গয়া, বুদ্ধ গয়া, রাজগীর
===========================
ট্রেনে গয়া যাওয়া সব থেকে ভালো।
গয়ায় কী দেখবেন
(১) বিষ্ণুপাদ মন্দির – অন্তঃসলিলা ফল্গুর পাড়ে। কারুকার্যময় আট সারি স্তম্ভ, ৩০ মিটার অষ্টকোণি চূড়া। ভিতরে পাথরে বিষ্ণুর পায়ের ছাপ।
(২) পাতালেশ্বর শিব ও অক্ষয়বট – বিষ্ণুপাদ মন্দিরের এক কিমি দূরে ১০০০ সিঁড়ি উঠে ব্রহ্মযোনি পাহাড়, চুড়োয় পাতালেশ্বর শিব আর নিচুতে অক্ষয়বট।
(৩) সূর্য মন্দির – বিষ্ণুপাদ মন্দিরের উত্তরে শোন নদীর তীরে।
(৪) বরাবর গুহা – গয়া-পটনা লোক্যাল ট্রেনে একটি স্টেশন পরেই বেলা, এখান থেকে রিকশা বা টাঙায় ১০ কিমি। গয়া থেকে গাড়ি বা বাসেও আসতে পারেন। সম্রাট অশোকের সময়ে তৈরি গুহা। সাতটি গুহা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তিন ধরনের গুহা – নাগার্জুনীয় গুহা, পঞ্চপাণ্ডব গুহা ও কুটিরাকার গুহা। গুহার কাছেই আনন্দ সরোবর, সিদ্ধেশ্বর পাহাড়।
পরের দিন– চলুন বোধগয়া, বাসে বা গাড়ি, অটো, টাঙায়। ভারত সেবাশ্রম আশ্রমের কাছে কাছারি চক থেকে শেয়ার অটোয় আসা যায়। রাত্রিবাস গয়া।
বুদ্ধগয়ায় কী দেখবেন
নিরঞ্জনা নদীর তীরে উরুবিল্ব গ্রামে পিপুল গাছের নীচে বোধি লাভ করে গৌতম হলেন বুদ্ধদেব। সেই নিরঞ্জনা আজ ফল্গু, উরুবিল্ব আজ বুদ্ধগয়া আর পিপুল গাছ আজ বোধিবৃক্ষ।
(১) বোধিবৃক্ষ – পাথরে পায়ের ছাপ বুদ্ধের।
(২) সুজাতা দিঘি – পাশেই। কথিত আছে, এই দিঘির জলে স্নান করে সুজাতা পায়েস নিবেদন করতেন বুদ্ধদেবকে।
(৩) মহাবোধি মন্দির – ৬০ ফুট প্রশস্ত, ১৮০ ফুট উঁচু পিরামিডধর্মী চুড়োওয়ালা দ্বিতল মন্দির। ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় ৮০ ফুটের বুদ্ধমূর্তি। প্রবেশফটক বৌদ্ধধারায় দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীতে তৈরি। পণ্ডিতদের মতে, সম্রাট অশোকের দানের ১ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রায় উপগুপ্তের হাতে তৈরি এই মন্দির। বহু বার নানা কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে এই মন্দির, আবার সংস্কার হয়েছে। মন্দিরের উত্তরে চক্রমাণা (বুদ্ধের ধ্যানস্থান), ঘেরা প্রাঙ্গণে অনিমেষলোচন চৈত্য(এক সপ্তাহ ঠায় দাঁড়িয়ে বুদ্ধ পিপুল গাছ অবলোকন করেন), মোহান্তর মনাস্ট্রি, রত্নাগার।
(৪) সুজাতা মন্দির – মহাবোধির দু’ কিমি পশ্চিমে।
(৫) মুচলিন্ড সরোবর – ৩ কিমি দূরে, নাগরাজ মুচলিন্ড ফণা মেলে ধ্যানস্থ বুদ্ধকে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতেন।
(৬) তিব্বতীয় মনাস্ট্রি – মহাবোধির উত্তর-পশ্চিমে বাজার পেরিয়ে ১৯৩৮-এ তৈরি।
(৭) চিনা বুদ্ধিস্ট মন্দির – অদূরেই ১৯৪৫-এ তৈরি সাদা রঙের মন্দির।
(৮) মিউজিয়াম – চিনা বুদ্ধিস্ট মন্দিরের বিপরীতে, বৌদ্ধ স্থাপত্যের নানা নিদর্শন।
(৯) থাই মনাস্ট্রি – সামনে এগোতেই প্যাগোডাধর্মী মন্দির।
(১০) ভুটান মনাস্ট্রি – আর একটি প্যাগোডাধর্মী মন্দির।
(১১) তিব্বতীয় বুদ্ধ মন্দির।
(১২) জাপানি বুদ্ধ মন্দির।
এ ছাড়াও মায়ানমার, বাংলাদেশ, লাওস, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামও মনাস্ট্রি গড়েছে। খোলা আকাশের নীচে ২৫ মিটার উঁচু বুদ্ধমূর্তিটিও পথ চলতে চলতে দেখে নিন।
তৃতীয় দিন – চলুন রাজগীর। রাত্রিবাস রাজগীর।
গয়া থেকে রাজগীরের দূরত্ব ৬০ কিমি। গাড়ি বা বাস পাওয়া যাবে। গয়া থেকে বখতিয়ারপুরগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনেও রাজগীর আসতে পারেন। ট্রেনটি রোজ সকাল ৮:০৭-এ গয়া থেকে ছেড়ে রাজগীর পৌঁছোয় সকাল এগারোটায়।
চতুর্থ দিন – ঘুরে আসুন নালন্দা, পাওয়াপুরী। রাত্রিবাস রাজগীর।
রাজগির থেকে ১১ কিমি উত্তরে নালন্দা। দেখে নিন বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ ও সংলগ্ন মিউজিয়াম।
এর পর চলুন ১৮ কিমি দূরে পাওয়াপুরী – প্রসিদ্ধ জৈনতীর্থ, ২৪তম জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের নির্বাণস্থল। দেখুন কমল সরোবরে জলমন্দির। এক কিমি দূরে মহাবীরের প্রথম উপদেশস্থল। রয়েছে জৈন শ্বেতাম্বর মন্দির। আরও অনেক জৈন মন্দির আছে পাওয়াপুরীতে।
পঞ্চম দিন – রাজগীরে ঘোরাঘুরি ও রাত্রিবাস রাজগীর।
রাজগীরে কী দেখবেন
রাজগীরের বয়স কত? ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজগীরের নাম ছিল রাজগৃহ। অজাতশত্রু নাম রাখেন গিরিব্রজ। জরাসন্ধেরও রাজধানী ছিল এই রাজগৃহ। রামায়ণেও উল্লেখ আছে রাজগৃহের। বুদ্ধের আগমনে মৌর্যসম্রাট বিম্বিসার দীক্ষা নেন তাঁর কাছে। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক লেখা হয় এই রাজগৃহে। মহাবীর তাঁর প্রথম ধর্মসভা করেন রাজগৃহে। এমনই মাহাত্ম্য এই জায়গার।
(১) হট স্প্রিং – আধুনিক রাজগীরের অন্যতম আকর্ষণ, বেণুবনের দক্ষিণ-পুবে সরস্বতী নদী পেরিয়ে। ঝরনাধারার নীচে ভূ-গর্ভস্থ মন্দিরে মূর্তি হয়েছে গৌতম, ভরদ্বাজ, বিশ্বামিত্র, জমদ্যগ্নি, দুর্বাসা, বশিষ্ঠ ও পরাশর তথা সপ্তঋষির। পাহাড় ঢালে সাতটি ধারায় বেরিয়ে আসছে হট স্প্রিং-এর জল। তারতম্য রয়েছে উষ্ণতার। অদূরে জাপানি প্যাগোডা।
(২) অজাতশত্রু দুর্গ – পাহাড় কেটে পরিখাবৃত দুর্গ। ৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে গড়েন বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রু। ৩২টি প্রবেশদ্বারের মধ্যে একটিও অক্ষত।
(৩) অজাতশত্রু স্তূপ।
(৪) আম্রবন বা জীবকের আমবাগান।
(৫) বিম্বিসারের জেল – ১.৮ মিটার পুরু দেওয়াল, ১৮.৫৮ বর্গ মিটার জমির ওপর তৈরি জেলে পুত্র অজাতশত্রুর হাতে বন্দি ছিলেন বিম্বিসার।
(৬) বিম্বিসারের খাজাঞ্চিখানা তথা স্বর্ণভাণ্ডার– আকারে অনেকটা গুহার মতো।
(৭) মনিয়ার মাঠ – পাহাড়ের নিচুতে সমতলে এক উদ্যানভূমি। এখানে রাজসূয়, অশ্বমেধ যজ্ঞ হত। কিংবদন্তি, এখানেই ভীম ও জরাসন্ধের মধ্যে ২৮ দিনব্যাপী দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলে এবং জরাসন্ধের মৃত্যু হয়।
(৮) জয়প্রকাশ নারায়ণ উদ্যান – মনিয়ার মাঠের বিপরীতে।
(৯) শোনভাণ্ডার – উদ্যানের অদূরেই, জরাসন্ধের ধনাগার।
(১০) বেণুবন বিহার – বিম্বিসারের প্রমোদকানন, বুদ্ধও বাস করেছেন এখানে, এখন ডিয়ার পার্ক তথা চিড়িয়াখানা, বেণুবনের জলাশয়ে খেলা করে মাছ।
(১১) বীরায়তন ব্রাহ্মী কলা মন্দিরম – দর্শনী দিয়ে প্রবেশ, দেখুন পুতুলে মহাবীরের জীবন আখ্যান।
(১২) বিশ্বশান্তি স্তূপ – শহর থেকে ১২ কিমি দূরে রত্নগিরি পাহাড়চুড়োয় জাপানি বৌদ্ধসংঘের তৈরি। শহর থেকে কুণ্ড পেরিয়ে পাঁচ কিমি দূরে গৃধ্রকূট পাহাড় থেকে ৬০০ মিটার বৈদ্যুতিন রোপওয়েতেসাত মিনিট যেতে হয়। হেঁটেও ওঠা যায় শান্তিস্তূপে।
এ ছাড়াও রাজগীরে রয়েছে বহু জৈন মন্দির, বার্মিজ মন্দির, বুদ্ধ মন্দির, আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম, শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ইত্যাদি।
কোথায় থাকবেন
পটনা, গয়া এবং রাজগিরে বিহার পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল রয়েছে। অনলাইনে বুকিং-এ কিছু সমস্যা হয়। তাই যোগাযোগ করুন বিহার পর্যটনের কলকাতা অফিসে। ঠিকানা- ২৬বি, ক্যামাক স্ট্রিট, দূরভাষ- ২২৮০৩৩০৪।
রয়েছে অনেক বেসরকারি হোটেলও। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাদের সন্ধান পেয়ে যাবেন।
রাজগীরে রয়েছে বহু হলিডে হোম। সন্ধানের জন্য দেখুন [You must be registered and logged in to see this link.]
কী ভাবে ঘুরবেন
(১) গয়ায় পৌঁছে সকালের দিকে মন্দির দর্শন করে দুপুরের খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে চলুন বরাবর গুহা।
(২) রিকশা ভাড়া করে ঘুরে নিতে পারেন বুদ্ধগয়া।
(৩) রাজগীরে অনেক বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সি আছে যারা নালন্দা- পাওয়াপুরী ঘুরিয়ে আনে। বাস বা শেয়ার ট্রেকারে রাজগীর থেকে নালন্দা, নালন্দা থেকে পাওয়াপুরী যাওয়া যায়। তার পর পায়ে পায়ে নালন্দা আর স্থানীয় যানে ঘুরে নেওয়া যায় পাওয়াপুরী। রাজগীর থেকে ভাড়া গাড়ি করে ঘোরার ব্যবস্থা তো আছেই।
(৪) রাজগীরে ঘোরার জন্য রয়েছে রিকশা অথবা টাঙা।
কী ভাবে ফিরবেন
রাজগীর থেকে হাওড়া ফেরার একমাত্র ট্রেন রাজগীর প্যাসেঞ্জার। তবে ট্রেনটি প্রচুর সময় নেয়। তাই রাজগীর থেকে চলুন বখতিয়ারপুর জংশন। বখতিয়ারপুর থেকে কলকাতাগামী অনেক ট্রেন রয়েছে। তবে পটনা-কলকাতা এক্সপ্রেসে এখনও আসন খালি রয়েছে। ট্রেনটি প্রতি দিন সন্ধ্যা ৬:৩৬-এ বখিতিয়ারপুর থেকে ছেড়ে কলকাতা স্টেশন পৌঁছোয় পরের দিন সকাল সাড়ে সাতটায়।
মনে রাখবেন
(১) বুদ্ধগয়ার মিউজিয়ামও শুক্রবার ছাড়া ১০টা-৫টা খোলা।
(২) বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি দর্শনে টিকিট লাগে, ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা।
(৩) রাজগীরের হট স্প্রিং-এ স্নান করতে হলে ভিড় এড়াতে চলুন খুব ভোরে কিংবা সন্ধের পরে।
(৪) রাজগীরের রোপওয়ে চলে সকাল সোয়া ৮টা থেকে দুপুর ১টা, দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টা।
===========================
ট্রেনে গয়া যাওয়া সব থেকে ভালো।
গয়ায় কী দেখবেন
(১) বিষ্ণুপাদ মন্দির – অন্তঃসলিলা ফল্গুর পাড়ে। কারুকার্যময় আট সারি স্তম্ভ, ৩০ মিটার অষ্টকোণি চূড়া। ভিতরে পাথরে বিষ্ণুর পায়ের ছাপ।
(২) পাতালেশ্বর শিব ও অক্ষয়বট – বিষ্ণুপাদ মন্দিরের এক কিমি দূরে ১০০০ সিঁড়ি উঠে ব্রহ্মযোনি পাহাড়, চুড়োয় পাতালেশ্বর শিব আর নিচুতে অক্ষয়বট।
(৩) সূর্য মন্দির – বিষ্ণুপাদ মন্দিরের উত্তরে শোন নদীর তীরে।
(৪) বরাবর গুহা – গয়া-পটনা লোক্যাল ট্রেনে একটি স্টেশন পরেই বেলা, এখান থেকে রিকশা বা টাঙায় ১০ কিমি। গয়া থেকে গাড়ি বা বাসেও আসতে পারেন। সম্রাট অশোকের সময়ে তৈরি গুহা। সাতটি গুহা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তিন ধরনের গুহা – নাগার্জুনীয় গুহা, পঞ্চপাণ্ডব গুহা ও কুটিরাকার গুহা। গুহার কাছেই আনন্দ সরোবর, সিদ্ধেশ্বর পাহাড়।
পরের দিন– চলুন বোধগয়া, বাসে বা গাড়ি, অটো, টাঙায়। ভারত সেবাশ্রম আশ্রমের কাছে কাছারি চক থেকে শেয়ার অটোয় আসা যায়। রাত্রিবাস গয়া।
বুদ্ধগয়ায় কী দেখবেন
নিরঞ্জনা নদীর তীরে উরুবিল্ব গ্রামে পিপুল গাছের নীচে বোধি লাভ করে গৌতম হলেন বুদ্ধদেব। সেই নিরঞ্জনা আজ ফল্গু, উরুবিল্ব আজ বুদ্ধগয়া আর পিপুল গাছ আজ বোধিবৃক্ষ।
(১) বোধিবৃক্ষ – পাথরে পায়ের ছাপ বুদ্ধের।
(২) সুজাতা দিঘি – পাশেই। কথিত আছে, এই দিঘির জলে স্নান করে সুজাতা পায়েস নিবেদন করতেন বুদ্ধদেবকে।
(৩) মহাবোধি মন্দির – ৬০ ফুট প্রশস্ত, ১৮০ ফুট উঁচু পিরামিডধর্মী চুড়োওয়ালা দ্বিতল মন্দির। ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় ৮০ ফুটের বুদ্ধমূর্তি। প্রবেশফটক বৌদ্ধধারায় দক্ষিণ ভারতীয় শৈলীতে তৈরি। পণ্ডিতদের মতে, সম্রাট অশোকের দানের ১ লক্ষ স্বর্ণমুদ্রায় উপগুপ্তের হাতে তৈরি এই মন্দির। বহু বার নানা কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে এই মন্দির, আবার সংস্কার হয়েছে। মন্দিরের উত্তরে চক্রমাণা (বুদ্ধের ধ্যানস্থান), ঘেরা প্রাঙ্গণে অনিমেষলোচন চৈত্য(এক সপ্তাহ ঠায় দাঁড়িয়ে বুদ্ধ পিপুল গাছ অবলোকন করেন), মোহান্তর মনাস্ট্রি, রত্নাগার।
(৪) সুজাতা মন্দির – মহাবোধির দু’ কিমি পশ্চিমে।
(৫) মুচলিন্ড সরোবর – ৩ কিমি দূরে, নাগরাজ মুচলিন্ড ফণা মেলে ধ্যানস্থ বুদ্ধকে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতেন।
(৬) তিব্বতীয় মনাস্ট্রি – মহাবোধির উত্তর-পশ্চিমে বাজার পেরিয়ে ১৯৩৮-এ তৈরি।
(৭) চিনা বুদ্ধিস্ট মন্দির – অদূরেই ১৯৪৫-এ তৈরি সাদা রঙের মন্দির।
(৮) মিউজিয়াম – চিনা বুদ্ধিস্ট মন্দিরের বিপরীতে, বৌদ্ধ স্থাপত্যের নানা নিদর্শন।
(৯) থাই মনাস্ট্রি – সামনে এগোতেই প্যাগোডাধর্মী মন্দির।
(১০) ভুটান মনাস্ট্রি – আর একটি প্যাগোডাধর্মী মন্দির।
(১১) তিব্বতীয় বুদ্ধ মন্দির।
(১২) জাপানি বুদ্ধ মন্দির।
এ ছাড়াও মায়ানমার, বাংলাদেশ, লাওস, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামও মনাস্ট্রি গড়েছে। খোলা আকাশের নীচে ২৫ মিটার উঁচু বুদ্ধমূর্তিটিও পথ চলতে চলতে দেখে নিন।
তৃতীয় দিন – চলুন রাজগীর। রাত্রিবাস রাজগীর।
গয়া থেকে রাজগীরের দূরত্ব ৬০ কিমি। গাড়ি বা বাস পাওয়া যাবে। গয়া থেকে বখতিয়ারপুরগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনেও রাজগীর আসতে পারেন। ট্রেনটি রোজ সকাল ৮:০৭-এ গয়া থেকে ছেড়ে রাজগীর পৌঁছোয় সকাল এগারোটায়।
চতুর্থ দিন – ঘুরে আসুন নালন্দা, পাওয়াপুরী। রাত্রিবাস রাজগীর।
রাজগির থেকে ১১ কিমি উত্তরে নালন্দা। দেখে নিন বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ ও সংলগ্ন মিউজিয়াম।
এর পর চলুন ১৮ কিমি দূরে পাওয়াপুরী – প্রসিদ্ধ জৈনতীর্থ, ২৪তম জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের নির্বাণস্থল। দেখুন কমল সরোবরে জলমন্দির। এক কিমি দূরে মহাবীরের প্রথম উপদেশস্থল। রয়েছে জৈন শ্বেতাম্বর মন্দির। আরও অনেক জৈন মন্দির আছে পাওয়াপুরীতে।
পঞ্চম দিন – রাজগীরে ঘোরাঘুরি ও রাত্রিবাস রাজগীর।
রাজগীরে কী দেখবেন
রাজগীরের বয়স কত? ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রাজগীরের নাম ছিল রাজগৃহ। অজাতশত্রু নাম রাখেন গিরিব্রজ। জরাসন্ধেরও রাজধানী ছিল এই রাজগৃহ। রামায়ণেও উল্লেখ আছে রাজগৃহের। বুদ্ধের আগমনে মৌর্যসম্রাট বিম্বিসার দীক্ষা নেন তাঁর কাছে। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক লেখা হয় এই রাজগৃহে। মহাবীর তাঁর প্রথম ধর্মসভা করেন রাজগৃহে। এমনই মাহাত্ম্য এই জায়গার।
(১) হট স্প্রিং – আধুনিক রাজগীরের অন্যতম আকর্ষণ, বেণুবনের দক্ষিণ-পুবে সরস্বতী নদী পেরিয়ে। ঝরনাধারার নীচে ভূ-গর্ভস্থ মন্দিরে মূর্তি হয়েছে গৌতম, ভরদ্বাজ, বিশ্বামিত্র, জমদ্যগ্নি, দুর্বাসা, বশিষ্ঠ ও পরাশর তথা সপ্তঋষির। পাহাড় ঢালে সাতটি ধারায় বেরিয়ে আসছে হট স্প্রিং-এর জল। তারতম্য রয়েছে উষ্ণতার। অদূরে জাপানি প্যাগোডা।
(২) অজাতশত্রু দুর্গ – পাহাড় কেটে পরিখাবৃত দুর্গ। ৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে গড়েন বিম্বিসারের পুত্র অজাতশত্রু। ৩২টি প্রবেশদ্বারের মধ্যে একটিও অক্ষত।
(৩) অজাতশত্রু স্তূপ।
(৪) আম্রবন বা জীবকের আমবাগান।
(৫) বিম্বিসারের জেল – ১.৮ মিটার পুরু দেওয়াল, ১৮.৫৮ বর্গ মিটার জমির ওপর তৈরি জেলে পুত্র অজাতশত্রুর হাতে বন্দি ছিলেন বিম্বিসার।
(৬) বিম্বিসারের খাজাঞ্চিখানা তথা স্বর্ণভাণ্ডার– আকারে অনেকটা গুহার মতো।
(৭) মনিয়ার মাঠ – পাহাড়ের নিচুতে সমতলে এক উদ্যানভূমি। এখানে রাজসূয়, অশ্বমেধ যজ্ঞ হত। কিংবদন্তি, এখানেই ভীম ও জরাসন্ধের মধ্যে ২৮ দিনব্যাপী দ্বন্দ্বযুদ্ধ চলে এবং জরাসন্ধের মৃত্যু হয়।
(৮) জয়প্রকাশ নারায়ণ উদ্যান – মনিয়ার মাঠের বিপরীতে।
(৯) শোনভাণ্ডার – উদ্যানের অদূরেই, জরাসন্ধের ধনাগার।
(১০) বেণুবন বিহার – বিম্বিসারের প্রমোদকানন, বুদ্ধও বাস করেছেন এখানে, এখন ডিয়ার পার্ক তথা চিড়িয়াখানা, বেণুবনের জলাশয়ে খেলা করে মাছ।
(১১) বীরায়তন ব্রাহ্মী কলা মন্দিরম – দর্শনী দিয়ে প্রবেশ, দেখুন পুতুলে মহাবীরের জীবন আখ্যান।
(১২) বিশ্বশান্তি স্তূপ – শহর থেকে ১২ কিমি দূরে রত্নগিরি পাহাড়চুড়োয় জাপানি বৌদ্ধসংঘের তৈরি। শহর থেকে কুণ্ড পেরিয়ে পাঁচ কিমি দূরে গৃধ্রকূট পাহাড় থেকে ৬০০ মিটার বৈদ্যুতিন রোপওয়েতেসাত মিনিট যেতে হয়। হেঁটেও ওঠা যায় শান্তিস্তূপে।
এ ছাড়াও রাজগীরে রয়েছে বহু জৈন মন্দির, বার্মিজ মন্দির, বুদ্ধ মন্দির, আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম, শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ইত্যাদি।
কোথায় থাকবেন
পটনা, গয়া এবং রাজগিরে বিহার পর্যটন উন্নয়ন নিগমের হোটেল রয়েছে। অনলাইনে বুকিং-এ কিছু সমস্যা হয়। তাই যোগাযোগ করুন বিহার পর্যটনের কলকাতা অফিসে। ঠিকানা- ২৬বি, ক্যামাক স্ট্রিট, দূরভাষ- ২২৮০৩৩০৪।
রয়েছে অনেক বেসরকারি হোটেলও। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাদের সন্ধান পেয়ে যাবেন।
রাজগীরে রয়েছে বহু হলিডে হোম। সন্ধানের জন্য দেখুন [You must be registered and logged in to see this link.]
কী ভাবে ঘুরবেন
(১) গয়ায় পৌঁছে সকালের দিকে মন্দির দর্শন করে দুপুরের খাওয়া তাড়াতাড়ি সেরে চলুন বরাবর গুহা।
(২) রিকশা ভাড়া করে ঘুরে নিতে পারেন বুদ্ধগয়া।
(৩) রাজগীরে অনেক বেসরকারি ট্রাভেল এজেন্সি আছে যারা নালন্দা- পাওয়াপুরী ঘুরিয়ে আনে। বাস বা শেয়ার ট্রেকারে রাজগীর থেকে নালন্দা, নালন্দা থেকে পাওয়াপুরী যাওয়া যায়। তার পর পায়ে পায়ে নালন্দা আর স্থানীয় যানে ঘুরে নেওয়া যায় পাওয়াপুরী। রাজগীর থেকে ভাড়া গাড়ি করে ঘোরার ব্যবস্থা তো আছেই।
(৪) রাজগীরে ঘোরার জন্য রয়েছে রিকশা অথবা টাঙা।
কী ভাবে ফিরবেন
রাজগীর থেকে হাওড়া ফেরার একমাত্র ট্রেন রাজগীর প্যাসেঞ্জার। তবে ট্রেনটি প্রচুর সময় নেয়। তাই রাজগীর থেকে চলুন বখতিয়ারপুর জংশন। বখতিয়ারপুর থেকে কলকাতাগামী অনেক ট্রেন রয়েছে। তবে পটনা-কলকাতা এক্সপ্রেসে এখনও আসন খালি রয়েছে। ট্রেনটি প্রতি দিন সন্ধ্যা ৬:৩৬-এ বখিতিয়ারপুর থেকে ছেড়ে কলকাতা স্টেশন পৌঁছোয় পরের দিন সকাল সাড়ে সাতটায়।
মনে রাখবেন
(১) বুদ্ধগয়ার মিউজিয়ামও শুক্রবার ছাড়া ১০টা-৫টা খোলা।
(২) বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি দর্শনে টিকিট লাগে, ভোর ৫টা থেকে দুপুর ১২টা এবং দুপুর ২টো থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা।
(৩) রাজগীরের হট স্প্রিং-এ স্নান করতে হলে ভিড় এড়াতে চলুন খুব ভোরে কিংবা সন্ধের পরে।
(৪) রাজগীরের রোপওয়ে চলে সকাল সোয়া ৮টা থেকে দুপুর ১টা, দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৫টা।