🌺🌺 নলহাটি শক্তিপীঠ 🌺🌺
দেবী - নলাটেশ্বরী/ কালিকা/ শেফালিকা/ ললাটেশ্বরী
ভৈরব - যোগীশ/ যোগেশ

নলাটেশ্বরী মায়ের মন্দির বহু পুরানো । স্বপ্নাদেশে এখানে পূজো শুরু হয় । ভগবান বিষ্ণুর চক্রে খন্ডিত হয়ে মা সতী দেবীর অঙ্গ এইস্থানে গুপ্ত অবস্থায় ছিলো । স্মরনাথ শর্মা নামক এক সাধক ছিলেন । একদা তাঁকে মা কালী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন- “এই স্থানে দেবী সতীর নলী পতিত হয়েছে । আমি এই স্থানে নলাটেশ্বরী দেবীরূপে অবস্থান করছি । তুই শীঘ্র সেই সতী অঙ্গ উদ্ধার করে আমার প্রতিষ্ঠা কর।”
সাধক স্মরনাথ শর্মা তাই করলেন । সেই স্থানে এসে দেবীর অঙ্গ উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করলেন ।

অপর একটি মতবাদ আছে । কাশীধামে একজন হরগৌরী উপাসক ছিলেন । তাঁর নাম ব্রহ্মচারী কামদেব । একদা তিনি মাতা পার্বতীর আদেশ পান । জগৎমাতা হরপ্রিয়া বলেন - “বঙ্গে তিনি নলাটেশ্বরী রূপে বিরাজ করছেন । সেখানে প্রতিষ্ঠা কর।” ২৫২ বঙ্গাব্দে ব্রহ্মচারী কামদেব এখানে এসে সতী পীঠ উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা ও নিত্যপূজার ব্যবস্থা করলেন । এভাবে দেবীর পূজা প্রচলন হলো । নাটোরের রানী ভবানী এখানে মন্দির নির্মাণ করেন । পরবর্তী কালে নন্দীপুরের রাজা রনেন্দ্র নারায়ণ এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন ।

গর্ভগৃহে পাহাড়ের প্রস্তরে খোদাই করা মায়ের মুখ । মুখটি মা কালীর । সিঁদুর দিয়ে লিপ্তা মায়ের বিগ্রহ । বস্ত্র, কুঙ্কুম শোভিতা তিনি । অপূর্ব স্নিগ্ধ ভরা মায়ের মুখ । সেই রূপ দেখলে পথশ্রমের ক্লান্তি দূর হবে । সতীপীঠের অঙ্গশিলা গুপ্ত থাকে। সাধারনের এটি দর্শন করা বারণ ।

পীঠনির্ণয় তন্ত্রের মতে চতুশ্চত্বারিশৎ পীঠ হল বীরভূমের নলহাটি ।

" নলহাট্যাং নলাপাতো যোগী শো ভৈরবস্তুথা।

তত্র সা কালিকা দেবী সর্বসিদ্ধি প্রদায়িকা ।।"

শাস্ত্রে দেবীকে কালিকা বা শেফালিকা যাই বলা হোক না কেন স্থানীয়রা দেবীকে ললাটেশ্বরী বলে থাকেন । ভৈরব অবশ্য সর্বত্র যোগীশ নামেই উক্ত । প্রনাম মন্ত্রে দেবীকে নলাটেশ্বরী বলে সম্বোধন করা হয় --------

" মঙ্গলাং শোভনাং শুদ্ধাং নিস্কলং পরমম্ কলাং।

নলাটেশ্বরী বিশ্বমাতা চণ্ডিকাং প্রণমাম্যহম্ ।।"

নলাটেশ্বরী মায়ের অঙ্গশিলা উদ্ধারের সময় একটি অলৌকিক কান্ড হয় । যেটা বোধহয় অপর কোন শক্তিপীঠে হয়নি । যিনি সতীর দেহ তার সুদর্শন চক্র দ্বারা খণ্ড খণ্ড করেছিলেন সেই অনাদির আদি গোবিন্দের চরণ চিহ্নিত একটি শিলা পাওয়া যায় । ভগবান নারায়ণের সেই চরণ চিহ্নিত শিলা পূজিত হন এখানে দেবীর সাথে । প্রথমে ভগবান বিষ্ণুকে প্রনাম জানানোর পরই ভৈরব ও দেবীর অর্চনা হয়ে থাকে । আষাঢ় মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবীর বার্ষিক পূজা অনুষ্ঠিত হয় ।