Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.


Churn : Universal Friendship
Welcome to the CHURN!

To take full advantage of everything offered by our forum,
Please log in if you are already a member,
or
Join our community if you've not yet.

Churn : Universal Friendship
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Churn : Universal Friendship Log in

PEACE , LOVE and UNITY


প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

2 posters

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 Emptyপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
First topic message reminder :

প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬)



Topic 1

Expansion of British Empire in India (no detailed narratives of battles are required. Stages of imperial expansion should be clearly stated )-different stages (1765-1856 A.D.) Foundation of the colonial administration (gradual growth of colonial structure of administration is to be reflected)

☼ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার

► দক্ষিণ ভারত :

► প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধঃ

►দ্বিতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধঃ

►তৃতীয় ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ ও মারাঠা শক্তির পতনঃ

►রবার্ট ক্লাইভের পর ভেরেলস্ট

►প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ :

►দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ :

►তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ:

►শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি:

►অধীনতামূলক মিত্রতা:-

►চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

☼ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার :

►সগৌলির সন্ধি:-

►প্রথম ব্রহ্ম যুদ্ধ:

►প্রথম আফগান যুদ্ধ:

►ইঙ্গ-শিখ সম্পর্ক:

►অমৃতসরের সন্ধি:

►দ্বিতীয় ব্রহ্মযুদ্ধ:

☼ লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি:-

►দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব:

►দ্বৈত শাসন:

☼ কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার সূচনা:

► হেস্টিংসের সংস্কার:-

►কর্নওয়ালিসের সংস্কার:-

►সিভিল সার্ভিস:-

►সেনাবাহিনী:-

►পুলিশী ব্যবস্থা:-

►বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন:-

►আইনের শাসন:-

►চিরস্থায়ী মিত্রতা চুক্তিঃ

►ত্রিশক্তি মৈত্রী চুক্তিঃ

► গুজরাটের যুদ্ধ :


### তোমার সাহায্যে আমরা পাশে আছি, তুমি এগিয়ে যাও।
# প্রিয় ছাত্র - ছাত্রী যদি কোথাও কোনো ভুল থেকে থাকে তবে মনে রাখবে সেটা অনিচ্ছাকৃত। নিচে কমেন্ট করো। ঠিক করে দেওয়া হবে।

CLASS TEN HISTORY wbbse
#Madhyamik #2020 #HISTORY #Suggestions
#ইতিহাস #মাধ্যমিক

Last edited by Admin on Sat Sep 12, 2020 11:00 am; edited 1 time in total

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 Emptyভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার

more_horiz

ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার



☼ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার : ১৭৯৯ ও ১৮১৮ সালের মধ্যে মহীশূর ও মারাঠা শক্তির অবসান ঘটলে দক্ষিণ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হয় । ভুপাল, মালব, বুন্দেলখন্ড, এমকি জয়পুর, যোধপুর, উদয়পুরের রাজারা ইংরেজদের অধীনতা স্বীকার করে বার্ষিক করদানে স্বীকৃত হন । উত্তর ভারতের গোর্খারা ও মধ্য ভারতের পিন্ডারী দস্যুদল এইসময় ব্রিটিশ শাসককে উদ্বিগ্ন করে রেখেছিল । নেপাল ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে কোনো সুস্পষ্ট সীমারেখা না থাকায় উভয়ের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ লেগে থাকত । ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড হেস্টিংস গোর্খাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । এই যুদ্ধ ১৮১৪ থেকে ১৮১৬ সাল পর্যন্ত দুই বছর স্থায়ী হয়েছিল । অক্টারলোনির নেতৃত্বে ইংরেজ সেনাবাহিনী গোর্খাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে গোর্খাদের পরাজিত করেন । গোর্খা সেনাপতি অমর বাহাদুর ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ও ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে সগৌলির সন্ধি স্বাক্ষর করেন ।

☼ সগৌলির সন্ধি[Treaty of Sagauli]:- নেপাল যুদ্ধের পর ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজা ও ইংরেজ কোম্পানির মধ্যে এই সগৌলির সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় । উত্তর ভারতের গোর্খারা ব্রিটিশ শাসককে উদ্বিগ্ন করে রেখেছিল । নেপাল ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে কোনো সুস্পষ্ট সীমারেখা না থাকায় উভয়ের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ লেগে থাকত । ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দে লর্ড হেস্টিংস গোর্খাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । এই যুদ্ধ ১৮১৪ থেকে ১৮১৬ সাল পর্যন্ত দুই বছর স্থয়ী হয়েছিল । অক্টারলোনির নেতৃত্বে ইংরেজ সেনাবাহিনী গোর্খাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে গোর্খাদের পরাজিত করেন । গোর্খা সেনাপতি অমর বাহাদুর ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ও ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে এই সন্ধি স্বাক্ষর করেন । সগৌলির সন্ধির শর্ত অনুসারে ইংরেজ কোম্পানি সিমলা, কুলু, মানালি, মুসৌরি, আলমোড়া, নৈনিতাল, রানিখেত, কৌসানি প্রভৃতি রমণীর পার্বত্য শৈলাবাস অঞ্চল লাভ করে এবং নেপালের রাজধানী কাটমান্ডুতে একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট রাখার ব্যবস্থা করা হয় । অর্থাৎ এই সন্ধির ফলে ব্রিটিশ পক্ষের রাজ্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায় ।

☼ প্রথম ব্রহ্ম যুদ্ধ [First Anglo-Burma War]:  লর্ড ময়রা পিন্ডারী দস্যুদলকে দমন করে খ্যাতি লাভ করেন । তিনি মারকুইস অফ হেস্টিংস নামে পরিচিত হয়েছিলেন । তাঁর আমলে বর্মীরা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাজ্যসীমা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন । ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মদেশের রাজা ইংরেজদের কাছ থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মুর্শিদাবাদ, এবং কাশিমবাজার দাবি করেন । ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে বর্মীসেনা আসাম অধিকার করে ও পরে চট্টগ্রামে এসে উপস্থিত হলে সমগ্র বাংলার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় । এসময়ে হেস্টিংস স্বদেশে ফিরে যান ও লর্ড আমহার্স্ট তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন । লর্ড আমহার্স্টের আমলে ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা থিবোর মধ্যে প্রথম ব্রহ্ম যুদ্ধ হয় । ইংরেজ সেনা আরাকান ও মণিপুর দুদিক থেকে অগ্রসর হয়ে বর্মীসেনাদের পরাজিত ও ছত্রভঙ্গ করে দেন । ইংরেজ সেনাপতি ক্যাম্বেল ইয়ান্দাবু নামক স্থানে উপস্থিত হন । এই অবস্থায় ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মরাজ ইংরেজদের সঙ্গে ইয়ান্দাবু সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন ।

ইয়ান্দাবু সন্ধির শর্তানুসারে ব্রহ্মরাজ

(১) আরাকান ও টেনাসেরিম ইংরেজদের হাতে ছেড়ে দেন,

(২) আসাম, কাছাড় ও জয়ন্তিয়ায় হানা না দেবার প্রতিশ্রুতি দেন

(৩) মনিপুরের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেন এবং যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি টাকা দিতে স্বীকৃত হন ।

