ভুটান ভ্রমণের প্রয়োজনীয় তথ্য
আমি গত ৭ই অক্টোবর থেকে গতকাল ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত সড়কপথে ভুটান এবং ইন্ডিয়া ট্রাভেল করি. আমার একটা অনুভূতি হলো ভুটান যাত্রার জন্য কম্প্রিহেনসিভ কোনো তথ্য আমি যাওয়ার আগে খুঁজে পাইনি। যে কারণে যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত ভাবে প্রত্যেকটি ধাপ আলোচনা করার জন্য মনস্থির করলাম যদি ভ্রমণপিয়াসী কারো উপকারে আসে। একবারে পুরোটা আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই পার্ট বাই পার্ট করতে হচ্ছে। তারপরও কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে ইনবক্স করতে পারেন নিঃসঙ্কোচে। চেষ্টা করবো যতটুকু সম্ভব। Happy Traveling
.
প্রথম পর্ব:
ভিসা:
সড়ক পথে যেতে হলে আপনাকে ইন্ডিয়ার "ডাবল এন্ট্রি ট্রানজিট ভিসা" নিতে হবে। সেজন্য আপনাকে কোন ই-টোকেন নিতে হবে না, শুধুমাত্র অনলাইন এ ফর্ম ফিল আপ করে, প্রিন্ট আউট নিয়ে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে গুলশান -১ এ শুটিং ক্লাব এর পাশে ইন্ডিয়ান হাই কমিশন এ যেয়ে অন্যান্য কাগজ পত্র সহ জমা দিয়ে আসতে হবে. ভিসা ফি ৬০০ টাকা। তবে অবশ্যই শ্যামলী পরিবহনের ঢাকা টু শিলিগুড়ি রিটার্ন টিকেট এর অরিজিনাল এবং ফটোকপি জমা দিতে হবে. না হলে ভিসা রিজেক্ট করে দিবে। টিকেট মূল্য ৩০০০ টাকা। টিকেট কিনতে হবে কল্যাণপুরের শ্যামলী কাউন্টার থেকে।
আপনার যাত্রার যে তারিখ টি ফর্ম এ উল্লেখ করেছেন, তার ঠিক ১/২ দিন আগে আপনি ভিসা পাবেন, যত আগেই আপনি এপ্লিকেশন জমা দিয়ে থাকেন না কেন. সুতরাং ভিসা নিতে যাওয়ার প্ল্যান সেভাবেই করুন। ভিসা ও পাসপোর্ট রিটার্ন করার সময় বিকাল ৩:৩০ থেকে ৪:৩০ (এই সময়ের মধ্যে এম্বাসি তে ঢুকতে হবে). ট্রানজিট ভিসায় আপনি যাওয়ার সময় সর্বোচ্চ ৩ দিন, এবং আসার সময় সর্বোচ্চ ৩ দিন ইন্ডিয়ার অংশে অবস্থান করতে পারবেন।
আকাশপথে গেলে কোনো ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসা লাগবে না.
ভুটান এ বাংলাদেশিদের জন্য পোর্ট এন্ট্রি ভিসা। তার জন্য আপনার পাসপোর্ট এর ফটোকপি (৩ সেট), ৩ কপি পাসপোর্ট সাইজ ফটো অবশ্যই সাথে নিতে ভুলবেন না।
.
ট্রান্সপোর্ট (ঢাকা-বুড়িমারী):
আপনি আপনার ক্রয়কৃত শ্যামলী পরিবহনের টিকিটে যাত্রা করতে পারেন। কিন্তু যেহেতু আপনার শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন নেই ভুটান যাওয়ার জন্য, বুড়িমারী থেকে আপনাকে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে, সুতরাং বুড়িমারী থেকে পরের অংশটুকু আপনার নষ্ট হবে. আপনি আপনার নির্ধারিত যাত্রার ৩৬ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত শ্যামলীর টিকেট টি ফেরত দিতে পারবেন, ওরা ৩০০ টাকা কেটে আপনাকে ২৭০০ টাকা ফেরত দিবে।
হানিফ, এস আর, শাহ আলী, রোজিনা, লালমনি, নাবিল এবং মানিক এক্সপ্রেস বুড়িমারী পর্যন্ত যাতায়াত করে. এদের মধ্যে এস আর, শাহ আলী এবং মানিক এক্সপ্রেস এর এ.সি. সার্ভিস আছে, অন্যগুলো শুধু নন-এ.সি. আমার দেখা মতে মানিক এক্সপ্রেস এই মুহূর্তে সব চেয়ে ভালো সার্ভিসে দেয়. ওদের মহাখালী টার্মিনাল এও কাউন্টার আছে, কিন্তু এখান থেকে ছাড়া বাস টি নন-এসি. এসি বাস পেতে হলে কল্যাণপুর যেতে হবে।
ভাড়া এসি ৮০০ টাকা, নন-এসি ৬৫০ টাকা। বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে যাবে রাত ৮:৩০-৯:৩০ এর মধ্যে, বুড়িমারী পৌঁছে যাবেন সকাল ৮ টার দিকে। বাস থেকে নেমেই ডানে-বামে না তাকিয়ে বুড়ির হোটেল থেকে চটপট নাস্তাটা সেরে নিন, হতে পারে আগামী ৬-৭ ঘন্টার জন্য এটাই আপনার শেষ "জেনুইন" খাওয়া। (আমি এই ভুল করে পেটের মধ্যে ফায়ারপ্লেস নিয়ে মোটামোটি সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে ছিলাম)
.
ইমিগ্রেশন (বুড়িমারী-চেংড়াবান্ধা):
বুড়িমারি বর্ডারে আপনি নিজে সব কিছু করতে পারেন, আবার এজেন্ট এর সহযোগিতাও নিতে পারেন। বাংলাদেশ প্রান্তে বর্ডার এ কাজ শুরু হয় সকাল ৯ টায়। এখন ট্রাভেল ট্যাক্স ৬০০ টাকা, এজেন্ট চার্জ বাংলাদেশ প্রান্তে ১৫০ টাকা, ইন্ডিয়া প্রান্তে ১০০ টাকা প্রতি বার. কিন্তু আমার পর্যবেক্ষন হলো বাংলাদেশ প্রান্তে একটা সিন্ডিকেট আছে, যারা এই ট্রাভেল ট্যাক্স টা দেয় না. পুরোটাই নিজেরা ভাগাভাগি করে নেয়.
যদি আপনি নিজে সব কিছু করতে চান, তাহলেই প্রথমেই ইমিগ্রেশন বিল্ডিং এর (হলুদ বিল্ডিং) ইমিগ্রেশন কক্ষে যেয়ে একটি ডিপার্চার ফর্ম নিন, সেটি ফিলাপ করে ইমিগ্রেশন কক্ষের উল্টো দিকের কক্ষে চলে যান। চেক করিয়ে আবার ইমিগ্রেশন কক্ষে চলে আসুন। ফটো তোলা এবং সিল দেয়া হয়ে গেলে বেরিয়ে আসুন। এর মধ্যে অনেকেই আপনার পাসপোর্ট নিতে চাইবে, অনেক কুলি আপনার ব্যাগ টানতে চাইবে, প্রয়োজন না হলে নিজেই নিজেকে হেল্প করুন। আমার কাছে এটা ক্যাচাল মনে হয়.
এর পরের গন্তব্য বাংলাদেশ কাস্টমস এর টিনের ঘর. টাকা না দিলে চেক করবে, দিলে করবে না। এখানে আপনাকে আরেকটা সীল নিতে হবে কাস্টমস এর। নিয়ে ঢুকে যান ইন্ডিয়ায়।
এরপর ইন্ডিয়া কাস্টমস এর পালা। আপনাকে জিগ্যেস করতে পারে কত টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, পকেটে যাই থাকুক, কম করে বলুন। সীল নিয়ে চলে আসুন ইন্ডিয়া ইমিগ্রেশন অফিস এ. সামনে বসে থাকা এক অফিসার আপনার পাসপোর্ট চেক করবে, করার পর পাশের দরজা-জানালা বিহীন ঘরটিতে চলে যান, যেখানে এরাইভাল ফর্ম ফিলাপ করবে, আর ২৫ রুপি নিবে, ফর্ম ফিলাপ করে চলে যান ইমিগ্রেশন কক্ষে, যেখানে সব কিছু চেক করে ফটো তুলে আপনাকে এরাইভাল সীল দিবে।
ঝামেলা শেষ, আপনি এখন থেকে কয়েক দিনের জন্য নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গ ভাবলে কেউ কিছু মনে করবে না।
চলবে ..........