দেরাদুন মুসৌরি ধনৌলটি ভ্রমন গাইড

★★★ A) দেরাদুন:
---------------------

হরিদ্বার (দুদিন) ঋষিকেশ (একদিন) ভ্রমনের পর উত্তরাখন্ড ঘোরার একটা সার্কিট হলো দেরাদুন, মুসৌরি, ধনৌলটি । হাওড়া থেকে দেরাদুন সরাসরি দুন এক্সপ্রেস থাকলেও হরিদ্বার ঘুরে হয়ে যাওয়ায় বেশীরভাগ পর্যটক পছন্দ করেন। দেরাদুন হলো এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ভ্যালি (উপত্যকা) । দক্ষিণ পূর্ব গঙ্গা, উত্তর পশ্চিমে যমুনা উত্তরে হিমালয় আর দক্ষিণে শিবালিক তার মাঝেই উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুন । হরিদ্বার থেকে নেপালী ফার্ম হাউস মোড় হয়ে ৪৩ কিমি দূরে দেরাদুন ।


দেরাদুনের প্রধান দ্রষ্টব্য স্থান গুলো:
----------------------------------------------

◆ ১) সহস্রধারা: দেরাদুন থেকে ১২ কিমি দূরে সহস্রধারা। হাজার ধারার জল গড়িয়ে পড়ছে চুনাপাথরের দেওয়ালে । এই জলে গন্ধক মেশানো আছে । গন্ধকমিশ্রিত জলে বহু রোগব্যাধির নিরাময় হয়। পাশেই নদী বয়ে গেছে । এখানে আছে প্রাচীন দ্রোন মন্দির ও শিব মন্দির এবং প্রাকৃতিক গুহা ।

◆ ২) রবার্স কেভ বা গুচ্ছপানী: দেরাদুনের সবচেয়ে সেরা এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র রবার্স কেভ বা গুচ্ছপানী । টনস নদী পাহাড়ের গুহার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে । গুহার মধ্যে দিয়ে নুড়িপাথরের রাস্তার মধ্যে দিয়ে টনস নদী বেরিয়ে এসেছে । নদীর স্রোত পেরিয়ে খালি পায়ে (হাওয়ায় চটি ভাড়া পাওয়া যায়) টনস নদীর উৎসস্থলে পৌঁছানো রীতিমত এডভেঞ্চারস । রবার্স কেভ বা গুচ্ছপানী তাই যেকোনো পর্যটকের আসল গন্তব্য ।

◆ ৩) টপকেশ্বর মহাদেব মন্দির: রবার্স কেভ বা গুচ্ছপানী থেকে ৬ কিমি দূরে টপকেশ্বর মহাদেব মন্দির । টনস নদীর ধারেই এই মন্দির । মন্দিরের ভিতরে গুহার মধ্যে শিবলিঙ্গের উপর ঝর্ণার জল টপটপ করে জল পড়ে । পাশেই আছে বৈষ্ণদেবী মন্দির ।

◆ ৪) প্রকাশেশ্বর মহাদেব মন্দির: দেরাদুন থেকে মুসৌরি যাওয়ার পথের ধারে খুব দৃষ্টিনন্দন এই মন্দির । সারা ভারতের মধ্যে এই মন্দিরেই একমাত্র ঘোষিত কোনো টাকা পয়সা দান নেওয়া হয়না । চা এবং পায়েস প্রসাদ হিসেবে দেওয়া হয় সমস্ত পুণ্যার্থীদের । মুসৌরি যাওয়ার পথে সমস্ত গাড়ী এই মন্দির দেখিয়ে নিয়ে যায় ।

এছাড়া দেরাদুনে খালসা ডিয়ার পার্ক, সাঁই মন্দির, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট মিউজিয়াম (শনি রবিবার বন্ধ) আছে । সমগ্র দেরাদুন ঘুরতে হাতে দুদিন সময় রাখা দরকার । অনেকক্ষেত্রে হরিদ্বার থেকে মুসৌরি যাওয়ার পথে দেরাদুন একদিন ঘুরে তারপর মুসৌরি থেকে দেরাদুন স্টেশনে রাতে ট্রেন ধরার আগে সারাদিন ঘুরে দেরাদুনের প্রধান দ্রষ্টব্য স্থলগুলো দেখে নেয় । সেক্ষেত্রে সুবিধা হলো আলাদা করে দেরাদুনে হোটেল নেওয়ার প্রয়োজন হয়না, মুসৌরি থেকেই যাওয়া আসার পথে ঘুরে নেওয়া যায় ।

★★★ B ) মুসৌরি:
----------------------

উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের রাণী হলো মুসৌরি । দেরাদুন হয়েই মুসৌরি আসতে হয়। দার্জিলিং, সিমলা, মানালীর মতো মুসৌরি শৈলশহরে ম্যালকে কেন্দ্র করে হোটেল পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে । ম্যালে গাড়ী চলাচল নিষিদ্ধ, রিক্সা চলে অনেক । দেরাদুন থেকে ৩৫ কিমি দূরে মুসৌরি শৈলশহর । মুসৌরিতে কোনো ট্যুর ট্রাভেলস দোকান বা কোম্পানি নেই । দেরাদুন আর কেম্পটি দুটো ট্যাক্সি স্ট্যান্ড আছে এবং ইউনিয়ন নির্ধারিত ফিক্সড রেট দিয়ে ট্যাক্সি পাওয়া যায় । এবং মুসৌরির সমস্ত গাড়ী ছোটো গাড়ী । কোনো বড় গাড়ী মুসৌরিতে চলে না । ১৪ কিমি দূরে মধুবন স্ট্যান্ডে কিছু বড় গাড়ী পাওয়া যায় তারা হোটেলে এসে দাঁড়াতে পারে না । এই তথ্য সমস্ত পর্যটক দের মুসৌরি ভ্রমনের আগে জেনে রাখা ভালো ।

মুসৌরির প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্র গুলো হলো:
-------------------------------------------------------------

◆ ১) মুসৌরি লেক: দেরাদুন থেকে মুসৌরি আসতে গিয়ে রাস্তার পাশে মুসৌরি লেক । সিঁড়ি বেয়ে অনেকটা নিচে নামতে হয় । বোটিং, হরর হাউস, গেমস ইত্যাদি নিয়ে মুসৌরি লেক ।

◆ ২) ভাট্টা ফলস: কেম্পটি ফলস ছাড়া মুসৌরির অন্য যে জলপ্রপাত বিখ্যাত সেটা হলো ভাট্টা ফলস । তবে এখানে ট্যুরিস্ট এর ভিড় কম । এখানে রোপওয়ে আছে । রোপওয়ে দিয়ে আপ ডাউন পথে পাহাড়ের নীচে পার্কের মধ্যে ভাট্টা ফলস ।

◆ ৩) কেম্পটি ফলস: মুসৌরি থেকে ১৪ কিমি দূরে কেম্পটি জলপ্রপাত । এটি হলো মুসৌরির সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র । এখানেও রোপওয়ে সার্ভিস আছে । পাহাড়ের নিচে কেম্পটি জলপ্রপাতে পৌঁছানো যায় । এখানে স্নান করার সুযোগ আছে ।

◆ ৪) লালতিব্বা: মুসৌরি ম্যাল ৫ কিমি দূরে মুসৌরির উচ্চস্থান থেকে পাহাড়রেঞ্জ দেখার জন্য বিখ্যাত ।

◆ ৫) গান হিল: মুসৌরি ম্যাল থেকে রোপওয়ে সার্ভিসে পৌঁছে যান গানহিল । এই গানহিল থেকেই নিচের দুনভ্যালি সুন্দর দেখা যায় । অপরূপ সুন্দর সেই দৃশ্য । সন্ধ্যাবেলার দুনভ্যালি দেখতে ভারি সুন্দর লাগে ।

এছাড়া মুসৌরি তে আছে মিউনিসিপ্যাল পার্ক, কামেল রক, বৌদ্ধ মনাসস্ট্রি । সন্ধ্যাবেলা সময় কাটান মুসৌরি ম্যালে । মুসৌরি ঘুরতে মিনিমাম দুদিন সময় লাগে ।

★★★ C) ধনৌলটি এবং সুরকুন্ডা মাতার মন্দির:
----------------------------------------------------------

মুসৌরি থেকে একদিনে ঘুরে আসুন আরেকটি শৈলশহর ধনৌলটি । আপনি নির্জনতা পছন্দ করলে একরাত্রি থাকতেও পারেন ধনৌলটিতে । ধনৌলটি ইকো পার্ক প্রধান আকর্ষণ পর্যটকদের । এখান থেকে পাহাড়ের অসাধারন ভিউ পাওয়া যায় । ধনৌলটি থেকে পাঁচ কিমি গেলে সুরকুন্ডা মাতার মন্দির । এটি ৫১ পীঠের এক পীঠ । তিনকিমি পাহাড়ী রাস্তা ট্রেক করে হেঁটে মায়ের মন্দিরে পৌঁছাতে হয় । মুসৌরি বেড়াতে এলে ধনৌলটি এবং সুরকুন্ডা মাতার মন্দির একটা দিনে অবশ্যই ঘুরে যাওয়া উচিত। ধনৌলটি তে ওক পাইন দেবদারু গাছে মাঝখান দিয়ে নন্দাদেবী রেঞ্জ দেখা যায়।

◆◆◆ যাওয়া আসা:
---------------------
হাওড়া থেকে সরাসরি দেরাদুন এসে যেমন ঘোরা যায় আবার হরিদ্বার ঋষিকেশ ভ্রমন করেও দেরাদুন ঘোরা যায়। দেরাদুন থেকে মুসৌরি ধনৌলটি ঘুরে ফেরার সময় দেরাদুন থেকে ট্রেন ধরা যায়।

◆◆ হোটেল:
--------------
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে দেরাদুন স্টেশন বা হরিদ্বার থেকে যেভাবেই আসুন দেরাদুন সাইটসিন করে সন্ধ্যায় মুসৌরি পৌঁছান আবার মুসৌরি থেকে ফেরার সময় সকালে রওনা দিয়ে সারাদিন দেরাদুন সাইটসিন করে রাতে ট্রেন ধরুন । তাতে দেরাদুনে আলাদা করে হোটেল লাগে না । দুদিনে সবই দেখা হয়ে যায় ।
মুসৌরি তে হোটেল গুলো ম্যাল কেন্দ্রিক । গুগুলে সার্চ করলেই প্রচুর হোটেলের ওয়েবসাইট এবং কন্টাক্ট নাম্বার পাওয়া যাবে ।

◆◆◆ গাড়ী :
-------------

মুসৌরি ভ্রমনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো মুসৌরি তে কোনো বড় গাড়ী পাওয়া যায়না । ছোটো গাড়ী ভরসা । দেরাদুন এবং কেম্পটি দুই ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকেই ইউনিয়নের ফিক্সড রেটে ছোটো গাড়ী পাওয়া যায় । কেম্পটির কাছে মধুবন স্ট্যান্ডে কিছু বড় গাড়ীর সন্ধান পাওয়া যায় ।