Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter Emptyদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter

more_horiz
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি


► আবহবিকার [Weathering] :-

♦ আবহবিকারের সংজ্ঞা :-

♦ আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের মধ্যে পার্থক্য :-

♦ আবহবিকারের [Weathering] শ্রেণিবিভাগ :-

(ক) যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering]

(খ) রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering]



♦ (ক) যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering]

♦ (খ) রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering]



► যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] :-

♦ সংজ্ঞা:-

♦ যান্ত্রিক আবহবিকারের [Mechanical Weathering] পদ্ধতি:-

♦ সূর্যের তাপ:-

(ক) খন্ডবিখন্ডিকরণ

(খ) এক্সফোলিয়েশান

(গ) ক্ষুদ্রকণাবিশরণ  



♦ (ক) খন্ডবিখন্ডিকরণ

♦ (খ) এক্সফোলিয়েশান

♦ (গ) ক্ষুদ্রকণাবিশরণ



♦ বায়ু প্রবাহের কাজ:-

♦ তুষারের কাজ:-

♦ বৃষ্টির কাজ:-

♦ যান্ত্রিক আবহবিকারের [Mechanical Weathering] অনুকূল জলবায়ু ও পরিবেশ:-



►রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering]

♦ সংজ্ঞা :-

♦ রাসায়নিক বিয়োজনের পদ্ধতি :-

(ক) কার্বনিকরণ [Carbonation],

(খ) আদ্রকরণ [Hydration],

(গ) জারণ [Oxidation]



♦ (ক) কার্বনিকরণ [Carbonation]:-

♦ (খ) আদ্রকরণ [Hydration]:-

♦ (গ) জারণ [Oxidation] :-

♦ রাসায়নিক আবহবিকারের [Chemical Weathering] অনুকূল জলবায়ু ও পরিবেশ:-



►জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering]:-



►মাটির সৃষ্টি [Formation of Soil]:-

### তোমার সাহায্যে আমরা পাশে আছি, তুমি এগিয়ে যাও।
# প্রিয় ছাত্র - ছাত্রী যদি কোথাও কোনো ভুল থেকে থাকে তবে মনে রাখবে সেটা অনিচ্ছাকৃত। নিচে কমেন্ট করো। ঠিক করে দেওয়া হবে।

CLASS TEN GEOGRAPHY MCQ wbbse
#Madhyamik #2020 #Geography #Suggestions
CLASS TEN GEOGRAPHY MCQ class x

Madhyamik pariksha 2020

Last edited by Admin on Sat Sep 12, 2020 11:05 am; edited 1 time in total

descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter Emptyআবহবিকার Weathering

more_horiz
► আবহবিকার [Weathering] :-

♦ আবহবিকারের সংজ্ঞা:- যে প্রক্রিয়ায় আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, যেমন- উষ্ণতা, আদ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে ভূত্বকের ওপরের অংশের শিলাস্তর ধীরে ধীরে ভেঙে বা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মূল শিলাস্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মূল শিলাস্তরের ওপরেই পড়ে থাকে, সেই প্রক্রিয়াকে আবহবিকার [Weathering] বলা হয়। আবহবিকারের ফলে চূর্ণবিচূর্ণ শিলাজাত পদার্থগুলো মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানেই পড়ে থাকে, কিন্তু অন্যত্র অপসারিত হয় না ।



♦ আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের মধ্যে পার্থক্য :-

আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের মধ্যে পার্থক্য



আবহবিকার -- ক্ষয়ীভবন

১) আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যথা-রোদ, বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা, আর্দ্রতা প্রভৃতির প্রভাবে শিলার ওপরের অংশের যে পরিবর্তন হয় তাকে আবহবিকার [Weathering] বলে। এই পরিবর্তন ভৌত বা রাসায়নিক যে কোনও রকমের হতে পারে ।

-- ১) প্রবাহমান নানা প্রাকৃতিক শক্তি, যথা- নদীপ্রবাহ, জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতির মাধ্যমে ভেঙে যাওয়া শিলার টূকরো, বালি, মাটি ইত্যাদির অপসারণকে ক্ষয়ীভবন বলে ।

২) বায়ুর উপাদান গুলি অর্থাৎ উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ ইত্যাদির সন্মিলিত প্রভাবে আবহবিকার প্রক্রিয়া ঘটে থাকে।


-- ২) প্রবাহমান নানা প্রাকৃতিক শক্তি, যথা- নদীপ্রবাহ, জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতির মাধ্যমে ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ।

৩) আবহবিকারের ফলে চূর্ণীকৃত শিলার টুকরো মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব ছাড়া অপসারিত বা স্থানান্তরিত হয় না, নিজের স্থানেই অবস্থান করে । আবহবিকারের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত নয় ।


-- ৩) ক্ষয়ীভবনের ফলে চূর্ণীকৃত শিলা অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়, একস্থানে থাকে না । অর্থাৎ ক্ষয়ীভবনের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত ।

৪) আবহবিকারের ফলে মূল শিলার ভিতরের স্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে না ।


-- ৪) ক্ষয়ীভবনের ফলে মূল শিলার ভিতরের স্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ।

৫) আবহবিকার একটি সৃজনমুলক প্রক্রিয়া যা খুব ধীরে ধীরে ঘটে।


-- ৫) ক্ষয়ীভবন একটি ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া যা খুব তাড়া তাড়ি সম্পন্ন হয়।

৬) আবহবিকারের ফলে শিলার মূল বৈশিষ্ট্য, যেমন- শিলার গঠন, খনিজের বিন্যাস-প্রকৃতি ইত্যাদির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে ।


-- ৬) ক্ষয়ীভবনের ফলে ভূমিরূপের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলেও শিলার রাসায়নিক পরিবর্তন যেমন- গঠন, খনিজের বিন্যাস-প্রকৃতি ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটে না।
৭) আবহবিকার এক স্থির পদ্ধতি(static process), বিয়োজিত শিলাচূর্ণ কাছেই পড়ে থাকে; স্থানচ্যুত হতে পারে মাত্র ।
--- ৭) ক্ষয়ীভবন হল এক গতিশীল পদ্ধতি (Dynamic process) । ক্ষয়কার্য ও বহনের মাধ্যমে ক্ষয়ীভুত পদার্থ দুরান্তরে অপসারিত হয় ।


♦ আবহবিকারের শ্রেণিবিভাগ [Types of Weathering] :- আবহবিকার প্রধানত তিনভাবে সংঘটিত হয় : (ক) যান্ত্রিক উপায়ে (খ) রাসায়নিক উপায়ে ও (গ) জৈবিক উপায়ে । এই হিসাবে আবহবিকারকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:- (ক) যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering]

(খ) রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] ও

(গ) জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering]

descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter Emptyযান্ত্রিক আবহবিকার Mechanical Weathering

more_horiz


► যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] :-

♦ সংজ্ঞা:- উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, তুষার, অভিকর্ষ, নদী, বায়ু, জীবজন্তু বা উদ্ভিদ প্রভৃতি নানা প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে শিলাস্তর যখন ছোটো ছোটো খন্ড বা চূর্ণে পরিণত হয়ে মূল শিলার ওপর অবস্থান করে, এবং তার মধ্যে যখন কোনোরকম রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না, তখন তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] বলা হয়। যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে শিলাসমূহ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না বা শিলার কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না । এই আবহবিকারের ফলে শিলার ভৌত পরিবর্তন হয় । উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চল, শুষ্ক মরু অঞ্চল, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বেশি উচ্চতা যুক্ত স্থানে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি হয় । ১) তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য ঘটা যান্ত্রিক আবহবিকারগুলি হল:- পিন্ডবিশরণ, শল্কমোচন, ক্ষুদ্রকণা বিশরণ; ২) তুষারের দ্বারা তুহিন খন্ডীকরণ প্রভৃতি । এছাড়া জল এবং চাপ হ্রাসের ফলেও যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটে থাকে ।



♦ যান্ত্রিক আবহবিকারের [Mechanical Weathering] পদ্ধতি:- যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটাতে সূর্যের তাপ, বায়ুপ্রবাহ, তুষার প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি খুব সক্রিয় । বৃষ্টির জল যান্ত্রিকভাবে কিছু শিলা ক্ষয় করে । তবে রাসায়নিক আবহবিকারে বৃষ্টির জল মূখ্য ভুমিকা গ্রহন করে ।

♦ সূর্যের তাপ:- সুর্যতাপের প্রধান কাজ শিলা চূর্ণবিচূর্ণ করা । এর প্রভাবে প্রধানত তিনভাবে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়, যথা- (ক) খন্ডবিখন্ডিকরণ বা পিন্ড বিশরণ [Block Disintegration], (খ) গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation], (গ) ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegretion]



♦ (ক) খন্ডবিখন্ডিকরণ বা পিন্ড বিশরণ [Block Disintegration]:- যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে খন্ডবিখন্ডিকরণ বা পিন্ড বিশরণ [Block Disintegration] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । শিলা তাপের সুপরিবাহী নয়। এই জন্য মরু অঞ্চলের গাছপালা হীন উন্মুক্ত প্রান্তরে দিনে এবং রাত্রে শিলার ভিতরের ও বাইরের অংশের উষ্ণতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে । ক্রমাগত উত্তাপে প্রসারিত ও ঠান্ডায় সংকুচিত হতে হতে শিলার সন্ধিস্থল গুলো আলগা হয়ে যায় এবং শিলাগাত্রে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এই ফাটলগুলি কালক্রমে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভগ্ন স্তূপে পরিণত হয় । এই ভেঙে যাওয়া শিলার আকৃতি অনেকটা বর্গক্ষেত্র বা আয়তক্ষেত্রের মতো হয় বলে আবহবিকারের এই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকে খন্ডবিখন্ডিকরণ বা পিন্ড-বিশরণ [Block disintegration] বলে ।



♦ (খ) গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation]:- যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । শিলাস্তর তাপের সুপরিবাহী না হওয়ার ফলে দিন ও রাতে শিলার ভিতরের ও বাইরের অংশের মধ্যে উষ্ণতার যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে । উষ্ণতার এই তারতম্যের ফলে শিলাস্তরে ক্রমাগত প্রসারণ ও সংকোচন ঘটে । দীর্ঘদিন ধরে সংকোচন ও প্রসারণের ফলে শিলার ওপরের স্তর ওপরের দিকে প্রসারিত হয় । তখন ওপরের স্তর নীচের অপেক্ষাকৃত শীতল স্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেঁয়াজের খোলার মতো খসে পড়ে । শিলার বাইরের অংশ এই ভাবে পেঁয়াজের খোসার মতো খুলে গেলে ভিতরের অংশটি কিছুটা গোলাকার ও মসৃণ শিলাখন্ডে পরিণত হয় । এইভাবে সৃষ্টি হওয়া প্রধান গোলাকার শিলাটিকে ‘অবশিষ্ট গণ্ড-শিলা’ বলে। শল্কমোচনের ফলে শিলাখন্ড গুলো অনেকটা গোলাকার হয়ে যায়, তাই বিচূর্ণীভবনের এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation] বলে। একই জাতীয় খনিজ পদার্থে গঠিত সমপ্রকৃতির শিলায় শল্কমোচন [Exfoliation] বেশি হয় ।



♦ (গ) ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegretion]:- যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegretion] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । যেসব শিলা বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থে গঠিত, সেই সব বিষম গুণ সম্পন্ন ও বড় দানা যুক্ত শিলা গুলো ঠান্ডায় বা গরমে সমান ভাবে সংকুচিত বা প্রসারিত হতে পারে না । এরফলে শিলাস্তরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন টানের সৃষ্টি হয় এবং তাতে শিলা সশব্দে ফেটে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় । উষ্ণতার তারতম্যের ফলে এইভাবে বিষম গুণসম্পন্ন শিলার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়াকে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular disintegration] বলে ।



♦ (ঘ) তুহিন খন্ডীকরণ:- যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে তুহিন খন্ডীকরণ হল অন্যতম একটি পদ্ধতি ।

শীতল জলবায়ু অঞ্চলে, উচ্চ অক্ষাংশে বা উচ্চ পর্বতগাত্রে দিনের বেলায় বা গ্রীষ্মকালে বরফ গলে অথবা বর্ষাকালে শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে জল সঞ্চিত হলে তা পরে শীতকালে বা রাত্রিবেলা অত্যধিক ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয় । জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে শতকরা দশভাগ বৃদ্ধি পায় । এর ফলে ফাটলের মধ্যস্থিত জল বরফে পরিণত হয়ে ফাটলের দু’পাশের দেওয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে । এই চাপের ফলে ফাটল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্তর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে পরিণত হয় । যান্ত্রিক আবহবিকারে এই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকে তুহিন-খন্ডিকরণ বা তুষারের কাজ বলে ।



♦ বায়ু প্রবাহের কাজ:- বায়ুপ্রবাহ যান্ত্রিক উপায়ে ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষয় সাধন করে । বায়ুতে অবস্থিত বালু, বা শিলাকণার ক্রমাগত ঘর্ষনের ফলে পর্বতের গায়ের শিলা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায় এবং ভেঙ্গে পড়ে । বাতাসে বালি বা শিলাচূর্ণগুলি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় জমা হয় । জমি ভরাট করে সমভূমি গড়ে তোলে । গোবি মরুভূমির সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম মাটির কণা বয়ে নিয়ে এসে বায়ুপ্রবাহ হোয়াংহো নদীর উপত্যকায় লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] গঠন করেছে ।



♦ তুষারের কাজ:-

শীতল জলবায়ু অঞ্চলে, উচ্চ অক্ষাংশে বা উচ্চ পর্বতগাত্রে দিনের বেলায় বা গ্রীষ্মকালে বরফ গলে অথবা বর্ষাকালে শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে জল সঞ্চিত হলে তা পরে শীতকালে বা রাত্রিবেলা অত্যধিক ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয় । জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে শতকরা দশভাগ বৃদ্ধি পায় । এর ফলে ফাটলের মধ্যস্থিত জল বরফে পরিণত হয়ে ফাটলের দু’পাশের দেওয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে । এই চাপের ফলে ফাটল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্তর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে পরিণত হয় । যান্ত্রিক আবহবিকারে এই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকে তুহিন-খন্ডিকরণ বা তুষারের কাজ বলে ।



♦ বৃষ্টির কাজ:- আঘাত করে শিলা স্তর ক্ষয় করা এবং ক্ষয় প্রাপ্তশিলা গুলিকে ধুয়ে ফেলে শিলাস্তর নগ্ন করা বৃষ্টির কাজ । যান্ত্রিক আবহবিকারের চেয়ে রাসায়নিক আবহবিকারের ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ।



♦ যান্ত্রিক আবহবিকারের [Mechanical Weathering] অনুকূল জলবায়ু ও পরিবেশ:- উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে যেখানে উষ্ণতার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে সেখানে যান্ত্রিক আবহবিকার সর্বাধিক কার্যকরী । এছাড়া উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে যেখানে তুষারের কাজ বেশি, সেখানে যান্ত্রিক আবহাবিকার বেশি শিলা চুর্ণবিচুর্ণ করে ও ভূ-ত্বকের পরিবর্তন ঘটায় ।

descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter Emptyরাসায়নিক আবহবিকার Chemical Weathering

more_horiz
►রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering]

♦ সংজ্ঞা :- যে আবহবিকারের মাধ্যমে শিলা গঠনকারী বিভিন্ন খনিজ পদার্থগুলির ওপর বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদান সমূহ বিশেষ করে অক্সিজেন (O2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), জ্বলীয় বাষ্প প্রভৃতির বিক্রিয়ার ফলে কঠিন শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজ পদার্থগুলো নতুন গৌণ খনিজে পরিণত হয়ে মূল শিলা শিথিল হয়ে পড়ে, তাকে রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] বলে । বৃষ্টিবহুল উষ্ণ অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি পরিলক্ষিত হয় ।



♦ রাসায়নিক বিয়োজনের পদ্ধতি :- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে প্রধানত তিনটি যথা- (ক) অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation], (খ) জারণ [Oxidation], (গ) জলযোজন বা আর্দ্রকরণ [Hydration] উল্লেখযোগ্য । এছাড়া রাসায়নিক আবহবিকারের অন্যান্য পদ্ধতি গুলোর মধ্যে দ্রবণ [Solution] এবং আদ্র বিশ্লেষণ [Hydrolysis] উল্লেখযোগ্য ।



♦ (ক) কার্বনিকরণ [Carbonation]:- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । বিভিন্ন খনিজের সঙ্গে প্রাকৃতিক কার্বন ডাই-অক্সাইড(CO2) -এর রাসায়নিক সংযোগের ফলে যে বিক্রিয়া ঘটে তাতে শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজগুলো নতুন খনিজে পরিণত হয়ে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । এই প্রক্রিয়াকে অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation] বলে । বৃষ্টির জল বায়ুমন্ডলের মধ্যদিয়ে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার সময় বায়ুমন্ডলে অবস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) সঙ্গে মিলিত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিডে (H2CO3) পরিণত হয় । এই কার্বনিক অ্যাসিড চুনাপাথরের উপর পতিত হয়ে যে বিক্রিয়া ঘটায় তাতে চুনাপাথরের মধ্যস্থিত ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট Ca(HCO3)2-এ পরিণত হয় এবং তা সহজেই দ্রবীভূত হয়ে অপসারিত হয় । চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে চুনাপাথর এই প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত এবং ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠন করে । যথা-

(১) H2O+CO2=H2CO3

জল + কার্বন ডাই-অক্সাইড = কার্বনিক অ্যাসিড

(২) H2CO3+CaCO3=Ca(HCO3)2

কার্বনিক অ্যাসিড + চুনাপাথর = ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট



♦ (খ) জলযোজন বা আদ্রকরণ [Hydration]:- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে জলযোজন বা আদ্রকরণ [Hydration] অন্যতম একটি পদ্ধতি । শিলাস্তরের মধ্যে অবস্থিত কোনো খনিজ পদার্থের সঙ্গে জল যুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তার ফলে খনিজ পদার্থটির আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়ে খনিজটি বিয়োজিত হয় । এই প্রক্রিয়াকে জলযোজন বা আর্দ্রকরণ [Hydration] বলে । রাসায়নিক বিয়োজনের ফলে শিলাগঠনকারী খনিজগুলো দৃঢ় ভাবে সংবদ্ধ থাকে না এবং সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় । যেমন- উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক ‘হেমাটাইট'(2Fe2O3)
পাথরের সঙ্গে জলযুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তার ফলে ‘লিমোনাইট’ (2Fe2O3,3H2O)

নামে নিকৃষ্ট লোহার সৃষ্টি হয়, যা অতি সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়,

যথা— 2Fe2O3+3H2O=2Fe2O3,3H2O

অর্থাৎ হেমাটাইট + জল = লিমোনাইট



♦ (গ) জারণ [Oxidation]:- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে জারণ [Oxidation] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন (O2) মিশলে তাকে জারণ [Oxidation] বলে । লোহার উপর এবং লোহা-গঠিত খনিজ ও শিলার উপর অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া বেশি । লোহা যখন ফেরাস অক্সাইড রূপে অবস্থান করে তা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, কিন্তু লোহার সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেন যুক্ত হলে লোহার উপরিভাগে হলুদ বা বাদামি রঙের একটি নতুন যৌগ পদার্থ তৈরি হয় এবং লোহা খুব সহজেই ক্ষয় পায় । সেইজন্য যেসব শিলায় লোহার পরিমাণ বেশি থাকে জারণের ফলে সেইসব শিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । জারণের ফলে মূল খনিজ ‘ফেরাস অক্সাইড’ ফেরিক অক্সাইডে2Fe2O3,3H2O

পরিণত হয়ে ‘লিমোনাইট’ -এর সৃষ্টি করে, যা সহজেই ভেঙে যায় । একই কারণে লোহার জিনিসে মরচে ধরলে তা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়,

যথা—4FeO+3H2O+O2=2Fe2O3,3H2O



অর্থাৎ লোহা + জল + অক্সিজেন = লিমোনাইট



♦ দ্রবণ বা সলিউশন[Solution] :- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে দ্রবণ বা সলিউশন[Solution] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । সৈন্ধব লবণ, জিপসাম প্রভৃতি কয়েকটি খনিজ পদার্থ জলের সংস্পর্শে দ্রবীভূত হয়ে তার নিজস্ব আকার হারিয়ে ফেলে। এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে দ্রবণ [Solution] বলে । দ্রবণের ক্ষেত্রে, যতবেশি পরিমাণ জল খনিজে প্রবিষ্ট হয়, খনিজ পদার্থটি তত তাড়াতাড়ি দ্রবীভূত হয়ে যায়, যথা—

১) সৈন্ধব লবণ + জল = সৈন্ধব লবণের দ্রবণ

২) জিপসাম + জল = জিপসামের দ্রবণ



♦ রাসায়নিক আবহবিকারের [Chemical Weathering] অনুকূল জলবায়ু ও পরিবেশ:- রাসায়নিক আবহবিকার প্রধানত জল ও জলীয় বাষ্পের সাহায্যে হয়ে থাকে । এই কারণে উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু রাসায়নিক আবহবিকারের বিশেষ অনুকূল । সেজন্য নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে ও ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার বেশি কার্যকরী হয় ।

descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter Emptyজৈবিক আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি

more_horiz
জৈবিক আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি


►জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering]:- জৈবিক আবহবিকার হল যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] -এর একটি বিশেষ রূপ । গাছপালার শিকড় শিলাস্তরের মধ্যে ঢুকে ফাটল ধরিয়ে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] ঘটায় । যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকার ছাড়াও উদ্ভিদ ও প্রাণীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিলাখন্ডকে চূর্ণ বিচুর্ণ করে থাকে । ইঁদুর, খরগোশ, প্রেইরি কুকুর, পিঁপড়ে, কেঁচো, উই প্রভৃতি মৃৎভেদী প্রাণীরা মাটিতে গর্ত খুঁড়ে ভেতরের শিলাচূর্ণ, মাটি ইত্যাদি উপরের পৃষ্ঠে নিয়ে আসে । এভাবে উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিলাখন্ডকে চূর্ণবিচূর্ণ করে থাকে । এরকম আবহবিকার [Weathering] কে জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering]বলে ।



♦ জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering] এর সংঘটন:- জৈবিক বিচূর্ণীভবন বিভিন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সাহায্যে হতে পারে ।

উদ্ভিদের সাহায্যে বিচূর্ণীভবন:-

১) উদ্ভিদ, লতাপাতা প্রভৃতি জলে পচে যে জৈব অম্লের সৃষ্টি হয় তার সংস্পর্শে এলে শিলাগঠিত খনিজে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, ফলে কালক্রমে খনিজ বিয়োজিত হয়ে শিলা ক্ষয়িত হয়;

২) এছাড়াও শিলার ফাটল দিয়ে উদ্ভিদের শিকড় শিলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিস্তার লাভ করে এবং শিলাকে চূর্ণবিচূর্ণ হতে সাহায্য করে ।

প্রাণীর সাহায্যে বিচূর্ণীভবন:-

১) প্রেইরি কুকুর, খরগোশ, ছুঁচো, ইঁদুর, কেঁচো প্রভৃতি মৃৎভেদী প্রাণী ভূপৃষ্ঠে গর্ত করে বাসস্থান নির্মান করতে গিয়ে মৃত্তিকার দৃঢ়তা নষ্ট করে একে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে সাহায্য করে ।

২) বিভিন্ন ধরনের কীট, জীবাণু এবং ব্যাকটিরিয়ার দেহ-নিঃসৃত রসের মাধ্যমে শিলায় আবহবিকার [Weathering] হয় ।



►মাটির সৃষ্টি [Formation of Soil]:- ভূত্বকের উপরিভাগের ক্ষয়ে যাওয়া শিলাচূর্ণের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জৈব্য ও অজৈব বস্তুর সংমিশ্রণে গঠিত যে নরম ও অসমসত্ত্ব আবরণ স্তরে গাছপালা জন্মায়, তাকেই মাটি [ Soil ]বলে।



♦মাটির উৎপত্তি :- ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে , সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পৃথিবী প্রথমে গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থায় ছিল । পরে তাপ বিকিরণের ফলে পৃথিবী তরল অবস্থায় আসে এবং ক্রমাগত তাপ বিকিরণের ফলে ঠান্ডা হয়ে শক্ত পিণ্ডে পরিণত হয় । এই শক্ত পিণ্ডকে শিলা বলে। কঠিন শিলা প্রাকৃতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক বিক্রিয়ায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অবশেষে মাটিতে পরিণত হয় । আসলে চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া শিলার সঙ্গে জৈব পদার্থ মিশ্রিত হয়েই প্রকৃত মাটি সৃষ্টি হয় । ভূ-পৃষ্ঠে মাটি সৃষ্টির পদ্ধতিগুলিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা- ১) প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ২) জৈব প্রক্রিয়া (উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা) ।

১) প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া:-যেসব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মাটি সৃষ্টি হয় সেগুলি হল-(ক) আবহবিকার, (খ) ক্ষয়ীভবন, (গ) নগ্নীভবন, (ঘ) অপসারণ এবং (ঙ) অবক্ষেপন ।

ক) আবহবিকার: শীতের প্রচন্ড শৈত্য, গ্রীষ্মের উত্তাপ এবং দিন ও রাতের উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য ভূপৃষ্ঠের শিলার ক্রমাগত সংকোচন ও প্রসারণ হয় । সাধারণ ভাবে একে আবহবিকার বলে । আর এই আবহবিকারের ফলে শিলাত্বকে ফাটল ধরে এবং শিলার ওপরের অংশ ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে । কালক্রমে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক [Organic], রাসায়নিক [Chemical] এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূর্ণবিচূর্ণ উপাদানগুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।

খ) ক্ষয়ীভবন:- বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, জলস্রোত, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে কিংবা আবহবিকারের জন্য ভূত্বকের উপরিভাগ ক্রমশ ক্ষয় পেয়ে মাটির সৃষ্টি করে । এই প্রক্রিয়াকে ক্ষয়ীভবন বলে ।

গ) নগ্নিভবন:- বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ভূত্বকের উপরিভাগ চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হলে শিলার ওপরের অংশ আলগা হয়ে যাওয়ায় ঠিক তার নীচের স্তরটি উন্মুক্ত বা নগ্ন হয়ে পড়ে, এই প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলে।

ঘ) অপসারণ:- এই প্রক্রিয়ায় ভূত্বকের উপরিভাগের চূর্ণবিচূর্ণ এবং ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি প্রাকৃতিক বাহক, যথা- জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদির দ্বারা একস্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয় এবং কালক্রমে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক [Organic], রাসায়নিক [Chemical] এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূর্ণবিচূর্ণ উপাদানগুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।

ঙ) অবক্ষেপণ: এই প্রক্রিয়ায় ভূত্বকের উপরিভাগের চূর্ণবিচূর্ণ এবং ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি পরিবাহিত হয়ে অন্য কোনও স্থানে সঞ্চিত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে।



২) জৈবিক প্রক্রিয়া:- উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা মাটির উৎপত্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খনিজ পদার্থের রূপান্তর ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টি করে ।

ক) ছোটো বড়ো উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে খনিজ পদার্থের রূপান্তর ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টি করে ।

খ) উদ্ভিদ, লতাপাতা প্রভৃতি জলে পচে যে জৈব অম্লের সৃষ্টি হয় তার সংস্পর্শে এলে শিলাগঠিত খনিজে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, ফলে কালক্রমে খনিজ পদার্থের রূপান্তর ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টি করে ।

গ) শিলার ফাটলের মধ্যে উদ্ভিদের মূল প্রবেশ করলে ফাটলের আয়তন বাড়ে এবং উদ্ভিদের মূলের বৃদ্ধির ফলে শিলা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় ।

ঘ) শিলার ওপর শৈবাল, ছত্রাক ইত্যদি জন্মালে শিলা নরম ও আলগা হয়ে মাটিতে পরিণত হয় ।

ঙ) মাটিতে থাকা বিভিন্ন জীবাণু, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহকে পচিয়ে জৈব পদার্থে পরিণত করে এবং পরোক্ষভাবে মাটি সৃষ্টিতে সাহায্য করে ।

চ) মাটিতে বসবাসকারী কেঁচো, উঁই, পিঁপড়ে, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিকে ওলটপালট করে দিয়ে রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে জৈব উপাদানের মিশ্রণ ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টিতে সাহায্য করে ।



♦ রেগোলিথ [Regolith]:-

রেগোলিথ হল মৃত্তিকাময় এক ধরনের শিথিল শিলাচূর্ণ । মাটি সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থাকে রেগোলিথক বলা যেতে পারে । আবহবিকারের [Weathering] ফলে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর ক্রমাগত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অবশেষে ছোট ছোট সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয় এবং ভূত্বকের উপর রেগোলিথ নামে এক ধরনের শিলাচূর্ণের আবরণ পড়ে । কালক্রমে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক [Organic], রাসায়নিক [Chemical] এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেগোলিথের প্রাথমিক উপাদান গুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে । সাধারণত গ্রানাইট শিলায় আবহবিকারের ফলে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে সুড়কির মতো এক ধরনের মৃত্তিকাময় ও লাল রঙের শিথিল শিলাচূর্ণ রেগোলিথ সৃষ্টি করে ।



♦ মাটির শ্রেণিবিভাগ:-

উৎপত্তি অনুসারে মাটি দু’ধরনের হয়, যেমন- ১) স্থানীয় মাটি, ২) অপসৃত মাটি ।

১) স্থানীয় মাটি:- প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে মাতৃশিলা থেকে উৎপন্ন মাটি উৎপত্তিস্থলেই স্থিতিলাভ করে তখন তাকে স্থানীয় মাটি বা স্থিতিশীল মাটি বলে । এই ধরনের মাটির ওপরের স্তরএর কণাগুলো সূক্ষ্ম হয় কিন্তু নীচের স্তরগুলিতে মাটির কণাগুলো ক্রমশ মোটা হতে শুরু করলেও মাটির বিভিন্ন স্তরের মূল উপয়াদান একই থাকে ।

২) অপসৃত মাটি:- যেসব মাটি বায়ুপ্রবাহ, তুষারপাত, জলপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা পরিবাহিত হয়ে তাদের উৎস থেকে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চিত হয়, তাদের পরিবাহিত বা অপসৃত মাটি বলে । অপসৃত মাটি সাধারণত উর্বর হয় এবং দূরবর্তী স্থান থেকে আসার জন্য অপসৃত মাটির মূল ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তাদের নীচে থাকা শিলাস্তর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয় ।



♦ মাটির প্রকারভেদ: অপসৃত মাটি নানা ধরনের হতে পারে, যেমন- কোনো স্থানের মাটি বায়ুপ্রবাহ দ্বারা পরিবাহিত হয়ে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চিত হলে তাকে লোয়েস মাটি এবং জলপ্রবাহ দ্বারা সঞ্চিত হলে তাকে পলিমাটি বলে ।

গঠন অনুসারে মাটির শ্রেণিবিভাগ:- গঠন অনুসারে মাটিকে নুড়ি, বালি, পলি এবং কাদা- এই চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:-

১) দোঁয়াশ মাটি, (এই মাটিতে বালি ও কাদা প্রায় সমপরিমাণে থাকে),

২) এঁটেল মাটি (এই মাটিতে কাদার ভাগ বেশি)

৩) বেলে মাটি ( এইমাটিতে বালির ভাগ বেশি)।

descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter Emptyছোটো প্রশ্ন ও উত্তর - দ্বিতীয় অধ্যায়

more_horiz
ছোটো প্রশ্ন ও উত্তর:[দ্বিতীয় অধ্যায়]


আবহবিকার [Weathering] ও মাটির উৎপত্তি [Formation of Soil] :-



প্রশ্ন:- আবহবিকার সাধারণত কয় প্রকার ও কী কী [Types Weathering] ?

উত্তর:- আবহবিকার সাধারণত তিন প্রকার , যথা , —(ক) যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] ও (খ) রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] (গ) জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering] ।



প্রশ্ন:- যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] সর্বাধিক কোথায় ঘটে ?

উত্তর:- যান্ত্রিক আবহবিকার মরু অঞ্চলে সর্বাধিক ঘটে ।



প্রশ্ন:- রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] সর্বাধিক কোথায় ঘটে ?

উত্তর:- রাসায়নিক আবহবিকার বৃষ্টিবহুল ক্রান্তীয় অঞ্চলে সর্বাধিক ঘটে ।



প্রশ্ন:- কার্বনিকরণ (Carbonation) প্রক্রিয়াটি কোন আবহবিকারের দৃষ্টান্ত ?

উত্তর:- কার্বনিকরণ (Carbonation) প্রক্রিয়াটি রাসায়নিক আবহবিকারের দৃষ্টান্ত ।



প্রশ্ন:- শল্কমোচন [Exfoliation] প্রক্রিয়াটি কোন আবহবিকারের দৃষ্টান্ত ?

উত্তর:- শল্কমোচন প্রক্রিয়াটি যান্ত্রিক আবহবিকারের দৃষ্টান্ত ।



প্রশ্ন:- শল্কমোচন [Exfoliation] প্রক্রিয়াটি মূলত কোথায় ঘটে ?

উত্তর:- শল্কমোচন প্রক্রিয়াটি মূলত গ্রানাইট শিলায় ঘটে ।



প্রশ্ন:- খনিজ থেকে অক্সিজেন বিযুক্ত হলে যে রাসায়নিক আবহবিকার সম্পন্ন হয় তাকে কী বলে ?

উত্তর:- খনিজ থেকে অক্সিজেন বিযুক্ত হলে যে রাসায়নিক আবহবিকার সম্পন্ন হয় তাকে হাইড্রোলাইসিস বলে ।



প্রশ্ন:- লৌহযুক্ত শিলায় জল সংযোগে অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে কী বলে ?

উত্তর:- লৌহযুক্ত শিলায় জল সংযোগে অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে জারণ (Oxidation) বলে ।



প্রশ্ন:- উষ্ণ মরু অঞ্চলে বেশি মাত্রায় কোন আবহবিকার দেখা যায় ?

উত্তর:- উষ্ণ মরু অঞ্চলে বেশি মাত্রায় যান্ত্রিক আবহবিকার (Mechanical Weathering) দেখা যায় ।



প্রশ্ন:- সর্বাধিক রাসায়নিক আবহবিকার কোন অঞ্চলে ঘটে থাকে ?

উত্তর:- সর্বাধিক রাসায়নিক আবহবিকার ক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চলে ঘটে থাকে ।



প্রশ্ন:- উষ্ণতার তারতম্যে স্তরবিশিষ্ট শিলা পেঁয়াজের খোসার মতো খুলে গেলে তাকে কী বলে ?

উত্তর:- উষ্ণতার তারতম্যে স্তরবিশিষ্ট শিলা পেঁয়াজের খোসার মতো খুলে গেলে তাকে শল্কমোচন [Exfoliation] বলে ।



প্রশ্ন:- কোন জলবায়ু অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] প্রাধান্য পায় ?

উত্তর:- উষ্ণ মরু অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার প্রাধান্য পায় ।



প্রশ্ন:- কোন প্রক্রিয়ার ফলে শিলায় মরচে ধরে ?

উত্তর:- জারণ (Oxidation) প্রক্রিয়ার ফলে শিলায় মরচে ধরে ।



প্রশ্ন:- তুষারের দ্বারা সংঘটিত যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি দেখা যায় কোন অঞ্চলে ?

উত্তর:- তুষারের দ্বারা সংঘটিত যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি দেখা যায় শীতল অঞ্চলে ।



প্রশ্ন:- কোনও স্থানের মাটি বায়ুপ্রবাহের দ্বারা পরিবাহিত হয়ে দুরবর্তী স্থানে সঞ্চিত হলে তাকে কী মাটি বলে ?

উত্তর:- কোনও স্থানের মাটি বায়ুপ্রবাহের দ্বারা পরিবাহিত হয়ে দুরবর্তী স্থানে সঞ্চিত হলে তাকে লোয়েস মাটি বলে ।



প্রশ্ন:- যে মাটিতে কাদার ভাগ বেশি থাকে তাকে কী মাটি বলে ?

উত্তর:- যে মাটিতে কাদার ভাগ বেশি থাকে তাকে এঁটেল মাটি বলে ।



প্রশ্ন:- তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য সংঘটিত যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে কী হয় ?

উত্তর:- তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য সংঘটিত যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegration] হয় ।



প্রশ্ন:- আর্দ্র চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে কোন আবহবিকার বেশি মাত্রায় দেখা যায় ?

উত্তর:- আর্দ্র চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার (Chemical Weathering) বেশি মাত্রায় দেখা যায় ।



প্রশ্ন:- ভূপৃষ্ঠস্থ চুর্নবিচূর্ণ শিলাসমূহ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারিত হয় তাকে কী বলে ?

উত্তর:- ভূপৃষ্ঠস্থ চুর্নবিচূর্ণ শিলাসমূহ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারিত হয় তাকে ক্ষয়ীভবন বলে ।



প্রশ্ন:- জলপ্রবাহ দ্বারা পরিবাহিত মাটিকে কী মাটি বলে ?

উত্তর:- জলপ্রবাহ দ্বারা পরিবাহিত মাটিকে পলিমাটি বলে ।



প্রশ্ন:- হিমসিঁড়ির মধ্যে যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে কী বলে ?

উত্তর:- হিমসিঁড়ির মধ্যে প্যাটানস্টার হ্রদ সৃষ্টি হয় ।



প্রশ্ন:- হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে কী সৃষ্টি হয় ?

উত্তর:- হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে গ্রাবরেখা (Moraine) সৃষ্টি হয় ।



প্রশ্ন:- মরুভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট হ্রদকে কী বলে ?

উত্তর:- মরুভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট হ্রদকে প্লায়া (Playa) বলে ।



প্রশ্ন:- চলমান বালিয়াড়িকে কী বলে ?

উত্তর:- চলমান বালিয়াড়িকে বার্খান (Barkhan) বলে ।



প্রশ্ন:- আবহবিকারের ফলে শিলাসমূহ চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে একধরনের ভূ-আস্তরণের সৃষ্টি হয় তাকে কী বলে ?

উত্তর:- আবহবিকারের ফলে শিলাসমূহ চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে একধরনের ভূ-আস্তরণের সৃষ্টি হয় তাকে রেগোলিথ বলে ।



প্রশ্ন:- উচ্চ অক্ষাংশে তুষারক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট কোণবিশিষ্ট শিলাখন্ডের সঞ্চয়কে কী বলে ?

উত্তর:- উচ্চ অক্ষাংশে তুষারক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট কোণবিশিষ্ট শিলাখন্ডের সঞ্চয়কে শিলাসমুদ্র বলে ।



প্রশ্ন:- যে প্রক্রিয়ার ফলে মূল শিলার ভেতরের স্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তাকে কী বলে ?

উত্তর:- যে প্রক্রিয়ার ফলে মূল শিলার ভেতরের স্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তাকে নগ্নিভবন বলে ।



প্রশ্ন:- মৃত্তিকা সৃষ্টি কীভাবে হয় ?

উত্তর:- আবহবিকারের মাধ্যমে মৃত্তিকা সৃষ্টি হয় ।



প্রশ্ন:- মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রধান উপকরণ কী ?

উত্তর:- মৃত্তিকা সৃষ্টির প্রধান উপকরণ হল ক্ষয়িত শিলা ।

descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter Emptyঅধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর -- ২য় অধ্যায়- ১ম অংশ

more_horiz
অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[২য় অধ্যায়- ১ম অংশ]


প্রশ্ন-১. আবহবিকার [Weathering] কাকে বলে এবং কয় প্রকার ?

যে প্রক্রিয়ায় আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, যেমন- উষ্ণতা, আদ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে ভূত্বকের ওপরের অংশের শিলাস্তর ধীরে ধীরে ভেঙে বা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মূল শিলাস্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মূল শিলাস্তরের ওপরেই পড়ে থাকে, সেই প্রক্রিয়াকে আবহবিকার [Weathering] বলা হয়। আবহবিকারের ফলে চূর্ণ বিচূর্ণ শিলাজাত পদার্থগুলো মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানেই পড়ে থাকে, কিন্তু অন্যত্র অপসারিত হয় না ।

আবহবিকারকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:-

১) যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] (যেমন:- (ক) খন্ডবিখন্ডিকরণ বা পিন্ড বিশরণ [Block Disintegration], (খ) গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation],  (গ) ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegretion] , (ঘ) তুহিন খন্ডীকরণ ),

২) রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] (যেমন:- (ক) কার্বনিকরণ বা অঙ্গারযোজন [Carbonation], (খ) জারণ [Oxidation], আর্দ্রকরণ বা জলযোজন [Hydration], দ্রবণ [Solution] প্রভৃতি) এবং

৩) জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering] (উদ্ভিদের সাহায্যে ও প্রাণীর সাহায্যে আবহবিকার) । আবহবিকারের মাধ্যমে মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জৈবিক আবহবিকার প্রক্রিয়াটি যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকার প্রক্রিয়া দুটিকে তরান্বিত করে মাত্র ।



প্রশ্ন-২. আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের মধ্যে পার্থক্য কী কী ?



আবহবিকার


ক্ষয়ীভবন

১) আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যথা-রোদ, বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা, আর্দ্রতা প্রভৃতির প্রভাবে শিলার ওপরের অংশের যে পরিবর্তন হয় তাকে আবহবিকার [Weathering] বলে। এই পরিবর্তন ভৌত বা রাসায়নিক যে কোনও রকমের হতে পারে ।


১) প্রবাহমান নানা প্রাকৃতিক শক্তি , যথা- নদীপ্রবাহ, জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতির মাধ্যমে ভেঙে যাওয়া শিলার টূকরো, বালি, মাটি ইত্যাদির অপসারণকে ক্ষয়ীভবন বলে ।

২) বায়ুর উপাদান গুলি অর্থাৎ উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ ইত্যাদির সন্মিলিত প্রভাবে আবহবিকার প্রক্রিয়া ঘটে থাকে।


২) প্রবাহমান নানা প্রাকৃতিক শক্তি, যথা- নদীপ্রবাহ, জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ প্রভৃতির মাধ্যমে ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় ।

৩) আবহবিকারের ফলে চূর্ণীকৃত শিলার টুকরো মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব ছাড়া অপসারিত বা স্থানান্তরিত হয় না, নিজের স্থানেই অবস্থান করে । আবহবিকারের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত নয় ।


৩) ক্ষয়ীভবনের ফলে চূর্ণীকৃত শিলা অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়, একস্থানে থাকে না । অর্থাৎ ক্ষয়ীভবনের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত ।

৪) আবহবিকারের ফলে মূল শিলার ভিতরের স্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে না ।


৪) ক্ষয়ীভবনের ফলে মূল শিলার ভিতরের স্তর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে ।

৫) আবহবিকার একটি সৃজনমুলক প্রক্রিয়া যা খুব ধীরে ধীরে ঘটে।


৫) ক্ষয়ীভবন একটি ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া যা খুব তাড়া তাড়ি সম্পন্ন হয়।

৬) আবহবিকারের ফলে শিলার মূল বৈশিষ্ট্য, যেমন- শিলার গঠন, খনিজের বিন্যাস-প্রকৃতি ইত্যাদির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে ।


৬) ক্ষয়ীভবনের ফলে ভূমিরূপের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলেও শিলার রাসায়নিক পরিবর্তন যেমন- গঠন, খনিজের বিন্যাস-প্রকৃতি ইত্যাদির পরিবর্তন ঘটে না।
৭) আবহবিকার এক স্থির পদ্ধতি(static process), বিয়োজিত শিলাচূর্ণ কাছেই পড়ে থাকে; স্থানচ্যুত হতে পারে মাত্র । ৭) ক্ষয়ীভবন হল এক গতিশীল পদ্ধতি (Dynamic process) । ক্ষয়কার্য ও বহনের মাধ্যমে ক্ষয়ীভুত পদার্থ দুরান্তরে অপসারিত হয় ।



প্রশ্ন-৩. যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] কাকে বলে ?

উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, তুষার, অভিকর্ষ, নদী, বায়ু, জীবজন্তু বা উদ্ভিদ প্রভৃতি নানা প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে শিলাস্তর যখন ছোটো ছোটো খন্ড বা চূর্ণে পরিণত হয়ে মূল শিলার ওপর অবস্থান করে, এবং তার মধ্যে যখন কোনোরকম রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না, তখন তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] বলা হয়। যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে শিলাসমূহ ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়, যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না বা শিলার কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না । এই আবহবিকারের ফলে শিলার ভৌত পরিবর্তন হয় । উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চল, শুষ্ক মরু অঞ্চল, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বেশি উচ্চতা যুক্ত স্থানে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি হয় । ১) তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য ঘটা যান্ত্রিক আবহবিকারগুলি হল:- পিন্ডবিশরণ, শল্কমোচন, ক্ষুদ্রকণা বিশরণ;  ২) তুষারের দ্বারা তুহিন খন্ডীকরণ প্রভৃতি । এছাড়া জল এবং চাপ হ্রাসের ফলেও যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটে থাকে ।



প্রশ্ন-৪.  যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো ।

উত্তর:- যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবনের প্রধান কারণ হল চারটি, যথা:- ১) তাপমাত্রার পরিবর্তন, ২) তুষারপাত, ৩) বৃষ্টিপাত এবং ৪) শিলাস্তরের চাপ হ্রাস প্রাপ্ত হওয়া ।

ক) তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে সংঘটিত যান্ত্রিক আবহবিকার :-

১) পিন্ড-বিশরণ [Block disintegration] :- যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে খন্ডবিখন্ডিকরণ বা পিন্ড বিশরণ [Block Disintegration] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । শিলা তাপের সুপরিবাহী নয়। এই জন্য মরু অঞ্চলের গাছপালা হীন উন্মুক্ত প্রান্তরে দিনে এবং রাত্রে শিলার ভিতরের ও বাইরের অংশের উষ্ণতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে । ক্রমাগত উত্তাপে প্রসারিত ও ঠান্ডায় সংকুচিত হতে হতে শিলার সন্ধিস্থল গুলো আলগা হয়ে যায় এবং শিলাগাত্রে ফাটলের সৃষ্টি হয়। এই ফাটলগুলি কালক্রমে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভগ্ন স্তূপে পরিণত হয় । এই ভেঙে যাওয়া শিলার আকৃতি অনেকটা বর্গক্ষেত্র বা আয়তক্ষেত্রের মতো হয় বলে আবহবিকারের এই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকে চৌকাকার বিচূর্ণীভবন অথবা পিন্ড-বিশরণ [Block disintegration] বলে ।

২) গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation]:- যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । শিলাস্তর তাপের সুপরিবাহী না হওয়ার ফলে দিন ও রাতে শিলার ভিতরের ও বাইরের অংশের মধ্যে উষ্ণতার যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে । উষ্ণতার এই তারতম্যের ফলে শিলাস্তরে ক্রমাগত প্রসারণ ও সংকোচন ঘটে । দীর্ঘদিন ধরে সংকোচন ও প্রসারণের ফলে শিলার ওপরের স্তর ওপরের দিকে প্রসারিত হয় । তখন ওপরের স্তর নীচের অপেক্ষাকৃত শীতল স্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেঁয়াজের খোলার মতো খসে পড়ে । শিলার বাইরের অংশ এই ভাবে পেঁয়াজের খোসার মতো খুলে গেলে ভিতরের অংশটি কিছুটা গোলাকার ও মসৃণ শিলাখন্ডে পরিণত হয় । এইভাবে সৃষ্টি হওয়া প্রধান গোলাকার শিলাটিকে ‘অবশিষ্ট গণ্ড-শিলা’ বলে। শল্কমোচনের ফলে শিলাখন্ড গুলো অনেকটা গোলাকার হয়ে যায়, তাই বিচূর্ণীভবনের এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation] বলে। একই জাতীয় খনিজ পদার্থে গঠিত সমপ্রকৃতির শিলায় শল্কমোচন [Exfoliation] বেশি হয় ।

৩) ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular disintegration]:-  যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular disintegration] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । যেসব শিলা বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থে গঠিত, সেই সব বিষম গুণ সম্পন্ন ও বড় দানা যুক্ত শিলা গুলো ঠান্ডায় বা গরমে সমান ভাবে সংকুচিত বা প্রসারিত হতে পারে না । এরফলে শিলাস্তরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন টানের সৃষ্টি হয় এবং তাতে শিলা সশব্দে ফেটে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায় । উষ্ণতার তারতম্যের ফলে এইভাবে বিষম গুণসম্পন্ন শিলার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়াকে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular disintegration] বলে ।



খ) তুষারের দ্বারা সংঘটিত যান্ত্রিক আবহবিকার:

তুহিন খন্ডিকরণ বা তুষারের কাজ :- যান্ত্রিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে তুহিন খন্ডিকরণ বা তুষারের কাজ হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । শীতল জলবায়ু অঞ্চলে, উচ্চ অক্ষাংশে বা উচ্চ পর্বতগাত্রে দিনের বেলায় বা গ্রীষ্মকালে বরফ গলে অথবা বর্ষাকালে শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে জল সঞ্চিত হলে তা পরে শীতকালে বা রাত্রিবেলা অত্যধিক ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয় । জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে শতকরা দশভাগ বৃদ্ধি পায় । এর ফলে ফাটলের মধ্যস্থিত জল বরফে পরিণত হয়ে ফাটলের দু’পাশের দেওয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে । এই চাপের ফলে ফাটল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্তর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে পরিণত হয় । যান্ত্রিক আবহবিকারে এই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকে তুহিন-খন্ডিকরণ বা তুষারের কাজ বলে ।



গ) জল দ্বারা সংঘটিত যান্ত্রিক আবহবিকার:-

১) বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে বৃষ্টির জল কোমল পাললিক শিলা এবং ছিদ্রযুক্ত রূপয়ান্তরিত শিলার মধ্যে প্রবেশ করে এবং শিলাতরকে আর্দ্র করে তোলে । আর্দ্রতা বৃদ্ধির জন্য কালক্রমে শিলাস্তরটি খন্ডবিখন্ড হয়ে যায়।

২) নদীর জল যখন দ্রুতগতিতে শিলাস্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন নদীর জলপ্রবাহের মধ্যবর্তী বায়ুর চাপের ফলে নদীপ্রবাহের নিম্নবর্তী শিলাস্তর ভেঙে খন্ডবিখন্ড হয়ে যায় ।



ঘ) চাপ হ্রাসের ফলে সংঘটিত যান্ত্রিক আবহবিকার:-

ভূ-পৃষ্ঠের উপরিভাগের শিলাস্তরে আবহবিকারের ফলে সৃষ্টি হওয়া এবং মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে থাকা শিলাচূর্ণ গুলো কালক্রমে নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি শক্তিগুলো দ্বারা অপসারিত হলে শিলাস্তরের ওপরের অংশের চাপ কমে যায় । শিলাস্তরের ওপরের অংশের চাপ কমে যাওয়ার ফলে নীচের শিলাস্তরগুলো প্রসারিত হয় এবং শিলাস্তরের মধ্যে ভূ-পৃষ্ঠের সমান্তরালে নানা আয়তনের ফাটল (Crack) সৃষ্টি হয়। এই সব ফাটলের প্রভাবে বড়ো বড়ো শিলার স্তরে বিচ্যুতি ঘটে । ক্রমশ ওই ফাটল বরাবর শিলাস্তর বিচ্ছিন্ন ও খন্ডবিখন্ড হয়ে যায়।



প্রশ্ন-৫. খন্ডবিখন্ডিকরণ বা প্রস্তরখন্ড বিশরণ অথবা, পিন্ড বিশরণ কাকে বলে [Block Disintegration] ?

উষ্ণতার পার্থক্যে যান্ত্রিক আবহবিকারের [Mechanical Weathering] একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হল পিন্ডবিশরণ বা খন্ডবিখন্ডিকরণ [Block Disintegration] ।

১) শিলা তাপের সুপরিবাহী নয় । এই জন্য মরু অঞ্চলের গাছপালাহীন উন্মুক্ত প্রান্তরে দিনের বেলা সূর্যের উত্তাপে শিলার বাইরের অংশ যতটা উষ্ণ হয়, ভিতরের অংশ ততটা উষ্ণ হয় না । আবার,

২) রাত্রিবেলা শিলার ওপরের অংশ যত তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়, ভিতরের অংশ তত তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয় না, ফলে দিনে বা রাত্রে শিলার ভিতরের ও বাইরের অংশের উষ্ণতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে ।

৩) উষ্ণতার এই তারতম্যের ফলে শিলাস্তরে ক্রমাগত প্রসারণ ও সংকোচন হয় । পর্যায়ক্রমে উত্তাপে প্রসারিত ও ঠান্ডায় সংকুচিত হতে হতে শিলার সন্ধি স্থলগুলো আলগা হয়ে যায় এবং শিলাগাত্রে ফাটলের সৃষ্টি হয় । ফাটলগুলি সাধারণত উন্মুক্ত প্রান্তরের সঙ্গে সমান্তরাল ও লম্বভাবে অবস্থান করে ।

৪) সমান্তরাল ফাটল ও উলম্ব ফাটলগুলো পরস্পরকে স্পর্শ করলে শিলাস্তর বর্গক্ষেত্র কিংবা আয়তক্ষেত্রের মতো ছোটো ছোটো পিন্ডাকার অংশে বিভক্ত হয় এবং কালক্রমে এরা পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভগ্নস্তূপে পরিণত হয় । ভেঙে যাওয়া শিলার আকৃতি অনেকটা বর্গক্ষেত্র ও আয়তক্ষেত্রের মতো হয় বলে আবহবিকারের এই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকে প্রস্তরখন্ড বিশরণ [Block Disintegration] বা চৌকাকার বিচূর্ণীভবন অথবা পিন্ডবিশরণ বলে।



প্রশ্ন-৬. শল্কমোচন [Exfoliation] বা গোলাকার বিচূর্ণীভবন কাকে বলে ?

উষ্ণতার পার্থক্যে যান্ত্রিক আবহবিকারের [Mechanical Weathering] অন্যতম এক প্রক্রিয়া হল শল্কোমোচন [Exfoliation] বা গোলাকার বিচূর্ণীভবন ।

১) শিলা তাপের সুপরিবাহী না হওয়ায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দিনের বেলা সৌরতাপে শিলার বাইরের অংশ যতটা উষ্ণ হয় ভিতরের অংশ ততটা উষ্ণ হয় না । আবার,

২) রাতে শিলার ওপরের অংশ যত তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়, ভিতরের অংশ ততটা হয় না । ফলে দিনে বা রাতে শিলার বাইরের ও ভিতরের মধ্যে উষ্ণতার যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে ।

৩) উষ্ণতার এই তারতম্যের প্রভাবে শিলাস্তরে ক্রমাগত প্রসারণ ও সংকোচন ঘটে । দীর্ঘদিন সংকোচন ও প্রসারণের ফলে শিলার ওপরের স্তর ওপরের দিকে প্রসারিত হয় । তখন ওপরের স্তর নীচের অপেক্ষাকৃত শীতল স্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেঁয়াজের খোসার মতো খসে পড়ে, একে শল্কমোচন [Exfoliation] বলে ।

৪) শল্কমোচনের [Exfoliation] ফলে শিলার টুকরোগুলি গোলাকার বা উপগোলাকার হয়ে পড়ে । একই জাতীয় খনিজ পদার্থে গঠিত সমপ্রকৃতির শিলায় শল্কমোচন বেশি হয় । সাধারণত গ্রানাইট শিলা গঠিত খাড়া ও অপ্রশস্ত পার্বত্য অঞ্চলে, যেখানে উষ্ণতার পার্থক্য বেশি, সেখানে গোলাকার বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন বেশি দেখা যায় । পর্বতের ঢাল ও পাদদেশে সঞ্চিত এই জাতীয় বিচ্ছিন্ন ও খন্ডবিখন্ড প্রস্তর খন্ডগুলোকে স্ক্রী বা ট্যালাস বলে ।



প্রশ্ন-৭. ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegration] কী:- যান্ত্রিক আবহবিকারের [Mechanical Weathering] অন্যতম এক প্রক্রিয়া হল ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegration] । যেসব শিলা বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থে গঠিত, সেইসব বিষম গুণসম্পন্ন ও বড়ো দানাযুক্ত শিলাগুলো ঠান্ডায় বা গরমে সমানভাবে সংকুচিত বা প্রসারিত হতে পারে না । এর ফলে শিলাস্তরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন টানের সৃষ্টি হয় এবং তাতে শিলা হঠাৎ সশব্দে ফেটে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় । মরু অঞ্চলে সাধারণত বিকেলের দিকে সূর্যাস্তের পরে এই শিলা ফাটার আওয়াজ পাওয়া যায় । উষ্ণতার তারতম্যের ফলে এইভাবে বিষম গুণসম্পন্ন শিলায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়াকে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegration] বলে ।



প্রশ্ন-৮.  তুষারের কাজ বা তুহিন-খন্ডীকরণ :- শীতল জলবায়ু অঞ্চল, উচ্চ অক্ষাংশ বা উচ্চ পর্বতগাত্রে দিনের বেলা বা গ্রীষ্মকালে বরফ গলে এবং বর্ষাকালে শিলাস্তরে ফাটলের মধ্যে জল সঞ্চিত তা পরে শীতকালে বা রাত্রিকালে অত্যধিক ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয় । জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে শতকরা দশ ভাগ বৃদ্ধিপায় বলে ফাটলের মধ্যস্থিত জল বরফে পরিণত হয়ে ফাটলের দুপাশের দেওয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে । এই চাপের ফলে ফাটল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্তর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে পরিণত হয় । এই প্রক্রিয়াকে তুহিন-খন্ডীকরণ বলে ।



প্রশ্ন-৯. রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] কাকে বলে ?:- যে আবহবিকারের মাধ্যমে শিলা গঠনকারী বিভিন্ন খনিজ পদার্থগুলির ওপর বায়ুমন্ডলের প্রধান উপাদান সমূহ বিশেষ করে অক্সিজেন (O2), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2), জ্বলীয় বাষ্প প্রভৃতির বিক্রিয়ার ফলে কঠিন শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজ পদার্থগুলো নতুন গৌণ খনিজে পরিণত হয়ে মূল শিলা শিথিল হয়ে পড়ে, তাকে রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] বলে । বৃষ্টিবহুল উষ্ণ অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকারের প্রাধান্য বেশি পরিলক্ষিত হয় । রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে  ১) অঙ্গার যোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation], ২) জারণ  [Oxidation] , ৩) জলযোজন বা আর্দ্রকরণ [Hydration], ৪) দ্রবণ [Solution] এবং ৫) আদ্র বিশ্লেষণ [Hydrolysis] উল্লেখযোগ্য ।



প্রশ্ন ১০. রাসায়নিক আবহবিকারের [Chemical Weathering] বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করো ।

উত্তর:- রাসায়নিক বিচূর্ণীভবনের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলির মধ্যে:- ১) কার্বনিকরণ বা অঙ্গারযোজন [Carbonation] , ২) অক্সিডেশন, ৩)হাইড্রেশন এবং ৪) সলিউশন উল্লেখযোগ্য।

১) অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation]:- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । বিভিন্ন খনিজের সঙ্গে প্রাকৃতিক কার্বন ডাই-অক্সাইড(CO2)-এর রাসায়নিক সংযোগের ফলে যে বিক্রিয়া ঘটে তাতে শিলা বিয়োজিত হয় এবং মূল খনিজগুলো নতুন খনিজে পরিণত হয়ে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । এই প্রক্রিয়াকে অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation] বলে । বৃষ্টির জল বায়ুমন্ডলের মধ্যদিয়ে ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার সময় বায়ুমন্ডলে অবস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের (CO2) সঙ্গে মিলিত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিডে (H2CO3) পরিণত হয় । এই কার্বনিক অ্যাসিড চুনাপাথরের উপর পতিত হয়ে যে বিক্রিয়া ঘটায় তাতে চুনাপাথরের মধ্যস্থিত ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেট Ca(HCO3)2 -এ পরিণত হয় এবং তা সহজেই দ্রবীভূত হয়ে অপসারিত হয় । চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে চুনাপাথর এই প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত এবং ক্রমাগত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন ভূমিরূপ গঠন করে । যথা-

(১)  H2O+CO2=H2CO3

         জল + কার্বন ডাই-অক্সাইড = কার্বনিক অ্যাসিড

(২)  H2CO3+CaCO3=Ca(HCO3)2

      কার্বনিক অ্যাসিড + চুনাপাথর = ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট



২) জারণ [Oxidation]:- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে জারণ [Oxidation] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন মিশলে তাকে জারণ [Oxidation] বলে । লোহার উপর এবং লোহা-গঠিত খনিজ ও শিলার উপর অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া বেশি । লোহা যখন ফেরাস অক্সাইড রূপে অবস্থান করে তা সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, কিন্তু লোহার সঙ্গে বাতাসের অক্সিজেন যুক্ত হলে লোহার উপরিভাগে হলুদ বা বাদামি রঙের একটি নতুন যৌগ পদার্থ তৈরি হয় এবং লোহা খুব সহজেই ক্ষয় পায় । সেইজন্য যেসব শিলায় লোহার পরিমাণ বেশি থাকে জারণের ফলে সেইসব শিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । জারণের ফলে মূল খনিজ ‘ফেরাস অক্সাইড’ ফেরিক অক্সাইডে2Fe2O3,3H2O

পরিণত হয়ে ‘লিমোনাইট’ -এর সৃষ্টি করে, যা সহজেই ভেঙে যায় । একই কারণে লোহার জিনিসে মরচে ধরলে তা সহজেই নষ্ট হয়ে যায়,

যথা—4FeO+3H2O+O2=2Fe2O3,3H2O



অর্থাৎ    লোহা   +   জল    +    অক্সিজেন   =   লিমোনাইট



৩) জলযোজন বা আর্দ্রকরণ [Hydration]:- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে জলযোজন বা আর্দ্রকরণ [Hydration] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । শিলাস্তরের মধ্যে অবস্থিত কোনো খনিজ পদার্থের সঙ্গে জল যুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তার ফলে খনিজ পদার্থটির আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়ে খনিজটি বিয়োজিত হয় । এই প্রক্রিয়াকে জলযোজন বা আর্দ্রকরণ [Hydration] বলে। রাসায়নিক বিয়োজনের ফলে শিলাগঠনকারী খনিজগুলো দৃঢ় ভাবে সংবদ্ধ থাকে না এবং সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় । যেমন-  উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক ‘হেমাটাইট'(2Fe2O3)
পাথরের সঙ্গে জলযুক্ত হলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, তার ফলে ‘লিমোনাইট’ (2Fe2O3,3H2O)

নামে নিকৃষ্ট লোহার সৃষ্টি হয়, যা অতি সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়,

যথা— 2Fe2O3+3H2O=2Fe2O3,3H2O

অর্থাৎ     হেমাটাইট   +   জল   =   লিমোনাইট



৪)  দ্রবণ বা সলিউশন[Solution]:- রাসায়নিক আবহবিকারের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে দ্রবণ বা সলিউশন[Solution] হল অন্যতম একটি পদ্ধতি । সৈন্ধব লবণ, জিপসাম প্রভৃতি কয়েকটি খনিজ পদার্থ জলের সংস্পর্শে দ্রবীভূত হয়ে তার নিজস্ব আকার হারিয়ে ফেলে। এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে দ্রবণ [Solution] বলে । দ্রবণের ক্ষেত্রে, যতবেশি পরিমাণ জল খনিজে প্রবিষ্ট হয়, খনিজ পদার্থটি তত তাড়াতাড়ি দ্রবীভূত হয়ে যায়, যথা—

   ১) সৈন্ধব লবণ    +     জল     =     সৈন্ধব লবণের দ্রবণ

   ২) জিপসাম       +     জল     =     জিপসামের দ্রবণ



প্রশ্ন-১১. চুনাপাথর কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত হয় ?

উত্তর:- ১) চুনাপাথর অঙ্গারযোজন বা কার্বনিকরণ [Carbonation] প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত হয়।



প্রশ্ন-১২. লৌহ আকরিক কোন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত হয় ?

উত্তর:- ১) লৌহ আকরিক জারণ [Oxidation] ও আর্দ্রকরণ [Hydration] প্রক্রিয়ায় বিয়োজিত হয়।



প্রশ্ন-১৩. শল্কমোচন কোন শিলাস্তরে বেশি কার্যকর হয় ?

উত্তর:- শল্কোমোচন বা গোলকাকৃতি বিচূর্ণীভবন[Exfoliation] গ্রানাইট বা ব্যাসল্ট শিলাস্তরে বেশি কার্যকরী হয়।



প্রশ্ন-১৪. আবহবিকারের অপর নাম ‘বিচূর্ণীভবন’কেন ?

উত্তর:- আবহবিকারের ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, যথা— উষ্ণতা, আদ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত প্রভৃতির সংস্পর্শে এসে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে অবস্থিত শিলাখন্ডগুলি ধীরে ধীরে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মূল শিলাস্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মূল শিলাস্তরের উপরেই পড়ে থাকে। তাই আবহবিকারকে [Weathering] বিচূর্ণীভবনও বলা হয়।



প্রশ্ন-১৫. কোন ধরনের জলবায়ু অঞ্চলে কী কারণে যান্ত্রিক আবহবিকার প্রাধান্য লাভ করে ?

উত্তর:- উষ্ণ মরু অঞ্চল ও শীতল পার্বত্য অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্য দেখা যায়, কারণ:-

১) শিলা তাপের সুপরিবাহী না হওয়ায় উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চলে দিন বা রাত্রে শিলার ভিতরের ও বাইরের অংশের উষ্ণতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে । আর এই উষ্ণতার তারতম্যের ফলে উষ্ণ মরু অঞ্চলে শিলা পর্যায়ক্রমে উত্তাপে প্রসারিত ও ঠান্ডায় সংকুচিত হয় । ক্রমে শিলার সন্ধিস্তল গুলি আলগা হয়ে পড়ে এবং ফাটলের সৃষ্টি হয় । ধীরে ধীরে এই ফাটলগুলো বড়ো হয়ে গেলে শিলাস্তর ছোটো ছোটো চৌক বা গোলাকার অংশে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এইসব যান্ত্রিক আবহবিকার (ক) পিন্ড বিশরণ [Block disintegretion], (খ) গোলাকার বিচূর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation] এবং (গ) ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular disintegretion] নামে পরিচিত ।

২) শীতল পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চলে দিনের বেলায় বা গ্রীষ্মকালে বরফ গলে গিয়ে অথবা বর্ষাকালে শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে জল সঞ্চিত হলে তা পরে শীতকাল বা রাত্রি বেলায় অত্যধিক শৈত্যে জমে বরফে পরিনত হয়। জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ বৃদ্ধি পায় । এই বর্ধিত আয়তনের বরফ ফাটলের দুপাশের দেওয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে । এই চাপের ফলে ফাটলগুলোর আয়তন ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্তর ছোটো ছোটো খন্ডে পরিণত হয়। যান্ত্রিক আবহবিকারের এই প্রক্রিয়াকে তুহিন খন্ডীকরণ বলে ।

উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চল অথবা শীতল পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য সমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চলে দিন রাত্রি অথবা বছরের বিভিন্ন সময়ে তাপমাত্রার বিশেষ একটা তারতম্য হয় না বলে ওই সব স্থানে যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি ঘটে না।



প্রশ্ন-১৬. তুষার দ্বারা কীভাবে যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটে ?

উত্তর:- শীতল জলবায়ু অঞ্চলে, উচ্চ অক্ষাংশে বা উচ্চ পর্বতগাত্রে বা গ্রীষ্মকালে বরফ গলে অথবা বর্ষাকালে শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে জল সঞ্চিত হলে তা পরে শীতকালে বা রাত্রিবেলা অত্যাধিক ঠান্ডায় জমে বরফে পরিণত হয় । জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে শতকরা দশ ভাগ বৃদ্ধি পায়, ফলে ফাটলের মধ্যস্থিত জল বরফে পরিণত হয়ে ফাটলের দু’পাশের দেওয়ালে প্রচন্ড চাপের সৃষ্টি করে । এই চাপের ফলে ফাটল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্তর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে পরিণত হয় । যান্ত্রিক আবহবিকারের এই বিশেষ প্রক্রিয়াটিকে তুহিন খন্ডিকরণ বলে ।



প্রশ্ন-১৭. শিলার শল্কমোচন কীভাবে ঘটে ?

উত্তর:- তাপমাত্রার পার্থক্যে যান্ত্রিক আবহবিকারের অন্যতম একটি প্রক্রিয়া হল শল্কমোচন । উষ্ণ পার্বত্য অঞ্চলে দিনে বা রাতে শিলার ভিতরের বা বাইরের তাপমাত্রার যথেষ্ট পার্থক্য হওয়ার ফলে এক জাতীয় খনিজ পদার্থের সংমিশ্রণে গঠিত প্রধানত গ্রানাইট জাতীয় সমপ্রকৃতির শিলাগুলি অসমভাবে প্রসারিত ও সংকুচিত হওয়ায় উপরের দিকে বেশি প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পায় । এর ফলে শিলার ওপরের স্তরটি মূল শিলা থেকে পেঁয়াজের খোলার মতো খুলে যায় । এই ভাবে স্তরে স্তরে বাইরের অংশ খুলে গেলে মূল শিলাখন্ডটির বাহিরের আকৃতি কিছুটা গোলাকার ও মসৃণ হয়ে যায় এবং বিচূর্ণীভবনের এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে শল্কমোচন [Exfoliation] বলা হয়।

descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter Emptyঅধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর -- ২য় অধ্যায়- ২য় অংশ

more_horiz
অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর:[২য় অধ্যায়- ২য় অংশ]


প্রশ্ন-১. জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering] কাকে বলে ?

উত্তর:- জৈবিক আবহবিকার হল যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] -এর একটি বিশেষ রূপ । গাছপালার শিকড় শিলাস্তরের মধ্যে ঢুকে ফাটল ধরিয়ে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] ঘটায় । যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকার ছাড়াও উদ্ভিদ ও প্রাণীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিলাখন্ডকে চূর্ণ বিচুর্ণ করে থাকে । ইঁদুর, খরগোশ, প্রেইরি কুকুর, পিঁপড়ে, কেঁচো, উই প্রভৃতি মৃৎভেদী প্রাণীরা মাটিতে গর্ত খুঁড়ে ভেতরের শিলাচূর্ণ, মাটি ইত্যাদি উপরের পৃষ্ঠে নিয়ে আসে । এভাবে উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিলাখন্ডকে চূর্ণবিচূর্ণ করে থাকে । এরকম আবহবিকার [Weathering] কে জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering]বলে ।



প্রশ্ন-২. কীভাবে জৈবিক আবহবিকার [Organic Weathering] সংঘটিত হয় ?

উত্তর:- জৈবিক বিচূর্ণীভবন বিভিন্ন ক) উদ্ভিদ এবং খ) প্রাণীর সাহায্যে হতে পারে ।

ক) উদ্ভিদের সাহায্যে বিচূর্ণীভবন:-

১) উদ্ভিদ, লতাপাতা প্রভৃতি জলে পচে যে জৈব অম্লের সৃষ্টি হয় তার সংস্পর্শে এলে শিলাগঠিত খনিজে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে, ফলে কালক্রমে খনিজ বিয়োজিত হয়ে শিলা ক্ষয়ীত হয়;

২) এছাড়াও শিলার ফাটল দিয়ে উদ্ভিদের শিকড় শিলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিস্তার লাভ করে এবং শিলাকে চূর্ণবিচূর্ণ হতে সাহায্য করে ।

খ) প্রাণীর সাহায্যে বিচূর্ণীভবন:-

১) প্রেইরি কুকুর, খরগোশ, ছুঁচো, ইঁদুর, কেঁচো প্রভৃতি মৃৎভেদী প্রাণী ভূপৃষ্ঠে গর্ত করে বাসস্থান নির্মান করতে গিয়ে মৃত্তিকার দৃঢ়তা নষ্ট করে একে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে সাহায্য করে ।

২) বিভিন্ন ধরনের কীট, জীবাণু এবং ব্যাকটিরিয়ার দেহ-নিঃসৃত রসের মাধ্যমে শিলায় আবহবিকার [Weathering] হয় ।



প্রশ্ন-৩. মরুভূমি অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] সর্বাধিক হয় কেন ?

তাপের দ্রুত পরিবর্তন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে শিলাস্তর ফেটে ছোটো ছোটো খন্ড বা চূর্ণে পরিণত হয়ে যখন মূল শিলার ওপরে অবস্থান করে এবং তার মধ্যে যখন কোনোরকম রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে না, তখন তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] বলে । আদ্রতার অভাবে মরু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার ঘটে না । মরুভূমি অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার সর্বাধিক হয়, কারণ:-

১) শিলা তাপের সুপরিবাহী না হওয়ায় উষ্ণ অঞ্চলে উষ্ণতার তারতম্যের ফলে শিলাস্তরের ক্রমাগত প্রসারণ ও সংকোচন ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে প্রসারণ ও সংকোচনের ফলে শিলাস্তর ফেটে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছোটো ছোটো অংশে বিভক্ত হয় এবং কালক্রমে পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মূল শিলা স্তরের ওপরে অবস্থান করে, একে খন্ডবিখন্ডিকরণ [Block Disintegration] বলে।

২) অনেক সময় প্রখর সূর্যকিরণে উত্তপ্ত শিলা নীচের স্তরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেঁয়াজের খোসার মতো হয়ে যায়, একে শল্কমোচন [Exfoliation] বা গোলাকৃতি বিচূর্ণীভবন বলে ।

৩) মরুভূমি অঞ্চলে সূর্যের প্রচন্ড তাপে মোটা দানা যুক্ত শিলা ভীষণ ভাবে শব্দ করে ফেটে যায়, একে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegration] বলে। এ সবই যান্ত্রিক আবহবিকারের উদাহরণ । মরুভূমি অঞ্চলে দিনরাত্রি এবং শীত ও গ্রীষ্মকালে উষ্ণতায় পার্থক্য অন্যান্য জলবায়ু অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি হয় বলে মরুভূমি অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকারের হার সর্বাধিক ।



প্রশ্ন-৪. ক্ষয়ীভবন:- ক্ষয়ীভবন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আবহবিকারের ফলে সৃষ্টি হওয়া শিলাচূর্ণগুলি স্থানান্তরিত হয়, অর্থাৎ ক্ষয়ীভবনের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত । ক্ষয়ীভবনের সময় আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যথা- বৃষ্টিপাত, হিমবাহ প্রবাহ বা বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতির প্রভাবে শিলার ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটে যার ফলে মূল শিলাস্তরের অভ্যন্তর ভাগ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে । ক্ষয়ীভবনের ফলে ভূমিরূপের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলেও শিলার মূল বৈশিষ্ট্য যেমন- গঠন, খনিজের বিন্যাস প্রকৃতি প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটে না ।



প্রশ্ন-৫. নগ্নীভবন বলতে কী বোঝায় ?

উত্তর :- আবহবিকার হল শুধুমাত্র শিলার ওপরের অংশের বিচ্ছিন্নকরণ বা বিয়োজন । আবহবিকারের ফলে ভূত্বকের শিলাসমূহের উপরিভাগ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় সেখানেই পড়ে থাকে, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় শিলার বিচূর্ণীকৃত অংশগুলি অপসারিত হয় না । অপরদিকে, আবহবিকার ফলে সৃষ্ট শিলাচূর্ণগুলো যা মূল শিলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সেখানেই পড়ে থাকে তা নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ বা বৃষ্টিপাতের দ্বারা মূল শিলা থেকে অন্যত্র অপসারিত হলে তাকে ক্ষয়ীভবন বলে । অর্থাৎ ক্ষয়ীভবন হল ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তরের বিচূর্ণীকরণ, বিচ্ছিন্নকরণ এবং স্থানচ্যুতিকরণের সন্মিলিত ফল। সংক্ষেপে বলতে গেলে, আবহবিকারের ফলে ভুত্বকের উপরিভাগের শিলাসমূহ চূর্নবিচূর্ণ হয়, কিন্তু অপসারিত হয় না । ক্ষয়ীভবনের সাহায্যেই ভূত্বকের শিলাসমূহ অপসারিত হয় । সুতরাং আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য এই যে, আবহবিকারের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত নয়, কিন্তু ক্ষয়ীভবনের সঙ্গে অপসারণ যুক্ত । আবহবিকার প্রক্রিয়াটি যেখানে শেষ হয়, ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়াটি সেখানে শুরু হয় । আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবন হল সম্পূর্ণ পৃথক দুটো প্রক্রিয়া, আর এই প্রক্রিয়া দুটিকে একসঙ্গে নগ্নীভবন বলা হয়।



প্রশ্ন-৬. জলদ্বারা সংঘটিত আবহবিকার:-

১) বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে জল বছরের পর বছর ধরে আঘাত করে করে শিলাখন্ডগুলোকে দুর্বল করে ফেলে এবং এতে শিলাখন্ডগুলো ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়;

২) বৃষ্টির জল নরম পাললিক শিলা এবং শিলাস্তরকে আর্দ্র করে তোলে । পরে সূর্যের উত্তাপে এই জল বাষ্পে পরিণত হয় এবং শিলাগুলো আবার শুষ্ক হয়ে যায় । শিলাস্তরের অভ্যন্তর ভাগে এইভাবে ক্রমাগত এবং বারংবার আদ্র ও শুষ্ক হওয়ার ফলে ছোটো ছোটো শিলাখন্ডের (Flake) সৃষ্টি হয়, যা শিলাস্তরের বিচূর্ণীভবনে সাহায্য করে;

৩) শিলাস্তরে বৃষ্টির জল ঢুকে শিলাস্তরকে আর্দ্র করে তুললে এবং আদ্রতা বৃদ্ধির জন্য শিলার মধ্যে অবস্থিত খনিজ পদার্থগুলোর আয়তন বৃদ্ধি পায়। এই আয়তন বৃদ্ধির ফলে কোনোরকম রাসায়নিক পরিবর্তন ছাড়াই শিলাস্তরে ফাটল ধরে এবং কালক্রমে শিলাস্তরটি খন্ড বিখন্ড হয়ে যায়;

৪) নদীর জল যখন দ্রুতগতিতে শিলাস্তরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন নদীর জলপ্রবাহের মধ্যবর্তী বায়ুর চাপের ফলে নদীপ্রবাহের নিম্নবর্তী শিলাস্তর ভেঙে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায় ।



প্রশ্ন-৭. শিলায় মরিচা পড়ে কেন ?

শিলায় মরিচা পড়া হল রাসায়নিক আবহবিকারের [Chemical Weathering] অন্যতম উদাহরণ । শিলা গঠনকারী লৌহযুক্ত খনিজের সঙ্গে বায়ুমন্ডলের অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়া হল শিলায় মরিচা পড়ার প্রধান কারণ । এই প্রক্রিয়ায় শিলার মূল লৌহ খনিজ 'ফেরাস অক্সাইড’ জারিত হয়ে ‘ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয়, ফলে শিলার ওপর বাদামি রঙের মরিচার আস্তরণ পড়ে ।



প্রশ্ন-৮. শিলার জারণ [Oxidation] কীভাবে ঘটে ?

উত্তর:- লৌহমিশ্রিত খনিজের সঙ্গে অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শিলার জারণ [Oxidation] ঘটে । জারণের ফলে লৌহমিশ্রিত শিলার মূল খনিজ ফেরাস অক্সাইড ফেরিক অক্সাইডে(2Fe2O3,3H2O)

পরিণত হয়ে লিমোনাইটের সৃষ্টি হয় ।

যথা—4FeO+3H2O+O2=2Fe2O3,3H2O



অর্থাৎ লৌহ মিশ্রিত শিলার মূল খনিজ ফেরাস অক্সাইড + জল + অক্সিজেন = ফেরিক অক্সাইড বা লিমোনাইট



প্রশ্ন-৯. যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকার কোন কোন জলবায়ু অঞ্চলে বেশি ভাবে দেখা যায় ?

উত্তরঃ ১) ক) উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চল, খ) উষ্ণ ও শুষ্ক মরু অঞ্চল গ) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের বেশি উচ্চতা যুক্ত স্থানে ঘ) শীতল পার্বত্য অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] বেশি দেখা যায় ।

২) বৃষ্টিবহুল উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয় ।



প্রশ্ন-১০. কীরূপ জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার বেশি ঘটে কারণসহ উল্লেখ করো ।

উত্তর:- বৃষ্টি বহুল উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে রাসায়নিক রাসায়নিক আবহবিকার বেশি ঘটে, কারণ:-

১) আর্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সময়ে বৃষ্টির জল বায়ুমন্ডলের কার্বন ডাই-অক্সাইডের(CO2) সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে মৃদু অ্যাসিডে (কার্বনিক অ্যাসিড) পরিণত হয়, যা চুনা পাথরের সংস্পর্শে এলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে । এই বিক্রিয়ার ফলে চুনাপাথরের ক্যালসিয়াম কার্বনেট দ্রবীভূত হয়ে ক্যালসিয়াম বাইকার্বনেটে পরিণত হয় । রাসায়নিক আবহবিকারের [Chemical Weathering] -এর কার্বোনিকরণ [Carbination] এর ফলে চুনাপাথরের সহজেই ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটে।

২) বৃষ্টিবহুল আর্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সময় শিলা গঠনকারী লৌহ যুক্ত খনিজের সঙ্গে বায়ুমন্ডলের অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে শিলায় মরিচা পড়ে । রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] -এর জারণ [Oxidation] এর ফলে শিলার মধ্যস্থিত মূল লৌহ খনিজ ফেরাস অক্সাইড জারিত হয়ে ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয়ে হলুদ অথবা বাদামি রঙের লিমোনাইট নামে যৌগিক পদার্থের সৃষ্টি করে, যার ফলে লৌহ যুক্ত শিলা খন্ড ভেঙে গিয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।

৩) বৃষ্টিবহুল আর্দ্র অঞ্চলের শিলাস্তরের মধ্যে অবস্থিত কোনো খনিজ পদার্থের মধ্যে জল প্রবেশ করলে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে সেই খনিজ পদার্থটি আয়তনে বৃদ্ধি পায় এবং অবশেষে ভেঙে গিয়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । হেমাটাইট নামে লৌহ আকরিক এবং কেলসপারের সঙ্গে জলযুক্ত হলে রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] -এর আর্দ্রকরণ [Hydration] ঘটে।



প্রশ্ন-১১. কীভাবে শিলার আবহবিকার ঘটে ?

উত্তর:-

১) আবহবিকার:- প্রচন্ড শৈত্য, গ্রীষ্মের দাবদাহ কিংবা দিন ও রাতের উষ্ণতার পার্থক্যের ফলে ভূপৃষ্ঠের শিলার ক্রমাগত সংকোচন ও প্রসারণ হয় এবং এর ফলে শিলাত্বকে ফাটল ধরে এবং শিলার ওপরের অংশ ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হতে থাকে । কালক্রমে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক [Organic], রাসায়নিক [Chemical] এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূর্ণবিচূর্ণ উপাদানগুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।

২) ক্ষয়ীভবন:- বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদি নানান প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে কিংবা আবহবিকারের জন্য ভূত্বকের উপরিভাগ ক্রমশ ক্ষয় পেয়ে মাটির সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়াকে ক্ষয়ীভবন বলে।

৩) নগ্নীভবন:- বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ভূত্বকের উপরিভাগ চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হলে শিলার ওপরের অংশ আলগা হয়ে যাওয়ায় ঠিক তার নীচের স্তরটি ক্রমশ নগ্ন হয়ে পড়ে, এই প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলে। ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ পরে মাটির রূপ নেয় ।



প্রশ্ন-১২. যন্ত্রিক আবহবিকার ও রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো ।

উত্তরঃ যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে পার্থক্য:-

যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] -- রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering]

১) বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে শিলাস্তর যখন ফেটে ছোটো ছোটো খন্ড বা চূর্ণে পরিণত হয়ে মূল শিলার ওপরে অবস্থান করে তখন তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] বলে ।


-- ১) নানান রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলা বিয়োজিত হওয়ার ঘটনাকে রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] বলে।

২) যান্ত্রিক আবহবিকারে [Mechanical Weathering] শিলার শুধুমাত্র বাহ্যিক (ভৌত) পরিবর্তন হয়, রাসায়নিক গঠনের কোনো পরিবর্তনন হয় না।


-- ২) রাসায়নিক আবহবিকারে [Chemical Weathering] বাহ্যিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিলার মূল রাসায়নিক গঠনও পরিবর্তিত হয়।

৩) যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] প্রধানত তাপমাত্রার পরিবর্তনে, শিলাস্তরের মধ্যে চাপ হ্রাসের ফলে, জল তুষারে পরিবর্তিত হওয়ার ফলে চাপ বৃদ্ধিতে এবং মানুষ ও জীবজন্তু বা কীটপতঙ্গের কাজকর্মের ফলে সংঘটিত হয়।


-- ৩) রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] প্রধানত অঙ্গারযোজন, জারণ, জলযোজন এবং দ্রবণের ফলে সংঘটিত হয়।

৪) যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] প্রধানত উষ্ণ মরু অঞ্চল, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল এবং শীতপ্রধান অঞ্চলের শুকনো আবহাওয়াযুক্ত অংশেই বেশি মাত্রায় সংঘটিত হয়।


-- ৪) অপরপক্ষে রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] প্রধানত উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুযুক্ত নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলেই বেশিমাত্রায় সংঘটিত হয়।

৫) যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] সংঘটিত হওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রে শব্দ সৃষ্টি হয়।


-- ৫) রাসায়নিক আবহবিকার সংঘটিত হওয়ার সময়ে কোনো শব্দ সৃষ্টি হয় না ।

৬) যান্ত্রিক আবহবিকারের [Mechanical Weathering] বিভিন্ন পর্যায় হল:- পিন্ড বিশরণ [Block Disintegration], শল্কমোচন [Exfoliation], ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disintegration], তুহিন খন্ডীকরণ প্রভৃতি ।


-- ৬) রাসায়নিক আবহবিকারের [Chemical Weathering] বিভিন্ন পর্যায় হল:- অঙ্গারযোজন [Carbonation], জারণ [Oxidation], জলযোজন [Hydration], দ্রবণ [Solution] প্রভৃতি ।



প্রশ্ন-১৩. আবহবিকারের ফলাফল কী কী ?

উত্তর:-

১) আবহবিকারের [Weathering] ফলে ভুত্বকের শিলাস্তর চূর্ণবিচূর্ণ হয় বলে নতুন ভূমিরূপ সৃষ্টির ক্ষেত্রে আবহবিকারের যথেষ্ট প্রভাব আছে।

২) রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে শিলার মধ্যে থাকা কয়েকটি খনিজ পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় বিয়োজিত হওয়ায় বৃষ্টি বহুল ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে ল্যাটেরাইট, বক্সাইট, ইলমেনাইট প্রভৃতি খনিজ পদার্থ বেশি পাওয়া যায়।

৩) আবহবিকারের ফলে ভূত্বকের ওপর চূর্ণবিচূর্ণ শিলায় গঠিত ভূ-আস্তরণ বা রেগোলিথ (Regolith) সৃষ্টি হয় । প্রকৃত পক্ষে রেগোলিথ হল মৃত্তিকাময় শিথিল শিলাচূর্ণ ।

৪) আবহবিকারের ফলে শিলাচূর্ণ থেকে প্রচুর পরিমাণে বালির সৃষ্টি হয় ।

৫) রাসায়নিক আবহবিকাররে ফলে শিলাস্তরের কয়েকরকম খনিজ গলে যায় এবং এর ফলে মাটিতে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় খাদ্য ও সার পাওয়া যায় ।

৬) আবহবিকার মৃত্তিকা গঠনে পরোক্ষ ভাবে সাহায্য করে ।



প্রশ্ন-১৪. জলবায়ুর সঙ্গে আবহবিকারের সম্পর্ক কী ?

উত্তর:- আবহবিকারের বিভিন্ন প্রক্রিয়া গুলো কম বেশি প্রায় সর্বত্র কাজ করলেও কোনো বিশেষ ধরনের আবহবিকার বিশেষ কোনো জলবায়ু অঞ্চলেই বেশি কাজ করে, যেমন-

১) উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চল, শীত প্রধান শুষ্ক অঞ্চল এবং শুষ্ক নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] পরিলক্ষিত হয় ।

২) উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার [Chemical Weathering] এর সংঘটন বেশি দেখা যায় ।

৩) আর্দ্র-নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে যান্ত্রিক [Mechanical Weathering] ও রাসায়নিক [Chemical Weathering]- এই দুই ধরনের আবহবিকারই [Weathering]দেখা যায় ।



প্রশ্ন-১৫. যান্ত্রিক আবহবিকার কোন ধরনের জলবায়ুতে বেশি ঘটে, কারণসহ তার উল্লেখ করো ।

উত্তর:- উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল, উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চল এবং শীতল পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি ঘটে, কারণ:-

১) শিলা তাপের সুপরিবাহী না হওয়ায় উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চলে দিন বা রাত্রে শিলার ভিতরের ও বাইরের অংশের উষ্ণতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে । উষ্ণতার এই তারতম্যের ফলে উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চলে শিলা পর্যায়ক্রমে উত্তাপে প্রসারিত ও ঠান্ডায় সংকুচিত হতে থাকে । এই ঘটনা বারংবার ঘটায় শিলার সন্ধিস্থলগুলো আলগা হয়ে যায় ও ফাটলের সৃষ্টি হয় । ধীরে ধীরে এই ফাটলগুলো বড় হয়ে গেলে শিলাস্তরে ছোটো ছোটো চৌক টুকরো কিংবা পেঁয়াজের খোসার মতো গোলাকার অংশে বিভক্ত হয় এবং আলগা হয়ে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । এইসব যান্ত্রিক আবহবিকার [Mechanical Weathering] চৌকাকার বিচূর্ণীভবন বা খন্ডবিখন্ডিকরণ [Block Disinegration], গোলাকৃতি বিচুর্ণীভবন বা শল্কমোচন [Exfoliation] এবং ক্ষুদ্রকণা বিশরণ [Granular Disinegration] নামে পরিচিত ।

২) শীতল পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চলে দিনের বেলায় বা গ্রীষ্মকালে বরফ গলে গিয়ে অথবা বর্ষাকালে শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে জল সঞ্চিত হলে তা পরে শীতকাল বা রাত্রিবেলার অত্যধিক শৈত্যে জমে বরফে পরিণত হয় । জল বরফে পরিণত হলে আয়তনে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ বৃদ্ধি পায় । এই বর্ধিত আয়তনের বরফ ফাটলের দুপাশের দেওয়ালে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি করে । এই চাপের ফলে ফাটল গুলোর আয়তন ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শিলাস্তর ছোটো ছোটো খন্ডে পরিণত হয়। যান্ত্রিক আবহবিকারের এই প্রক্রিয়াকে তুহিন খন্ডীকরণ বলে । উষ্ণ মরু জলবায়ু অঞ্চল অথবা শীতল পার্বত্য অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য সমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চলে দিন রাত্রি অথবা বছরের বিভিন্ন সময়ে তাপমাত্রার বিশেষ একটা তারতম্য হয় না বলে ওই সব স্থানে যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি ঘটে না ।



প্রশ্ন-১৬. রেগোলিথ [Regolith] কী ?

উত্তর:- রেগোলিথ হল মৃত্তিকাময় এক ধরনের শিথিল শিলাচূর্ণ । মাটি সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থাকে রেগোলিথক বলা যেতে পারে । আবহবিকারের [Weathering] ফলে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর ক্রমাগত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অবশেষে ছোট ছোট সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয় এবং ভূত্বকের উপর রেগোলিথ নামে এক ধরনের শিলাচূর্ণের আবরণ পড়ে । কালক্রমে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক [Organic], রাসায়নিক [Chemical] এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেগোলিথের প্রাথমিক উপাদান গুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে । সাধারণত গ্রানাইট শিলায় আবহবিকারের ফলে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু অঞ্চলে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে সুড়কির মতো এক ধরনের মৃত্তিকাময় ও লাল রঙের শিথিল শিলাচূর্ণ রেগোলিথ সৃষ্টি করে ।



প্রশ্ন-১৭. মাটি কাকে বলে ?

উত্তর:- ভূত্বকের উপরিভাগের ক্ষয়ে যাওয়া শিলাচূর্ণের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জৈব্য ও অজৈব বস্তুর সংমিশ্রণে গঠিত যে নরম ও অসমসত্ত্ব আবরণ স্তরে গাছপালা জন্মায়, তাকেই মাটি বলে।



প্রশ্ন-১৮. মাটির উৎপত্তি :- ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে , সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পৃথিবী প্রথমে গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থায় ছিল । পরে তাপ বিকিরণের ফলে পৃথিবী তরল অবস্থায় আসে এবং ক্রমাগত তাপ বিকিরণের ফলে ঠান্ডা হয়ে শক্ত পিণ্ডে পরিণত হয় । এই শক্ত পিণ্ডকে শিলা বলে । কঠিন শিলা প্রাকৃতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক বিক্রিয়ায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অবশেষে মাটিতে পরিণত হয় । আসলে চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া শিলার সঙ্গে জৈব পদার্থ মিশ্রিত হয়েই প্রকৃত মাটি সৃষ্টি হয় । ভূ-পৃষ্ঠে মাটি সৃষ্টির পদ্ধতিগুলিকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা— ১) প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ২) জৈব প্রক্রিয়া (উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা) ।

১) যেসব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মাটি সৃষ্টি হয় সেগুলি হল- ১) আবহবিকার, ২) ক্ষয়ীভবন, ৩) নগ্নীভবন, ৪) অপসারণ এবং ৫) অবক্ষেপন ।

২) জৈবিক প্রক্রিয়া- উদ্ভিদ ও প্রাণীর দ্বারা মাটির উৎপত্তি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে খনিজ পদার্থের রূপান্তর ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টি করে।



প্রশ্ন-১৯. মাটির উৎপত্তির প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলি ব্যাখ্যা করো ।

উত্তর:- মাটির উৎপত্তির প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া: যে সব প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় মাটি সৃষ্টি হয় সেগুলি হল-

১) আবহবিকার: শীতের প্রচন্ড শৈত্য, গ্রীষ্মের প্রচন্ড উত্তাপ কিংবা দিন বা রাতের উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য ভূপৃষ্ঠের শিলার ক্রমাগত সংকোচন ও প্রসারণের ফলে শিলা ত্বকে ফাটল ধরে এবং শিলার ওপরের অংশ ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে ও কালক্রমে মাটির সৃষ্টি হয় ।

২) ক্ষয়ীভবন:- বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, জলস্রোত, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে কিংবা আবহবিকারের জন্য ভূত্বকের উপরিভাগ ক্রমশ ক্ষয় পেয়ে মাটির সৃষ্টি করে । এই প্রক্রিয়াকে ক্ষয়ীভবন বলে ।

৩) নগ্নিভবন:- বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ভূত্বকের উপরিভাগ চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত হলে শিলার ওপরের অংশ আলগা হয়ে যাওয়ায় ঠিক তার নীচের স্তরটি উন্মুক্ত বা নগ্ন হয়ে পড়ে, এই প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলে।

৪) অপসারণ:- এই প্রক্রিয়ায় ভূত্বকের উপরিভাগের চূর্ণবিচূর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ , ইত্যাদি প্রাকৃতিক বাহকের দ্বারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয় এবং কালক্রমে সঞ্চিত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।

৫) অবক্ষেপণ: এই প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলো পরিবাহিত হয়ে অন্য কোনো স্থানে জমা হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।



প্রশ্ন-২০. মাটির উৎপত্তির জৈব প্রক্রিয়া (উদ্ভিদ ও প্রাণী দ্বারা) :-

১) ছোটো বড়ো উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে খনিজ পদার্থের রূপান্তর ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টি করে ।

২) শিলার ফাটলের মধ্যে উদ্ভিদের মূল প্রবেশ করলে ফাটলের আয়তন বাড়ে এবং উদ্ভিদের মূলের বৃদ্ধির ফলে শিলা ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় ।

৩) শিলার ওপর শৈবাল, ছত্রাক ইত্যদি জন্মালে শিলা নরম ও আলগা হয়ে মাটিতে পরিণত হয় ।

৪) মাটিতে থাকা বিভিন্ন জীবাণু, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহকে পচিয়ে জৈব পদার্থে পরিণত করে এবং পরোক্ষভাবে মাটি সৃষ্টিতে সাহায্য করে ।

৫) মাটিতে বসবাসকারী কেঁচো, উঁই, পিঁপড়ে, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিকে ওলটপালট করে দিয়ে রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে জৈব উপাদানের মিশ্রণ ঘটিয়ে মাটি সৃষ্টিতে সাহায্য করে ।



প্রশ্ন-২১. কীভাবে অপসারণ ও অবক্ষেপণের ফলে মাটির সৃষ্টি হয় ?

উত্তর:- ১) অপসারণ:- এই প্রক্রিয়ায় ভূত্বকের উপরিভাগের চূর্ণবিচূর্ণ এবং ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি প্রাকৃতিক বাহক, যথা- জলস্রোত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ ইত্যাদির দ্বারা একস্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবাহিত হয় এবং কালক্রমে সঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক [Organic], রাসায়নিক [Chemical] এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূর্ণবিচূর্ণ উপাদানগুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।

২) অবক্ষেপণ:- এই প্রক্রিয়ায় ভূত্বকের উপরিভাগের চূর্ণবিচূর্ণ এবং ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলি পরিবাহিত হয়ে অন্য কোনও স্থানে সঞ্চিত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে।



প্রশ্ন-২২. উৎপত্তি অনুসারে মাটির শ্রেণিবিভাগ করো ।

উত্তর:- উৎপত্তি অনুসারে মাটি দু’ধরনের হয়, যেমন- ১) স্থানীয় মাটি, ২) অপসৃত মাটি ।

১) স্থানীয় মাটি:- প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে মাতৃশিলা থেকে উৎপন্ন মাটি উৎপত্তিস্থলেই স্থিতিলাভ করে তখন তাকে স্থানীয় মাটি বা স্থিতিশীল মাটি বলে । এই ধরনের মাটির ওপরের স্তরএর কণাগুলো সূক্ষ্ম হয় কিন্তু নীচের স্তরগুলিতে মাটির কণাগুলো ক্রমশ মোটা হতে শুরু করলেও মাটির বিভিন্ন স্তরের মূল উপয়াদান একই থাকে ।

২) অপসৃত মাটি:- যেসব মাটি বায়ুপ্রবাহ, তুষারপাত, জলপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা পরিবাহিত হয়ে তাদের উৎস থেকে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চিত হয়, তাদের পরিবাহিত বা অপসৃত মাটি বলে । অপসৃত মাটি সাধারণত উর্বর হয় এবং দূরবর্তী স্থান থেকে আসার জন্য অপসৃত মাটির মূল ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম তাদের নীচে থাকা শিলাস্তর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয় ।



প্রশ্ন-২৩. মৃত্তিকা সৃষ্টিতে আবহবিকার কীভাবে সাহায্য করে ?

উত্তর:- শীতের প্রচন্ড শৈত্য, গ্রীষ্মের উত্তাপ এবং দিন ও রাতের উষ্ণতার পার্থক্যের জন্য ভূপৃষ্ঠের শিলার ক্রমাগত সংকোচন ও প্রসারণ হয় । সাধারণ ভাবে একে আবহবিকার বলে । আর এই আবহবিকারের ফলে শিলাত্বকে ফাটল ধরে এবং শিলার ওপরের অংশ ক্রমশ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ে । কালক্রমে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক [Organic], রাসায়নিক [Chemical] এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূর্ণবিচূর্ণ উপাদানগুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে ।



প্রশ্ন-২৪. মাটির প্রকারভেদ: অপসৃত মাটি নানা ধরনের হতে পারে, যেমন- কোনো স্থানের মাটি বায়ুপ্রবাহ দ্বারা পরিবাহিত হয়ে দূরবর্তী স্থানে সঞ্চিত হলে তাকে লোয়েস মাটি এবং জলপ্রবাহ দ্বারা সঞ্চিত হলে তাকে পলিমাটি বলে ।

গঠন অনুসারে মাটির শ্রেণিবিভাগ:- গঠন অনুসারে মাটিকে নুড়ি, বালি, পলি এবং কাদা- এই চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:-

১) দোঁয়াশ মাটি, (এই মাটিতে বালি ও কাদা প্রায় সমপরিমাণে থাকে),

২) এঁটেল মাটি (এই মাটিতে কাদার ভাগ বেশি)

৩) বেলে মাটি ( এইমাটিতে বালির ভাগ বেশি)।

descriptionদ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter EmptyRe: দ্বিতীয় অধ্যায়-- আবহবিকার ও মাটির উৎপত্তি 2nd chapter

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum