উজ্জইন
নাম শুনলেই শরীরে যেন এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ বয়ে যায়। কত যে পুরানো শহর কেউ জানে না। প্রাগৈতিহাসিক শহর ও বলা যায়।
পুরানে রয়েছে উল্লেখ। রয়েছে মহাভারতে। তখন অবনতি রাজ্যের রাজধানী ছিল অবন্তিকা, যা আজকের উজ্জইনি। এক সমৃদ্ধ নগর। ব্যবসা বাণিজ্য শিক্ষা সংস্কৃতির মূল পীঠস্থান ছিল দীর্ঘদিনের।
শরদিন্দু বাবুর লেখা কালিদাসের ওপর লেখা রচনাটি পড়ে মন যেন উজ্জ্যইনিতেই আটকে রয়ে গেছে।
এমন এক জায়গায় যাব ভেবেই মন যেন আর অপেক্ষা করতে চাইছিল না। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একদিন চেপে বসলাম শিপ্রা এক্সপ্রেসে। আমি আর বাবা এসেছিলাম প্রথম বার। পরে আরেকবার এসেছিলাম পুরো mp ঘোরার সময়।
স্টেশন থেকে অটো নিয়ে চলে এলাম মন্দিরে। মহাকাল মন্দির। দ্বাদশ জ্যোতিরলিঙ্গ এর মধ্যে অন্যতম। বিশাল মন্দিরের একদম উপরে পতাকা। কি অসাধারণ দৃশ্য।
এই মন্দির 12 শতাব্দীতে মুসলিম আক্রমণে নষ্ট হয়েছিল। সোনা হিরে জহরত আর অন্যান্য মূল্যবান জিনিস লুট হয়েছিল প্রায় 6 মাস ধরে। মন্দির ধ্বংস হয়ে অগোচরে চলে যায় 500 বছর। তারপর 17 শতাব্দীতে হয় আবার নতুন করে।
মন্দিরের একদম নিচের তলায় রয়েছেন মহাকাল। মাঝে অমকারেশ্বের। উপরে নাগেশ্বর। নাগেশ্বর মন্দিরের দরজাটা খোলে শুধু নাগ পঞ্চমীর দিন। অমকারেশ্বর দর্শন করে চলে গেলাম নীচে মহাকাল দর্শনে।
তিনটে লিঙ্গ একের উপরে আরেক করে তিনটি তলায় অবস্থিত।
স্নান করে এসেছি পুজো দেব বলে। দুধ ডাবের জল আর ফুল নিয়ে, অপেক্ষা করে আছি। পুজো শেষ হলে তবেই করতে পারব সমর্পণ। এত বিখ্যাত জ্যোতিরলিঙ্গ কিন্তু সবাই নিজের হাতে করতে পারবে পুজো। খুব ভালো ব্যাবস্থা। পুজো দিয়ে মন ভালো হয়ে গেল। এটা গেল প্রথম বারের কথা।
এবারে আসছি দ্বিতীয় বারে। দেখি মন্দির ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ব্যারিকেড ঘুরে ঘুরে যাওয়া। ভেতরে আলাদা দুধের চ্যানেল আর জলের। চ্যানেল করে সেই দুধ জল চলে যাবে আর হবে সমর্পণ। আর নেই কাছে গিয়ে মাথা ঠেকার সুযোগ। যা হবে দূর থেকে। মনটা একটু খারাপ হল ঠিকই। কিন্তু যা ভীড় দেখছি, এমন না হলে সম্ভব হবে না ভীড় নিয়ন্ত্রণ।
মন্দির চত্ত্বরে রয়েছেন গণেশ দেব আর ঋদ্ধি সিদ্ধি। এখানে মানত করলে কেউ ফেরে না। তাই আশেপাশের গাছে রয়েছে অজস্র চুনরি আর লাল সুতো, কত জনের মনের ইচ্ছা নিয়ে ঝুলে রয়েছে। রয়েছেন হনুমান জী। রয়েছে আরেকটি শিব মন্দির। মাঝখানে বিশাল জলকুন্ড।
রয়েছে বিশাল বোর্ড তাতে লেখা মহা মৃত্যঞ্জয় মন্ত্র।
আর তার মহিমা বর্নন। অকালমৃত্যু যোগ, দিঘদিনের অসুস্থতা যোগ, পক্ষাঘাত, দুর্ঘটনা যোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই মন্ত্র খুব সিদ্ধ।
জনশ্রুতি বেশ কিছু কোমায় আচ্ছন্ন মানুষকে হেডফোনে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র শুনিয়ে অনেক উন্নতি লক্ষ করা গেছে। শব্দই ব্রহ্ম। পুরো মন্দির জুড়ে বাজছে সেই মহামন্ত্র।
মন্দির চত্ত্বরে অনেক গাছ। বসে থাকতে খুব সুন্দর লাগে। সন্ধ্যের পর অনেকেই এসে বসে। এক স্বর্গীয় পরিবেশ। শান্তির আবহাওয়া। আমরাও বসে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ।
পরের দিন ভোরে হাজির আমরা। তখন সাড়ে তিনটে। চারটার সময় শুরু হল ভস্ম আরতি। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখে গেলাম।
এই ভস্ম আসে পাশের শ্মশান থেকে। একদম গরম আর তাজা ভস্ম, তাজা ভস্ম ছাড়া হয়না এই আরতি। ভস্ম যা শিবের অঙ্গ-ভূষণ, তার থেকেই জীবন আর তাতেই সমাপ্তি।
মন্দির দেখে বেরিয়ে এলাম। পাশেই রয়েছে বড় গণেশ। এক বিশাল গণেশ। হাতে লাড্ডু আরেক হাতে অভয়মুদ্রা।
তার পাশেই মন্দিরে পঞ্চমুখী হনুমান। পুরোটাই ধাতুর। রয়েছেন শিব পার্বতী। নন্দী।
উল্টোদিকে রয়েছে বিপলবিদের গোপন আশ্রয়স্থল। meeting আর থাকার জন্য এক বহু পুরোন বাড়ী। মহাকাল মন্দিরের ঠিক পেছনে। বিশাল পুরোন অট্টালিকা কিন্তু এখনো বেশ ভালো অবস্থায়। নাহ mp govt বেশ ভালো পরিচর্যা করে চলেছে আমাদের অগ্নিযুগের ইতিহাস স্মারকটির।
একটু এগিয়ে এলেই হরসিদ্ধি মন্দির। তান্ত্রিক দেবী। পার্বতী দেবীর আরেক রূপ। বত্রিশ সিংহাসন খ্যাত রাজা বিক্রমাদিত্য এর পূজিত দেবী।
কথিত আছে রাজা অমাবস্যার দিনে গভীর রাতে এসে পুজো করতেন আর পুজোর শেষে নিজের মাথা নিজের হাতে কেটে করতেন দেবীর পায়ে অর্পণ। প্রতিবারই দেবীর আশীর্বাদে সেই কাটা মাথা লেগে যেতে জোড়া। এই দেবীর আশীর্বাদে তিনি লাভ করেন বত্রিশ সিংহাসন। আর হয়ে উঠেন অপরাজেয় এক সম্রাট।
শোনা যায় তার সময়ে রাজত্ব সুদূর সৌদি আরব থেকে ব্রহ্মদেশ অবধি বিস্তৃত ছিল। বর্তমান মক্কার কাছে পাওয়া তার সময়ের এক তামার plate এর থেকে একথা জানা যায়।
পেছনেই শিপ্রা নদীর ঘাট। সেই ঘাটে স্নান করে রাজা বসতেন পুজোয়। মন্দিরের সামনে বিশাল দুটি বাতিস্তম্ভ। প্রায় 15 ft উঁচু। অসংখ্য বাতি লাগাবার জায়গা। জ্বালিয়ে দিলে বহু দূর থেকে দেখা যায়। তখন এই জায়গাটা ছিল শ্মশান।
নাহ এরপরে আর হেঁটে দেখা আর সম্ভব নয়, করে নিলাম একটা অটো ভাড়া। 300 টাকা নেবে সমস্ত জায়গা ঘুরিয়ে দেবে।
কিছুটা দূরে নদী সঙ্গম স্থলে রয়েছে সিদ্ধবট, সেই বটগাছ যেখান থেকে প্রেত বেতালকে উনি ধরে আনতেন। বত্রিশ সিংহাসন গল্পে আমরা আসলে এই বেতালের কথাই শুনে থাকি। রাজা বিক্রমাদিত্য নিজেও ছিলেন বেতালসিদ্ধ নামে এক গুপ্ত বিদ্যায় পারদর্শী।
রাজা বিক্রমাদিত্য যখন আছেন এখানে, তাহলে আছেন ওনার নবরত্ন সভার অন্যতম সদস্য সভাকবি কালিদাস।
দেখতে এসেছি গড়কালিকা মন্দির। আগে এই মন্দির ছিল রাজার গড়ের মূল মন্দির। এখন আর নেই সেই গড় অর্থাৎ কেল্লা। রয়েছে শুধু মন্দির টি।
মূর্খ কালিদাসের আন্তরিক প্রার্থনায় কাতর হয়ে কালিকাদেবী ওনাকে দেন আশীর্বাদ। মাতা সরস্বতীর দর্শন প্রাপ্ত হন আর মূর্খ কালিদাস হয়ে উঠেন মহাকবি কালিদাস। সংস্কৃতে লেখেন মেঘদূতম নামে কালজয়ী রচনা। এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক রচনা।
আর একটু যেতেই পেয়ে গেলাম রাজা ভর্ত্রীহরির তপস্যার জায়গা। রাজা বিক্রমাদিত্য এর বড় ভাই। রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে ইনি তপস্বী হন। গুরু গোরক্ষনাথ এর আশীর্বাদে উনি কঠোর তপস্বী হয়ে যান। গুহাটি মাটির নিচে অবস্থিত। আর অত্যন্ত নিচু। গুহার দ্বারের দুইপাশে বেশ কিছু সাধু রয়েছেন। এনারা নাথপন্থী সাধু। এদের প্রিয় জায়গা ও তপস্থল। ভর্ত্রীহরিও ছিলেন নাথপন্থী সাধু।
পুরোটাই পাথরের। পাথরের পিলার পাথরের বিম পাথরের মেঝে। বেশ বড়ই। এক কোনে রাজা ভর্ত্রীহরির সাধনার আসন। উপরের বিম টি অদ্ভুত ভাবে মাঝখানে ভাঙা আর রার মাঝে একটি বেশ বড় মাপের হাতের পাঞ্জার ছাপের মত হয়ে রয়েছে।
জনশ্রুতি ভর্ত্রীহরির 12 বছরের কঠোর তপস্বায় ভীত হয়ে ইন্দ্রদেব ছোড়েন বজ্র। সেই বজ্র বিম ফাটিয়ে দিয়ে ভর্ত্রীহরির মাথায় এসে পড়ার মত হয়। তপস্যারত রাজা সাথে সাথে বামহাতে সেই জায়গাটি চেপে ধরেন আর ফলাফল হিসেবে বিমটি ওখানেই রয়ে যায় আর বজ্রের আঘাতে বামহাতটি কালো হয়ে যায়। বামহাতে ওই বিমটিকে ধরা অবস্থায় আরো 12 বছর তপস্যা করে যান ভর্ত্রীহরি। তারপরে কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ইন্দ্রদেব ওনাকে দেন আশীর্বাদ।
এরপাসেই নাথ সাধুদের একটি আশ্রম রয়েছে। সেই আশ্রমে বেশ কিছু বাঁধানো বেদী রয়েছে। সেই বেদীগুলোর নীচে লেখা রয়েছে। পরে জানলাম এগুলো আসলে এক একজন সাধুর জীবন্ত সমাধি স্থল। অর্থাৎ একটা সময়ের পরে সাধুরা গর্ত খুঁড়ে সশরীরে তপস্যারত অবস্থায় মাটির মধ্যে থেকে যান আর শিষ্যরা তার উপরে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেন।
অদ্ভুত ব্যাপার নিজের চোখ কান কে বিশ্বাস করা মুশকিল।
প্রসঙ্গত বলে রাখি গুরু গোরক্ষনাথ এর শিষ্যদের নাথপন্থী বলা হয় আর গোর্খা যারা তারাও ওনার শিষ্য। বিশ্বের সেরা অপরাজেয় আর ভয়ঙ্কর সৈন্যদল হল এই গোর্খা।
চলুন এবারে শ্রীকৃষ্ণ গুরু সন্দীপনি মুনির আশ্রম। আশ্রম চত্ত্বরে এক বিশাল শিবলিঙ্গ তার ওপর খোদাই করা এক নাগ। যাদের কালসর্প দোষ আছে তাদের জন্যে এই শিবলিঙ্গ পুজো করা খুব আবশ্যিক। জনশ্রুতি একটি বেলপাতা থেকে এই শিবলিঙ্গ সৃষ্টি করেন সন্দীপনি মুনি নিজের তপবলে।
ঘেরা এক জায়গায় রয়েছে সন্দীপনি মুনি আর শ্রীকৃষ্ণ বলরাম সুদামা আর বসার জায়গা। মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি কুন্ড। সেই গোমতী কুণ্ডে বিভিন্ন তীর্থস্থান থেকে এবং গোমতী নদীর জল এনে ভরে দেন তিন শিষ্য আর স্নান করেন বয়স্ক গুরু। এটাই গুরু দক্ষিণা।
একটু মনঃসংযোগ করলেই মনসচক্ষে দেখতে পাবেন ছোট্ট শ্রীকৃষ্ণ বলরাম সুদামা তিনজন পড়তে বসেছেন আর এক গুরুগম্ভীর ঋষি সন্দীপনি পড়িয়ে চলেছেন এক প্রাচীন মনরোম গুরুকূলে।
এবারে যাওয়া যাক কালভৈরভ মন্দির। কালো গেট হয়েছে দেখছি আগের বাড়ে ছিল না। মন্দির ও দেখছি বেশ বাঁধানো। হয়েছে গেস্ট হাউস। সবে মিলে এক ঝকঝকে বেপার।
কোন এক অসুরের উপদ্রবে বিরক্ত হয়ে কপালের ঘাম থেকে জন্ম দেন কালভৈরভ এর। সেই কালভৈরভ অসুরকে সংহার করে কিন্তু প্রচন্ড খিদে য় একে একে খেতে থাকে সংসারের নানা সৃষ্টি। শেষে শিব শঙ্কর ত্রিশূল চেপে দেন কালভৈরভ এর মাথায়। মাটিতে চাপা পড়ে যায় কালভৈরভ। শুধু মাথাটুকু উপরে রয়ে যায়।
বিশাল বড় মুখ কালভৈরভ এর। শুধু দুই চোখ আর হাঁ মুখ যাচ্ছে দেখা।
প্রসাদ বলতে এখানে মদ। দেশি বিদেশি কোনতেই নেই অরুচি। পূজারী কে দিলাম বোতল। একপাত্রে মদ ঢেলে দিলেন অর্ধেক টা। বললাম পুরোটাই ঢেলে দিতে। পুরোটা ঢেলে পাত্রটা কালভৈরভ এর মুখে ধরতেই চলে গেল ভেতরে। যেন চুমুক দিয়ে খেয়ে নিলেন। খালি বোতল ঝাঁকিয়ে 2 4 ফোঁটা প্রসাদ গ্রহণ করলাম। আরও অনেক ভক্ত এসেছে বোতল নিয়ে। দেখলাম একের পর এক পাত্র খালি হতে।
মন্দির চত্ত্বরে বোর্ড
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির-
মাটির নিচে 50 60 ft খুড়েও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি, এত মদ কোথায় যাচ্ছে।
প্রতিদিন প্রায় 3 4 হাজার লিটার মদ খাচ্ছেন কালভৈরভ, সেই অনাদি অনন্ত কাল থেকে।
কোন toxication নেই কোথাও। না কোন গন্ধ না হলে কোন স্বাদ।
মন্দিরের জল খেয়ে দেখলাম, না কোন কিছু নেই একদম স্বাভাবিক।
এবারে চলল অটো। গন্তব্য মঙ্গলনাথ মন্দির। এই মন্দির কর্কটক্রান্তি রেখার উপর অবস্থিত।
মঙ্গলগ্রহের জন্মস্থান।
প্রাচীন গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধি ও জ্যোতিষ চর্চার পীঠস্থান ছিল এই মন্দির।
রাজা বিক্রমাদিত্য এর সময়ে এখানে ছিল একটি মানমন্দির।
যাবতীয় মঙ্গলদোষের কাটান ও হয় এখানে। হয় ভাত পুজোর মাধ্যমে। একমাত্র মন্দির যেখানে হয় ভাত পুজো। শোনা যায় অভিষেক ঐশ্বরিয়া এর মঙ্গলদোষের খন্ডন এখানে হয়েছিল।
মন্দির অনেকটা উপরে। রাস্তার দুধারে অনেক দোকান। নারকেল জবা ফুল আর ভুরজপত্রে মঙ্গলযন্ত্র খোদাই করা সমেত একটা পুজোর ডালি নিয়ে উপরে উঠে এলাম অনেক অনেক সিঁড়ি চড়ে। পুজো দেওয়া সেই ভুরজপত্র আজও রয়েছে আমার পুজো স্থলে।
আজ মঙ্গলবার ভাত পুজো চলছে। দেখলাম বেশ কিছুক্ষণ।
শিপ্রা নদীর ধারে এক মনোরম পরিবেশে মন্দিরটি।
রয়েছে তিন নদীর সঙ্গমে কালিয়াদহ palace ও সূর্য্যমন্দির। রয়েছে বিশাল নবগ্রহ মন্দির। রয়েছে এক 500 বছরের প্রাচীন অতিথিশালা, শুধুমাত্র সাধুদের জন্যই। দেখে নিলাম সেই সময়ের যন্তর মন্তর। অর্থাৎ সূর্য্য ঘড়ি। এখনো নির্ভুল সময় দিয়ে চলেছে।
এগুলো নিয়ে পরে বলব আবার, এই লেখা অনেক lengthy হয়ে গেছে।
বিকেলে ফিরে এলাম যখন মন্দিরে ঢুকে আরতি দেখা হল।
এবারে একটু খাবার কি পাওয়া যায় দেখে নেওয়া যাক। খুব সুন্দর ভুট্টার আটার রুটি আর সর্ষে সাগের সবজি পাওয়া যায়। খুব tasty।
পাবেন মারাঠি পাঞ্জাবী রাজস্থানী গুজরাটি থালি। সব কটি অনবদ্য, আমরা প্রতিদিন এক একটি থালি taste করে দেখেছি।
গরম গরম দুধ আর গরম জিলিপি খেয়ে দেখুন এক অদ্ভুত combo। কি স্বাদ। সারি সারি দোকান শুধুই গরম দুধের। আর জিলিপির। আমাদের অনভ্যস্ত চোখে বিশ্বাস করা কঠিন যে দুধ খায় মানুষ দোকানে line দিয়ে।
রয়েছে পর পর সিদ্ধির দোকান, বরফ ঠান্ডা দুধ আর ক্ষীর এর সাথে সেবন চলছে।
ক্ষীর প্যাড়া সন্দেশ বেসনের লাড্ডু খেয়ে দেখতে পারেন। খুব ভালো লস্যি পাওয়া যায় আর অনেক রকমের variety।
আমরা এক নতুন জিনিস খেলাম সাবু দানা খিচুড়ি। বেশ কিছু দোকান রয়েছে। সাবুদানা কে টমেটো চানাচুর ধনেপাতা লঙ্কা নুন মসলা দিয়ে মেখে দিল। অন্যরকম স্বাদ। অনেকটা মসলা মুড়ির মত।
আপাতত এই। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না।
নাম শুনলেই শরীরে যেন এক অদ্ভুত রোমাঞ্চ বয়ে যায়। কত যে পুরানো শহর কেউ জানে না। প্রাগৈতিহাসিক শহর ও বলা যায়।
পুরানে রয়েছে উল্লেখ। রয়েছে মহাভারতে। তখন অবনতি রাজ্যের রাজধানী ছিল অবন্তিকা, যা আজকের উজ্জইনি। এক সমৃদ্ধ নগর। ব্যবসা বাণিজ্য শিক্ষা সংস্কৃতির মূল পীঠস্থান ছিল দীর্ঘদিনের।
শরদিন্দু বাবুর লেখা কালিদাসের ওপর লেখা রচনাটি পড়ে মন যেন উজ্জ্যইনিতেই আটকে রয়ে গেছে।
এমন এক জায়গায় যাব ভেবেই মন যেন আর অপেক্ষা করতে চাইছিল না। সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একদিন চেপে বসলাম শিপ্রা এক্সপ্রেসে। আমি আর বাবা এসেছিলাম প্রথম বার। পরে আরেকবার এসেছিলাম পুরো mp ঘোরার সময়।
স্টেশন থেকে অটো নিয়ে চলে এলাম মন্দিরে। মহাকাল মন্দির। দ্বাদশ জ্যোতিরলিঙ্গ এর মধ্যে অন্যতম। বিশাল মন্দিরের একদম উপরে পতাকা। কি অসাধারণ দৃশ্য।
এই মন্দির 12 শতাব্দীতে মুসলিম আক্রমণে নষ্ট হয়েছিল। সোনা হিরে জহরত আর অন্যান্য মূল্যবান জিনিস লুট হয়েছিল প্রায় 6 মাস ধরে। মন্দির ধ্বংস হয়ে অগোচরে চলে যায় 500 বছর। তারপর 17 শতাব্দীতে হয় আবার নতুন করে।
মন্দিরের একদম নিচের তলায় রয়েছেন মহাকাল। মাঝে অমকারেশ্বের। উপরে নাগেশ্বর। নাগেশ্বর মন্দিরের দরজাটা খোলে শুধু নাগ পঞ্চমীর দিন। অমকারেশ্বর দর্শন করে চলে গেলাম নীচে মহাকাল দর্শনে।
তিনটে লিঙ্গ একের উপরে আরেক করে তিনটি তলায় অবস্থিত।
স্নান করে এসেছি পুজো দেব বলে। দুধ ডাবের জল আর ফুল নিয়ে, অপেক্ষা করে আছি। পুজো শেষ হলে তবেই করতে পারব সমর্পণ। এত বিখ্যাত জ্যোতিরলিঙ্গ কিন্তু সবাই নিজের হাতে করতে পারবে পুজো। খুব ভালো ব্যাবস্থা। পুজো দিয়ে মন ভালো হয়ে গেল। এটা গেল প্রথম বারের কথা।
এবারে আসছি দ্বিতীয় বারে। দেখি মন্দির ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ব্যারিকেড ঘুরে ঘুরে যাওয়া। ভেতরে আলাদা দুধের চ্যানেল আর জলের। চ্যানেল করে সেই দুধ জল চলে যাবে আর হবে সমর্পণ। আর নেই কাছে গিয়ে মাথা ঠেকার সুযোগ। যা হবে দূর থেকে। মনটা একটু খারাপ হল ঠিকই। কিন্তু যা ভীড় দেখছি, এমন না হলে সম্ভব হবে না ভীড় নিয়ন্ত্রণ।
মন্দির চত্ত্বরে রয়েছেন গণেশ দেব আর ঋদ্ধি সিদ্ধি। এখানে মানত করলে কেউ ফেরে না। তাই আশেপাশের গাছে রয়েছে অজস্র চুনরি আর লাল সুতো, কত জনের মনের ইচ্ছা নিয়ে ঝুলে রয়েছে। রয়েছেন হনুমান জী। রয়েছে আরেকটি শিব মন্দির। মাঝখানে বিশাল জলকুন্ড।
রয়েছে বিশাল বোর্ড তাতে লেখা মহা মৃত্যঞ্জয় মন্ত্র।
আর তার মহিমা বর্নন। অকালমৃত্যু যোগ, দিঘদিনের অসুস্থতা যোগ, পক্ষাঘাত, দুর্ঘটনা যোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই মন্ত্র খুব সিদ্ধ।
জনশ্রুতি বেশ কিছু কোমায় আচ্ছন্ন মানুষকে হেডফোনে মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র শুনিয়ে অনেক উন্নতি লক্ষ করা গেছে। শব্দই ব্রহ্ম। পুরো মন্দির জুড়ে বাজছে সেই মহামন্ত্র।
মন্দির চত্ত্বরে অনেক গাছ। বসে থাকতে খুব সুন্দর লাগে। সন্ধ্যের পর অনেকেই এসে বসে। এক স্বর্গীয় পরিবেশ। শান্তির আবহাওয়া। আমরাও বসে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ।
পরের দিন ভোরে হাজির আমরা। তখন সাড়ে তিনটে। চারটার সময় শুরু হল ভস্ম আরতি। সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখে গেলাম।
এই ভস্ম আসে পাশের শ্মশান থেকে। একদম গরম আর তাজা ভস্ম, তাজা ভস্ম ছাড়া হয়না এই আরতি। ভস্ম যা শিবের অঙ্গ-ভূষণ, তার থেকেই জীবন আর তাতেই সমাপ্তি।
মন্দির দেখে বেরিয়ে এলাম। পাশেই রয়েছে বড় গণেশ। এক বিশাল গণেশ। হাতে লাড্ডু আরেক হাতে অভয়মুদ্রা।
তার পাশেই মন্দিরে পঞ্চমুখী হনুমান। পুরোটাই ধাতুর। রয়েছেন শিব পার্বতী। নন্দী।
উল্টোদিকে রয়েছে বিপলবিদের গোপন আশ্রয়স্থল। meeting আর থাকার জন্য এক বহু পুরোন বাড়ী। মহাকাল মন্দিরের ঠিক পেছনে। বিশাল পুরোন অট্টালিকা কিন্তু এখনো বেশ ভালো অবস্থায়। নাহ mp govt বেশ ভালো পরিচর্যা করে চলেছে আমাদের অগ্নিযুগের ইতিহাস স্মারকটির।
একটু এগিয়ে এলেই হরসিদ্ধি মন্দির। তান্ত্রিক দেবী। পার্বতী দেবীর আরেক রূপ। বত্রিশ সিংহাসন খ্যাত রাজা বিক্রমাদিত্য এর পূজিত দেবী।
কথিত আছে রাজা অমাবস্যার দিনে গভীর রাতে এসে পুজো করতেন আর পুজোর শেষে নিজের মাথা নিজের হাতে কেটে করতেন দেবীর পায়ে অর্পণ। প্রতিবারই দেবীর আশীর্বাদে সেই কাটা মাথা লেগে যেতে জোড়া। এই দেবীর আশীর্বাদে তিনি লাভ করেন বত্রিশ সিংহাসন। আর হয়ে উঠেন অপরাজেয় এক সম্রাট।
শোনা যায় তার সময়ে রাজত্ব সুদূর সৌদি আরব থেকে ব্রহ্মদেশ অবধি বিস্তৃত ছিল। বর্তমান মক্কার কাছে পাওয়া তার সময়ের এক তামার plate এর থেকে একথা জানা যায়।
পেছনেই শিপ্রা নদীর ঘাট। সেই ঘাটে স্নান করে রাজা বসতেন পুজোয়। মন্দিরের সামনে বিশাল দুটি বাতিস্তম্ভ। প্রায় 15 ft উঁচু। অসংখ্য বাতি লাগাবার জায়গা। জ্বালিয়ে দিলে বহু দূর থেকে দেখা যায়। তখন এই জায়গাটা ছিল শ্মশান।
নাহ এরপরে আর হেঁটে দেখা আর সম্ভব নয়, করে নিলাম একটা অটো ভাড়া। 300 টাকা নেবে সমস্ত জায়গা ঘুরিয়ে দেবে।
কিছুটা দূরে নদী সঙ্গম স্থলে রয়েছে সিদ্ধবট, সেই বটগাছ যেখান থেকে প্রেত বেতালকে উনি ধরে আনতেন। বত্রিশ সিংহাসন গল্পে আমরা আসলে এই বেতালের কথাই শুনে থাকি। রাজা বিক্রমাদিত্য নিজেও ছিলেন বেতালসিদ্ধ নামে এক গুপ্ত বিদ্যায় পারদর্শী।
রাজা বিক্রমাদিত্য যখন আছেন এখানে, তাহলে আছেন ওনার নবরত্ন সভার অন্যতম সদস্য সভাকবি কালিদাস।
দেখতে এসেছি গড়কালিকা মন্দির। আগে এই মন্দির ছিল রাজার গড়ের মূল মন্দির। এখন আর নেই সেই গড় অর্থাৎ কেল্লা। রয়েছে শুধু মন্দির টি।
মূর্খ কালিদাসের আন্তরিক প্রার্থনায় কাতর হয়ে কালিকাদেবী ওনাকে দেন আশীর্বাদ। মাতা সরস্বতীর দর্শন প্রাপ্ত হন আর মূর্খ কালিদাস হয়ে উঠেন মহাকবি কালিদাস। সংস্কৃতে লেখেন মেঘদূতম নামে কালজয়ী রচনা। এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক রচনা।
আর একটু যেতেই পেয়ে গেলাম রাজা ভর্ত্রীহরির তপস্যার জায়গা। রাজা বিক্রমাদিত্য এর বড় ভাই। রাজত্ব ছেড়ে দিয়ে ইনি তপস্বী হন। গুরু গোরক্ষনাথ এর আশীর্বাদে উনি কঠোর তপস্বী হয়ে যান। গুহাটি মাটির নিচে অবস্থিত। আর অত্যন্ত নিচু। গুহার দ্বারের দুইপাশে বেশ কিছু সাধু রয়েছেন। এনারা নাথপন্থী সাধু। এদের প্রিয় জায়গা ও তপস্থল। ভর্ত্রীহরিও ছিলেন নাথপন্থী সাধু।
পুরোটাই পাথরের। পাথরের পিলার পাথরের বিম পাথরের মেঝে। বেশ বড়ই। এক কোনে রাজা ভর্ত্রীহরির সাধনার আসন। উপরের বিম টি অদ্ভুত ভাবে মাঝখানে ভাঙা আর রার মাঝে একটি বেশ বড় মাপের হাতের পাঞ্জার ছাপের মত হয়ে রয়েছে।
জনশ্রুতি ভর্ত্রীহরির 12 বছরের কঠোর তপস্বায় ভীত হয়ে ইন্দ্রদেব ছোড়েন বজ্র। সেই বজ্র বিম ফাটিয়ে দিয়ে ভর্ত্রীহরির মাথায় এসে পড়ার মত হয়। তপস্যারত রাজা সাথে সাথে বামহাতে সেই জায়গাটি চেপে ধরেন আর ফলাফল হিসেবে বিমটি ওখানেই রয়ে যায় আর বজ্রের আঘাতে বামহাতটি কালো হয়ে যায়। বামহাতে ওই বিমটিকে ধরা অবস্থায় আরো 12 বছর তপস্যা করে যান ভর্ত্রীহরি। তারপরে কঠোর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে ইন্দ্রদেব ওনাকে দেন আশীর্বাদ।
এরপাসেই নাথ সাধুদের একটি আশ্রম রয়েছে। সেই আশ্রমে বেশ কিছু বাঁধানো বেদী রয়েছে। সেই বেদীগুলোর নীচে লেখা রয়েছে। পরে জানলাম এগুলো আসলে এক একজন সাধুর জীবন্ত সমাধি স্থল। অর্থাৎ একটা সময়ের পরে সাধুরা গর্ত খুঁড়ে সশরীরে তপস্যারত অবস্থায় মাটির মধ্যে থেকে যান আর শিষ্যরা তার উপরে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেন।
অদ্ভুত ব্যাপার নিজের চোখ কান কে বিশ্বাস করা মুশকিল।
প্রসঙ্গত বলে রাখি গুরু গোরক্ষনাথ এর শিষ্যদের নাথপন্থী বলা হয় আর গোর্খা যারা তারাও ওনার শিষ্য। বিশ্বের সেরা অপরাজেয় আর ভয়ঙ্কর সৈন্যদল হল এই গোর্খা।
চলুন এবারে শ্রীকৃষ্ণ গুরু সন্দীপনি মুনির আশ্রম। আশ্রম চত্ত্বরে এক বিশাল শিবলিঙ্গ তার ওপর খোদাই করা এক নাগ। যাদের কালসর্প দোষ আছে তাদের জন্যে এই শিবলিঙ্গ পুজো করা খুব আবশ্যিক। জনশ্রুতি একটি বেলপাতা থেকে এই শিবলিঙ্গ সৃষ্টি করেন সন্দীপনি মুনি নিজের তপবলে।
ঘেরা এক জায়গায় রয়েছে সন্দীপনি মুনি আর শ্রীকৃষ্ণ বলরাম সুদামা আর বসার জায়গা। মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি কুন্ড। সেই গোমতী কুণ্ডে বিভিন্ন তীর্থস্থান থেকে এবং গোমতী নদীর জল এনে ভরে দেন তিন শিষ্য আর স্নান করেন বয়স্ক গুরু। এটাই গুরু দক্ষিণা।
একটু মনঃসংযোগ করলেই মনসচক্ষে দেখতে পাবেন ছোট্ট শ্রীকৃষ্ণ বলরাম সুদামা তিনজন পড়তে বসেছেন আর এক গুরুগম্ভীর ঋষি সন্দীপনি পড়িয়ে চলেছেন এক প্রাচীন মনরোম গুরুকূলে।
এবারে যাওয়া যাক কালভৈরভ মন্দির। কালো গেট হয়েছে দেখছি আগের বাড়ে ছিল না। মন্দির ও দেখছি বেশ বাঁধানো। হয়েছে গেস্ট হাউস। সবে মিলে এক ঝকঝকে বেপার।
কোন এক অসুরের উপদ্রবে বিরক্ত হয়ে কপালের ঘাম থেকে জন্ম দেন কালভৈরভ এর। সেই কালভৈরভ অসুরকে সংহার করে কিন্তু প্রচন্ড খিদে য় একে একে খেতে থাকে সংসারের নানা সৃষ্টি। শেষে শিব শঙ্কর ত্রিশূল চেপে দেন কালভৈরভ এর মাথায়। মাটিতে চাপা পড়ে যায় কালভৈরভ। শুধু মাথাটুকু উপরে রয়ে যায়।
বিশাল বড় মুখ কালভৈরভ এর। শুধু দুই চোখ আর হাঁ মুখ যাচ্ছে দেখা।
প্রসাদ বলতে এখানে মদ। দেশি বিদেশি কোনতেই নেই অরুচি। পূজারী কে দিলাম বোতল। একপাত্রে মদ ঢেলে দিলেন অর্ধেক টা। বললাম পুরোটাই ঢেলে দিতে। পুরোটা ঢেলে পাত্রটা কালভৈরভ এর মুখে ধরতেই চলে গেল ভেতরে। যেন চুমুক দিয়ে খেয়ে নিলেন। খালি বোতল ঝাঁকিয়ে 2 4 ফোঁটা প্রসাদ গ্রহণ করলাম। আরও অনেক ভক্ত এসেছে বোতল নিয়ে। দেখলাম একের পর এক পাত্র খালি হতে।
মন্দির চত্ত্বরে বোর্ড
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির-
মাটির নিচে 50 60 ft খুড়েও কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি, এত মদ কোথায় যাচ্ছে।
প্রতিদিন প্রায় 3 4 হাজার লিটার মদ খাচ্ছেন কালভৈরভ, সেই অনাদি অনন্ত কাল থেকে।
কোন toxication নেই কোথাও। না কোন গন্ধ না হলে কোন স্বাদ।
মন্দিরের জল খেয়ে দেখলাম, না কোন কিছু নেই একদম স্বাভাবিক।
এবারে চলল অটো। গন্তব্য মঙ্গলনাথ মন্দির। এই মন্দির কর্কটক্রান্তি রেখার উপর অবস্থিত।
মঙ্গলগ্রহের জন্মস্থান।
প্রাচীন গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধি ও জ্যোতিষ চর্চার পীঠস্থান ছিল এই মন্দির।
রাজা বিক্রমাদিত্য এর সময়ে এখানে ছিল একটি মানমন্দির।
যাবতীয় মঙ্গলদোষের কাটান ও হয় এখানে। হয় ভাত পুজোর মাধ্যমে। একমাত্র মন্দির যেখানে হয় ভাত পুজো। শোনা যায় অভিষেক ঐশ্বরিয়া এর মঙ্গলদোষের খন্ডন এখানে হয়েছিল।
মন্দির অনেকটা উপরে। রাস্তার দুধারে অনেক দোকান। নারকেল জবা ফুল আর ভুরজপত্রে মঙ্গলযন্ত্র খোদাই করা সমেত একটা পুজোর ডালি নিয়ে উপরে উঠে এলাম অনেক অনেক সিঁড়ি চড়ে। পুজো দেওয়া সেই ভুরজপত্র আজও রয়েছে আমার পুজো স্থলে।
আজ মঙ্গলবার ভাত পুজো চলছে। দেখলাম বেশ কিছুক্ষণ।
শিপ্রা নদীর ধারে এক মনোরম পরিবেশে মন্দিরটি।
রয়েছে তিন নদীর সঙ্গমে কালিয়াদহ palace ও সূর্য্যমন্দির। রয়েছে বিশাল নবগ্রহ মন্দির। রয়েছে এক 500 বছরের প্রাচীন অতিথিশালা, শুধুমাত্র সাধুদের জন্যই। দেখে নিলাম সেই সময়ের যন্তর মন্তর। অর্থাৎ সূর্য্য ঘড়ি। এখনো নির্ভুল সময় দিয়ে চলেছে।
এগুলো নিয়ে পরে বলব আবার, এই লেখা অনেক lengthy হয়ে গেছে।
বিকেলে ফিরে এলাম যখন মন্দিরে ঢুকে আরতি দেখা হল।
এবারে একটু খাবার কি পাওয়া যায় দেখে নেওয়া যাক। খুব সুন্দর ভুট্টার আটার রুটি আর সর্ষে সাগের সবজি পাওয়া যায়। খুব tasty।
পাবেন মারাঠি পাঞ্জাবী রাজস্থানী গুজরাটি থালি। সব কটি অনবদ্য, আমরা প্রতিদিন এক একটি থালি taste করে দেখেছি।
গরম গরম দুধ আর গরম জিলিপি খেয়ে দেখুন এক অদ্ভুত combo। কি স্বাদ। সারি সারি দোকান শুধুই গরম দুধের। আর জিলিপির। আমাদের অনভ্যস্ত চোখে বিশ্বাস করা কঠিন যে দুধ খায় মানুষ দোকানে line দিয়ে।
রয়েছে পর পর সিদ্ধির দোকান, বরফ ঠান্ডা দুধ আর ক্ষীর এর সাথে সেবন চলছে।
ক্ষীর প্যাড়া সন্দেশ বেসনের লাড্ডু খেয়ে দেখতে পারেন। খুব ভালো লস্যি পাওয়া যায় আর অনেক রকমের variety।
আমরা এক নতুন জিনিস খেলাম সাবু দানা খিচুড়ি। বেশ কিছু দোকান রয়েছে। সাবুদানা কে টমেটো চানাচুর ধনেপাতা লঙ্কা নুন মসলা দিয়ে মেখে দিল। অন্যরকম স্বাদ। অনেকটা মসলা মুড়ির মত।
আপাতত এই। কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না।