#অমৃতের_সন্ধানে
#অমৃতসর এর অমৃত
বন্দী বীর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পঞ্চনদীর তীরে
বেণী পাকাইয়া শিরে
দেখিতে দেখিতে গুরুর মন্ত্রে
জাগিয়া উঠেছে শিখ
নির্মম নির্ভীক।
হাজার কণ্ঠে গুরুজির জয়
ধ্বনিয়া তুলেছে দিক্।
নূতন জাগিয়া শিখ
নূতন উষার সূর্যের পানে
চাহিল নির্নিমিখ।
‘ অলখ নিরঞ্জন '
মহারব উঠে বন্ধন টুটে
করে ভয়ভঞ্জন।
বক্ষের পাশে ঘন উল্লাসে
অসি বাজে ঝন্ঝন্।
পঞ্জাব আজি গরজি উঠিল,
‘ অলখ নিরঞ্জন! '
এসেছে সে এক দিন
লক্ষ পরানে শঙ্কা না জানে
না রাখে কাহারও ঋণ।
জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য,
চিত্ত ভাবনাহীন।
পঞ্চনদীর ঘিরি দশ তীর
এসেছে সে এক দিন।
*********
মানুষ ঘুরতে যায় বিভিন্ন কারণে,কখনও নিজেদের মন ও শরীরকে শান্তি প্রদান করার জন্য,একমুঠো অক্সিজেনের খোঁজে আবার কখনও ইতিহাসের খোঁজে আবার কখনও অজানার সন্ধান এ ।
কতকি রয়েছে মণি মুক্ত ছড়ানো এ দেশের পথে ।
অমৃতসরের মতো আকর্ষণীয় ঐতিহাসিক স্থান ভারতে কম ।অমৃতসর ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত পাঞ্জাবের রাজধানী। পঞ্চনদীর দেশ পাঞ্জাব, পাক ভারত বিভাজনের সময় দ্বিখণ্ডিত হয়। এই সময় এর পাঁচ নদীর তিনটি নদী ভারতের ভাগে পড়ে।এই শহর সেই দেশভাগের নির্মম সত্য কেও বহন করে চলেছে।
মনের শান্তি,ইতিহাসের সাথে সাক্ষাত , নতুন খাবার খাওয়ার আনন্দ, শপিং তো আছেই আর সবচেয়ে বেশী যেটা আছে সেটা অনন্য এক অনুভব ,জাতীয়তা বোধের টান ।এ দেশের সাথে নিজের আত্মার সংযোগ অনুভব করার সুযোগ যেটা অমৃত সমান ।
শহরজুড়ে মাথায় পাগড়ি আর পরনে পাঞ্জাবি আর তাগড়াই চেহারার মানুষ । মুখে লম্বা দাড়ি। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি রঙিন বাড়ি। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঘোড়ার বিশাল ভাস্কর্য। প্রতি রাস্তা যেন ইতিহাসের কোনও গপ্প বলছে।
*********
#অমৃতসরের অমৃত স্বর্নমন্দির---
অমৃতসরের প্রধান আকর্ষণ স্বর্ণমন্দির। শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরুনানক একটি মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। এই সময় তিনি এই জলাশয়ের নাম রাখেন অমৃত সায়র। তার থেকেই শহরের নাম হয় অমৃতসর। গুরু নানক জীবদ্দশায় তাঁর এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। পরে শিখ গুরু অর্জুন সিং অমৃত সায়র-এর ধারে স্বর্ণ মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তার ও পরে হরগোবিন্দ সিংজির সময় সোনার পাতে মুড়ে ফেলা হয় মন্দির।পরে আবার উনিশ শতকের প্রথমদিকে মহারাজা রণজিৎ সিংহ একে সোনায় আবৃত করার কাজ শুরু করেন।
মন্দিরটিতে চারটি প্রবেশপথ; জীবনের সমস্ত পথ ও দিক থেকে আসা সকল মানুষের জন্য অবারিত দ্বার ।গোল্ডেন টেম্পল বা স্বর্ণ মন্দিরটি শিখদের জন্য একটি পবিত্র স্থান ও উপাসনার একটি জায়গা।
১৬শো খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে এই মন্দিরের শিখদের ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেব স্থাপন করা হয়। এই অংশের নাম হয় হরবিন্দ সাহিব। হরমন্দির সাহিবে ঢোকার দরজা চারদিকে চারটি।এটি সায়রের কেন্দ্র বিন্দু । জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের অবারিত দ্বার ।আর সেটা বোঝাবার জন্যেই এই চার দুয়ারের নির্মাণ বলা হয়। ভেতরে ঢুকলেই মন ভাল হয়ে যায়।গ্রন্থসাহেব রয়েছে সুন্দর কারুকার্যময় চাদরের নীচে। হালকা গান পরিবেশকে পবিত্র করছে। এর দুপাশে দুজন চামর দোলাচ্ছেন বয়স্ক ভক্তরা , একজন বসে পড়ছেন গ্রন্থ সাহেব । পুরো মেঝেতে কার্পেট পাতা । দেওয়ালের কারুকার্য নয়নাভিরাম । কোন ও ভক্ত এক দরজা দিয়ে ঢুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে, অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন তো কেউ কেউ বসে আছেন নিবেদন করছেন মনের কথা। এর দোতলায় অকাল তখত, গুরু গ্রন্থসাহিবের রাত্রিকালীন আবাস।আমরা রাত্রে যখন এসেছি তখন জানলাম প্রতিরাতে সোনার পালকিতে করে বাজনা সহকারে তাঁকে ওপরে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার ভোররাতে নামিয়ে আনা হয় একইভাবে।
এই মন্দিরে প্রবেশের আগে মহিলা পুরুষ সকলকেই মাথা ঢেকে নিতে হয়।সবচেয়ে অবাক হলাম সকল ভক্তদের এই মন্দির পরিষ্কার রাখার জন্য প্রচেষ্টা দেখে ।ভীষণ ভাল লাগল ।
বাইরে থেকে ঢুকেই একটু গিয়ে অমৃত সরোবর, যার চারদিকে সাদা ও কারুকার্য করা মার্বেলে মোড়া রাস্তা। সরোবরের জল পবিত্র মনে করে মাথায় স্পর্শ করান, অনেকে স্নানও করে সরোবরের জলে পা ডুবিয়ে পাঁচবার চোখে মুখে দু’হাত ভরা জলের ঝাপটা দিয়ে মনষ্কামনা করেন অনেকেই ।
সরবরের স্বচ্ছ জলে মাছ ও প্রচুর । একদিক দিয়ে ঢুকে হরমন্দির সাহিব দর্শন করে অপর দিক দিয়ে বেরোলে অমৃত সরোবরকে পরিক্রমা করা হয়ে যায়। সরোবরটি যথেষ্ট বড়ো এবং চত্বরটি বিশাল। হরমন্দির সাহিবের আশেপাশে সরোবরের ধার দিয়ে আরো গুরদ্বোয়ারা আছে। এখানে প্রসাদ বিতরণ করা হয় হালুয়া।তার স্বাদ স্বর্গের স্বপ্নেরমত ।
সরোবর ঘিরে এক লোকগাথা আছে।এখানে দুঃখ ভঞ্জনি বেড়ি নামে এক জায়গা রয়েছে। এক ধনী জমিদারের পাঁচটি কন্যা ছিল। তিনি তাঁর কনিষ্ঠ কন্যাকে একজন কুষ্ঠরোগীর সঙ্গে বিবাহ দেন।সে তবুও তাঁর স্বামীকে ভালোবাসে যত্ন করতো। সে স্বামীকে অমৃতসরে নিয়ে আসে ও গুরুর রান্নাঘরের মধ্যে খাবার রান্নার দায়িত্ব পান। একদিন সে তার স্বামীকে একটি বেড় গাছের নীচে বসিয়ে কাজে যান। কিছু কাক পুকুরের জলে ডুব দিয়ে কালো থেকে সাদা হয়ে যাচ্ছে । তিনি জলের মধ্যে ডুব দিলেন ও সুস্থ হয়ে উঠলেন।সেই বেড় গাছ এখনও মানা হয়।তবে সব কল্প কথা।
সংলগ্ন লঙ্গর খানায় অতি যত্নের সাথে সার্বক্ষণ বিনামূল্যে নিরামিষ খাবার পরিবেশন করা হয়। হাজারো ভক্তের আনাগোনা , যারা দিচ্ছেন তাদের আন্তরিকতা মন ছুঁয়ে যায়। এখানে এলে বোঝা যায় সেবা কত সুন্দর ধর্ম।পরিচ্ছন্ন পরিবেশ মনে শান্তি আনে।
তবে সর্বোপরি মন্দিরের দৃষ্টিনন্দন স্বর্ণখচিত সৌন্দর্য্য এবং পবিত্র পরিবেশ মনে শান্তি আনে। স্বর্ণমন্দিরের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, সকল ভক্তদের ব্যবহার এক স্বর্গীয় আনন্দানুভূতি এনে দেয়।
রাতের স্বর্নমন্দির যেন উজ্জ্বল কোনও জোতিষ্ক, চুপচাপ নিজের ভেতরকে অন্তরাত্মাকে জানার এক সুযোগ তখন ।
#জালিওয়ানয়ালাবাগ_রক্তে_লেখা_ইতিহাস
সরু গলিপথ পেরিয়ে মাঠ তাতে জমায়েত কয়েক সহস্র মানুষের ।নিরস্ত্র মানুষ মহিলা শিশুর সভা ।তাদের অজান্তেই বন্ধ করে দেওয়া হল দরজা।তৈরী হল নিকেশ করার প্ল্যান।ঘিরে ফেলা হল সহস্রাধিক নিরস্ত্র মানুষকে।সময়টা বৈশাখ মাস শুরুর আগের দিন ।অত্যাচারীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সামান্য জমায়েত ও প্রতিবাদ ।স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে শহরের মানুষের মনের ভেতর তখন ধিকিধিকি জ্বলছে আগুন। একজন ব্রিটিশ ম্যানেজার সহ কয়েকজন ঐ গন্ডগোল এ মারাও গিয়েছিলেন।
১৯১৯ সালে এপ্রিলের ১৩ তারিখে শহরে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসার জেনারেল ডায়ার জানতে পারলেন জালিয়ানওয়ালাবাগে বিক্ষোভের জন্য মানুষজন জমায়েত হয়েছে। এই সুযোগ নিজের কৃতিত্ব দেখানোর ।দাম্ভিক সেনা প্রধান একদল সৈন্য নিয়ে সামাল দিতে সেখানে গেলেন।গিয়েই বুঝলেন এরা সংখ্যাতে অনেক ।নিরস্ত্র মানুষের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন সেদিন ডায়ার। পরিণতি শত শত মহিলা শিশু সহ বহু লোকের মৃত্যু ।
গুলি শুরু হলো,নির্বিচারে কয়েক শ রাউন্ড ।অসহায় নিরস্ত্র মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়তে লাগলো।কেউ আহত কেউ নিহত।কারোর পায়ে গুলি কারো হাতে। কোথাও সন্তানকে রক্ষা করতে ব্যর্থ অর্ধমৃত পিতার হাহাকার। কোথাও সন্তানের তীব্র কান্না। কারণ তাকে বুকে আগলে মৃত তার বাবা মা।তারাও কি বেঁচেছিল!!
আবার কেউ এদের মধ্যে উঁচু দেয়াল টপকে পালানোর চেষ্টা করছিলো,নজর এড়িয়ে যাবে কোথায়।গুলি তাদের উপরেও চলল। একদল ছুটে গেল মাঠের কুঁয়োর কাছে,ঝাঁপ দিল তারা বাঁচার জন্য । গুলি তাদের ওপর ও চলেছিল ।ফেলা হয়েছিল পাথর।
পুরো এলাকাতেই শুধু রক্ত আর রক্ত অসংখ্য আহত মানুষের যন্ত্রণার চিৎকার ।মানবতা ও সভ্যতার ইতিহাসে কলঙ্কিত অধ্যায় সেদিন লেখা হয়েছিল অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে ।
ব্রিটিশ সরকারি হিসাবে সেদিন ৪০০ জনের মৃত্যু এবং কয়েক শ ব্যক্তি আহত হয়েছে। যদিও বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল হাজারের অনেক বেশি।
ট্রেন এ অমৃতসর আসতে আসতে আমার বাবা তার নাতনিকে বলছিল জালিওয়ানয়ালা বাগের ইতিহাস ।বাবার গলাটা আর্তনাদ এর মত শোনাচ্ছিল । অমৃতসরে পৌঁছনোর পর থেকেই মনে তীব্র চাপ অনুভব করছিলাম ।স্বর্ণমন্দির দেখার পর পৌঁছলাম জালিওয়ানয়ালা বাগ ।
হাঁটতে হাঁটতে এগোচ্ছি। সামনে হাজির কুখ্যাত গণহত্যার ইতিহাস ।
জালিয়ানওয়ালাবাগে পৌঁছনোর পর আর থাকতে পারলাম না।চোখের জল আর আমার বাধা মানলো না।গেট থেকে ভিতরে ঢুকে যেদিকেই দেখি চতুর্দিকে শুধু ইতিহাসের মর্মান্তিক ঘটনার চিহ্ন ।সেই দেওয়াল, কুঁয়ো আজ ও বুলেটের ক্ষত চিহ্ন বয়ে নিয়ে চলেছে।তৈরী হয়েছে স্মৃতি স্তম্ভ সুন্দর সাজানো বাগান জ্বলছে শিখা।সব যেন নিঃশব্দে বয়ে নিয়ে চলেছে ইতিহাসের ঘৃণ্য অধ্যায়কে।১৯১৯ থেকে ২০১৯ একশো বছর অতিক্রান্ত। আজও ইতিহাসের সেই কলঙ্কিত অধ্যায় সমান ভাবেই আমাদের মনকে এক সূত্রে বাঁধে।
এ কলঙ্ক মুক্ত হবার নয়....
ধিক্কার তব ধিক্কার
মানুষ করেছ অবয়ব তব ...
দানব রয়েছো মনে।
*********
#ওয়াগা_বর্ডার----
দুপুরের খাবার সেরে তিনটে নাগাদ রওনা দিলাম ওয়াগা বর্ডারের দিকে,নাহলে ভারতীয় ও পাকিস্তানী সীমান্তপ্রহরীদের কুচকাওয়াজ এ দেখতে দেরি হতে পারে । ওয়াঘা বর্ডার বলে পরিচিত জায়গা টি ভারতের অংশের নাম আত্তেরিএবং পাকিস্তান অংশের নাম ওয়াঘা।
ওয়াগা বর্ডার থেকে লাহোর মাত্র ২৩ কিমি দূর। আর অমৃতসর শহর থেকে ওয়াগা বর্ডার ২৫ কি.মি.। প্রতিদিন বিকেলে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনা এখানে কুচকাওয়াজ করে। কুচকাওয়াজ ঠিক ৪.৩০ মিনিটে শুরু হয়।৩০ মিনিট হয়।৫ টায় শেষ হয়।প্রচুর লোকের সমাগম হয়।যৌথভাবে পতাকা নামানো ও গার্ড বদলের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে ভারতবর্ষের আত্মার সাথে একাত্ম বোধ করলাম ।চারিদিকে তখন স্লোগান ,জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমের ।অদ্ভুত সুন্দর রোমাঞ্চকর ।
সার্থক জনম আমার
জন্ম নিয়েছি এদেশে।
গর্বিত হই বীর বিক্রম-
বলিষ্ঠ সেনাদের জন্য ।
আগলে রেখেছে মোদের
যারা কত বিনিদ্র রাত জেগে।
রাতে যখন হোটেলে শুতে গেলাম আমি যেন আমাতে নেই ।এক অন্য জগতে মন তখন কখনও সেখানে গুলির আওয়াজ ।কখনও ভক্তি গীত ।কখনও সেনাদের কুচকাওয়াজ ....ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে আমায় অজানা জগতে।
পরের দিন সকাল সকাল চললাম দেবী দর্শনে।
***********
#লালদেবী মন্দির ----
এই মন্দিরটি কটরার বৈষ্ণ দেবী গুহা আদলে তৈরী।ভগবানের কাছে পৌঁছানোর জন্য বেশ কসরত করতে হয়। বয়স্ক ও একটু স্থুলকায় হলে গুহার ব্যাস একটু অসুবিধাজনক ।অন্য রাস্তা আছে কি জানা নেই ।বেশ জাগ্রত বিশেষ করে নব দাম্পত্য জীবনের প্রারম্ভে দেবীর আশীর্বাদ নিতে অনেক ভক্ত আসেন ।
***********
#দুরজিয়ানা_টেম্পেল-
16 শতকের মন্দিরটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থের একটি সুপরিচিত সংগ্রহস্থল।মন্দিরের গম্বুজটি সোনা দিয়ে ঢাকা হাকি অংশ মার্বেল পাথরের।এটি লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির। দুর্গ্যনা মন্দিরটির পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল এটি অমৃতসর স্বর্ণমন্দিরের আদলে নির্মিত ।
***********
#গোবিন্দগড় ফোর্ট-
দুরজিয়ানা টেম্পেল এর খুব কাছেই এটি।অমৃতসরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও ঐতিহাসিক স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম । মহারাজা রঞ্জিত সিংয়ের সময়ের একমাত্র বেঁচে থাকা দুর্গ। স্বাধীনতার সংগ্রামের ঘটনাবলী সহ একটি অবিচ্ছিন্ন ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে। সন্ধ্যারসময় লাইট এন্ড সাউন্ড শো হয়।খুব সুন্দর ।ইতিহাসের দুনিয়াতে ঘুরে আসার সুযোগ ।সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও হয়।
টিকিট ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ।
******
অমৃতসরে খাওয়া---
'খাই খাই কর কেন এসো বোস ও আহারে'
জমিয়ে খাওয়ার শহর অমৃতসর।কত কি খাদ্য রতন ছড়িয়ে নিজ রুচি অনুসারে খেলেই হল।
জালিয়ানওয়ালা বাগের কাছেই কুলফি আর লাচ্ছি। কুলফি প্রায় জমানো ক্ষীর ,এ স্বাদ ভোলার না।লাচ্ছি মানে চিলড লস্যি।
এক চুমুকে যেমন তেমন
দু চুমুকে স্বপ্ন
তিন চুমুকে রাজা উজির
চার চুমুকে স্বর্গ ।
এছাড়াও অমৃতসরি খুলচা ,আলুর পরোটা(এ পরোটা একবার খেতেই হবে গেলে)ফিরনি,ভেজিটেবল বিরিয়ানী,মাক্কে দি রুটি,সর্ষে কি শাক, মালাই পনির,মালাই কোপ্তা।আর কত বলব লম্বা লিস্ট ।
অমৃতসরি ফিশ , মটন চাপ, বাটার চিকেন, চিকেন টিক্কা, বার্গার, কাবাব, খুবই বিখ্যাত।
#কেশর দ্যা ধাবা এখানে নিরামিষ খাবারের জন্য খুব পরিচিত নাম।
এছাড়াও আছে ব্রাদার্স ধাবা ।
**********
#কেনাকাটা---
স্বর্ণমন্দির সংলগ্ন এলাকার মার্কেটে ফুলকারী ওড়না যা ফুলকারী ওড়না পাঞ্জাবের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পাওয়া যায় ।সম্পূর্ণ হাতের কাজের দাম 3000/ পর্যন্ত হয়।এছাড়াও বিভিন্ন স্টাইলের জুতো পাওয়া যায়।কম্বল, সালোয়ার সুট,চুড়ি,চাদর কি নেই।ইলেকট্রনিক গুডস ও আছে।
********
#কাছেপিঠে
অমৃতসরকে জুড়ে নেওয়া যায় বিভিন্ন ট্যুরের সাথে।
1- দিল্লি আগ্রা মথুরা বৃন্দাবন অমৃতসর
2- সিমলা কুলু মানালি অমৃতসর
3- অমৃতসর জম্বু কাশ্মীর
4- অমৃতসর জম্বু ডালহৌসি
#কিভাবে_যাবেন
ট্রেন----
দুর্গিয়ানা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার শনিবার ,
জালিয়ানওয়ালাবাগ এক্সপ্রেস শুক্রবার ,
অকাল তখ্ত এক্সপ্রেস রবিবার ও বুধবার ,
হাওড়া - অমৃতসর পাঞ্জাব মেল প্রতিদিন
সরাসরি অমৃতসর পৌঁছনোর সহজ উপায় ।
সময় লাগে ৩০ থেকে ৪২ ঘন্টা।
প্লেন----
ভায়া দিল্লি বেশ কিছু উড়ান আছে।
#কোথায়_থাকবেন
গুরুদওয়ারা ট্রাস্টের একোমোডেশানের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন
: 91-183-2553957
ইমেল
info@sgpc.net।
এখানে বিভিন্ন মানের চাহিদা অনুসারে থাকার ব্যবস্থা।
সারাগারি নিবাসটি ২ জন এডাল্ট ও ১ জন বাচ্চার জন্য আদর্শ । ১২০০ টাকা প্রতিদিন । খুব ভাল ব্যাবস্থা ও এ সি ঘর।
এছাড়াও বিভিন্ন মানের অসংখ্য হোটেল আছে অমৃতসরে।
স্বর্ণমন্দিরের সামনে ও আশেপাশের এলাকাতে।
গাড়ি ভাড়া----
৩৫০০ থেকে ৫৫০০ গাড়ি পুরো অমৃতসর ঘোরার জন্য ।
ইন্ডিকা এসি Rs.3,700/-
ইন্ডিগো /ডিসায়ার Rs.4,300/-
ইনোভা/ জাইলো Rs.5,500/-
গাড়ি ও সম্পূর্ণ অমৃতসর ট্যুর এর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:
হলিডে ডিএন এ: 91 7997 1234 32
প্রসঙ্গত আমরা গেছি মার্চ, 2017
(গাড়ি বর্তমান রেটে )
পরিশেষে----
অমৃতসর অত্যন্ত পবিত্র শহর ও বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ।এর অমৃতের আস্বাদন নেবার সাথে সাথেই একে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের ।প্লাস্টিক ব্যবহার কম করুন। ভাল থাকুন ঘুরতে থাকুন ।
লেখনী --- পৌষালি পাল
#travel #blog #Amritsar #guide