☼ প্রথম আফগান যুদ্ধ [First Anglo-Afgan War]: ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ইয়ান্দাবুর সন্ধির ফলে আসাম, কাছাড়, মণিপুর ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় । লর্ড আমহার্স্টের পরবর্তী দুই গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেণ্টিঙ্ক ও চার্লস মেটকাফের আমলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বেশি বিস্তার লাভ করে নি । মেটকাফের পরবর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ডের সময় ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আফগান যুদ্ধ হয় । এই যুদ্ধে আফগানদের হাতে ইংরেজদের শোচনীয় পরাজয়ে ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্মান ও প্রতিপত্তি দুইই ক্ষুন্ন হয়েছিল । আফগানদের হাতে ইংরেজদের শোচনীয় পরাজয়ের পর লর্ড অকল্যান্ড স্বদেশে ফিরে যান ও লর্ড এডেনবরা তাঁর জায়গায় গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হয়ে আসেন । লর্ড এডেনবরা আফগানদের বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী পাঠিয়ে কাবুল পুনর্দখল করেন ও আফগানদের উপর পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ নেন । তবুও কিন্তু আফগানদের পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হয় নি । তখন দোস্ত মহম্মদকে পুনরায় সিংহাসনে স্থাপন করে ইংরেজরা আফগানিস্তান থেকে সরে আসেন । আফগানিস্তানে ব্যর্থতার পর ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড এডেনবরা ইংরেজ সেনাপতি চার্লস নেপিয়ারের সহায়তায় সিন্ধুদেশের আমীরদের পরাজিত করে সিন্ধুপ্রদেশ অধিকার করেন ।            
☼ ইঙ্গ-শিখ সম্পর্ক [Anglo-SIkh Relationship]: দশম শিখ গুরু গোবিন্দ সিং -এর আমলে শিখগণ এক সামরিক জাতিতে পরিণত হয়েছিল । গুরু গোবিন্দ সিংহের মৃত্যুর পর বান্দা বাহাদুর নামে এক বিশ্বস্ত নেতা সংঘবদ্ধ শিখদের নিয়ে মোগলদের বিরুদ্ধে তীব্র সংগ্রাম চালিয়ে যান । কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট ফারুকশিয়ারের হাতে পরাজিত ও নিহত হন । তাঁর মৃত্যুর পর শিখরা উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাবে আবার ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় । শিখরা সমগ্র শিখ অঞ্চলটি বারোটি মিসল বা দলে ভাগ করে নিয়ে এক একটি মিসল -এর নায়ক হয়ে বসেন । এরূপ একটি মিসল সুকেরচকিয়ার নায়ক ছিলেন মহাসিংহ । পিতা মহাসিংহের অকাল মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রঞ্জিত সিংহ মাত্র বার বছর বয়সে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করেন । কাবুলের রাজা জামান শাহ আবদালী ভারত আক্রমণ করলে তাঁকে সাহায্যের পুরস্কার স্বরূপ রঞ্জিত সিংহকে লাহোরের শাসন কর্তা নিযুক্ত করেন ও তাঁকে 'রাজা' উপাধি দেন । তখন ইংরেজরা রঞ্জিত সিংকে সম্মান জানিয়ে ইউসুফ আলিকে লাহোরে পাঠান । এরপর রঞ্জিত সিংহ মীরওয়াল ও নারওয়াল স্থান দুটি অধিকার করে জম্মুতে অভিযান করেন । জম্মুর রাজা রঞ্জিতের বশ্যতা স্বীকার করে তাঁকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ প্রচুর অর্থ দান করেন । ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি অমৃতসর শহর অধিকার করলে তাঁর প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায় । ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে 'লাহোরের সন্ধি' দ্বারা ব্রিটিশরা শিখবিরোধী কোনো কাজ না করার কথা বলেন । কিন্তু রঞ্জিত সিং -এর শক্তি বৃদ্ধিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে ফরাসি ভীতির মিথ্যা অজুহাতে লর্ড মিন্টো চার্লস মেটকাফকে পাঠিয়ে ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দ রঞ্জিত সিং কে 'অমৃতসরের সন্ধি' স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন । আর্মহাস্টের আমলে ইঙ্গ-শিখ সম্পর্ক ঠিক থাকে । কিন্তু বেন্টিঙ্ক ও অকল্যান্ডের আমলে এই সম্পর্কে চিড়  ধরেছিল ।                  

☼ অমৃতসরের সন্ধি [Treaty of Amritsar]:  পাঞ্জাবের বিবাদমান ছোটো মিসল গুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে পাঞ্জাবে এক শক্তিশালী শিখ রাজ্য গড়ে তোলাই ছিল রঞ্জিত সিংহের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য । এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তিনি ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে অমৃতসর দখল করে শতদ্রু নদীর পূর্ব তীরের শিখ রাজ্যগুলি অধিকার করতে উদ্দ্যোগী হন । এতে ওই সমস্ত শিখ রাজ্যের নায়ক গণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ইংরেজদের শরণাপন্ন হন । ইংরেজ গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টো রঞ্জিত সিংহের সঙ্গে বোঝাপড়ার জন্য চার্লস মেটাকাফকে তাঁর দরবারে পাঠান । ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের মহারাজা রণজিৎ সিংহ এবং ইংরেজদের পক্ষে গভর্নর-জেনারেল লর্ড মিন্টোর প্রতিনিধি হিসাবে চার্লস মেটকাফ -এর মধ্যে অমৃতসরের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় । অমৃতসরের সন্ধির শর্ত অনুসারে ঠিক হয় যে, শতদ্রু নদীর পূর্বদিকে রণজিৎ সিংহ আর রাজ্যবিস্তার করতে পারবেন না । অর্থাৎ তাঁকে পশ্চিম পাঞ্জাবের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই রাজ্যবিস্তার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে । অমৃতসরের সন্ধির মাধ্যমে ইংরেজরা শতদ্রু নদীর পূর্বতীরে রণজিৎ সিংহের রাজ্যবিস্তার সম্পূর্ণভাবে রোধ করে ছিল । এই সন্ধির ফলে রণজিৎ সিংহের মর্যাদাহানি হয় এবং ব্রিটিশ পক্ষের রাজ্য ও প্রভাব বৃদ্ধি পায় । অমৃতসরের চুক্তির ফলে রণজিৎ সিংহের পক্ষে শতদ্রু নদীর পূর্বতীরে রাজ্য বিস্তারের আর কোনো সুযোগ রইল না । যাই হোক, অমৃতসরের সন্ধির পরবর্তী সময়ে তিনি মুলতান, ঝঙ্গ, কাশ্মীর, ডেরা ইস্‌মাইল খাঁ, ডেরা গাজি খাঁ ও পেশোয়ার অধিকার করেন । যার ফলে তাঁর সাম্রাজ্য লাহোর থেকে সিন্ধু পর্যন্ত বিস্তৃত হয় ।

অমৃতসরের সন্ধির শর্তগুলি ছিল-

১) শতদ্রু নদীকে রণজিৎ সিংহের রাজ্যের পূর্ব সীমারেখা বলে স্থির হয়  ।

২) শতদ্রু নদীর পূর্ব তীরের রাজ্যগুলির ওপর ইংরেজদের আধিপত্য স্বীকার করে নেওয়া হয় ।

৩) উভয় পক্ষ ‘স্থায়ী মৈত্রী’ বজায় রাখতে স্বীকৃত হন ।

পূর্বদিকে রাজ্যবিস্তারে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রঞ্জিত সিংহ পশ্চিম দিকে রাজ্য বিস্তারে সচেষ্ট হন । ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি আফগানদের পরাস্ত করে আটক অধিকার করেন । ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি মুলতান, কাশ্মীর ও পেশোয়ার জয় করে তাঁর সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইংরেজদের সঙ্গে রঞ্জিত সিংহের সদ্ভাব বজায় থাকলেও নানা বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মন কষাকষি চলছিল । ইতিমধ্যে রাশিয়া পারস্যে অধিকার বিস্তার করলে ভারতের নিরাপত্তা সম্পর্কে ইংরেজ কর্তৃপক্ষ আশঙ্কিত হন । এছাড়া সিন্ধুদেশের রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব সম্পর্কে ইংরেজরা ক্রমে আগ্রহী হয়ে উঠছিলেন । এমতাবস্থায় তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ক রাশিয়ার অগ্রগতি রোধ করার উদ্ধেশ্যে রঞ্জিত সিংহ ও সিন্ধুর আমীরদের প্রতি ঘনিষ্টতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন । এর ফলশ্রুতিতে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে কাবুলের সিংহাসনচ্যুত রাজা শাহসুজা, রঞ্জিত সিংহ ও ইংরেজদের মধ্যে 'ত্রিশক্তি মৈত্রী চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয় । ওই বছরই রঞ্জিত সিংহের জীবনাবসান হয় ।  

☼ ত্রিশক্তি মৈত্রী চুক্তিঃ আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে রণজিৎ সিংহ অত্যন্ত কূটনৈতিক চাতুর্যের পরিচয় দেন । ইংরেজদের পরোক্ষ সহযোগিতায় সাময়িকভাবে আফগানিস্তানের উপর নিজের আধিপত্য কায়েমে সক্ষম হলেও ইংরেজদের হস্তক্ষেপের ফলে ১৮৩৯ সালে শাহসুজা, ইংরেজ ও রণজিৎ সিংহের মধ্যে 'ত্রিশক্তি মৈত্রী চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয় । অবশেষে ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে রণজিৎ সিংহের মৃত্যু হয় । এইভাবে প্রতিটি ব্যাপারেই ইংরেজদের সঙ্গে আপসের মাধ্যমে রণজিৎ সিংহ নিজের অস্তিত্বকে বজায় রেখে চলেছিলেন । কারণ সমসাময়িক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রণজিৎ সিংহ সঠিকভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, অমিতশক্তিশালী ব্রিটিশ শক্তির সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি কোনোদিনই জয়লাভ করতে পারবেন না । তাই বাস্তবোচিত নীতি গ্রহণ করে তিনি নিজের বুদ্ধিদীপ্ততা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন ।

মূল্যায়নঃ ইংরেজদের সঙ্গে রণজিৎ সিংহের সম্পর্ক কেমন ছিল তা বিশ্লেষণ করেত গিয়ে প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ডঃ নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহ বলেছেন যে, ‘ইঙ্গ-শিখ মৈত্রীর ক্ষেত্রে রণজিৎ সিংহ ছিলেন ঘোড়া এবং ইংরেজরা ছিলেন সেই ঘোড়ার চালক’ । বস্তুত রণজিৎ সিংহ ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে শিখ রাজ্যের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা করে যেতে পারেননি ।

☼ প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ [First Anglo-SIkh War]: মহারাজ রঞ্জিত সিংহের মৃত্যুর পর পাঞ্জাবে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে রণজিৎ সিংহের স্ত্রী রানী ঝিন্দন তাঁর নাবালক পুত্রকে সিংহাসনে বসিয়ে নিজে তার অভিভাবিকা রূপে রাজ্যশাসন করতে শুরু করেন । কিন্তু রাজ শক্তির দুর্বলতার সুযোগে খালসা সৈন্যদল বিদ্রোহী হয়ে উঠে ।  তখন রানী উপায়ন্তর না দেখে তাদের ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করেন । এই ব্যবস্থা অমৃতসর চুক্তির পরিপন্থী ছিল । ফলসরূপ প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ শুরু হয় । শিখরা পর পর কয়েকটি যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের সঙ্গে লাহোরের সন্ধি করতে বাধ্য হন । সন্ধির শর্তানুসারে পাঞ্জাবের একাংশ এবং কাশ্মীর রাজ্যটি ইংরেজদের ছেড়ে দিতে হয় । দলীপ সিং -এর অভিভাবক হন লাল সিং আর ঝিন্দন চুনার দুর্গে বন্দি হন ।

☼ দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ [Second Anglo-SIkh War]: শিখগণ লাহোর সন্ধির অপমানজনক শর্তের কথা ভুলতে না পেরে দ্বিতীয়বার বিদ্রোহী হয়ে ওঠলে দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধ শুরু হয় । লর্ড ডালহৌসি কাল বিলম্ব না করে শিখদের বিরুদ্ধে ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে চিলিয়ানওয়ালা [Battle of Chilianwala] ও গুজরাটের যুদ্ধে লিপ্ত হন । এই যুদ্ধে তিনি শিখদের সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে পাঞ্জাবের নাবালক রাজা দলীপ সিংহকে অপসারিত করে পাঞ্জাব অধিকার করে নেন । সেই সঙ্গে লাহোরে একজন ব্রিটিশ প্রতিনিধি নিযুক্ত হন । এর ফলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সীমা উত্তর-পশ্চিমে আফগান সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় ।    

গুজরাটের যুদ্ধ ফল :-


(১) এই যুদ্ধে শিখরা চুড়ান্তভাবে পরাজিত হয়;

(২) শিখ খালসা বাহিনী ভেঙে দেওয়া হয়;

৩) শিখ মহারাজা দলীপ সিংহ সিংহাসনচ্যুত হয়ে লন্ডনে নির্বাসিত হন ।

৪) রণজিৎ সিংহের প্রতিষ্ঠিত শিখরাজ্যের পতন ঘটে;

৫) সমগ্র পাঞ্জাব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাম্রাজ্যভুক্ত হয় এবং ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আফগানিস্থানের সীমান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।

☼ দ্বিতীয় ব্রহ্মযুদ্ধ: পূর্বদিকে ব্রহ্মরাজ থিবো ইয়ান্দাবুর সন্ধি অমান্য করে ব্রহ্মদেশে ইংরেজ বণিকদের ওপর উৎপীড়ন শুরু করলে লর্ড ডালহৌসি ক্ষতিগ্রস্থ ইংরেজ বণিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ ও দক্ষিণ ব্রহ্মদেশ দাবি করলে ব্রহ্মরাজ সে দাবি প্রত্যাখ্যান করেন । ফলে ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ব্রহ্মযুদ্ধ শুরু হয় । এই যুদ্ধে ব্রহ্মরাজ পরাজিত হয়ে প্রোম ও পেগু ইংরেজদের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন । এভাবে পূর্বে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যসীমা সালাউইন নদী পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয় । লর্ড ডাফরিনের সময় ১৮৮৫-১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় ইঙ্গ-ব্রহ্ম যুদ্ধে ব্রহ্মরাজ মিন্ডনকে পরাস্ত করে সমগ্র ব্রহ্মদেশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়  ।

Last edited by MainakR on Sat Apr 25, 2020 8:42 am; edited 1 time in total

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি :- লর্ড ডালহৌসি একজন পুরোপুরি আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন শাসক ছিলেন । তাঁর শাসনকালে (১৮৪৫ - ৫৬ খ্রিস্টাব্দ) ব্রিটিশ সাম্রাজ্য চরম সীমা লাভ করে । লর্ড ক্লাইভ, হেস্টিংস ও ওয়েলেসলি ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের যে চেষ্টা চালিয়েছিলেন ডালহৌসি তার যোগ্য উত্তরসুরি ছিলেন ।  ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি তিনটি নীতি অনুসরণ করেছিলেন । (ক) যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে রাজ্যবিস্তার (খ) স্বত্ব বিলোপ নীতির প্রয়োগ দ্বারা রাজ্য বিস্তার এবং (গ) কুশাসনের অজুহাতে রাজ্য জয় করা ।

স্বত্ববিলোপ নীতি (Doctrine of lapse) :-ডালহৌসির সাম্রাজ্যবিস্তার নীতির কুখ্যাত হাতিয়ার ছিল তাঁর এই স্বত্ববিলোপ নীতি । এই নীতির মূলকথা ছিল এই যে, ইংরেজদের আশ্রিত কোনো রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হবে এবং দত্তক পুত্রের বা কন্যার উত্তরাধিকার স্বীকার করা হবে না । ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করে রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হন । দত্তক প্রথা প্রয়োগ করার ব্যাপারে, তিনি দেশীয় রাজ্যগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেন, যথা- (১) কোম্পানির সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য   (২) কোম্পানির অধীন করদ রাজ্য এবং  (৩) স্বাধীন দেশীয় রাজ্য ।

লর্ড ডালহৌসি এক নির্দেশনামা ঘোষণা করে প্রথম শ্রেণির দেশীয় রাজ্যগুলিতে দত্তক-প্রথা নিষিদ্ধ করেন ।  দ্বিতীয় শ্রেণির রাজ্যে কোম্পানির অনুমতি ছাড়া দত্তক গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করেন এবং স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলিতে দত্তক প্রথা বহাল রাখেন । ডালহৌসির এই নির্দেশনামা স্বত্ববিলোপ নীতি (Doctrine of lapse)  নামে খ্যাত ।

(ক) সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজ কোম্পানি প্রোম ও পেগুসহ সমগ্র দক্ষিণ বার্মা ও পাঞ্জাব রাজ্য ও সিকিমের একাংশ অধিকার করে ।

(খ) স্বত্ববিলোপ নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে

(১) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সাতারা নামক দেশীয় রাজ্যকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।

(২) ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে স্বম্বলপুর,

(৩) ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাও -এর মৃত্যু হলে ডালহৌসি তাঁর দত্তক পুত্রকে মেনে নিতে রাজি হলেন না এবং ঝাঁসির রানির মতামতকে উপেক্ষা করেই এই রাজ্যটিকে দখল করা হয় ।

(৪) এরপর ১৮৫৫  খ্রিস্টাব্দে নাগপুরের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তাঁর রাজ্যটি গ্রাস করা হয়, এক্ষেত্রে ডালহৌসির যুক্তি ছিল এই যে, নাগপুর রাজ্যটি ইংরেজরাই সৃষ্টি করেছিল ।

(৫) পরবর্তীকালে ভগৎপুর, করৌলি, উদয়পুর, জৈৎপুর, বাগৎ প্রভৃতি রাজ্যগুলি একই কারণে গ্রাস করা হয়, যদিও উদয়পুর কোম্পানির সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য ছিল না ।

(গ) কুশাসনের অজুহাতে অযোধ্যা রাজ্য দখল করে নেয় ।

Last edited by Admin on Thu Apr 23, 2020 7:00 am; edited 1 time in total

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 Empty দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব

more_horiz
☼ দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব [Implication of the Acquisition of Diwani by the East India Company]: ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন রাজনৈতিক ও সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে । ১৭৬৫ সালে রবার্ট ক্লাইভ অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার সঙ্গে এলাহাবাদের সন্ধি স্বাক্ষর করেন । এই সন্ধির দ্বারা ক্লাইভ নবাবের কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা এবং কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশ দুটি লাভ করেন এবং কোম্পানি অযোধ্যায় বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে । নবাব ইংরেজদের সঙ্গে আত্মরক্ষামূলক মিত্রতা স্থাপন করেন । এলাহাবাদের সন্ধির দ্বারা রবাট ক্লাইভ কার্যত বাংলা ও বিহারকে ইংরেজ শাসনাধীনে রেখে অযোধ্যাকে ইংরেজদের আশ্রিত মিত্র রাজ্যে পরিণত করেন । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে দ্বিতীয় চুক্তি করেন । এই চুক্তির শর্তানুসারে অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার সঙ্গে কোম্পানির এলাহাবাদের সন্ধির সময় পাওয়া কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশ দুটি কোম্পানি শাহ আলমকে উপহার দেয় । বিনিময়ে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের ভার দেয় । এই ব্যবস্থাকে কোম্পানির দেওয়ানি লাভ বলে । ভারতের ইতিহাসে ইস্ট-ইন্ডিয়া-কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব অপরিসীম ।

১) এই সন্ধির ফলে কোম্পানি বাংলার প্রকৃত শাসকে পরিণত হয় এবং নবাব নামমাত্র শাসকে পরিণত হয় ।

২) পলাশির যুদ্ধের পর থেকে কোম্পানি বাংলায় যে ক্ষমতা লাভ করেছিল তার কোনো আইনগত বৈধতা ছিল না, কারণ এর প্রতি মোগল সম্রাটের অনুমোদন ছিল না । ১৭৬৫ সালের চুক্তির মাধ্যমে দেওয়ানি লাভ করার পর কোম্পানির ক্ষমতা লাভ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের অনুমোদন সাপেক্ষে আইনগত বৈধতা পায় ।

৩) এই সন্ধির ফলে মীরকাশিমের পক্ষে আর মাথা তুলে দাঁড়াবার সম্ভাবনা ছিল না ।

৪) কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পর থেকে নবাবের পদ বজায় থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী ছিল কোম্পানি । নবাবের কর্মচারীগণ ক্রমে কোম্পানির দ্বারা মনোনীত হয়ে কোম্পানির ইঙ্গিতেই কাজ করতে থাকে ।

৫) কোম্পানি সরাসরি বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করলে ফরাসি ও অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিগুলি ইংরেজদের অধিকার অস্বীকার করতে পারত । নবাবকে সিংহাসনে রেখে ইংরেজ কোম্পানি প্রমাণ করেছিল যে তারা নবাবের অধীনেই কাজ করছে । লর্ড ক্লাইভ এইভাবে আইনের ধোঁকা তৈরি করেন । কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে বাংলার শাসনব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং জনসাধারনের উপর শোষণ বৃদ্ধি পায় ।

Last edited by Admin on Thu Apr 23, 2020 7:02 am; edited 1 time in total

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 Emptyদ্বৈত শাসন [Implication of Diarchy in Bengal]

more_horiz

দ্বৈত শাসন [Implication of Diarchy in Bengal]:


১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করার পর কোম্পানির পক্ষে লর্ড ক্লাইভ বাংলার নবাব নজম-উদ্-দৌলাকে কাঙ্ক্ষিত ৫৩ লক্ষ টাকা দেবার বিনিময়ে রাজস্ব আদায় এবং দেওয়ানি মামলার ভার গ্রহণ করলেন । দেশ শাসনের দায়িত্ব আগের মতোই নবাবের হাতে রইলো । এই ব্যবস্থা ইতিহাসে দ্বৈতশাসন নামে পরিচিত । এই ব্যবস্থায় বাংলার নবাব সামান্য বৃত্তিভোগী কর্মচারীতে পরিণত হলেন । আর প্রচুর অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ইংরেজ কোম্পানি এদেশের প্রকৃত প্রভু হয়ে বসলেন । নবাব ও কোম্পানির মধ্যে এই ক্ষমতা ভাগাভাগির ফলে দেশশাসন ও প্রজাসাধারনের মঙ্গল বিধানের দায়িত্ব কেউই পালন করত না । ফলে বাংলায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দেয় । ক্ষমতাহীন নবাব সেই বিশৃঙ্খলা দমনে ব্যর্থ হন । কোম্পানি নিযুক্ত রাজস্ব বিভাগের দুই সহকারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়ের শোষণ ও অত্যাচারে প্রজাদের দুর্দশার অন্ত ছিল না । পরিণতিতে ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে বা ১১৭৬ বঙ্গাব্দে বাংলায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় । এটি ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত ।

যে সমস্ত কারণে ব্রিটিশরা ভারতের শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী ছিলেন:-

১) বাংলায় দ্বৈতশাসনের ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দিলে, দায়িত্বজ্ঞানহীন শাসনব্যবস্থা, শোষণ ও অত্যাচার প্রভৃতির কথা ইংল্যান্ডে প্রচারিত হলে ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ সমাজে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজেকর্মে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয় ।

২) বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের বিভীষিকাময় খবরে ইংল্যান্ডের শাসকবর্গ বিচলিত হয়ে পড়েন এবং উপলব্ধি করেন যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন আর নিছক একটি বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠান নয়, তখন তা একটি সাম্রাজ্য পরিচালনা করে, যা আরও সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা দরকার ।

৩) ইংল্যান্ডের শাসকবর্গের কাছে আরও খবর এসে পৌছায় যে, দ্বৈতশাসন বাংলার বিশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থাকে আরও বিশৃঙ্খল এবং দূর্নীতিগ্রস্থ করে তুলেছে । কারণ কোম্পানির ‘নায়েব-দেওয়ান’ ও কর্মচারীরা কোম্পানির স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে নিজেদের স্বার্থরক্ষাতেই ব্যস্ত থাকেন ।

৪) পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভের পর থেকেই কোম্পানির কর্মচারীরা দুর্নীতি, ঘুষ, ভেট এবং ব্যক্তিগত বাণিজ্যসহ নানান অবৈধ উপায়ে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করে দেশে ফিরে গিয়ে মহা আড়ম্বরের সঙ্গে বাস করতে থাকেন । ভারত থেকে আগত এইসব কর্মচারীদের দেখে ব্রিটিশরা ভারতের শাসনব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়ে পড়েন, এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রনে এনে এই সব অসৎ কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করার সু্যোগ খুঁজতে থাকেন । ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অনেক সদস্য নৈতিকতার প্রশ্ন তুলে বলেন যে, ‘কোম্পানির কার্যকলাপ ব্রিটিশ জাতির নামে কলঙ্ক লেপন করেছে, সুতরাং এখনই কিছু করা প্রয়োজন’ ।

৫) বাংলা তথা ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে সম্পদ লুট করেও কোম্পানির আর্থিক অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি, বরং তাদের আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকে । এই অবস্থায় কোম্পানিকে ‘ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড’ লোন দিতে অস্বীকার করে । কোম্পানি ব্রিটিশ সরকারের কাছে ১০ লক্ষ পাউন্ড ঋণের আবেদন জানায় । তাদের ঋণ দেওয়া যুক্তিযুক্ত হবে কিনা তা খতিয়ে দেখবার জন্য ব্রিটিশ সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে । তখন বাংলায় কোম্পানির শাসনের প্রকৃত চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে । এই কমিশনের রিপোর্ট থেকে ইংল্যান্ডের লোক জানতে পারে যে, কোম্পানি তথা বাংলার দুর্দশা বৃদ্ধির জন্য দায়ী ছিল কোম্পানির নায়েব-দেওয়ান ও অন্যান্য কর্মচারীদের সীমাহীন লাভের আকাঙ্খা ।

এই অবস্থায়ঃ-

১) ব্রিটিশরা ভারতের শানব্যবস্থার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে ।

২) বাংলার দৈত্ব শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ।

ব্রিটিশ জনগণের এই কোম্পানিবিরোধী মনভাবের ফলশ্রুতি হিসাবে:-

১) ১৭৭২ সালে বাংলায় দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটানো হয়,

২) ১৭৭৩ সালের রেগুলেটিং আইন এবং ১৭৮৪ সালের পিট -এর ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এবং কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি দমনে উদ্যোগ নেয় ।

Last edited by Admin on Thu Apr 23, 2020 7:03 am; edited 1 time in total

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 Emptyরেগুলেটিং আইন, পিটস আইন ও সনদ আইন

more_horiz

রেগুলেটিং আইন, পিটস আইন ও সনদ আইন



☼ রেগুলেটিং আইন [Regulating Act of 1773]:- দ্বৈত শাসন প্রবর্তনের কয়েক বছর পর ১৭৭৩ সালে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস হয়েছিল । কোম্পানির হাত থেকে ক্ষমতা ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে নেওয়ার এটিই ছিল প্রথম পদক্ষেপ । কোম্পানির নায়েব-দেওয়ান ও নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের বল্গাহীন ও অবাধ শোষণের ফলে সৃষ্ট ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের জন্য কোম্পানিকে দায়ী করে ব্রিটিশ সরকার কোম্পানির স্বেচ্ছাচারী কর্মচারীদের বরখাস্ত করতে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস হয়েছিল । এই আইনে তিনটি দিক ঠিক হয়েছিল :-

(ক) কোম্পানির অংশীদার ও পরিচালকদের মধ্যে সম্পর্ক ঠিক করা,

(খ) কোম্পানির উপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাধান্য বৃদ্ধি করা,

(গ) বোম্বে ও মাদ্রাজ কুঠির সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক নির্ণয় করা । এই দুই প্রেসিডেন্সিতে স্ব-পরিষদ থাকলেও এবং বাংলার গভর্নর জেনারেলের অধীনে ও নিয়ন্ত্রণে থেকেও, হেস্টিংসের কাউন্সিল বা উপদেষ্টা পর্ষদের চারজন সদস্যের মধ্যে বারওয়েল ছাড়া বাকি তিনজন যথা— ফিলিপ ফ্রান্সিস, ক্লেভারিব ও জনসন হেস্টিংসবিদ্বেষী ছিলেন । তাঁকে সাহায্য করার জন্য তিনজন বিচারপতি ছিলেন ।

(ঘ) রেগুলেটিং অ্যাক্টে ৫০০ পাউন্ডের পরিবর্তে ১০০০ পাউন্ড শেয়ারহোল্ডারদের ভোটদানের ক্ষমতা প্রদান করা হয় । তিন, ছয় ও দশ হাজার পাউন্ড শেয়ারহোল্ডারদের ভোটদানের ক্ষমতা যথাক্রমে দুই, তিন ও চারটি করে ভোট দানের অধিকার দেওয়া হয় ।

(ঙ) চার বছরের জন্য ডিরেক্টর নির্বাচন হয় ।                

☼ পিটস আইন [Pitt's India Act]:- ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ সরকার কোম্পানির কার্যকলাপের ওপর খুব একটা খুশি ছিলেন না । কোম্পানির ও তার কর্মচারীদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল এই পিটস আইনের প্রধান উদ্দেশ্য । ব্রিটিশ পার্লামেন্ট একাধিকবার আইন প্রণয়ন করে । ১৭৮৪ সালে পিটের ভারত শাসন আইন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য । ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ছোটো পিটের (Young Pit) নামানুসারে এই আইনটি রচিত হয় বলে একে পিটস অ্যাক্ট বা পিটস আইন বলা হয় ।

পিটস্‌ আইন অনুসারে:-

১) গভর্নর জেনারেল পরিষদের সদস্য সংখ্যা চার জন থেকে কমিয়ে তিন জন করা হয় ।

২) গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সির ওপর কলকাতা প্রেসিডেন্সির নিয়ন্ত্রন সুদৃঢ় করা হয় ।

৩) জরুরি প্রয়োজনে গভর্নর জেনারেলকে তাঁর পরিষদের মতামতকে অগ্রাহ্য করার অধিকার দেওয়া হয় ।

৪)  ছয় জন কমিশনার নিয়ে বোর্ড অফ কন্ট্রোল নামে একটি পরিষদ গঠিত হয় । 'কোর্ট অফ ডিরেক্টর্স' -এর কাজকর্মের ভার বোর্ড অফ কন্ট্রোলের ওপর অর্পণ করা হয় । 'সিক্রেট কমিটি' বা 'গোপন কমিটি' -এর মাধ্যমে বোর্ড অফ কন্ট্রোলের কাজকর্ম কোম্পানিকে জানাবার সুযোগ হয় ।  

৫) পিটের ভারত শাসন আইনে বলা হয়েছিল যে, কোম্পানির কর্মচারীগণ চাকরির পর ভারত থেকে দেশে ফিরে যাওয়ার পর কী পরিমাণ টাকা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন, তার হিসাব দাখিল করতে হবে ।

☼ চার্টার বা সনদ আইন:-


১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে কোম্পানির সঠিক অবস্থা নির্ধারণের জন্য চার্টার অ্যাক্ট পাস হয় ।

(ক) এই আইনে ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান ঘটানো হয় । ফলে ইউরোপের অন্যান্য বণিকদের কাছে ভারতের বাজার উন্মুক্ত হয় ।

(খ) আরও বলা হল, বাণিজ্য ও রাজস্ব খাতের আয়কে কোম্পানি আলাদা করে রাখবে । ওই খাতের অর্থ সামরিক ও বেসামরিক খাতে ব্যয় হবে ।

(গ) ভারতে সাহিত্যের, সাহিত্যিকদের ও বিজ্ঞানচর্চার জন্য সরকার এক লক্ষ টাকা দেবার ব্যবস্থা এই আইনে করা হয় ।

(ঘ) খ্রিস্টান মিশনারিদের ভারতে ধর্মপ্রচারের অনুমতি প্রদান করা হয় ।  

(ঙ) ভারতবর্ষে কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাণিজ্য চার্টার বা সনদ প্রদান করতে থাকে ।  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে এই সনদ প্রতি কুড়ি বছর অন্তর অন্তর নবীকরণ করতে হত যা ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে ভারতে কোম্পানির কাজকর্মের গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার সুযোগ দিত । একই সঙ্গে প্রতিটি সনদ আইনের মাধ্যমে কোম্পানির বিভিন্ন অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় ।

ব্রিটিশ পার্লামেন্ট কর্তৃক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দেওয়া বিভিন্ন সনদ আইনের মধ্যে ১৮১৩ এবং ১৮৩৩ সালের সনদ আইন দুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।[/color]

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz

কেন্দ্রীভূত শাসন ব্যবস্থার সূচনা [Growth of Centralised Administration]:



দ্বৈতশাসনের ফলে বাংলার অর্থনীতি যে একবারে ভেঙ্গে পড়ছিল ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতে এসেই তা প্রত্যক্ষ করেন । বাংলার ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য তিনি কতকগুলি ব্যবস্থা গ্রহন করেন ।

(১) প্রথমেই দ্বৈত-শাসনব্যবস্থা লোপ করেন ও শাসনব্যবস্থা কোম্পানির তত্বাবধানে নিয়ে আসেন ।

(২) রাজস্ব আদায়কারী অত্যাচারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করে কালেক্টর নামক এক কেন্দ্রীয় কর্মচারীর হাতে রাজস্ব আদায়ের ভার দেন ।

(৩) রাজকোষের উপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য তিনি রাজকোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় উঠিয়ে নিয়ে আসেন ।

(৪) হেস্টিংস রাজস্ব বিভাগের কাজকর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহের জন্য 'আমিনি কমিশন' নামে এক সংস্থা স্থাপন করেন । এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি কালেক্টর পদের পুনঃপ্রবর্তন করেন ।

(৫) কোম্পানির কর্মচারীরা যাতে বাদশাহ প্রদত্ত দস্তকের অপব্যবহার ও বিনা শুল্কে ব্যবসা না করতে পারেন সে দিকে হেস্টিংস কড়া নজর রাখতেন ।

(৬) কোম্পানির ব্যয় সংকোচনের জন্য তিনি দিল্লির মোগল বাদশাহ এবং বাংলার নবাবের বার্ষিক ভাতার পরিমাণ হ্রাস করেন ।

এই ভাবে ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা কলকাতার গভর্নর জেনারেল ও তাঁর সুপ্রীম কাউন্সিলের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, যা ভারতের কেন্দ্রীভূত প্রশাসন ব্যবস্থার সূচনা করে ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz

হেস্টিংসের সংস্কার [Warren Hastings' Reforms]:- [১৭৭২-৮৪ খ্রিস্টাব্দ]



হেস্টিংস যখন ভারতে আসেন তখন আদর্শ শাসনব্যবস্থার কোনো দৃষ্টান্ত তাঁর কাছে ছিল না । তাই শাসন ও রাজস্ব সংক্রান্ত নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে হেস্টিংসের শাসনকাল অতিবাহিত হয়েছিল । নিজ প্রতিভা ও সাংগঠানিক ক্ষমতার জোরে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থার যে রূপরেখা রচনা করে যান, প্রধানত তার উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ এক বলিষ্ঠ ও সুষ্ঠু কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন । পার্সিভ্যাল ও স্পীয়ারের মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলা যায়, "যদি ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন, তবে ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে সংগঠিত করে একটি কার্যকরী সংস্থায় পরিণত করেছিলেন, আর কর্নওয়ালিশ আপন চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী তাকে একটি সুসংহত ও সুনির্দিষ্ট রূপ দান করেছিলেন ।"

ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর আমলে

(১) প্রথমেই দ্বৈত-শাসনব্যবস্থা লোপ করা হয় ও শাসনব্যবস্থা কোম্পানির তত্বাবধানে নিয়ে আসেন ।

(২) রাজস্ব আদায়কারী অত্যাচারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করে কালেক্টর নামক এক কেন্দ্রীয় কর্মচারীর হাতে রাজস্ব আদায়ের ভার দেন ।

(৩) রাজকোষের উপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য তিনি রাজকোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন ।

(৪) হেস্টিংস রাজস্ব বিভাগের কাজকর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘আমিনি কমিশন’ নামে এক সংস্থা স্থাপন করেন । এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি কালেক্টর পদের পুনঃপ্রবর্তন করেন ।

(৫) কোম্পানির কর্মচারীরা যাতে বাদশাহ প্রদত্ত দস্তকের অপব্যবহার ও বিনা শুল্কে ব্যবসা না করতে পারেন সে দিকে হেস্টিংস কড়া নজর রাখতেন ।

(৬) কোম্পানির ব্যয় সংকোচনের জন্য তিনি দিল্লির মোগল বাদশাহ এবং বাংলার নবাবের বার্ষিক ভাতার পরিমাণ হ্রাস করেন ।

এই ভাবে ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা কলকাতার গভর্নর জেনারেল ও তাঁর সুপ্রীম কাউন্সিলের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, যা ভারতের কেন্দ্রীভূত প্রশাসন ব্যবস্থার সূচনা করে ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz

কর্নওয়ালিসের সংস্কার [Cornwallis' Reforms]:- [১৭৮৬-৯৩ খ্রিস্টাব্দ]




১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিশ ভারতে গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হয়ে আসার পর প্রথমে কোম্পানির কর্মচারীদের দুর্নীতি দমনের ব্যবস্থা করেন । তিনি মনে করতেন কম বেতন কর্মচারীদের দুর্নীতির একটি প্রধান কারণ । তাই তিনি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেন । কর্মচারীদের কাজে উৎসাহ প্রদান করার ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি চাকরির বিভিন্ন স্তর বন্টন এবং পদোন্নতির নীতি চালু করেছিলেন । শাসনকার্যে যাতে তাঁরা আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারেন, সেজন্য তাঁদের ব্যক্তিগত বেআইনি ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছিলেন । এভাবে কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সততা ও আনুগত্যের উপর জোর দিয়ে তিনি ভারতে কোম্পানির শাসনব্যবস্থাকে কিছুটা সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ।

কর্নওয়ালিসের আমল থেকে শাসনকার্যে নিযুক্ত সাধারণ রাজকর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত করে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থাকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে একদল শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, সুদক্ষ ও উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী নিয়োগ করার জন্য যে প্রথা চালু হয়, তা ভারতীয় সিভিল সার্ভিস নামে পরিচিত । লর্ড কর্নওয়ালিসই ছিলেন ভারতে ইংরেজ শাসনব্যবস্থা তথা ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থার প্রকৃত প্রবর্তক । সিভিল সার্ভিস প্রথার মাধ্যমে ব্রিটিশ-ভারতে এক শ্রেণির উচ্চশিক্ষিত, স্বাধীন চিত্ত, দক্ষ ও পরিশ্রমী সরকারি কর্মচারীর উদ্ভব ঘটে যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এদেশে ব্রিটিশ শাসন সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । এই জন্য ভারতীয় সিভিল সার্ভিসকে ব্রিটিশ রাজত্বের প্রধান স্তম্ভ বলা হত ।

ভারতে ইংরেজ শাসনব্যবস্থাকে দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য লর্ড কর্ণওয়ালিসের আমলে যে সমস্ত ব্যবস্থা গৃহিত হয় :-

(১) কোম্পানির প্রশাসনিক দপ্তর, বাণিজ্য দপ্তর এবং রাজস্ব দপ্তরকে পৃথক পৃথক দপ্তরে পরিণত করা হয় ।

(২) শাসনব্যবস্থা পরিচালনা ও অন্যান্য বিভিন্ন সম্পর্কে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের কর্মচারীদের দক্ষ করে তোলা হয় ।

(৩) সিভিল সার্ভিসসহ কোম্পানির সমস্ত কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা নিষিদ্ধ করা হয় ।

(৪) ঘুষ ও ভেট নেওয়াকে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেওয়া হয় ।

(৫) সিভিল সার্ভিসের কর্মচারীদের সচ্ছল ও সৎভাবে জীবনযাপনের জন্য তাদের পর্যাপ্ত বেতন ও সুবিধা বৃদ্ধি করা হয় ।

(৬) ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে ভারতে আধুনিক পুলিশিব্যবস্থার ও বিচারব্যবস্থার সূচনা হলেও লর্ড কর্নওয়ালিশের আমলে তা আরও পরিণত ও সুসংগঠিত হয়ে ওঠে । পরবর্তী সময়ে লর্ড কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত শাসন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলি এক সঙ্গে সংকলিত হয়, যা কর্নওয়ালিস কোড [Cornwallis Code] নামে পরিচিত ।

(৭) লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতীয় প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় 'আইনের শাসন' প্রবর্তন করেন । আইনের শাসন -এর অর্থ হল এই যে 'আইনের নিরপেক্ষতা' অর্থাৎ দেশের আইনের চোখে সবাই সমান - কেউই আইনের উর্ধ্বে নয় । একটি নির্দেশের মাধ্যমে তিনি জানিয়ে দেন, এখন থেকে জেলা কালেক্টরসহ সমস্ত সরকার কর্মচারীকে তাদের কৃতকর্ম ও অপরাধের জন্য জেলা আদালতে অভিযুক্ত করা যাবে । এমনকি ভারতীয় প্রজারা তাদের সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারবে । 'আইনের শাসন' দ্বারা লর্ড কর্নওয়ালিস তাদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারীদেরও আইনের শাসন মেনে চলতে বাধ্য করেছিলেন ।

(৮) ভারতীয়দের চরিত্র, সততা ও শাসন-দক্ষতা সম্বন্ধে লর্ড কর্নওয়ালিস খুব একটা উঁচু ধারনা পোষণ করতেন না, তাই শাসন বা বিচার বিভাগের কোনো উচ্চ ও মর্যাদাপূর্ণ পদে তিনি কোনো ভারতীয়কে নিয়োগ করেন নি । কর্নওয়ালিসের আমল থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার উচ্চ পদগুলিতে 'কেবল মাত্র ইউরোপীয় কর্মচারী নিয়োগ করার নীতি গ্রহন করা হয় ।

উপরোক্ত ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে বলা যায় যে, ভারতে ইংরেজ শাসনব্যবস্থার প্রবর্তনে লর্ড কর্নওয়ালিসের অপরিসীম অবদান ছিল ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz

সিভিল সার্ভিস [Indian Civil Service]:-


ভারতে কোম্পানি শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যাক্তিগত ব্যবসা করা এবং ঘুষ ও ভেট নেওয়া প্রভৃতি নানান দুর্নীতিমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে । লর্ড কর্নওয়ালিসের আমল থেকে শাসনকার্যে নিযুক্ত সাধারণ রাজকর্মচারীদের দুর্নীতিমুক্ত করে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থাকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে একদল শিক্ষিত, বুদ্ধিমান ও সূদক্ষ উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী নিয়োগ করার যে প্রথা চালু হয়, তা ভারতীয় সিভিল সার্ভিস নামে পরিচিত । লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসের প্রকৃত প্রবর্তক ছিলেন । প্রথম দিকে ইংল্যান্ডের অভিজাত পরিবারের সন্তানরাই ভারতের সমস্ত উচ্চপদে নিযুক্ত হতেন । ইংল্যান্ড থেকে আগত তরুণ সিভিলিয়ানদের এদেশীয় ভাষা, সামাজিক রীতিনীতি শিক্ষা দেবার জন্য লর্ড ওয়েলেসলি কলকাতায় ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে নভেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ [Fort William College] স্থাপন করেন । পরে কোম্পানির পরিচালকবর্গের আপত্তিতে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ইংল্যান্ডের হেইলবেরিতে ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কলেজ স্থাপন করে সেখানেই তরুণ সিভিলিয়ানদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা হয় । এরপর ১৮৫৩ সালের সনদ আইন অনুসারে, ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে অফিসার নিয়োগ করার ব্যবস্থা করা হয় । ঠিক হয় ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়স্ক যে কোনো ব্রিটিশ প্রজা এই পরীক্ষায় বসতে পারবে । এই প্রথার মাধ্যমে ব্রিটিশ-ভারতে এক শ্রেণির দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মচারীর উদ্ভব ঘটে, যাদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এদেশে ব্রিটিশ শাসন সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় । এই জন্য ভারতীয় সিভিল সার্ভিসকে ব্রিটিশ রাজত্বের প্রধান স্তম্ভ বলা হত । তবে এই শাসন ব্যবস্থায় ভারতীয়দের কোনো উন্নতি হয়নি, কারণ ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের স্বার্থরক্ষা করা ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz

ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনী



ভারতে ব্রিটিশ রাজ প্রতিষ্ঠা ও রাজ্য শাসনের মূল সহায়ক ছিল সেনাবাহিনী । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের পলাশির যুদ্ধর পর ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের সিপাহী বিদ্রোহ পর্যন্ত মাত্র ১০০ বছরের মধ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যে অস্বাভাবিক দ্রুততায় সারা ভারত জয় করে নেয় তার অনেকটা কৃতিত্ব ছিল কোম্পানির সুংহত, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক সমর বিজ্ঞানে দক্ষ ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনীর । ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনার সমবায়ে এই সেনাবাহিনী গঠিত হয়েছিল । ঐতিহাসিক বিপিন চন্দ্রের মতে ভারতে ব্রিটিশ রাজের প্রথম স্তম্ভ ছিল সিভিল সার্ভিস, দ্বিতীয় স্তম্ভ হল সেনাবাহিনী । ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ারের মতে সিভিল সার্ভিস ভারতে ইংরেজ সরকারের দক্ষিণ হস্ত হলে, সেনাবাহিনী ছিল তার বাম হস্ত । সেনাবাহিনীর কাজ ছিল তিনটি —(ক) ভারতীয় রাজ্যজয়, (খ) বিদেশী আক্রমণ থেকে রাজ্যরক্ষা করা এবং (গ) ভারতে অভ্যন্তরীন বিদ্রোহ দমন করা ।

এই সময় কোম্পানির সেনাবাহিনীতে উচ্চপদস্থ অফিসার ও সেনাপ্রধানরা সবাই ছিলেন ব্রিটিশ । প্রথম দিকে সাধারণ সেনাদের বেশির ভাগ ছিল বিহার ও উত্তরপ্রদেশের লোক, কিন্তু পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে পাঠান, শিখ, গোর্খা প্রভৃতি রণনিপুণ জাতি থেকে লোক নেওয়া হতে থাকে ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz

লর্ড কর্নওয়ালিসের পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কার



►পুলিশী ব্যবস্থা [Police organisation]:- লর্ড কর্নওয়ালিশ পুলিশ বিভাগের আমুল সংস্কার সাধন করেছিলেন । দেশীয় জমিদারদের নিযুক্ত বিশেষ বাহিনী পাইক, বরকন্দাজ প্রভৃতির বিলোপ সাধন করেন । তিনি কয়েকটি গ্রাম নিয়ে এক একটি থানা গঠন করেছিলেন । থানার দায়িত্বে দারোগা নিয়োগ করা হত । থানাগুলির দেখাশুনার দায়িত্ব থাকত জেলার হাতে । জেলার দায়িত্বে থাকতেন একজন করে পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট । কর্নওয়ালিস বাংলাকে মোট ২৩টি জেলায় বিভক্ত করেছিলেন । বলা বাহুল্য কর্নওয়ালিশ প্রবর্তিত সেই পুলিশ ব্যবস্থা আজও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত আছে । পুলিশ ছিল ব্রিটিশ রাজের তৃতীয় স্তম্ভ ।

বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন [Judicial System]:- শাসন বিভাগের মতো ওয়ারেন হেস্টিংস বিচার বিভাগেরও নানা সংস্কার সাধন করেন । ভারতে ইংরেজ রাজত্বের সূচনায় দেওয়ানি ও ফৌজদারী মামলার ভার নবাবের হাতেই ন্যস্ত ছিল । ভূমি ও রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা দেওয়ানি মামলা এবং খুন জখম রাহাজানি সংক্রান্ত মামলা ফৌজদারী মামলা নামে পরিচিত ছিল । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দেওয়ানি মামলার ভার নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় । তারপর রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তারের সুযোগে কোম্পানি ফৌজদারী মামলার ভারও নিজেরদের হাতে নিয়ে নেয় । দেওয়ানি মামলার বিচারের জন্য প্রতি জেলায় কালেক্টরের অধীনে দেওয়ানি আদালত এবং ফৌজদারী মামলার বিচারের জন্য কাজির অধীনে ফৌজদারি আদালত স্থাপিত হয় । এছাড়া হেস্টিংস কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালত এবং সদর নিজামত আদালত স্থাপন করে তাঁদের ওপর জেলার নিম্ন আদালতগুলি থেকে আসা আপিলের মামলার নিস্পত্তির দায়িত্ব অর্পণ করেন । সদর দেওয়ানি আদালতে গভর্নর ও তাঁর কাউন্সিলের দুজন সদস্য বিচারের দায়িত্বে ছিলেন । সদর নিজামত আদালতের বিচার করতেন নবাব নিযুক্ত বিচারক । ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে নিয়ামক আইন পাশ হলে কলকাতার একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য তিনজন বিচারপতি নিয়ে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত হয় । স্যার এলিজা ইম্পে প্রথম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন ।

হেস্টিংস বাংলার বিচারব্যবস্থাকে নবাবের হাত থেকে কোম্পানির হাতে নিয়ে আসেন । কর্নওয়ালিশ সেই বিচার ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তাকে সুসংহত করেন । তাঁর আমলে সদর নিজামত আদালত মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় । তার পূর্বে নবাব ফৌজদারী মামলার বিচারের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন । কর্নওয়ালিশ ফৌজদারী মামলার বিচারের ভারও নবাবের হাত থেকে নিয়ে গভর্নর জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত করেন । জেলা কালেক্টরদের হাত থেকে দেওয়ানি মামলার বিচারের ভার কেড়ে নিয়ে সে ভার জেলা জজদের ওপর দেওয়া হয় । কালেক্টরগণ এরপর শুধু রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকেন । কর্নওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিলের অধীনে পাটনা, ঢাকা, কলকাতা ও মুর্শিদাবাদে চারটি প্রাদেশিক আদালত স্থাপন করেছিলেন । প্রত্যেক প্রাদেশিক আদালতে তিনজন ইংরেজ বিচারক নিযুক্ত হতেন । এঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন । নিম্ন আদালত ছিল সদর দেওয়ানি আদালত । গভর্নর ও কাউন্সিলের সদস্যগণ এই বিচারের দায়িত্বে ছিলেন । এছাড়া কর্ণওয়ালিশ ফৌজদারী মামলার বিচারের জন্য ও চারটি ভ্রাম্যমান আদালত স্থাপন করেছিলেন । এইসব আদালতের বিচারকার্য পরিচালনা করতেন কাজী ও মুফতিগণ । ফৌজদারী মামলার সর্বোচ্চ আপিল আদালত ছিল সদর নিজামত আদালত । বিচার ব্যবস্থার সর্ব নিম্নে ছিল সদর আমিন ও মুনসেফের আদালত । এইসব বিচারালয়ের বিচারকগণ এদেশীয় হিন্দুপন্ডিত ও মুসলমান আইনজ্ঞ ব্যক্তিগণের সহায়তায় বিচারকার্য পরিচালনা করতেন । বিচার ব্যবস্থার দন্ডবিধির কঠোরতা হ্রাস, আইনের চক্ষে সকলের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের রীতি প্রবর্তন করে কর্ণয়ালিশ বিচার ব্যবস্থাকে অনেক উন্নত করে তুলেছিলেন । তাঁর শাসন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলি সংকলিত হয়ে 'কর্ণয়ালিশ কোড' [Cornwallis Code] নামে প্রকাশিত হয় ।

descriptionপ্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা  (১৭৬৫ - ১৮৫৬) - Page 2 EmptyRe: প্রথম অধ্যায়ঃ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার এবং ঔপনিবেশিক শাসন কাঠামোর প্রতিষ্ঠা (১৭৬৫ - ১৮৫৬)

more_horiz
privacy_tip Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum