তারপীঠ , শান্তিনিকেতন , বক্রেশ্বর একটি গ্রামীণ পর্যটন স্থল
গত ২৬ ই জুলাই শুক্রবার মা বাবা কে নিয়ে গিয়েছিলাম মায়ের মন্দিরে পুজো দিতে । রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি হয়েই যাচ্ছে । থামার নাম গন্ধ নেই । ভাবলাম যাওয়াটাই কেন্সেল হয়ে যাবে । তাও মনের জোরে বেড়িয়ে পড়লাম যাত্রাপথে ।  হয়েই যাচ্ছে,থামার নাম গন্ধ নেই । কি যে হবে কি যানি । পৌছাতে পারবো কিনা সেটাই চিন্তা । মনের জোরে মায়ের নাম করে এগিয়ে চললাম । সকাল 7 টায় ট্রেন । চেপে পড়লাম ট্রেন এ । কত রকম খাবার ট্রেনে উঠেছিল। খাবার এর কোন অভাব ছিল না। কি মনোরম দৃশ্য চারিদিকের । ধান জমি তে ধান চাষ করার জন্য ট্রাক্টর চলছে । চারিদিকের কি অপরূপ শোভা , সে যেন এক অন্য জগতে আমদের কে নিয়ে চলল ।
পৌঁছে গেলাম রামপুরহাট স্টেশনে । ওখান থেকে একটা অটো ভাড়া করে তারাপীঠ মায়ের মন্দিরে পৌছালাম। অটো ভাড়া জন পিছু ২০ টাকা করে নিল । ওখানে পৌঁছেই একটা এসি হোটেল বুকিং করলাম একদম মায়ের মন্দিরে পুজো দেবার রাস্তায়। হোটেল ভাড়া একদিনের জন্য ১০০০ টাকা । হোটেলে একটু ফ্রেস হয়ে খেতে চলে গেলাম রেস্টুরেন্ট এ । নিরামিষ খাবার ৪০ টাকা করে নিল পেট চুক্তি হিসাবে, মানে জত খুশি খাও । মাছ নিলে আরও ৩০ টাকা লাগলো । খাবার খেয়ে দুপুর ৩ সময় দ্বারকা নদীর ব্রিজের ওপার এ গিয়ে একটা টোটো রিজার্ভ করে চললাম ইস্কন এর মন্দির আর বামদেবের মন্দিরে । টোটো রিজার্ভ নিল ২৫০ টাকা । গ্রামের রাস্তা দিয়ে চললাম মাঠ এর পর মাঠ পার করে চললাম ইস্কন এ । কি অপূর্ব মন্দির । কি শান্তি। শান্ত পরিবেশ। রাধা মাধব এর মূর্তি দেখে মন ভরে যাবে । বাইরে মালপোয়া আর গরম গরম সিঙ্গারা বিক্রি করছিল ইস্কন এর সদস্য রা । কি অপূর্ব খেতে । ওখান থেকে চললাম বামদেব বাবার বাড়িতে । মা বাবার শান্তিতেই আমার শান্তি। ওনারা খুব আনন্দ পাচ্ছিল। বামদেব বাবার মূর্তি ও তারা মায়ের মূর্তি দেখে ফিরে চলে আসলাম সন্ধ্যা ৭ সময় হোটেল এ। দ্বারকা নদীর ওপার থেকে দেশি খাঁসির মাংস কিনে রান্না করতে দিলাম ওখান কার স্থানীয় মহিলাদের কাছে। ১০০ টাকা নিল রান্না করে দিতে ওনারা । কি অপূর্ব স্বাদ না খেলে বোঝা যাবে না । তারপর মায়ের মন্দিরের রাস্তায় দোকান পাঠ ঘুরে ঘুরে দেখলাম। ১০০০ টাকা কিলো পেয়ায়ার বাড়ির জন্য কিনে নিলাম। সামনে বানিয়ে দিল । রাত ১০ সময় খাবার টা হোটেল এ এনে খেয়ে শুয়ে পড়লাম সবাই ।
ভোর ৬ টার সময় উঠে স্নান করে চললাম মায়ের পুজো দিতে । দুটো মালা কিনে নিলাম। পৌঁছে গেলাম আমাদের পাণ্ডার দোকানে ।খুব পুরোন মানুষ তিনি। খুব নাম ডাক ওখানে। নাম হোল সুদীপ চ্যাটারজি। স্টল নাম্বার ২০ । আমাদের ডালা সাজিয়ে দিল ওনারা। ২০০ টাকার ভি আই পি পাসে পৌঁছে গেলাম মায়ের গর্ভ গৃহে । ভক্তি ভরে পুজো দিলাম । পাশেই শ্মশান ঘুরে দেখলাম ।
এবার রওনা দিলাম শান্তিনিকেতন এর উদ্দেশে। রামপুরহাট স্টেশন থেকে সকাল ৯.৩০ মিনিটে সাহেবগ্ঞ্জ বর্ধমান লোকাল ট্রেন ধরে বোলপুর এসে পৌছালাম ১১.৩০ মিনিট এ ।আগে থেকেই অটো বুক করা ছিল । অটো ড্রাইভার আমদের নিয়ে চলল শান্তিনিকেতন হোটেল এ। তিন তলা ঝা চকচকে হোটেল। হোটেল এর ঘর বুক করলাম ১০০০ টাকা দিয়ে । হোটেল এর নিচেই ছিল রেস্টুরেন্ট এটাচ ।খুবি নর্মাল খাবারের দাম । দুপুরের খাবার ওখানে খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ২.৩০ নাগাদ শান্তিনিকেতন দেখতে অটো করে । ছাতিম তলা, কাচঘর, নাটক ঘর, সোনাঝুরি, খোয়াই এর শাল বন, শিল্প মন্দির, কোপাই নদী, মিউজিয়াম । আদিবাসী পাড়া , কঙ্কাইতলা মায়ের মন্দির। এবার হোটেল এ ফেরার পালা ।ফিরে আসলাম ৬.৩০ নাগাদ হোটেল এ ।রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
পরের দিন সকাল ৭ টার সময় বেড়িয়ে পড়লাম বক্রেশ্বর এর পথে । অনেক দুরের রাস্তা । অটো ড্রাইভার আমদের নিয়ে চলল বক্রেশ্বর। চারিদিকে কি সুন্দর শোভা । বনের মধ্যে দিয়ে অটো চলল আমাদের।পি ডাবলু ডির রাস্তা ঘাট খুব সুন্দর ছিল। বক্রেশ্বর নদী পেড়িয়ে আমরা পৌছালাম সিউরি তে। ওখানে গিয়ে ব্রেকফাস্ট করে আবার চললাম বক্রেশ্বর এর পথে ৯.৩০ নাগাদ পৌঁছে গেলাম বক্রেশ্বর এ । গরম জলের কুণ্ডে ঢুকতে ৫ টাকা টিকিট কেটে গরম জলে স্নান করলাম। পুরুষ মহিলা আলাদা স্নানের ঘর বাথরুম ছিল। কোন অসুবিধে হয়নি কারো। প্রায় ১ ঘণ্টা স্নান করে ওখান থেকে শিব মন্দির দেখে আবার বোলপুরের দিকে রওনা দিলাম । ১২ সময় পোঁছে গেলাম বোলপুর এ । অটো ড্রাইভার কে ১৫০০ টাকা ভাড়া দিলাম শান্তিনিকেতন ও বক্রেশ্বর ঘোরানোর জন্য । রাস্তার ধারে হোটেল এ খাওয়া দাওয়া করে বোলপুর স্টেশন থেকে কবিগুরু এক্সপ্রেস ধরে বাড়ি ফিরলাম । গাড়ি ভাড়া ৫৫ টাকা করে ছিল। দুপুর ২.১০ মিনিট আমাদের গাড়ি ছাড়লো বোলপুর স্টেশন থেকে । ৩ টে স্টপেজে পৌঁছে গেলাম ব্যান্ডেল স্টেশনে বিকাল ৪.৩০ নাগাদ ।
তারাপীঠ মায়ের মন্দির এর পাণ্ডা সুদীপ দা = ৯৭৩২০১৩৭৭১ { ২০ নং স্টল }
অটো ড্রাইভার নাম্বার = ৯৭৩২০২৬৩৪৮ { বোলপুর }