Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionLakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন  EmptyLakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন

more_horiz
#_লক্ষ্য_যখন_লাক্ষাদ্বীপে_#

#_প্রথম_পর্ব_#

কথায় বলে "সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার"। আর এটা যদি দ্বীপের ক্ষেত্রে হয়, তবে "সব দ্বীপ বারবার, লাক্ষাদ্বীপ একবার"। "দুম করে কবে যে ট্যুরিস্টদের লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার পারমিট দেওয়া বন্ধ করে দেবে কেউ জানে না। তাই এখন যখন যাওয়ার সুযোগ আছে টুক করে ঘুরে আয়"। বক্তা আমার কর্মক্ষেত্রের বস। বিশ্বের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতায় ঝুলি ভরা যার।

বছর দুয়েক আগে ঘুরে আসার পর থেকেই আমাকে বলে যাচ্ছে, যা ঘুরে আয়। দাদার বক্তব্য অনুযায়ী এক বার লাক্ষাদ্বীপ ঘুরে আয়। পৃথিবীর আর কোনো প্রান্তের দ্বীপ, লেগুন, কোরাল, বিচ না দেখলেও চলবে। আর আমি সেটা না করে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু এবার ঠিক করলাম দাদার কথা অনুযায়ী প্লানিংটা করেই ফেলি।

তাই পুজোর ছুটিতে সেখানে পাড়ি জমাবো বলে ঠিক করেই ফেললাম। সেইমতো ফোনাফুনি, ই-মেল আদান প্রদান শুরু। জুনের প্রথমে খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম অক্টোবরের বুকিং শুরু হতে আরো কিছুদিন বাকী আছে। অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। তারপর ওনাদের বলা ডেট থেকে আবার মেইল পাঠালাম।

লাক্ষাদ্বীপ এর বুকিং করতে হয় SPORTS নামক সংস্থার মাধ্যমে। যেটি পরিচালিত হয় সরকারী লাক্ষাদ্বীপ ট্যুরিজম এর দ্বারা। যাদের পুরো নাম The Society for Promotion of Nature Tourism and Sports। অন্য যেখান থেকেই বুকিং করার চেষ্টা করুন না কেনো বুকিং এদের থেকেই হবে। ফাঁক তালে অন্য এজেন্সীরা কিছু কমিশন খেয়ে নেবে আপনাদের কাছ থেকে।

লাক্ষাদ্বীপ ট্যুর করা যায় দুভাবে। হয় জাহাজের মাধ্যমে। যার পোশাকি নাম সমুদ্রম প্যাকেজ। অথবা কোচি কিংবা ব্যাঙ্গালোর থেকে বিমান যোগে আগাতি নেমে সেখান থেকে বোটে করে নিজের পছন্দের দ্বীপ গুলোতে থাকা। সমুদ্রম প্যাকেজে কোচি থেকে বড় জাহাজে পাঁচ রাতের প্যাকেজ। কাভারাত্তি, কালাপেনি আর মিনিকয় দ্বীপ ঘোরাবে। থাকা খাওয়া সব জাহাজে।

আর আগাতি পর্যন্ত ফ্লাইটে গিয়ে তার পর বোটে করে গেলে থাকা যায় কাডমাত, বাঙ্গারাম আর থিনাকারা দ্বীপে। আমাদের পছন্দ দ্বিতীয়টি। তাই সেই মতো বুকিং এর জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মফিলাম করে মেইল করে দিলাম। ঠিক হলো আমরা কোলকাতা থেকে কোচি যাবো। সেখানে রাতটা কাটিয়ে পরদিন সাত সকালে ফ্লাইট ধরবো আগাতির উদ্দ্যেশ্যে।

প্রথমে ঠিক হলো আমরা পাঁচ জন যাব। আমারা কত্তা-গিন্নী, রাজকন্যে আর আমার বাবা-মা। সেই অনুযায়ী বুকিং করে পুরো ট্যুরের অর্ধেক টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হলো। বাকী টাকা সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পাঠালেও চলবে জানালো। কিন্তু গোল বাঁধলো এর পরেই। হঠাৎ করে বাবার মনে হলো আন্দামান আর লাক্ষাদ্বীপ মোটামুটি একই। আর যেহেতু তারা আন্দামান ঘুরে এসেছেন তাই আর তাদের লাক্ষাদ্বীপ ঘোরার ইচ্ছে নেই।

বাপ ছেলের একচোট তর্কাতর্কীর শেষেও বাবার গোঁ একই। বাধ্য হয়ে তাদের বদলি খোঁজা শুরু। শেষে অফিসের এক বন্ধু স্থানীয় দাদা পরিবার নিয়ে যেতে রাজি হলো। বাবা মায়ের জায়গায় তাদের নাম পাঠিয়ে ট্যুরিস্ট লিস্টের পরিবর্তন করতে অনুরোধ জানালাম। ট্যুরের পুরো টাকা পেমেন্ট হওয়ার পরই SPORTS কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে লাক্ষাদ্বীপে প্রবেশের পারমিট দেন একজন আই এ এস অফিসার।

আমরা ঠিক করেছিলাম প্রথম তিনদিন আমরা কাডমাত আর পরের দুদিন বাঙ্গারামে থাকবো। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বাকী টাকা পাঠিয়ে তাদের মেইল করে দিলাম। দিন সাতেক পরে পারমিট এসে যাওয়ার কথা। এদিকে মহালয়াও হয়ে গেছে। পঞ্চমীর দিন আমাদের রওনা দেওয়ার পালা। কিন্তু পারমিট এখনো এসে পৌছায়নি। অগত্যা ফোন করলাম ওদের।

ওনারা জানালেন দু এক দিনের মধ্যেই পৌছে যাবে। দ্বিতীয়ার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পারমিট এসে হাজির মেইল আইডিতে। কিন্তু সেটা ওপেন করতেই চক্ষু চড়কগাছ। এতোবার করে মেইল পাঠানোর পরেও পারমিটে আমাদের তিন জনের সাথে বাবা-মায়ের নামেও পারমিট পাঠিয়ে দিয়েছে। আর নাম বাদ গেছে বন্ধু দাদার পরিবারের।

ওদের অফিস খুলতেই ফোন লাগালাম। ব্যাটারা কিছুতেই নিজেদের ভুল মানতে চায়না৷ বলে কোনো মেইল পায়নি। অগত্যা দিন ক্ষন ধরে ধরে মেইল এর ডিটেইলস জানাতে ভুল বুঝতে পারে। নতুন পারমিট পাঠিয়ে দেবে জেনে নিশ্চিন্ত হলাম। পূজায় থাকা হচ্ছে না। চতুর্থীর দিন বেরাতে হবে বলে দ্বিতীয়াতেই কোলকাতায় কটা ঠাকুর দেখতে গিন্নী আর মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

একটা একটা ঠাকুর দেখছি, আর বারবার নজর চলে যাচ্ছে মোবাইলের স্ক্রিনে। এই বুঝি মেইল এলো। কিন্তু বিকেল চারটেতেও মেইল এর দেখা নেই। কিছুটা অর্ধৈয্য হয়েই ফোন লাগালাম স্পোর্টস এর অফিসে। যিনি ফোন ধরলেন তার সাথে আগের বার কথা হয়নি। কথা হয়েছিলো অন্য এক জনের সাথে। আর তিনি নতুন পারমিটের মেইল পাঠাতে একেবারে ভুলে গেছেন।

নতুন ভদ্রলোককে আবার প্রথম থেকে কেস হিস্ট্রি শোনাতে হলো। শুনে তিনি জানালেন বুকিং এর জন্য যে ফর্মটা আগে পাঠিয়েছিলাম তা আবার পাঠাতে হবে দশ মিনিটের মধ্যে। না হলে আমাদের ট্যুর ক্যান্সেল। আমরা তখন হিন্দুস্থান পার্কের ঠাকুর দেখছি। দশ মিনিট কি, আগামী পাঁচ ঘন্টাতেও সেই ফর্ম ফিলাপ করে পাঠাতে পারবো না।

পুরো পেমেন্ট করা হয়ে গেছে। লাগেজ গোছানো শেষ। আর ব্যাটারা বলে কিনা ট্যুর ক্যান্সেল করে দেবে। পুরো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার দশা। প্রথমে বারবার রিকোয়েস্ট করলাম। জানালাম আমার কোনো ভুল নেই, ভুলটা ওনাদের। কে শোনে কার কথা। ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে একে গলদঘর্ম অবস্থা। তার উপর এই টেনশনে আরো ঘেমে নেয়ে একাকার। উল্টে পেট মোচড়াতে শুরু করেছে।

অনুনয় বিনয়ে কাজ হচ্ছে না দেখে মাথাটাও গরম হতে শুরু করেছে। এবার সুর চড়তে লাগলো। মেয়ে আর গিন্নী দেখি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আর আমি পুজো মন্ডপের পিছনে দাঁড়িয়ে হিন্দী ইংরেজী মিশিয়ে ওদের সাথে ঝগড়া করে যাচ্ছি। এর মধ্যে মাতৃভাষায় দুচারটে বিশেষন প্রয়োগ ও করে ফেলেছি।

শেষমেশ একটা রফাসূত্র বেরালো। ওনারা জানালেন মিনিট দশেকের মধ্যে আমাদের সবার নাম আর আইডি নাম্বার পাঠাতে হবে। এদিও ওদিক হাতিয়ে সেগুলো জোগাড় করে পাঠিয়ে দিলাম। এদিকে পাঁচটা বেজে গেছে। আর মেইল পাঠানোর পর থেকে তারা আর ফোন ধরছে না। ঠাকুর দেখা মাথায় উঠেছে। কোনমতে আর দুটো ঠাকুর দেখে বাড়ির পথ ধরলাম।

আসলে লাক্ষাদ্বীপ এর পারমিটে একজন আই এ এস অফিসারের সই থাকে। পুজোর ছুটি পড়ে যাওয়ার আজই ছিলো অফিসের শেষ দিন। পাঁচটার মধ্যে নতুন পারমিটে সই না হলে আমাদের আর লাক্ষাদ্বীপ যাওয়া হচ্ছে না। সারা রাত ঘুমের দফারফা। মাথার কাছে মোবাইল নিয়ে শুয়ে বার বার চোখ আর হাত ঘুরছে মোবাইলের স্ক্রিনে।

ভোররাতে চোখ লেগে এসেছিলো। সকালে ঘুম ভাঙতেই ধড়ফড়িয়ে মোবাইল ঘাটতে লাগলাম। কিন্তু তার দেখা নেই। বারবার ফোন করতে লাগলাম ওদের অফিসে। কেউ ফোনটাও রিসিভ করছে না। যতোরকম সোর্স লাগানো সম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবু মেইলের দেখা নেই। শেষে দুপুরে স্প্যাম মেইল গুলো চেক করতে গিয়ে দেখলাম সেখানে কিছুক্ষন আগে এসে পৌছেছে মহামূল্যবান পারমিট।

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ার অবস্থা তখন আমার। একটা বড় শ্বাস নিয়ে ভাবলাম কষ্ট করলেই বোধহয় কেষ্ট মেলে। এবার তবে নিশ্চিন্তে যাওয়া যাবে। চতুর্থীর দিন সকালে দুগ্গা দুগ্গা বলে বেরিয়ে পড়লাম। দুপুর ১:৫৫ এর ইন্ডিগোর বিমান চেন্নাই হয়ে কোচি ছুঁলো রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ। এয়ারপোর্ট থেকেই প্রিপেইড গাড়ি নিয়ে মিনিট দশেকের মধ্যে পৌছে গেলাম এক রাতের জন্য বুক করা হোটেল হিলস্ পার্কে।

চেক ইন এর পর্ব মিটিয়ে রুমে ঢুকে চটপট ফ্রেশ হয়ে নিলাম সবাই। এবার ডিনার সারার পালা। হোটেলেই আছে গোটা তিনেক রেস্তোরাঁ। নিজেদের পছন্দের খাবার অর্ডার করে পেট ভরালাম সবাই। হোটেলটি বেস সুন্দর সাজানো। রুম, বাথরুম প্রশস্ত। খাবারের মানও খুব ভালো। কাল সাত সকালে ফ্লাইট। তাই গল্প-গুজবে মসগুল না হয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়াটাই ঠিক মনে হলো।

সকালে স্নান সেরে হোটেলেই চা পান করা হলো। আগে থেকেই গাড়ি বলা ছিলো। সেটিতে চেপে রওনা হলাম এয়ারপোর্টের দিকে। গতদিন রাতে কোচি এয়ারপোর্টকে ভালো করে দেখা হয়নি। আজ দেখে মনে হলো কি সুন্দর সাজানো গোছানো। এয়ারপোর্টের অন্দর-বাহির সজ্জায় কেরলের ঐতিহ্যকে প্রবল ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।

বোর্ডিং পাস নিয়ে এবার সিকিউরিটি চেক ইন এর পালা। এ জায়গাটাও কেরলের নিজস্ব নানা নৃত্যশৈলীর পুতুলের মাধ্যমে সুন্দর করে সাজানো। এখানকার সিকিউরিটি চেক ইন বেশ কড়া ধরনের। হ্যান্ডব্যাগের সমস্ত জিনিস, এমন কি পায়ের জুতোটা পর্যন্ত খুলিয়ে চেক করে ছাড়লো। কোচি থেকে আগাতি যাওয়ার এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটের সময় সকাল ৮:৪৫।

তড়িঘড়ি নির্দিষ্ঠ গেটের কাছে গিয়ে দেখা গেলো ফ্লাইটের কোনো খবর নেই। ব্যাঙ্গালোর থেকে আসা ফ্লাইট প্রায় ঘন্টা খানেক লেট। সাত সকালে বেরানোয় ব্রেকফাস্ট করে বেরানো হয়নি। ক্ষিদে লাগাতে সঙ্গের কেক বিস্কুটে কাজ চলছে। সঙ্গী বন্ধু দাদা জানালো এয়ার ইন্ডিয়ায় তো ভালো টিফিন দেয়। তাই এয়ারপোর্টে আর কিছু কিনতে হবে না।

নির্দিষ্ঠ সময়ের অনেক পরে উড়লো আমাদের ফ্লাইট। মিনিট পনেরো পর থেকেই আরব সাগরের নীল জলরাশির উপর দিয়ে উড়ে চলেছি আমরা। চারিদিক তখন নীলিমায় নীল। একটু পরেই ব্রেকফাস্ট দেওয়ার তোড়জোড় শুরু। আমাদের সকলকে হতাশ করে টোস্ট বিস্কুটের থেকে সামান্য বড় সাইজের ঠান্ডা ভেজ স্যান্ডউইচ দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব সারলেন কেবিনক্রুরা।

পেটের ক্ষিদে লাঘব হলো চোখের ক্ষিদে মেটায়। জানালার বাইরে তখন আকাশ আর সাগর মিলেমিশে একাকার। বোঝবার জো নেই কোনটা কে। মাঝে মাঝে সাদা মেঘের দল জানান দিচ্ছে তাদের মধ্যের পার্থক্য। গোটা একশো সিটের ছোট্ট প্লেনটা যেন নীল সাগরের জলে ভেসে চলেছে নৌকার মতো। ঘন্টাখানেকের যাত্রা শেষে পাইলট জানান দিলেন তারা ফ্লাইট ল্যাণ্ড করানোর প্রস্তুতি নেবেন।

এমন সময় জানালা দিয়ে দেখা দিতে লাগলো ছোট্ট কয়েকটুকরো ভূখন্ড। আর তার চারপাশে সাদা বালুকাতট। সবাই তখন হুমড়ি খেয়েছে একদিকের জানালার পাশে। দ্বীপের চারপাশের জলের রঙে সবাই তখন মোহিত। কোথাও পান্না সবুজ, কোথাও হালকা নীল, কোথাও আবার ঘন নীল। জলের রঙের যে কতো রকম শেড দেখলাম তা গুনে শেষ করা যাবেনা বোধহয়।

এরমধ্যে নারকেল গাছের সারির উপর দিয়ে অসম্ভব দক্ষতায় পাইলট সাহেব প্লেনটাকে ল্যান্ড করালেন একটুকরো রানওয়েতে। রানওয়ে আর দুপাশের স্থলভাগ নিয়ে সাকুল্যে যার চওড়া দেড়শো মিটার হবে কিনা সন্দেহ। সারা দিনে এই একটিমাত্র বিমান ওঠানামা করে। প্নেনের বাইরে নামতেই আরো অবাক হওয়ার পালা। আগাতি দ্বীপটার একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত এয়ারপোর্টটা। যার তিন পাশ ঘিরে রেখেছে আরব সাগরের নীল জল। আর সেখানে আমাদের ফ্লাইট ছাড়া রয়েছে একটা মাত্র হেলিকপ্টার।

রানওয়ে সংলগ্ন তিন চারটে ঘর নিয়ে এয়ারপোর্টের অফিস। সেখানেই বসার জায়গা, চেক-ইন, চেক-আউট। সেখানে স্পোর্টস এর তরফে এক জন প্রতিনিধি এসে দেখা করে গেলেন। আমাদের পারমিট আর আইডি প্রুফ চেক করে বসতে বললেন। জানালেন প্রথমে এখান থেকে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হবে স্পোর্টস এর অফিসে। সেখানে লাঞ্চের ব্যবস্থা আছে। লাগেজ গাড়িতে তুলে চললাম সেদিকে।

আগাতি আইল্যান্ডটা লম্বায় সাড়ে সাত কিলোমিটারের কাছাকাছি। আর চওড়া সাড়ে আটশো মিটার মাত্র। জনসংখ্যা সাড়ে সাত হাজারের একটু বেশী।এয়ারপোর্টটা দ্বীপের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। দ্বীপের মাঝামাঝি একটা জায়গায়, একটা দোতালা বাড়িতেই স্পোর্টস এর অফিস আর খাওয়ার জায়গা। সেখানে এসে পৌছালাম আমরা।

গাড়িতে ওঠার সময়ই লোকাল ম্যানেজার ইকবাল জানিয়ে দিয়েছিলো এখানে লাঞ্চ শেষে আগাতি ঘুরিয়ে দেখাবে। তার পর আমরা স্পিড বোটে রওনা দেবো কাডমাত এর উদ্দেশ্যে। অফিসের সামনে আসতেই সবার হাতে ডাবের জল দেওয়া হলো। তাতে জলের থেকে মালাই এর পরিমানই বেশী। তারপর লাঞ্চের পালা।

লাঞ্চে ভাত, রুটি, সব্জি, সাম্বার ডাল, চিকেন কারী, পাঁপড়, তরমুজ সহ আরো দুএকটা পদ ছিলো। রুটিটা তৈরী হতে মিনিট দশেক সময় লাগবে জানাতে আমরা কয়েক পা হেঁটে সামনের বিচের দিকে গেলাম। সেখানে মেয়েকে খাওয়ানো আর সাগরের নীল জল দেখা দুটোই একসাথে চললো। আর আমাদের খাবার রেডি হতেই ফিরে এলাম সেখানে। সবার পেটেই ছুঁচোর টান। আমাদের তাই খাবার শেষ করতে বেশীক্ষন লাগলো না।

আগেই বলেছিলো শুক্রবার বলে ড্রাইভার থেকে বোট কর্মীরা সবাই নামাজ পড়তে যাবে। তাই দুপুর দুটোর আগে বোট ছাড়বে না। লাঞ্চের পর্ব মিটতে শুরু হলো আগাতি ঘুরে দেখা। বিচ, লাইট হাউস, জেটি ঘুরিয়ে অন্য একটা জেটিতে এসে দাঁড় করালো গাড়িটা। এর মধ্যে দু-তিনবার ফোন এসেছে ড্রাইভার এর মোবাইলে। আমরা পৌছাতেই তড়িঘড়ি একটা বোটে লাগেজ সহ আমাদের তুলে দিলো ইকবাল।

দেখে এটাকে স্পীড বোট বলে মনে হলো না। বরং এটা একটা বড় সাইজের জেলে নৌকা যাতে মটর লাগানো আছে। আছে ছাউনি দেওয়া একটা অংশ। যেখানে হাত পা ছড়িয়ে বসা যায়। কিন্তু চেয়ারে বসার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা ছাড়া তাতে আরেকটা পরিবারের চারজন বসে আছেন। প্রথমে ভেবেছিলাম এই বোটে করে কিছুদূর নিয়ে গিয়ে অন্য কোনো বড় স্পীড বোটে তুলবে। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর বোটের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে ভুল ভাঙলো।

জানা গেলো স্পোর্টস কাডমাত নিয়ে যাওয়ার জন্য যে স্পীড বোট দুটো ব্যবহার করে তার দুটিই খারাপ হয়ে পড়ে আছে কোচিতে। তড়িঘড়ি তাই এরা আমাদের এই বোটে তুলে দিয়েছে। মাঝ সমুদ্রে আমাদের ভরসা বলতে সবার জন্য একটা করে লাইফ জ্যাকেট। আর প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেবার জন্য কোমড সহ অপরিসর টয়লেট। আমাদের এটা করেই নিয়ে যাওয়া হবে কাডমাত।

আগাত্তি থেকে কাডমাত যেতে স্পীড বোটে সময় লাগে ঘন্টা তিনেক। কিন্তু আমরা জিজ্ঞেস করাতে জানালো এটাতে করে যেতে সময় লাগবে নাকি কম করে ঘন্টা ছয়েক। অধৈর্য্য হয়ে ফোন করার চেষ্টা করলাম কোচির স্পোর্টস এর অফিসে। মাঝসমুদ্রে মাঝেমধ্যে বি এস এন এলের টাওয়ার এলেও তাতে ফোন করা সম্ভব হচ্ছে না। একবার ইন্টারনেটের সিগন্যাল পেয়ে বোটের ছবি তুলে ওদের হোয়াটসঅ্যাপ করার ব্যর্থ চেষ্টাও চালালাম।

প্রথম প্রথম বেশ ভয়ই লাগছিলো। আস্তে আস্তে ভয় কাটতে লাগলো। আসলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যেমন হঠাৎ সাহস বেড়ে যায় তেমন আরকি। ভয়-ডর দূরে সরিয়ে ফেলে এবার নীল সমুদ্রকে উপভোগ করার চেষ্টা। তাতে কাজ হলো বেশ। আমাদের জন্য বোটে হালকা টিফিনের ব্যবস্থা ছিলো। তাতে চিপস্, ভুজিয়া, বিস্কুট, চা, জলের বোতল ছিলো। আর ছিলো মিষ্টি তরমুজ।

বোট যতো এগাচ্ছে সেগুলোতে আমাদের পেট ভরছে। এদিকে সন্ধ্যা নামতে চলেছে। "সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশতো, গোধূলির রঙে হবে এ ধরণী স্বপ্নের দেশতো, বেশ তো, বেশ তো"। অসীম আকাশ তলে অনন্ত নীল জলরাশির বুকে এক অতুলনীয় সূর্যাস্ত চাক্ষুষ করার স্বাক্ষী হলাম আমরা। সমুদ্রের নীলিমায় কেউ যেন গলানো সোনা ঢেলে দিয়েছে যা চোখ ঝলসাতে যথেষ্ট। বোটের মাথায় বসে সেদিকে তাকিয়ে তন্ময় হয়ে গেলাম।

স্বপ্নের দেশ ধীরে ধীরে কালছে হতে লাগলো। একটু আগেই যে আকাশে সূর্যের সোনা গলা রূপ, সে আকাশই এখন চাঁদের দখলে। "নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে, চুপি চুপি বাঁশি বাজে বাতাসে, বাতাসে"। বাতেসে বাঁশি বাজতে শুনিনি, তবে চাঁদের মিঠে আলোর স্নিগ্ধতা গায়ে মেখে ধ্যান মগ্ন সমুদ্রকে দেখলাম। ধীর, শান্ত, নেই কোনো আস্ফালন। ক্রমে অন্ধকার গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে।

আকাশ ভরা চাঁদ তারার তলে অসীম সমুদ্র বুকে ভেসে চলেছি আমরা কজন। যতোদূর চোখ যায়, চাঁদ-তারার আলো আর আমদের ছোট বোটের একটি মাত্র কৃত্রিম এলইডি বাল্বের আলো ছাড়া আর কোনো আলোর দেখা নেই। ঘন্টা দুয়েক এভাবে চলার পর বোটের কর্মীদের হঠাৎ ব্যস্ততা চোখে পড়লো। তবে কি কূলের দেখা পাওয়া গেছে। হঠাৎ করেই দূরে কিছু আলোর সারি চোখে পড়লো।

ওনাদের জিজ্ঞেস করাতে জানালেন, ওটা আমিনি দ্বীপ। কিন্তু ওটাতো আমদের গন্তব্য নয়। তাই আরো অপেক্ষা। বোট কর্মীরা জোরালো টর্চের আলো দিয়ে দূরের লাইট হাউসে সংকেত পাঠালো। সেখান থেকে পাওয়া সংকেতে এবার তারা বোটটাকে বাঁদিকে নিয়ে যেতে লাগলো। আরো মিনিট পনেরো যাওয়ার পর দেখা পাওয়া গেলো কাডমাতের আলোকমালা। তবে তা দেখে মন উৎফুল্ল হলেও তাকে হাতের কাছে পাওয়ার ঢের বাকী।

তীরে পৌছাতে লাগবে নাকি আরো মিনিট পঁয়তাল্লিশ। সবাই ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছে। বেশ কিছুদূরে প্রকাণ্ড এক কার্গো জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে মালপত্র নিয়ে। তার পাশ কাটিয়ে আমরা চলেছি তীরের দিকে। জেটিতে পৌছাতেই হইহই করে এগিয়ে এলো একদল লোকজন। প্রথমে ভেবেছিলাম এরা বোধহয় আমাদের বোটে করে অন্য কোথাও যাবেন। কিন্তু না, এনারা সবাই এসেছেন আমাদের স্বাগত জানিয়ে রিসর্টে নিয়ে যেতে।

আমাদেরকে তারা একটা মিনি বাসে তুলে দিলেন। আর লাগেজ তুললেন অন্য গাড়িতে। আমাদের গন্তব্য এখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরের রিসর্ট। সেখানে পৌছে দেখি আরো একদল ট্যুরিস্ট সেখানে অপেক্ষা করছেন। যারা আমাদের আধ ঘন্টা আগে এসে পৌছেছেন। আমাদের স্বাগত জানানো হলো ডাবের জলে। এখানেও এক গল্প। ডাবে জল কম মালাই বেশি। রাত নটা নাগাদ ইচ্ছে না থাকলেও তেষ্টা আর খিদে মেটাতে দু তিনটে খেয়ে নিলাম।

ওখানকার কর্মীরা আমাদের কটেজে নিয়ে গেলেন। বেশ বড়সড় একটা স্টুডিও রুমের মতো ঘর। সামনে বারান্দা। তারপর বসার জায়গা, শোওয়ার ব্যবস্থা আর তার পরে বিশাল সাইজের বাথরুম। সারাদিনের জার্নিতে সবাই ক্লান্ত। এখন তাই কোনোরকমে স্নান সেরে ডিনার সারার পালা। আমাদের কটেজ থেকে মিটার পঞ্চাশেক দূরে ডাইনিং এরিয়া। খাবারের জন্য সেখানেই সবাইকে যেতে হলো।

ভাত, রুটি, ডাল, সব্জি, টুনা মাছ ভাজা আর খাসির মাংসে সাথে পাঁপড় ও মিষ্টি। সবার এতোটাই খিদে পেয়েছিলো যে সবকিছুই খেয়ে নিলাম বিনা বাক্যব্যয়ে। এখানে আসার আগে খাবার নিয়ে যে ভূল ধারণা ছিলো তা কেটে গেছে। না, কোনো রান্নাই নারকেল তেলে করা নয়। আর সব খাবারই বেশ সুস্বাদু। ডিনার শেষে বসে কিছুক্ষণ গল্প করবো তার উপায় নেই। কারণ সারাদিনের জার্নির ধকলে সবাই যারপরনাই ক্লান্ত।

বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি। পাঁচটার দিকে ঘুম ভাঙতে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি সমুদ্র আমাদের প্রায় দোরগোড়ায়। রাতের অন্ধকারে অতোটা ভালো বোঝা যায়নি। কটেজের সামনে থেকে সমুদ্রের দূরত্ব মেরেকেটে ফুট তিরিশেক হবে। পান্না সবুজ সমুদ্রের জলের ডাকে ঘরে বসে থাকা দায়, তাই বেরিয়ে পড়লাম। সাদা বালুকাবেলায় দাঁড়াতে ঠান্ডা জলের পরশ ধুইয়ে দিয়ে যাচ্ছে পা।

এর মধ্যে গিন্নী আর পুঁচকিটাও এসে হাজির। বেশ কিছুক্ষন বালি নিয়ে খেলা আর ফটোশেসন চললো। এদিকে ব্রেকফাস্ট রেডি হয়ে গেছে। তাই সবাই ডাইনিং এরিয়াতে হাজির হলাম ব্রেকফাস্টের মেনুতে পুরি-সব্জী, ইডলি, বড়া, ধোসা, সাম্বার, ব্রেড টোস্ট, ব্রেড বাটার, ডিম, চা সহ নানা আইটেম সাজানো। যার যেমন প্রয়োজন নিয়ে নিলেই হলো। মেয়ের জন্য স্পেশাল ঝাল ছাড়া খিচুড়িও বানিয়ে দিয়েছিলো বলাতে।

এখানে আসার আগে থেকেই ঠিক ছিলো স্নোরকেলিং আর স্কুবা ট্রাই করবো। সেইমতো ব্রেকফাস্ট শেষে কথা বললাম স্পোর্টস অথরিটির সাথে। এখানে এদের দুটো সেকশন। একটা ওয়াটার স্পোর্টস আর স্নোরকেলিং এর জন্য। আর একটা স্কুবা আর ড্রাইভিং এর। ঠিক হলো সকাল নটা নাগাদ আমরা কোরাল গার্ডেন স্নোরকেলিং করবো। তাই তড়িঘড়ি সবাই তৈরী হয়ে নিলাম।

প্রথমে আমাদের বসিয়ে কিছুক্ষন বোঝানো হলো স্নোরকেলিং এর ব্যাপারে। নামটা ঝকমারি হলেও ব্যাপারটা বেশ সহজ। এটা করতে যেটা আবশ্যিক তা হলো একটা লাইফ জ্যাকেট আর একটা নাক ঢাকা মাস্ক যাতে চশমা ও শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য পাইপ লাগানো থাকে। আমাদের যেটা করতে হবে মাস্ক আর লাইফ জ্যাকেট পরে জলে ভেসে থাকতে হবে। আর ঠাকুর বিসর্জনের ছবিতে যেমন আমরা মা দূর্গার মুখের যতোটুকু অংশ ভেসে থাকতে দেখি, ঠিক ততোটুকু অংশ জলে ডুবিয়ে নীচে থাকা মাছ, কোরাল সহ সামুদ্রিক নানা প্রানী দেখতে হবে।

এবার ট্রেনিং এর পালা। ট্রেনিং এ এতোক্ষন যেগুলো মৌখিক সেখানো হলো সেগুলোই একবার হাতে কলমে করে দেখাতে হবে। ট্রেনার বারবার বলে দিলেন মাস্ক পরে ভুলে যান যে আপনার নাক বলে কোনো বস্তু আছে। যাবতীয় শ্বাস প্রশ্বাস সব নিতে হবে মুখের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে। যেকোনো নতুন জিনিস ট্রাই করতে একটু ভয় ভয়ই করে। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি। তবে বার চারেক ট্রাই করে দু এক বার নোনা জল ঢোক গিলে ব্যাপারটা আয়ত্তের মধ্যে এসে গেলো।

সফর সঙ্গী দাদা বৌদি প্রথমেই জানিয়েছে তারা এসবের মধ্যে নেই। তাদের কন্যেও একটু চেষ্টা করে রণে ভঙ্গ দিয়েছে। তাই আমরা কত্তা-গিন্নী চললাম স্নোরকেলিং করতে। আমাদের রাজকন্যের অবশ্য এখনো বয়স হয়নি স্নোরকেলিং করার। কিন্তু তাকে সেটা বোঝায় কার সাধ্যি। তাই তিনিও চললেন লাইফ জ্যাকেট পরে আমাদের সাথে। আমাদেরকে গ্লাস লাগানো বোটে করে নিয়ে যাওয়া হবে সমুদ্রের মাঝে। তার পর শুরু হবে স্নোরকেলিং।

মিনিট দশেক বোটে করে দ্বীপ থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে এসে নোঙর করলো বোট। আসার পথে পান্না সবুজ জলের মধ্যে অজস্র কালছে গাছ ও পাথরাকৃতির কোরালের দেখা মিলেছে। আর এখন যেখানে এনে দাঁড় করিয়েছে তার চারপাশেই কোটাল গার্ডেন। গ্লাস বোটে বসেই নিচের কোরাল আর রঙবেরঙ এর মাছের খেলা চোখে পড়ছিলো। কিন্তু তাতে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ার ইচ্ছেটা আরো চাড়া দিয়ে উঠছে।

আমাদের সাথে আরো দুজন এসেছে স্নোরকেলিং করতে। দুজন গাইড প্রথমে আমার গিন্নী ও ওনাদের একজনকে জলে নামালো। লাইফ জ্যাকেট পরে থাকায় ডুবে যাওয়ার কোনো চান্স নেই। তাই মহা আনন্দে তার জলের নীচের রঙীন দুনিয়াটা চাক্ষুষ করতে লাগলো। মুখ ডুবিয়ে দেখছে আর মাঝে মাঝে মুখ তুলে ওয়াও, কি সুন্দর, আহা, এই ধর ধর ধর, উঁফ ইত্যাদি নানা বিস্ময় সূচক আওয়াজ করছে।

মায়ের এসব কান্ড দেখে মেয়েকে সামলানোই দায়। সে এখনি নামবে জলে। কিন্তু গাইড দুজন তো দুজনকে নিয়ে ঘুরছে। এমন সময় যিনি এতোক্ষন বোটের হাল ধরে বসে ছিলেন তিনিই এগিয়ে এলেন। জানালেন তিনিও গাইড। কিন্তু পায়ে চোট থাকার কারণে তিনি বিগত কয়েক মাস জলে নামছেন না। তবে পুঁচকিটাকে নিয়ে নেমে পড়লেন জলে। আর তার পর শুধুই মেয়ের মুখে বাবা লাল মাছ, নীল মাছ, অরেঞ্জ ফিস্, ওটা কি আঙ্কেল, ওদিকে চলো, আরো দূরে এইসব কথা শুনতে শুনতে সময় কাটছে।

এদিকে মিনিট কুড়ি জলে কাটিয়ে গিন্নী উঠে এসেছে বোটে। চোখে মুখে তৃপ্তি আর মুগ্ধতার ছাপ স্পষ্ট। এবার আমার পালা। মাস্ক লাগিয়ে নেমে পড়লাম জলে। ঝাঁকে ঝাঁকে নানা রঙীন মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার চারিদিকে। জলের ঢেউয়ে মাথা নাড়াচ্ছে নানা সামুদ্রিক প্রাণী, উদ্ভিদ, প্রবাল। এ এক অচেনা মায়াবী জগৎ। একোরিয়াম আর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখা সমুদ্রতলের জগৎ এখন আমার চোখের সামনে। এ যেন এক আজব দুনিয়ায় প্রবেশ করে ফেলেছি।

মুগ্ধতার আবেশে তখন আমি মগ্ন। কতো রকমের মাছ, অক্টোপাস, কোরাল দেখলাম তার ইয়ত্তা নেই। কোরাল গার্ডেনের কোরাল গুলি বেশ ছুঁচালো। তাই সেখানে পা নামাতে আমাকে বারণ করলো গাইড দাদা। একবার আমার হাত ছেড়ে ডুব দিয়ে তুলে আনলো স্টার ফিস। যদিও ওটাকে দেখে প্রথমে আমার একটা লালচে খয়েরী পাথর বলে মনে হয়েছিলো। তবে তার উল্টোদিকটা খেয়াল করলে স্টার আকৃতিটা বোঝা যাচ্ছিলো। গাইড জানালেন ওটা ভয় পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে।

জল থেকে ওঠার ইচ্ছে ছিলোনা মোটেই। আমি না হয়ে মিনিট কুড়ি জলে রয়েছি কিন্তু গাইড দাদারা প্রায় ঘন্টা খানেকের বেশী জলে নেমেছেন। তাদের পরিশ্রমের কথা মাথায় আসতে উঠে এলাম। কিন্তু আমরা ছাড়লেও আমার মেয়ের জন্য আবার তাদের জলে নামতে হলো। তার আর মাছ দেখা শেষ হতে চায়না। আর যেহেতু লাইফ জ্যাকেট পরা আছে তাই এই ফাঁকে আমিও একা একাই আরো কিছুক্ষন কোরাল গার্ডেনে ঘুরে নিলাম।

ঘন্টা দেড়েকের স্নোরকেলিং পর্ব মিটিয়ে ফিরে এলাম রিসর্টে। এতোক্ষন জলে কাটিয়ে সবার প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। তাই তাড়াতাড়ি স্নান সেরে সবাই ডাইনিং এরিয়াতে হাজির। লাঞ্চের মেনুতে ভাত, রুটি, ডাল, সব্জি, পাঁপড়, চিকেন কারী আর টুনা মাছ ফ্রাই। সব নিমেষে পেটে চলে গেলো। ঠিক করা হলো একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকালে বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টস গুলো করবো আমরা। তাই এখন একটু গড়িয়ে নেই।

