*বন্ধুরা মিলে একদিনের শান্তিনিকতন*

আমরা ছয় বন্ধু প্রতি বছর শীতকালে কাছে পিঠে কোথাও বেড়িয়ে পড়ি।কখনো চিড়িয়াখানা তো কখনো সাইন্সশিটি।এইবার ঠিক করা হলো শান্তিনিকেতন।কিন্তু এই ব্যাস্ততার দিনে সময় পর্যাপ্ত।শুধু রবিবার ছাড়া কারুর সময় নেই।অনেকে বললো একদিনে অতদূর গিয়ে ঘুরে ফিরে আসা সম্ভব না।কিন্তু আমরা খানিকটা রিস্ক নিয়েই শুরু করলাম প্ল্যানিং।

একমাসের প্ল্যানিং এর পর আমাদের  একদিনের ভ্রমণ শান্তিনিকেতন। ভোর ৪.০২ এর লোকালে আন্দুল স্টেশন থেকে আমরা রওনা দিলাম হাওড়ার পথে।এরপর হাওড়া থেকে সকাল ৬.০৫ এর গণদেবতায় উঠে পরলাম।রিজার্ভেশন থাকায় বসতে অসুবিধা হয়নি ।সকলে কিছু না কিছু খাবার নিয়ে নিয়েছিল,  তাই কিছুটা খেতে খেতে কিছুটা গল্প করে এবং কিছু ঘুমিয়ে কখন যে আড়াই ঘণ্টা কেটে গেলো বুঝতেই পরলাম না।ট্রেন সঠিক সময় পৌঁছানোর জন্য আমরা ৮.৪৫ এ বোলপুরে নেমে গেলাম।
        এরপর আমরা দরদাম করে একটি টোটো ভাড়া করলাম ছয় জনের ৭৫০ টাকা(প্রথমে ১৪০০ টাকা বলে)।৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা অবধি ঘোরাবেন এবং আমাদের ট্রেনের সময় এর আগে স্টেশনে পৌঁছে দেবেন।সুতরাং কথামত আমরা বেড়িয়ে পরলাম এবং টোটো কাকুর উপদেশ মতো একটি দোকানে এবং চা জলখাবার সেরে নিলাম। বলাবাহুল্য আমাদের টোটো কাকুটি খুব ভালো ছিল এবং খাবারের দোকানটিতে অত্যন্ত কম দামে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
       
           এরপর টোটো কাকুর উপদেশ মতো আমরা চললাম কোপাই নদীর দিকে ।যাওয়ার পথে কোথাও বাউলের গান কোথাও বিদ্যালয়ের শিশুদের কলকাকলি  তার সাথে সবুজের সমারোহ আমাদের যেনো ভুলিয়ে দিয়েছিল সকল ব্যস্ততা সকল ক্লান্তি।কোপাই নদীর জল খুব কম ছিল।কিন্তু কাশফুল ও মনোরম পরিবেশে আমদের মন ভুলিয়ে রেখেছিল।এরকম পরিবেশের দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি না করলে হয়? যে যার মতো ছবির তোলার পর বেড়িয়ে পরলাম পরবর্তী গন্তব্যস্থল।
           
  বাংলাদেশ ভবন। একটি মিউজিয়াম। এখানে কোনো এন্ট্রি ফি ছিল না শুধু সকলের আই কার্ড লাগছিল।ভিতরে বাংলা ভাষার ইতিহাসের অনেক নিদর্শন ছিল,একটি লাইব্রেরী ছিল।বাইরে বিশাল বাগান।এটিও খুব সুন্দর জায়গা।
        সময়ের অভাবে আমরা বেশিক্ষণ ওখানে থাকতে পারিনি।
        এরপর আমরা বেড়িয়ে পরলাম মিউজিয়াম এর দিকে।এখানে সকলের ফি ৫০ টাকা এবং শুধু স্টুডেন্ট হলে ১০ টাকা।স্টুডেন্টদের আই কার্ড বাধ্যতামূলক। মিউজিয়ামের ভিতরে কবিগুরুর ব্যাক্তিগত আসবাপত্র থেকে শুরু করে তাঁর সাহিত্যের নিদর্শন,নোবেল এর কপি, সবমিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। যা বলে হয়ত শেষ করা যাবে না।

এরপর আমরা বেড়িয়ে পরলাম আমাদের পুরো ভ্রমণের সবচেয়ে প্রিয় জায়গা সৃজনী গ্রাম।আমি এর আগে শান্তিনিকতন অনেকবার এলেও এই জায়গায় এই প্রথম এলাম।এখানে এন্ট্রি ফি ১০ টাকা এবং ক্যামেরার জন্য ১০ টাকা দিতে হচ্ছিল (যদিও ভিতরে কেউ টিকেট চেক করছিল না)।যাই হোক এই খানে নটি রাজ্যের ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও এখানে পুরো গ্রমটাই শিল্পে মোড়া ।কোথাও সুন্দর মূর্তি, কোথাও আর্টিফিশয়াল মাটির ঘর, আমাদের আবার কোথাও সাঁওতাল মেয়েদের সঙ্গে নাচের তাল আমাদের মুগ্ধ করেছে।এখানে যেন সত্যি গণ ভেসে আসছিলো "গ্রাম ছাড়াওই রাঙা মাটির পথ ,আমার মন ভুলায় রে"।

        ওখান থেকে বেড়িয়ে আমরা বেড়িয়ে পরলাম সোনাঝুরি গ্রামে।ওখানে আমরা রাম শ্যমে দুপুরের ভুরিভোজ সেরে নিলাম।অসম্ভব সুন্দর রান্না এবং তেমন অ্যাপায়ন।খাওয়া সেরে আমরা সোনাঝুরির হতে কেনাকাটা করতে শুরু করলাম।অল্প দামে এত সুন্দর জিনিস দেখে সকলে এত জিনিস কিনে নিলো যা আমাদের পক্ষে বয়ে নিয়ে যাওয়া কষ্টকর হচ্ছিল।যাইহোক এরপর আমরা বিশ্বভারতির দিকে এগোলাম।
       বিশ্বভারতিতে উপাসনা গৃহ ,কলাভবন,গাছের তলার ক্লাসরুম প্রভৃতি দেখতে দেখতে আমাদের অনেক টা সময় চলে যায়।
       এরপর আমরা ফেরার জন্য প্রস্তুত হই।টোটো কাকু আমাদের যথাসময়ে স্টেশনে পৌঁছে দেয়।৫.৩৭ এর শহীদ এক্সপ্রেসে আমরা হওড়া স্টেশনে পৌঁছে যাই প্রায় ৮.২০ তে।
#shantiniketan #sonajhuri