Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

2 posters

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) Emptyপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz

প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬)



Topic 1

Expansion of British Empire in India (no detailed narratives of battles are required. Stages of imperial expansion should be clearly stated )-different stages (1765-1856 A.D.) Foundation of the colonial administration (gradual growth of colonial structure of administration is to be reflected)

☼ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার

► দক্ষিণ ভারত :

► প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধঃ

►দ্বিতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধঃ

►তৃতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ও মারাঠা শক্তির পতনঃ

►রবার্ট ক্লাইভের পর ভেরেলস্ট

►প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ :

►দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ :

►তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ:

►শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি:

►অধীনতামূলক মিত্রতা:-

►চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

☼ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার :

►সগৌলির সন্ধি:-

►প্রথম ব্রহ্ম যুদ্ধ:

►প্রথম আফগান যুদ্ধ:

►ইঙ্গ-শিখ সম্পর্ক:

►অমৃতসরের সন্ধি:

►দ্বিতীয় ব্রহ্মযুদ্ধ:

☼ লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি:-

►দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব:

►দ্বৈত শাসন:

☼ কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার সূচনা:

► হেস্টিংসের সংস্কার:-

►কর্নওয়ালিসের সংস্কার:-

►সিভিল সার্ভিস:-

►সেনাবাহিনী:-

►পুলিশী ব্যবস্থা:-

►বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন:-

►আইনের শাসন:-

►চিরস্থায়ী মিত্রতা চুক্তিঃ

►ত্রিশক্তি মৈত্রী চুক্তিঃ

► গুজরাটের যুদ্ধ :


### তোমার সাহায্যে আমরা পাশে আছি, তুমি এগিয়ে যাও।
# প্রিয় ছাত্র - ছাত্রী যদি কোথাও কোনো ভুল থেকে থাকে তবে মনে রাখবে সেটা অনিচ্ছাকৃত। নিচে কমেন্ট করো। ঠিক করে দেওয়া হবে।

CLASS TEN HISTORY wbbse
#Madhyamik #2020 #HISTORY #Suggestions
#ইতিহাস #মাধ্যমিক

Last edited by Admin on Sat Sep 12, 2020 11:00 am; edited 1 time in total

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
►ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার (Expansion of British Empire in India) : বিভিন্ন পর্যায় (১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দ):- ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূল বরাবর কয়েকটি ঘাঁটি স্থাপন করে প্রথম ব্যবসা-বাণিজ্য ও এদেশ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের কাজ শুরু করে । পরে মোগল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে সচেষ্ট হয় । ফরাসি, ওলন্দাজ, দিনেমার প্রভৃতি বাণিজ্যসংস্থাকে একে একে বিতাড়িত করে ব্রিটিশরা সর্বশক্তিমান হয়ে ওঠে । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে [Battle of Plassey, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জুন মুর্শিদাবাদের তেইশ মাইল দুরে পলাশির প্রান্তরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও সিরাজউদদৌলার যুদ্ধ হয় ] এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে ২২শে অক্টোবর বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন রাজনৈতিক ও সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে । বক্সারের যুদ্ধে অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ্-দৌলা পরাজিত হলে লর্ড ক্লাইভ তাঁর সঙ্গে এলাহাবাদের সন্ধি করেন । এই সন্ধির দ্বারা লর্ড ক্লাইভ অযোধ্যার নবাবের কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা এবং কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশ দুটি লাভ করে ও বিনা শুল্কে অযোধ্যায় বাণিজ্য করার অধিকার পায় । এরপর ১৭৬৫ সালে ক্লাইভ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে দ্বিতীয় সন্ধি চুক্তি করেন । এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী লর্ড ক্লাইভ কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশদুটি মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে উপহার দেয় ও বিনিময়ে কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের ভার অর্পণ করে । এই সময় কোম্পানি ইচ্ছা করলেই বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, অযোধ্যা ও দিল্লীর সিংহাসন জয় করতে পারত, কারণ তখন অর্থাৎ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসনিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক- সমস্ত দিক দিয়েই বাংলা ইংরেজদের করতলগত হয়েছে । বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত রাজ্য অযোধ্যা ইংরেজদের অনুগত ‘মিত্র-রাজ্যে' পরিণত হয়েছে এবং ওই একই যুদ্ধে পরাজিত দিল্লীর মোগল সম্রাট কোম্পানির বৃত্তিভোগীতে পরিণত হয়েছেন । কিন্তু ক্লাইভের বিচক্ষণতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই সময়ে ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে না গিয়ে দিল্লীর পরাজিত মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তিকে সংহত ও সুদৃঢ় করে তোলে । আর মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের অনুমোদন সাপেক্ষে এদেশে তাদের অধিকার আইনগত বৈধতা পায় । তাই পলাশির যুদ্ধের ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যে ভিত্তি স্থাপিত হয়, বক্সারের যুদ্ধের ফলে তা সম্প্রসারিত ও সুদৃঢ় হয়েছিল । [ "Buxar deserves far more than Plassey to be considered as the real origin of the British power in India" — James Stephen].

► দক্ষিণ ভারত : বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ্-দৌলা এবং দিল্লীর মোগল বাদশাহ দ্বিতীয় শাহ আলমকে হাতের মুঠোর মধ্যে পেয়েও ক্লাইভ তাঁদের শাস্তি দেননি, কারণ তাদের আসল লক্ষ্য ছিল দাক্ষিনাত্যের মারাঠারা ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) Emptyপ্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ

more_horiz
প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ


► প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ [First Anglo-Maratha War]:  পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে আহম্মদ শাহ আবদালির কাছে মারাঠাদের পরাজয়ের পর পেশোয়া বালাজি বাজিরাও প্রাণ ত্যাগ করেন । তখন তাঁর ১৭ বছর বয়স্ক পুত্র প্রথম মাধব রাও [১৭৬২-১৭৭২] পেশোয়া হন । পেশোয়া প্রথম মাধব রাও-এর আমলে মারাঠারা আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে । প্রথম মাধব রাও-এর অকাল মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নারায়ণ রাও ১৭৭২-১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া পদ লাভ করেন । কিন্তু তাঁর পিতৃব্য রঘুনাথ রাও ষড়যন্ত্র করে নারায়ণ রাওকে হত্যা করে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে নিজেই পেশোয়া পদ দখল করেন । এরপর মারাঠা সর্দার নানা ফড়নাবীশ [Nana Phadnavis] প্রমুখ মারাঠা নেতারা রঘুনাথ রাও-কে গদিচ্যুত করে নারায়ন রাওয়ের শিশুপুত্র দ্বিতীয় মাধবরাও নারায়নকে পেশোয়া পদে অভিষিক্ত করেন । তখন রঘুনাথ রাও বোম্বাইয়ে ইংরেজদের সাহায্যপ্রার্থী হন । তিনি ইংরেজদের সলসেট বেসিন এবং আর কয়েকটি দ্বীপ দেবার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে তাঁদের সঙ্গে ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে সুরাটের সন্ধি করেন । কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস ও তাঁর কাউন্সিল এই সন্ধি সমর্থন না করে পুনরায় পেশোয়ার সঙ্গে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষর করেন । এই সন্ধির শর্ত অনুসারে ইংরেজগন সলসেট এবং বেসিন বন্দর দুটি লাভের বিনিময়ে রঘুনাথ রাও-এর পক্ষ ত্যাগে স্বীকৃত হন । এই অবস্থায় ইংল্যান্ডে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুরাটের সন্ধি অনুমোদন করায় বোম্বাইয়ের ইংরেজ বাহিনী পেশোয়ারের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে মারাঠারা ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে তেলেগাঁও এর যুদ্ধে ইংরেজদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন ও ওয়াড়গাঁও এর সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন । এই সন্ধিতে উভয় পক্ষই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সম্মত হন । কিন্তু বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস এই শর্ত মানতে অসম্মত হলে পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয় । এই যুদ্ধ প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ নামে পরিচিত । অবশেষে ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধিয়ার মধ্যস্থতায় ইংরেজ ও মারাঠাদের মধ্যে সলবাই [Treaty of Salbai] -এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের অবসান ঘটে । এই সন্ধির শর্ত অনুযায়ী :

(ক) দ্বিতীয় মাধবরাও নারায়ন পেশোয়া রূপে স্বীকৃতি পান । ইংরেজরা রঘুনাথের পক্ষ ত্যাগ করে মাধব রাওয়ের পক্ষ নেয় ।

(খ) ইংরেজরা বিজিত অঞ্চলগুলি পেশোয়াকে ফিরিয়ে দেয়, বিনিময়ে সলসেট, থানে ও বম্বের কিছু স্থানের অধিকার লাভ করে ।    

(গ) বিতাড়িত রঘুনাথ রাওকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা হয়  ।

(ঘ) মহাদজি সিন্ধিয়া যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের বিশাল ভু-খন্ড ফিরে পায় ।

(ঙ) সলবাইয়ের সন্ধি অনুসারে মারাঠারা মহীশুরের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সাহায্য দেবার প্রতিশ্রুতি দেন ।

এই ভাবে ইংরেজরা অসামান্য কূটনীতির মাধ্যমে ভারতীয় শক্তিগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেন ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
☼ দ্বিতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ [Second Anglo-Maratha War] : দ্বিতীয় মাধব রাওয়ের সময় থেকেই পেশোয়ার কর্তৃত্ব কমে যেতে থাকে । এই সময় মারাঠাশক্তি চার মারাঠা সামন্ত রাজা যথা—গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া, বরোদার গায়কোয়াড়, ইন্দোরের হোলকার এবং নাগপুরের ভোঁসলে— এদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায় । ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় মাধব রাও আত্মহত্যা করেন । তিনি অপুত্রক থাকার জন্য তাঁর কাকা রঘুনাথ রাওয়ের পুত্র দ্বিতীয় বাজীরাও পেশোয়া পদে অধিষ্ঠিত হন (১৭৯৬ - ১৮১৮ ) । ইতিমধ্যে ১৮০০ সালে প্রধান মন্ত্রণাদাতা নানা ফড়নবীশের মৃত্যুর ফলে মারাঠা রাজ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । এই সময় গদি দখলের জন্য পেশোয়া ও অপর চার মারাঠা শক্তি লড়াইয়ে লিপ্ত হলে যশোবন্ত রাও হোলকার পেশোয়া ও সিন্ধিয়ার সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন । পরাজিত পেশোয়া অপমানে, দুঃখে ও ক্ষোভে ওয়েলেসলি প্রবর্তিত অধীনতা মূলক মিত্রতা গ্রহন করেন ও উভয়ের মধ্যে ১৮০২ সালে বেসিনের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় । ১৮০৩ সালে দ্বিতীয় বাজীরাও ইংরেজদের সহায়তায় পুনরায় পেশোয়া পদে অধিষ্ঠিত হন । পেশোয়ার এই কার্যকলাপ অন্যান্য মারাঠা নেতৃবৃন্দ অনুমোদন করেন নি । তাঁরা গৃহবিবাদ ভুলে গিয়ে একতাবদ্ধ হন । ইতিমধ্যে পেশোয়াও নিজের ভূল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হন ও নিজ কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য মারাঠা নায়কদের সঙ্গে হাত মেলান ও ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ [Second Anglo-Maratha War] শুরু হয় । কিন্তু এই যুদ্ধে সিন্ধিয়া পরাস্ত হন ও ইংরেজদের সঙ্গে ‘অধীনতামূলক মিত্রতায়’ আবদ্ধ হন ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
►তৃতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ও মারাঠা শক্তির পতন [Third Anglo-Maratha War and Downfall of the Maratha Power] : দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হওয়ার পরও পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও ইংরেজ বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকায় গভর্নর লর্ড হেস্টিংস পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও-কে এক নতুন অপমানজনক সন্ধি স্বাক্ষর করার জন্য বাধ্য করলে তিনি বিদ্রোহী হন । এই সময় লর্ড হেস্টিংস উত্তর ভারতে পিন্ডারী দমনে ব্যস্ত থাকলে সেই সুযোগে পুনার পেশোয়া বাহিনী ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে কির্কির ব্রিটিশ সেনানিবাস আক্রমণ করে । ফলে তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ [Third Anglo-Maratha War] শুরু হয় । ব্রিটিশ সেনা মারাঠা বাহিনীকে সহজেই পরাজিত করে পুনা অধিকার করে নেয় । পেশোয়ার দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে সিন্ধিয়া, ভোঁসলে এবং হোলকার পেশোয়ারের সঙ্গে যোগ দেয় । ইংরেজ বাহিনী নাগপুরের অনতিদূরে সিতাবলদীর যুদ্ধে ভোঁসলে এবং মাহিদপুরের যুদ্ধে হোলকারকে পরাজিত করেন । এর পরেও পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও ইংরেজদের বিরুদ্ধে পুনরায় অভিযান চালালে কোরেগাঁও এবং অস্টির যুদ্ধে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়ে ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন । এই সঙ্গে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের অবসান ঘটে ।

এই যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে

(১) লর্ড হেস্টিংস পেশোয়া পদের বিলোপ সাধন করেন ।

(২) দ্বিতীয় বাজিরাওকে বার্ষিক আট লাখ টাকা বৃত্তি দিয়ে উত্তরপ্রদেশের কানপুরের নিকটবর্তী বিঠুরে নির্বাসিতের জীবনযাপনে বাধ্য করা হয় ।

(৩) ইংরেজদের তত্বাবধানে শিবাজীর বংশধর প্রতাপসিংহ সাতারার সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত হন ।

(৪) সিন্ধিয়া, ভোঁসলে, হোলকার নিজ নিজ অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ইংরেজদের সঙ্গে অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ হন ।

(৫) মারাঠা যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়,

(৬) পেশোয়ার রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয় ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
☼ রবার্ট ক্লাইভের পর ভেরেলস্ট (১৭৬৭-৬৯) এবং কার্টিয়ার (১৭৬৯-৭২)

রবার্ট ক্লাইভের পর ভেরেলস্ট এবং কার্টিয়ার স্বল্প সময়ের জন্য বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন । ওই সময়ে তাঁদের ঔদাসীন্যে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । এই অবস্থায় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হয়ে আসেন । তিনি অল্পদিনের মধ্যেই আপন বুদ্ধি ও বিচক্ষণতার দ্বারা বাংলার পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন । ইতিমধ্যে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লমেন্ট নিয়ামক আইন (Regulating Act) পাশ হয় । এই আইনের মাধ্যমে মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সি দুটিকে কলকাতার অধীনে আনা হয় এবং ব্রিটিশ অধিকারসমূহের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ওয়ারেন হেস্টিংস গভর্নর জেনারেল পদে উন্নিত হন । গভর্নর জেনারেল পদের কার্যভার গ্রহন করার পর তিনি বুঝতে পারেন যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিছক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে একটি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে । সুতরাং, সেই শক্তিকে সুদৃঢ় ও সংগঠিত করা দরকার । গভর্নর জেনারেল পদে তাঁর কার্যভার গ্রহণের পূর্বেই দক্ষিণ ভারতে ইংরেজগণ মহীশূর রাজ্যের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে । সুলতান হায়দর আলির নেতৃত্বে মহীশূর তখন শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত হয়েছিল । তাই এই মহীশূর রাজ্যটিকে নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারের পথে বাধা ভেবে ইংরেজগণ একে ধ্বংস করার চেষ্টায় নিরত ছিলেন ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
☼ প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ [First Anglo-Mysore War] : হায়দর আলির সঙ্গে ইংরেজদের খুব একটা ভাল সম্পর্ক ছিল না । হায়দর আলির শক্তি বৃদ্ধিতে ইংরেজরাও ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন । হায়দর আলি ফরাসিদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন । তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধের সময় হায়দর ৪,০০০ অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে ফরাসিদের সাহায্য করেছিলেন এবং চাঁদ সাহেবের পুত্র রাজা সাহেবকে তাঁর অধীনে চাকুরী দিয়েছিলন । এই ফরাসিরা ছিল ইংরেজদের প্রধান প্রতিপক্ষ । এজন্য ইংরেজরা হায়দর আলির উপর ভীষণ রেগে ছিল ও তাদের শত্রু বলে মনে করত । বস্তুত ফরাসিদের সঙ্গে হায়দর আলির ঘনিষ্ট সম্পর্ক -ই হল প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের [First Anglo-Mysore War] অন্যতম কারণ । ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে ইংরেজগণ হায়দার আলির বিরূদ্ধে হায়দরাবাদের নিজামকে [Nizam of Hyderabad] সামরিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন । অবশ্য ইংরেজরা নিজামের কাছ থেকে উত্তর সরকার নামক ভুখন্ড লাভ করেছিলেন । ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ও নিজামের মিলিত বাহিনী মহীশূর আক্রমণ করে । কিন্তু হায়দর আলি এই যুদ্ধে ইংরেজ ও নিজামের মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করে ইংরেজ অধিকৃত মাদ্রাজ অধিকার করতে উদ্যত হন । এই যুদ্ধকেই প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ [First Anglo-Mysore War] বলা হয় । অগত্যা ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের ইংরেজ কাউন্সিলার হায়দর আলির সঙ্গে মাদ্রাজ চুক্তি [Treaty of Madras] স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন । এই চুক্তির শর্ত অনুসারে ইংরেজ ও মহীশূর পরস্পরের বিজিত স্থানসমূহ প্রত্যর্পণ এবং বন্দি বিনিময় করেন । আরও ঠিক হয়, অন্য কোনো শক্তি মহীশূর আক্রমণ করলে ইংরেজগণ মহীশূরকে সাহায্য দানে বাধ্য থাকবেন । এই ভাবেই প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের অবসান হয় ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) Emptyদ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ [Second Anglo-Mysore War]

more_horiz


☼ দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ [Second Anglo-Mysore War] : প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত মাদ্রাজ চুক্তির (Madras Treaty) শর্ত ইংরেজগণ পরবর্তীকালে পালন করেন নি । ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে মারাঠাগণ মহীশূর আক্রমণ করলে প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে স্বাক্ষরিত মাদ্রাজ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী হায়দার আলি ইংরেজ বাহিনীর কাছে সাহায্যের আবেদন করে । কিন্তু হায়দার আলির আবেদনে ইংরেজ বাহিনী কর্ণপাত করে নি এবং মহীশূরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নি । ফলে হায়দর আলি অসন্তুষ্ট হন । তারপর ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে মহীশূরে ফরাসিদের শক্তিশালী বাণিজ্যকেন্দ্র মাহে বন্দর ইংরেজরা দখল করলে ক্রুদ্ধ হায়দর এর প্রতিবাদ জানান ও ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ [Second Anglo-Mysore War] যুদ্ধ শুরু হয় । ওয়ারেন হেস্টিংস [Warren Hastings] তার কূটনীতির দ্বারা নিজাম ও মারাঠাদের হায়দর আলির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেন । তথাপি হায়দর আলি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যান । ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে পোর্টোনোভোর যুদ্ধে হায়দর আলি ইংরেজ সেনাপতি আয়ারকুটের হাতে পরাজিত হন এবং নেগাপত্তম, ত্রিঙ্কোমালি প্রভৃতি স্থান ইংরেজদের দখলে আসে । এই সময় হায়দর আলি ফারাসি সাহায্য চেয়ে পাঠান । তখন ফরাসি নৌ-সেনাপতি সাফ্রেনের অধীনে এক ফরাসি নৌবাহিনী হায়দর আলির সাহায্যে এগিয়ে আসেন । এক সংকটময় পরিস্থিতিতে হঠাৎ হায়দর আলির অকাল মৃত্যু হয় । তারপর তাঁর পুত্র টিপু সুলতান যুদ্ধ চালিয়ে যান । শেষ পর্যন্ত ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে টিপু সুলতান ও ইংরেজদের মধ্যে ম্যাঙ্গালোরের সন্ধি [Treaty of Mangalore] স্বাক্ষরিত হয় ও দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের অবসান ঘটে । ম্যাঙ্গালোরের সন্ধির শর্ত অনুযায়ী উভয় পক্ষই পরস্পরের বিজিত রাজ্য পরস্পরকে প্রত্যর্পণ করে । ঐতিহাসিক মহিবুল হুসেনের মতে এই ম্যাঙ্গালোর সন্ধি ছিল টিপু সুলতানের কাছে 'কূটনৈতিক জয়' । ম্যাঙ্গালোর সন্ধির শর্ত অনুযায়ী উভয় পক্ষই সম্মত হয় যে পরস্পরের বিরুদ্ধে শত্রুকে সাহায্য না করা ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
☼ তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ [Third Anglo-Mysore War]: ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে হায়দর আলির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপু সুলতান দ্বিতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের নেতৃত্ব হাতে নেন । ইংরেজদের প্রতিহত করাই ছিল টিপু সুলতানের একমাত্র লক্ষ্য । কিন্তু এর জন্য তাঁকে একা হাতেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল, কারণ এই সময় কোনো ভারতীয় শক্তি টিপু সুলতানকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি । বরং অন্য দিকে কিছু ভারতীয় শক্তি ইংরেজদের সাহায্য করেছিল । সেজন্য টিপু সুলতান কে একসঙ্গে ইংরেজ এবং কিছু ভারতীয় শক্তি, যেমন হায়দরাবাদের নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছিল । ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য টিপু সুলতান ফরাসিদের কাছে সাহায্য চেয়ে দূত পাঠিয়েছিলেন । তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের প্রাক্কালে ইংরেজরা হায়দরাবাদের নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে আঁতাত করে । একদা ত্রিবাঙ্কুরের রাজা ইংরেজদের সহযোগী ছিলেন । স্বাধীনচেতা টিপু সুলতান ইংরেজদের প্ররোচনামূলক কার্যকলাপে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের আশ্রিত ত্রিবাঙ্কুর রাজ্য আক্রমণ করলে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের [Third Anglo-Mysore War] যুদ্ধের সুত্রপাত হয় । এই যুদ্ধে ইংরেজ, মারাঠা ও নিজাম এই ত্রিশক্তি টিপু সুলতানের সঙ্গে যুদ্ধ করে । টিপু সুলতান একাই ১৭৯০ থেকে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুই বছর ধরে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যান । কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হতে পারেন নি । দীর্ঘদিন তাঁর রাজধানী অবরোধের পর টিপু সুলতান ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ও ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি [Treaty of Seringapatam] স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন । এই সন্ধির মাধ্যমে টিপু সুলতান ও কর্ণওয়ালিশ এই যুদ্ধের অবসান ঘটান ।

☼ শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি [Treaty of Seringapatam]: ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে টিপু সুলতান ও ইংরেজ কোম্পানির মধ্যে এই সন্ধি স্বাক্ষারির হয় । শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির শর্ত অনুসারে টিপু তাঁর রাজ্যের অর্ধেক অংশ ইংরেজ, নিজাম ও মারাঠাদের ছেড়ে দিতে হয়, যার মধ্যে ডিন্ডিগুল, বরমহাল, কুর্গ ও মালাবার অঞ্চল কোম্পানির ভাগে পড়ে । এই সন্ধির ফলে টিপুর রাজ্যের অর্ধেক অংশ তাঁর হস্তচ্যুত হয় এবং দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের রাজ্য, শক্তি ও প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির শর্ত অনুসারে:

(১) টিপু সুলতান তাঁর রাজ্যের অর্ধাংশ ছেড়ে দেন, এবং তা ইংরেজ, মারাঠা ও নিজাম নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেই ।

(২) যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসাবে টিপু সুলতানকে ৩৩০ লক্ষ টাকা ইংরেজদের দিতে বাধ্য হন ।

(৩) ক্ষতিপূরণের জামিনস্বরূপ টিপু তাঁর দুই কিশোর পুত্রকে ইংরেজদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন । যতদিন ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয় নি, ততদিন ওই দুই পুত্র ইংরেজ শিবিরে ছিল ।

(৪) কুর্গের রাজাকে টিপু সুলতান স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হন । তারপর রাজ্যটি ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় ।

(৫) উভয় পক্ষই পরস্পর বন্দী প্রত্যর্পণ করেছিলেন । মহিশূরের শস্যভান্ডার ডিন্ডিগাল ও রায়্চুর দোয়াব হাতছাড়া হওয়াতে টিপু সুলতানের অপূরনীয় আর্থিক ক্ষতি হয় ।

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির ফলে:

(১) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দাক্ষিণাত্যের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয় ।

(২) মহীশূর রাজ্যের অস্তিত্ব বজায় থাকলেও তার পতনের সম্ভাবনা একরকম অনিবার্য হয়ে ওঠে।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
☼ অধীনতামূলক মিত্রতা [Subsidiary Alliance]:- গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি [Lord Wellesley] অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন । তিনি একজন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী শাসক ছিলেন । ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের জন্য লর্ড ওয়েলেসলি যে সকল নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (Subsidiary Alliance) । অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মূল কথা হল যে— কোন দেশীয় রাজ্যের রাজা ইংরেজদের সঙ্গে মিত্রতা চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারবেন । দেশীয় রাজাদের অভ্যন্তরীণ অধিকার ক্ষুন্ন না করে তাঁদের নিজেদের অধীনে রাখাই হল অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মূল কথা । কোনো দেশীয় রাজা এই নীতি গ্রহণ করলে তাঁকে কতকগুলি শর্ত পালন করতে হত, যেমন—

১) অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ দেশীয় রাজাগুলিকে কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করতে হত ।

২) সংশ্লিষ্ট দেশীয় রাজ্যগুলিতে একদল ইংরেজ সৈন্য এবং একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট রাখতে হত ।

৩) সৈন্য বাহিনীর ব্যয়নির্বাহের জন্য মিত্রতাবদ্ধ রাজ্যকে নগদ টাকা বা রাজ্যের একাংশ ছেড়ে দিতে হত ।

৪) কোম্পানির বিনা অনুমতিতে অপর কোনো শক্তির সঙ্গে মিত্রতা বা যুদ্ধবিগ্রহ করা যেত না । অর্থাৎ মিত্র রাজ্যগুলির বৈদেশিক নীতি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্ধারণ করত ।

৫) চুক্তিবদ্ধ রাজ্যে ইংরেজ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত ইউরোপীয়কে তাড়িয়ে দিতে হত ।

৬) এই সব বশ্যতার বিনিময়ে কোম্পানি সেই রাজ্যকে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, বৈদেশিক আক্রমণ এবং অন্যান্য বিপদ থেকে রক্ষা করত ।

১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর সর্বপ্রথম হায়দ্রাবাদের নিজাম ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেন । এরপর অযোধ্যা, তাঞ্জোর, সুরাট, পুণা প্রভৃতি রাজ্যগুলি এই নীতিতে আবদ্ধ হয়ে ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় । ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও বেসিনের সন্ধির মাধ্যমে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন । টিপু সুলতানের পতনের পর মহীশূরের পূর্বতন হিন্দু রাজবংশও কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করে নেয় । পরবর্তী সময়ে সিন্ধিয়া, ভোঁসলে ও হোলকার অধীনতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ।

এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, অধীনতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দেশীয় রাজারা চিরদিনের মতো নিজেদের স্বাধীনতা বিসর্জন দেন । লর্ড ওয়েলেসলির রাজত্বকালে ইংরেজ কোম্পানি সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে দাক্ষিণাত্যের মহীশূর রাজ্য জয় করে । এছাড়া এই সময়কালে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির মাধ্যমে একে একে হায়দ্রাবাদের নিজাম রাজ্য, অযোধ্যা, সুরাট, পুণা, সিন্ধিয়া, ভোঁসলে, হোলকার রাজ্য এবং কূটনীতি ও ছলনার মাধ্যমে তাঞ্জোর, সুরাট ও কর্ণাটক রাজ্য কোম্পানির হস্তগত হয় ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
☼ চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ [Fourth Anglo-Mysore War] : শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির অপমানজনক শর্ত টিপু সুলতান ভুলতে পারে নি । কিছুদিনের মধ্যে আবার তিনি ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপে ব্যস্ত হয়ে পারেন । টিপু সুলতান মরিশাসের ফরাসি শাসক ম্যালারটিকের কাছে, কাবুলের অধিপতি জামান শাহের কাছে, তুরস্কের সুলতানের কাছে এবং ফ্রান্সের বিপ্লবী সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে দূত পাঠান । এছাড়া আরব, কনস্ট্যানটিনোপল, ভার্সাই প্রভৃতি স্থানে ইংরেজবিরোধী সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন । ফ্রান্সে ন্যাশনাল কনভেনশন টিপু সুলতানের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করলেও টিপু ফ্রান্সের জ্যাকোরিন ক্লাবের সদস্য হন । টিপু সুলতানের এই সব কার্যকলাপে তৎকালীন ভারতের বড়লাট লর্ড ওয়েলেসলির [Lord Wellesley] মনে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল । লর্ড ওয়েলেসলি একজন ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন । হায়দরাবাদের নিজাম প্রথমেই ওয়েলেসলি প্রবর্তিত ‘অধীনতামূলক মিত্রতা’ নীতি গ্রহণ করেন । তারপর অযোধ্যা, তাঞ্জোর, সুরাট, পুণা প্রভৃতি রাজ্যগুলি এই নীতি গ্রহন করে ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় । গভর্নর জেনারেল হিসাবে ভারতের এসে তিনি প্রথমেই টিপু সুলতানের ক্ষমতা চিরকালের মত খর্ব করার জন্য মনস্থির করে ফেলেন । তিনি প্রথমে টিপু সুলতানকে ‘অধীনতামূলক মিত্রতা’ নীতি গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান । টিপু এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন । ফলে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সেনাবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে মহীশূর রাজ্য আক্রমণ করে । এই যুদ্ধ চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ [Fourth Anglo-Mysore War] বা শ্রীরঙ্গপত্তমের যুদ্ধ নামে পরিচিত । এই যুদ্ধ মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী হয়েছিল । কয়েকটি যুদ্ধে পরাজয়ের পর টিপু সুলতান শ্রীরঙ্গপত্তমের যুদ্ধে বীরের মতো যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দেন । তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র মহীশূরের পতন ঘটে মহীশূরের বেশিরভাগ অংশ ইংরেজদের দখলে চলে আসে ।

মূল্যায়ন:-

ওপরের যুদ্ধ ও সন্ধিগুলি পর্যালোচনা করে অনেক ঐতিহাসিক টিপু সুলতানের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন । কিন্তু এই সব দুর্বলতা সত্ত্বেও মহীশূরের পতনের জন্য টিপু সুলতানকে এককভাবে দায়ী করা উচিত নয়, কারণঃ-

১) টিপু সুলতান মারাঠা, নিজাম ও ফরাসিদের সাহায্য পাননি;

২) দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধে তাঁর রাজ্যে সৈন্য ও অর্থসংকট চরম আকার ধারণ করে;

৩) তিনি লর্ড ওয়েলেসলির মতো চরম সাম্রাজ্যবাদীর সন্মুখীন হয়েছিলেন । তবু তিনি আপস রফায় না গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো মৃত্যুবরণ করেন । ব্রিটিশরা মহীশূর অধিকার করলেও এক্ষেত্রে তাদের উদ্বিগ্নতা ও অস্থিরতার শেষ ছিল না । সে বিচারে টিপু সুলতানকে একজন প্রকৃষ্ট প্রতিবাদী শক্তি রূপে চিহ্নিত করা যায় । এই বক্তব্যের যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায় ডঃ মহিবুল হাসানের এই মন্তব্যে ‘Tipu ranks among the greatest rulers India has produced’।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum