সপ্তাহান্তে জল-পাহাড়ের দেশেঃ মাইথন ড্যাম
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কলকাতার একদম নাকের ডগায় প্রকৃতির অপরূপ শোভা নিয়ে রয়েছে মাইথন। আর তার গাঁ ঘেঁষাঘেষি করে রয়েছে পাঞ্চেত। শীতকালে এক দিনের ট্যুরের পক্ষে আদর্শ এই স্থান মাইথন। ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ। মখমলের মতো রোদ্দুর গায়ে মাখামাখি। নীল আকাশের কোল থেকে মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসা পেঁজা পেঁজা তুলোর চলাচল। এমন যখন প্রকৃতি, তখন তো মন চাইতেই পারে ঘর ছেড়ে একটু বেরিয়ে পড়তে। কিন্তু কর্মজীবনের শত ব্যস্ততা। ছুটির আকাল। তবে যদি চান এমন এক স্থান, যেখানে স্বচ্ছ নীলাকাশ আর উজ্জ্বল রোদ্রের ছটায় খেলা করবে জলের কলকাকলি, সকালে থাকবে হালকা কুয়াশার ঘেরাটোপ, তা হলে বেরিয়ে পড়তে পারেন মাইথনের পথে। উইকএন্ডের ছুটিতেই ঘুরে আসতে পারেন বাংলা-ঝাড়খণ্ডের সীমানায় অবস্থিত এই এলাকা থেকে। বাঁধের সুনীল জলরাশি হালকা ঢেউ তুলে আপনাকে সর্বক্ষণ হাত ছানি দেবে জলের বুকে জেগে থাকা দূরের সবুজ দ্বীপ গুলি ঘুরে আসার জন্য। আর বিকেলের অস্তমিত সূর্যের গোলাপি আভায় নীল দিগন্ত যেন মোহময় পরিবেশ রচনা করে।
আপনি আপনার প্রোগ্রাম টা এইভাবে ঠিক করতে পারে। আপনি সাড়ে দশটায় পৌঁছাবেন, গিয়ে প্রথম একটি হোটেল বুক করে নিন বা আগে থেকে বুক করা থাকলে খুব ভালো হয়। এবার আপনি কাছাকাছি ছায়া শীতল পাহাড় পরিদর্শন করতে বের হন। দুপুরে হোটেলে ফিরে স্নান করে কিছু খেয়ে নিন। বিকাল সাড়ে তিনটে আপনি বেরিয়ে পড়ুন ড্যাম দেখার জন্য। বাঁধের উপর দিয়ে যেতে যেতে ড্যামএর জলরাশি, গেট দিয়ে জল বের হওয়া, বিদ্যুৎ স্টেশন, ডিয়ার পার্ক, বাঁধের দিকে রয়েছে এই ডিয়ার পার্ক। প্রায় ৩০০এর মতো হরিণ রয়েছে এই পার্কে। বাঁধের ওপর থেকে হরিণগুলো দেখতে হয় কারন এই পার্কে ঢোকার অনুমতি নেই। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম এই এই মাইথন বাঁধটিতে মাটির তলায় পাওয়ার স্টেশন তৈরি হয়। এখানকার বাঁধের জলাশয়ে বোটিং খুব জনপ্রিয়। ডিঙ্গি সহ লাইফ জ্যাকেট পরে স্পীড বোটেও ঘুরে নেওয়া যায় যার খরচ পড়বে মাথা পিছু ১০০ টাকা করে। হাতে টানা নৌকায় খরচ কম কিন্তু সময় লাগে অনেক বেশি।

এই ড্যামের জলে স্নান করতে সাঁতার কাটতে দারুন মজা লাগে। জল বেশি নেই অনেকদূর পর্যন্ত যওয়া যাবে। ঘন্টা দুই স্নান করতে ভাল লাগবে। স্নান করা হয়ে গেলে হোটেলে ফিরে আসুন, নতুন জামা কাপড় পড়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ওখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে দুপুরে ফিরে আসুন হোটেলে। একটার মধ্যে খাওয়া দাওয়া করে একটু রেস্ট নিন, তারপর ফিরে যাওয়ার পালা।
দুটো দিন কিভাবে যে কেটে যাবে আপনি জানতে পারবেন না। মনে হবে আরো কিছুটা সময় পেলে ভালো হতো। সর্বশেষে বলতে পারি এখানে গেলে আপনার একঘেয়েমি জীবনের পরিবর্তন আসবেই।
কখন যাবেন---ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এর মধ্যে যেতে পারেন এখানে। এই সময় লক গেট বন্ধ থাকে। তবে বর্ষার মধ্যে বাঁধ দেখতে হলে জুলাই থেকে আগষ্টের মধ্যেও যেতে পারেন। তবে বর্ষার সময়টা কে এড়িয়ে চলাই ভালো।
কিভাবে যাবেন -----হাওড়া থেকে অনেক ট্রেন বরাকর যায়। তবে সকালের দিকে ট্রেনএ যাওয়াই ভালো। ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস 6:15 হাওড়া ছাড়ে, বরাকরে পৌঁছোবে দশটা দশ। ওখান থেকে অটোয় করে মাইথন ড্যাম আধ ঘন্টা রাস্তা।
কোথায় থাকবেন--- মাইথন ড্যামএ অনেকগুলি হোটেল আছে। মাইথন ফরেস্ট গেস্ট হাউস, ডব্লিউ বি টি ডি সি মাইথন লজ, জিয়া গেস্ট হাউস, হোটেল শান্তি নিবাস, হোটেল মাইথন, ইত্যাদি। তবে থাকার সেরা ঠিকানা ডিভিসি-র মজুমদার নিবাস। এক্কেবারে নামমাত্র খরচে সেখানে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। মজুমদার নিবাসে ঘর বুক করতে হলে কলকাতায় উল্টোডাঙায় ডিভিসি-র অফিস থেকে বুকিং করতে হবে। যে তারিখে মাইথন যাবেন, তার ঠিক এক মাস আগে ওই তারিখে গিয়ে বুকিং করতে হবে। কিন্তু এক মাস আগের বুকিং-এর তারিখ যদি শনিবার বা রবিবার পড়ে, তা হলে শুক্রবার বুকিং করে ডিভিসি। মজুমদার নিবাস মাইথন ড্যামের মধ্যে একটি ছোট্ট দ্বীপের উপরে। স্থল থেকে একটা লম্বা ব্রিজ দিয়ে মজুমদার নিবাসে পৌঁছতে হয়। অবসর সময়ে মজুমদার নিবাস থেকে নদী দেখতে দেখতে সময় কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। আগে থেকে বুকিং করে যাওয়াই ভালো সারা বছর সহজেই ভাড়া পাওয়া যায়, কিন্তু শীতের সময় টা ভাড়া না পাওয়া যেতে পারে, তাই অগ্রিম বুকিং করাই ভালো। প্রতিটি হোটেলে ভাড়া 800 (৮০০ )টাকা থেকে শুরু। এসি নন-এসি সবরকম রুম পাবেন।