দক্ষিণবঙ্গের জেলা গুলির দর্শনীয় স্থানগুলির ওপর একটি ভোটাভুটি নজরে পড়ল.. অভিভূত হোলাম.. এত অজানা সুন্দর সুন্দর জায়গার খোঁজ পেলাম..আরো খুশি হোলাম আমাদের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের বেশ কয়েকটি স্থান এই তালিকায় স্থান পাওয়ায়...দিঘা,মন্দারমনি, তাজপুর ইত্যাদির সম্পর্কে প্রচুর লেখা হয়েছে এবং প্রচুর মানুষ আসেন..তাই তালিকায় নিচের দিকে স্থান পাওয়া তমলুক,মহিষাদল,হলদিয়া সম্পর্কে কিছু আলোক পাত করার চেষ্টা করছি যদি আপনাদের ভালো লাগে,আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলাম অবশ্যই আসবেন।
          প্রথমে শুরু করি তমলুক দিয়েই...যারা ট্রেনে আসবেন তারা দুভাবে আসতে পারেন,দক্ষিণ পূর্ব রেলের যে কোন লোকাল ট্রেনে মেছেদা স্টেশনে নেমে পাবলিক বাসে ১৭কিমি দূরে তমলুক(মানিকতলা বাস স্টপেজ)অথবা হলদিয়া গামী ট্রেনে শহীদ মাতঙ্গিনী স্টেশনে নেমে তমলুক। যেভাবেই আসুন যেখানেই নামুন টোটো পাবেন, টোটো ধরে প্রথমেই যান তমলুক রাজবাড়ী.. বাস স্টপেজ বা স্টেশন থেকে দূরত্ব ১কিমির মত। বর্তমানে রাজবাড়িটি খুবই জরাজীর্ণ ও অবহেলার নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে তবুও যে টুকু আছে সেটাই বা কম কি কিছুটা সময় ভালোই লাগবে। এর পর পায়ে পায়ে শহরের ভেতর দিয়ে রঘুনাথ মন্দির,জিষ্ণুমন্দির,মহাপ্রভু মন্দির,তমলুক মিউজিয়াম, রামকৃষ্ণ মিশন দেখে বর্গভিমা মন্দিরে আসুন। অবশ্য হাঁটতে না চাইলে টোটো নিতেই পারেন। রাজবাড়ী থেকে ২কিমির মধ্যে এই স্থান গুলির অবস্থান সুতরাং আপনাদের মর্জি হেঁটে ঘুরবেন না টোটো তে। মন্দির গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্গভিমা মন্দির। এখানে দেবী সতীর বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল,এটি ৫১সতী পিঠের'বিভাস'নামে পরিচিত। সকাল থেকেই প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় পূজা দেওয়া ও পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। মায়ের ভোগ ও পাওয়া যায়। সকাল ১০ টার মধ্যে বুকিং করে দুপুর ১ টা থেকে ২টার মধ্যে ভোগ খাওয়া যায় এই সময় টুকু মন্দিরে মায়ের দর্শন বন্ধ থাকে। ভোগ মূল্য ৯৫ টাকা(আমিষ) এ ছাড়াও এখানে অন্নপ্রাসন, বিয়ে,জন্মদিন ও যে কোন শুভ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায়।
          এখান থেকে এবার মহিষাদল,তমলুক হাসপাতাল মোড় থেকে হলদিয়া গামী যে কোন বাসে ১৬ কিমি পথ পেরিয়ে মহিষাদল সিনেমা মোড় বাস স্টপেজ। আর হাওড়া থেকে সরাসরি হলদিয়া গামী ট্রেনে সতীশ সামন্ত হল্ট স্টেশন নেমে মহিষাদল। আর মেছেদা থেকে বাসে ৩৫ কিমি দূরে মহিষাদল। যে পথ দিয়েই আসুন যেখানেই নামুন ,সেখান থেকেই টোটো ধরে খুব কাছেই রাজবাড়ী। এখানে রাজবাড়ী দুটি আছে। ১৮৪০ সালে নির্মিত পুরান বাড়ীটি বয়স জনিত কারনে একটু বেহাল অবস্থায় তবুও আমবাগানের মাঝে বাড়িটিকে দেখতে ভালোই লাগে। বর্তমানে ১৯৩৪ সালে তৈরি নতুন রাজবাড়িটি খুবই আকর্ষণীয়। এর ভেতরে ২০১২ সালে একটি সংগ্রহশালা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে বহু পুরান তৈল চিত্র,রাজকীয় আসবাবপত্র,রাজাদের শিকার সামগ্রী, বৈঠক খানা, দালান বাড়ী ইত্যাদি। এখানে প্রায়ই টিভি সিরিয়াল,সিনেমার শুটিং হয়। ভেতরে প্রবেশ করতে হলে ১০টাকার টিকিট কাটতে হয়। এছাড়াও রাজবাড়ীর সীমানার মধ্যে রয়েছে বড়পুকুর,আম বাগান, গোপালজিউ মন্দির যেখানে নিত্যপূজা হয়। এগুলো দেখে একটু এগিয়ে গান্ধী কুটির দেখে নেওয়া যায়। এছাড়াও রথ তলা থেকে ২কিমি পশ্চিমে কৈলাস মন্দির টিও দর্শন করে নেওয়া যায়।ভ্যান রিক্সা বা টোটো তে যেতে যেতে রাস্তার পাশে পিতলের মূর্তি গড়ার শিল্পীদের ঘর বাড়ি ও তাদের কাজকর্ম মুগ্ধ করবেই। মহিষাদল থেকে পূর্ব দিকে ৮কিমি দূরে রূপনারায়ন নদীর পাড়ে গেওখালী ও নজর কাড়বে, থাকা খাওয়ার জন্য নদীর পাড়ে PHE র কাছে HDA র 'ত্রিবেনি সঙ্গম'থাকতেই পারেন,আবার নদী পেরিয়ে অপর দিকের গাদিয়ারা ঘুরে আসতে পারেন। এখান থেকেই ভেতর দিয়ে চৈতন্যপুর (রামপুর)রামকৃষ্ণ মিশন দেখে হলদিয়া যাওয়া যাবে আবার মহিষাদল থেকে সরাসরি ২৪ কিমি দূরে হলদিয়া যাওয়া যাবে।শিল্পাঞ্চল এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও কম নেই। থাকতে হলে HDA র 'হলদিয়া ভবনের' ওপর ভরসা কোরতে পারেন। হলদী ও হুগলি নদীর সঙ্গম স্থলে এর অবস্থান। বারান্দা থেকেই নদী দেখা যায়। খাওয়া র ব্যাবস্থা আছে,অনলাইনে বুকিং হয়। এছাড়াও কিছু মাঝারি মানের হোটেল আছে। বিকেলের পড়ন্ত রোদে হলদিয়া টাওনশীপের মেরিন ড্রাইভ এক অনন্য রূপ নেয়,এক দিকে নয়াচর আর এক দিকে নন্দীগ্রাম, মাঝে নদীর বুকে ডকে যাতায়াত করা জাহাজ...এক অপূর্ব দৃষ্টি সুখ সৃষ্টি করে। এখান থেকে কিছুটা উত্তরে বালুঘাটা ডেন্টাল কলেজের পেছনে সানসেট ভিউ পয়েন্ট,প্রায় এক কিমি বিস্তৃত ঝাউবনের মাঝে পিকনিকের এক আদর্শ জায়গা। হলদিয়া দেখা হয়েগেলে কুকরাহাটি নদী পেরিয়ে রায়চক দিয়ে ফিরে আসতে পারেন..যদি মেছেদা দিয়ে ফেরেন তবে ইচ্ছে করলে ময়না গড় দেখে নিতে পারেন। NH41 দিয়ে ফিরলে নিমতউড়ি স্টপেজ থেকে পশ্চিম দিকে ১১কিমি দূরে ময়না গড়।এই গড় সম্পর্কে ধর্ম মঙ্গল কাব্যে রাজা লাউসেনের অনেক গল্প আছে। চারিদিকে পরিখা দিয়ে এই গড়, নৌকা পেরিয়ে যেতে হয় রাজবাড়িটিতে।রাজার পরিবারের লোকজন এখানেই থাকেন তবে সবাই নতুন বাড়ি বানিয়ে আছেন। ভেতরে অনেক গুলি মন্দির আছে, রোজ পূজা হয়। রাস পূর্ণিমাতে বড় মেলা বসে এবং রাজবাড়ী থেকে মেলাতে প্রতিদিন ভোরে ও সন্ধ্যায় বাদ্য যন্ত্র,আতশবাজি ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে কুলদেবতা 'শ্যাম সুন্দর জিউ' নৌকোয় করে পরিখা দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণের মন্দিরে আসেন। বহু মানুষ এই সময় এই অনুষ্ঠানে আসেন।এক দম গ্রামের পরিবেশে খুব একটা খারাপ লাগবে না।এখান থেকে মেছেদা(৩০কিমি)ফিরতে পারবেন প্রচুর পাবলিক গাড়ি আছে।
নিজের এলাকা বলে অনেকটাই সাহস করে লিখে ফেললাম,আধুনিক ভ্রমন স্থান না ভেবে নিছক ছুটি কাটানোর জন্য আসতেই পারেন আসা করি ভালো লাগবে ....না লাগলে ক্ষমা করে দেবেন।
           সাথে কিছু নিজের ও সংগৃহিত ছবি দিলাম। যদি আরো বিস্তারিত কেউ জানতে চান অবশ্যই ছবি সহ জানাব।