মুসৌরি সম্পূর্ণ ভ্রমন গাইড
Missouri Complete Tour Guide

■ মনের রাণী :: মুসৌরি।।
•••••••••••••••••••••••••••

গাড়োয়াল হিমালয়ের অন্যতম পাহাড়ি শহর "মুসৌরি"। ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার এই শহর গড়ে তোলেন। এখানে অসাধারণ পাহাড়ি সৌন্দর্য যদি উপভোগ করতে হয়, তাহলে মুসৌরিতে রাত্রি বাস করতেই হবে। অধিকাংশ পর্যটক হরিদ্বার থেকে মুসৌরি ঘুরে আবার হরিদ্বার ফিরে যায়। কিন্তু মুসৌরিতে না থাকলে, মুসৌরি ভ্রমণ অসম্পূর্ণ। কারণ পাহাড়ি সূর্যোদয় দেখা এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

## দেখাশোনা :: সাইট সীইং ( Sight Seeing )
************
হরিদ্বার থেকে মুসৌরি যাওয়ার দিন সকালে টিফিন করে একটু তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়লাম। যাওয়ার পথে প্রথমে দেখলাম "সহস্র ধারা"। একপাশে পাহাড় আর অসাধারণ সুন্দর একটা ঝর্ণা। ২৯ ফুট উপর থেকে সহস্র ধারায় যে জল ধারা পড়ছে, সেটি পাথরের ধাপে ধাপে নিচে নেমে এসেছে এবং নদী রূপে প্রবাহিত হয়েছে। এখানে একটা মন্দিরে ছোট্ট গুহার মধ্যে অনেকগুলো শিবলিঙ্গ আছে। এখানে কিছু সময় কাটিয়ে, ছবি তুলে চলে এলাম মুসৌরির আরেকটি বিখ্যাত জায়গা "কেমটি ফলস্"।
রাস্তার পাশেই ঝর্ণার জল পাথরের উপরে লাফিয়ে পড়ছে। আমরা পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলাম, ঝর্ণার জল এখানে একদম হাতের নাগালে। এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ আরও সুন্দর। এখানে পোষাক ভাড়া নিয়ে ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে।
আরেকটু এগিয়ে গিয়ে এখানে একটা পার্ক আছে। এখানে রোপওয়ে থেকে পার্কের ভিউ এবং কেমটি ফলস্ দেখতে দুর্দান্ত লাগলো।

দ্বিতীয় দিনের ট্যুরে মুসৌরি থেকে ২৫ কিমি দূরে আরেকটি পাহাড়ি শহর "ধনৌলটি"। এখানে অসাধারণ পাহাড়ি সৌন্দর্য আর ইকো পার্ক দেখে, ধনৌলটি থেকে ৯ কিমি দূরে ৩০৫০ মিটার উচ্চতায় "সুরখন্ডা মায়ের মন্দির" ঘুরে নেওয়া যায়। এখানে প্রতি বছর গঙ্গা পূজো বা দশেরা উৎসব খুব জাঁকজমক ভাবে হয়। এছাড়াও মুসৌরির সবচেয়ে উচু জায়গা "লাল টিব্বা" থেকে হিমালয়ের অসাধারণ সৌন্দর্য দেখা যাবে। মুসৌরি থেকে ফেরার সময়, দেরাদুন আসার পথে একটা শিব মন্দির আছে (নাম মনে নেই), শিব লিঙ্গটা সাদা স্ফটিক পাথরের। এই মন্দিরে প্রসাদ স্বরূপ অসাধারণ সুস্বাদু চা আর পায়েস দেয়।

মুসৌরিতে আমার অন্যতম স্মৃতি, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে যখন দেখলাম অন্ধকার পাহাড়ের গায়ে একটু একটু করে সূর্যের আলো পড়ছে,,---- উফ্ফ্, এটা নিজে চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না।।

## থাকা-খাওয়া :: (Hotel Fooding)
**************
মুসৌরিতে থাকার জায়গা মূলত চারটি।
¤ ১. মুসৌরি ম্যাল। ম্যালে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের প্রচুর হোটেল ও লজ্ আছে। চারদিকে পাহাড় ঘেরা ম্যালে পায়ে হেঁটে ঘুরে বা রেলিংয়ের ধারে দাঁড়িয়ে অনেকটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। আর ছবি তোলার জন্য অসাধারণ ভিউ পয়েন্ট। তবে এখানে মার্কেটিং করতে চাইলে একটু বুঝে করতে হবে। কারণ এখানে জিনিসপত্রের দাম অনেকটা বেশি।
¤ ২. কেমটি ফলস রোড । এখানে বেশ কয়েকটি হোটেল ও লজ্ আছে। হোটেলের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে পাহাড়ি খাদ, আর দূর থেকে পাহাড়ি ঝর্ণা (কেমটি ফলস) দেখতে দারুন লাগবে। এখানে নিরিবিলি পরিবেশে ভোরবেলা চারপাশে একটু হেঁটে ঘুরতে দারুন লাগবে। তবে এখানে কোন ভালো মার্কেট নেই। এছাড়াও,
¤ ৩. লাইব্রেরি বাসস্ট্যান্ডের কাছে।
¤ ৪. পিকচার প্যালেস (কুলরি) বাসস্ট্যান্ডের কাছে প্রচুর হোটেল আছে।
মুসৌরিতে দুটো বাসস্ট্যান্ড। দুটো বাসস্ট্যান্ডই ম্যাল রোডে।
মুসৌরিতে খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। এখানে যেমন অনেক রেস্টুরেন্ট আছে, তেমনি হোটেলগুলিতে লজিং-এর সাথে ফুডিং-এর ব্যবস্থাও আছে। মুসৌরিতে হোটেলের চেক আউটের সময় সকাল ১১ টা।

¤ কিছু হোটেল ::
"""""""""""""""""""""""
▪︎হোটেল রতন -- 07065009189।
▪︎হোটেল দীপ -- 09837170142।
▪︎হোটেল হিল কুইন -- 09758033089।
▪︎হোটেল বিষ্ণু প্যালেস -- 01352632932।
▪︎মুসৌরি রেসিডেন্স -- 06397250006।
▪︎হুইসপারিং উইন্ডো রক -- 01352632020।
▪︎হোটেল ব্রডওয়ে -- 01352632243।
▪︎হোটেল প্রিন্স -- 09897105358।
▪︎হোটেল মোনার্ক -- 09897281765।
▪︎হোটেল ম্যাল প্যালেস -- 01352632097।

এই হোটেলগুলো ছাড়াও আরও প্রচুর হোটেল আছে। উপরিলিখিত হোটেলগুলির নাম এবং হোটেলের নম্বর গুগুল থেকে সংগ্রহ করা।
(হরিদ্বার থেকে অথবা অগ্রিম অন-লাইনে হোটেল বুকিং করে, তবেই মুসৌরি যাওয়া ভালো)।

## যাওয়া-আসা ::
**************
শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে সরাসরি মুসৌরি যেতে চাইলে ট্রেনে অথবা বিমানে দেরাদুন পৌঁছে, দেরাদুন থেকে বাসে অথবা শেয়ার গাড়ি অথবা প্রাইভেট গাড়িতে মুসৌরি আসা যায়। অথবা হরিদ্বার থেকে গাড়িতে মুসৌরি আসা যায়। দেরাদুন থেকে মুসৌরির দূরত্ব ৩৮ কিমি। সময় লাগবে ঘন্টা দেড়েক।
হরিদ্বার থেকে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অথবা ব্যক্তিগত ভাবে গাড়ি ভাড়া করে মুসৌরি ট্যুর করা যায়। হরিদ্বার থেকে মুসৌরির দূরত্ব ৭৩ কিমি। সময় লাগবে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা।
ফেরার সময় দেরাদুন থেকে ট্রেনে অথবা বিমানে ফিরতে হবে।

¤ যাওয়ার ট্রেনের সময় ::
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""
▪︎হাওড়া থেকে প্রতিদিন যাচ্ছে "দুন এক্সপ্রেস", সময় রাত ৮.২৫ মিনিটে।
▪︎প্রতি মঙ্গল ও শুক্রবার যাচ্ছে "উপাসনা এক্সপ্রেস", সময় দুপুর ১ টা।

¤ ফেরার ট্রেনের সময় ::
"'"""""""""""""""""""""""""""""""""
▪︎দেরাদুন থেকে প্রতিদিন আসছে "দুন এক্সপ্রেস", সময় রাত ৮ টা।
▪︎প্রতি বুধ ও শনিবার আসছে "উপাসনা এক্সপ্রেস", সময় রাত ১০.১০ মিনিটে।

## ট্যুর প্ল্যানটা মোটামুটি এই রকম,
হাওড়া বা কলকাতা থেকে ট্রেনে বা বিমানে (দেরাদুন বিমান বন্দর) হরিদ্বার পৌঁছানোর পর, হরিদ্বার থেকে ঘোরাঘুরি,-----

▪︎১ম দিন :: মনসা মন্দির, চন্ডী মন্দির, কঙ্খল।
▪︎২য় দিন :: হৃষিকেশ ও সংলগ্ন মন্দির সমূহ।
▪︎৩য় দিন :: হরিদ্বার শহরের কিছু মন্দির দর্শন।
এতো কিছুর মধ্যেও সময় করে গঙ্গা স্নান, গঙ্গা আরতি দর্শন আর মার্কেটিং করে নিতে হবে।

▪︎৪র্থ দিন :: হরিদ্বার থেকে মুসৌরি যাওয়ার পথে, সহস্র ধারা আর কেমটি ফলস্।
▪︎৫ম দিন :: ধনৌলটি, সুরখন্ডা মায়ের মন্দির, লাল টিব্বা।
▪︎৬ষ্ঠ দিন :: মুসৌরি থেকে দেরাদুন আসার পথে শিব মন্দির।

এরপর দেরাদুন থেকে ট্রেনে অথবা বিমানে হাওড়া অথবা কলকাতা ফেরা।।

◆ সঙ্গে অবশ্যই নিতে হবে ::- প্রত্যেকের পরিচয়পত্র অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। অনলাইনে হোটেল বা ট্যুর বুকিং করলে, ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় ঔষধ সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে ।।
Happy Journey.....।।