Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


descriptionঋষিকেশ ভ্রমন গাইড Rishikesh Travel Guide Emptyঋষিকেশ ভ্রমন গাইড Rishikesh Travel Guide

more_horiz
ঋষিকেশ ভ্রমন গাইড

হরিদ্বার গেলে সাথে ঋষিকেশ ভ্রমন অঙ্গাঅঙ্গি অংশ । এছাড়া ঋষিকেশ হয়েই চারধাম যাত্রা শুরু হয় । তাই ঋষিকেশ ভ্রমন খুবই জনপ্রিয় । তবে ঋষিকেশে অধিকাংশ পর্যটক হরিদ্বার থেকে দিনের দিন ট্রিপ করে (হরিদ্বার থেকে ঋষিকেশ প্রায় ৩০ কিমি) এবং অনেকেই ঋষিকেশে পরামার্থ নিকেতন আশ্রম ঘাটে সন্ধ্যা আরতির কথা জানে না, তাই সন্ধ্যা আরতি না দেখেই ফিরে আসেন । প্রকৃতপক্ষে ঋষিকেশের সন্ধ্যা আরতি না দেখলে ঋষিকেশ ভ্রমন অসম্পূর্ন হয়ে থাকে । তাই সন্ধ্যা আরতি দেখার জন্য হয় ঋষিকেশে একরাত্রি থাকা উচিত কিম্বা গাড়ীওয়ালার সাথে সন্ধ্যা আরতি দেখে হরিদ্বার ফেরার চুক্তি করা উচিত ।

হরিদ্বারের মতোয় ঋষিকেশে মন্দির অসংখ্য । সব মন্দির ঘুরে দেখা অসম্ভব । আর ট্যুরের গাড়ি ঋষিকেশ শহরেও ঢুকবে না । তারা শিবানন্দ পার্কের কাছে পার্কিংয়ে ড্রপ এন্ড পিক করবে । লক্ষ্মণঝুলা, রামঝুলা সহ ঋষিকেশ ঘোরার জন্য একটা লোকাল গাইড নিয়ে নেওয়া ভালো (যারা প্রথমবার ঋষিকেশ যাচ্ছেন)

★★ ঋষিকেশে প্রধান প্রধান যে সমস্ত মন্দির গুলো ঘুরে দেখা হয়:

১) গঙ্গা মাতার মন্দির
২) শ্রী সীতারাম মন্দির
৩) শ্রী রাধাধাম মন্দির
৪) আদি বদ্রিনাথ মন্দির
৫) শ্রী লক্ষ্মনের প্রাচীন মন্দির (ভারতের একমাত্র লক্ষণ মন্দির বলে অনেকে দাবী করেন)
৬) সচ্চা অখিলেশ্বর মহাদেবের মন্দির
৭) ট্রমবাকেশ্বর ১৪ তলার মন্দির
৮) স্বর্গাশ্রম
৯) গীতা ভবন
১০) পরামার্থ নিকেতন আশ্রম

এছাড়া দেখবেন ঋষিকেশের বিখ্যাত
★ লক্ষ্মণঝুলা
★ রামঝুলা
★ পরামার্থ নিকেতন ঘাটের সন্ধ্যা আরতি ।

★★ অতি উৎসাহীরা রাফটিং করে ।

★★ নীলকন্ঠ মন্দির: ঋষিকেশ থেকে আরো ২৫ কিমি দূরে নীলকন্ঠ শিবের মন্দির । এটি ঋষিকেশের খুবই জনপ্রিয় মন্দির । এবং ঋষিকেশ থেকে যাওয়ার পাহাড়ী রাস্তাপথ টিও খুব সুন্দর। হরিদ্বার থেকে ঋষিকেশ ট্রিপ সাথে নীলকন্ঠ মন্দির দর্শন অনেক গাড়ি এবং ট্যুর অপারেটররাই করে থাকে । তারজন্য গড়ে ৫০০-১০০০ টাকা বেশী পড়ে ।

◆◆◆ ঋষিকেশ ভ্রমন পরিকল্পনা:
----------------------------------------

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে হরিদ্বার থেকে ঋষিকেশ ভ্রমনের গাড়ী যখন ঠিক করবেন তখন পরামার্থ নিকেতন ঘাটের সন্ধ্যা আরতি দেখে ফেরার কিম্বা একরাত্রি ঋষিকেশে থাকার প্ল্যান করে নেবেন । অধিকাংশ গাড়ি এবং ট্যুর অপারেটর সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা আরতি দেখায় না, কিন্তু ড্রাইভার দের আলাদা ২০০/৩০০ টাকা দিলে তারা সেটা দেখানোর জন্য অপেক্ষা করে ।

হরিদ্বার থেকে সকাল বেলায় প্রথমেই ঋষিকেশ হয়ে চলে আসুন নীলকন্ঠ মন্দির । প্ৰথমে এই মন্দির না দেখলে পরে সন্ধ্যা আরতির জন্য আর দেখা হবে না । নীলকন্ঠ মন্দির দর্শন, পুজো দেওয়া ইত্যাদি সেরে ঋষিকেশ ফিরতে প্রায় বেলা একটা বেজে যাবে । গাড়ির ড্রাইভার শিবানন্দ পার্কে গাড়ী রেখে আপনাকে নামিয়ে দেবে । আবার সবশেষে ঋষিকেশ ভ্রমন,সন্ধ্যা আরতি দেখার পর শিবানন্দ পার্কিংয়ে এসে গাড়ীতে উঠতে হবে । দুপুরবেলা লাঞ্চ সেরে একটা লোকাল গাইড নিয়ে নেওয়া ভালো বিশেষ করে যারা প্রথমবার ঋষিকেশে আসছেন । গাইডের চার্জ মাত্র ১০০ টাকা । তারা প্রথমে ১৩ তলার গঙ্গা মাতা মন্দির, সীতারাম মন্দির, শ্রীরাধাধাম মন্দির, আদি বদ্রিনাথ মন্দির ঘুরিয়ে দেখাবে । এরপর তাদের পরিচিত উত্তরাখন্ড সরকার দ্বারা রেজিস্টার্ড কোনো এক রুদ্দ্রাক্ষ দোকানে নিয়ে যাবে । বিভিন্ন রকম রুদ্দ্রাক্ষ দেখাবে । কেনাকাটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। তারপর গাইডের সাথে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে আসুন । দেখুন ভারতের একমাত্র (অনেকের দাবী) প্রাচীন শ্রীলক্ষ্মনের মন্দির এবং সচ্চা অখিলেশ্বর মহাদেবের মন্দির । এরপরই লক্ষ্মণঝুলা । গাইড আপনাকে এইখানেই ছেড়ে দেবে । ১০০ টাকা চার্জ ।

আগে লক্ষ্মণঝুলায় গাড়ী ইত্যাদি চললেও জুন, ২০১৯ থেকে উত্তরাখন্ড সরকার এটি গাড়ী চলাচলের জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছে । ঝুলন্ত এই ব্রিজ শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে পেরোতে হয় । খুব মনোরম এই লক্ষ্মণ ঝুলা । গঙ্গার অপূর্ব ভিউ এখান থেকে পাওয়া যায়। ঋষিকেশেই গঙ্গা পাহাড় ছেড়ে সমতলে পড়েছে । তাই গঙ্গার স্রোত এখানে ভালোয় । লক্ষ্মণঝুলা পায়ে হেঁটে পেরিয়ে ওপারে পাশেই ১৪ তলার ট্রমবাকেশ্বর মন্দির দেখে নিন । এরপর লোকাল গাড়িতে শেয়ারে দশ টাকা মাথাপিছু দিয়ে (পুরো গাড়ি ১০০ টাকা) রামঝুলা চলে আসুন । রামঝুলাতে কিন্তু বাইক ইত্যাদির লাইন লেগে থাকে । তাই এই ঝুলন্ত ব্রীজ সাবধানে পেরোতে হয় । রামঝুলায় এসে প্রথমে দেখুন স্বর্গাশ্রম । তারপর গীতাভবন । এরপর পরামার্থ নিকেতন আশ্রম । এখানেই হয় সন্ধ্যা আরতি । তাই সন্ধ্যার আগে আগে প্ল্যান করেই এখানে আসবেন । আশ্রম ঘুরে অপূর্ব সন্ধ্যা আরতি দেখুন । এই সন্ধ্যা আরতি না দেখলে ঋষিকেশ ভ্রমন অসম্পূর্ন রয়ে যায় । সন্ধ্যা আরতি দেখে হেঁটে রামঝুলা চলে আসুন। ৪০০ মিটার দূরত্ব । হেঁটে ঝুলন্ত ব্রীজ পার হন । এইবার ড্রাইভার সাহেবের সাথে কন্টাক্ট করে শিবানন্দ পার্কিংয়ে চলে আসে গাড়ীতে উঠে পড়ুন। ফিরে আসুন হরিদ্বার । ইচ্ছে করলে সেই রাত ঋষিকেশও থাকতে পারেন (যারা চারধাম, দেবপ্রয়াগ যাবেন)

★★ গাড়ীভাড়া:
------------------
হরিদ্বারের বেশিরভাগ হোটেল বা ট্যুর এজেন্সির নিজেদের গাড়ী না থাকায় তারা গাড়ী নিজেরা ভাড়া করে সেই গাড়ী পর্যটকদের দেয় । এবং গাড়ির ড্রাইভার এবং মালিকরা কিছুতেই নিজেরা গাড়ী বুকিং নেয় না । ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে গাড়ী করায় ৩০০-৫০০ টাকা বেশী দিতেই হয় । হরিদ্বার থেকে নীলকন্ঠ মন্দির সমেত ঋষিকেশ ভ্রমনের জন্য বড়গাড়িতে প্রায় ২৫০০ টাকা পড়ে যায় । কিন্তু কেউ আসল গাড়ির মালিকের মাধ্যমে গাড়ী পেলে সেটাই ৩০০-৫০০ টাকা কম হয় । (অক্টোবর, ২০১৯)

descriptionঋষিকেশ ভ্রমন গাইড Rishikesh Travel Guide EmptyRe: ঋষিকেশ ভ্রমন গাইড Rishikesh Travel Guide

more_horiz
পুজোর ছুটি এগিয়ে আসতে থাকলে, আপামর বাঙ্গালীর মধ্যে বাক্স-প্যাটরা নিয়ে ঘুরতে বেরোনোর ইচ্ছা যেন জেঁকে বসে। বড় থেকে ছোট বাচ্চা – কেউই বাদ যায় না। পুজোর ছুটিতে ঘুরতে যেতে হবে – এ চিন্তাটা যেন আমাদের সবাইয়ের মজ্জাগত। নতুন Destination কিংবা পুরোনো পুজোর ছুটিতে আমরা ঘুরতে যাবই – এই মানসিকতা বোধকরি মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী সমাজ সেই কোন কাল থেকে পুষে এসেছে। তার তোড়জোড় আমরা শুরু করে দি, অনেক আগে থেকেই। ছোটবেলা থেকে আমরা তাই দেখে আসছি। যে বছর পুজোয় ঘুরতে যেতে পারি না, প্রায় তখন থেকেই মনকে ঠিক করে ফেলি সামনের পুজোয় কোনভাবে যেন ঘোরা মিস না হয়।

তবে কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে থাকার দরুন, বাংলার মতো পুজোর ছুটি খুব একটা বেশী পাওয়া যায় না। তাই আমার ক্ষেত্রে পুজোর ছুটির ব্যপারতা একটু অন্যরকম। হিন্দি বলয়ে পুজোর ছুটি বলতে শুরু হয় দীপাবলির মধ্য দিয়ে আর সেটা extended হয় ছট পুজো শেষ হওয়া অবধি। আমার কাছে পুজোর ছুটি তাই কালীপূজো অর্থাৎ দীপাবলি থেকে ছটপুজো পর্যন্ত। আর অফিসকে বলে কয়ে আর কয়েকটা দিনের সংযুক্তিকরণ। May – June মাস থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কোথায় যাওয়া যায় – গত বছরে Western Ghat tour এর পরে এবছরের শুরু থেকেই মনটা কেমন যেন হিমালয় হিমালয় করছিল। তা শেষমেশ ঠিক করি – কুমায়ুন যাবো। খোঁজ খবর নেওয়াও শুরু হয়ে যায়। কিন্তু আমার সম্ভাব্য ছুটির অবকাশের সঙ্গে tour plan টা মেলাতে, আমাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। একটা সময় গিয়ে কিছুটা হাল ছেড়েও দিয়েছিলাম – মনকে অভয় দিয়ে কুমায়ুন tour নিয়ে আর বিশেষ অগ্রসর ও হইনি। মনটা এমনিতেই ঝিমিয়ে ছিল। গিন্নি সুযোগ পেলেই আক্ষেপ করছিল – এবারের পুজোর ছুটিতে আর কোথাও যাওয়া হবে না। মনটা বেশ কচকচ করছিল। এদিকে দেখতে দেখতে প্রায় Mid September এসে গেলো। তা Better Half একদিন বেশ জোরালো গলায় বলে উঠলো – সেপ্টেম্বরের অর্ধেক তো হয়েই গেল; আর কতো দিন হাথ গুটিয়ে বসে থাকবো! Train এর Ticket তো সবশেষ – কি হবে ঘোরার? গিন্নির Pep Talk এ সম্বিত ফিরে পেয়ে মাথায় হঠাত একটা idea খেলে গেলো – আরে আমাদের tour programme তো কালীপূজোর পরে তখন অধিকাংশ বাঙ্গালী পর্যটক আসমুদ্র হিমাচল ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফেরার পথে থাকবে – আর আমাদের যাত্রা তো তার পরে শুরু হবে। গিন্নি হঠাত বললো – আরে কোথাও যদি নাই বা যাই, চলো টিকিট কেটে উঠে পড়ি --- কয়েকটা দিন নয় Haridwar আর Rishikesh ঘুরে আসি! এক সপ্তাহ – আটদিনের মতো লাগবে। আমি দেখলাম – বাঃ idea টা তো মন্দ নয়! কুমায়ুনের 10-12 দিনের tour এর থেকে আট-নদিনের গাড়োয়াল হিমালয় তো বেশ ভালো option। দু একজনের সঙ্গে কথা বলে, ঠিক করলাম এবার আমরা গাড়োয়াল হিমালয় যাবো। কিন্তু এদিকে কেদারনাথ, বদ্রিনাথের দরজা তো এই সময় বন্ধ হয়ে যায় – তা হলে? পুণ্য তীর্থ গাড়োয়াল কি তবে হাথছাড়া হয়ে যাবে? চারধামের মায়া কাতিয়ে ঠিক করি আমরা ‘অন্য গাড়োয়াল’ ঘুরতে যাবো।

গাড়োয়াল হিমালয়কে দুটো ভাগে ভাগ করা যায় –

1) Pilgrimage Garhwal ( কেদারনাথ, বদ্রিনাথ, গঙ্গোত্রী, জমুনত্রি সঙ্গে তুঙ্গনাথ, মদমহেশ্বার সহ পঞ্চকেদার) সঙ্গে উথসাহিদের জন্যে Valley of Flower Valley.

2) Derhadun – Mussouri – Hardwar - Rishikesh –অতি পরিচিত tourway.

কিন্তু এছাড়াও গাড়োয়াল’কে দেখার জন্য আরো জায়গা যে আছে, তা Net Search করতে করতে খুঁজে পেলাম। ভ্রমণসঙ্গী’ তে যে এই পথের উল্লেখ নেই তা নয়। কিন্তু সচারচার কাউকে খুব একটা এই পথে যেতে দেখি নি। সেটা হয়তো আমার অজ্ঞতা হতে পারে। সেটা হল – Pauri Garhwal Route :-
Haridwar – Rishikesh – Devprayag – Pauri – Khirshu – Lansdowne & back to Haridwar। এই রুটে ভিড় বেশ কম। আর এই রুট নিয়ে লেখার সংখ্যা তাও বেশ কম। রুট টা নিয়ে বেশ excited হয়ে পড়লাম। ঠিক করলাম দেখাই যাক না Pauri Garhwal কেমন? যেমন চিন্তা তেমন কাজ – waiting list এ ticket কেতে ফেললাম - দেখলাম IRCTC confirmation prediction বলছে 95%। মা তারা আর শিবশম্ভু’র নাম করে এগিয়ে গেলাম – যা হবে দেখা যাবে! Room Booking তো আগে করি । Garhwal Mandal Vikas Nigam এর Kolkata Office এর পরামর্শে Rishikesh GMVN Yatra Office এর সঙ্গে কথা বলে GMVN এর Resort ও Guest House এ room বুক করলাম। Rishikesh এ 2 দিন, Khirsu তে 3 দিন আর Lansdowne এ 1 দিন। GMVN এর Bist সাহেব এ ব্যাপারে আমাকে খুব সাহায্য করেছেন। ট্যুরের শুরু থেকে Haridwar এ শেষ করা পর্যন্ত GMVN এর guidance এক কথায় অসাধারণ। অমায়িক মানুষটির ব্যবহারে আমি মুগ্ধ হয়েছি। বস্তুত GMVN এর সমস্ত গেস্ট হাউস, রির্সট, টুরিস্ট বাংলো’র সব কর্মচারীদের ব্যবহার খুব সুন্দর ও বন্ধুবৎসল।

এদিকে যাত্রার দিন যত এগিয়ে আসতে লাগলো, মন কিছুটা অস্থির হতে থাকলো টিকিট confirm হবে তো? যাই হোক ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় 09.11.18 এর Upasana Exp এ confirm ticket নিয়েই যাত্রা শুরু করলাম। পরেরদিন 10.11.18 এর নির্ধারিত সময়ের প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা দেরীতে যখন হরিদ্বার পৌঁছলাম, তখন ঘড়িতে রাত প্রায় পৌনে নটা। ভেবেছিলাম আলো থাকতে সন্ধ্যের মুখে হৃষীকেশ পৌঁছবো, কিন্তু হরিদ্বার থেকে Prepaid Taxi নিয়ে রাত প্রায় সাড়ে দশটা সময় আমরা হৃষীকেশে GMVN এর Ganga Resort এ পৌঁছলাম। রির্সটের সামনে দিয়েই গঙ্গা বয়ে গেছে। গঙ্গার দুপারে আলোর রাশিমালা ছড়িয়ে আছে আর কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে এসে যেন বলে গেলো – Welcome to Garhwal….

11.11.18 – গত রাতেই check in করার সময়, Ganga Resort reception এ, বলে রেখেছিলাম। আমাদের এই দিনের tour programme। সেই হিসেবে সকাল 09:30 টেই দেখি গাড়ী এসে হাজির। ড্রাইভারের নাম – শ্রী বিক্রম নেগি, পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব এক ব্যক্তি সামনে এসে বললেন – “চালিয়ে স্যারজি, আপকো আজ হাম Rishikesh ঘুমাকে দিখায়েঙ্গে”। আমাদের tour এর পরবর্তী সব জায়গাগুলো আমরা নেগিজীর গারিতেই ঘুরেছিলাম। খোদ পৌড়ি গাড়োয়ালের লোক – হিন্দিতে একটা সুন্দর পাহাড়ি টান আছে।
Rishikesh এর একদিনের ট্যুরের কিছু বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
a) NeelKant Mahadev – দিনের শুরুতেই নেগিজী আমাদেরকে নিয়ে গেলেন হৃষীকেশ থেকে প্রায় 40 km দূরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত NeelKant Mahadev এর মন্দিরে। মূল মন্দির থেকে প্রায় দু কিলোমিটার দূরে কম বেশী প্রায় সব গারিকে থামিয়ে দেয় এখানকার স্থানীয় পুলিশ, বাকি রাস্তাটা হেঁটেই যেতে হয়। পুজোর ডালা হাতে করে নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা 45 মিনিট লাইন দিয়ে গিয়ে বাবা নীলকণ্ঠের দর্শন পেলাম। আমার পুত্রকে দেখলাম খুব thrilled – কত লোকের সমাগম। হেঁটে যাওয়ার রাস্তায় ছোট বড় মন্দিরে পুন্যার্থী মানুষের ভিড়। প্রচুর গুজরাটি মানুষকে দেখলাম সুদূর সুরাট, ভারুচ মায় ভূজ থেকে এসেছেন বাবা নীলকণ্ঠ মহাদেবের দর্শন করতে। মনে হল সত্যিই মানুষের ভাবাবেগ ও ধর্মীয় অনুভূতি এই আসমুদ্র হিমাচল বিস্তৃত ভারতবর্ষ’কে সত্যিই তীর্থের ভারত তৈরি করেছে - Land of Pilgrimmage।

b) Garur Chatti Falls - নীলকণ্ঠ মহাদেবের দর্শন শেষ করে আবার আমরা রওনা হলাম Rishikesh এর দিকে আর সঙ্গি হয়ে রইলো সদা স্রোতস্বিনী গঙ্গা – পতিত পাবনী মা গঙ্গা। পুরো Rishikesh জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে – অসংখ্য ছোট বড় Adventure Sports এর সংস্থা। Rishikesh - Adventure Sports এর একটি Hotspot। এখানে Ganga River White Water Rafting থেকে শুরু করে kayaking, Hopping, Mountain Cycling / Biking এর সুযোগ রয়েছে। হাতে সময় থাকলে একবার River Rafting করে দেখতে পারেন। আমাদের হাতে সময় সীমিত। মিসেস বলছিল – ইস। River Rafting এর কতো সুযোগ – যদি হতো! কি আর করা ঝটপট কিছু Click করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালো। এদিকে আমরা পৌঁছলাম - Garur Chatti Falls – Rishikesh থেকে প্রায় 15 km। রাস্তার একদম পাশে। পাহাড়ি ঝোড় থেকে জলরাশি নীচে নেমে আসছে আর রাস্তার নীচে দিয়ে গিয়ে সিধা গঙ্গায় গিয়ে মিশছে।

c) Swarg Ashram (Beatles Ashram) – এর পরে নেগিজী আমাদের নিয়ে গেলেন হৃষীকেশের আর এক বিখ্যাত জায়গায় - Swarg Ashram। স্থানীয় লোকেরা জায়গাটাকে চুরাশি কুটিয়া বলে জানে। সত্তরের দশকের শুরুতে মহর্ষি মহেশ যোগী, এখানে তাঁর আশ্রম স্থাপন করেন। হৃষীকেশ তথা এই আশ্রমের নাম ক্রমে, পশ্চিমি দুনিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। আধ্যাত্মিকতাকে মহেশ যোগী এক অদ্ভুত রূপে পশ্চিমি দুনিয়ার সামনে তুলে ধরেন। তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সত্তর দশকের মাঝামাঝি পৃথিবী বিখ্যাত Rock Band – Beatles Group এই আশ্রমে আসেন Spirituality এর খোঁজে আর সঙ্গে নিয়ে আসে আরো অনেক’কে। যাদের আমরা হিপি (Hipi)বলে জানি। আজও আশ্রমটি রয়ে গেছে – কিন্তু পরিত্যক্ত অবস্থায়। মহেশ যোগীর মৃত্যুর পরে, এই আশ্রমে বিদেশীদের আসা কমে যায়। বর্তমানে পুরো জায়গাটাকে সরকার অধিগ্রহণ করেছে – কিন্তু তার কোন পরিবর্তন করে নি। বর্তমানে জায়গাটি রাজাজী ন্যাশনাল পার্কের অন্তর্গত। এই আশ্রমের অনুকরণে আজ ভারত তথা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এমন অনেক আশ্রম তথা Meditation Centre রয়েছে। কিন্তু আধ্যাত্মিকতার খোঁজে বিদেশী পর্যটকের দল আজও হৃষীকেশ তথা গাড়োয়াল হিমালায়ে আসছে। এই জায়গাটি দেখলাম বিদেশীদের কাছে খুব প্রিয় এবং Must Watch list এ রয়েছে। হাঙ্গেরী। ইতালী, সার্বিয়া থেকে আসা এমন একটি দলের সঙ্গে আলাপ ও হল। Beatles Group এই আশ্রমে এসেছিল – আর আজ তারা সেই আশ্রমে ঘুরতে এসেছে—এই ব্যাপারটা তাদের কাছে একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি। এখানে বসেই John Lenon তাঁর পৃথিবী বিখ্যাত গান – Imagine এবং Yesterday রচনা করেন। ভগ্ন জীর্ণ আশ্রমের বিভিন্ন কোণে Beatles Band, Rock Music ও সাধু সন্তের ছবি অর্থাৎ Graphiti ছড়িয়ে রয়েছে। সময় যে কিভাবে বেরিয়ে গেলো বুঝতে পারলাম না। ঘণ্টা দেড়েক ঘুরে আবার এগোনোর পালা। হৃষীকেশ থেকে প্রায় 20 km দূরে হৃষীকেশ শহরের ঠিক উলটো দিকের পাহাড়ের ধারে রয়েছে এই আশ্রম।

d) Bhutnath Mandir – এরপরে দুপুর আড়াইটের সময় আমরা পৌঁছলাম গিয়ে হৃষীকেশের আর এক দর্শনীয় স্থানে – ভূতনাথ মন্দির। মূল মন্দিরটি মূলত আটতলার – একটা পাহাড়ের খাঁজে তৈরি হয়েছে। নদীর সমতল থেকে মূল মন্দিরের ফটক পর্যন্ত পৌঁছতে প্রায় পাঁচশো সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। তবে আমরা মন্দিরের দক্ষিণদ্বার দিয়ে মূল মন্দিরে পৌঁছাই। মন্দিরের একদম ওপর তলাতে বাবা ভূতনাথের মূল বিগ্রহ রয়েছে। মহাদেব শিবশম্ভু এখানে ভুতপ্রেতের অধিশ্বর ভূতনাথ রূপে বিরাজমান। মন্দিরের ওপর থেকে পুরো হৃষীকেশ শহরটা একসাথে দেখা যায় – বিকেলের পড়ন্ত রোদে গঙ্গাতীরের হৃষীকেশ’কে অতুলনীয় বলে মনে হয়।

e) Neer Garttu Falls – মন্দির থেকে হৃষীকেশ শহরে ঢোকার সময় ডানদিকের পাহাড়ে প্রায় 5 km এগিয়ে গিয়ে পড়ে - Neer Garttu Falls – নির্ঝর ধারা। পাহাড়ের অনেক অপর থেকে জলের ধারা নীচে নেমে আসছে – পাহাড়ের খাঁজে জল্ধারা একটা ছোট জলাশয় সৃষ্টি করেছে – আর অতিরিক্ত জল নীচে বিয়ে গিয়ে গঙ্গায় মিশছে।

f) Lakshman Jhula – Tera Manzil Mandir - নির্ঝর ধারা থেকে ফিরে গাড়ী আমাদেরকে পৌঁছে দিলো Lakshman Jhula বাজারে। একটু হেঁটে গেলেই লক্ষ্মণ ঝুলা। ঝুলা অর্থে Steel cable Rope এর ব্রিজ। সমস্ত Garhwal অঞ্চলেই এই রকম আরো অনেক ঝুলা চোখে পড়ে। ঝুলা পেরিয়ে গঙ্গার দক্ষিণ তীরে রয়েছে বিখ্যাত Tera Manzil Mandir অর্থাৎ তেরো তলা মন্দির। অনেক বছর আগে একবার বাবা মায়ের সঙ্গে আমি এসেছিলাম – সেই কোন ছোটবেলায়। কিছুটা আবছা আবছা মনে পড়ে। মন্দিরের উপরে উঠতে নামতে হাঁপ ধরে যায়। তেরো তলা জুড়ে বিভিন্ন মনোহারি, পুজোর উপাচার আর Antic সামগ্রির দোকানপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীর অষ্টধাতু, পিতল ও তামার মূর্তি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মন্দির দেখা শেষ করে অটো চড়ে বসলাম। সন্ধ্যা হবো হবো – Paramarth Ashram এর সন্ধ্যা আরতি দেখতে হবে। তা Ram Jhula তে যখন পৌঁছলাম তখন আরতি প্রায় শেষের দিকে। নদীতে ছোট ছোট প্রদীপ ভেসে যাচ্ছে – সে এক অপরূপ মোহময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে চারপাশে। Ram Jhula তে ও দেখলাম অনেক দোকান পাট। তারই একটা থেকে সিদ্ধিদাতার তামা- পিতলের মিশ্রধাতুর এক মূর্তি সংগ্রহ করলাম। গৃহিণীও দেখলাম কিছু Stone beat এর মালা নিয়েছে – বললো semi precious stone beat এর এই মালাগুলো নাকি কলকাতাতে বেশ দাম। এখানে বেশ সস্তায় পেয়েছে। তাও নেহাত কম কিছু নয় – তা বেশ বুঝেছিলাম মোবাইলে যখন transaction message এলো। ঘড়িতে প্রায় পৌনে আটটা। Madras Café তে কফি খেয়ে যখন Ganga Resort এর রাস্তা ধরলাম – ঠাণ্ডা হাওয়ার সেকি জোর তা বেশ ভালো ভাবে বুঝলাম। Ram Jhula থেকে Ganga Resort পর্যন্ত গঙ্গার উত্তর পাড় বরাবর পাথরের উঁচু রাস্তা করে দিয়েছে – সরকার থেকে। আজ ভোরেও আমরা একবার এসেছিলাম Ram Jhula র এই রাস্তা দিয়ে। অনেক মানুষকে প্রাতঃভ্রমন করতে দেখেছিলাম। রাস্তার নামটা বেশ সুন্দর – আস্থা পথ। বেশ লাগলো – আস্থার শহর এই রিশিকেশে আস্থা পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আমরা – বেশ একটা ছন্দময় সমাপতন।
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
power_settings_newLogin to reply