তারাপীঠ ও বীরচন্দ্রপুর
#Tarapith# #Birchandrapur#
এক সপ্তাহ কাটেনি পুরুলিয়া ভ্রমণ শেষ করে ফিরেছি। প্রকৃতি নয়, মনে এবার তারামায়ের দর্শনের ইচ্ছে জাগল। "জয় জয় তারা" বলে ২রা সেপ্টেম্বর,২০১৮ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে, সকাল ৯-০৫ এর রামপুরহাট ইন্টারসিটিতে করে (2S টিকিট ১১০ টাকা), দুপুর একটার পরে পৌঁছে যাই রামপুরহাট স্টেশন। স্টেশন সংলগ্ন ক্লক টাওয়ারের কাছেই প্রাচী লজে মোট ৭০০ টাকায় দুদিনের জন্য একটা দ্বিশয্যাবিশিষ্ট কক্ষ ভাড়া করে ফেলি। ইচ্ছে করে মন্দিরের কাছাকাছি কোনো হোটেলে উঠিনি। আসলে খরচ কমানো ছিল উদ্দেশ্য। হোটেলের কাছে কয়েকটা রেস্টুরেন্ট ছিলো, তাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে চিন্তা ছিল না। হোটেলে ঢুকে স্নান খাওয়ার পর্ব সেরে একটু ঘুমিয়ে উঠতে উঠতে বিকেল চারটে বেজে যায়। বাইরে ইতিমধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকে আকাশের মুখ বেশ ভার ছিল। মাঝে মধ্যে সে একটু আধটু অশ্রু বিসর্জন করেছে। বিকেলে তার প্রাবল্য বেশ বেড়ে যায়। কাছে ছিল অটো স্ট্যান্ড। মন চাইলেই রুটের অটোতে করে, পনের টাকা ভাড়া দিয়ে, অনায়াসেই পৌঁছে যাওয়া যায় নয় কিলোমিটার দূরবর্তী তারাপীঠ মন্দিরে। তাই মেঘের দিকে না তাকিয়ে, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, পৌঁছে গেলাম মন্দিরে। ঘন দুর্যোগে মন্দির চত্বর ছিলো এক প্রকার ভক্ত সমাগমহীন। আমার প্রথম মাতৃদর্শনে নির্বিঘ্নে মায়ের পুজো দিলাম। তারাপীঠ নিয়ে আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মায়ের দর্শনে অতি বড় নাস্তিকের মনেও জন্ম নেয় আধ্যাত্মিকতা । শ্রদ্ধায়, ভক্তিতে মাথা নত হয়ে আসে। একটানা বৃষ্টির জন্য পুজো দিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে।
পরের দিন, আবহাওয়া ছিল বেশ সুন্দর, রোদ ঝলমলে। প্রাতরাশ সেরে, টোটোতে করে দশটাকা ভাড়া দিয়ে চলে আসি রামপুরহাট বাসষ্ট্যান্ডে । বাস টার্মিনাস থেকে বীরচন্দ্রপুর যাওয়ার বাসে চেপে বসি। উনিশ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে, সতের কিলোমিটার দূরবর্তী বীরচন্দ্রপুরের ইসকন একচক্র মন্দিরের একেবারে তোরণের সামনেই নেমে পড়ি। (প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এই রুটের বাসটি তারাপীঠ মন্দিরের সামনে দিয়েই যায়)। ইস্কন একচক্র মন্দিরে সদাবিরাজমান এক অপার্থিব পরিবেশ! অপূর্ব সুন্দর মন্দির স্থাপত্য, পরম দ্যুতিময় ভগবান গৌরাঙ্গের বিগ্রহ, ভক্তবৃন্দের হরিনাম সংকীর্তন, চকচকে - ঝকঝকে মন্দির, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মন্দির চত্বর, কোলাহল মুক্ত শান্ত এলাকা ...... এসবকিছু অন্তরাত্মার মধ্যে সঞ্চার করে কৃষ্ণপ্রেম। ইচ্ছে করবে নিজেকে এমন পরিবেশের মধ্যে বিলীন করে দিতে। এযেন মায়াপুর ইস্কনের এক সংস্করণ। দুপুরে ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থা থাকলেও চলে আসি ওখান থেকে এক -দেড়শ মিটার দুরবর্তী শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মন্দিরে। বীরচন্দ্রপুর একচক্র ইস্কন মন্দির যদি মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের সংস্করণ হয়ে থাকে তাহলে বীরচন্দ্রপুর জগন্নাথ দেবের মন্দির পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের একটা পশ্চিমবঙ্গ সংস্করণ। বীরভূম জেলার বীরচন্দ্রপুর আসবার অর্থ হল, একযোগে মায়াপুর ইস্কন মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির দর্শন সেরে ফেলা। এই দুই মন্দিরে ফটো তোলা নিষিদ্ধ হলেও, ফটো তোলার লোভ আমি সংবরণ করতে পারিনি। দু একটি ফটো তাই তুলেই ফেলেছিলাম।
এরপর বাসে করে একই পথে হোটেলে ফিরে আসি। মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে, একটু ভাতঘুম দিয়ে, অটোতে করে, আবার আসি তারাপীঠ মন্দির দ্বিতীয় পর্যায়ে মন্দির দর্শনে। একে একে ভালো করে দেখে নিলাম, দ্বারকা নদীর তীরে সাধক বামদেবের ঘাট, মহাশ্মশান, " জীবিতকুন্ড" , পশুবলির যুপকাষ্ঠ , বামাক্ষ্যাপার তপস্যাস্থান, মায়ের মন্দির ইত্যাদি।
সন্ধ্যা নামলে ফিরে আসি হোটেলে। মধ্যরাত্রিতে রামপুরহাট স্টেশন থেকে রাত ১-৫১ র সরাইঘাট এক্সপ্রেস ধরে হাওড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি।
- জয় জয় তারা-
Last edited by ভ্রমন পাখি on Thu Dec 19, 2019 1:54 pm; edited 1 time in total
#Tarapith# #Birchandrapur#
এক সপ্তাহ কাটেনি পুরুলিয়া ভ্রমণ শেষ করে ফিরেছি। প্রকৃতি নয়, মনে এবার তারামায়ের দর্শনের ইচ্ছে জাগল। "জয় জয় তারা" বলে ২রা সেপ্টেম্বর,২০১৮ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে, সকাল ৯-০৫ এর রামপুরহাট ইন্টারসিটিতে করে (2S টিকিট ১১০ টাকা), দুপুর একটার পরে পৌঁছে যাই রামপুরহাট স্টেশন। স্টেশন সংলগ্ন ক্লক টাওয়ারের কাছেই প্রাচী লজে মোট ৭০০ টাকায় দুদিনের জন্য একটা দ্বিশয্যাবিশিষ্ট কক্ষ ভাড়া করে ফেলি। ইচ্ছে করে মন্দিরের কাছাকাছি কোনো হোটেলে উঠিনি। আসলে খরচ কমানো ছিল উদ্দেশ্য। হোটেলের কাছে কয়েকটা রেস্টুরেন্ট ছিলো, তাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে চিন্তা ছিল না। হোটেলে ঢুকে স্নান খাওয়ার পর্ব সেরে একটু ঘুমিয়ে উঠতে উঠতে বিকেল চারটে বেজে যায়। বাইরে ইতিমধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকে আকাশের মুখ বেশ ভার ছিল। মাঝে মধ্যে সে একটু আধটু অশ্রু বিসর্জন করেছে। বিকেলে তার প্রাবল্য বেশ বেড়ে যায়। কাছে ছিল অটো স্ট্যান্ড। মন চাইলেই রুটের অটোতে করে, পনের টাকা ভাড়া দিয়ে, অনায়াসেই পৌঁছে যাওয়া যায় নয় কিলোমিটার দূরবর্তী তারাপীঠ মন্দিরে। তাই মেঘের দিকে না তাকিয়ে, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, পৌঁছে গেলাম মন্দিরে। ঘন দুর্যোগে মন্দির চত্বর ছিলো এক প্রকার ভক্ত সমাগমহীন। আমার প্রথম মাতৃদর্শনে নির্বিঘ্নে মায়ের পুজো দিলাম। তারাপীঠ নিয়ে আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। মায়ের দর্শনে অতি বড় নাস্তিকের মনেও জন্ম নেয় আধ্যাত্মিকতা । শ্রদ্ধায়, ভক্তিতে মাথা নত হয়ে আসে। একটানা বৃষ্টির জন্য পুজো দিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে।
পরের দিন, আবহাওয়া ছিল বেশ সুন্দর, রোদ ঝলমলে। প্রাতরাশ সেরে, টোটোতে করে দশটাকা ভাড়া দিয়ে চলে আসি রামপুরহাট বাসষ্ট্যান্ডে । বাস টার্মিনাস থেকে বীরচন্দ্রপুর যাওয়ার বাসে চেপে বসি। উনিশ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে, সতের কিলোমিটার দূরবর্তী বীরচন্দ্রপুরের ইসকন একচক্র মন্দিরের একেবারে তোরণের সামনেই নেমে পড়ি। (প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি, এই রুটের বাসটি তারাপীঠ মন্দিরের সামনে দিয়েই যায়)। ইস্কন একচক্র মন্দিরে সদাবিরাজমান এক অপার্থিব পরিবেশ! অপূর্ব সুন্দর মন্দির স্থাপত্য, পরম দ্যুতিময় ভগবান গৌরাঙ্গের বিগ্রহ, ভক্তবৃন্দের হরিনাম সংকীর্তন, চকচকে - ঝকঝকে মন্দির, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মন্দির চত্বর, কোলাহল মুক্ত শান্ত এলাকা ...... এসবকিছু অন্তরাত্মার মধ্যে সঞ্চার করে কৃষ্ণপ্রেম। ইচ্ছে করবে নিজেকে এমন পরিবেশের মধ্যে বিলীন করে দিতে। এযেন মায়াপুর ইস্কনের এক সংস্করণ। দুপুরে ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থা থাকলেও চলে আসি ওখান থেকে এক -দেড়শ মিটার দুরবর্তী শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের মন্দিরে। বীরচন্দ্রপুর একচক্র ইস্কন মন্দির যদি মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের সংস্করণ হয়ে থাকে তাহলে বীরচন্দ্রপুর জগন্নাথ দেবের মন্দির পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের একটা পশ্চিমবঙ্গ সংস্করণ। বীরভূম জেলার বীরচন্দ্রপুর আসবার অর্থ হল, একযোগে মায়াপুর ইস্কন মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির দর্শন সেরে ফেলা। এই দুই মন্দিরে ফটো তোলা নিষিদ্ধ হলেও, ফটো তোলার লোভ আমি সংবরণ করতে পারিনি। দু একটি ফটো তাই তুলেই ফেলেছিলাম।
এরপর বাসে করে একই পথে হোটেলে ফিরে আসি। মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে, একটু ভাতঘুম দিয়ে, অটোতে করে, আবার আসি তারাপীঠ মন্দির দ্বিতীয় পর্যায়ে মন্দির দর্শনে। একে একে ভালো করে দেখে নিলাম, দ্বারকা নদীর তীরে সাধক বামদেবের ঘাট, মহাশ্মশান, " জীবিতকুন্ড" , পশুবলির যুপকাষ্ঠ , বামাক্ষ্যাপার তপস্যাস্থান, মায়ের মন্দির ইত্যাদি।
সন্ধ্যা নামলে ফিরে আসি হোটেলে। মধ্যরাত্রিতে রামপুরহাট স্টেশন থেকে রাত ১-৫১ র সরাইঘাট এক্সপ্রেস ধরে হাওড়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি।
- জয় জয় তারা-
Last edited by ভ্রমন পাখি on Thu Dec 19, 2019 1:54 pm; edited 1 time in total