**কম খরচে সিমলা মানালি ঘোরার উপায়**
মানালি
16/05/2019
আজ সকাল ৬টায় হোটেল চেক আউট করে একটি ট্যাক্সি ভাড়া টাকা ৩০০ করে চলে এলাম "সিমলা তুতিকন্ডী বাস স্ট্যান্ড" এখান থেকে সব ভলভো বাস ছাড়ে যা শহর থেকে ৪কিমি দূরে অবস্থিত। সিমলাতে দুটি বাস স্ট্যান্ড আছে একটি শহরের মধ্যে "সিমলা ওল্ড বাস স্ট্যান্ড" যেখান থেকে সব সরকারি ও সাধারন বাস ছাড়ে। আগেই আমার সরকারি ভলভো বাসের online এ (www.hrtchp.com) টিকিট করেছিলাম টাকা ৫৫০ PP। সকাল ৮টায় ছেড়ে বিকাল 5টার মধ্যে মানালি পৌছয়। চেষ্টা করবেন এই সময়ের বাস টা বুক করার। এদের বাস একদম টাইমে ছাড়ে তাই ১মিনিট লেট হলে পুরো টাকাই জলে যাবে। (এছাড়া আপনি যদি শুধু মানালি যান তাহলে কালকা ধরে ওল্ড দিল্লী নেমে হেটে বা অটো বা মেট্রোয় কাশ্মীরি গেট এসে hrtc এর online বাস বুক করে ওভারনাইট জার্নি করে পরের দিন বেলাতে মানালি যেতে পরেন)।
Beas বা বিতস্থা নদীর ধারে এই ছোট মানালি শহরে যখন এলাম তখন বিকাল ৫টা, আমি uco bank এর হোটেল বুলবুল নিয়েছিলাম ৪দিনের জন্য DBR টাকা ৩২০০। এটি ম্যাল রোড থেকে ৫মিনিট দূরে। (মানালিতে অন্তত ৪/৫দিন থাকলে ভালো হয়)
সন্ধ্যাতে একটু ম্যাল(দেশের সবচেয়ে বড়ো ম্যাল)রোড ও বাজার টা ঘুরে হোটেলের ক্যান্টিনেই চিকেন ভাত দিয়ে ডিনার সারলাম। এই ক্যান্টিনের রাধুনী আমাদের কাঁথির বাসিন্দা তাই বাঙালি খাবারের স্বাদ পেয়ে খুশি হলাম।
17/05/2019
আজকের গন্তব্য মনিকরণ, মানালি থেকে ৮৪কিমি অবস্থিত। online এ(www.hptdc.gov.in) বাস বুক ছিলো ৪০০টাকা জনপ্রতি। তাই ম্যাল রোডের একটি হোটেল দিয়ে অলুপরোটা সহযোগে সকাল ৮টায় ম্যাল রোডের পাশেই বাসস্ট্যান্ডে এসে HPTDC বাস মনিকরণের উদ্দেশ্য রওনা দিল। আজ সেই সিমলার দেখা হওয়া বাঙালি পরিবারের সাথে আলাপ হলো তারাও একই হোটেলে উঠেছেন ও আজ তারা আমাদের সহযাত্রী।
কুলুর(মানালি থেকে 30 কিমি দূরে) এখনকার Vaishno devi টেম্পল আমাদের প্রথম দর্শন। মন্দিরটি দেকতে অনেকটা বড়ো বড়ির মতো। তবে ভিতরটি খুব সুন্দর। এখনকার Devi একটি গুহর মধ্যে বিরাজমান। এছড়াও অনান্য দেব দেবীর বিগ্রহ খুব সুন্দর করে সাজানো। তবে এখানে ছবি তোলা নিষেদ। এখানেও একটি লঙ্গড় আছে চাইলে খেয়ে নিয়ে পরেন।
যাইহোক আমাদের পরবর্তী গন্তব্য মনিকরণ যা মানালি দিয়ে ৮৪কিমি দূরে।
প্রায় ২টার দিকে মনিকরণ এলাম। এখানে একটি গুরুদ্বারা ও উষ্ণ প্রসবন আছে আর দেখবেন যে পার্বতী নদীর গর্জন। নদীর ছোট একটি ব্রিজ পার করে ঐপারে গিয়ে প্রথমে গেলাম গুরুদ্বারা তে গোল্ডেন টেম্পল এর মতো এখানেও গ্রন্থসাহেব কে পূজিত করা হয়। এখানে মাথা ঠুকলে ৩টা কলা,১টি আম,৪টি করে লাড্ডু দেয়। এই গুরুদ্বারার ভিতরে একটি কৃতিম উষ্ণ প্রসবন আছে যেখানে আপনি স্নান করতে পরেন। এখানেও লঙ্গড় আছে আর এর খাবার গুলো খুব সুস্বাদু। আর এখানকার চা খেতে ভুলবেন না।
গুরুদ্বারার বাইরে কিছুটা এগোলে একটি শিব মন্দির পাবেন। এই মন্দিরের সামনেই উষ্ণ প্রসবন টি আছে। ফুটন্ত জল একদম এখানে। কথিত আছে যে এই জল গায়ে দিলে নাকি রোগ ব্যধি সেরে যায়। একদিকে পার্বতী নদী আর তারপাশে এই উষ্ণ প্রসবন ভাবাই যায় না প্রকিতির সৃষ্টি এরমও হয়। এছড়াও এখানে একটি রাম মন্দির আছে বৃষ্টির জন্য এটি দেকতে পরিনি। ৪টার দিকে আমাদের বাস ছাড়ল মানালির উদ্দেশ্যে পথে যেতে কসৌলি নামে একটি জায়গা আছে যেখানে গাঁজা ও তামাকজাত জিনিসের উপরে কোন আইন নেই তাই এখানে যত বিদেশি ভর্তি। মানালি যখন এলাম তখন সন্ধ্যা ৭:৩০। সোজা হোটেলে এসে রাতের ডিম ভাত ডিনারের অর্ডার দিয়ে এলাম ম্যাল রোডে এখানে সোয়েটার, চাদর অনেক সস্তায় পাওয়া যায় তাই কিনেও নিলাম কিছু সেই মতো।।
18/05/2019
আজকের গন্তব্য সোলাং ভ্যালি, নগ্গর ক্যসেল। online এ বাস বুক ছিলো। আজ বাসে ওঠার আগে আগামিকাল rothang পাস দেখার জন্য দুটি সিট hptdc tousrism অফিস থেকে বুক করেনিলাম ৬০০টাকা জনপ্রতি করে। এদের অফিস টি ম্যাল রোডেই অবস্থিত। মানালি থেকে ২০কিমি দূরে সোলাং ভ্যালি। সাধারণত এটি শীতকালে বরফের উপর নানারকমের এডভেঞ্চর গেমের জন্য বিখ্যাত। ১ঘণ্টা সময় লাগে সোলাং আসতে। এখানে Para glyding হয়, একটা একটু উপর থেকে ছেড়ে দেয় ১০০০টাকা নেয়, আর একটি যেটা প্রায় ১কিমি উপর থেকে উড়িয়ে আনে এটা ৩২০০টাকা নেয় তবে এর মধ্যে ৬৫০টাকার রোপওয়ে ভাড়া আছে। যাইহোক শেষ অবধি রোপওয়ে টি চড়ে উপরে গেলাম এটি ১কিমি পাহারের আরো উপরে। উপরেও একটি ছোট্ট ভ্যালি আছে এখান থেকে আরো 100/200মিটার উপরে গিয়ে প্রথম বরফ দেখলাম যদিও এটা ড্রাই আইস। এখান থেকে পুরো ভ্যালির আর হিমালয়ের প্রকিতিক সৌন্দর্য দেখার মতো।এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আবার রোপওয়ে করে নীচে এসে আমাদের পরের গন্তব্য নগ্গর ক্যসেল যা মানালি দিয়ে ৩০কিমি দূরে। যেতে যেতে আমরা এলাম নেহেরু কুন্ড এটি একটি পাহাড়ি ঝর্না যা পানীয় হিসাবে খাওয়া হয় আমিও খেলাম আর কিছুটা নিলাম। নগ্গর যখন এলাম তখন ২টা বাজে এখানে ঢুকতে ২৫টাকা লাগে জনপ্রতি আমরা সরকারি গাড়ী তে আসায় কোনো এন্ট্রি ফী লাগেনি। এটি একটি কাঠের দুর্গ শুধু কাঠ আর পাথর দিয়ে বানানো। এখানে আপনি থাকতে পরেন এছাড়া এখানে একটি রেস্টুরেন্ট আছে। তবে খুব দাম। এখানে অনেক হিন্দি সিনেমার সুটিং হয়েছে যেমন jab we meet, krissh ইত্যাদি। এখান থেকে বেরিয়ে যখন মানালি এলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। হোটেলে এসে একটু ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম ম্যাল রোডে সত্যি এই ম্যাল টি এতো সুন্দর আর পরিষ্কার যে সবসময় আসতে ইচ্ছা জাগবেই। আজ এখানে যে তিব্বতি মার্কেট এ গেলাম। আজ খাওয়া হোটেল এ অর্ডার দেইনি তাই বাজার থেকে রুটি আর এখানকার বিখ্যাত সার্ডিন মাছ এর রোস্ট টাকা ৪০০/পিস কিনে হোটেলে এসে ডিনার করলাম। আগামী কাল অনেক সকালে উঠতে হবে।