণ ও সেচ সুবিধা যুক্ত দুটি মনোরম উদ্যান দেখা যায়। ভিতরে একটি কূপও রয়েছে। তবে এগুলো সব ঘিরে রাখা আছে। মুঘলরা শ্যামদুয়াকে হত্যা করে,কারণ তিনি মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন।

শ্যমদুয়া কোঠির পাশে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত মহল দেখা যায় যার নাম রাইসালদার কোঠি। এটি ছিল অশ্বারোহী সৈন্যবাহিনীর প্রধানের আবাসস্থল।

রাই পারভিন মহল:---এরপর আমি রাই
পারভীন মহলের দিকে এগিয়ে গেলাম। এই মহলটি ওরছার এক বিখ্যাত ও বিস্ময়কর স্থাপত্য যেটি সত্যিকারের একটি নীরব ও জীবন্ত দলিল।অসীম সাহসীনি,উচ্চ প্রশংসনীয় নৃত্য,সঙ্গীত ও কবিপ্রতিভার অধিকারিনী এবং অসাধারণ প্রতিভাবান ও সুন্দরী নর্তকী রাই পরভিনের স্মারক। তিনি ছিলেন রাজা ইন্দ্রজিতের রাজসভার নর্তকী ও তাঁর প্রেমিকা।তাঁর সৌন্দর্য ও নৃত্যগীতে পারদর্শীতার জন্য অনেকের হৃদয় জয় করেছিলেন।বিখ্যাত কবি কেশবদাস তাঁর সম্মানে 'কবিপ্রিয়া' কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। সেখানে তিনি তাঁর সৌন্দর্যকে রূপমতি ও মৃগনয়নীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাঁর সৌন্দর্য ও গুণাবলীর সুখ্যাতি দিল্লিতে আকবর বাদশার কানে গিয়ে পৌছলে তিনি রাই পারভিনকে তাঁর দরবারে ডেকে পাঠালেন। উদ্দেশ্য একটাই,রাই পারভিনকে তাঁর হারেমে বন্দী করা। প্রবল পরাক্রমশালী সম্রাট আকবরের হুকুম অমান্য করার ক্ষমতা রাই পারভিন বা রাজা ইন্দ্রজিতের ছিল না।তিনি আকবরের হুকুম মোতাবেক 1602 খ্রিস্টাব্দে দিল্লি যেতে বাধ্য হলেন। আকবরের রাজসভায় নৃত্যগীত পরিবেশনের পর আকবরের কাছে কিছু বক্তব্য রাখার আবেদন করলেন এবং কবিতা ছন্দে বললেন- "Vinit Rai Praveen ki,suniye Sah Sujan,
Juthi patar bhaka hain,bari,bayas,swan."
অর্থাৎ রাই পরভিনের বিনীত নিবেদন এই যে নিচু জাতের লোক,কাক ও নাপিত ছাড়া কেউ উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করে না। জাঁহাপনা এদের মধ্যে কোন শ্রেণীভুক্ত?
বুদ্ধিমান সম্রাট আকবর এই কথার অর্থ বুঝলেন। কারণ তিনি জানতেন যে রাই পরভিন রাজা ইন্দ্রজিতের প্রেমিকা ও তাঁকেই হৃদয় দিয়ে বসে আছেন।গুণীর কদর গুণীরাই করেন।তাই রাই পরভিনের বুদ্ধিমত্তা ও কবিত্বশক্তির পরিচয় পেয়ে সম্রাট সসম্মানে তাঁকে মুক্তি দিলেন এবং অনেক ইনাম ও সুরক্ষা দিয়ে ওরছায় প্রেরণ করলেন।

রাই পরভিন মহলটি রাজা ইন্দ্রজিৎ 1618 খ্রিস্টাব্দে রাই পরভিনের বসবাসের জন্য নির্মাণ করেছিলেন। ওরছাতে প্রথম দর্শনে এটি চোখে পড়ে না। এখানে আসতে হলে জাহাঙ্গীর মহলের পিছনে কয়েকধাপ সিঁড়ি নেমে উটখানার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। মহলটি দ্বিতল,দ্বিতলে একটি বড় হলঘর আছে এবং হলঘরের দেওয়ালে রাই প্রভীনের নাচের বিভিন্ন মুদ্রার ছবি আঁকা আছে।মহলটিতে অনেকগুলো ঘর রয়েছে এবং তাতে বড় বড় জানলা আছে। মহলটির সঙ্গে একটি উদ্যান আছে যেটি দুটি ভাগে বিভক্ত।উদ্যানটির নাম 'আনন্দমণ্ডল বাগ'। বর্তমানে উদ্যানটি আগাছা ও শুকনো ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ।পুরুষসঙ্গী বা অন্যান্য পর্যটকদের সঙ্গ ছাড়া এখানে কোন একা মেয়ের যাওয়া উচিত নয়। গাইডরাও এগুলো দেখাতে চায় না। এই মহলটির অপর নাম হলো "রাই পরভিন মণিকা ভবন" ও "তোপখানা।" কারণ এটি পরবর্তী কালে গোলাবারুদ রাখতে ব্যবহার করা হতো।

রাই পরভিন মহল থেকে কয়েক পা এগিয়ে শাহী দরওয়াজা চোখে পড়ল। এই তোরণদ্বার নির্মিত হয়েছিল সম্রাট জাহাঙ্গিরকে ওরছায় স্বাগত জানাতে।এর উপরের তলার ঘরগুলো সাধারণের জন্য বন্ধ করা আছে। ডানদিকে উটখানা দেখতে পাওয়া যায়।আমি এই তোরণের ভিতর দিয়ে হেঁটে চলে গেলাম এবং বাঁ দিকে ঘুরে কয়েকটি প্রাচীন সৌধের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেলাম। সবুজের সমারোহের মধ্যে দিয়ে এবড়োখেবড়ো বালুকাময় রুক্ষ রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে শিবমন্দির,তিন দেশীয় কা মহল,পঞ্চমুখী মহাদেব মন্দির,রাধিকা বিহারী মন্দির ও বনবাসী মন্দির দেখতে পেলাম। এরপর আর বিশেষ এগোনোর জায়গা নেই। স্থাপত্যশৈলীর দিক দিয়ে দেখলে এগুলির বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য নেই।তবে অফবিট লোকেশন এদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।এগুলি সব ASI দ্বারা সংরক্ষিত। তবু স্থানীয় লোকজন এর চৌহিদ্দির মধ্যে ঢুকে পড়ে চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছে।এদিকে আসাটা বেশ বিপজ্জনক, কারণ এখানে কুকুরে তাড়া করে। সেইজন্য হাতে লাঠি রাখা উচিত।
আমার এই পদযাত্রার প্রথম গন্তব্যস্থল ছিল সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত একটি ছোট শিবমন্দির।এখানে একটি বড় মন্দিরের চৌহিদ্দির ভিতরে দুটি ছোট ছোট স্থাপত্য আছে। মূল মন্দিরের শিখরটি অষ্টকোণবিশিষ্ট ও এর একটি অর্ধমণ্ডপও রয়েছে।মন্দিরে একটি শিবের মূর্তি ও শিবলিঙ্গ ছিল যা বর্তমানে রামরাজা মন্দিরে স্থানান্তরিত হয়েছে।
কুকুরের হাত থেকে পালিয়ে আমি এসে পৌছোলাম পঞ্চমুখী মহাদেব মন্দিরগুচ্ছের চত্বরে। রাজা বীর সিং দেও এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।বর্তমানে এই মন্দির স্থানীয় চাষীদের দ্বারা অধিকৃত এবং দেখলাম বাচ্চারা এখানে ক্রিকেট খেলছে। এই মন্দিরগুচ্ছে তিনটি মন্দির তিনটি বিভিন্ন দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। এককালে এই মন্দিরে অনেক হিন্দু দেবদেবী ও ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের চিত্রাবলী আঁকা ছিল।এই মন্দিরের গঠনশৈলীর সঙ্গে খাজুরাহোর মন্দিরগুচ্ছের গঠনশৈলীর মিল আছে।
এরপর আমি আরও এগিয়ে একটি সীমানা প্রাচীর বিহীন,পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত মন্দিরে এসে পৌছোলাম।মন্দিরটি সুন্দর এবং রাজা বীর সিং দেও এটি নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের নাম রাধিকা বিহারী মন্দির,যেটি বুন্দেলা স্থাপত্যশৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন।মন্দিরের গর্ভগৃহটি মনোরম এবং গর্ভগৃহে গণেশের ও দ্বারপালের ভাস্কর্য দেখা যায়।
তারপর দেখলাম বনবাসী মন্দির। এটিও রাজা বীর সিং দেও নির্মাণ করেন এবং এটি একটি রামমন্দির।বর্তমানে মন্দিরটি খালি এবং বিগ্রহটি রামরাজা মন্দিরে স্থানান্তরিত হয়েছে।মন্দিরের চারিদিকে কেবল লম্বা লম্বা ঘাস।এখানে এসে বেতোয়া নদীর কলধ্বনি কানে এল।নদীতে গিয়ে এক আঁজলা জল নিয়ে মাথায় দিলাম ও পা ধুয়ে নিলাম।
নদীর ধারে কিছুক্ষণ বসে তাড়াতাড়ি প্রাসাদদূর্গের প্রবেশপথে চলে এলাম।সেখান থেকে তাড়াতাড়ি লজে ফিরে এলাম কারণ অন্ধকার নেমে এসেছে। আজ আর কোথাও ঘোরা সম্ভব ছিল না। তবে সন্ধ্যাবেলা রামরাজা মন্দিরের আরতি ও রাজামহলের লাইট অ্যাণ্ড সাউণ্ড শো দেখলাম। আগামীকাল সকালে আবার বের হয়ে বাঁকি দ্রষ্টব্য গুলো দেখতে হবে।

descriptionবুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh EmptyRe: বুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh

more_horiz
#ওরছা (ভারতের মিউজিয়াম নগরী)


কালীঞ্জর দূর্গ থেকে ফিরে আটারাতে আমার হোটেলে সন্ধ্যায় ফিরে এলাম। এখান থেকে এবার ওরছা যেতে হবে। ওরছা মানিকপুর ঝাঁসী লাইনের ঝাঁসীর আগের স্টেশন।আটারা থেকে দূরত্ব প্রায় দুশো কিলোমিটার। সকালে আটারা থেকে ওরছা যাবার জন্য ঝাঁসী মানিকপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেন আছে,মানিকপুর থেকে রাত দুটো বেজে কুড়ি মিনিটে ছেড়ে ভোর তিনটে পঞ্চাশ মিনিটে আটারাতে আসার কথা ও সকাল ন'টা পনেরো মিনিটে ওরছা পৌছনোর কথা। কিন্তু সেই ট্রেন ভারতীয় রেলের অসীম দয়ায় আটারাতে এল সকাল সাড়ে আটটায় এবং ওরছায় যখন বিধ্বস্ত অবস্থায় গাড়ি থেকে নামলাম তখন বিকেল তিনটে বেজে গিয়েছে। এই লাইনে নাকি গাড়ি এইরকম ভাবেই চলে! লোকজনকে জিজ্ঞেস করাতে তাঁরা বললেন "হামলোগ যেয়সা হ্যায়, হামলোগকা ট্রেন ভি অ্যাইসাই হ্যায়, অ্যাইসাই চলতা হ্যায়।"আমি বললাম এত লোক যাতায়াত করে, অথচ কেউ কোন ডেভলপমেন্ট করার কথা চিন্তা করে না? একজন কলেজ স্টুডেন্ট বলল "বুন্দেলখণ্ডকা আদমী পুরা দিন দো বেলা দো রোটিকে লিয়ে যুঝ রহা হ্যায়, ক্যেয়া ডেভলপমেন্ট হোগা সাব্? কৌন করেগা ডেভলপমেন্ট?" বুঝলাম এটাই বাস্তব সত্য। "ক্ষুধার রাজত্বে সব কবিতাই গদ্যময়।"
ট্রেনে দীর্ঘক্ষণ বসে বুন্দেলখণ্ডের ভূপ্রকৃতি ও তার মানুষজনের পরিচয় পেলাম।ভূপ্রকৃতি এখানে বড়ই রুক্ষ,পাথুরে জমি ও মাঝে মাঝে অনুচ্চ পাহাড়ের সারি। তার মধ্যে মাঝে মাঝে সবুজ ঝোপঝাড় ও উচ্চ বনস্পতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।চাষযোগ্য জমি ও জলের অভাব এখানে। ট্রেনের মধ্যে এই দীর্ঘ সময় বসে থাকার মরণযন্ত্রণা ভোগ করতে করতে দুপুর তিনটে সময় ওরছা স্টেশনে নামলাম। এই স্টেশন ঝাঁসী থেকে 20 কিলোমিটার আগে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের সীমানাতে অবস্থিত। এখানে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা দেশীয় পর্যটকের থেকে বেশি।
বাইরে থেকে হঠাৎ এসে এখানে নামলে মনে হবে 'এ কোথায় এলাম?' ভারতের আর পাঁচটা অতি সাধারণ আধা শহরের মতোই এর পরিবেশ, বাড়িঘর, পথঘাট ও সাধারণ সকল অধিবাসীরা। কিন্তু ওরছার ভিতরে ঢুকে যদি তার ঘ্রাণ নেওয়া যায় তবে ইতিহাসপ্রেমি এখানে প্রতি ধূলিকণাতে ইতিহাসের গন্ধ পাবে,আধ্যাত্মিক মানুষ খুঁজে পাবে দেবদর্শনের অপার শান্তি ও প্রকৃতিপ্রেমিক খুঁজে পাবে প্রকৃতির মধ্যে পরমাত্মার জ্যোতির প্রকাশ।সভ্যতা থেকে অনেক দূরে প্রাচীনতার একটা গন্ধ এখানে আছে।ঐতিহাসিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছোট শহর ওরছা হলো চিত্রশিকারীদের স্বর্গরাজ্য।মনোমুগ্ধকর প্রাচীন শিল্পসমৃদ্ধ সব প্রাসাদ,সূক্ষ্ম কারুকার্য সম্বলিত সব মন্দির ও হাভেলী ও প্রাণোচ্ছল বেতোয়া নদী পর্যটককে এক অন্য ভালোলাগার জগতে নিয়ে যায়। রেললাইন এখানে উত্তরপ্রদেশের ও মধ্যপ্রদেশের সীমানার মধ্যে লুকোচুরি খেলতে খেলতে এগিয়ে চলেছে, কখনো সে উত্তরপ্রদেশের মধ্যে ঢুকে পড়েছে,আবার কখনো সেখান থেকে বেরিয়ে মধ্যপ্রদেশে প্রবেশ করছে। আসলে ওরছা বুন্দেলখণ্ডের একসময়ের রাজধানী ছিল। বুন্দেলখণ্ড ভৌগলিক অঞ্চল মধ্য ভারতের একটি পার্বত্য অঞ্চল যা উত্তরে যমুনা নদীর দক্ষিণ তটভূমি থেকে নর্মদা নদীর উত্তর তট পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি মধ্য ভারতের বিন্ধ্য পর্বতে আরণ্যক বন্ধুর পাহাড়ে অবস্থিত।এখানে নবম শতকে চান্দেলা রাজাদের গড়া সম্রাজ্য জেজিকাভুক্তি নামে পরিচিত ছিল। এখানে পনেরো শতকে বুন্দেলাদের উত্থানের সঙ্গে পরবর্তী কালে এই অঞ্চল বুন্দেলখণ্ড নামে পরিচিত হয়। বুন্দেলারাজাদের আমলে প্রগতির শিখরে ওঠে বুন্দেলখণ্ড। আর স্বাধীনোত্তর ভারতে বুন্দেলখণ্ড টুকরো হয়ে ঝাঁসী,ললিতপুর,ঝালায়ুন,হামিরপুর, বান্দ্রা এবং মাহোবা জেলা হয়ে উত্তরপ্রদেশে ; সাগর,ছাতারপুর, টিকমগড়,পান্না,দামো জেলা ছাড়াও গোয়ালিয়র,ডাটিয়া,শিবপুরী এবং চান্দেরী মধ্যপ্রদেশের অংশ হয়।এই ভূভাগে সবুজে ছাওয়া অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণী, নানা মন্দির,নানা দুর্গ ও প্রাসাদ ভ্রমণপ্রিয় উৎসাহী পর্যটককে ইতিহাস রোমন্থন করায়।
বুন্দেলখণ্ডে প্রবেশের আগে আমরা জেনে নেব বুন্দেলাদের উৎপত্তি ও তাদের এইরূপ নামকরণের কারণ। একেবারে আদি থেকেই শুরু করলাম।
বিষ্ণুর নাভিপদ্মের উপর ব্রহ্মার উৎপত্তি। ব্রহ্মার বংশধরেরা হলেন মারিচী ,কাশ্যপ, সূর্য (কাশ্যপ মুনি ও অদিতির সন্তান),ইক্ষাকু, দিলীপ,রঘু, অজ,দশরথ,রামচন্দ্র, কুশ,হরিব্রহ্ম এবং বিহাগারাজা।বিহাগারাজার সপ্তম উত্তর পুরুষ হলেন কীরাটদেব।কীরাটদেব ছিলেন কাশীর রাজা বীরভদ্রের পূর্বপুরুষ। বুন্দেলা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বীরভদ্রের ছেলের বংশধর।বীরভদ্রের ছেলের নাম ছিল জগদাস।উনি পঞ্চম, দেবদাস ও হেমকরণ নামেও প্রসিদ্ধ ছিলেন।

জগদাস ছিলেন বীরভদ্রের ছোট রাণীর সন্তান। বীরভদ্রের পাটরাণীর চার পুত্র জগদাসকে কাশীরাজ্যের ভাগ দিতে অস্বীকার করায় উনি বিন্ধ্যাচলে বিন্ধ্যবাসিনী দেবীর মন্দিরে তপস্যা করতে শুরু করলেন। দীর্ঘ তপস্যার পরেও কোন সাড়া না পেয়ে তিনি দেবীর চরণে স্বীয় মস্তক অর্পণ করতে উদ্যত হলেন। যখনই তরবারি তাঁর গলা স্পর্শ করল তখন এক বিন্দু রক্ত ভূমিতে পতিত হলো এবং তখনই দেবী আবির্ভূত হলেন। দেবী আবির্ভূত হয়ে বরদান করলেন যে এই রক্তবিন্দু থেকে একজন শক্তিশালী রাজার জন্ম হবে যে সমগ্র বুন্দেলখণ্ড শাসন করবে। রক্তের বিন্দু বা 'বুন্দ' থেকে জন্ম বলে তাঁরা 'বুন্দেলা' নামে পরিচিত হলেন। সেই থেকে বুন্দেলাদের কুলদেবী হলেন দেবী বিন্ধ্যবাসিনী। মনে হয় নিজেদের বংশ যে দৈবসম্পর্কযুক্ত তা বিবৃত করতে এই কাহিনী প্রচার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে চান্দেলা রাজবংশের উৎপত্তি সম্পর্কেও এই ধরণের চন্দ্রদেবতা কেন্দ্রীক এক কাহিনী প্রচলিত আছে।
জগদাসের বংশধর অর্জুনপাল মাহোনীর শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র বীরপাল তাঁর মৃত্যুর পরে মাহোনীর রাজা হলেন। কিন্তু তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র সোহনপাল ছিলেন একজন কুশলী যোদ্ধা। সোহনপাল তাঁর রাজত্বের ভাগ পাওয়ার জন্য নাগা বা হুরসাত সিং এর সাহায্য প্রার্থনা করলেন। নাগা ছিলেন কুরার বা কুন্দারের খানগার আদিবাসী গোষ্ঠীর শাসনকর্তা। খানগারদের রাজধানী ছিল গড়কুন্দর যা এখন মধ্যপ্রদেশের নিওয়াড়ি জেলার একটি গ্রাম। সেই সময়ে তাদের রাজত্বের নাম ছিল জুঝৌটি (Jujhauti) বা 'Land of Warriors'.গড়কুন্দর গ্রামে একটি সুন্দর দূর্গের অবশেষ এখনও দেখা যায়। কুন্দর গ্রামের নাম এইরূপ হওয়ার কারণ হলো কুণ্ড অর্থাৎ জলাশয় এবং অর্ক অর্থাৎ সূর্যদেব। এই গ্রামে একটি জলাশয় আছে যার জলে স্নান করলে সূর্যদেবের কৃপায় চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।আসলে গ্রামের নাম 'কুন্দার্কা',সেখান থেকে অপভ্রংশে কুন্দার হয়েছে। এই পুষ্করিণীর কাছে গৃধবাহিনী মায়ের মন্দির আছে।
নাগা সোহনপালকে সাহায্য করতে সম্মত হলেন, কিন্তু বিনিময়ে বুন্দেলা রাজপুত পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার সর্ত দিলেন।সোহনপাল নাগার এই প্রস্তাবে অসম্মত হওয়ায় নাগা এতে অপমানিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে সোহনপালকে বন্দী করলেন।সেই বন্দীদশা থেকে সোহনপাল কোনও ক্রমে নিজেকে মুক্ত করে চৌহান,সালিঙ্গার ও কাছুয়া
রাজপুতদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। শেষে জাঠ রাজপুতদের এক শাখা পারমার প্রধান পানপাল বা পূণ্যপাল তাঁকে সাহায্য করতে সম্মত হলেন। তাঁদের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে নাগা 1288 খ্রিস্টাব্দে পরাজিত হলেন।সোহনপাল তখন কুন্দার দূর্গের সমস্ত খানগার গোষ্ঠীর পুরুষদের হত্যা করলেন,কিন্তু তিনি মহিলা ও শিশুদের ছেড়ে দিলেন,এই সর্তে যে খানগার গোষ্ঠীর শিশুরা বড় হয়ে সারাজীবন বুন্দেলাদের ভৃত্য হয়ে থাকবে। এরপর সোহনপাল কুন্দারের রাজা হলেন ও তাঁর কন্যা পানপালকে বিবাহ করলেন।
বুন্দেলারা যদুবংশীয় আহির গোষ্ঠীর লোকেদের সঙ্গে দুগ্ধভ্রাতার সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এর সর্ত ছিল আহির গোষ্ঠীর মহিলারা তাদের বুকের দুধ দিয়ে বুন্দেলা রাজপুত্রদের পুষ্টিদান করবে ও তাদের পুরুষরা বুন্দেলা সেনাবাহিনীতে সৈনিকের চাকরি পাবে।ওরছা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা যাঁর হাত ধরে সেই রাজা রুদ্রপ্রতাপ সিং হলেন রাজা সোহনপালের বংশধর।তাঁর রাজত্বকাল 1501 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1531 খ্রিস্টাব্দ। দিল্লির তুঘলকি আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে তিনি তাঁর রাজধানী গড়কুন্দর থেকে ওরছাতে সরিয়ে নিয়ে আসেন। 'ওরছা' শব্দের অর্থ হচ্ছে 'লুকোনো' বা 'Hidden'.ওরছা বেতোয়া বা বেত্রবতী নদীর তীরে অবস্থিত।ওরছার কাছে নদী অনেক ভাগে বিভক্ত হয়ে নদীর দ্বীপ সৃষ্টি করেছে।তখন এই নদীর দ্বীপ ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। রুদ্রপ্রতাপ এইরকম এক লুকোনো ও বিচ্ছিন্ন জায়গা রাজধানী গড়ার জন্য খুঁজছিলেন। নদীদ্বীপে যেখানে টাঙ্গারণ্য জঙ্গল সেখানে রাজধানী স্থাপিত হলো। তিনি নদীর উপরে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপভূমির সংযোগ রক্ষার্থে একশোপাঁচ মিটার দীর্ঘ খিলান যুক্ত একটি সেতু নির্মাণ করেছিলেন এবং সেই সেতু আজও তার কাজ করে যাচ্ছে , যেটি লণ্ডন ব্রীজের থেকেও পুরোন।

রাজা রুদ্রপ্রতাপ সিং 1531খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন।শোনা যায় তিনি একটি গরুকে বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন।ওরছার রাজারা ছিলেন বৈষ্ণব। তাঁর পরে ওরছার রাজা হলেন রুদ্রপ্রতাপের পুত্র ভারতীচাঁদ, যাঁর রাজত্বকাল 1531খ্রিস্টাব্দ থেকে 1554 খ্রিস্টাব্দ।ভারতীচাঁদের কোন উত্তরাধিকারী ছিল না।উনি 1554 খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন। ভারতী চাঁদের পর রাজা হলেন তাঁর ছোট ভাই মধুকর শাহ (1554-1592)। উনি খুবই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। উনি ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত।ওনার রানী ছিলেন গণেশ কানওয়ার।তিনিও খুব ভক্তিমতি মহিলা ছিলেন। ওনার আরাধ্য দেবতা ছিলেন ভগবান রামচন্দ্র। ভারতীচাঁদ ও মধুকর শাহ্ উভয়কেই শের শাহের পুত্র ইসলাম শাহ সুরী (1545-1553) ও মুঘল বাদশা আকবরের (1556-1605) আক্রমণ প্রতিহত করতে হয়েছে। ভারতীয়চাঁদের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন সভাকবি কেশবদাস। 1577 ও 1588 সালের যুদ্ধে মধুকর শাহ্কে রাজ্যের অনেকটা জায়গা আকবরকে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ওরছাকে সেই সময় মোগলের বশ্যতা স্বীকার করতে হয়েছিল।ওরছা মোগল সাম্রাজ্যের এক করদ্ রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।রাজা মধুকর শাহ্ আকবরের সভাতে যোগ দেন।এসব তথ্য আমরা জানতে পারি 'আইন ই আকবরি' পাঠ করে। পরে 1588 সালে যুদ্ধ করে মধুকর শাহ্ রাজ্যের কিছু অংশ উদ্ধার করেন। মধুকর শাহের পুত্র রামা শাহ (1592-1605) আকবরের সঙ্গে সন্ধি করেন ও তাঁর সভাতে যোগদান করেন।তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর ভাই ইন্দ্রজিৎ সিং তখন ওরছার রাজা ছিলেন। তাঁর আর এক ভাই ছিল,তাঁর নাম বীর সিং দেও।যুবরাজ সেলিম যখন আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন তখন বীর সিং দেও সেলিমকে আশ্রয় ও সৈন্যদল দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। পরে সেলিম যখন জাহাঙ্গীর (1605-1627) নাম নিয়ে সম্রাট হলেন তখন ওরছাতে তাঁর আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে ও তাঁকে স্বাগত জানাতে রাজা বীর সিং দেও তাঁর নামে এক বিশাল সুদৃশ্য মহল নির্মাণ করেছিলেন,যেটি জাহাঙ্গীর মহল নামে পরিচিত। রাজা বীর সিং দেও এর রাজত্বকাল (1606-1627) ছিল ওরছার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ।ওরছা সেই সময়ে শিল্প , স্থাপত্য,সঙ্গীত ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে উন্নতির শিখরে পৌছেছিল। রাজা বীর সিং দেও এর চার পুত্র ছিল যথাক্রমে জুঝাড় সিং,হরদৌল সিং,দেবী সিং ও কনিষ্ঠ পুত্র পাহাড় সিং।
শাহজাহানের রাজত্বকালে মোগলদের সঙ্গে বিরোধ আবার চরমে ওঠে। শাহজাহান সিংহাসনে আরোহণ করেন 1628 খ্রিস্টাব্দে এবং তাঁর রাজত্বকাল 1658 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। বীর সিং দেও এর পুত্র জুঝাড় সিং কে (1627-1635) তিনি অরণ্যে বিতাড়িত করেন ও 1635 সালে তাঁকে হত্যা করলেন। জুঝাড় সিং এর মৃত্যুর পরে দেবী সিং(1635-1641) ও পাহাড় সিং(1641-1653) পর পর ওরছার সিংহাসনে আরোহণ করেন।পাহাড় সিং এর মৃত্যুর পরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সুজান সিং (1653-1672) ওরছার রাজা হলেন। সুজান সিং এর কোন পুত্র সন্তান ছিল না। সুজান সিং এর মৃত্যুর পরে তাঁর ভাই ইন্দ্রমণি সিং রাজা হলেন । ইন্দ্রমণি সিং এর (1672-1675) মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র যশোবন্ত সিং(1675-1684) রাজা হলেন।রাজা যশোবন্ত সিং ঔরঙ্গজেবের অধীনে ছিলেন এবং ঔরঙ্গজেব তাঁকে উত্তরীয় প্রদান করে সম্মানিত করেন।যশোবন্ত সিং এর অকালে মৃত্যুর পরে তাঁর নাবালক পুত্র ভগবন্ত সিং রাজা হলেন(1684-89)। তাঁর ঠাকুরমা রাণী অমরকুনারী দেবী ভগবন্ত সিং কে প্রতিপালন করেছিলেন,যিনি ছিলেন রাজা ইন্দ্রমণির স্ত্রী।তিনি আবার উদাত সিং কেও পালন করেন।উদাত সিং ছিলেন হরদৌলের চতুর্থ বংশধর ও বানগাঁও এর জায়গীরদার।

আমি এর পর থেকে নিচে স্বাধীনতার কাল পর্যন্ত ওরছার রাজাদের নামের তালিকাটা পেশ করলাম।এনাদের রাজা উপাধিতে ভূষিত করা হতো।

* রাজা উদাত সিং (1689-1735)
* রাজা পৃথিবী সিং (1735-1752).এনার পুত্র পূরাণ সিং বাঘ শিকার করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
* রাজা শাওয়ান্ত সিং (1752-1765),ইনি ছিলেন পূরাণ সিং এর পুত্র ও পৃথিবী সিং এর পৌত্র এবং মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের(1760-1788) কাছ থেকে মহেন্দ্র উপাধি লাভ করেছিলেন।
* রাজা হাটে সিং (1765-1768),ইনি রাজা শাওয়ান্ত সিং এর পুত্র।
* রাজা মান সিং (1768-1775)
* রাজা ভারতী সিং (1775-1776)
* রাজা বিক্রমজিৎ মহেন্দ্র (1776-1817)
* রাজা ধরম পাল (1817-1834)
* রাজা তাজ সিং (1834-1842)
* রাজা সুরজৈন সিং (1842-1848)
* রাজা হামীর সিং (1848-1865)

বৃটিশ রাজত্বের প্রথমে কোম্পানির আমলে এবং পরে তাঁদের নামের আগে রাজা উপাধি দেওয়া হতো। পরে 1865 সাল থেকে তা মহারাজাতে পরিণত হয়।

* মহারাজা হামীর সিং (1865-1874)
* মহারাজা প্রতাপ সিং (1874-1930)
* মহারাজা দ্বিতীয় বীর সিং (1930-1950)

এরপর ওরছা স্বাধীন ভারতের মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত হয়।
1783 সালে বুন্দেলখণ্ডের রাজধানী ওরছা থেকে চুরাশি কিলোমিটার দক্ষিণে টিকমগড় জেলার টেহেরীতে স্থানান্তরিত হয়।সেই থেকে ওরছা অবহেলিত হতে থাকে।বর্তমানে ওরছা মধ্যপ্রদেশের টিকমগড় জেলার এক ছোট শহর।টিকমগড়ে রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার আগে পর্যন্ত ওরছা জাঁকজমক,খ্যাতি ও বৈভবের চূড়োতে অবস্থান করছিল।পরবর্তীকালে বৃটিশ রাজত্বে ওরছার গুরুত্ব কমে যায় ও ঝাঁসী প্রাধান্য লাভ করে। বর্তমানে ওরছাতে কতগুলি প্রাচীন প্রাসাদের অবশেষ অতীত গৌরবের জয়গান করে যাচ্ছে।
ওরছাতে যে প্রধান দশটি দ্রষ্টব্য স্থান আছে তার তালিকাটি নিম্নরূপ।
1 . ওরছা দূর্গ প্রাসাদ।
2 . চতুর্ভুজ মন্দির।
3 . রামরাজা মন্দির।
4 . বেতোয়া নদী।
5 . রাজাদের ছত্রীসমূহ।
6 . ওরছার চারিদিকের প্রকৃতি।
7 . সুন্দর মহল।
8 . চন্দ্রশেখর আজাদ স্মারক।
9 . দাউজীর হাভেলী।
10. লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির।
এ ছাড়াও চলতে ফিরতে আরও বেশ কিছু হাভেলী,মন্দির ও ভবন এই ঐতিহাসিক শহরে দেখতে পাওয়া যায়।

কি ভাবে যাবেন?

ওরছা মানিকপুর ঝাঁসী রেলপথের একটি ছোট স্টেশন।এখানে কোন এক্সপ্রেস বা মেল ট্রেন দাঁড়ায় না।এখানে আসতে হলে ঝাঁসী স্টেশনে নামতে হবে।স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড যাবার জন্য সর্বদা শেয়ারের অটো সার্ভিস আছে। ঝাঁসী বাসস্ট্যান্ড থেকে ওরছাতে যাবার বাস,অটোরিকশা ও ট্যাক্সি পাওয়া যাবে। কোলকাতা থেকে সরাসরি ঝাঁসী যাবার ট্রেন হলো হাওড়া গোয়ালিয়র চম্বল এক্সপ্রেস (ট্রেন নং 12175).হাওড়া ছাড়ে প্রতি রবিবার ও বুধবার বিকেল 17-45 hrs এবং ঝাঁসী পৌছায় পরদিন বিকেলে 15-30 hrs. হাওড়া থেকে দূরত্ব 1188 কিলোমিটার। প্রতি মঙ্গলবার ঐ ট্রেন(ট্রেন নং 20975) একই সময়ে ছেড়ে একই রুটে গিয়ে গোয়ালিয়র হয়ে আগ্রা পর্যন্ত যাবে।এইটি 17th March 2020 থেকে লাগু হবে।বর্তমানে মঙ্গলবার যে ট্রেনটি চলছে সেটি গোয়ালিয়র পর্যন্ত যাচ্ছে। । প্রতি শুক্রবার ঐ একই সময়ে,একই রুটে হাওড়া ছেড়ে যে ট্রেন যায় তা হোল হাওড়া মথুরা চম্বল এক্সপ্রেস (ট্রেন নং 12177),যেটি গোয়ালিয়র ও আগ্রা হয়ে মথুরাতে যাত্রা সমাপ্ত করে।

কখন যাবেন?

জুলাই মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওরছা যাবার উৎকৃষ্ট সময়। মে ও জুন মাসের গরম এড়িয়ে যাওয়া উচিত। মধ্য এপ্রিলে রামনবমীতে ওরছা এক বিশাল উৎসবের সাজে সেজে ওঠে। কিন্তু প্রবল গরমেও ওরছার প্রাসাদগুলির মধ্যে গরম অনুভূত হয় না, কারণ এগুলোর নির্মাণে ব্যবহৃত পাথরের বৈশিষ্ট্য ও প্রাসাদগুলির নির্মাণশৈলী।

প্রতি বছর মার্চ মাসে মধ্যপ্রদেশ সরকার 'নমস্তে ওরছা' নামে ওরছা উৎসব পালন করেন।এই বছর 6th March 2020 থেকে 8th 2020 ওরছা উৎসব হয়ে গেল।
2017-18 বছরে ওরছা Best Heritages City Awards পেয়েছিল।

ওরছা স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটো রিকশা ধরে লজ্ পৌছতে ও ব্যাগ রেখে বের হতে হতে বিকেল চারটে বেজে গেল। আসলে ঘোরাঘুরির সময়টা ট্রেনে বসে নষ্ট হয়ে গেল।দিন শেষ হতে যা সময় পড়ে আছে তা দিয়ে আমি ওরছার দূর্গপ্রাসাদ কমপ্লেক্সটা দেখে নিতে পারবো।
সেসবের কথা পরের পর্বের জন্য তোলা থাক। কথা দিচ্ছি শিগগিরই ফিরে আসবো।

descriptionবুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh EmptyRe: বুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh

more_horiz
#ওরছা (ভারতের মিউজিয়াম নগরী)

     
ট্রেনে দীর্ঘক্ষণ বসে বুন্দেলখণ্ডের ভূপ্রকৃতি ও তার মানুষজনের পরিচয় পেলাম।ভূপ্রকৃতি এখানে বড়ই রুক্ষ,পাথুরে জমি ও মাঝে মাঝে অনুচ্চ পাহাড়ের সারি। তার মধ্যে মাঝে মাঝে  সবুজ ঝোপঝাড় ও উচ্চ বনস্পতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।চাষযোগ্য জমি ও জলের অভাব এখানে। ট্রেনের মধ্যে এই দীর্ঘ সময় বসে থাকার মরণযন্ত্রণা ভোগ করতে করতে দুপুর তিনটে সময় ওরছা স্টেশনে নামলাম। এই স্টেশন ঝাঁসী থেকে 20 কিলোমিটার আগে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের সীমানাতে অবস্থিত। এখানে বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যা দেশীয় পর্যটকের থেকে বেশি।
                  বাইরে থেকে হঠাৎ এসে এখানে নামলে মনে হবে 'এ কোথায় এলাম?' ভারতের আর পাঁচটা অতি সাধারণ আধা শহরের মতোই এর পরিবেশ, বাড়িঘর, পথঘাট ও সাধারণ সকল অধিবাসীরা। কিন্তু ওরছার ভিতরে ঢুকে যদি  তার ঘ্রাণ নেওয়া যায় তবে ইতিহাসপ্রেমি এখানে প্রতি ধূলিকণাতে ইতিহাসের গন্ধ পাবে,আধ্যাত্মিক মানুষ খুঁজে পাবে দেবদর্শনের অপার শান্তি ও প্রকৃতিপ্রেমিক খুঁজে পাবে প্রকৃতির মধ্যে পরমাত্মার জ্যোতির প্রকাশ।সভ্যতা থেকে অনেক দূরে প্রাচীনতার একটা গন্ধ এখানে আছে।ঐতিহাসিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছোট শহর ওরছা হলো চিত্রশিকারীদের স্বর্গরাজ্য।মনোমুগ্ধকর প্রাচীন শিল্পসমৃদ্ধ সব প্রাসাদ,সূক্ষ্ম কারুকার্য সম্বলিত সব মন্দির ও হাভেলী ও প্রাণোচ্ছল বেতোয়া নদী পর্যটককে এক অন্য ভালোলাগার     জগতে নিয়ে যায়।     রেললাইন এখানে উত্তরপ্রদেশের ও মধ্যপ্রদেশের সীমানার মধ্যে লুকোচুরি খেলতে খেলতে এগিয়ে চলেছে, কখনো সে উত্তরপ্রদেশের মধ্যে ঢুকে পড়েছে,আবার কখনো সেখান  থেকে বেরিয়ে মধ্যপ্রদেশে প্রবেশ করছে। আসলে ওরছা বুন্দেলখণ্ডের একসময়ের রাজধানী ছিল। বুন্দেলখণ্ড ভৌগলিক অঞ্চল মধ্য ভারতের একটি পার্বত্য অঞ্চল যা উত্তরে যমুনা নদীর দক্ষিণ তটভূমি থেকে নর্মদা নদীর উত্তর তট পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি মধ্য ভারতের  বিন্ধ্য পর্বতে আরণ্যক বন্ধুর পাহাড়ে অবস্থিত।এখানে নবম শতকে চান্দেলা রাজাদের গড়া সম্রাজ্য  জেজিকাভুক্তি নামে পরিচিত ছিল। এখানে পনেরো শতকে বুন্দেলাদের উত্থানের সঙ্গে  পরবর্তী কালে এই অঞ্চল বুন্দেলখণ্ড নামে পরিচিত হয়। বুন্দেলারাজাদের আমলে   প্রগতির শিখরে ওঠে বুন্দেলখণ্ড। আর স্বাধীনোত্তর ভারতে বুন্দেলখণ্ড টুকরো হয়ে ঝাঁসী,ললিতপুর,ঝালায়ুন,হামিরপুর, বান্দ্রা এবং মাহোবা জেলা হয়ে উত্তরপ্রদেশে ; সাগর,ছাতারপুর, টিকমগড়,পান্না,দামো  জেলা ছাড়াও গোয়ালিয়র,ডাটিয়া,শিবপুরী এবং চান্দেরী মধ্যপ্রদেশের অংশ হয়।এই ভূভাগে সবুজে ছাওয়া অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণী, নানা মন্দির,নানা দুর্গ ও প্রাসাদ ভ্রমণপ্রিয় উৎসাহী পর্যটককে ইতিহাস রোমন্থন করায়।
বুন্দেলখণ্ডে প্রবেশের আগে আমরা জেনে নেব বুন্দেলাদের উৎপত্তি ও তাদের এইরূপ  নামকরণের কারণ। একেবারে আদি থেকেই শুরু করলাম।
বিষ্ণুর নাভিপদ্মের উপর ব্রহ্মার উৎপত্তি।  ব্রহ্মার বংশধরেরা হলেন মারিচী ,কাশ্যপ, সূর্য (কাশ্যপ মুনি ও অদিতির সন্তান),ইক্ষাকু, দিলীপ,রঘু, অজ,দশরথ,রামচন্দ্র, কুশ,হরিব্রহ্ম এবং বিহাগারাজা।বিহাগারাজার সপ্তম উত্তর পুরুষ হলেন কীরাটদেব।কীরাটদেব ছিলেন কাশীর রাজা বীরভদ্রের পূর্বপুরুষ। বুন্দেলা রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বীরভদ্রের ছেলের বংশধর।বীরভদ্রের ছেলের নাম ছিল জগদাস।উনি পঞ্চম, দেবদাস ও হেমকরণ নামেও প্রসিদ্ধ ছিলেন।

জগদাস ছিলেন বীরভদ্রের ছোট রাণীর সন্তান। বীরভদ্রের পাটরাণীর  চার পুত্র জগদাসকে কাশীরাজ্যের ভাগ দিতে অস্বীকার করায় উনি বিন্ধ্যাচলে বিন্ধ্যবাসিনী দেবীর মন্দিরে তপস্যা করতে শুরু করলেন। দীর্ঘ তপস্যার পরেও কোন সাড়া না পেয়ে তিনি দেবীর চরণে স্বীয় মস্তক অর্পণ করতে উদ্যত হলেন। যখনই তরবারি তাঁর গলা স্পর্শ করল তখন এক বিন্দু রক্ত ভূমিতে পতিত হলো এবং তখনই দেবী আবির্ভূত হলেন। দেবী আবির্ভূত হয়ে বরদান করলেন যে এই রক্তবিন্দু থেকে একজন শক্তিশালী রাজার জন্ম হবে যে সমগ্র  বুন্দেলখণ্ড শাসন করবে। রক্তের বিন্দু বা 'বুন্দ' থেকে জন্ম বলে তাঁরা 'বুন্দেলা' নামে পরিচিত হলেন। সেই থেকে বুন্দেলাদের কুলদেবী হলেন দেবী বিন্ধ্যবাসিনী। মনে হয় নিজেদের বংশ যে দৈবসম্পর্কযুক্ত তা বিবৃত  করতে এই কাহিনী প্রচার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে চান্দেলা রাজবংশের উৎপত্তি সম্পর্কেও এই ধরণের চন্দ্রদেবতা কেন্দ্রীক এক কাহিনী প্রচলিত আছে।
জগদাসের বংশধর অর্জুনপাল মাহোনীর শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র বীরপাল তাঁর মৃত্যুর পরে মাহোনীর রাজা হলেন। কিন্তু তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র সোহনপাল ছিলেন একজন কুশলী যোদ্ধা। সোহনপাল তাঁর রাজত্বের ভাগ পাওয়ার জন্য নাগা বা হুরসাত সিং এর সাহায্য  প্রার্থনা করলেন। নাগা ছিলেন কুরার বা কুন্দারের খানগার আদিবাসী গোষ্ঠীর শাসনকর্তা। খানগারদের রাজধানী ছিল গড়কুন্দর যা এখন মধ্যপ্রদেশের নিওয়াড়ি জেলার একটি গ্রাম। সেই সময়ে তাদের রাজত্বের নাম ছিল জুঝৌটি (Jujhauti) বা  'Land of Warriors'.গড়কুন্দর গ্রামে একটি সুন্দর দূর্গের অবশেষ এখনও দেখা যায়। কুন্দর গ্রামের নাম এইরূপ হওয়ার কারণ হলো কুণ্ড অর্থাৎ জলাশয় এবং অর্ক অর্থাৎ সূর্যদেব। এই গ্রামে একটি জলাশয় আছে যার জলে স্নান করলে সূর্যদেবের কৃপায় চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।আসলে গ্রামের নাম 'কুন্দার্কা',সেখান থেকে অপভ্রংশে কুন্দার হয়েছে। এই পুষ্করিণীর কাছে গৃধবাহিনী মায়ের মন্দির আছে।
নাগা সোহনপালকে সাহায্য করতে সম্মত হলেন, কিন্তু বিনিময়ে বুন্দেলা রাজপুত পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার সর্ত দিলেন।সোহনপাল নাগার এই প্রস্তাবে অসম্মত হওয়ায় নাগা এতে অপমানিত ও ক্রুদ্ধ হয়ে সোহনপালকে বন্দী করলেন।সেই বন্দীদশা থেকে সোহনপাল কোনও ক্রমে নিজেকে মুক্ত করে চৌহান,সালিঙ্গার ও কাছুয়া
রাজপুতদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। শেষে জাঠ রাজপুতদের এক শাখা পারমার প্রধান পানপাল বা পূণ্যপাল তাঁকে সাহায্য করতে সম্মত হলেন। তাঁদের সম্মিলিত বাহিনীর কাছে নাগা 1288 খ্রিস্টাব্দে পরাজিত হলেন।সোহনপাল তখন কুন্দার দূর্গের সমস্ত খানগার গোষ্ঠীর  পুরুষদের হত্যা করলেন,কিন্তু তিনি মহিলা ও শিশুদের ছেড়ে দিলেন,এই সর্তে যে খানগার গোষ্ঠীর শিশুরা বড় হয়ে সারাজীবন বুন্দেলাদের ভৃত্য হয়ে থাকবে। এরপর সোহনপাল কুন্দারের রাজা হলেন ও তাঁর কন্যা পানপালকে বিবাহ করলেন।
বুন্দেলারা যদুবংশীয় আহির গোষ্ঠীর লোকেদের সঙ্গে দুগ্ধভ্রাতার সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। এর সর্ত ছিল আহির গোষ্ঠীর মহিলারা তাদের বুকের দুধ দিয়ে বুন্দেলা রাজপুত্রদের পুষ্টিদান করবে ও তাদের পুরুষরা  বুন্দেলা সেনাবাহিনীতে সৈনিকের চাকরি পাবে।ওরছা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা যাঁর হাত ধরে সেই রাজা রুদ্রপ্রতাপ সিং হলেন রাজা সোহনপালের বংশধর।তাঁর রাজত্বকাল 1501 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1531 খ্রিস্টাব্দ। দিল্লির তুঘলকি আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত হয়ে তিনি  তাঁর রাজধানী  গড়কুন্দর থেকে ওরছাতে সরিয়ে নিয়ে আসেন। 'ওরছা' শব্দের অর্থ হচ্ছে 'লুকোনো' বা 'Hidden'.ওরছা বেতোয়া বা বেত্রবতী নদীর তীরে অবস্থিত।ওরছার কাছে নদী অনেক ভাগে বিভক্ত হয়ে নদীর দ্বীপ সৃষ্টি করেছে।তখন এই নদীর দ্বীপ ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। রুদ্রপ্রতাপ এইরকম এক লুকোনো ও বিচ্ছিন্ন জায়গা রাজধানী গড়ার জন্য খুঁজছিলেন। নদীদ্বীপে যেখানে টাঙ্গারণ্য জঙ্গল সেখানে রাজধানী স্থাপিত হলো। তিনি নদীর উপরে  মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপভূমির সংযোগ রক্ষার্থে একশোপাঁচ মিটার দীর্ঘ খিলান যুক্ত একটি সেতু নির্মাণ করেছিলেন এবং সেই সেতু আজও তার কাজ করে যাচ্ছে , যেটি লণ্ডন ব্রীজের থেকেও পুরোন।

রাজা রুদ্রপ্রতাপ সিং 1531খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুমুখে পতিত হন।শোনা যায় তিনি একটি গরুকে বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন।ওরছার রাজারা ছিলেন বৈষ্ণব।   তাঁর পরে ওরছার রাজা হলেন রুদ্রপ্রতাপের পুত্র  ভারতীচাঁদ, যাঁর রাজত্বকাল 1531খ্রিস্টাব্দ থেকে 1554 খ্রিস্টাব্দ।ভারতীচাঁদের কোন উত্তরাধিকারী ছিল না।উনি 1554 খ্রিস্টাব্দে পরলোক গমন করেন। ভারতী চাঁদের পর রাজা  হলেন তাঁর ছোট ভাই  মধুকর শাহ (1554-1592)। উনি খুবই ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। উনি ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত।ওনার রানী ছিলেন গণেশ কানওয়ার।তিনিও খুব ভক্তিমতি মহিলা ছিলেন। ওনার আরাধ্য দেবতা ছিলেন ভগবান রামচন্দ্র। ভারতীচাঁদ ও মধুকর শাহ্ উভয়কেই শের শাহের পুত্র  ইসলাম শাহ সুরী (1545-1553) ও মুঘল বাদশা আকবরের (1556-1605) আক্রমণ প্রতিহত করতে হয়েছে। ভারতীয়চাঁদের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন সভাকবি কেশবদাস। 1577 ও 1588 সালের যুদ্ধে মধুকর শাহ্কে রাজ্যের অনেকটা জায়গা  আকবরকে  ছেড়ে দিতে হয়েছিল। ওরছাকে  সেই সময় মোগলের বশ্যতা স্বীকার করতে হয়েছিল।ওরছা মোগল সাম্রাজ্যের এক করদ্ রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।রাজা মধুকর শাহ্ আকবরের সভাতে যোগ দেন।এসব তথ্য আমরা জানতে পারি 'আইন ই আকবরি' পাঠ করে।  পরে 1588 সালে যুদ্ধ করে মধুকর শাহ্  রাজ্যের  কিছু অংশ উদ্ধার করেন। মধুকর শাহের পুত্র রামা শাহ (1592-1605) আকবরের সঙ্গে সন্ধি করেন ও তাঁর সভাতে যোগদান করেন।তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর ভাই ইন্দ্রজিৎ সিং তখন ওরছার রাজা ছিলেন। তাঁর আর এক ভাই ছিল,তাঁর  নাম বীর সিং দেও।যুবরাজ সেলিম যখন আকবরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন তখন বীর সিং দেও সেলিমকে আশ্রয় ও সৈন্যদল দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। ফলে তাঁদের মধ্যে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। পরে সেলিম যখন জাহাঙ্গীর (1605-1627)  নাম নিয়ে সম্রাট হলেন তখন ওরছাতে তাঁর আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে ও তাঁকে  স্বাগত জানাতে রাজা  বীর সিং দেও তাঁর নামে এক বিশাল সুদৃশ্য মহল নির্মাণ করেছিলেন,যেটি জাহাঙ্গীর মহল নামে পরিচিত। রাজা বীর সিং দেও এর রাজত্বকাল (1606-1627) ছিল ওরছার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ।ওরছা সেই সময়ে শিল্প , স্থাপত্য,সঙ্গীত ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে উন্নতির শিখরে পৌছেছিল। রাজা বীর সিং দেও এর চার পুত্র ছিল যথাক্রমে জুঝাড় সিং,হরদৌল সিং,দেবী সিং ও কনিষ্ঠ পুত্র  পাহাড় সিং।
শাহজাহানের রাজত্বকালে মোগলদের সঙ্গে বিরোধ আবার চরমে ওঠে। শাহজাহান  সিংহাসনে আরোহণ করেন 1628 খ্রিস্টাব্দে এবং তাঁর রাজত্বকাল 1658 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। বীর সিং দেও এর পুত্র জুঝাড় সিং কে (1627-1635) তিনি  অরণ্যে বিতাড়িত করেন ও 1635 সালে তাঁকে হত্যা করলেন। জুঝাড় সিং এর মৃত্যুর পরে দেবী সিং(1635-1641) ও পাহাড় সিং(1641-1653) পর পর ওরছার সিংহাসনে আরোহণ করেন।পাহাড় সিং এর মৃত্যুর পরে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র সুজান সিং (1653-1672) ওরছার রাজা হলেন। সুজান সিং এর কোন পুত্র সন্তান ছিল না। সুজান সিং এর মৃত্যুর পরে তাঁর ভাই ইন্দ্রমণি সিং রাজা হলেন । ইন্দ্রমণি সিং এর (1672-1675) মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র যশোবন্ত সিং(1675-1684) রাজা হলেন।রাজা যশোবন্ত সিং ঔরঙ্গজেবের অধীনে ছিলেন এবং ঔরঙ্গজেব তাঁকে উত্তরীয় প্রদান করে সম্মানিত করেন।যশোবন্ত সিং এর অকালে মৃত্যুর পরে তাঁর নাবালক পুত্র ভগবন্ত সিং রাজা হলেন(1684-89)। তাঁর ঠাকুরমা রাণী অমরকুনারী দেবী ভগবন্ত সিং কে প্রতিপালন করেছিলেন,যিনি ছিলেন রাজা ইন্দ্রমণির স্ত্রী।তিনি আবার উদাত সিং কেও পালন করেন।উদাত সিং ছিলেন হরদৌলের চতুর্থ বংশধর ও বানগাঁও এর জায়গীরদার।

আমি এর পর থেকে নিচে স্বাধীনতার কাল পর্যন্ত ওরছার রাজাদের নামের তালিকাটা পেশ করলাম।এনাদের রাজা উপাধিতে ভূষিত করা হতো।

* রাজা  উদাত সিং (1689-1735)
* রাজা পৃথিবী সিং (1735-1752).এনার পুত্র পূরাণ সিং বাঘ শিকার করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
* রাজা শাওয়ান্ত সিং (1752-1765),ইনি ছিলেন পূরাণ সিং এর পুত্র ও পৃথিবী সিং এর পৌত্র এবং মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের(1760-1788) কাছ থেকে মহেন্দ্র উপাধি লাভ করেছিলেন।
* রাজা  হাটে সিং (1765-1768),ইনি রাজা শাওয়ান্ত সিং এর পুত্র।
* রাজা  মান সিং (1768-1775)
* রাজা ভারতী সিং (1775-1776)
* রাজা  বিক্রমজিৎ মহেন্দ্র (1776-1817)
* রাজা  ধরম পাল (1817-1834)
* রাজা তাজ সিং (1834-1842)
* রাজা সুরজৈন সিং (1842-1848)
* রাজা হামীর সিং (1848-1865)

বৃটিশ রাজত্বের প্রথমে কোম্পানির আমলে এবং পরে তাঁদের নামের আগে রাজা উপাধি দেওয়া হতো। পরে 1865 সাল থেকে তা মহারাজাতে পরিণত হয়।

* মহারাজা হামীর সিং (1865-1874)
* মহারাজা প্রতাপ সিং (1874-1930)
* মহারাজা দ্বিতীয় বীর সিং (1930-1950)

এরপর ওরছা স্বাধীন ভারতের মধ্যপ্রদেশের অন্তর্গত হয়।
1783 সালে বুন্দেলখণ্ডের রাজধানী ওরছা থেকে চুরাশি কিলোমিটার দক্ষিণে টিকমগড় জেলার টেহেরীতে স্থানান্তরিত হয়।সেই থেকে ওরছা অবহেলিত হতে থাকে।বর্তমানে ওরছা মধ্যপ্রদেশের  টিকমগড় জেলার এক ছোট শহর।টিকমগড়ে রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার আগে পর্যন্ত ওরছা জাঁকজমক,খ্যাতি ও বৈভবের চূড়োতে অবস্থান করছিল।পরবর্তীকালে বৃটিশ রাজত্বে ওরছার গুরুত্ব কমে যায় ও ঝাঁসী প্রাধান্য লাভ করে। বর্তমানে ওরছাতে কতগুলি প্রাচীন প্রাসাদের অবশেষ অতীত গৌরবের জয়গান করে যাচ্ছে।
ওরছাতে যে প্রধান দশটি  দ্রষ্টব্য স্থান আছে তার তালিকাটি নিম্নরূপ।
1 . ওরছা দূর্গ প্রাসাদ।
2 . চতুর্ভুজ মন্দির।
3 . রামরাজা মন্দির।
4 . বেতোয়া নদী।
5 . রাজাদের ছত্রীসমূহ।
6 . ওরছার চারিদিকের প্রকৃতি।
7 . সুন্দর মহল।
8 . চন্দ্রশেখর আজাদ স্মারক।
9 . দাউজীর হাভেলী।
10. লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির।
এ ছাড়াও চলতে ফিরতে আরও বেশ কিছু হাভেলী,মন্দির ও ভবন এই ঐতিহাসিক শহরে দেখতে পাওয়া যায়।

কি ভাবে যাবেন?

ওরছা মানিকপুর ঝাঁসী রেলপথের একটি ছোট  স্টেশন।এখানে কোন এক্সপ্রেস বা মেল ট্রেন দাঁড়ায় না।এখানে আসতে হলে ঝাঁসী স্টেশনে নামতে হবে।স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড যাবার জন্য সর্বদা শেয়ারের অটো সার্ভিস আছে।  ঝাঁসী বাসস্ট্যান্ড থেকে ওরছাতে যাবার বাস,অটোরিকশা ও ট্যাক্সি পাওয়া যাবে। কোলকাতা থেকে সরাসরি ঝাঁসী যাবার ট্রেন হলো হাওড়া গোয়ালিয়র চম্বল এক্সপ্রেস (ট্রেন নং 12175).হাওড়া ছাড়ে প্রতি রবিবার ও বুধবার বিকেল 17-45 hrs  এবং ঝাঁসী পৌছায় পরদিন বিকেলে 15-30 hrs. হাওড়া থেকে দূরত্ব 1188 কিলোমিটার। প্রতি মঙ্গলবার ঐ ট্রেন(ট্রেন নং 20975) একই সময়ে ছেড়ে একই রুটে গিয়ে গোয়ালিয়র হয়ে আগ্রা পর্যন্ত যাবে।এইটি 17th March 2020 থেকে লাগু হবে।বর্তমানে মঙ্গলবার যে ট্রেনটি চলছে  সেটি গোয়ালিয়র পর্যন্ত যাচ্ছে। ।  প্রতি শুক্রবার ঐ একই সময়ে,একই রুটে হাওড়া ছেড়ে যে ট্রেন যায় তা হোল হাওড়া মথুরা চম্বল এক্সপ্রেস (ট্রেন নং  12177),যেটি গোয়ালিয়র ও আগ্রা হয়ে মথুরাতে যাত্রা সমাপ্ত করে।

কখন যাবেন?

জুলাই মাস থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওরছা যাবার উৎকৃষ্ট সময়। মে ও জুন মাসের গরম এড়িয়ে যাওয়া উচিত। মধ্য এপ্রিলে রামনবমীতে ওরছা এক বিশাল উৎসবের সাজে সেজে ওঠে। কিন্তু প্রবল গরমেও ওরছার প্রাসাদগুলির মধ্যে গরম অনুভূত হয় না, কারণ এগুলোর নির্মাণে ব্যবহৃত পাথরের বৈশিষ্ট্য ও প্রাসাদগুলির নির্মাণশৈলী।

প্রতি বছর মার্চ মাসে মধ্যপ্রদেশ সরকার 'নমস্তে ওরছা' নামে ওরছা উৎসব পালন করেন।এই বছর 6th March 2020 থেকে 8th 2020 ওরছা উৎসব হয়ে গেল।
2017-18 বছরে ওরছা Best Heritages City Awards পেয়েছিল।

ওরছা স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটো রিকশা ধরে লজ্  পৌছতে ও ব্যাগ রেখে বের হতে হতে  বিকেল চারটে বেজে গেল। আসলে ঘোরাঘুরির সময়টা ট্রেনে বসে নষ্ট হয়ে গেল।দিন শেষ হতে যা সময় পড়ে আছে তা দিয়ে আমি ওরছার দূর্গপ্রাসাদ কমপ্লেক্সটা দেখে নিতে পারবো।
সেসবের কথা পরের পর্বের জন্য তোলা থাক। কথা দিচ্ছি শিগগিরই ফিরে আসবো।

descriptionবুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh EmptyRe: বুন্দেলখান্ডের রাজধানী ওরছা Orchha the capital of bundelkhanda of Madhya Pradesh

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply