#পুরী
আগের পোস্টে পুরী ভ্রমণ নিয়ে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলাম, কিন্তু আজ আমি পুরী ভ্রমণের ভালো অভিজ্ঞতাটুকুও লিখবো। তবে সবার প্রথমে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই গ্রুপের সকল অভিজ্ঞ মেম্বারদেরকে, যারা আমার ঘুরতে যাওয়ার suggestion post-এ অনেক রকম মতামত দিয়ে উপকার করেছেন।🙏🏻 প্রায় সবাই হয়তো পুরী ভ্রমণ করেছেন, তবে আমি আমার মতামত জানাচ্ছি- কীভাবে ঘুরলাম, কীরকম খরচ হলো সব। হয়তো লেখাটা একটু বড়ো হবে, তবে আশা করি সবাই পড়বেন। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।🙏🏻

6.12.22- মঙ্গলবার রাত ৮:৪৫-এ আমাদের ট্রেন ছিল শালিমার স্টেশন থেকে "গরিব রথ এক্সপ্রেস". আমরা রানাঘাট থেকে যাওয়ার দরুণ শিয়ালদহ থেকে অনেক দরাদরি করে শেষে ৩৫০ টাকা দিয়ে আমরা ৩ জন+লাগেজ নিয়ে শালিমার স্টেশনে যাই শেয়ার taxi-তে। গ্রুপে অনেকে বলেছিলেন সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেনে উঠলে সমস্যা হবে না, আবার অনেকে বলেছিলেন রেলের নতুন নিয়মের কথা(বোর্ডিং স্টেশন থেকেই ট্রেনে উঠতে হবে)। আমরা শালিমার গিয়ে দেখি খুব জমজমাট একটা স্টেশন। চারিদিকে কাজ চলছে, তবে ভীষণ ভীড়। আর স্টেশনের সামনে অনেক খাবারের দোকান ভাতের হোটেল ইত্যাদি আছে। ট্রেন যথারীতি ৮:৪৫-এই ছাড়ে। তবে টিটি সাঁতরাগাছি ছাড়িয়েও বহু পরে আসে টিকিট চেক করতে। গরিব রথের ভিতরে space-টা কেমন যেন কম কম লাগছিলো আমাদের। সিট গুলো একটু সরু। ট্রেনে আমাদের সবাইকে পরিস্কার বেডরোল দিয়েছিল। টয়লেট যথেষ্ট পরিস্কার ছিলো। আর ট্রেনটি একদম ৫:১০-এ পুরীতে ঢোকে। আমরা স্বর্গদ্বার ছাড়িয়ে সুদীপার রান্নাঘরের পাশের গলি দিয়ে গিয়ে কানুভিলাতে ছিলাম। ৫২০টাকা করে প্রতিদিন ভাড়া পড়েছিল। বড়ো হোটেল, ভীষণ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। আর ব্যবহার ভীষণ ভালো। বৃহস্পতিবারে হোটেলের মালিকের স্ত্রী পুরো হোটেলে আলপনা দিয়ে কী সুন্দর লক্ষী পুজো দিচ্ছিলেন। হোটেলের মধ্যে বাঙালিয়ানা ভরপুর। রুম যথেষ্ট বড়ো। বাথরুমটা একটু ছোটো আর ওয়েস্টার্ন টয়লেট নেই, গিজারের ব্যবস্থাও নেই, কিন্তু আমরা tank-এর জল সবসময় গরমই পেয়েছি। রান্না করে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। তবে আমরা রান্না করিনি।

(7.12.22- বুধবার) প্রথমদিন আমরা সকালে sea beach-এর উপরের রাস্তার ধার থেকে ২০টাকায় ৪টে কচুরি আর ঘুগনি খেয়ে সকাল ১১-টা নাগাদ OTDC-এর office-এ যাই বাস বুক করতে। কিন্তু OTDC-এর office থেকে জানায় পরের দিন বাসে সিট না থাকায় আমরা চাইলে তার পরের দিন অর্থাৎ ৯তারিখে tour করতে পারি। আমরা তাতেই রাজি হই কারণ আমাদের ফেরার train ১০তারিখ সকালে ছিল। ৫৩৫টাকা করে আমরা পছন্দ মতোন ৩টে সিট বুক করি। দুপুরে হোটেলে স্নান সেরে তেরোপার্বন রেস্টুরেন্টে ১৮৫টাকা করে ভেটকি থালি খেয়েছিলাম। খাবারের quality আর quantity দুটোই দারুণ। থালিতে ছিল-ভাত, ডাল, আলুপোস্ত, আলুভাজা, শুক্তো, ভেটকি মাছ, টমেটোর চাটনি। তারপর sea beach ঘুরে, রাতে আমরা আবার রাস্তার ধার থেকে ৫টাকা পিস আটার রুটি(৮টা) আর ৬০টাকা দিয়ে এক প্লেট তরকা নিই(without egg).

(8.12.22- বৃহস্পতিবার) দ্বিতীয়দিন আমরা সকালে sea beach-এ গিয়ে জাল দিয়ে মাছ ধরা দেখি, তারপর পুরীর বাজারের ওখানে এক দোকান থেকে ২০টাকা শ-এ পেটাই পরোটা সাথে মটরের তরকারি খাই। তারপর সমুদ্র স্নান সেরে জগন্নাথ মন্দিরে যাই পুজো দেওয়ার জন্য। তবে গিয়ে খুব খুশি হলাম কোনো পান্ডার পাল্লায় না পড়াতে, পান্ডাদেরকে সেরকম জোরাজুরি করতেও দেখলাম না। মন্দিরের free-তে জুতো, মোবাইল রাখার counter-এ জুতো, ফোন রেখে চললাম জগন্নাথ দেব দর্শনে। তবে গ্রুপ থেকে পাওয়া সন্তোষ কুমার পান্ডাকে বহুবার ফোন করি আমরা, উনি তখন ওখানে ছিলেন না। তারপর আমরা নিজেরাই খুব ভালো ভাবে কোনো পান্ডা ছাড়া জগন্নাথ দেবকে দর্শন করলাম। পুরো মন্দির বহুক্ষণ ধরে ঘুরলাম, তারপর ১০০টাকা করে দিয়ে মন্দিরে বসেই জগন্নাথ দেবের ভোগ প্রসাদ পেলাম। সে যেনো অমৃত খেলাম। অনেকেই দেখলাম ৩০০/৪০০টাকার বিনিময়ে হাড়ি করে ভোগ বিক্রি করছে এবং বহু লোক কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে আমরা কোনো হাড়ি নিইনি, মন্দিরের মেঝেতে বসে শাল পাতায় ৩রকমের ভাত ও পোলাও, ৩রকম ডাল ও সবজি সাথে পায়েস দিয়ে ভোগ প্রসাদ খেলাম। তবে এরকম ভাবে প্রসাদ খেতে গেলেও একটু ঘুরে দেখতে হবে। কারণ এক এক জায়গায় এক এক খাবার আর এক এক রকম দাম। তারপর বিকাল ৪:৩০নাগাদ মন্দির থেকে হোটেলে ফিরলাম। তারপর একটু rest নিয়ে সন্ধ্যায় আবার sea beach-এ বসলাম। Wow momo-থেকে chicken chilis fried momo(249rs, 5pc), রাস্তার পাশের দোকান থেকে Darjeeling chicken steam momo(40rs,6pc), steam corn মাখা(30rs), monginis থেকে strawberry mousee(35rs) খেলাম। তারপর হোটেলে ফেরা।

(9.10.22- শুক্রবার) তৃতীয় দিন সকাল ৬টার মধ্যে অনেক দরাদরি করে ৭০টাকা দিয়ে অটো করে পান্থনিবাস যাই, তারপরে সেখান থেকে বাস ৬:৩০-এ ছেড়ে দেয়। আমাদের সিট ছিল last-এর দিক থেকে ২টো row আগে। কিন্তু একটুও অসুবিধা হয়নি আর আমরা যে last-এর দিকে বসেছি সেটা বুঝতেই পারিনি। এরপর ৭-টা নাগাদ বাসেই jam পাউরুটি দিয়ে breakfast করি। বাকিরা যদিও রোডের উপর হোটেলে খেয়েছিল। তবে সেখানে খাবারের দাম মারাত্মক বেশি। ছোটো ছোটো ৪টে লুচি বলছে 50টাকা। তারপর ধৌলগিরি, লিঙ্গরাজ মন্দিরে যাই। তারপর খন্ডগিরি ঘুরে নন্দনকাননের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। আমরা বাসের গাইডকে দিয়েই টিকিট কাটিয়েছিলাম কোনারক-৪০টাকা, উদয়গিরি-২৫টাকা, Sand art museum- ৩০টাকা, নন্দনকানন- ১৯০টাকা(with jungle safari)=২৮৫ টাকা মাথাপিছু। নন্দনকানন ঘুরে আমরা নন্দনকাননের বাইরে একটা হোটেল থেকে ১৬০টাকা কাতলা মাছের থালি নিই, জঘন্য খেতে। তবে শুনেছি OTDC-এর হোটেলে ভেজ থালি 160টাকা। আমাদের তো পুরো টাকাটাই জলে গেলো। তারপর বাসে করে কোনারক, চন্দ্রভাগা beach, চন্ডীমাতার মন্দির, sand art museum ঘুরে সন্ধ্যা ৭:৩০নাগাদ পান্থনিবাসের ওখানে নামি। আমাদের OTDC বাসের গাইড ছিল দারুণ ভালো মানুষ। সুদীপ মোহান্তী নাম ছিল। দারুণ ভালোভাবে ঘুরেছি ওনার জন্য। তারপর ৫০টাকা auto ভাড়া দিয়ে পুরী sea beach-এ এসে কেনাকাটা করি, কাঁকড়া ভাজা খাই, রাতের জন্য ডিম তরকা(40rs) আর রুটি(5rs/pc) নিয়ে হোটেলে ফিরে আসি।

(10.12.22-শনিবার) চতুর্থদিন সকাল ৭-টা নাগাদ হোটেল check out করে বেরিয়ে sea beach-এ বসে একটু বেলা বাড়লে গাঙ্গুরামের দেশী ঘি-এ ভাজা খাঁজা আর গাঙ্গুরামের সরভাজা কিনে তার পাশে *পুরী* নামের দোকান থেকে ৪টে পুরী আর মটরের তরকারি(20rs plate) খেয়ে, বাসে করে স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিই ১৫টাকা করে বাস ভাড়া নেয়। আমাদের ট্রেন ছিল ১০:২৫-এর ধৌলি এক্সপ্রেস। থাক ধৌলিকে নিয়ে কিছু বলবোনা। কারণ এই ট্রেন সেদিন আমাদের যা ভুগিয়েছিল সারাজীবন মনে থাকবে। রাত ১২:৩০-এ বাড়ি ফিরতে হয়েছে লাগেজ নিয়ে অতো রাতে। 🙂

আমাদের থাকা, খাওয়া, ঘোরা, কেনাকাটা সব মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছিল ১৩০০০টাকা প্রায়।