বেড়াতে এসে এই এট্টু গড়ানো যে কি বাজে জিনিস অনেকবার টের পেয়েছি। তাই এবারো মনে কু-ডাকছিলো। হলোও তাই। কাল সারাদিনের জার্নি আর আজ সারা সকাল সমুদ্রে দাপাদাপিতে ঘুম চলে এলো কয়েক মিনিটে। আর তা ভাঙলো যখন, তখন সূর্যিমামা অস্তাচলে যাওয়ার তোড়জোড় করছে। তড়িঘড়ি রেডি হয়ে সমুদ্র পাড়ে গিয়ে দেখি স্পোর্টস এর যাবতীয় সরঞ্জাম গোটানোর পালা চলছে। অগত্যা আগামীকালের জন্য তুলে রাখা।

এখন ডেকে বসে সূর্যাস্ত দেখা আর নিজেদের মধ্যে গল্পগুজব করেই সময় কাটানো ছাড়া কিছুকরার নেই। সন্ধ্যায় চা-পকোড়া সহ গল্প চললো। তার পর ডিনারের ডাক আসতেই সেটা মিটিয়ে নিলাম। ডিনারেও মোটামুটি একই ধরণের আইটেম। নন ভেজ আইটেমে পার্থক্য বলতে সকালে টুনা ফ্রাই এর জায়গায় টুনা কারী আর চিকেন কারীর যায়গায় চিকেন ফ্রাই।

রাতের খাবার শেষে এবার আবার ঘুমের দেশে। অবশ্য তার আগে কথা বলে নিয়েছিলাম স্পোর্টস অথরিটির সাথে আগামীকাল স্কুবা ডাইভিং এর ব্যাপারে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেরা নিজেদের মতো ঘুরে বেড়ালাম দ্বীপে। গিন্নী আবার কোত্থেকে একটা সাইকেল জুটিয়ে নিজে নিজেই ঘুরে এলো কিছুক্ষন। তারপর ইডলি, বড়া, ধোসা, ডিম ইত্যাদিতে পেট ভরিয়ে তৈরী হলাম স্কুবার জন্য।

এখানে স্কুবা দুটো স্টেজে হয়। তিন মিটার আর বারো মিটার গভীরে। বোটে করে রীফ এরিয়াতে নিয়ে গিয়ে গাইডের তত্ত্বাবধানে চলবে স্কুবা। তার আগে আধঘন্টার থিওরি ক্লাস চললো আমাদের। জলের নীচে যেহেতু কথা বলা যাবে না, তাই সুবিধা অসুবিধা সবই জানাতে হবে হাতের দ্বারা কিছু সিগন্যাল এর সাহায্যে। সেগুলোই শেখানো হলো। 👍👎👌👋 নানা সিগনাল এর মাধ্যমে নিজের অবস্থা জানাতে হবে গাইডকে।

কাল সকালে স্নোরকেলিংটা ভালোয় ভালোয় উতরে গেছি। আজ যে কি হবে তা নিয়ে নিজেদের মনেই সংশয় তৈরী হয়েছে। কাল যা হয়েছে জলের উপর ভেসে ভেসে হয়েছে। আজ আবার যা হবে সবই জলের নীচে গভীরে। তার আগে অবশ্য এতোক্ষন যা শুনলাম তা আমাদের হাতে কলমে করে দেখাতে হবে। পিঠে ঢাউস অক্সিজেন সিলিন্ডার চাপিয়ে আর মুখে মাস্ক পরে শুরু হলো ট্রেনিং। আপ, ডাউন, ওকে, নট ওকে, ক্লিন মাস্ক ইত্যাদি নানা সিগনাল হাতে কলমে করে দেখালো গাইড।

এবার আমাদের পালা। উপরে বলা জিনিস গুলো আমাদেরকেও করে দেখানোর পর শুরু। ও আর একটা মহা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেই ভুলে গেলাম। তা হলো ইকুলাইজ করা। জলের নীচে বায়ুচাপ বেশী। যতো নীচে যাওয়া হবে ততোই কানের উপর চাপ পড়বে। আর তখন নাক চেপে উল্টোদিকে প্রেশার দিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখাকেই বলে ইকুলাইজ করা। আর এটা ঠিক মতো করতে না পারলে ঠিকঠাক ভাবে স্কুবা করা সম্ভব নয়। তাই সেটার উপর বারবার জোর দিলেন গাইড দাদা।

জলে নামার আগেই একপ্রস্থ ফর্ম ফিলাপ আর সই সাবুদের পালা চললো। এর পর বোটে করে আমাদের নিয়ে চললো গভীর সমুদ্রের দিকে। এ যাত্রায় আমাদের কত্তা গিন্নীর সঙ্গে আছে আরো তিন জন। যার মধ্যে দুজন আনার সহোদর ভাই। আর আছে তিন জন গাইড, এক জন ক্যামেরাম্যান ও তিন জন সাপোর্টিং স্টাফ। যেহেতু স্কুবা একটু গভীর জলে করা হয় তাই সেখানে আমাদের কন্যেকে নিয়ে যেতে দেবে না। তাই তাকে আমাদের সঙ্গী দাদা বৌদির কাছে রেখে চললাম স্কুবা অভিযানে।

কাল স্নোরকেলিং যে দিকটায় করেছিলাম, আজ আমরা তার উল্টোদিকে চলেছি। তার কারণ আমরা আজ বেশী গভীর জলে নামবো। বোট যতো এগাচ্ছে ততোই জলের রঙ গাঢ় হচ্ছে। প্রথমের পান্না সবুজ জল ক্রমশ নীল থেকে কালছে নীলে পরিণত হয়েছে। একজায়গায় এসে নোঙর করা হলো। এবার আমাদের নামার পালা। প্রথমে দুই ভাই ঝাঁপ দিলো জলে। ওরা এর আগে আন্দামানে স্কুবা করে এসেছে। তাই প্রথমে ওরা যাবে বলেই ঠিক হলো। আর একটু পরে আমাদের সঙ্গী আর একজন নামলো গাইডের সাথে।

মিনিট কুড়ি দুই ভাই আর দুই গাইড হারিয়ে গেলো জলের তলে। আর ক্যামেরা হাতে তাদের গতিবিধি রেকর্ড করতে লাগলেন আর এক জন। অন্য আরেক জন মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফিরে এলো।
ওনার ইকুলাইজে সমস্যা হওয়ায় কানে ব্যথা শুরু হয়েছিলো। এবার আমার পালা। গিন্নীকে বোটে রেখে গাইডের সাথে আমি ঝাঁপালাম জলে। প্রথম মিনিট দুয়েক একটু অসুবিধা হয়েছিলো। ভাবলাম পুরো সময় বুঝি কাটাতে পারবো না।

একটু পরেই ধাতস্থ হয়ে গেলাম। তার পর শুধু সমুদ্র তলের দুনিয়া উপভোগের পালা। তবে কাল যেখানে স্নোরকেলিং করেছিলাম তার তুলনায় এদিকে জলে কারেন্টের পরিমান অনেক বেশী। তাই সমুদ্র তলের বালি, জলে ঘুলিয়ে আসপাশটা কেমন যেন কুয়াশাছন্ন পরিবেশের মতো তৈরী করেছে। তাই সবকিছু একদম পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। তবে আস্তে আস্তে তা কাটতে লাগলো। আর এবার জলের মধ্যে নানা রঙীন মাছ আর কোরালের মাঝে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম আমরা।

প্রতিমিটার গভীরে যাওয়ার সাথে সাথে ইকুলাইজ করার ব্যাপারটা আয়ত্তের মধ্যে চলে আসায় স্কুবার মজাটা উপভোগ করলাম বেশ। নামতে নামতে একেবারে সমুদ্রের তলদেশ স্পর্শ করলাম আমরা। গাইড সেখানে কিছুক্ষন বসতে বললো আমায়। চললো ফটোসেশান। স্কুবার প্যাকেজের মধ্যেই পাঁচটা স্টিল ছবি আর দু মিনিটের দুটো ভিডিও দেওয়ার কথা। সেটারই রেকর্ড করছিলো সঙ্গে থাকা ক্যামেরাম্যান। এবার উপরে ওঠার পালা। যদিও চলে আসতে ইচ্ছে করছিলোনা মোটেই।

উপরে উঠে দেখি গিন্নী বোটে নেই। তার মানে সে আপাতত জলের নীচে স্কুবায় ব্যস্ত। মিনিট দশেকের মধ্যে উঠেও এলো সে। জানালো ইকুলাইজ করতে সমস্যাতে কানে ব্যাথা শুরু হওয়ায় তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। সবারই স্কুবা করা হয়ে গেছে। তাই আমরা ফেরার পথ ধরলাম। স্পোর্টস এর অফিসের মধ্যে পোস্টারে লেখা ছিলো একবার যদি কেউ ডাইভ করে, সে পরে আবারো ডাইভ করবে। এখন মনে হচ্ছে যে কথাটা একদম ঠিক। একরাশ ভালোলাগা আর আবারো ডাইভিং এর ইচ্ছে নিয়ে ফিরে এলাম ঘরে।

ক্রমশ...

descriptionLakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন  EmptyRe: Lakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন

more_horiz
#_লক্ষ্য_যখন_লাক্ষাদ্বীপে_#

#_দ্বিতীয়_পর্ব_#

দুপুরের লাঞ্চে মোটামুটি একই ধরণের মেনুতে পেট ভরিয়ে নিলাম। আজ আর দুপুরে ভাত ঘুম দেবোনা বলে পণ করেছি আমরা। ঠিক করেছি একটা গাড়ি ভাড়া করে কাডমাতের উত্তর প্রান্তটা ঘুরে আসবো। কিন্তু গাড়ি আসতে দেরী করে ফেলায় আমাদের বেরাতে অনেক দেরী হয়ে গেলো। প্রায় কিলোমিটার নয়েক গাড়িতে গিয়ে আমরা পৌছালাম। এখানে আছে লাইট হাউস, সানসেট পয়েন্ট। সেখানে বসে অপরূপ সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করলাম।

সন্ধ্যা নেমে গেছে। তাই আর দেরী না করে ফেরার রাস্তা ধরা। ফেরার পথে আলো-আঁধারিতে প্রায় চারশো বছরের পুরানো বট গাছ দেখে ফিরে এলাম রিসর্টে। তবে কাডমাতের উত্তর প্রান্ত অপেক্ষা দক্ষিণ প্রান্তের সৌন্দর্য অনেক বেশী তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ফিরে দেখি বিচের উপর খোলা আকাশের নীচে ডিনারের আয়োজন চলছে। সন্ধ্যার চা পান পর্ব মিটতে আমরা নিজেদের ঘরে গল্পগুজবে মত্ত হলাম।

বালুকাবেলায় চাঁদের আলোতে ডিনারের আয়োজন বেশ ভালো। তবে মশার উপদ্রবে কিছুটা তাল কাটছিলো ঠিকই। বারবিকিউ তে আলু, চিকেন, টুনা মাছ। জিরা রাইস আর মাটন কারী, চাটনী পাঁপড়, মিস্টি আরো অনেক কিছুই ছিলো। সে সবেতে পেট ভরিয়ে চলে এলাম ঘরে। এবার ঘুমের দেশে যাওয়ার পালা।

ছেড়ে যেতে ইচ্ছে না করলেও আজ কাডমাত ছেড়ে চলে যেতে হবে বাঙ্গারাম। তাই খুব সকাল সকাল হেঁটে হেঁটে ঘুরতে বেরালাম কাডমাতের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে। ঝাউ, কেয়া ইত্যাদি গাছের ফাঁকদিয়ে একচিলতে রাস্তায় হেঁটে পৌছালাম একেবারে শেষ প্রান্তে। সেখানে তখন আমরা তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই। সাদা বালুকাতটে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার তিন দিকেই পান্না সবুজ জল। দেদার ফটোসেশান শেষে ফিরে এলাম ঘরে।

লাগেজ গুছিয়ে স্নান আর ব্রেকফাস্ট সেরে নেওয়া হলো। জেটি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে। তাতে লাগেজ চাপিয়ে চড়ে বসলাম আমরা। এবার সবাইকে টাটা করে চললাম জেটির দিকে। সেখানে পৌছানোর আগে একটা নারকেল তেল তৈরীর কারখানায় ঢুকে নারকেল থেকে তেল তৈরী চাক্ষুষ করলাম। সেখানে নারকেল তেল ও নারকেল গুঁড়ো কেনাকাটি করলো অনেকে। এবার আবার গাড়িতে উঠে পৌছালাম জেটি ঘাটে।

সেখানে আমাদের জন্য বোট অপেক্ষা করার কথা। আসার সময় যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাতে যাওয়ার সময় কি হবে তা নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই। যদিও স্পোর্টস এর লোকজন আমাদের বলেছেন এবার ভালো বোটের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আমরা পৌছানোর পরেও কোনো বোটের দেখা নেই। ওনারা জানালেন কিছুক্ষণের মধ্যেই বোট চলে আসবে। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

মিনিট তিরিশ অপেক্ষা শেষে তার দেখা পাওয়া গেলো। নীল সমুদ্রের বুক চিরে হঠাৎ করেই তীব্র গতিতে আমাদের দিকে ছুটে আসছে সে। এবারের বোটটি দ্বিতল ও বাতানুকূল। প্রায় দেড়শো যাত্রী পরিবহণে সক্ষম। আমাদের হাতে টিকিট ধরিয়ে দিয়ে ছোটো ভটভটিতে তুলে দিলো স্পোর্টস এর লোকেরা। এতে করেই মাঝ সমুদ্রে নোঙর করা বড় বাতানুকূল বোটটি উঠবো আমরা।

সেটিতে উঠেই এর মধ্যেকার ব্যবস্থা দেখে আশ্বস্ত হওয়া গেলো যে ফেরার পথে কোনো অসুবিধায় পড়তে হবে না। হাই স্পীডবোটটি চা,কফি, টেলিভিশন, পুশ ব্যাক সিট থেকে নানা আধুনিক সুবিধা যুক্ত। আর এতে চেপেই মাত্র দু-ঘন্টায় চলে এলাম আগাতি। এমনিতেই লেখাটা মাত্রাতিরিক্ত বড় হয়ে গেছে৷ তাই বাঙ্গারামের কাহিনী এটার সাথে যোগ করলে সেটা যা তা হয়ে যাবে। তাই সেটি পরের পর্বে।

এবার একটু খরচের খবরা খবর দেওয়া যাক। কোলকাতা থেকে কোচি আপনারা আপনাদের সুবিধা মতো ট্রেন কিংবা বিমান যোগে চলে আসুন। কোচি থেকে আগাতির বিমান ভাড়া ৫৫০০/- টাকার আশেপাশে। সেখান থেকে কাডমাত এর বোট ভাড়া বড়দের ৪০০০/- এবং বাচ্চাদের ২০০০/-। ফিরতি পথেও কাডমাত থেকে আগাতি ফেরার খরচ একই। স্কুবা, স্নোরকেলিং, ওয়াটার স্পোর্টস এর খরচ আলাদা।

কাডমাত রিসর্টের রুম ভাড়া নন এসি ৫০০০/-,  এসি স্ট্যান্ডার্ড  ৭০০০/-, এসি ডিলাক্স ৯০০০/-, এসি সুপার ডিলাক্স কটেজ ১১০০০/-। সব গুলিই দুজনের  খাওয়া দাওয়া সমেত। তবে সঙ্গে অতিরিক্ত লোক থাকলে গুনতে হবে যথাক্রমে ২৫০০/-, ৩৫০০/-, ৪০০০/- ৫০০০/- টাকা। নন এসি রুম গুলি রিসর্ট এরিয়া থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে।

বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে।

Code:

 Manager Information & Booking
MOBILE: +91 9495984001
Ph- 04842355387 / 2355789


ই-মেইল

Code:

 laksports.reservation@gmail.com


ওয়েবসাইট

Code:

 www.lakshadweeptourism.com


আর M V KAVARATTI করে পাঁচ দিনের লাক্ষাদ্বীপ সমুদ্রম প্যাকেজ এর খরচ বড়দের ৩০৫০০/- আর বাচ্চাদের ২২০০০/-।

descriptionLakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন  EmptyRe: Lakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন

more_horiz
“Lakshadweep, the group of 36 islands is known for its exotic and sun-kissed beaches and lush green landscape. The name Lakshadweep in Malayalam and Sanskrit means ‘a hundred thousand islands’. ”

India’s smallest Union Territory Lakshadweep is an archipelago consisting of 36 islands with an area of 32 sq km. It is a uni-district Union Territory and comprises of 12 atolls, three reefs, five submerged banks and ten inhabited islands. The islands have a total area of 32 sq km. The capital is Kavaratti and it is also the principal town of the UT. All Islands are 220 to 440 km away from the coastal city of Kochi in Kerala, in the emerald Arabian Sea. The natural landscapes, the sandy beaches, abundance of flora and fauna and the absence of a rushed lifestyle enhance the mystique of Lakshadweep.

Only BSNL and Airtel provides telecommunication services to Lakshadweep Islands. BSNL provides connectivity in all 10 inhabited islands where as Airtel provides connectivity to Kavaratti and Agatti islands.

◆◆ The entry to Lakshadweep islands is restricted. One requires an entry permit issued by Lakshadweep Administration to visit these islands.

descriptionLakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন  EmptyRe: Lakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন

more_horiz
History
Early history of Lakshadweep is unwritten. What now passes for history is based on various legends. Local traditions attribute the first settlement on these islands to the period of Cheraman Perumal, the last king of Kerala. It is believed that after his conversion to Islam, at the behest of some Arab merchants, he slipped out of his capital Cranganore, the present day Kodungallor – an old harbour town Kochi, for Mecca. When his disappearance was discovered, search parties went after him in sailing boats and left for the shores of Mecca, in search of the king from different places. It is believed that one of these sailing boats of Raja of Cannanore was struck by a fierce storm and they were shipwrecked on the island now known as Bangaram. From there they went to the nearby island of Agatti. Finally the weather improved and they returned to the mainland sighting other islands on their way. It is said that after their return another party of sailors and soldiers discovered the island of Amini and started living there. It is believed that the people sent there were Hindus. Even now unmistakable Hindu Social stratification exists in these islands despite Islam. Legends say that small settlements started in the Islands of Amini, Kavaratti, Andrott and Kalpeni first and later people from these islands moved to the other islands of Agatti, Kiltan, Chetlat and Kadmat. This legend of Cheraman Perumal is not, however, substantiated.

The advent of Islam dates back to the 7th century around the year 41 Hijra. It is universally believed that one St.Ubaidullah(r) while praying at Mecca fell asleep. He dreamt that Prophet Mohammed(s) wanted him to go to Jeddah and take a ship from there to go to distant places. Thus, he left Jeddah but after sailing for months, a storm wrecked his ship near these small Islands. Floating on a plank he was swept ashore on the island of Amini. He fell asleep there but again dreamt of the Prophet asking him to propagate Islam in that Island. Ubaidullah started doing so. But this enraged the headman of the island and he ordered his exit at once. St. Ubaidullah(r) stood firm. Meanwhile,a young woman fell in love with him. He gave her the name Hameedat Beebi and married her. This further offended the headman and he decided to kill him. It is said that the headman and his henchmen surrounded Ubaidullah(r) and his wife to kill them. At once St.Ubaidullah(r) called up on the Almighty and the people were struck blind. At this time St.Ubaidullah(r) and his wife disappeared and as soon as they left the island people regained their eye sight.From Amini St.Ubaidullah(r) arrived at Andrott where he met with similar opposition but he succeeded finally in converting the people to Islam. He next went to other islands and successfully propagated Islam and returned to Andrott where he died, and was buried. The grave of St.Ubaidullah(r) is today a sacred place. Preachers from Androttare respected deeply in far off lands like Sri Lanka, Malaysia, Burma etc. It is a marabout or Mukbara.

The Arrival of the Portuguese in India again made Laccadives an important place for seafarers. It was also the beginning of years of plunder for the islands. The finely spun coir was much sought after for ships. So the Portuguese started looting island vessels. They forcibly landed at Amini to procure coir sometime in the early 16th century, but it is said that the people killed all the invaders by poisoning, ending the Portuguese invasion.

Even after the conversion of the entire islands to Islam, sovereignty remained in the hands of the Hindu Rajah of Chirakkal for some years. From the hands of the Chirakkal Raja, the Administration of the island passed on to the Muslim house of Arakkal of Cannanore around the middle of the 16th century. The Arakkal rule was oppressive and unbearable. So sometime in the year 1783 some islanders from Amini took courage and went to Tipu Sultan at Mangalore and requested him to take over the Administration of Amini group of islands. Tipu Sultan at that time was on friendly terms with Beebi of Arakkel and after deliberations, the islands of Amini group were handed over to him. Thus the islands suzerainty came to be divided as five came under the rule of Tipu Sultan and the rest continued under Arakkal house. After the battle of Seringapattom in 1799 the islands were annexed to the British East India Company and were administered from Mangalore. In 1847, a severe cyclone hit the island of Andrott and Raja of Chirakkal decided to visit the island in order to assess the damages and for distributing relief. An officer of the East India Company Sir William Robinson volunteered to accompany him. On reaching Andrott, the Rajah found it difficult to meet all the demands of the people. Sir William then offered the Rajah help in the form ofa loan. This was accepted. This arrangement continued for about four years but when the interest started mounting, the English asked the Rajah to repay them which he could not. In 1854 all the remaining islands were handed over to the East India Company for Administration. so, came the British rule.

The sequestration of the islands is a clear example of the political manipulations and methods adopted by the British for establishing their supremacy in India. Its traditional system of administration was treated by the English as something of misgovernment. But they were more interested in their own political and economic interests than the good government of the islands. Their policy was to exploit the profits from the islands through the Beebi without taking responsibility of its administration. the British later brought the Lakshadweep Regulation 1912,which confers limited power of judicial and magisterial status to Amins/Karanis of the islands. A reasonable restriction of outsiders were also brought into force by the above regulation. Nine Primary Schools and few dispensaries were started during the colonial rule in the islands.

The Union Territory was formed in 1956 and it was named Lakshadweep in 1973.

descriptionLakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন  EmptyRe: Lakshadweep tour লাক্ষাদ্বীপ ভ্রমন

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply