Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya Emptyইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
ইতিহাসের পথে পথে
++++++++++++++++++
রাজগীর - নালন্দা - গয়া - বুদ্ধগয়া -  ( ১ )
+++++++++++++++++++++++++++++++
[You must be registered and logged in to see this link.]

বাঙালী কি আর সে বাঙালী আছে?  
নরেন, অরবিন্দ,  সুভাষের কথা বাদই দিলাম, নিদেনপক্ষে বিনয়-বাদল-দীনেশ, ক্ষুদিরাম- প্রফুল্ল চাকী কি মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা বা মাতঙ্গিনী হাজরা - আহা কি সব নাম। শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে আপনি।  
আর আজকাল?  
বিশ্ববখাটে, সবজান্তা, বাইরে শেয়াল - ঘরে ইঁদুর, মেনীমুখো বাঙালীতে দেশ ভর্তি।  এমনকি - রইল ঝোলা - চলল ভোলা টাইপও বিরল।  
দেখুন দেখি,  শুরু করলাম বেড়ানোর গল্প দিয়ে আর এসব কি হাবিজাবি লিখছি!!
আসলে হল কি,  একই সময়ে দুটো প্রোগ্রাম পড়ে গেলে যা হয় আরকি!  একটা ক্লাবের বাৎসরিক পিকনিক আরেকটা ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে ছেলেবেলার সেই জায়গায় গিয়ে স্মৃতির পাতা ওল্টানো।  ভেবেছিলাম পিকনিকটা সেরে একদিন পরে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দেব। কিন্তু ভাবলেই তো হবেনা,  খচ্চা আছে।  
আরে ধুসস্ মশাই, আর্থিক খরচা নয়। এ অন্য জিনিষ। পৃথিবীর সবথেকে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। বলছি শুনুন তবে। প্রোগ্রামগুলো শুনেই গিন্নী গেলেন চটে। কি?  সবই তোমার প্রোগ্রাম?  আমি কি ফ্যালনা?  আমার কি সখ আহ্লাদ থাকতে নেই? ইত্যাদি প্রভৃতি সাতসতেরো। সঙ্গে পেয়ে গেলেন আমার আরও দুটো বন্ধুর স্ত্রীদের। ব্যস, আর যায় কোথা?  চলো, আমরা ওইসময়েই যাব অন্য কোথাও। তা যাওনা কেন? কে বারণ করেছে?  
ইল্লি আরকি?  তোমরা না গেলে মালপত্র বইবে কে? ঘর, খাওয়া, ঘোরা - এসব কে করবে?
বোঝো!!
কুলি,  গাইড, ম্যানেজারের কম্বিনেশন কাজ  বেচারা স্বামী নামক আসামী ছাড়া আর কে করবে?  
তারমানে এই নয় যে তাঁরা নিজেরা এসব পারেন না। কিন্তু ঘোড়া দেখলে -
থাকগে!  আর কথা বাড়িয়ে কাজ নেই। আমাকেও তো, মানে,  হুঁ হুঁ,  এখানেই মানে, ওই আর কি,  বাড়িতেই থাকতে হবে। আর জলে থেকে কুমীরের -- না, না,  মাক্কালী, বলতে চাইনি। সিলিপ অফ টাং!!

তো ঠিক হল কাছাকাছির মধ্যেই কোথাও ঘুরে আসা হোক চার পাঁচদিনের জন্য।  বড়দিনের ছুটি চলছে। তারমধ্যেও অবশ্য টিউশন, কোচিং ইত্যাদি রয়েছে। সেসব ম্যানেজ করে ঝপাস করে টিকিট কেটে ফেলা হল দানাপুর এক্সপ্রেসে। তিন বন্ধুর ফ্যামিলি।  মোট দশ জন।  
২৩ ডিসেম্বর হাওড়া থেকে বক্তিয়ারপুর।  আর ফেরার টিকিট ২৭ তারিখ গয়া থেকে শিপ্রা এক্সপ্রেস।

হাওড়া থেকে এক বন্ধু তার ফ্যামিলি নিয়ে উঠল। আমরা উঠলাম ব্যান্ডেল থেকে।  ট্রেন ঠিকঠাক টাইমে চলছে।  বর্ধমান আসার আগেই খাওয়াদাওয়া সারা।  রুটি / লুচি,  পনীর / চিকেন, আর মিষ্টি তো থাকেই।  গুছিয়ে খাওয়ার পরেও রয়ে গেল অনেকটা করে। সব গোছগাছ করে চাদরটাদর পেতে শুয়ে পড়া হল।  আরেক বন্ধু তার ফ্যামিলি নিয়ে উঠবে আসানসোল থেকে।  বারোটার পর সে উঠতে ঘুমোনোর চেষ্টা। আমার তো রাত জাগা স্বভাব। বিশেষ করে সফরকালে।  
ট্রেন থামবে স্টেশনে-  টুক করে নেমে গিয়ে চারপাশটা ঘুরে আসব,  ইঞ্জিনটা গিয়ে দেখব কি মডেলের,  কোথাকার,  দুচারটে লোকের সঙ্গে আলাপ হবে, মাঝরাতে গরম চা খেয়ে ঠোঁট পুড়বে,  ট্রেন ছেড়ে দিলে দৌড়ে গিয়ে ওঠা -এসব না হলে আর বেড়ানো কিসের?

বেড়াতে যাওয়া ঠিক হওয়ার পর টিকিট কাটা যখন হয়ে গেল, তখন হোটেলের জন্য খোঁজ শুরু করলাম। পিক সিজন,  হোটেল পাওয়া একটু মুশকিল। যদিও রাজগীর বাঙালীর খুব পছন্দের তালিকায় পড়েনা, তাও হোটেলে ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই ভাব।  কয়েকটা হোটেল পেলামও। ১১০০/ ১২০০ টাকায় ডবল বেড।  ঠিক করার আগে বন্ধুদের জানালাম যখন, আসানসোলের বন্ধু বলল - আমার খাস বন্ধুর বাড়ি রাজগীরে। ও ওখানেই আছে, আমি বলে দিচ্ছি, ও নিজে গিয়ে হোটেল ঠিক করে আসবে সব দেখেশুনে। তুই চাপ নিসনা একদম। কাজেই আমি হোটেল খোঁজায় ক্ষ্যান্ত দিলাম।  

টিকিটটাও আরেক বন্ধু কেটেছিল।  সে আমাকে জানানো মাত্রই বলেদিলাম - তুই কেটেনে আগে। তারপর ফোন কর। কাজেই টিকিটটা আরামসে হয়ে গেছিল।
হোটেলটা যে এতটা ভোগাবে বুঝিনি আগে।
একদম শেষ মুহুর্তে জানাল, হোটেল পাওয়া যাচ্ছেনা। সব বুকড।  দুএকটা আছে। সেটাও ২২০০/ ২৫০০ চাইছে।  
এত গালাগাল করলাম বাকি দুজন বন্ধুতে। তাও তার কোনো হেলদোল নেই। বলে কি ওই বন্ধুটার বাড়িইতো আছে। ওখানেই থেকে যাব নাহয়।
এতগুলো লোক কারুর বাড়িতে গিয়ে থাকব, হয় নাকি?  তারপর আরও নানারকম সমস্যা আছে।
আবার হোটেল খোঁজা শুরু হল। তারপর কলকাতার সেই বন্ধু তার ট্র্যাভেল এজেন্টকে দিয়ে রাজগীরে দুদিন আর বুদ্ধগয়ায় দুদিন হোটেল বুক করল।

বক্তিয়ারপুরে যখন নামলাম তখন পৌনে পাঁচটা।  ট্রেন যখন প্ল্যাটফর্মে ঢুকছে তখন সবাই হুড়োহুড়ি করছে। এক বন্ধু বলল - দেখতো,  বক্তিয়ারপুর এল কিনা?  আমি নিশ্চিন্ত। ট্রেন পৌছোনোর কথা চারটে ছাপ্পান্নয় আর এখন চারটে চল্লিশ।
বললাম এটা নয় বুঝলি,  এর পরেরটা বক্তিয়ারপুর হবে হয়ত।  আসলে সারারাত জেগে সেই একটু চোখটা লেগে এসেছিল।
আশপাশের লোকজনের কথায় জানতে পারলাম এটাই বক্তিয়ারপুর। তখন হুড়োহুড়ি করে নামা। আর সেই হুড়োহুড়িতে গায়েদেওয়ার একটা চাদর রয়ে গেল বার্থে। আমরা নেমে পড়লাম। যখন মনে পড়ল, তখন ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।  আর কিছু করার নেই।

স্টেশন থেকে নেমে বেরিয়ে এলাম বাইরে। স্টেশনের বাইরে সারসার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। দানাপুর এক্সপ্রেস থেকে বক্তিয়ারপুরে নামার পর রাজগীর যাওয়ার একটা লোকাল ট্রেন আছে। কিন্তু তাতে আড়াই থেকে তিনঘন্টা সময় লাগে ৫৫ কিলোমিটার যেতে। সে ট্রেনের কোন তাড়া নেই। কেউ দাঁত মাজতে মাজতে হাত দেখালেও সে ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। সে লোক মুখচোখ ধুয়ে এলে ট্রেনও ছাড়ে  - এইরকম অবস্থা!!
তো আমরা গাড়িতেই যাব ঠিক করে এসেছিলাম। বাইরে বেরিয়ে এসে আগে চা খেলাম জমিয়ে। চা খেতে খেতেই আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলোর ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলছি ভাড়ার। ১৬০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১২০০ এমনকি ১০০০ টাকাতেও যাবে গাড়িগুলো। সুমো,  বোলেরো,  স্করপিও, ট্র্যাক্স গাড়ি সব। একটা গাড়িতেই সবার হয়ে যাবে।  গাড়ি ঠিক করে তাকে বলা হল। সে নিয়ে এল গাড়ি।  বড় একটা বোলেরো। কিন্তু অন্য একটা সমস্যা তৈরী হয়ে গেল জোর।

                                                 ( চলবে )

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
ইতিহাসের পথে পথে
++++++++++++++++++
রাজগীর - নালন্দা - গয়া - বুদ্ধগয়া - ( ২ )
+++++++++++++++++++++++++++++++

গাড়ি তো এলো। ড্রাইভার পেছনের দরজাটা খুলে স্যুটকেস, ব্যাগ সব ভরতে লাগল। আরে আরে, করো কি? করো কি? চেঁচিয়ে উঠতে তবে থামল ব্যাটা। ওখানে সব লাট করে দিলে আমরা বসব কোথায়? সামনে বসবেন, তার সোজা উত্তর।
ওরে ব্যাটা ভুত, ড্রাইভারের পাশে দুজন আর মাঝে চারজন, এই ছজন হল। বাকি চারজন কি কোলে বসবে? হ্যাঁ, বাচ্চাগুলোকে কোলে নিয়ে নিন।
বোঝো কান্ড!! আমার ছেলেটা নাহয় ছোটো, বাকি তিনটে তো বড়। ওদের কোলে নিয়ে ৫৬ কিলোমিটার যাওয়া যায়?
নামাও, নামাও, মাল নামাও। গাড়ির ছাদে ক্যারিয়ার নেই কেন? তোমার গাড়িতে যাবনা।

চলে গেল সেই গাড়ি। আমরা ক্যারিয়ার লাগানো গাড়ি খুঁজতে বেরোলাম। কি আশ্চর্য!! একটা গাড়িতেও ক্যারিয়ার লাগানো নেই। শালা ভুতের দেশ। ততক্ষণে এক বন্ধুর আবার হাগা পেয়ে গেছে। তার যখন তখন পায়। প্রায় পঁচিশ বছর পর গতবছর যখন আমরা মিট করলাম, ও সেদিন আসানসোল থেকে থেকে সকালে বেরিয়েছিল, সারাদিন, সারারাত আমরা আড্ডা দিয়েছি, তারপরের দিন সকালে যে যার বাড়ি । এই সময়কালে সে মাত্র সতেরোবার পায়খানা গিয়েছিল। তাতে তার খাওয়ায় ভাটা পড়েনি। দুবেলায় এককিলো মাংস মুরগি খাসি মিলিয়ে, তাছাড়া মাছ, ভাত, পোলাও, ডাল, তরিতরকারি, পনীর, চিকেন পকোড়া সব সমান তালে ঝেড়ে গেছে। তবে সে ছেলে খুব ভাল। আমরা হাজার গালাগাল দিতেও কিচ্ছু মনে করেনা।

কিন্তু ক্যারিয়ার লাগানো গাড়ি একঘন্টা খুঁজেও যখন পেলাম না তখন বাধ্য হয়ে একটা বড় গাড়ি নিয়ে কোলের ওপর মালপত্র বসিয়ে চললাম রাজগীরের দিকে। সবে সকাল হচ্ছে তখন। বক্তিয়ারপুরের দিকটা প্রায় সমতলভূমি। রাস্তার দুপাশে প্রচুর সবজি চাষ হচ্ছে। ধান তো আছেই। লোকজন রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েছে টুকটাক। মাঠ থেকে টাটকা সবজি সব রাস্তার ধারে এনে জড়ো করছে। শিশিরে ভেজা টাটকা সবজি। এত লোভ লাগছিল দেখে, মনে হচ্ছিল গাড়ি থামিয়ে দেখি। কিনি গুছিয়ে।
বহুকষ্টে লোভ সংবরণ করলাম।
বেশ খানিকটা যাওয়ার পর গাড়ি থামাতেই হল।

রাজগীর যাওয়ার পথে সিলাও বলে একটা জায়গা পড়ে। সেখানকার খাজা বিখ্যাত, ঠিক যেমন পুরীর। পুরীর খাজাটা লম্বাটে, জিভের মত চ্যাপ্টা আর সিলাওয়ের খাজা চৌকো, ফুলকো আর খাস্তা। রাস্তার ধারে সারসার খাজার দোকান। আমরা রাস্তার একপাশে গাড়ি দাঁড় করালাম। নামল কয়েকজন। আমি গোটা চারেক দোকানে একটা করে খাজা টেস্ট করলাম, তারপর যেটা ভাল মনে হল, এককিলো নিলাম। এত্তবড় একটা প্যাকেট হল আবার।
বাকিরা খাজা কিনছে, খাচ্ছে। আমি কয়েকটা খাজা নিয়ে এলাম যারা গাড়ি থেকে নামেনি তাদের জন্য। দিলাম। ঘুরে দাঁড়িয়ে দেখি একটা প্লেট নিয়ে সেই হেগোটা খাবার খাচ্ছে। আমাকে তাকাতে দেখে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল প্লেটটা।
হ্যাঁ রে, তোর না হাগা পেয়েছিল? আবার খাচ্ছিস?
ধুস, হাগা পেয়েছিল। এখন পায়নি। আর পেলেও বা কি, খাবনা?
অকাট্য যুক্তি। প্লেটে যদি টাটকা, হাতেগরম, তাজা লিট্টি, আলুচোখা আর ঝালঝাল চাটনি থাকে, বাকি সব কথা তখন বানের জলে ভাসিয়ে দেওয়াই যায়।
খেলাম গুছিয়ে। গিন্নীও খেল। আরও কেউ কেউ খেল। তারপর আবার চা খেয়ে গাড়ি ছুটল রাজগীরের পথে ।

রাজ গৃহ বা রাজার আবাস থেকে রাজগীরের নাম হয়েছে । ইতিহাস প্রসিদ্ধ নগরী। সেই কবেকার রাজা জরাসন্ধ, তার রাজধানী ছিল রাজগীর। বিম্বিসার - অজাতশত্রুর সময়েও মগধ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল রাজগীর। গৌতমবুদ্ধ, মহাবীর প্রভৃতি মহাপুরুষদের পদধূলি ধন্য এই নগর। ইতিহাস জড়িয়ে আছে পরতে পরতে এই শহরের সঙ্গে। মৌর্য্য, কুশাণ, গুপ্ত কত সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে এই শহর, এই অঞ্চলকে তিলে তিলে, ভাবলেই রোমাঞ্চ হয় শরীরে।

বৈভার, বিপুল, রত্নগিরি, উদয়গিরি আর শোনগিরি নামে পাঁচটা পাহাড় ঘিরে আছে রাজগীরকে। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই এই নগরের পত্তন। এছাড়াও বিস্তীর্ণ সমতলভূমি, মনোরম আবহাওয়া এই এলাকাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল তৎকালীন শাসকদের কাছে। বস্তুত পাটলিপুত্র নগরের স্থাপনা হওয়ার আগে রাজগীরই ছিল মগধ সাম্রাজ্যের বৃহত্তম নগর। সিদ্ধার্থ বোধিলাভের আগে এখানে আসেন। রাজা বিম্বিসার তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে এতই মুগ্ধ হন যে অর্ধেক রাজত্ব তাকে দেওয়ার মনস্থ করেন। সিদ্ধার্থ তাতে রাজি হননি কিন্তু বোধিলাভের পরে এখানে আসবেন বলেছিলেন । বুদ্ধগয়ায় সিদ্ধার্থ গৌতম বুদ্ধ রূপে পরিচিত হওয়ার পর এসেওছিলেন রাজগীরে। বহুদিন ছিলেন এখানে। ষোড়শ মহাজনপদের মধ্যে মগধের রাজা বিম্বিসারই প্রথম বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

একটা ইতিহাসপ্রসিদ্ধ জায়গায় গেলে আপনার মনে সেই এলাকাটার একটা ছবি ফুটে থাকবেই। যেমন ধরুন লালকেল্লা বা সোনার কেল্লা দেখতে যাবেন। কল্পনায় একটা দূর্গ ভেসে আসবে। সেইরকম কেরল গেলে ব্যাকওয়াটার্স, দার্জিলিংএ হিমালয়, পুরীতে সমুদ্র - এইরকম।
রাজগীর ঢোকার আগে যে ধারনাটা নিয়ে এগোচ্ছিলাম, সেটা একেবারে চুরমার হয়ে গেল ওখানে পৌছনো মাত্রই। একদম টিপিক্যাল বিহার। রাস্তায় কুকুর/ছাগল/গরু/মোষ চরে বেড়াচ্ছে, নোংরায় ভর্তি, ঘোড়ার গুয়ে পথ চলাই মুশকিল, ঘিঞ্জি এলাকা - সব মিলিয়ে প্রথমবার রাজগীর দর্শনে বিলকুল হতাশ। পরে অবশ্য হতাশা কেটে গেছিল নানা কারনে। সে সব গল্পও বলব।

যাইহোক, রাজগীরে চারমাথার মোড়ের কাছেই একটা হোটেল বুক করা ছিল। হোটেলে ঢুকে তো পুরো মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এত বাজে হোটেলে সারাজীবনে কোনদিন কোথাও থাকিনি। সব ওই হারামজাদা বন্ধুটার জন্য। কবে কথা বলে রেখেছিলাম হোটেলের সঙ্গে। ওরা ঘরের ছবিও পাঠিয়েছিল। কিন্তু সে সবসময় বলছে, আমার বন্ধু আছে, করে দেবে। পুরো ঝুলিয়ে দিল শেষে।
তেড়ে গালাগাল করছি আর সে ব্যাটা পায়খানায় চলে গেল হাসতে হাসতে।
বহু বলে কয়ে ঘর, বাথরুম পরিস্কার করালাম, চাদর, কম্বল ইত্যাদি পাল্টালাম।
গতকাল রাতের খাবারগুলো বেঁচেছিল, সেগুলো খেয়ে জলখাবার পর্ব শেষ হল।
তারপর বেরোলাম ভাল হোটেলের খোঁজে। খাবার হোটেলও খুঁজতে হবে।

অনেকগুলো হোটেল ঘুরলাম। যেগুলো ভাল, কোনটাতেই ঘর নেই। দুচারজন বন্ধু যারা এসেছে তাদেরকে ফোন করলাম। ওরা যে হোটেলগুলোয় থেকেছে, কোনটাই ফাঁকা নেই। কি আর করা যাবে? অনেকজায়গায় বেড়াতে গিয়ে তো ওয়েটিংরুমে বা রাস্তায় গাড়িতেই রাত কাটাতে হয়েছে। সেভাবেই কাটিয়ে নিতে হবে দুদিন।

তারপর খাব কোথায়, সেটাও খুঁজতে হবে। যে হোটেলেই যাই - আইয়ে দাদা, মছলি ভাত খাবে - এই বলে হাঁকডাক।
দেখাও তোমার রান্না। পছন্দ হলে খাব।
ডেকচি খুলে দেখে আর গন্ধ শুঁকে কোনটাই জুতের মনে হলনা। তেলে জবজব করছে ঝোল আর জিরে ও ধনে ভাজার একটা গন্ধ সবেতে। তারপর এক কলিগভাইয়ের কথা শুনে একটু খুঁজতেই পেলাম একটা ভাল খাবার হোটেল।

( চলবে )

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
ইতিহাসের পথে পথে
++++++++++++++++++
রাজগীর - নালন্দা - গয়া - বুদ্ধগয়া - ( ৩ )
+++++++++++++++++++++++++++++++

হোটেল খোঁজার ফাঁকে ফাঁকেই প্ল্যান ছকছি কি করে দুদিনের মধ্য কতটা ঘোরা যায় আয়েস করে। আমার কাছে বেড়ানো মানে গোটা এলাকাটার যত রকমের বর্ণ, গন্ধ, রস আছে তার সবটা না পারলেও যতটা পারা যায় চেটেপুটে খাওয়া। গেলাম, দেখলাম আর চলে এলাম, আমি এভাবে বেড়াতে ভালবাসিনা। সেই এলাকার পথে পথে ঘুরব, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলব, স্থানীয় খাবার খাব, তবে তো বেড়ানোটা উপভোগ্য হবে।
যাইহোক, হাজার ভাবনা চিন্তার পর ঠিক হল যে আজ যেহেতু আদ্ধেকটা দিন কেটেই গেল, আজ আর রাজগীর ঘোরা হবেনা। ঘোড়াওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, রাজগীর ঘুরতে সারাদিন লেগে যাবে।
তাহলে আজ বরং খেয়েদেয়ে নালন্দা আর পাওয়াপুরীটা ঘুরে আসি। কাল সকাল থেকে রাজগীর ঘুরব।

হোটেলে ফিরে স্নান করে সবাই মিলে গেলাম তৃপ্তি হোটেলে ভাত খেতে। আগেই টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়ে এসেছিলাম। একটা গাড়িও ঠিক করে ফেলেছি ঘোরার জন্য। খেয়ে উঠেই বেরিয়ে যাব।
তৃপ্তি হোটেলটা একজন মহিলা চালান। তিনি আবার কলকাতা পুলিশে ডি সি পি পদে ছিলেন একসময়। আন্তরিক ব্যবহার। খাওয়ার মানও বেশ ভাল। আমরা খেলাম ভাত, শুক্তো, মুগডাল, আলুভাজা, আলুপোস্ত আর পোনামাছ। ১৩০ টাকা মাত্র। পেটভরে খাওয়া। ভাত, ডাল, তরকারি যত খুশি। রাতের খাবারের অর্ডারটাও দিয়ে রাখলাম। হোটেলটা মাঝারি মানের। আমরা যেটায় আছি তার থেকে হাজারগুণে ভাল। কিন্তু ঘর ফাঁকা নেই।
খেয়ে উঠে মৌরি চিবোতে চিবোতে গাড়ি চেপে চললাম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে।

সেই নালন্দা, ছোটবেলায় ইতিহাস বইতে একটা স্তুপের ছবি দেখেছি আর এর ইতিহাস জেনেছি । আজ দেখব নিজের চোখে। এককালের পৃথিবী বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। কত জ্ঞানীগুণী মানুষ এখানে পড়েছেন, পড়িয়েছেন। শোনা যায় যে এখানে পড়তে আসা ছাত্রদের প্রথম পরীক্ষা নিতেন মূখ্য দ্বারপাল । তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে তবেই ভেতরে ঢোকার অনুমতি মিলত। পড়ার অনুমতি মিলত। না পারলে ফিরে যাও বাড়ি। পরে আবার তৈরী হয়ে এসো এখানে পড়তে।
ভাবা যায়!!
এখানকার একজন দ্বাররক্ষক ও কি পরিমানে শিক্ষিত ছিলেন তারমানে।

খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মৌর্য্য সম্রাট অশোকের সময়ে এই মহাবিহার প্রতিষ্ঠা হয়। পরবর্তীকালে ৬০০ খ্রীস্টাব্দে গুপ্তযুগের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এর সমৃদ্ধি শুরু। আরও পরে কনৌজের রাজা হর্ষবর্ধনের আমলে এই বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাতির শিখরে ওঠে। হিউয়েন সাংয়ের লেখায় আমরা সেইসময়ের নালন্দার কথা জানতে পারি। এখানে চীন, তিব্বত, জাপান, কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ থেকে ছাত্ররা পড়তে আসত। মূলত বৌদ্ধ মহাযান ও হীনযান গ্রন্থগুলো ছাড়াও, বৈদিক শিক্ষা, দর্শন, সংস্কৃত ব্যাকরণ, ভেষজ বিদ্যা ইত্যাদি পড়ানো হত।
১২০০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ বখতিয়ার খিলজি এই মহাবিহার লুন্ঠন ও ধ্বংস করেন।
তারপর ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যায় নালন্দার নাম। যেমন তক্ষশীলা, বিক্রমশীলা ইত্যাদিও আজ ধ্বংসস্তুপ।
১৯১৬ সাল নাগাদ এখানে খননকাজ শুরু হয় আর ১৯৫৬ সালে এটাকে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ বিভাগ জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। বর্তমানে এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

গাড়ির ভীড় প্রচুর। খানিকটা হেঁটে গিয়ে মূল জায়গায় পৌছলাম। বাঁদিকে নালন্দার ভগ্নস্তুপ আর ডানদিকে সেই স্তুপ খুঁড়ে পাওয়া জিনিষের মিউজিয়াম। আগে আমরা নালন্দার ভেতরটা ঘুরে দেখে এসে তারপর মিউজিয়ামটা দেখব ঠিক করলাম। কুড়িটাকা করে টিকিট জনপ্রতি। ১৫ র কম বাচ্চাদের ছাড়। টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম ইতিহাসের গর্ভে। ঢুকতেই আর্কিওলজি ডিপার্টমেন্টের হোর্ডিং নালন্দার ইতিহাস সম্পর্কে। তারপরে একটা উঁচু দেওয়াল। তারমধ্যে থাকা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লাম।
একজন গাইড নিয়েছি ইতিমধ্যেই। যদিও বোর্ডে লেখা আছে অনেককিছুই তবুও একটা গাইড নেওয়া ভাল। বিস্তারিত জানতে গেলে গাইড নেওয়া দরকার।

নালন্দার যেটুকু অংশ মাটির তলা থেকে খুঁড়ে বের করা হয়েছে, সেটা নেহাতই সামান্য অংশ গোটা বিশ্ববিদ্যালয়টার। মূলত ছাত্রদের থাকার, পড়াশোনা করার জায়গা হল এটা। তারসঙ্গে পাঠদান করার জায়গা, অধ্যাপকদের বিশ্রামের জায়গা এগুলোও আছে। ঘরগুলো সব পাথরের। লাল ইটেরও কিছু ঘর আছে। একটা দেওয়াল দেখিয়ে গাইড বললেন, দেখুন দেওয়ালটা তিন রকমের পাথর দিয়ে তৈরী। মানে তিনটে যুগে এটা তৈরী হয়েছে। কয়েকটা মন্দির, চৈত্য, সঙ্ঘারামও আছে। সবই ভাঙা কিন্তু বোঝা যায় আদলটা। জলের ব্যবস্থা, পয়ঃপ্রণালি ইত্যাদি গাইড দেখিয়ে দিচ্ছেন আর বলে যাচ্ছেন নাগাড়ে। আমরা ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়ে গেলে রেগেও যাচ্ছেন। দুশো টাকা তার প্রাপ্য আমাদের কাছ থেকে। আমাদেরকে ঘুরিয়ে দেখানোর পর তিনি আবার লোক খুঁজবেন দেখানোর জন্য। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন অনন্ত আর জানার তৃষ্ণা অপরিসীম। তারসঙ্গে ছবি তোলা তো আছেই। উনি রেগেও যাচ্ছেন আবার খুশিও হচ্ছেন। সেই স্তুপটা দেখলাম সামনে থেকে। যখন তথাগত বুদ্ধ এসেছিলেন, তাঁর সম্মানে বানানো হয়েছিল। উনি এসে কোথায় বসে ধর্মপ্রচার করতেন, কথাবার্তা বলতেন, সেগুলোও ঘুরে দেখা হল।

সব ঘুরে দেখে ভেতরের বাগানটায় বসলাম আমরা। গাইডদাদাকে টাকা মিটিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল। এরমধ্যে আসানসোলের সেই বন্ধুর বন্ধু যে বলেছিল হোটেল ঠিক করে দেবে, সে এসে হাজির। অনন্ত গালাগাল থেকে বেঁচে গেল একটাই কারণে যে সে তার ব্যাগ ভর্তি করে ঠেকুয়া, লিট্টি, নাড়ু, মোয়া সব এনেছিল বলে। বাগানে বসে বসে ওগুলোর সদগতি করে জল গ্রহণ ও ত্যাগ ইত্যাদি মিটিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে এসে ঢুকলাম মিউজিয়ামে।
এখানে বিভিন্ন আমলের মুদ্রা, শিলালিপি, তৈজসপত্র, সেইসময়ের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র রাখা আছে সাজিয়ে গুছিয়ে । লেখাও আছে সব। বেশ ভাল। যাঁরা ইতিহাস ভালবাসেন, তাদের তো আরও ভাল লাগবে।

ওখান থেকে বেরিয়ে আবার গাড়ি চেপে চললাম পাওয়াপুরির দিকে। রাজগীর থেকে নালন্দা মিনিট তিরিশ আবার নালন্দা থেকে পাওয়াপুরিও মোটামুটি একই সময় লাগে যেতে।
এই পাওয়াপুরীর কাছেই কুন্তলপুরে মহাবীরের জন্মস্থান। আর মহানির্বাণের পর শেষকৃত্য এখানেই হয়েছিল। এটা জৈনদের খুব পবিত্র তীর্থক্ষেত্র।
পাওয়াপুরি যখন পৌছলাম তখন সন্ধে হব হব করছে। বিরাট একটা জলাশয়ের মধ্যে সাদা মার্বেলের মন্দির। একটা ব্রীজে আছে যাওয়ার জন্য। গেলাম। ঘুরলাম। মন্দিরটা বেশ পরিস্কার। জলে প্রচুর মাছ। প্রচুর মানুষ নিরালায় বসে তাঁদের আরাধ্যকে খুঁজছেন। আমরাও দুদন্ড বসলাম। তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে গরম গরম চা আর পকৌড়া। এই পকৌড়াটাও বিহারী খাবার। আমাদের বঙ্গদেশে এর তেমন চল নেই। বেসন, আলুকুচো, পেঁয়াজলঙ্কাকুচো, ধনেপাতাকুচো চটকে মেখে ছোট ছোট আকারের বড়া। বেশ ভাল খেতে।
সন্ধে থেকে তখন রাত। আমাদের ফিরতে হবে হোটেলে। ড্রাইভার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে নিলাম। কাল রাজগীর ঘুরব টাঙায় চড়ে। কারন গাড়িতে রাজগীর ঘোরার অনুমতি নেই। ঘোড়ায় টানা টাঙাতেই ঘুরতে হবে। ওটাই নিয়ম। নিজস্ব গাড়ি হলে আলাদা কথা কিন্তু ভাড়া করা গাড়িতে ওখানে ঘোরা যায়না। পরশু সকালবেলা এই গাড়ি চেপেই বুদ্ধগয়া যাব গয়া ঘুরে।

বেরিয়ে এলাম পাওয়াপুরি থেকে।
দুপুর থেকে আমরা বৌদ্ধ ধর্মস্থান আর পীঠস্থানে ঘুরছিলাম। তারপর ঢুকলাম জৈন তীর্থস্থানে। এখন আবার আমরা আমাদের নিজেদের মধ্যে।
এই তো আমার দেশ, আমার ভারতবর্ষ। যেখানে পাশাপাশি আর হাত ধরাধরি করে চলে বিভিন্ন ধর্ম। যেন ভাইয়ে ভাইয়ে একসঙ্গে পথচলা।

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
[You must be registered and logged in to see this link.]

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
[You must be registered and logged in to see this link.]

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
ইতিহাসের পথে পথে
++++++++++++++++++
রাজগীর - নালন্দা - গয়া - বুদ্ধগয়া - ( ৪ )
+++++++++++++++++++++++++++++++

রাতে চিকেন আর রুটি সাঁটিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে জব্বর ঘুম। পরের দিন সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম রাজগীরের পথে। বাকি লোকজন রেস্তোরাঁয় গিয়ে পুরি আর আলুর তরকারি খেল আর আমি, হেঁ হেঁ, গরম গরম সেঁকা লিট্টি, আলুর চোখা আর ঝাল চাটনি। আহা, পুরোই অমৃত। চারটের বেশি খেতে পারলাম না বলে একটু দুঃখু হল। তারপর একগ্লাস পুরু দুধের চা, মালাই মারকে।
বলা ছিল ঘোড়ার গাড়িকে। চড়ে বসলাম। দুটো গাড়িতে বারোজন। চললাম সোজা শান্তিস্তুপ।

আগে থেকেই আমাদের দুই বন্ধুর কথা হয়েছিল যে আমরা রত্নগিরি পাহাড়ের ওপরে জাপানীদের করা এই শান্তিস্তুপে চড়ব না। এই রোপওয়েটা সিঙ্গল সিটার। ছেলেটা ছোট। ওকে নিয়ে চড়াটা রিস্ক হয়ে যাবে। আবার এটা থামেও না। চলন্ত অবস্থাতেই চড়তে হয়। আর সিঁড়ি ভেঙে পাহাড়ে চড়ায় চাপ আছে। কিছুটা ওঠার পরেই ছেলে বলবে, বাবা কোলে নাও। তখন কি হবে? যদিও ছেলে কোলে চড়তে চায়না তেমন। তবুও অতটা উঁচুতে পায়ে হেঁটে উঠতে পারবেনা। আরেক বন্ধু চড়বেই। সেইমত আমরা আলাদা টাঙায় চড়লাম। ওখানে গিয়ে দেখি রোপওয়েতে চড়ার টিকিট কাউন্টারে বিরাট লাইন। কমকরে শদুয়েক লোক দাঁড়িয়ে। এক বন্ধু তার ফ্যামিলি নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল। তাই দেখে আরেক বন্ধু যে যাবেনা বলেছিল, সেও উত্তেজিত হয়ে উঠল আর এই যাব আর আসব বলে আমাদের বসিয়ে রেখে উঠে গেল পরিবার সমেত।
রত্নগিরি পাহাড়ের লাগোয়াই গৃদ্ধকূট পর্বত। গৌতম বুদ্ধ রোজ পায়ে হেঁটে ওই পাহাড়ে উঠতেন, সাধনা করতেন আর ভক্তদের উপদেশও দিতেন। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছে এটা খুবই পবিত্র জায়গা।

হাঁ করে বসে আছি। গেছে তো গেছেই। একঘন্টা, দুঘন্টা, তিনঘন্টা হয়ে গেল, ফেরে আর না। বারবার ফোন করছি আর বলছে এই তো ফিরছি। এদিকে আমাদের বিরক্তি চরম পর্যায়ে। টাঙাওয়ালাও সবাই না ফিরলে ফিরতে চাইছেনা।
প্রচন্ড অশান্তি লেগে গেল আমাদের দুই মানুষের মধ্যে। তিনি ফিরে যেতে চাইছেন কিন্তু ফেরার উপায় নেই। যাইহোক, বহু বুঝিয়ে ঝালমুড়ি, চাট, চা টা খাইয়ে তাকে খানিকটা শান্ত করলাম। আমার নিজেরও বিরক্ত লাগছে। একজায়গায় এভাবে বসে থাকতে ভাললাগে?
কিন্তু ওরাও তো বেড়াতেই এসেছে। ঘুরবে এটাই স্বাভাবিক। শুধু যাবনা বলার পরেও চলে গেল, এটাই মুশকিল করল। আগেই যদি বলে দিত, তাহলে আলাদা ব্যবস্থা করতাম। তিনঘন্টা সময় নষ্ট হতনা।

ওরা ফিরে আসার পর তুমুল ঝাড়লাম। তখন বেলা তিনটে বাজে প্রায়। টাঙাওয়ালাগুলোর এটা চালাকি। ওরা আগে এখানেই আনবে। এটা আসলে রাজগীরের ঘোরার জায়গাগুলোর মধ্যে সবথেকে দূরে । দূরেরটা দেখিয়ে নিয়ে তারপর ফেরার পথে বাকিগুলো দেখিয়ে রাজগীর বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেবে। এখানে এলে দেরী হবেই। তখন খিদে পেয়ে যাবে। আর কাছাকাছি খাবার কোন দোকান নেই। খাবার দোকান সেই উষ্ণ প্রস্রবণের কাছে। আপনি খেতে চাইলে ওরা ওখানে নিয়ে যাবে কিন্তু তারপর আর কিছুতেই পেছনে ফিরে এসে বাকি জায়গা যেগুলো শান্তিস্তুপ আর উষ্ণ প্রস্রবণের মাঝপথে ছেড়ে গেছেন খাওয়ার জন্য, দেখাবেনা আর। ওদের ইউনিয়নও খুব ঠ্যাটা। কমপ্লেন করেও লাভ নেই। বলবে আবার পেছনে ফিরে গেলে ঘোড়াগুলোর কষ্ট হবে ।
তবে এইসময়টা বড়দিনের ছুটি বলে প্রচুর ভীড়। অন্যসময় গেলে মারাত্মক ভীড়ের এই সমস্যাটা হবেনা।

বড় মানুষদের তেমন সমস্যা নেই, হাবিজাবি যাহোক কিছু খেয়ে নিলেই চলে যায়। তবে আমার ছেলেটা ছোট। তিনটে পর্যন্ত না খেয়ে বেচারা কাহিল হয়ে গেছে। বন্ধুদের ছেলে মেয়েটা যদিও একটু বড় তাদেরও না খেয়ে হাল খারাপ। তাই আগে বললাম খেতে চল সবাই। টাঙাওয়ালা সেই ত্যাঁদড়ামোটাই করল। উষ্ণ প্রস্রবন যাওয়ার পথে জায়গাগুলো দেখিয়ে দিল কিন্তু খেয়ে এসে আর দেখাবেনা পরিস্কার বলে দিল। হাজার অনুরোধেও ডাল গলল না। তবে সব জায়গা গুলোই এই রাস্তারই দুইপাশে। কাল সকালে তো গাড়ি করে গয়া হয়ে বুদ্ধগয়া যাব এই রাস্তা দিয়েই। তখনই দেখে নেব টুক করে এটাই আপাতত ঠিক হল।

উষ্ণ প্রস্রবণ গিয়ে আগে হোটেলে ঢুকে ভাত খেলাম। ভাত, ডালল, আলুভাজা, ফুলকপির তরকারি আর মাছ। খুব ভাল মানের কিছু হোটেল নেই। খাওয়াদাওয়াও তেমন ভাল নয়। তারথেকে রেস্তোরাঁয় ঢুকে রুটি খাওয়া ভাল, সঙ্গে পনীর বা তরকা কিম্বা চিকেন যাহোক কিছু।

খেয়েদেয়ে গেলাম উষ্ণ প্রস্রবণ দেখতে। পাহাড়ে চড়তে হল একটুখানি। গরম জলের প্রস্রবণ। সালফার মেশা জল। কয়েকটা নলের মধ্যে দিয়ে জল পড়ার ব্যবস্থা করা আছে। লোকে সেখানে স্নান করছে কাতার দিয়ে । জলে কাদায় মাখামাখি গোটা এলাকাটা। আর ওই নলগুলো দিয়ে যে জলটা পড়ছে, সেটাই গিয়ে জমা হচ্ছে একটা ছোট পুকুরের মত কুন্ডে। কুন্ড মানে একটা তিরিশ ফুট বাই কুড়ি ফুট বাঁধানো চৌবাচ্চা। সেখানেও দলে দলে লোক চান করছে। তারপর ভেজা কাপড়ে উঠে এসে শিবমন্দির আর বিষ্ণুমন্দিরে পুজো দিচ্ছে । ঘুরে দেখলাম খানিক।
এর থেকে আমাদের বক্রেশ্বর অনেক ভাল। সেখানে সরাসরি দেখতে পাওয়া যায় গরম জলের কুন্ডটা। লোকে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে পুঁটুলি বেঁধে চাল ফেলে রেখেছে ভাত হওয়ার আশায়। ধোঁয়া বেরোচ্ছে জল দিয়ে সেটাও দেখা যায় পরিস্কার। এখানে সেসব কিছুই নেই।

ওখান থেকে বেরিয়ে এসে গেলাম জাপানি মন্দিরে। ভেতরে ঢুকতেই একটা বিরাট আকারের বুদ্ধমূর্তি। জুতো খুলে মূল মন্দিরে ঢুকলাম। সেখানে তখন প্রার্থনা চলছে। ড্রাম পেটার আওয়াজে কান পাতা দায়।

সেখান থেকে বেরিয়ে গেলাম জৈন মিউজিয়ামে। টিকিট কেটে ঢুকতে হয়। কুড়িটাকা জনপ্রতি। জুতো খুলে ভেতরে ঢুকলে সমস্ত পার্শ্বনাথদের জীবন ও কর্ম পুতুলের মারফত দেখানো আছে। বেশ ভাল। খুঁটিয়ে দেখলে অনেকটা সময় লাগবে। আসলে এই রাজগীরের কাছেই কুন্তলপুরে বিশতম পার্শ্বনাথ মহাবীরের জন্মস্থান। তিনি রাজগীরে ১৪ বছর কাটিয়েছেন। তাঁর সাধনা ও বাণীও এখানে সমান জনপ্রিয়।

এইসব দেখতে দেখতেই সন্ধে নেমে এল। আমাদেরও আজকের মত বেড়ানো শেষ। টাঙা থেকে নেমে হোটেলে ফিরলাম। সেদিন আবার ২৫শে ডিসেম্বর। একটু কেকটেক কাটা হল। গরমাগরম সিঙারা আর জিলিপি কিনে নিয়ে এলাম। খাওয়াদাওয়া হল। তারপর চা খেতে বেরোলাম সবাই মিলে। চা খেয়ে খানিক ঘুরেফিরে রাতের জন্য চিকেন আর রুটি কিনে ফেরা হল।
তারপর যা হয়। খাওয়া শেষ। ঘুম। কাল সকাল সাতটায় গাড়ি আসবে। রাজগীর ছাড়ব কাল।

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
[You must be registered and logged in to see this link.]

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
ইতিহাসের পথে পথে
++++++++++++++++++
রাজগীর - নালন্দা - গয়া - বুদ্ধগয়া - ( ৫ )
+++++++++++++++++++++++++++++++

আজ রাজগীর ছেড়ে যাব বুদ্ধগয়া। গাড়ি বলা আছে। সকালবেলা উঠে চা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম হোটেল থেকে। গাড়িও চলে এসেছে । আরেক রাউন্ড চা খেয়ে চললাম গয়ার উদ্দেশ্যে। পথে গতকাল যে জায়গাগুলো দেখা হয়নি, দেখে নেব।
প্রথমেই পড়ল বেণুবন। এটা আসলে একটা পার্ক, একটা মন্দির আছে ভেতরে আর একটা সাজানো গোছানো পুকুর। মহারাজ বিম্বিসার তথাগত বুদ্ধকে এই এলাকাটা দান করেছিলেন।
এখান থেকে বেরিয়ে গেলাম বিম্বিসার জেল। মহারাজ বিম্বিসারকে তার ছেলে অজাতশত্রু এখানে বন্দী করে রেখেছিলেন। বিম্বিসারের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী এইজায়গাটাতেই জেল বানিয়ে রাখা হয়েছিল তাকে। এখান থেকে গৃদ্ধকূট পাহাড়টা দেখা যায়। তিনি বন্দী অবস্থাতেই বুদ্ধকে ওই পাহাড়ে উঠতে দেখবেন এমনটাই তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিল। জায়গাটায় একটা পাথরের পাঁচিল ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এক বৃদ্ধ মানুষ রাজগীর গাইড বই বিক্রি করছেন। দরকার ছিলনা, তবুও আমরা কিনলাম সবাই। তার মুখের ওই হাসিটুকু আমাদের দিন ভাল করে দিল।

এরপর গেলাম জরাসন্ধ কি আখাড়া তে। এখানেও কিচ্ছু নেই। ফাঁকা মাঠ আর ইতিউতি কিছু পাথর ছড়িয়ে পড়ে আছে । একটু পাঁচিলের মত। কথিত আছে এখানেই মধ্যম পান্ডব ভীম মল্লযুদ্ধ করে জরাসন্ধকে পরাজিত করেন এবং পা দুটো চিড়ে হত্যা করেন। আসলে এই ঘটনা গুলো এতটাই পুরোনো যে সেই সময়কার কোন চিহ্ন টিকে থাকা অসম্ভব।
এখান থেকে গেলাম সোনভান্ডার। এটা একটা পাহাড়ী গুহা। গুহাটা কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নয়। মানুষের তৈরী। একটা মনোলিথিক স্টোন মানে একটাই পাথর কেটে একটা দশফুট বাই কুড়িফুট গুহা বানানো। তার দুটো দরজা আছে। আর গুহার ভেতরে দরজার মত দেখতে দাগ আছে পাথরের গায়ে। শোনা যায় এখানে মহারাজ বিম্বিসারের গুপ্তধন রাখা আছে । সাঙ্কেতিক ভাষায় কিছু লেখাও আছে যেটা আজও পাঠ করা যায়নি। ওটাই গুপ্তধন পাওয়ার সঙ্কেত।
খুব মন দিয়ে পাঠোদ্ধার করার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু দলের বাকিদের ডাকাডাকিতে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হলাম। নাকি দেরী হয়ে যাচ্ছে । আরে বাবা, গুপ্তধন পেলে তোদেরও ভাগ দিতাম তো নাকি? এইজন্যই বাঙালির কিছু হয়না। ধৈর্য্য নেই কিচ্ছুতে। যাকগে, মনের দুঃখ মনেই চেপে চলে আসতে বাধ্য হলাম।

কাছেই আর একটা জায়গা মনিয়ার মঠ। এটাও একটা ভগ্নস্তুপ। একটা স্তুপ কিন্তু ভেতরে একটা ঘরের মত আছে। ধরুন একটা বিরাট পাথরের ঘর। তাতে ছাদ নেই। চারদিকে দেওয়াল আর ভেতরটা ফাঁকা। বাইরের সিঁড়ি দিয়ে ঘরের ছাদে উঠলেন আবার একটা সিঁড়ি দিয়ে ঘরের ভেতরে নামলেন। সেখানে নাগমাতা মনসার একটা মূর্তি আছে। আর নাগের মাথায় যে মনি থাকে সেটা নাকি সেখানে ছিল। মূর্তি যখন আছে তখন পুজোও হবে এটাই স্বাভাবিক। একজন লোক চ্যালাচামুন্ডা নিয়ে পুজো করাচ্ছে। ওঁর কাছেই এইসব গল্প শুনলাম। দলে দলে লোক পুজো দিচ্ছে। আমার গিন্নী সমেত বন্ধুদের গিন্নীরাও লাইন দিয়ে পুজো দিতে ভিড়ে গেল সেখানে। তখন আর দেরীর কথা কারুর মনে পড়লনা। যত দেরী আমার গুপ্তধন খোঁজার সময়েই হচ্ছিল।

এবার গাড়ি ছুটল গয়ার দিকে। মাঝেমাঝেই গাড়ি পাহাড়ে চড়ছে আবার সমতলভূমিতেও নেমে আসছে। এই জায়গাটা আসলে ছোটনাগপুর মালভূমির উত্তরপূর্বাংশ। ভৌগোলিকভাবে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি। এখানে জীবনযাপন করা খুব শক্ত। ল্যাটেরাইট মাটিতে চাষ ভাল হয়না। জলের যোগানও ভাল নেই। তাও যেখানেই সমতল এলাকা, সেখানেই মাটির তলা থেকে জল বের করে চাষাবাদ করার চেষ্টা। মাইলের পর মাইল ফাঁকা রুক্ষ ঊষর প্রান্তর। পাহাড়গুলো ক্ষয় পেতে পেতে একধরনের অদ্ভত আকার নিয়েছে। মাঝে মাঝে ছোটখাটো দুএকটা গ্রাম। কিন্তু রাস্তাটা খুব সুন্দর। মাঝে আবার একজায়গায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিল আর্মির লোকজন। ফায়ারিং চলছে। দশ মিনিট বিরতি দিয়ে দিয়ে গাড়িগুলো ছাড়ছে, আবার দশমিনিট আটকাচ্ছে। ফ্যাট ফ্যাট আওয়াজ পাচ্ছি কিন্তু কোথায় যে হচ্ছে দেখতে পাচ্ছিনা। তারপর গাড়ি ছাড়তে দেখতে পেলাম শ্যুটিং রেঞ্জটাকে।

ড্রাইভারভাই আগের দিনই বলেছিল আপনাদের একটা দারুণ জায়গা দেখাব। সেই জায়গা কখন আসবে কে জানে? এদিকে এগারটা বেজে গেছে। খিদে পেয়েছে চরম। ড্রাইভার ভাইকে বলতে বলল, এইতো এসে গেছি সেই জায়গা। আর মিনিট পাঁচেক। তারপর এল একটা গ্রাম। সেখানে দুটো দোকান। একটা দোকানে ঢুকে বললাম আমরা সবাই খাব। কি পাওয়া যাবে? বলল লুচি ভেজে দিচ্ছি এক্ষুণি। আপনারা ততক্ষণ একটু ঘুরে দেখুন এলাকাটা।
এই এলাকাটার একটা বিশেষ গল্প আছে । এই পর্বে সেটা আর লিখলাম না। পরের পর্বে লিখব। শুধু এটুকু বলি, মাঝে মাঝে নিজেকে মানুষ বলতে ভারি গর্ব হয় কারন আমাদের মধ্যেই এমন কিছু মানুষ আছেন আর তাঁরা এমন কিছু কীর্তি রেখে যান পৃথিবীতে, যে বিষ্ময়ে আর সম্ভ্রমে মাথা ঝুঁকে আসে নিজের থেকেই।
ঘুরে এসে গরম গরম লুচি, ঘুঘনি আর লাড্ডু খেলাম পেট ভরে। আঃ, ধড়ে প্রাণ এল এতক্ষণ পর।

এরপর সোজা ছুটল গাড়ি গয়ার উদ্দেশ্যে। ফল্গু নদীর ব্রীজ পেরিয়ে গেলাম গয়ার মূল আকর্ষণ বিষ্ণুপাদ মন্দিরে। আমরা যখন পৌছলাম তখন নারায়নের সেবার সময়। গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ। এদিকে মন্দিরের সামনে একটা দোকানে জুতো খুলে পুজোর ডালি নিয়ে পুজো দেবে বলে মহিলা ব্রিগেড রেডি হয়ে গেছে। কিন্তু তখনও আধঘন্টার উপর দেরী আছে দরজা খুলতে। কি করা যায়? চলো ততক্ষণে নদীর ধারে গিয়ে বসি । ফল্গু নদী নাকি অন্তঃসলিলা। দেখে আসি গিয়ে।
গেলাম নদীর ধারে। অন্তঃসলিলা মোটেও নয়। ভৌগোলিকভাবে হওয়া সম্ভবও নয়। একমাত্র মাটির নীচে চুনাপাথরের স্তর থাকলে তবেই নদী মাটির তলা দিয়ে বইতে থাকে। তাও সে চুনাপাথরেরও অনেক বৈশিষ্ঠ্য থাকতে হবে। এখানে সেসব নেই। খুব সামান্য জল বইছে ঘাট থেকে অনেকটা দূরে। আর ঘাটের কাছে বালি খুঁড়ে জল বের করে পিন্ডদান কাজ চলছে। দলে দলে লোক তাদের পিতৃপুরুষের পিন্ডদান করছেন। মন্দিরের সিঁড়িতে বসতেই পিলপিল করে ধেয়ে এল পান্ডার দল। এর আগে যেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলাম, সেখানেও ছেঁকে ধরেছিল পান্ডার দল। অনেকটা পুরীর মতই গল্প। তাদেরকে কাটিয়ে এসেছিলাম তাড়া ছিল বলে। কিন্তু এখন তো সময় কাটাতে হবে। তাহলে চাট্টি কথা বলাই যায় এখন।

বলে কি, আপনার নামধাম বলুন, আপনার চোদ্দগুষ্টি খবর আমরা দিয়ে দেব। তা বললাম নাম। পুন্ডরীকাক্ষ পুরকায়স্থ। সাকিন বাজেমহেশপুর, জেলা হুগলী। তারা তো ভারি ব্যস্ত হয়ে জাবদা খাতা খুলে খুঁজতে লাগল। তারপর হতাশ হয়ে বলল দাদা আপনে মজাক করছেন। আমিও হেসে ফেলেছি।
তারপর তারা আমাকে পিন্ডদানের ১০৮ রকমের উপকারিতা বোঝাতে লাগল। আমি হ্যাঁ, হুঁ করতে থাকলাম। জিজ্ঞেস করলাম কদিন লাগে এইসব করতে? বলে সাতদিন। দুদিনে হয়না? হয়, তবে ভাল করে হয়না। একদিনে? ওই কোনোরকমে।
দশ মিনিটে?
আসলে তখন দুটো বাজতে দশ। আর দশ মিনিট বাকি গর্ভগৃহের দরজা খুলতে। পুজো টুজো মিটলে সোজা গাড়িকে দৌড় করাব বুদ্ধগয়ার দিকে। গয়ায় আরও দুএকটা মন্দির আছে আর আছে প্রেতশিলা পাহাড়। সেসব বাদ এবারে। আবার কোনদিন এলে হবে সেসব।
সত্যি কথাটা যেই বললাম অমনি তারা পারলে আমারই পিন্ডি দিয়ে দেয় তক্ষুণি।
যাকগে, আবার আসিব ফিরে টিরে এইসব বলে কোনমতে কাটালাম।

মন্দিরটা আটটা পাথরের পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। চুড়াটাও আটকোনা। কত কষ্টে পাথর কেটে কেটে এইরকম একটা এতবড় মন্দির বানানো যায়, ভাবছিলাম তখন।
মন্দিরে এসে দেখি পিলপিল করছে লোক পুজো দেওয়ার জন্য। দরজা খুলতেই হুড়মুড় করে সবাই একসঙ্গে ঢুকে পড়লাম ভেতরে। একটা পাথরে ভগবান বিষ্ণুর পায়ের ছাপ আছে। দেখলাম। পুরোহিতের আশীর্বাদও পাওয়া হল।

গয়ায় আরও কতগুলো দেখার জায়গা আছে। ব্রহ্মযোনি পাহাড়ের নীচে অক্ষয়বট আর পাহাড়ের ওপর পাতালেশ্বর শিবের মন্দির।
প্রেতশিলা পাহাড়। এখানে গয়াসুর বিষ্ণুর বর পেয়েছিলেন এই যে এখানে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পিন্ডদান করলে তাঁদের আত্মার বৈকুন্ঠলাভ হয়। এই গয়াসুরের নামানুসারেই এলাকার নাম গয়া।
এছাড়াও বরাবর গুহা নামে সম্রাট অশোকের সময়কার সাতটা গুহা আছে।
এবারে আর হলনা। পরে কোন সময় দেখা যাবে।

মন্দির থেকে বেরিয়ে এসে তিলখাজা কিনে খেতে খেতে চললাম বুদ্ধগয়া। গয়ার তিলখাজা বিখ্যাত। গেলে খাবেন। কেমন?

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
[You must be registered and logged in to see this link.]

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
ইতিহাসের পথে পথে
++++++++++++++++++
রাজগীর - নালন্দা - গয়া - বুদ্ধগয়া - ( ৬ )
+++++++++++++++++++++++++++++++

দশরথ মাঝি -THE MOUNTAIN MAN
+++++++++++++++++++++++++++++++

গতকাল যে বিশেষ জায়গাটা দেখাবে বলেছিল ড্রাইভার ভাই, ওই যে রাজগীর থেকে গয়া যাওয়ার পথে, যেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমরা লুচি, ঘুঘনি আর লাড্ডু খেলাম আর খানিক ঘোরাফেরা করলাম, আজকে তারই গল্প।

বহুদিন আগের কথা। তা প্রায় ষাঠ বছরের কাছাকাছি। বিহারের গয়া জেলায় প্রত্যন্ত এক গ্রাম গেহলৌর। কিছুদিন আগেই ভারত স্বাধীন হয়েছে। রাস্তাঘাট, যোগাযোগব্যবস্থা, কৃষি, জলসেচ, শিল্প, কলকারখানা সবই অনুন্নত। শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞান বিজ্ঞান, চিকিৎসা সবেতেই যোজন খানেক পেছনে উন্নত দেশগুলোর তুলনায়। শহরগুলোর অবস্থা তবু একরকম কিন্তু গ্রামগঞ্জগুলোর অবস্থা সঙ্গীন। সেই সময়কারই কথা এটা।

গেহলৌর গ্রামও আর পাঁচটা সাধারন গ্রামের মতই। বর্ষাকালে কোনমতে একটা চাষ হয়। বাকিসময়টা পাহাড় পেরিয়ে যেতে হয় পেটের ধান্দায়। পাপী পেট না থাকলে কেই বা পাহাড় পেরোতে যায় সাধ করে?
এমনই একটা দিনে পাহাড়ের ওপারে কাজ করছেন দশরথ। দুপুরবেলা তার প্রিয়তমা ফাল্গুনী তার জন্য খাবার আর জল আনবেন। রোজই আনেন। হ্যাঁ, ওই পাহাড় পেরিয়েই।
কম বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছিল দশরথের ওই এলাকার আর পাঁচজনের মতই। বসে আছেন দশরথ, ফাল্গুনী আর আসেন না। মাথায় কূচিন্তা আসছে বারবার। এমনসময় তাদেরই গ্রামের একজন এসে খবর দিলেন যে পাহাড় পেরোনোর সময় পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন ফাল্গুনী। তড়িঘড়ি দৌড়লেন দশরথ। গিয়ে দেখেন তাঁর প্রিয়তমা চোট পেয়ে বেহুঁশ। হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কাছাকাছি হাসপাতাল ৫৬ কিমি দূরে পাহাড় ঘুরে যেতে হলে। নাহলে পাহাড় ডিঙিয়ে গেলে অনেক কাছে। মাত্র ১৩ কিমি। কিন্তু বেহুঁশ মানুষকে নিয়ে পাহাড় টপকানো সম্ভব নয় তাই ঘুরপথেই যেতে হল। মোষের গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতাল নিয়ে যেতে যেতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ফাল্গুনী।

স্ত্রীর মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন দশরথ। এই পাহাড়টা যদি না থাকত তাহলে ফাল্গুনীকে এভাবে মরতে হতনা হয়ত। এই পাহাড়টাই তার স্ত্রীর মৃত্যুর কারন।
ভেঙে ফেলব পাহাড়। গুঁড়িয়ে দেব পাথর। সব গ্রামবাসীকে জড়ো করে বললেন তাঁর মনের কথা।
হেসে উড়িয়ে দিল সবাই পাগলের প্রলাপ বলে। কেউ কেউ তো আবার বিয়ে করারও প্রস্তাব দিল।
সড়ক বিভাগে যোগাযোগ করা হল। তারাও হেসে উড়িয়ে দিল। এভাবে একটা পাহাড় ভাঙা যায় নাকি?
চলে এলেন দশরথ। বাড়ির ছাগল বেচে দিলেন। ছেনি, হাতুড়ি, শাবল, গাঁইতি কিনলেন।
ভাঙতে শুরু করলেন পাথর। পেট চালানোর জন্য টুকটাক কাজ করেন আর সারাদিন ধরে পাহাড়ের পাথর ভাঙেন। পাথরে লেগে ছিটকে আসে ছেনি, হাতুড়ি। রক্তাক্ত হন তিনি। তবুও হাল ছাড়েন না। রক্তে ভিজে যায় পাথর, চোট লাগার অসম্ভব যন্ত্রণা। কিন্তু তার থেকেও বেশি রক্তপাত তার হৃদয়ে, বেশি যন্ত্রণা তার বুকে। এ পাহাড় কেড়ে নিয়েছে তার প্রিয়তমাকে। একে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে পারলে তবেই শান্ত হবে তার মন।
টিটকিরি দেয় লোকে । এ দশরথ, কতটুকু ভাঙলি রে? কেউ কেউ বলে বৌ মরে লোকটা পাগলই হয়ে গেল শেষে।
গ্রামের লোক পাগল বলে উত্যক্ত করে যত, তত তার জেদ বেড়ে যায়। দিনরাত এক করে ভাঙতে থাকেন পাহাড়। ভাঙতেই হবে। গ্রামের আর কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।
গ্রামে একবার মারাত্মক খরা দেখা দিল। বেশীরভাগ লোক পালিয়ে গেল শহরে । পালালেন না দশরথ। দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই। মানুষ জেতে না পাহাড়!!

দশরথ ১৯৬০ সালে যখন পাহাড় কাটতে শুরু করেন তখন তাঁর বয়স ৩৫ বছর। টানা বাইশ বছর ধরে পাহাড় কেটেছেন তিনি একদিনও বিশ্রাম না নিয়ে। পাহাড় কেটে যখন শেষ পাথরটাও ভেঙে ফেললেন তখন তার ৫৭ বছর বয়স।
১৯৮২ সালে কাটা পড়ল পাহাড়। তৈরী হল ৩০ ফুট চওড়া, ৩৬০ ফুট লম্বা পথ। ২৫ ফুট উচ্চতার পাথর কেটেছিলেন তিনি ।
নিকটবর্তী ওয়াজিরগঞ্জ তখন হাতের মুঠোয়।
দশরথের জেদ দেখে শেষদিকে গ্রামের সবাই মিলে হাত লাগিয়েছিল পাহাড় কাটার কাজে। শেষদিকে দশরথ শুধু পাহাড়ই কাটতেন, আর কিছুই করতেন না। গ্রামের লোক, তাঁর ও তাঁর পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছিল সবটাই। দশরথ তখন আর দশরথ নেই। তিনি তখন সবার কাছে বাবা।
ওখানেই পরিচয় হল ওই গ্রামেরই রামচন্দ্র মাঝির সঙ্গে। গল্প করে জানতে পারলাম সব। এই কান্ড যখন ঘটছে তখন রামচন্দ্র কিশোর। তিনিও হাত লাগিয়েছিলেন এই কাজে। খাবার, জল পৌছে দিতেন দশরথকে ।

পাহাড় তো কাটা হল কিন্তু রাস্তা তৈরী করতে হবে তো। গ্রামের সবাই মিলে আবেদন করলেন বিহার রাজ্য সরকারকে। পাহাড় কাটা আর পাথর চালান করা সরকারি নিয়ম বহির্ভূত কাজ বলে দেগে দিলেন তারা দশরথকে। রাস্তা তো হলই না, দশরথ পড়লেন বিপদে। জেল হওয়ার উপক্রম তখন দশরথের।
এভাবে বেশ কিছু বছর কেটে গেল। লোকে পায়ে হেঁটে অনায়াসেই পাহাড় টপকে যাচ্ছে কিন্তু রাস্তা না হলে, গাড়ি না চললে বিপদ তো রয়েই গেল।

এবার দশরথ চললেন দিল্লী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন। ট্রেনের টিকিট কাটার টাকা নেই। বিনাটিকিটেই চড়ে বসলেন ট্রেনে। টিটি নামিয়ে দিল মাঝরাস্তায়। কুছ পরোয়া নহী। হেঁটেই যাবেন দিল্লী। ট্রেন লাইন ধরেই হাঁটতে শুরু করলেন। প্রতিটা স্টেশনে স্টেশনমাস্টারের কাছে আবেদনপত্রে সই করিয়ে নিলেন। পথে কেউ খাওয়ালে খেয়েছেন নাহলে না খেয়েই পথ চলা।
দিল্লী পৌছলেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলনা।
এবারে হতাশ হয়ে পড়লেন দশরথ। কিন্তু তার এই হেঁটে যাওয়াতে টনক নড়েছে মিডিয়ার। তারা খবর করতে শুরু করল। খবর গেল তৎকালীন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের কাছে। তিনি ডেকে পাঠালেন দশরথ মাঝিকে। কথা দিলেন রাস্তা হবে।
তারপর তৈরী হল সেই রাস্তা। নাম হল দশরথ মাঝি সড়ক। আর দশরথ মাঝি হলেন পর্বতপুরুষ।

বিহার সরকার দশরথের এই কাজ দেখে তারজন্য একটা পাকা বাড়ি করে দিয়েছেন। এমনই সেই গন্ডগ্রাম, সেখানে এখনও পাকা বাড়ি হাতে গোনা কয়েকটা মাত্র। আর দিয়েছেন পাঁচ একর জমি। অবশ্য সে জমি দশরথ দান করে দিয়েছেন সরকারকেই। সে জায়গায় গড়ে উঠেছে তাঁরই নামাঙ্কিত হাসপাতাল। পার্থিব সুখ যদি চাইতেন, তাহলে তো দশরথ মাঝির পর্বতপুরুষ হয়ে ওঠা হতনা। এসব মানুষের ভাবনাচিন্তার ধরনটাই আর পাঁচজনের থেকে আলাদা।

১৯৩৪ সালে জন্মগ্রহণ করে ২০০৭ সালের ১৭ই আগস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পর্বতপুরুষ দশরথ মাঝি । তাঁর নাম পদ্মশ্রী খেতাবের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল বিহার সরকার কিন্তু কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রক আপত্তি জানায় তাতে। পাহাড় কেটে বনের উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বাসস্থান নষ্ট করেছেন নাকি দশরথ। অথচ পাহাড়ের ছবি দেখলেই বুঝবেন যে এটা পুরো ন্যাড়া পাহাড়। একটা গাছও নেই।

তবে এইসব মানুষ আর কবে খেতাব, উপাধি পাওয়ার পরোয়া করেছেন?
তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর একটি মূর্তি বানিয়ে একটা ছোট মন্দিরের মত বানিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে দশরথ মাঝির একটা ছবিও আছে। মাথায় ফেটি বাঁধা একটা সাধারন মানুষ। স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম আন্দাজ পাঁচফুটের মত উচ্চতার লিকপিকে চেহারার একজন মানুষ এই দশরথ মাঝি। কিন্তু যে উচ্চতার কাজ তিনি করে গেছেন, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত করতে হয় সবাইকেই।

সেই পাহাড় দেখে, সেই রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে ঠিক কেমন অনুভূতি হচ্ছিল, তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। একটা পাহাড় একা কেটেছেন একজন মানুষ। এটা ভাবনার সীমানার বাইরের। কল্পনাও করা যায়না এমন কথা। অবশ্য আমাদের মত সাধারন মানুষের কল্পনার দৌড় আর কতটুকু? যাঁরা পারেন, তারাই তো জিনিয়াস। তাদেরকেই লোকে মনে রাখে।
শুধু গর্ব হচ্ছিল যে তিনিও মানুষ, আমিও। আমরা সবাই মানুষ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীব।

আমরা সামান্য ঘটনাতেই বিচলিত হয়ে পড়ি। হাজারো অভিযোগ আমাদের। দশরথ কাউকে কোনও অভিযোগ জানাননি। শুধু একটা লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছেন আর মুখ বুঁজে নিজের কাজ করে গেছেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে মন থেকে যদি কিছু ঠিক করে নেওয়া যায়, তাহলে সে কাজ হবেই। কিছুতেই তার ব্যত্যয় হবেনা। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলে জগতে সবকিছু সম্ভব।
সম্রাট শাহজাহান কোটি কোটি টাকা খরচ করে হাজার হাজার লোক লাগিয়ে তাজমহল বানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী মমতাজমহলের জন্য। পত্নীপ্রেমের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। পৃথিবীবিখ্যাত সেই স্মৃতিসৌধ দেখতে আমরা সবাই যাই আগ্রা। লাখে লাখে লোক দেখে আর বিস্মিত হয়। যাইনা পাশের রাজ্য বিহারের গেহলৌর গ্রাম। কোথায় সম্রাট শাহজাহান আর কোথায় দিনমজুর দশরথ মাঝি। কিন্তু একটা মানুষ একা, হ্যাঁ একাই, বিনা অর্থে, না খেয়ে টানা বাইশ বছর ধরে একটা পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরী করল তার প্রিয়তমা স্ত্রী ফাল্গুনীর বিরহে। এ কীর্তি তাজমহলের থেকেও বেশী। এই ভালবাসা আরও নিবিড়, আরও হৃদয়ের কাছাকাছি।

সেলাম দশরথ মাঝি। হ্যাটস অফ মাউন্টেন ম্যান।

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
[You must be registered and logged in to see this link.]

descriptionইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya EmptyRe: ইতিহাসের পথে পথে Rajgir Nalanda Gaya Buddha Gaya

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply