হরিদ্বার কঙ্খল ভ্রমন গাইড

গারোয়াল হিমালয়ের প্রবেশদ্বার হলো হরিদ্বার । ধর্মপ্রাণ হন কি প্রকৃতিপ্রেমিক , হরিদ্বার দিয়েই উত্তরাখণ্ডের যেকোনো জায়গায় আপনাকে যেতেই হবে । চারধাম যাত্রা বা বরফের আউলি কিম্বা ফুলের দেশ ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার হোক বা চিরাচরিত দেরাদুন-মুসৌরি-ধনৌলটি সব রুটের বেস পয়েন্ট কিন্তু হরিদ্বার । তাই হরিদ্বার একবার নয়, বারবার আসতে হয় এবং হবেও ।

★★ হর কি পৌরি ঘাট এবং সন্ধ্যা আরতি:
--------------------------------------------------
হরিদ্বারের প্রধান আকর্ষণ গঙ্গা এবং হর কি পৌরি ঘাট । সারাদিন এই ঘাটকে ঘিরেই যত কর্মব্যস্ততা । ঘাটের পাশেই নানান মন্দির, দিনভর পুজোপাঠ, গঙ্গাস্নান- সবসময় জমজমাট । তবে হর কি পৌরি ঘাটের আসল সৌন্দর্য্য বিকেলের পর থেকেই । বেনারসের মতো এখানে ৩৬৫ দিন মা গঙ্গার সামনে সন্ধ্যা আরতি হয় । দেখবার মতো সেই সন্ধ্যা আরতি । সমস্ত পুণ্যার্থী এবং পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হর কি পৌরি ঘাটের সন্ধ্যা আরতি । হর কি পৌরি ঘাটেই আছে ক্লক টাওয়ার । গঙ্গায় এখানে স্নানের সুবিধার্থে শিকল বাঁধা আছে কারন গঙ্গার এখানে ভীষন স্রোত । ঋষিকেস হরিদ্বারেই গঙ্গা পাহাড় ছেড়ে সমতলে পড়েছে । উল্লেখ্য দশমীর পর থেকে দীপাবলি পর্যন্ত (দিন কখনো কখনো এদিক ওদিক হয়) গঙ্গার স্রোত কে বেঁধে পরিষ্কার করা হয়, সেইসময় গঙ্গার স্রোত খুব কম থাকে ।

★ হর কি পৌরি ঘাট ছাড়া বিষ্ণুঘাট, সুভাষ ঘাট উল্লেখযোগ্য । বিষ্ণুঘাটেই আছে ভোলাগিরির আশ্রম এবং বিখ্যাত দাদা বৌদির হোটেল (এখন একই নামে প্রচুর হোটেল আছে) ।

★★ মনসা পাহাড় এবং চন্ডী পাহাড়:
-------------------------------------------

হরিদ্বার শহরটি গঙ্গার পাশে দুই পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত । একদিকে মনসা পাহাড় অন্য দিকে নীল পাহাড় বা চন্ডী পাহাড় । মনসা পাহাড়ের উপরে মনসা মন্দির এবং নীল পাহাড়ের উপরে চন্ডী মন্দির এবং হনুমানজীর মাতা অঞ্জলী দেবীর মন্দির আছে । দুটো পাহাড়ের উপরে ওঠার জন্য রোপওয়ে সার্ভিস আছে । মনসা পাহাড়ে রোপওয়ে ওঠা নামা তারপর চন্ডী পাহাড় গাড়িতে নিয়ে যাওয়া এবং চন্ডী (নীল) পাহাড় রোপওয়েতে ওঠা নামা পুরো প্যাকেজ এক একজনের ৩৮৪ টাকা । চন্ডী মাতা একটা সিদ্ধপীঠ । সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোপওয়ে সার্ভিস খোলা থাকে ।

★★ হরিদ্বার এবং কঙ্খল ঘুরে দেখা:
--------------------------------------------

হরিদ্বার থেকে মাত্র পাঁচ কিমি দূরে কঙ্খল শহর । রামদেব বাবার পতঞ্জলি আশ্রম এই কঙ্খলে এবং পুরানে দক্ষরাজার যজ্ঞতে সতীমায়ের ৫১ টুকরো হওয়া এই কঙ্খলে বলে পুরান মতের দাবী । কঙ্খল এবং হরিদ্বারে প্রচুর মন্দির । রাস্তায় দু পা পরপর মন্দির আশ্রম । তাই সব মন্দির আশ্রম দেখা সম্ভব নয় । প্রধান মন্দির আশ্রম গুলোয় ঘুরিয়ে দেখানো হয় । কঙ্খল এবং হরিদ্বারে মন্দির দর্শনের জন্য গাড়ির চেয়ে অটো, বিক্রম বেশী কার্যকারী এবং ৮০০-১০০০ টাকার মধ্যে একদিনে প্রধান মন্দির সব ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেয় ।

★ হরিদ্বারের প্রধান প্রধান মন্দির সমূহ:

১) ভারত মাতার মন্দির (G+৭ তলা মন্দিরের এক একতলে ভারতমাতা মন্দির, শুর মন্দির, মাতৃ মন্দির, সন্ন্যাস স্থল মন্দির, শক্তি মন্দির, বিষ্ণু মন্দির, শিব মন্দির আছে)

২) পবন ধাম মন্দির
৩) ইন্ডিয়া টেম্পল
৪) শিবানন্দ ধাম টেম্পল
৫) বৈষ্ণ দেবী মন্দির
৬) চিত্রকূট আশ্রম মন্দির
৭) শান্তিকুঞ্জ

★ কঙ্খলের প্রধান প্রধান মন্দির সমূহ:

১) দক্ষ প্রজাপতি মন্দির এবং সতী মায়ের জন্মস্থল (এইখানেই পুরান মতে সতীদেবী ৫১ টুকরো হয়ে ৫১ পীঠের সৃষ্টি হয় । এটি মহাদেবের শ্বশুরবাড়ী)
২) আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম
৩) হরিহর আশ্রম এবং পারদেশ্বর মহাদেব এবং মহামৃত্যুঞ্জয় মন্দির । এইখানে রুদ্দ্রাখ গাছ আছে ।
৪) মানবকল্যাণ মন্দির আশ্রম
৫) স্বামী স্বরূপানন্দ আশ্রম
৬) বাবা রামদেবের পতাঞ্জলী আশ্রম এবং তার কর্মযজ্ঞ হাসপাতাল ইত্যাদি । (হরিদ্বার থেকে ১৮ কিমি দূরে কঙ্খলে অবস্থিত)

সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সারাদিনে কঙ্খল এবং হরিদ্বারের প্রধান প্রধান মন্দির গুলো দেখা হয়ে যায় ।

★★ রাজাজি জাতীয় পার্ক:
-------------------------------

হরিদ্বার থেকে ঋষিকেস/দেরাদুন ইত্যাদি যাওয়ার রাস্তায় দশ কিমি দূরেই রাজাজি জাতীয় পার্ক । একদিন সময় নিয়ে ঘুরে আসা যায় রাজাজি জাতীয় পার্কে ।

◆◆◆ ট্রিপ প্ল্যান:
-----------------------
হরিদ্বার যেহেতু গারোয়াল হিমালয়ের যেকোনো জায়গার বেস পয়েন্ট তাই যেকোনো ট্রিপের শুরু বা শেষের একদিন হরিদ্বারের জন্য বরাদ্দ থাকে । প্রকৃতপক্ষে হরিদ্বার ঘুরতে নুন্যতম দুইদিন লাগবেই যাওয়া আসা বাদে ।

● প্রথমদিন: সকালে ব্রেকফাস্ট করে রোপওয়ে সার্ভিসে মনসা এবং চন্ডী দুই পাহাড়ে দুই মন্দির দর্শন করুন । দুপুরে লাঞ্চ সেরে গঙ্গা স্নান হোক । এরপর বিকেল বেলায় হর কি পৌরি ঘাটে গিয়ে সন্ধ্যা আরতি দেখুন । তারপর হরিদ্বার বাজার ঘুরুন ।

● দ্বিতীয়দিন: আজ সারাদিন কঙ্খল, হরিদ্বারের প্রধান প্রধান মন্দির সমূহ দর্শন করুন । সাথে রামদেব বাবার পতঞ্জলি আশ্রম । বিকেলের দিকে ফিরে আর একবার হর কি পৌরি ঘাটের সন্ধ্যা আরতি উপভোগ করুন ।
হাতে আর একদিন সময় থাকলে রাজাজি জাতীয় পার্ক ঘুরে নিন ।

এরপরের দিন ঋষিকেস ভ্রমন (বিশদ বর্ণনা পরের পর্বে থাকে) তারপর বেরিয়ে পড়ুন বিভিন্ন দিকে । হয় চারধাম ভ্রমন, নয়তো ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার, আউলি কিম্বা দেরাদুন-মুসৌরি- ধনৌলটির পথে । ফিরবেন আবার হরিদ্বার হয়েই ।

◆◆◆ থাকা খাওয়া:
----------------------

হরিদ্বারে হোটেলের অভাব নেই । চারিদিকে হোটেল, ধর্মশালা, আশ্রম । বাজেট অনুযায়ী একটা পছন্দ করে নিন। হোটেলের নাম, ওয়েবসাইট, ফোন নাম্বার গুগুল সার্চ করলেই চলে আসবে । কম বাজেটে থাকার জন্য ভোলাগিরির আশ্রম খুব ভালো । নতুন ভাবে তৈরিও হচ্ছে ।

★★ সমগ্র হরিদ্বারেই নিরামিষ খাওয়া । বাঙালী খাওয়া হোটেলে হোটেলে। ভাত, ডাল, সুক্ত, ঘি ভাত, দুই তিনরকম সবজি, পাঁপড়, চাটনী সহযোগে খাবার পাওয়া যাবে। বিশেষ ভাবে উল্লেখ দাদা বৌদির হোটেল (ভোলাগিরি আশ্রমের বিপরীতে), মাসীর হোটেল । (বিষ্ণু ঘাটের কাছে) স্পেশাল থালি ১২০/-, নরমাল থালি ৬০/- (অক্টোবর, ২০১৯) । খাওয়া মিল সিস্টেমে যত খুশি খাওয়া ।