কলকাতা থেকে কাশ্মীর ভ্রমণসূচী
১১ – ১৪ দিন
Kashmir Tour Itinerary

বেশ কিছু মানুষ ম্যাসেনজারে আমাকে কম খরচে কাশ্মীর ভ্রমণের প্ল্যান জানতে চেয়েছেন। আমি অনেককেই বলেছিলাম যে তারা যদি ট্রেনে 3A/2A এ যায় তাহলে যাওয়া বা আসার সময় কোনও একটা পীঠ প্লেনে গেলে খরচ তেমন বেশী হবে না। উল্টে সময় বেশ কম লাগবে। কিন্তু অনেককেই খরচ বাঁচানোর জন্য SL ক্লাসে যাবে। তাই মূলত যারা প্রথমবার কাশ্মীর যাবেন এবং যাদের বাজেট ভীষণ টাইট তাদের কথা ভেবেই এই আইটেনারীটা বানানো। কাশ্মীর একটা বিশাল বড় ও বৈচিত্রপূর্ণ রাজ্য। স্বাভাবিকভাবেই এই অল্প দিনে সব কিছু দেখা সম্ভব নয়। চাইলে আপনি আপনার নিজের মত করে অদল বদল করে নিতে পারেন। যদি ১ বা ২ দিন সংখ্যা বাড়াতে পারেন তাহলে এই ট্যুরের সাথে বৈষ্ণদেবী দর্শন জুড়ে নিতে পারেন। সেটা শুরু বা শেষে করতে পারেন। যারা কাশ্মীর ভ্রমণ করেছেন তারাও আরও কিছু প্রয়োজনীয় সাজেশান কমেন্টে জানাতে পারেন। যদি সম্ভব হয় আপনারা যে সব হোটেলে ছিলেন তাদের রিভিউ সহ যোগাযোগ নাম্বার কমেন্টে জানাবেন। সবাই কে ধন্যবাদ।

১ দিন – ট্রেনে ওঠা

২ দিন – সারাদিন ট্রেনে কাটানো

৩ দিন – সকালে অথবা দুপুরে পৌঁছে জম্মুতে হোটেলেই আজকের রাত্রিটা কাটানো। পৌঁছে যদি হাতে সময় থাকে একটা গাড়ি নিয়ে আশেপাশে দেখে নিতে পারেন। যে সব দ্রষ্টব্য জায়গাগুলো দেখতে পারেন সেগুলো হল রঘুনাথ মন্দির, বাহু ফোর্ট, রণবীরেশ্বর মন্দির, অমর মহল প্যালেস, মহামায়া মন্দির, পঞ্চাবতার মন্দির প্রভৃতি। এখানে ঘোরার জন্য সহজেই গাড়ি পেয়ে যাবেন তাও আগে থেকে গাড়ি বুকিং করার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন টুরিষ্ট ট্যাক্সি অ্যাশোসিয়েসন যোগাযোগ নাম্বার – 0191-2546266, 09469550309
(যারা দিন কাশ্মীর ভ্রমণের দিনসংখ্যা কমাতে চান তারা এই দিন জম্মুতে রাত্রি বাস না করে সরাসরি গাড়ি ধরে মাঝরাতে শ্রীনগর পৌঁছে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে একদিন বাঁচবে। তবে আগে থেকে শ্রীনগরে হোটেল বুকিং করে রাখা বাঞ্ছনীয়)

৪ দিন – হাতে সময় কম থাকার জন্য এই ট্যুরে বৈষ্ণদেবী দর্শন বাদ দেওয়া হয়েছে। আজ চলুন NH44 ধরে জম্মু থেকে প্রায় 300 কিলোমিটার দূরে শ্রীনগর। জম্মু স্টেশন থেকে প্রায় 4km দূরে সরকারী বাস স্যান্ড আছে। এখান থেকে শ্রীনগর যাবার সব গাড়ি পাবেন। এই পথে সাধারণ বাস, ডিলাক্স বাস, সুপার ডিলাক্স বাস, শেয়ার গাড়ি সবই পাবেন। বাসের ভাড়া Rs.500 -Rs.1200. শেয়ার গাড়িতে Rs700 - Rs1400/-. পুরো নিজস্ব গাড়ির ভাড়া Rs.4500 - Rs.6500/-. সিজিন ও চাহিদা অনুসারে ভাড়া ওঠানামা করে।
নিজস্ব গাড়ি ভাড়া করলে যাবার পথে কিছু দারুণ স্পট দেখে নিতে পারবেন। প্রায় 110km দূরে পাটনিটপ। দারুণ সুন্দর জায়গা কিন্তু তাও পর্যটক বেশ কম যায়। পাটনিপট থেকে আরও 19km দূরে সানাসার লেক নামে একটি সুন্দর স্পট। সময় ও সুযোগ থাকলে এই দুটি স্পট দেখে নেওয়া ভালো। এরপর জওহর টানেল (বানিহাল পাস) পেরিয়ে অবন্তীপুরার অবন্তী স্বামী মন্দির দেখে সোজা শ্রীনগর। দেখে নিন ডাল লেকের বুকে অপূর্ব সূর্যাস্ত।

৫ দিন – আজ সারা দিন দেখে নিন শ্রীনগরের বিভিন্ন সাইডসিইং। গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিতে পারেন বিভিন্ন মোঘল গার্ডেনগুলি। শালিমার বাগ, নিশাত বাগ, চশমা শাহি, দাচিগ্রাম নাসিম বাগ। এবং সিরাজ বাগ যেটা মার্চ –এপ্রিল মাসে টিউলিপ ফুলের জন্যই খোলে। এই সময় অপরূপ। বাকী দর্শনীয় স্থানগুলো হলো পাহাড়ের মাথায় শঙ্কারাচার্য মন্দির, নেহেরু পার্ক, হজরতবাল মসজিস, চারচিনার, পরিমহল এবং হরিপর্বত। শুক্রবার বাদে অন্যান দিন হরিপর্বতের এন্ট্রি পাস দেওয়া হয়। যোগাযোগ – 09906400421, 09419069015. ওল্ড শ্রীনগর সিটিতে দেখে নিতে পারেন জামি মসজিদ, শাহ হামদান মসজিদ, শের গারহি, বাদশাহ টম্ব। এই দিন বিকেলে ডাল লেকে শিকারা ভ্রমণ করতে পারেন।

৬ দিন – আজ শ্রীনগর থেকে ঘুরে আসুন গুলমার্গ। রোপওয়ে চড়ে অবশ্যই আফারওয়াট পর্যন্ত যাবেন। এখানকার স্থানীয়রা রোপওয়ে কে গন্ডোলা বলে। গুলমার্গ অঞ্চলে ঘুরে নিন খিলানমার্গ, আলপান্থার লেক। দেখে নিন রানি মন্দির, মহারাজা প্যালেস, স্ট্রবেরী গার্ডেন, চিল্ড্রেন গার্ডেন ইত্যাদি।

৭ দিন – শ্রীনগর থেকে আজ দেখে নিন একটু স্বল্প পরিচিত জায়গাগুলি। ভেরীনাগ, আচ্ছাবল, কোকরনাথ, মার্তন্ড সূর্য মন্দির, ডাকসাম ও আহারবাল ফলস্। (এটা চাইলে পাহেলগাঁও থেকেও করা সম্ভব। যদি কাশ্মীর ভ্রমনের দিনসংখ্যা কম থাকে, তাহলে আজকের দিনের প্রোগ্রাম বাদ দিতে পারেন।)

৮ দিন – আজ চলুন সোনমার্গ। সম্ভব হলে ঘুরে নিন 3km দূরে থাজিওয়াস হিমবাহ। ফেরার পথে দেখে নিন উলার লেক, ওয়াটলাবে বাবা সুকদিনের মাজার, মানসবাল, ক্ষীরভবানী (51 পীঠের এক পীঠ)

৯ দিন – শ্রীনগর থেকে ইউসমার্গ যাত্রা। দূরত্ব 47km. মাঝ পথে পড়বে চারার–ই–শরিফ। এখানে কিছু ভিউ পয়েন্ট আছে। ইচ্ছে হলে ঘোড়ায় চেপে ঘুরতে পারেন।
(যদি কাশ্মীর ভ্রমনের দিনসংখ্যা কম থাকে, তাহলে আজকের দিন বাদ দিতে পারেন।)

১০ দিন – আজ শ্রী নগর থেকে পহেলগাঁও যাত্রা। দূরত্ব 96km. পৌঁছে ঘোড়ায় করে ঘুরে আসতে পারেন বৈশারণ। আজ রাত্রি বাস পাহেলগাঁতে।

১১ দিন – আজ পহেলগাঁও কে কেন্দ্র করে আশেপাশে ঘোরা। প্রথমে চলে যান আরু ভ্যালি। দূরত্ব 12km হলেও রাস্তা ভালো নয়। আরুতে প্যারাগ্লাইডিং হয়। শুক্রবার বাদ দিন যাবার পথে দেখে নিতে পারেন মিনি জু। লাঞ্চ সেরে গল্ফ কোর্স দেখে চলুন বেতাব ভ্যালী। এখানে প্রবেশ করতে টিকিট কাটতে হয়। এখান থেকে প্রায় 9 km দূরত্ব গেলেই পরবে চন্দনওয়াড়ি। অমরনাথ গুহাতে হাঁটা শুরু হয় এখান থেকেই। ফিরে রাত্রিবাস পাহেলগাঁতে।

১২ দিন – আজ বাড়ি ফেরার যাত্রা শুরু। সকালে তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট খেয়ে যাত্রা শুরু জম্মুর উদ্দেশে। দূরত্ব প্রায় 287 km. এই দিনেই রাত্রে ট্রেন ধরা

১৩ দিন – সারাদিন ট্রেন।

১৪ দিন – দুপুরে কলকাতা ফেরা। একরাশ মধুর স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসা

তথ্য কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
1. ভ্রমণ সঙ্গী – এশিয়া পাবলিশিং হাউস
2. বেড়ানোর ছক – সৌম্যশান্ত শাসমল
3. বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েবসাইট