ছুঁয়ে এলাম ইতিহাস ( রাজগীর ভ্রমণ)
+++++++++++++++++++++++++++++++
[You must be registered and logged in to see this link.]
ছুঁয়ে এলাম ইতিহাস ( রাজগীর ভ্রমণ)
………………………………………………………..
ভ্রমণপিপাসু বাঙ্গালির কাছে রাজগীর এক পরিচিত নাম। পাঁচটি পাহাড় দিয়ে ঘেরা রাজগীরের ইতিহাস আজকের নয়। বৈভার, বিপুল, রত্নগিরি, উদয়িগিরি, শোনগিরি-চক্রাকারে এই পাঁচটি পাহাড় দ্বারা পরিবেষ্টিত রাজগীর ছিল সেই সময়কালে ভারতের এক সমৃদ্ধ নগর। মগধরাজ জরাসদ্ধের রাজধানীও ছিল এই রাজগৃহ। কথিত আছে এই রাজগীরেই মহাভারতের দ্বিতীয় পাণ্ডব ভীমের হাতে মৃত্যু ঘটে জরাসন্ধের। গৌতম বুদ্ধও বুদ্ধগয়ায় বোধিলাভ করে এই রাজগৃহে এসে উপস্থিত হন।
আমরা গয়ার মানপুর বাসষ্টযান্ড থেকে বিকেল 4:15 এর সময় 120 টাকা দিয়ে টিকিট কেটে রাজগীর গামী AC বাসে উঠে জানালার ধারে বসলাম।ছোট ছোট পাহাড়ের বুকচিরে রাস্তা দিয়ে বাস ছুটে চলল,জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক সোন্দর্য দেখতে দেখতে সূর্যিমামা বিদায় নিলেন।2 ঘন্টা পর অবশেষে রাজগীর ।
পরেরদিন সকালবেলা মিশনের প্রাত:প্রার্থনা সেরে পায়ে হেটে দেখালাম Naulakkha Jain Temple,অসাধারন স্থাপত্যর নিদর্শন,তার পর Digambar Jain Temple ও Barmis Buddha Temple এর পর প্রাত:রাশ করে নিয়ে টাঙ্গায় চড়ে রওনা দিলাম রাজগীরের দর্শনীয় স্থানগুলির উদ্দেশ্যে।
প্রথমে বেণুবন। আসলে বাঁশবন কিন্তু বাঁশগুলি সুগন্ধি। কথিত আছে, রাজা বিম্বিসার প্রথম এই স্থানটিই বুদ্ধদেবকে দান করেছিলেন তার ধর্মচর্চার জন্য। বুদ্ধের মহত্বেই কিনা জানিনা দেখলাম, বন্য জীবদের এখানে যথেষ্ট লালিত্য।
আমাদের পরের গন্তব্য হল 'মনিয়ার মঠ' । এখানে একটা বৌদ্ধ স্তূপের মত আছে । তবে অন্য স্তূপের সঙ্গে এর পার্থক্য হল এর ভেতরটা ফাঁপা । এর দেওয়ালে বুদ্ধের কিছু ছবি আছে । এছাড়া এখানে হিন্দু নাগদেবীরও অবস্থান আছে বলে মনে করা হয় । জায়গাটায় দেখার সেরকম কিছু নেই আর সবটা দেখতে মিনিট পনেরোর বেশি লাগে না ।
দ্বিতীয় গন্তব্য হল 'সোনা ভান্ডার' । টাঙ্গাকে একই জায়গায় দাঁড় করিয়ে রেখে মনিয়ার মঠ থেকে ভেতরের দিকের রাস্তা দিয়ে আরও ৬৫০ মিটার হেঁটে গেলে দেখতে পাওয়া যায় একটা অনতিউচ্চ পাহাড় । এই পাহাড়ের নামই 'সোনা ভান্ডার' । এর ভূ-তাত্বিক বৈশিষ্ট্য হল এর মধ্যে দু'টো বেশ বড় ফাঁকা ঘরের মতো আছে আর এই পুরো ব্যাপারটাই একটামাত্র বড় পাথর কেটে তৈরি । মনে করার হয় এটা আসলে রাজা বিম্বিসারের স্বর্ণভান্ডারের প্রবেশপথ । এর দেওয়ালে শঙ্খলিপিতে কিছু লেখা আছে যেটা আসলে সেই স্বর্ণভান্ডারে প্রবেশ করার সংকেত । তবে আজ পর্যন্ত্য সেই লিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি আর তাই বিম্বিসারের স্বর্ণভান্ডারও অধরাই থেকে গেছে ! (তবে সবার জন্য অধরা নয়, অচেনা লিপির পাঠোদ্ধার করে ব্যাগে যতটা ধরে ততটা সোনা আমি নিজে নিয়ে এসেছি, কাউকে দেব না !)
তৃতীয় গন্তব্য হল 'বিশ্ব শান্তি স্তূপ' - রাজগীরের লোক্যাল সাইট সিয়িং-এর সবথেকে উল্লেখযোগ্য জায়গা । শান্তিস্তূপটা গৃধকূট পাহাড়ের ওপরে আর পাহাড়ে ওঠার জন্য রোপ-ওয়ে চলে । এই রোপ-ওয়ে সম্পর্কে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে এটা নাকি চারদিক খোলা । এটা একটা ভুল তথ্য - এগুলো বলতে গেলে চারদিকটাই ঘেরা । তবে এর একটা বৈশিষ্ট্য হল এর একটায় একজনই উঠতে পারে আর এগুলো চলার পথে কখনও থামে না । অর্থাৎ চলন্ত রোপ-ওয়েতে উঠতে হয় যদিও সেটার গতি এতটাই কম যে উঠতে কোনও অসুবিধে হয় না । এই রোপওয়েতে ওঠার টিকিট ১০০/- টাকা করে যদিও আমরা এতে উঠিনি । সামনে প্রায় ২০০ - ২৫০ জন লোকের লাইন, উঠতে গেলে ঘন্টা দু'য়েক এখানেই কেটে যাবে, তাই আমরা শান্তিস্তূপ দেখার ইচ্ছে ত্যাগ করলাম । তাছাড়াও আছে সিমেন্ট বাঁধানো সিঁড়ির ব্যবস্থা। পাহাড়ের মাথার কাছকাছি গিয়ে সিঁড়িটি দুদিকে বেঁকে গেছে। ডানদিক ধরে গেলে পৌঁছানো যায় গৃধকূটে। এখানের গুহাতেই বুদ্ধদেব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সাধনা করতেন।
এবার ফেরার পথ ধরলাম । ফেরার পথে দেখার জায়গা 'বিম্বিসার জেল' । এখানে রাজা বিম্বিসারকে তাঁর ছেলে অজাতশত্রু বন্দী করে রেখেছিল । এই জায়গাটা বিম্বিসার নিজেই পছন্দ করেছিলেন বন্দী থাকার জন্য । এখান থেকে গৃধকূট পাহাড় সরাসরি দেখা যায়, তাই বিম্বিসার এখানে থেকে ভগবান বুদ্ধকে প্রতক্ষ্য করতে চেয়েছিলেন । বিম্বিসার জেল এখন সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রায় । এখন একটা জেলের পাঁচিলের শুধুমাত্র নিচের অংশটা রয়েছে । এখানে মিনিট দশেক কাটিয়ে আমরা আবার ফেরার পথে চলতে শুরু করলাম ।
এবার মেইন রাস্তাটা ছেড়ে আমরা অন্য আরেকটা রাস্তা ধরলাম । এই রাস্তার পাশে নবনির্মিয়মান নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল দেখা গেল । কিছুদূর চলার পরে পড়ল একটা মিউজিয়াম - এটা একটা জৈন মিউজিয়াম । বিহারের ইতিহাস গৌতম বুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে মহাবীরের জন্যও বিখ্যাত, এখানে মহাবীরেরও নানারকম সৌধ আছে । এই জৈন মিউজিয়ামে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়, মূল্য ২০/- টাকা । এখানে মিউজিয়ামের ভিতরে ক্যামেরার ব্যবহার নিষিদ্ধ । মিউজিয়ামটা খুবই সুন্দর - মহাবীরের এবং আরও কিছু জৈন বিখ্যাত লোকেদের জীবনের নানারকম বিখ্যাত ঘটনাকে মডেলের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে ।
এর পর আবার মিশনে ফিরে এলাম।পরের গন্তব্য নালন্দা ও পাওয়াপুরি .........