গত ৫ থেকে ১২ এপ্রিল ভূটান এবং শিলিগুরি সফর শেষ করে দেশে আসলাম। এতোদিন বিভিন্ন ট্রাভেলার ভাইবোনদের ট্রাভেল ব্লগে দেখেছিলাম ভূটানের সৌন্দর্য্য, কিন্তু নিজের চোখে দেখে বুঝলাম যে আসলেই ছবির মত সুন্দর দেশ ভূটান। এই সৌন্দর্য্য খুব সহজেই চোখে পরবে যখন আপনি ভারতের জয়গাও থেকে ভূটানের ফুন্টসোলিং প্রবেশ করবেন। এক সময় মনে হবে ইউরোপের কোনো দেশে চলে এসেছেন। প্ল্যান করা শুরু করি, "মিশন ভূটান"। প্ল্যানের শুরুতেই যাওয়ার জন্য হাত তুললো ৮ থেকে ৯ জন। কিন্তু অতীতের ভ্রমন অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ধারনা করি এই সংখ্যা ২ থেকে ৩ জনের বেশি হবে না।মোটামুটি শিওর ৩ জন। ঢাকা থেকে আমি এবং চট্টগ্রাম থেকে আমার আরো ২ বন্ধু। আমাদের দুই জনের আবার পাসপোর্টের মেয়াদ তেমন নেই। তাই যেহেতু প্ল্যান করেছি তাই দেরি না করে পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে দিয়ে দেই। পাসপোর্ট পাওয়া মাত্রই হাত তুলা সেই ব্যাক্তিতের আওয়াজ দেই, কিন্তু বললাম না, অতীতের অভিজ্ঞতা। যাই হোক আমরা তিনজনই যাচ্ছি। ভূটান যাওয়ার জন্য আমরা সড়ক পথকে বেছে নেই এবং সে অনুযায়ী প্ল্যান করি। আর সড়ক পথে যাওয়ার জন্য প্রথমেই দরকার ইন্ডিয়ার ডাবল এন্ট্রি ট্রানজিট ভিসা। ইন্ডিয়ার ট্রানজিট ভিসার নিয়ম জেনে নেই অনেকের শেয়ার করা অভিজ্ঞতা থেকে।(ভিসার নিয়মগুলো শেষে দিয়ে দিবো) শ্যামলী এস আর বাসের ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা রিটার্ন টিকেট করি ৪ এপ্রিল,২০১৮। প্রয়োজনীয় কাগজসহ জমা দেই ইন্ডিয়ান হাইকমশনের গুলশানের শাখায়। বলে রাখি ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসার জন্য আপনাকে টুরিস্ট ভিসার মত কস্ট করতে হবে না। তেমন লাইন থাকে না আর ইটোকেনে কোনো এপোয়েন্টমেন্ট ডেট লাগে না। ঢাকা থেকে আমি আর চট্টগ্রাম থেকে আমার দুই বন্ধু এক ডেটেই ভিসা এ্যাপ্লিকেশন জমা দেই কিন্তু ওরা ২ জন পাসপোর্ট পায় ১ এপ্রিল আর আমি পাই ৩ এপ্রিল। আলহামদুলিল্লাহ।
যাত্রা শুরু ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টায় কমলাপুর আন্তর্জাতিক বাস ট্রার্মিনাল থেকে। কিন্তু জ্যামের কারনে কমলাপুর থেকে বাস মিস করে কল্যানপুর থেকে বাসে উঠি। বাস ছাড়ে রাত ৮.৩০ মিনিটে। শ্যামলী পরিবহনে আমার পূর্বের অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো না। বলতে গেলে আমি সবসময়ই শ্যামলী পরিবহন এড়িয়ে যাই। কিন্তু এবার অভিজ্ঞতা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কারন বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে তাদের সাহায্য ছিলো আসলেই ভালো। দুই ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ডলার এক্সচেঞ্জ করে রুপিতে কনভার্ট করে ১ টা গাড়ি ঠিক করি জয়গাও বর্ডারের। যেহেতু আমরা ভূটান যাবো তাই আমাদের শিলিগুড়ি পর্যন্ত আর যেতে হবে না। কিন্তু আসার সময় শিলিগুড়ি হয়ে আসবো এটা শ্যামলী পরিবহনের কর্মকর্তাদের জানিয়ে রাখি।
যাত্রা শুরু করি আল্লাহর নাম নিয়ে। যাওয়ার সময় রাস্তার দুইপাশের সমতলের সুন্দর চা বাগান দেখতে দেখতে জয়গাও চলে আসি। ভারতের এক্সিট সিল নিয়ে হেটেই ঢুকে পড়ি ভূটানে। ইন্ডিয়ার জয়গাও বর্ডারের গাড়ির হর্ন, ময়লা, চিল্লাচিল্লির সাথে ভূটানের ফুন্টসোলিং এর পরিস্কার রাস্তা আর শান্ত পরিবেশের পার্থক্য শুধুমাত্র একটা দেয়াল। ভুটান গেট দিয়ে অনবরত ইন্ডিয়া-ভূটান আসা-যাওয়া করছে মানুষ। প্রথমে আমরা তিনজন ভূটান ঢুকে চিন্তা করি, দুই দেশের মাঝে দেয়াল একটা কিন্তু এতো ভিন্ন। থাক আর চিন্তা করা লাগবে না। কারন সামনেই অপেক্ষা করছে আরো অনেক অবাক করার মত জিনিস। আমরা মানাসিক ভাবে প্রস্তুত এমন অবাক করার মত জিনিস দেখে নিজেকে সামলানোর জন্য। ভূটানের এন্ট্রি সিল নিয়ে শুরু করি রাজধানী শহর থিম্পুর যাওয়ার প্রস্তুতি। ফুন্টসোলিং থেকে আমরা থিম্পু আর পারোর সাত দিনের ভিসা পাই। কিন্তু অন্য কোথাও গেলে থিম্পু থেকে পারমিট করিয়ে নিতে হবে। যাক, পেয়ে যাই একটা মাইক্রো। আমাদের সাথে থিম্পু যাওয়ার সংগী এক ইন্ডিয়ান ছেলে যে তার মাকে নিয়ে ভূটান এসেছে। আমারা জানতাম ভূটানের তাপমাত্রা ৭/৮ ডিগ্রির মত ছিলো, তার জন্য জ্যাকেট নিয়ে নিয়েছিলাম। থিম্পু রওনা করি টিশার্ট পরেই। কিন্তু গাড়ি ছাড়ার ৩০/৪০ মিনিট পরেই ঠান্ডায় আমাদের অবস্থা বলার মত ভাষা আমার নেই। আমাদের ব্যাগ ছিলো গাড়ির ছাদে তাই ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামিয়ে ব্যাগ থেকে আমাদের জ্যাকেট বের করে পরে দেই এক ঘুম। থিম্পু যাওয়ার পথে দুই জায়গায় পাসপোর্ট চেক করার জন্য চেকপোস্ট আছে।
রাত ১০.৩০ মিনিটে আমরা থিম্পু পৌছাই। অই সময় ভূটানের মানুষদের প্রায় অর্ধেক ঘুম শেষ। দোকান সব বন্ধ। হোটেল আগেই বুক করা ছিলো। হোটেলটা এমন জায়গায় ঠিক করেছিলাম যাতে পুনাখা,চেলালা পাস, হা ভ্যালী যাওয়ার পারমিশন অফিসের সামনে থাকে। ঘুম থেকে উঠে রুমের জানালা দিয়ে থিম্পু শহরের একটা ঝলক দেখে আর দেরি না করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে দৌড় দেই অন্য শহরের যাওয়ার পারমিশন অফিসে। একটা ফর্ম ফিলাপ করে জমা দেই। অফিসার আমাকে বলে বিকাল ৩ টার পর এসে পারমিশন এর পেপার নিয়ে যাওয়ার জন্য। (পারমিট এর নিয়ম শেষে বলবো) পারমিশন অফিস থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি খুজি মসজিদে যাওয়ার জন্য। জুম্মার নামাজ তাই মিস করা যাবে না। নামাজ শেষ করে আবার পারমিশন অফিস যেয়ে চেক করি যে আমাদের পারমিশনের পেপার্স গুলা এসেছে নাকি? যাক পেয়ে যাই পারমিশন। একটা গাড়ি ভাড়া করে ফেলি বুদ্ধ পয়েন্ট, দোচালা পাস দেখার জন্য। শহরে আসতে আসতে সন্ধ্যা। রাতের থিম্পু একটু ভিন্ন। রাত ৮ টায় সব বন্ধ। ভূটানের মানুষ নিয়ম-কানুন খুবই শ্রদ্ধার সাথে পালন করে। রাত ১০ টা পর্যন্ত রাস্তায় ঘুরলাম। ভালোই লাগলো।
আপনি যদি পুনাখা যেতে চান তাহলে থিম্পু থেকেই যাওয়া লাগবে। যাওয়ার আগের দিনই গাড়ি ভাড়া করে ফেলবেন। পুনাখা যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত। আর একদিনেই পুনাখা ঘুরে থিম্পু চলে আসেন। এবার সময় পারো যাওয়ার। পারো যেতে পারেন দুই ভাবে। গাড়ি রিসার্ভ করে অথবা বাসে করে। বাস ভাড়া ৫০ রুপি/ন্যু। আমরা বাসে করেই যাই। পারো পৌছে হোটেল ঠিক করে ব্যাগ রেখে সময় নস্ট না করে বের হয়ে পড়ি চেলালা পাস, হা ভ্যালী দেখার জন্য। হোটেলের সামনেই ছিলো পারো ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। দামাদামি করার তেমন একটা সুযোগ পাবেন না তারপরও দামাদামি করা লাগবে। ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মতে, সব জায়গারই ভাড়া নির্ধারন করা। যাই হোক একটা গাড়ি ঠিক করি, যদিও ভাড়া কিছুটা কমই পাই দামাদামি করে। যাওয়ার পথে পারো এয়ারপোর্টের বার্ড আই ভিউ। ভাগ্য ভালো ছিলো, গাড়ি থেকে নামতেই দেখি একটি ফ্লাইট টেকঅফের জন্য রানওয়ের দিকে যাচ্ছে। টেকঅফ শেষ, আমাদের জার্নি শুরু।
পাহাড়ি আকাবাকা-উচুনিচু রাস্তা। আস্তে আস্তে ঠান্ডা বাড়তে থাকে। গুগল মামা থেকে জানতে পারলাম চেলালা পাস সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১০,০৮৩ ফুট উচুতে। আর তখন তাপমাত্রা ছিলো ২ ডিগ্রী। সাথে সাথে ঢাকার ওই সময়ের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রীর সাথে চেলালা পাসের ২ ডিগ্রীর স্ক্রিনশট নিয়ে ফটোকলেজ বানিয়ে আমাদের ট্রিপ প্ল্যানের প্রথমে হ্যা সূচক সম্মতি দেওয়া ভদ্রলোকদের মেসেঞ্জারে ইনবক্স করলাম। অন্যরকম একটা শান্তি পেলাম চেলালা পাসে পৌছানোর ঠিক ১০/১৫ মিনিট আগে থেকেই রাস্তার দুই পাশে দেখলাম বরফের স্তূপ। যা ছিলো আমাদের জন্য সিলেবাসের বাইরে। এই সময় বরফ? গাড়ি থেকে নেমে বরফ নিয়ে একটু গবেষণা করলাম, মানে একটু ছোড়াছুঁড়ি করলাম আর কি।
চেলালা পাস পৌছালাম। যেহেতু আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১০,০৮৩ ফুট উপড়ে আছি তাই শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার টাইম কেমন জানি লাগতেছিলো,সাথে রাস্তাও ছিলো প্যাচানো তাই মাথাটাও ঘুরাচ্ছিলো।হাতমোজা খুলে কিছু ছবি তুললাম। এক কাপ কফি পান করতে করতে ড্রাইভার জনাব মতিলাল ভাই এসে বললো, স্যার আসেন আমরা হা ভ্যালীর জন্য রওনা করি।
হা ভ্যালী। নামটাতে কেমন জানি একটা আকর্ষণ আছে। এতোক্ষন আমরা চেলালা পাস দেখার জন্য যেমন জিলাপীর প্যাচের মত পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উপড়ে উঠেছি, এখন আবার সেই একি রকম রাস্তা দিয়ে আবার নিচে নামবো। হা ভ্যালী পৌছানোর আধা ঘন্টা আগে থেকেই আপনি হা ভ্যালী দেখতে পারবেন। পাহাড়ী রাস্তা থেকে হা ভ্যালী দেখতে অনেক ছোট দেখায়, যদিও ছোট একটা গ্রাম। হা ভ্যালীতে ১০/১৫ মিনিট ঘুরতে ঘুরতে শুরু হলো বৃষ্টি। যাক এতোটুকুতেই আলহামদুলিল্লাহ।এবার রওনা করলাম আবার পারোর উদ্দেশ্যে।
পারো পৌছালাম সন্ধ্যায়। হোটেলে ডিনারের অর্ডার দিয়ে আবার বের হলাম রাতের পারো সিটি দেখতে। ভূটানের মানুষ নিয়ম-কানুন মানার জন্য আসলেই বেস্ট। রাত ৮ টায় সব বন্ধ। রাতে আমাদের ড্রাইভার মতি লাল ভাইকে ফোন দিয়ে বলে দিলাম পরের দিন সকাল ৮ টায় আমাদের টাইগার নেস্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাতে হোটেলে কিছুক্ষন ভূটানের টিভি চ্যানেলে ভূটানি মুভি দেখলাম। কিছুই বুঝি না। সকাল ৭.৫৫ মিনিটে মতিলাল ভাই ফোন দিয়ে বললো যে সে হোটেলের নিচে। হোটেল থেকে নাস্তা সেরে এবার শুরু মিশন টাইগার নেস্ট, যা ছিলো ভূটান ট্রিপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ।
টাইগার নেস্ট পারো সিটি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উঠার সময় কিছু চিপস,বিস্কুট আর পানি নিয়ে নিলাম। টিকেট ৫০০ ন্যু। কিন্তু আমাদের কাছে স্টুডেন্ট আই ডি কার্ড ছিলো তাই ২৫০ ন্যু। উঠার জন্য ঘোড়া ভাড়া করতে পারেন, কিন্তু ক্যাফে পর্যন্ত। ভাড়া চায় ৬০০ ন্যু। আমাদের বয়স তেমন বেশি না, কি দরকার ঘোড়া নেওয়ার। প্রায় ১০,২৪০ ফুট পাহাড়ি রাস্তা পায়ে হেটে উঠা লাগবে। নিচের থেকে দেখেই ভয় লাগে। মনিস্ট্রিটা দেখতে একটা সাদা বিন্দুর মত লাগে। এখন আর কথা না বলে, হাটা শুরু করি। উঠতে সময় লাগতে পারে আনুমানিক ৩ ঘন্টারও বেশি। মোবাইলে স্টপ ওয়াচ অন করি। ওরে বাবারে এক ঘন্টা হাটার পর মানে পাহাড়ে উঠার পর আর পা চলতে চায় না। অনেক বিদেশী ভদ্র লোক/মহিলাদের নামতে দেখে জিজ্ঞেস করি, “আর কতক্ষন লাগবে?” উত্তরে তারা বলল,আর ২ ঘন্টার মত। একটা আইডিয়াও দিলো,”তোমরা ২০ মিনিট হাটো আর ৫ মিনিট বিশ্রাম নাও”, আমরা তাদের আইডিয়া ঠিক মতই ফোলো করলাম কিন্তু একটু পরিবর্তন করে। যেমন আমরা ১০ মিনিট হেটেছি আর ২০ মিনিট বিশ্রাম নিয়েছি। অনেক কস্টে মনেস্ট্রি পর্যন্ত পৌছানোর পর কস্ট সব পালালো। কিছুক্ষন থেকে আমাদের নামার পালা। নামতে সময় লেগেছে ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
হোটেলে পৌছানোর পর গিজার অন করে গরম পানি বাকেটে নিয়ে পা চুবিয়ে বসে থাকলাম ৩০ মিনিটের মত। পরের দিন আমাদের ড্রাইভার সাহেবকে বললাম আমাদের সকালে পারো জং দেখিয়ে ফুন্টসোলিং ছেড়ে আসতে। আমরা প্ল্যান করেছিলাম ফুন্টসোলিং এক রাত থাকবো। ফুন্টসোলিং যাওয়ার পথে গেদু নামক একটা জায়গায় ১৫ মিনিটের ব্রেক। কিন্তু এখানেই হয়ে গেলো মজার একটা কাহিনী।
রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমরা তিনজন আর আমাদের ড্রাইভার সাহেব। পরিবেশটা কেমন জানি শান্ত। রেস্টুরেন্টের বাইরে একটা পিক-আপ ভ্যানে ৪/৫ টা সাইকেল স্ট্যান্ড করা, একটা পুলিশের বাইকও ছিলো। পুলিশ সাহেব ওয়াকিডোকিতে কি জানি বলছে। পুলিশ সাহেবের ইউনিফোর্ম টাও একটু ভিন্ন। ওয়াশরুম বাইরে ছিলো। আমরা ফ্রেশ হয়ে ভিতরে ঢুকার সময় দেখলাম ৪ জন ভদ্রলোক সাইকেল নিয়ে রেডি হচ্ছে। একজনের মুখে মাস্ক ছিলো। তারা সাইকেল চালকদের ইনার টাইপের ড্রেস পরে আছে। রেস্টু্রেন্টে কাস্টমার আমরা তিনজনই। খাওয়া শুরু করলাম। রেস্টুরেন্টের এক স্ট্যাফকে বললাম, সবাই এমন দাঁড়িয়ে আছে কেনো, কোনো সমস্যা?উনারা বলল যে, স্যার সাইকেলে করে যে লোকটি গেলো, যার মুখে মাস্ক ছিলো উনি আমাদের রাজা ওয়াংচুক। উনি উনার বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল দিয়ে ফুন্টসোলিং যাচ্ছে। আমরা তো অবাক। কারন সিকিউরিটি বলতে পুলিশের একজন অফিসার। অবাক হওয়া যাবে না, কারন এটা ভূটান। খাওয়া শেষ করে আবার রওনা দেই, রাস্তায় দেখলাম যে রাজা সাহেব সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ড্রাইভার সাহেব বলল যে, স্যার কোনো কিছু বলা যাবে না, ছবি তুলা যাবে না, গাড়ি থামানো যাবে না। আমরা উনার কথা মতই চুপ করে বসে দেখলাম রাজা সাহেবকে। বয়স তেমন বেশি না। গুগলে উনার ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
যাই হোক রাস্তায় পাহাড়-মেঘের খেলা দেখতে দেখতে চলে আসলাম ফুন্টসোলিং। পৌছাই বিকালে। হোটেল ঠিক করে ব্যাগ রেখে হোটেল থেকে বের হয়ে হেটে হেটে চলে যাই ইন্ডিয়াতে। খাওয়া –দাওয়া শেষে আবার ঢুকে পরি ভূটানে। আমরা ওখানে একরাত ছিলাম। পরের দিন সকাল ৯ টায় ভূটান ইমিগ্রেশন শেষ করে ঢুকে পরি ইন্ডিয়াতে।
শিলিগুড়ি ছিলাম তিনদিন। শিলিগুড়ির ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। আজকে এখানেই। ইনশাআল্লাহ লেখাটা ভালো লাগবে আর তথ্যগুলা আপনাদের কাজে আসবে। তারপরও যদি কোনো কিছু জানার থাকে আমাকে মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করবেন। ইনশাআল্লাহ আমি সময় বের করে এবং আমার সাধ্যমত সাহায্য করবো।
সতর্কতাঃ
প্রিয় ট্রাভেলার ভাইবোনদের একটি অনুরোধ করবো, রাস্তা এবং বিভিন্ন টুরিস্ট স্পোট যেমন, চেলালা পাস, টাইগার নেস্টে চিপসের প্যাকেট, বোতল ফেলবেন না। রাস্তাসহ টুরিস্ট স্পটগুলোতে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টনিন আছে। যতক্ষন ডাস্টবিন না পাবেন ততক্ষন চিপসের প্যাকেট, বোতল একটু কস্ট করে সাথেই রাখুন। রাস্তায়, টুরিস্ট স্পোট গুলোতে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। রাস্তা পার হওয়ার সময় জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করুন।
ভূটানের মানুষ বাংলাদেশীদের সন্মানের চোখে দেখে। সুতরাং আমরা ট্রাভেলাররা এমন কোনো কাজ না করি যাতে তাদের এই সন্মমানটুকু নস্ট হয়। আমরা অনেক সময় বলে থাকি যে উমুক দেশ বাংলাদেশীদের পছন্দ করে না। তাদের এই অপছন্দের কারন কিন্তু আমাদের মতই কোনো বাঙ্গালি হয়তো এমন কিছু করেছে যাতে আমাদের দেশের এবং দেশের মানুষের নাম খারাপ হয়েছে। আমরা শুধুমাত্র ট্রাভেলার না, আমরা কিন্তু বাংলাদেশের রিপ্রেসেন্টিটিভও। আমাদের আচারন,ব্যবহার কিন্তু আমাদের দেশের পরিচয় তুলে ধরে বিদেশীদের কাছে।
আমরা তাদের নিয়ম-কানুনকে অবশ্যই সন্মান করবো, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবো,আমাদের দেশের ভালো দিকগুলো তুলে ধরবো।
আমি এই লেখাতে জায়গা গুলোর বেশি বর্ননা করি নাই, কারন আমি চাই আপনারা ভূটান গিয়ে নিজ চোখে দেখে আসেন। কোনো ভূল হয়ে থাকলে কিন্তু মাইন্ড করবেন না।
ট্রানজিট ভিসার জন্য করনীয়:
গ্রুপে যথেস্ট তথ্য আছে এ নিয়ে। আমার মনে হয় না নতুন করে কিছু বলার আছে।
ইন্ডিয়ান ভিসা করার জন্য যা যা কাগজ লাগে তার সবই লাগবে। সাথে যোগ হবে কিছু জিনিসঃ
১। ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা (৩০০০ টাকা) অথবা ঢাকা-বুড়িমারি-ঢাকা রিটার্ন বাস টিকেট। (ঢাকা-বুড়িমারি-ঢাকার টিকেট করলেও হবে। এটা আমি শিওর হয়েছি ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে ফোন করে।)
২। টিকেটের অরিজিনাল কপি পাসপোর্ট এর সাথে জমা দিতে হবে।
৩। যেহেতু রিটার্ন টিকেট করা লাগবে তাই যাওয়ার তারিখ ঠিক করে, আসার তারিখটা ওপেন রাখার ব্যবস্থা আছে। আপনি যেদিন আসবেন তার ২ দিন আগেই বাস কর্তৃপক্ষকে আসার তারিখ জানিয়ে দিবেন।
৪।যেহেতু ট্রানজিট ভিসার জন্য আবেদন করবেন তাই আপনার এপ্লিকেশন ফর্মে কোনো এ্যাপোয়েন্টমেন্ট ডেটের দরকার নাই। ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে "অনলাইন ভিসা এপ্লাই" অপশনে গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করে ফেলেন। কিন্তু খুব নির্ভূল ভাবে।
৫। ফর্ম ফিলাপ করে পরের দিন সকাল ৮ টায় চলে যান গুলশানের ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে। সকালে ফর্ম ফিলাপ করে যদি নিয়ে যান তাহলে অনেক সময় ওদের সার্ভারে আপনার ডাটা আপডেট নাও থাকতে পারে। তার জন্য অনেক সময় বসে থাকা লাগতে পারে।
৬। ভিসার জন্য নির্ধারিত ফি ৬০০ টাকা "ইউ ক্যাশ" এর মাধ্যমে দেওয়া লাগে। এখন আর আগের মত ভিতরের কাউন্টারে নেয় না। তাই মনে করে আগেই ভিসা ফিয়ের টাকা পরিশোধ করে যান। না হলে দেখা যাবে আপনি লাইনের একেবারে সামনে থেকেও ফি জমা না দেওয়ার জন্য আবার লাইন থেকে বের হয়ে যাওয়া লাগবে। আমি ও একই ভূল করেছিলাম।
৭। যারা চাকুরী করেন, তাদের ভিসার জন্য NOC দেওয়া লাগে। এটা মনে রাখবেন, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে কিন্তু NOC এর ফটোকপি চায়। না দিতে পারলে ৩০০ টাকা দেওয়া লাগে। অযথা টাকা কেনো দিবেন। মনে করে NOC এর ফটোকপি টা নিয়ে নিবেন।
৮। ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে আপনাকে ভূটানে হোটেল বুকিং এর কনফার্মেশন পেপার দিতে হবে। আপনি ভূটানে হোটেল বুকিং এর কনফার্মেশন পেপারটারও ২/৩ কপি নিয়ে নিবেন। ভূটান ইমিগ্রেশনে লাগবে। আমি দেখেছি যে ইমিগ্রেশন থেকে অনেক সময় হোটেলে কল দিয়ে আপনার কনফার্মেশন চেক করে। আমার মতে, আপনি যদি ইমিগ্রেশন করেই থিম্পু যেতে চান তাহলে আগে থেকে বুক করা হোটেলে থাকাটাই ভালো। কারন মনে রাখবেন রাত ৮ টায় সব বন্ধ। আর থিম্পু পৌছাতে লাগবে রাত ১০/১০.৩০। তাই এতো জার্নি করে আর হোটেল খুজার এলার্জি থাকবে না। এই এনার্জি গুলো বাচান, উপযুক্ত ব্যবহর করেন ঘুরার ক্ষেত্রে।
৯। ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে ব্যাগ নিয়ে যাবেন না। ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেয় না।
১০। বুড়িমারি বর্ডার দিয়ে যখন ইন্ডিইয়া ঢুকলেই দেখবেন যে কিছু মানি এক্সচেঞ্জ আছে। আপনি এখানেই ডলার রুপিতে কনভার্ট করে নিতে পারে। এখানে ভালো রেট পাবেন। আবার ভূটানে তেমন মানি এক্সচেঞ্জও পাবেন না।
১১। ডলার এক্সচেঞ্জ যেখানে করাবেন, সেখান থেকেই জয়গাও যাওয়ার গাড়ি পেয়ে জাবেন। কিন্তু দামাদামি করা লাগবে। গাড়ি ভাড়া ২৩০০-২৮০০ রুপির মধ্যে। কিন্তু বললাম না দামাদামি করা লাগবে। চাইলে বাস দিয়েও যেতে পারেন। বাস কোথা থেকে উঠা লাগবে তা কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দিবে।
ভূটানে করনীয়ঃ
*** আপনি সিম কিনতে পারেন ফুন্টসোলিং থেকেই। "তাসি সেল" ২০০ রুপি/ন্যূ। সিম কিনার সময় ইন্টারনেট এক্টিভেট করে নিয়েন।
*** আপনি বিকাল ৪ টার আগে ফুন্টসোলিং পৌছালে বাসে করে থিম্পু যেতে পারেন। তার জন্য খরচ্চ কিছুটা কমে যাবে। বাস ভাড়া ২৫০ ন্যু।
*** গুগল মামার সাহায্যে যাওয়ার আগে দেখে নিন ভূটানের তাপমাত্রা কেমন, যার উপর ভিত্তি করে নিয়ে নেন গরম কাপড়। ওখানে হঠাৎ বৃষ্টি হয় যা আপনার ট্রিপ কিছুটা হলেও ব্যাহত করতে পারে। তার জন্য যদি পারেন ছাতা নিয়ে নিতে পারেন। মনে হতে পারে ছাতা কেনো বহন করবো? কারন এই ছাতাই হইতো আপনার সময় বাচাবে।
*** ভূটানে তেমন মসজিদ চোখে পরে নাই। শুক্রবার জুম্মার নামাজ হয় দানতাক নামক জায়গায়। গুগল ম্যাপে “Mosque in Thimpu” লিখলেই পেয়ে যাবেন “Dantak”। এছাড়াও বাংলাদেশি হাইকমিশনেও জুম্মার নামাজ হয়।
*** ভূটানের বেশি ভাগ মানুষই বৌদ্ধ। রেস্টুরেন্টের মেন্যুর প্রথম সারিতেই থাকে পর্কের (শূকর) বিভিন্ন আইটেম। পুরো ৫ টা দিনই নুডুলস, ভেজেটেবল ফ্রাইড রাইস খেয়েই পেট ভরা লেগেছে। আবার তারা খাবারে লবন, মশলাও কম ব্যবহার করে।
*** আপনি যদি চেলালা পাস, হা ভ্যালী, পুনাখা যেতে চান তাহলে থিম্পু থেকে পারমিট নেওয়া লাগবে। তার জন্য যে কয়জন যাবেন তাদের সকলের পাসপোর্টের আর ভূটান ঢুকার সময় পাসপোর্টে যে সিল দিয়েছে, যেখানে সাতদিনের ভিসার কথা উল্লেখ করা আছে ওই পেজটার ফটোকপি মেইন ফর্মের সাথে দিয়ে দিবেন। ফর্ম ফিলাপ করা লাগবে আপনাদের টিমের যেকোন একজনকে, সবাইকে করতে হবে না।
যাত্রা শুরু ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭ টায় কমলাপুর আন্তর্জাতিক বাস ট্রার্মিনাল থেকে। কিন্তু জ্যামের কারনে কমলাপুর থেকে বাস মিস করে কল্যানপুর থেকে বাসে উঠি। বাস ছাড়ে রাত ৮.৩০ মিনিটে। শ্যামলী পরিবহনে আমার পূর্বের অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো না। বলতে গেলে আমি সবসময়ই শ্যামলী পরিবহন এড়িয়ে যাই। কিন্তু এবার অভিজ্ঞতা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কারন বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে তাদের সাহায্য ছিলো আসলেই ভালো। দুই ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ডলার এক্সচেঞ্জ করে রুপিতে কনভার্ট করে ১ টা গাড়ি ঠিক করি জয়গাও বর্ডারের। যেহেতু আমরা ভূটান যাবো তাই আমাদের শিলিগুড়ি পর্যন্ত আর যেতে হবে না। কিন্তু আসার সময় শিলিগুড়ি হয়ে আসবো এটা শ্যামলী পরিবহনের কর্মকর্তাদের জানিয়ে রাখি।
যাত্রা শুরু করি আল্লাহর নাম নিয়ে। যাওয়ার সময় রাস্তার দুইপাশের সমতলের সুন্দর চা বাগান দেখতে দেখতে জয়গাও চলে আসি। ভারতের এক্সিট সিল নিয়ে হেটেই ঢুকে পড়ি ভূটানে। ইন্ডিয়ার জয়গাও বর্ডারের গাড়ির হর্ন, ময়লা, চিল্লাচিল্লির সাথে ভূটানের ফুন্টসোলিং এর পরিস্কার রাস্তা আর শান্ত পরিবেশের পার্থক্য শুধুমাত্র একটা দেয়াল। ভুটান গেট দিয়ে অনবরত ইন্ডিয়া-ভূটান আসা-যাওয়া করছে মানুষ। প্রথমে আমরা তিনজন ভূটান ঢুকে চিন্তা করি, দুই দেশের মাঝে দেয়াল একটা কিন্তু এতো ভিন্ন। থাক আর চিন্তা করা লাগবে না। কারন সামনেই অপেক্ষা করছে আরো অনেক অবাক করার মত জিনিস। আমরা মানাসিক ভাবে প্রস্তুত এমন অবাক করার মত জিনিস দেখে নিজেকে সামলানোর জন্য। ভূটানের এন্ট্রি সিল নিয়ে শুরু করি রাজধানী শহর থিম্পুর যাওয়ার প্রস্তুতি। ফুন্টসোলিং থেকে আমরা থিম্পু আর পারোর সাত দিনের ভিসা পাই। কিন্তু অন্য কোথাও গেলে থিম্পু থেকে পারমিট করিয়ে নিতে হবে। যাক, পেয়ে যাই একটা মাইক্রো। আমাদের সাথে থিম্পু যাওয়ার সংগী এক ইন্ডিয়ান ছেলে যে তার মাকে নিয়ে ভূটান এসেছে। আমারা জানতাম ভূটানের তাপমাত্রা ৭/৮ ডিগ্রির মত ছিলো, তার জন্য জ্যাকেট নিয়ে নিয়েছিলাম। থিম্পু রওনা করি টিশার্ট পরেই। কিন্তু গাড়ি ছাড়ার ৩০/৪০ মিনিট পরেই ঠান্ডায় আমাদের অবস্থা বলার মত ভাষা আমার নেই। আমাদের ব্যাগ ছিলো গাড়ির ছাদে তাই ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামিয়ে ব্যাগ থেকে আমাদের জ্যাকেট বের করে পরে দেই এক ঘুম। থিম্পু যাওয়ার পথে দুই জায়গায় পাসপোর্ট চেক করার জন্য চেকপোস্ট আছে।
রাত ১০.৩০ মিনিটে আমরা থিম্পু পৌছাই। অই সময় ভূটানের মানুষদের প্রায় অর্ধেক ঘুম শেষ। দোকান সব বন্ধ। হোটেল আগেই বুক করা ছিলো। হোটেলটা এমন জায়গায় ঠিক করেছিলাম যাতে পুনাখা,চেলালা পাস, হা ভ্যালী যাওয়ার পারমিশন অফিসের সামনে থাকে। ঘুম থেকে উঠে রুমের জানালা দিয়ে থিম্পু শহরের একটা ঝলক দেখে আর দেরি না করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে দৌড় দেই অন্য শহরের যাওয়ার পারমিশন অফিসে। একটা ফর্ম ফিলাপ করে জমা দেই। অফিসার আমাকে বলে বিকাল ৩ টার পর এসে পারমিশন এর পেপার নিয়ে যাওয়ার জন্য। (পারমিট এর নিয়ম শেষে বলবো) পারমিশন অফিস থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি খুজি মসজিদে যাওয়ার জন্য। জুম্মার নামাজ তাই মিস করা যাবে না। নামাজ শেষ করে আবার পারমিশন অফিস যেয়ে চেক করি যে আমাদের পারমিশনের পেপার্স গুলা এসেছে নাকি? যাক পেয়ে যাই পারমিশন। একটা গাড়ি ভাড়া করে ফেলি বুদ্ধ পয়েন্ট, দোচালা পাস দেখার জন্য। শহরে আসতে আসতে সন্ধ্যা। রাতের থিম্পু একটু ভিন্ন। রাত ৮ টায় সব বন্ধ। ভূটানের মানুষ নিয়ম-কানুন খুবই শ্রদ্ধার সাথে পালন করে। রাত ১০ টা পর্যন্ত রাস্তায় ঘুরলাম। ভালোই লাগলো।
আপনি যদি পুনাখা যেতে চান তাহলে থিম্পু থেকেই যাওয়া লাগবে। যাওয়ার আগের দিনই গাড়ি ভাড়া করে ফেলবেন। পুনাখা যেতে সময় লাগে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের মত। আর একদিনেই পুনাখা ঘুরে থিম্পু চলে আসেন। এবার সময় পারো যাওয়ার। পারো যেতে পারেন দুই ভাবে। গাড়ি রিসার্ভ করে অথবা বাসে করে। বাস ভাড়া ৫০ রুপি/ন্যু। আমরা বাসে করেই যাই। পারো পৌছে হোটেল ঠিক করে ব্যাগ রেখে সময় নস্ট না করে বের হয়ে পড়ি চেলালা পাস, হা ভ্যালী দেখার জন্য। হোটেলের সামনেই ছিলো পারো ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। দামাদামি করার তেমন একটা সুযোগ পাবেন না তারপরও দামাদামি করা লাগবে। ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মতে, সব জায়গারই ভাড়া নির্ধারন করা। যাই হোক একটা গাড়ি ঠিক করি, যদিও ভাড়া কিছুটা কমই পাই দামাদামি করে। যাওয়ার পথে পারো এয়ারপোর্টের বার্ড আই ভিউ। ভাগ্য ভালো ছিলো, গাড়ি থেকে নামতেই দেখি একটি ফ্লাইট টেকঅফের জন্য রানওয়ের দিকে যাচ্ছে। টেকঅফ শেষ, আমাদের জার্নি শুরু।
পাহাড়ি আকাবাকা-উচুনিচু রাস্তা। আস্তে আস্তে ঠান্ডা বাড়তে থাকে। গুগল মামা থেকে জানতে পারলাম চেলালা পাস সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১০,০৮৩ ফুট উচুতে। আর তখন তাপমাত্রা ছিলো ২ ডিগ্রী। সাথে সাথে ঢাকার ওই সময়ের তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রীর সাথে চেলালা পাসের ২ ডিগ্রীর স্ক্রিনশট নিয়ে ফটোকলেজ বানিয়ে আমাদের ট্রিপ প্ল্যানের প্রথমে হ্যা সূচক সম্মতি দেওয়া ভদ্রলোকদের মেসেঞ্জারে ইনবক্স করলাম। অন্যরকম একটা শান্তি পেলাম চেলালা পাসে পৌছানোর ঠিক ১০/১৫ মিনিট আগে থেকেই রাস্তার দুই পাশে দেখলাম বরফের স্তূপ। যা ছিলো আমাদের জন্য সিলেবাসের বাইরে। এই সময় বরফ? গাড়ি থেকে নেমে বরফ নিয়ে একটু গবেষণা করলাম, মানে একটু ছোড়াছুঁড়ি করলাম আর কি।
চেলালা পাস পৌছালাম। যেহেতু আমরা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১০,০৮৩ ফুট উপড়ে আছি তাই শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার টাইম কেমন জানি লাগতেছিলো,সাথে রাস্তাও ছিলো প্যাচানো তাই মাথাটাও ঘুরাচ্ছিলো।হাতমোজা খুলে কিছু ছবি তুললাম। এক কাপ কফি পান করতে করতে ড্রাইভার জনাব মতিলাল ভাই এসে বললো, স্যার আসেন আমরা হা ভ্যালীর জন্য রওনা করি।
হা ভ্যালী। নামটাতে কেমন জানি একটা আকর্ষণ আছে। এতোক্ষন আমরা চেলালা পাস দেখার জন্য যেমন জিলাপীর প্যাচের মত পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে উপড়ে উঠেছি, এখন আবার সেই একি রকম রাস্তা দিয়ে আবার নিচে নামবো। হা ভ্যালী পৌছানোর আধা ঘন্টা আগে থেকেই আপনি হা ভ্যালী দেখতে পারবেন। পাহাড়ী রাস্তা থেকে হা ভ্যালী দেখতে অনেক ছোট দেখায়, যদিও ছোট একটা গ্রাম। হা ভ্যালীতে ১০/১৫ মিনিট ঘুরতে ঘুরতে শুরু হলো বৃষ্টি। যাক এতোটুকুতেই আলহামদুলিল্লাহ।এবার রওনা করলাম আবার পারোর উদ্দেশ্যে।
পারো পৌছালাম সন্ধ্যায়। হোটেলে ডিনারের অর্ডার দিয়ে আবার বের হলাম রাতের পারো সিটি দেখতে। ভূটানের মানুষ নিয়ম-কানুন মানার জন্য আসলেই বেস্ট। রাত ৮ টায় সব বন্ধ। রাতে আমাদের ড্রাইভার মতি লাল ভাইকে ফোন দিয়ে বলে দিলাম পরের দিন সকাল ৮ টায় আমাদের টাইগার নেস্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাতে হোটেলে কিছুক্ষন ভূটানের টিভি চ্যানেলে ভূটানি মুভি দেখলাম। কিছুই বুঝি না। সকাল ৭.৫৫ মিনিটে মতিলাল ভাই ফোন দিয়ে বললো যে সে হোটেলের নিচে। হোটেল থেকে নাস্তা সেরে এবার শুরু মিশন টাইগার নেস্ট, যা ছিলো ভূটান ট্রিপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশ।
টাইগার নেস্ট পারো সিটি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উঠার সময় কিছু চিপস,বিস্কুট আর পানি নিয়ে নিলাম। টিকেট ৫০০ ন্যু। কিন্তু আমাদের কাছে স্টুডেন্ট আই ডি কার্ড ছিলো তাই ২৫০ ন্যু। উঠার জন্য ঘোড়া ভাড়া করতে পারেন, কিন্তু ক্যাফে পর্যন্ত। ভাড়া চায় ৬০০ ন্যু। আমাদের বয়স তেমন বেশি না, কি দরকার ঘোড়া নেওয়ার। প্রায় ১০,২৪০ ফুট পাহাড়ি রাস্তা পায়ে হেটে উঠা লাগবে। নিচের থেকে দেখেই ভয় লাগে। মনিস্ট্রিটা দেখতে একটা সাদা বিন্দুর মত লাগে। এখন আর কথা না বলে, হাটা শুরু করি। উঠতে সময় লাগতে পারে আনুমানিক ৩ ঘন্টারও বেশি। মোবাইলে স্টপ ওয়াচ অন করি। ওরে বাবারে এক ঘন্টা হাটার পর মানে পাহাড়ে উঠার পর আর পা চলতে চায় না। অনেক বিদেশী ভদ্র লোক/মহিলাদের নামতে দেখে জিজ্ঞেস করি, “আর কতক্ষন লাগবে?” উত্তরে তারা বলল,আর ২ ঘন্টার মত। একটা আইডিয়াও দিলো,”তোমরা ২০ মিনিট হাটো আর ৫ মিনিট বিশ্রাম নাও”, আমরা তাদের আইডিয়া ঠিক মতই ফোলো করলাম কিন্তু একটু পরিবর্তন করে। যেমন আমরা ১০ মিনিট হেটেছি আর ২০ মিনিট বিশ্রাম নিয়েছি। অনেক কস্টে মনেস্ট্রি পর্যন্ত পৌছানোর পর কস্ট সব পালালো। কিছুক্ষন থেকে আমাদের নামার পালা। নামতে সময় লেগেছে ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
হোটেলে পৌছানোর পর গিজার অন করে গরম পানি বাকেটে নিয়ে পা চুবিয়ে বসে থাকলাম ৩০ মিনিটের মত। পরের দিন আমাদের ড্রাইভার সাহেবকে বললাম আমাদের সকালে পারো জং দেখিয়ে ফুন্টসোলিং ছেড়ে আসতে। আমরা প্ল্যান করেছিলাম ফুন্টসোলিং এক রাত থাকবো। ফুন্টসোলিং যাওয়ার পথে গেদু নামক একটা জায়গায় ১৫ মিনিটের ব্রেক। কিন্তু এখানেই হয়ে গেলো মজার একটা কাহিনী।
রেস্টুরেন্টে বসে আছি আমরা তিনজন আর আমাদের ড্রাইভার সাহেব। পরিবেশটা কেমন জানি শান্ত। রেস্টুরেন্টের বাইরে একটা পিক-আপ ভ্যানে ৪/৫ টা সাইকেল স্ট্যান্ড করা, একটা পুলিশের বাইকও ছিলো। পুলিশ সাহেব ওয়াকিডোকিতে কি জানি বলছে। পুলিশ সাহেবের ইউনিফোর্ম টাও একটু ভিন্ন। ওয়াশরুম বাইরে ছিলো। আমরা ফ্রেশ হয়ে ভিতরে ঢুকার সময় দেখলাম ৪ জন ভদ্রলোক সাইকেল নিয়ে রেডি হচ্ছে। একজনের মুখে মাস্ক ছিলো। তারা সাইকেল চালকদের ইনার টাইপের ড্রেস পরে আছে। রেস্টু্রেন্টে কাস্টমার আমরা তিনজনই। খাওয়া শুরু করলাম। রেস্টুরেন্টের এক স্ট্যাফকে বললাম, সবাই এমন দাঁড়িয়ে আছে কেনো, কোনো সমস্যা?উনারা বলল যে, স্যার সাইকেলে করে যে লোকটি গেলো, যার মুখে মাস্ক ছিলো উনি আমাদের রাজা ওয়াংচুক। উনি উনার বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল দিয়ে ফুন্টসোলিং যাচ্ছে। আমরা তো অবাক। কারন সিকিউরিটি বলতে পুলিশের একজন অফিসার। অবাক হওয়া যাবে না, কারন এটা ভূটান। খাওয়া শেষ করে আবার রওনা দেই, রাস্তায় দেখলাম যে রাজা সাহেব সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ড্রাইভার সাহেব বলল যে, স্যার কোনো কিছু বলা যাবে না, ছবি তুলা যাবে না, গাড়ি থামানো যাবে না। আমরা উনার কথা মতই চুপ করে বসে দেখলাম রাজা সাহেবকে। বয়স তেমন বেশি না। গুগলে উনার ছবি দেখলেই বুঝতে পারবেন।
যাই হোক রাস্তায় পাহাড়-মেঘের খেলা দেখতে দেখতে চলে আসলাম ফুন্টসোলিং। পৌছাই বিকালে। হোটেল ঠিক করে ব্যাগ রেখে হোটেল থেকে বের হয়ে হেটে হেটে চলে যাই ইন্ডিয়াতে। খাওয়া –দাওয়া শেষে আবার ঢুকে পরি ভূটানে। আমরা ওখানে একরাত ছিলাম। পরের দিন সকাল ৯ টায় ভূটান ইমিগ্রেশন শেষ করে ঢুকে পরি ইন্ডিয়াতে।
শিলিগুড়ি ছিলাম তিনদিন। শিলিগুড়ির ব্যাপারে আর কিছু বলতে চাচ্ছি না। আজকে এখানেই। ইনশাআল্লাহ লেখাটা ভালো লাগবে আর তথ্যগুলা আপনাদের কাজে আসবে। তারপরও যদি কোনো কিছু জানার থাকে আমাকে মেসেঞ্জারে জিজ্ঞেস করবেন। ইনশাআল্লাহ আমি সময় বের করে এবং আমার সাধ্যমত সাহায্য করবো।
সতর্কতাঃ
প্রিয় ট্রাভেলার ভাইবোনদের একটি অনুরোধ করবো, রাস্তা এবং বিভিন্ন টুরিস্ট স্পোট যেমন, চেলালা পাস, টাইগার নেস্টে চিপসের প্যাকেট, বোতল ফেলবেন না। রাস্তাসহ টুরিস্ট স্পটগুলোতে ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টনিন আছে। যতক্ষন ডাস্টবিন না পাবেন ততক্ষন চিপসের প্যাকেট, বোতল একটু কস্ট করে সাথেই রাখুন। রাস্তায়, টুরিস্ট স্পোট গুলোতে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন। রাস্তা পার হওয়ার সময় জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করুন।
ভূটানের মানুষ বাংলাদেশীদের সন্মানের চোখে দেখে। সুতরাং আমরা ট্রাভেলাররা এমন কোনো কাজ না করি যাতে তাদের এই সন্মমানটুকু নস্ট হয়। আমরা অনেক সময় বলে থাকি যে উমুক দেশ বাংলাদেশীদের পছন্দ করে না। তাদের এই অপছন্দের কারন কিন্তু আমাদের মতই কোনো বাঙ্গালি হয়তো এমন কিছু করেছে যাতে আমাদের দেশের এবং দেশের মানুষের নাম খারাপ হয়েছে। আমরা শুধুমাত্র ট্রাভেলার না, আমরা কিন্তু বাংলাদেশের রিপ্রেসেন্টিটিভও। আমাদের আচারন,ব্যবহার কিন্তু আমাদের দেশের পরিচয় তুলে ধরে বিদেশীদের কাছে।
আমরা তাদের নিয়ম-কানুনকে অবশ্যই সন্মান করবো, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবো,আমাদের দেশের ভালো দিকগুলো তুলে ধরবো।
আমি এই লেখাতে জায়গা গুলোর বেশি বর্ননা করি নাই, কারন আমি চাই আপনারা ভূটান গিয়ে নিজ চোখে দেখে আসেন। কোনো ভূল হয়ে থাকলে কিন্তু মাইন্ড করবেন না।
ট্রানজিট ভিসার জন্য করনীয়:
গ্রুপে যথেস্ট তথ্য আছে এ নিয়ে। আমার মনে হয় না নতুন করে কিছু বলার আছে।
ইন্ডিয়ান ভিসা করার জন্য যা যা কাগজ লাগে তার সবই লাগবে। সাথে যোগ হবে কিছু জিনিসঃ
১। ঢাকা-শিলিগুড়ি-ঢাকা (৩০০০ টাকা) অথবা ঢাকা-বুড়িমারি-ঢাকা রিটার্ন বাস টিকেট। (ঢাকা-বুড়িমারি-ঢাকার টিকেট করলেও হবে। এটা আমি শিওর হয়েছি ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে ফোন করে।)
২। টিকেটের অরিজিনাল কপি পাসপোর্ট এর সাথে জমা দিতে হবে।
৩। যেহেতু রিটার্ন টিকেট করা লাগবে তাই যাওয়ার তারিখ ঠিক করে, আসার তারিখটা ওপেন রাখার ব্যবস্থা আছে। আপনি যেদিন আসবেন তার ২ দিন আগেই বাস কর্তৃপক্ষকে আসার তারিখ জানিয়ে দিবেন।
৪।যেহেতু ট্রানজিট ভিসার জন্য আবেদন করবেন তাই আপনার এপ্লিকেশন ফর্মে কোনো এ্যাপোয়েন্টমেন্ট ডেটের দরকার নাই। ইন্ডিয়ান হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে "অনলাইন ভিসা এপ্লাই" অপশনে গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করে ফেলেন। কিন্তু খুব নির্ভূল ভাবে।
৫। ফর্ম ফিলাপ করে পরের দিন সকাল ৮ টায় চলে যান গুলশানের ইন্ডিয়ান হাইকমিশনে। সকালে ফর্ম ফিলাপ করে যদি নিয়ে যান তাহলে অনেক সময় ওদের সার্ভারে আপনার ডাটা আপডেট নাও থাকতে পারে। তার জন্য অনেক সময় বসে থাকা লাগতে পারে।
৬। ভিসার জন্য নির্ধারিত ফি ৬০০ টাকা "ইউ ক্যাশ" এর মাধ্যমে দেওয়া লাগে। এখন আর আগের মত ভিতরের কাউন্টারে নেয় না। তাই মনে করে আগেই ভিসা ফিয়ের টাকা পরিশোধ করে যান। না হলে দেখা যাবে আপনি লাইনের একেবারে সামনে থেকেও ফি জমা না দেওয়ার জন্য আবার লাইন থেকে বের হয়ে যাওয়া লাগবে। আমি ও একই ভূল করেছিলাম।
৭। যারা চাকুরী করেন, তাদের ভিসার জন্য NOC দেওয়া লাগে। এটা মনে রাখবেন, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে কিন্তু NOC এর ফটোকপি চায়। না দিতে পারলে ৩০০ টাকা দেওয়া লাগে। অযথা টাকা কেনো দিবেন। মনে করে NOC এর ফটোকপি টা নিয়ে নিবেন।
৮। ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে আপনাকে ভূটানে হোটেল বুকিং এর কনফার্মেশন পেপার দিতে হবে। আপনি ভূটানে হোটেল বুকিং এর কনফার্মেশন পেপারটারও ২/৩ কপি নিয়ে নিবেন। ভূটান ইমিগ্রেশনে লাগবে। আমি দেখেছি যে ইমিগ্রেশন থেকে অনেক সময় হোটেলে কল দিয়ে আপনার কনফার্মেশন চেক করে। আমার মতে, আপনি যদি ইমিগ্রেশন করেই থিম্পু যেতে চান তাহলে আগে থেকে বুক করা হোটেলে থাকাটাই ভালো। কারন মনে রাখবেন রাত ৮ টায় সব বন্ধ। আর থিম্পু পৌছাতে লাগবে রাত ১০/১০.৩০। তাই এতো জার্নি করে আর হোটেল খুজার এলার্জি থাকবে না। এই এনার্জি গুলো বাচান, উপযুক্ত ব্যবহর করেন ঘুরার ক্ষেত্রে।
৯। ইন্ডিয়ান এম্বাসিতে ব্যাগ নিয়ে যাবেন না। ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেয় না।
১০। বুড়িমারি বর্ডার দিয়ে যখন ইন্ডিইয়া ঢুকলেই দেখবেন যে কিছু মানি এক্সচেঞ্জ আছে। আপনি এখানেই ডলার রুপিতে কনভার্ট করে নিতে পারে। এখানে ভালো রেট পাবেন। আবার ভূটানে তেমন মানি এক্সচেঞ্জও পাবেন না।
১১। ডলার এক্সচেঞ্জ যেখানে করাবেন, সেখান থেকেই জয়গাও যাওয়ার গাড়ি পেয়ে জাবেন। কিন্তু দামাদামি করা লাগবে। গাড়ি ভাড়া ২৩০০-২৮০০ রুপির মধ্যে। কিন্তু বললাম না দামাদামি করা লাগবে। চাইলে বাস দিয়েও যেতে পারেন। বাস কোথা থেকে উঠা লাগবে তা কাউকে জিজ্ঞেস করলেই বলে দিবে।
ভূটানে করনীয়ঃ
*** আপনি সিম কিনতে পারেন ফুন্টসোলিং থেকেই। "তাসি সেল" ২০০ রুপি/ন্যূ। সিম কিনার সময় ইন্টারনেট এক্টিভেট করে নিয়েন।
*** আপনি বিকাল ৪ টার আগে ফুন্টসোলিং পৌছালে বাসে করে থিম্পু যেতে পারেন। তার জন্য খরচ্চ কিছুটা কমে যাবে। বাস ভাড়া ২৫০ ন্যু।
*** গুগল মামার সাহায্যে যাওয়ার আগে দেখে নিন ভূটানের তাপমাত্রা কেমন, যার উপর ভিত্তি করে নিয়ে নেন গরম কাপড়। ওখানে হঠাৎ বৃষ্টি হয় যা আপনার ট্রিপ কিছুটা হলেও ব্যাহত করতে পারে। তার জন্য যদি পারেন ছাতা নিয়ে নিতে পারেন। মনে হতে পারে ছাতা কেনো বহন করবো? কারন এই ছাতাই হইতো আপনার সময় বাচাবে।
*** ভূটানে তেমন মসজিদ চোখে পরে নাই। শুক্রবার জুম্মার নামাজ হয় দানতাক নামক জায়গায়। গুগল ম্যাপে “Mosque in Thimpu” লিখলেই পেয়ে যাবেন “Dantak”। এছাড়াও বাংলাদেশি হাইকমিশনেও জুম্মার নামাজ হয়।
*** ভূটানের বেশি ভাগ মানুষই বৌদ্ধ। রেস্টুরেন্টের মেন্যুর প্রথম সারিতেই থাকে পর্কের (শূকর) বিভিন্ন আইটেম। পুরো ৫ টা দিনই নুডুলস, ভেজেটেবল ফ্রাইড রাইস খেয়েই পেট ভরা লেগেছে। আবার তারা খাবারে লবন, মশলাও কম ব্যবহার করে।
*** আপনি যদি চেলালা পাস, হা ভ্যালী, পুনাখা যেতে চান তাহলে থিম্পু থেকে পারমিট নেওয়া লাগবে। তার জন্য যে কয়জন যাবেন তাদের সকলের পাসপোর্টের আর ভূটান ঢুকার সময় পাসপোর্টে যে সিল দিয়েছে, যেখানে সাতদিনের ভিসার কথা উল্লেখ করা আছে ওই পেজটার ফটোকপি মেইন ফর্মের সাথে দিয়ে দিবেন। ফর্ম ফিলাপ করা লাগবে আপনাদের টিমের যেকোন একজনকে, সবাইকে করতে হবে না।