জলের দরে কেরালা ও তামিলনাড়ু ভ্রমণের ট্যুর প্ল্যান--
Kerala and Tamil Nadu Tour very low cost

=> সমস্ত প্ল্যানটি করা হয়েছে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ওপর ভিত্তি করে। যেখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই সেখানে অটোর খরচ ধরা হয়েছে। প্ল্যানটি দুজন বা চারজন বা ছয় জনের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে।জোড় সংখ্যায় হলে রুম ভাড়া জন প্রতি কম লাগবে। সেই ভিত্তিতে এই প্ল্যানটি করা।
ট্রেনে আসা যাওয়া (নন এসি স্লিপার কোচ) , বোটে ব্যাক ওয়াটারে ঘোরা, খাওয়া দাওয়া, রুম ভাড়া সব মিলিয়ে মাথা পিছু খরচ 5000 টাকা থেকে ছয় হাজার টাকা। 13 দিনের ট্যুর। সমস্ত ট্যুর প্ল্যানটি করতে আমার এক মাস সময় লেগেছে।

আমি সমস্ত তথ্য নিয়েছি গুগল , গুগল ম্যাপ, ইউ টিউব ও সরাসরি কেরালার বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে---ও যারা কেরালা ঘুরে এসেছে তাদের সাথে কথা বলে।
কোন ট্রেন ধরবেন----
ধরুন শালিমার থেকে 22642 Trivantapuram central superfast Express এটি ছাড়ে রাত্রি এগারোটা পঞ্চাশে। রবিবার রাতের ট্রেনটি ধরবেন। মঙ্গলবারের ঐ ট্রেনটি ধরবেন না। কারণ
শুক্রবার ও শনিবার কোচির দু একটি দ্রষ্টব্য স্থান বন্ধ থাকে। আর সোমবার পদ্মনাভপুরম্ প্যালেস বন্ধ থাকে। মঙ্গলবার রাতে ঐ ট্রেনটি ধরলে অসুবিধায় পড়ে যাবেন। টিকিট করবেন ত্রিশূর(কেরালা) পর্যন্ত ।

রবিবার রাতে ট্রেনে boarding করলে মঙ্গলবার বেলা দেড়টার কাছাকাছি নেমে পড়বেন ত্রিশূরে। এই ট্রেনটি সাধারণতঃ লেট করে না। ত্রিশূরে নেমে ক্লোক রুমে জিনিসপত্র রেখে বেরিয়ে পড়ুন ত্রিশূর দেখতে। জিনিসপত্র তালা চাবি দিয়ে রাখবেন না হলে ক্লোক রুমে জমা রাখতে দেবে না।
স্টেশন থেকে দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি সবই এক থেকে দেড় কিমির মধ্যে। অটো ভাড়া শেয়ারে দশ টাকা ভাড়া করলে পঞ্চাশ টাকা। আর হেঁটে গেলে ফ্রী।প্রথমে যাবেন Our Lady of Dolours Basilica গির্জা
পাশেই 150 মিটার দূরে Bible tower of Thrissur.
এর পরে যাবেন ত্রিশূর বিখ্যাত Vadakkunnathan temple . বেলা পাঁচটার আগে খুলবে না। পুরুষদের ধুতি পরে ও ঊদ্ধাঙ্গ অনাবৃত রেখে প্রবেশ করতে হবে। মহিলাদের শাড়ি। বিশাল এক জায়গা জুড়ে এর অবস্থান।
মন্দিরের কারুকার্য অসামান্য। ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ। এখানেই হয় বিখ্যাত বর্ণাঢ্য হস্তী শোভাযাত্রা। প্রায় 1600 বছরের পুরনো এই মন্দিরটি। কেরালা আর্কিটেকচারের এক অনবদ্য উদাহরণ। ম্যুরেলের ছবি গুলি অসাধারণ। সমস্ত মন্দিরটি ঘুরে দেখতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। যদি ট্রেন দেরীতে আসে তাহলে এটি আগে দেখবেন।
এর সামনেই রয়েছে kurumba Vagabati temple এটি বেলা চারটাতে খোলে। এর মধ্যে অবস্থিত কালীমূর্তিটি প্রাচীনতম মূর্তি। ধারনা করা হয় যে এই মন্দিরটি যীশু খ্রীষ্টের জন্মের আগে নির্মিত। এখানে প্রবেশের কোন dress code নেই।
ত্রিশূর দেখা হয়ে গেলে চলে আসুন Chalakudy
এটি ত্রিশূর এরনাকুলাম মেন রোডের ওপর পড়ে। দূরত্ব মাত্র ত্রিশ কিমি। ট্রেন ও বাস সবসময়। রাত নটা দশটার মধ্যে পৌঁছালেও কোন অসুবিধা হবে না। বেশ জমজমাট জায়গা।
Chalakudy তে নেমে একটু ভেতরের দিকের হোটেল নিবেন। পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা পড়বে। অনেক অটোওয়ালা আসবে বলবে কাল ট্যুর করিয়ে দেব। একদম এদের খপ্পরে পড়বেন না । বলবে জলপ্রপাত দেখিয়ে দেব। এদের কথায় কান দেবেন না। আপনার টাকাও যাবে আর কোমরের বারোটাও বাজবে। রাস্তা খুব একটি ভালো না। বাস আছে। বাসের frequency ভালো। পরের দিন অর্থাৎ বুধবার
বাসে চেপে চলুন ত্রিশ কিমি দূরে আথিরাপল্লী জলপ্রপাত । এখানেই হয়েছিল বাহুবলী সিনেমার শুটিং। চালাকুডি ( chalakudy) নদীর ওপরে এই আথিরাপল্লি জল প্রপাত। এই জলপ্রপাতটি ওপর থেকে দেখবেন আবার নীচে কিছুটা নেমে দেখবেন। অপূর্ব সে দৃশ্য। চালাকুডি আনামালা রোড ধরে নদীর স্রোতের দিকে আরো কিছুটা চলে আসুন একদম গাড়ী পার্কিং area পর্যন্ত এখান থেকে বাঁ দিকের রাস্তা ধরে বনের ভিতর দিয়ে আরো কিছুটা নেমে যান নদী পর্যন্ত। ক্যামেরা রেডি রাখুন। বাঁ দিকে ঘাড় ঘুরালেই দেখতে পাবেন দূরে ঘন সবুজের মাঝে দুধ সাদা আথিরাপল্লী জলপ্রপাত।

শেয়ারের অটোতে ঘুরে নিন আরো দুটি জলপ্রপাত পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যেই এই চালাকুডি নদীর উজানে অবস্থিত। একটির নাম Chapra water falls আর অপরটির Vazhachal water falls . প্রথমে পড়বে Chapra water falls রাস্তার ধারেই তারপরে পড়বে Vazhachal water falls. অনিন্দ্য সুন্দর এদের দেখতে লাগে। অটো আথিরাপল্লিতেই পেয়ে যাবেন। অটোগুলো একটু অদ্ভুত ধরণের। অতিরিক্ত বৃষ্টি থেকে বাঁচতে।* আথিরাপল্লি জলপ্রপাত দেখার টিকিট টি রেখে দেবেন। Vazhachal water falls দেখার সময় ওটি কাজে লাগবে।*

এরপরে চলুন বাসে করে Thumboormuzhi hanging bridge । পনের কিমি দূরে অবস্থিত। এই বাসটি ধরবেন আথিরাপল্লী water falls এর কাছেই অবস্থিত বাস স্ট্যান্ড থেকে। এই ব্রীজটি জলপ্রপাতগুলির উল্টো দিকে অবস্থিত। এই ব্রিজের ওপর থেকে চালাকুডি নদীর দৃশ্য বর্ণনাতীত। প্রচুর দোকান আছে সবরকমের খাবার পাওয়া যায়। । কিছু খেয়ে নিন।
বাসে করে চলে আসুন চালাকুডি বাস স্ট্যান্ড।
সেখান থেকে ট্রেনে বা বাসে চলুন Ernakulam. Ernakulam বাস স্ট্যান্ড ও রেলওয়ে স্টেশন কাছাকাছি। দেড় কিমি দূরত্ব। প্রচুর সস্তার হোটেল(500--600) আছে । একটু ধৈর্য ধরে খুঁজুন। এখানে বিশ্রাম করুন। পরের দিন বৃহস্পতিবার কোচি।
পরবর্তী অংশ পরের পোস্টে।